রাত পোহালেই হারারেতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের চ্যালেঞ্জে নামবে বাংলাদেশ। আট বছর ধরে সে দেশের মাটিতে জয়ের আক্ষেপ মেটাতে অধীর আগ্রহে আছে মুমিনুল হকের বাহিনী। হারারেতে বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় শুরু হবে একমাত্র টেস্ট।
এই টেস্টে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না জিম্বাবুয়ে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত পরিবারের সদস্যের সংস্পর্শে আসায় ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন শন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভাইন।
আর হাঁটুর চোট থেকে সেরা না ওঠায় অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালকেও পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল।
তবে, পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে মুশফিকুর রহিমের চোট কাটিয়ে ফেরা ও সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে টাইগারদের।
প্রস্তুতি ম্যাচে বোলিং-ব্যাটিং দুই জায়গাতেই ছন্দে ফিরতে দেখা গেছে বাংলাদেশ দলকে। প্রস্তুতি ম্যাচের আত্মবিশ্বাসকে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক।
ম্যাচের আগে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি খুব ভাল হয়েছে। দুদিনের প্রস্তুতিতে ব্যাটসম্যান-বোলাররা সবাই ভাল করেছে। তাই আমরা টেস্ট ম্যাচেও ভাল কিছু আশা করছি। আর শুধু জিম্বাবুয়েতে না, যে কোন দেশেই অ্যাওয়ে ম্যাচ চ্যালেঞ্জিং হয়। তবে প্রস্তুতির দিক থেকে আমি আশাবাদী যে ৫ দিন ভাল ক্রিকেট খেললে অবশ্যই ফল আমাদের দিকে আসবে।’
২০১৪ সাল থেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছয়টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। হেরেছে মাত্র একটিতে। কিন্তু শেষ ছয়টি ম্যাচ নিজেদের কন্ডিশনে খেলেছে বাংলাদেশ। বিদেশের কন্ডিশন মানিয়ে ফল নিজেদের পক্ষে আনার ব্যাপারে আশ্বাস মুমিনুলের।
জেতার ব্যাপার আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক বলেন, ‘শুধু জিম্বাবুয়ে না যে কোন দলের সঙ্গেই যখন অ্যাওয়েতে খেলব তখন ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন দিকটাই ভালো করতে হয়, ফোকাস রাখতে হয়। সেই সাথে টিম ওয়ার্কটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ দিকটায় ভালো করলে আশা করি টেস্ট ম্যাচটা জিততে পারব।’
জিম্বাবুয়ের মাটিতে ৭ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি করে জয় ও ড্রয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। ৫টি ম্যাচ হেরেছে তারা। ২০১৩ সালে একমাত্র জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। এবার আট বছর পর সেই আক্ষেপ মেটাতে নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। একাদশক মোটামুটি সাজানোই আছে টাইগারদের
মুমিনুলের কথায়, ‘মুশফিক ভাই অবশ্যই খেলবে। আর সাকিব ভাই ফেরাতে দলের কম্বিনেশনটা খুব সহজ হয়। তখন একজন বোলার কম নিয়ে বেশি ব্যাটসম্যান খেলানোর সুবিধা থাকে।’
ম্যাচকে সামনে রেখে এখনও পিচ দেখার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশ। ধারণা থেকে পিচ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। মুমিনুল বলেন, ‘কন্ডিশন আমাদের কাছে একই মনে হচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচে যেমন কন্ডিশন ছিল মূল ম্যাচেও তেমন থাকবে আশাকরি। তেমনটা না হলেও অবাক হব না।’
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: শাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মেহেদী মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ, শরিফুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:DOING THE HONOURS | @ZimCricketv stand-in captain @BrendanTaylor86 and @BCBtigers skipper Mominul Haque unveiling the silverware during a ceremony held at Harare Sports Club on the eve of the match.#ZIMvBAN | #IspahaniTest | #TrophyUnveiling | #VisitZimbabwe | #BowlOutCovid19 pic.twitter.com/59SX8XLJAR
— Zimbabwe Cricket (@ZimCricketv) July 6, 2021
অভাব-অনটনের মধ্যেও হার মানেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার সুহাতা গ্রামের সুমাইয়া আক্তার। সংসারের ভার সামলে, মায়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা সেলাই ও টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নবীনগর মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন তিনি।
যেখানে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশ করেছে, সেখানে সুমাইয়ার এ সাফল্য এলাকাজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে এসএসসি পরীক্ষাতেও একই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি।
