২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দলের ফাস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব পান ওটিস গিবসন। বাংলাদেশে যোগ দেয়ার আগে তিনি হেড কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সাউথ আফ্রিকা দলে। উইন্ডিজের ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের কোচ ছিলেন এই ক্যারিবিয়ান কোচই। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছেন ইংল্যান্ডের বোলিং কোচ হিসেবে।
গিবসন কোচ হয়ে আসার পরে বাংলাদেশ দলের পেইসারদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে উন্নতি। গিবসনের কোচিং সময়ের অনেকখানি কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। তবুও তার কাজের প্রতিফলন দেখা গেছে তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানদের পারফরমেন্সে।
নিউজবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ওটিস গিবসন কথা বলেন বাংলাদেশের পেইসারদের নিয়ে। তাদের ভালো করার বাধা নিয়ে। জানান, ঘরোয়া ক্রিকেটে যথাযথ সুযোগ না পেলে, পেইসারদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করাটা অনেক কঠিন।
নিউজবাংলার সঙ্গে গিবসনের আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো -
বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব কেমন উপভোগ করছেন?
কাজ উপভোগ করছি। আমি ফাস্ট বোলিং ভালোবাসি। তাই পেইসারদের উন্নতি করতে ও তাদের লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করি। বোলারদের অ্যাকশন দেখে সেটিকে আরও ভালো করার চেষ্টা করি। কোচিংয়ে টেকনিক্যাল দিকগুলো বেশি পছন্দ করি। সঙ্গে কৌশলগত দিকগুলোও, যা তাদের বোলার হিসেবে আরও ভালো করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশ তাদের স্পিনারদের জন্যই পরিচিত। সাম্প্রতিক বেশ কয়েক জন পেইসার উঠে এসেছে। আপনার অধীনে থাকা এই পেইসারদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এখন পর্যন্ত রাহি আমাদের সেরা টেস্ট পেইসার। যখন আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র এক পেইসার খেলাই, তখন সে-ই ছিল আমাদের পছন্দ। সে খুবই ভালো বোলার। দুই দিকেই বল সুইং করাতে পারে। নির্ভুল লাইন-লেংথে বল করে।
তাসকিন গত ছয় মাসে অনেক উন্নতি করেছে। তার যে ভালো করার ইচ্ছা আছে সেটা বোঝা যায়। সে ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছে। তার রানআপ নিয়ে সামান্য কাজ করেছি। সঙ্গে কবজির অবস্থান নিয়েও। যা তাকে দুই দিকে বল সুইং করাতে সাহায্য করছে। সে ঠিক জায়গায় বোলিং করা নিয়েও কাজ করেছে।
হাসান মাহমুদ ও শরিফুল দারুণ প্রতিভা। দুজনেরই তাদের ক্যারিয়ারে দারুণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আরও কিছু পেইসার আছে। এবাদত শ্রীলঙ্কায় দারুণ গতিতে বোলিং করেছে। মুস্তাফিজ সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেছে। খালেদ একজন দারুণ পেইসার। সাইফুদ্দিন সীমিত ওভারে সব সময়ই দলে থাকে। তরুণ মুকিদুলও শ্রীলঙ্কা সফরে দারুণ সম্ভাবনা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের কাছে এখন নয় জনের পেইস বোলিং ইউনিট রয়েছে। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য দারুণ ব্যাপার।
আমার কাজ হচ্ছে তাদেরকে যেকোনো সময়ে যেকোনো ফরম্যাট খেলার জন্য প্রস্তুত করা। নির্বাচকদের চিন্তার খোরাক দেয়া যে কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেব। আমার কাজ তাদের স্কিলে উন্নতি করানো। এখনের চেয়ে আরও ভালো বোলার হিসেবে তৈরি করা।
বাংলাদেশের পেইসারদের ভালো করার ক্ষেত্রে মূল বাধা কী? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করার জন্য তাদের কী ধরণের উন্নতি প্রয়োজন?