সুমাইয়ার পিতা মো. জীবন মিয়া পেশায় ইজি বাইকচালক। সীমিত আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই মা পারভীন আক্তার বাড়িতে মানুষের অর্ডার অনুযায়ী ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। মা-মেয়ের এই আয়ে চলে সংসার ও সুমাইয়ার পড়াশোনা। পাশাপাশি তিনি কয়েকজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। চাচা স্বপন মিয়ার অনুপ্রেরণায় নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে পড়াশোনা করেন সুমাইয়া।
সুমাইয়া বলেন, “আমার বাবা ঋণগ্রস্ত, অটোরিকশা চালিয়ে কিস্তি শোধ করতে হয়। ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় আছি, তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই — প্রয়োজনে আরও পরিশ্রম করব।”
বইমজুর হিসেবে পরিচিত তার চাচা হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, “সুমাইয়া অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। দর্জি কাজ, কাঁথা সেলাই এবং টিউশনি করে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। যারা তার পাশে ছিলেন, বিশেষ করে শিক্ষকমণ্ডলী, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মেয়েটি যেন উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সে জন্য সমাজের দয়ালু মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই কন্যার পর আবারও কন্যা শিশু জন্ম হওয়ায় পাঁচ দিনের নবজাতককে খালে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে শিশুটির বাবা ইব্রাহিম খলিল (৪২) থানায় এসে নবজাতক নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চান। তবে তার বক্তব্য সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুর মা শারমিনের সঙ্গে কথা বলে।
জিজ্ঞাসাবাদে শারমিন আক্তার জানান, তাদের আগেই পাঁচ বছর ও দেড় বছরের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পর পর কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় তিনি ক্ষোভের বশে নবজাতক শিশুটিকে বাড়ির পাশের খালে ফেলে দেন।
পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ খালের কচুরিপনার ভেতর থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে। ওই অবস্থায় নবজাতককে হাসপাতলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত শিশুর দাদি খাদিজা খাতুন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর গ্রেপ্তার শারমিন আক্তারকে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শিশুর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঠুন সরকার, ডিবি ও পিবিআই কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
খননের ৩ বছর পেরোতেই আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে জয়পুরহাটের চিরি নদী। প্রায় ২২ কিলোমিটার এ নদীর কোথাও কোথাও ভরে গেছে কচুরিপানায়। নদীর কোন কোন স্থানে পানি থাকলেও অনেক স্থানে নেই। এতে নদী খননের পর যে সুফল পাওয়ার আশা ছিল তা পাচ্ছেন না নদীর দুইপাড়ের মানুষরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নদী আন্দোলনের নেতারা জানান, অপরিকল্পিত খননে বালু ও মাটি আবারও নদীতে মিশে যাওয়া, বর্জ্য ফেলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারও ভরাট হচ্ছে এই নদী। তাই নদীর নাব্য টিকিয়ে রাখতে শুধু খনন করলেই হবে না, প্রয়োজন এর রক্ষণাবেক্ষণ।
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ৪টি নদী। এর মধ্যে আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার রয়েছে চিরি নদী। এটি শাখা নদী হিসেবে পরিচিতি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি নদীর খননকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। নদী খননের প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ছিল জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বছর সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা, পুনর্খননের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করা, নৌচলাচলের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু চিরি নদীতে এসব বেশিরভাগ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদী খননের ফলে সারা বছর পানি থাকার আশা থাকলেও শুকনো মৌসুমে কোথাও পানি থাকছে, কোথাও থাকছে না। নদী খনন করার সময় বাঁধের ওপর রাখা মাটি আবারও নদীতে মিশে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী ভরে আছে কচুরিপানায়। কোথাও পানি থাকলেও ময়লার কারণে হয়ে পড়েছে ব্যবহার অযোগ্য। এতে দিন দিন নদীটি নাব্য হারিয়ে ফেলছে। নদীরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।
সদর উপজেলার খঞ্জনপুর এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, নদী খনন করার আগে আমাদের বাড়ির কাছে চিরি নদীতে কিছু পানি থাকত। আমরা প্রতিদিনের কাজে পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু খননের পর আর পানি থাকছে না। নদী সংস্কার করেই আমাদের অসুবিধা হয়ে গেছে। পানি পাচ্ছি না, আবার কচুরিপানায় ভরে গেছে।
একই এলাকার রমজান আলী বলেন, ছোটবেলায় নদীতে অনেক মাছ ধরা হতো। মনে হয়েছিল নদী খনন করার পর নাব্য ফিরে আসবে। কিন্তু এখন তা দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ জায়গায় পানি নেই। আগে মাছ ধরা হতো। এখন পানি না থাকার কারণে মাছ ধরা যায় না। গোসল করা যায় না। নদী আমাদের কোনো উপকারে আসছে না।
সদরের কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করা হলো, পানি থাকবে বলে। কিন্তু নদীতে কোনো পানি নেই। উপকারের জন্য খনন করা হলো এখন উপকারের চেয়ে অপকারই হচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জয়পুরহাট জেলার সমন্বয়ক লুৎফুল্লাহিল কবির আরমান বলেন, চিরি নদী খনন করা হয়েছে পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে। নদী খননের সময় মাটি ও বালু নদীর পাড়ের ওপর রাখা হয়েছিল। পরে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবার নদীতে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করে কোনো লাভই হয়নি। নদী রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাটের ৪টি নদীর খননকাজ করা হয়েছে। এ থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। নদীগুলো খনন করায় বন্যার ঝুঁকি একেবারে কমে গেছে। তবে নদীগুলো বড় কোনো নদীর সঙ্গে সংযুক্ত না থাকার কারণে পানি কম থাকে। আর চিরি নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা কচুরিপানা জমে গেছে এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কচুরিপানা সরানো বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি নেটওয়ার্ক পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি দম্পতি হলেন চট্টগ্রামের আজিম ও মানিকগঞ্জের বৃষ্টি (ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে)। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি ওয়েবসাইটে পর্নো কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে বান্দরবানে যৌথ অভিযান চালিয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এবং এলআইসি শাখা তাদের গ্রেপ্তার করে। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কীভাবে তারা কাজ করতেন
২৮ বছর বয়সী বৃষ্টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে ‘বাংলাদেশের এক নম্বর মডেল’ হিসেবে পরিচয় দিলেও বাস্তবে তিনি আন্তর্জাতিক পর্ন সাইটে সক্রিয় পারফর্মার। ২০২৪ সালের ১৭ মে তার প্রথম ভিডিও প্রকাশিত হয় এবং এখন পর্যন্ত তার আপলোড করা ১১২টি কনটেন্টে ২৬৭ মিলিয়নের বেশি ভিউ রয়েছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক মনিটরিং সূত্রে জানা গেছে।
বৃষ্টি ও আজিম বিদেশি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি টেলিগ্রাম, টুইটার (এক্স) ও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে তাদের ভিডিওর প্রচারণা চালাতেন। শুধু অক্টোবরের শুরুর দুই সপ্তাহেই ৫০টির বেশি ফেসবুক পেজ থেকে তাদের কনটেন্টের লিংক প্রচার করা হয়েছে।
আজিম ও বৃষ্টির পরিচয়
আজিম চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যম জানায়, তিনি আগে থেকেই অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুলিশের নথি অনুসারে, গত ২৫ আগস্ট তিনি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হলেও দ্রুত জামিনে মুক্ত হন।
বৃষ্টি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা। পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি ঢাকায় চলে যান এবং পরবর্তীতে অনলাইনভিত্তিক এডাল্ট কনটেন্ট প্রোডাকশনে জড়ান। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এলেও বর্তমানে তাদের জীবনযাত্রা সামাজিক মাধ্যমে বিলাসবহুল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব ও অর্থ আয়ের কৌশল
তদন্তে দেখা গেছে, বৃষ্টির নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা হয়েছে, যা তারা দু’জনে যৌথভাবে পরিচালনা করেন। ওই চ্যানেলে নিয়মিত পেইড ভিডিও বিক্রি করা হতো। পাশাপাশি তারা আয়ের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে তরুণ-তরুণীদের এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। বৃষ্টির ফেসবুকে প্রায় ৪৯ হাজার এবং ইনস্টাগ্রামে ১২ হাজার অনুসারী রয়েছে।
আইনের চোখে অপরাধ
বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি তৈরি, প্রচার ও সংরক্ষণ ফৌজদারি অপরাধ। সিআইডি বলছে, এই দম্পতি শুধু অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, বরং দেশে বসে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন এবং অন্যদেরও এই চক্রে যুক্ত করছিলেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সিআইডি দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানা গেছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেশের ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। ইতোমধ্যে শীর্ষ ৪৫টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।
অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও ভ্যাকসিনসহ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দাবি করে বাপি বলছে, সামগ্রিকভাবে এই ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাপির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ১৮ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ভস্মিভূত হয়েছে। এই আকস্মিক ক্ষতি পুরো খাতকে বহুবিধ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
ডা. জাকির বলেন, দেশে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে সক্রিয়ভাবে উৎপাদনে আছে প্রায় ২৫০টি কোম্পানি। বাপির প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, শুধু শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানিরই প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে। অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষতির হিসাব যুক্ত হলে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে ছিল অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ তৈরির উপকরণ। শুধু তাই নয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরায় আমদানি করা সময়সাপেক্ষ। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি সময়সূচিও প্রভাবিত হবে।
বাপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ওষুধ শিল্প দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি মানসম্পন্ন ওষুধ ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশও রয়েছে। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে উৎপাদন চেইনে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।
তিনি বলেন, দেশের ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে চীন, ভারত ও ইউরোপ থেকে। এসব কাঁচামালের একটি বড় অংশ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত আকাশপথে আমদানি করা হয়। কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় এসব দামি কাঁচামাল ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে, বিকল্প হিসেবে অন্য এয়ারপোর্টে নামানো পণ্যগুলোকেও নিয়ে উদ্বেগ আছে, কারণ সেগুলোকেও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়।
আরও জটিলতা দেখা দিয়েছে নারকোটিকস বিভাগের অনুমোদন নেওয়া পণ্যগুলো নিয়ে। ডা. জাকির হোসেন বলেন, এই পণ্যগুলো পুনরায় আনা অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ, কারণ এতে ধাপে ধাপে একাধিক অনুমোদন নিতে হয়। ফলে এই দিক থেকেও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বাপির ধারণা, এই ক্ষতির প্রভাব সরাসরি কাঁচামালের বাইরে গিয়েও বিস্তৃত হবে। ‘একটি র-ম্যাটেরিয়াল হারালে সেই উপকরণে নির্ভরশীল প্রতিটি ফিনিশড প্রোডাক্টের উৎপাদনই অনিশ্চয়তায় পড়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে আমরা অনুমান করছি’— বলেন ডা. জাকির হোসেন।
তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি দ্রুত তদন্ত, ক্ষতিপূরণের কার্যকর ব্যবস্থা এবং বিকল্প কার্গো ব্যবস্থাপনা জোরদার করার আহ্বান জানান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসাইনকে এক মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা করেন অভিযুক্ত বর্ষা ও তার প্রেমিক মাহির। অভিযুক্ত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মঙ্গলবার রাজধানীর বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তার দাবি, প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বর্ষা ও মাহির।
ওসি বলেন, ‘প্রায় ৯ বছর ধরে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন মাহির রহমান। সম্প্রতি মেয়েটি তার টিউশন শিক্ষক জোবায়েদ হোসেনের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিষয়টি মাহিরকে জানালে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে মেয়েটি জোবায়েদের প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং মাহিরকে সঙ্গে নিয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।’
তিনি আরো জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুজনে মিলে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। সেদিনই দুটি সুইচগিয়ার কেনা হয়। পরিকল্পনা ছিল, দুই দিক থেকে আক্রমণ করে জোবায়েদকে হত্যা করা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার সন্ধ্যার আগে টিউশনিতে যাওয়ার পথে আরমানিটোলার নূরবক্স রোডের রৌশান ভিলার নিচে জোবায়েদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন মাহির রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিল বন্ধু ফারদিন আহম্মেদ আয়লান। আর পুরো ঘটনাটি সমন্বয় করেন ওই ছাত্রী।
ওসি রফিকুল বলেন, ‘প্রথমে মেয়েটি হত্যার কথা অস্বীকার করলেও মাহিরের মুখোমুখি করলে সত্য প্রকাশ পায়। তারা দুজনই স্বীকার করেছেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই পরিকল্পনা শুরু করেন এবং ১৯ অক্টোবর তা বাস্তবায়ন করেন।’
ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থীর বাসায় পড়াতে গিয়েছিলেন জোবায়েদ। বাসার গেট দিয়ে ঢুকে সিঁড়িতে ওঠার সময় সুইচগিয়ার দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরে রাতেই পুলিশ মেয়েটিকে হেফাজতে নেয়। পরদিন প্রধান আসামি মাহির রহমান ও তার সহযোগী ফারদিন আহম্মেদ আয়লানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মন্তব্য