বাংলাদেশে পেইসারদের জন্য মূল সমস্যা হলো তারা যথেষ্ট বোলিং করতে পারে না। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও। বাংলাদেশের ঘরোয়া কাঠামো পেইসারদের কেন্দ্র করে বানানো নয়। পেইসাররা হয়তো দিনে বা ইনিংসে ১০ ওভার বল করে। বাকিটা সময় স্পিনাররাই বল করে। তাই পেইসাররা খুব বেশি বল করার অভিজ্ঞতা পায় না। তাদের নিজেদের কাজ বা শরীরের ওপর চাপ সামলানোর ব্যাপারটির অভিজ্ঞতা থাকে না। অনেক ওভার বোলিং করে ম্যাচ জেতানো, এসব বিষয়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের পেইসাররা ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে পায় না।
যখন শ্রীলঙ্কার মাটিতে, যেখানে পেইসারদের জন্য কোনো সাহায্য নেই, সেখানে তাদেরকে অনেক ওভার করতে বলা হয় ও আশা করা হয় যে তারা উইকেট নিয়ে আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, সেটি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এটি তাদের জন্য অবশ্যই শেখার সুযোগ। সাধারণত বাংলাদেশ তাদের স্পিনারদের ওপর নির্ভর করে। এখন আমাদের হাতে বেশ কয়েকজন ভালো পেইসার রয়েছে। হয়তো এটিই এখন সুযোগ বাংলাদেশে পেইসারদের সহায়ক কন্ডিশন তৈরির। যাতে পিচগুলো সিমারদের উৎসাহিত করে জোরে বল করতে ও আরও ভালো বল করতে।
মূল সমস্যা হলো যথেষ্ট বোলিং না করা ও দলকে জেতানোর অবস্থায় না থাকা। তারা যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে এটি করে অভ্যস্ত না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে সেটি করা তাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আপনার অধীনে আমরা মুস্তাফিজকে ইনসুইঙ্গার করতে দেখেছি। তাকে ইনসুইং করাতে শেখানো কতটুকু কঠিন ছিল?
মুস্তাফিজের সঙ্গে কাজ করাটা খুবই উপভোগ করেছি। সে তার কবজির অবস্থান নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে, বিশেষ করে নতুন বলে ইনসুইঙ্গার করার জন্য। এর মধ্যেই আমরা তাকে ইনসুইঙ্গার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের প্যাডে আঘাত করতে দেখেছি।
সে আমার কাছে এসে বলেছে সে ইনসুইঙ্গার শিখতে চায় ও আমি তাকে সাহায্য করতে পারব কি না? কোচিংয়ের এ বিষয়টিই আমার পছন্দ যে আমি তাকে সাহায্য করতে পেরেছি। সে একজন দারুণ বোলার।
আমি ও রাসেল (ডমিঙ্গো) মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা মুস্তাফিজকে টেস্টের জন্য তখনই বিবেচনা করব যখন সে ইনসুইং করাতে পারবে। সে সেটি করেছে।
আমরা আইপিএলে মুস্তাফিজকে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি স্লোয়ার করতে দেখেছি। এগুলো নিয়ে কি আপনি তার সঙ্গে কাজ করেছেন?
যখন আমরা একসঙ্গে থাকি তখন আমরা অনেক কিছু নিয়ে কাজ করি। আমি তাকে এটিও বলি যে আইপিএল একটি দারুণ সুযোগ যেখানে সে অন্যান্য খেলোয়াড় ও কোচদের সংস্পর্শ পাচ্ছে। যখনই কোনো বোলার আইপিএল বা অন্য কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে যায় আমি তাকে বলি নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে। মুস্তাফিজ সেখানে গিয়ে নতুন কিছু স্লোয়ার শিখেছে যা আমাদের জন্য দারুণ হবে। আমি খুব বেশি আইপিএল দেখিনি। যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে সে তার স্লোয়ার নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী। সেটি বাংলাদেশের জন্য দারুণ হতে পারে।
এবাদত শ্রীলঙ্কায় ১৪৫ কিমি/ঘন্টা গতিতে বল করলেও সঠিক জায়গায় বল করতে পারেননি। সে কি ১৫০ কিমি/ঘন্টা গতিতে বল করতে পারবে? সঠিক জায়গায় বল করতে তার কী কী করা প্রয়োজন?
এবাদত খুবই ভালো বোলার। সে খুবই দ্রুত গতিতে বল করে। আমি সব সময়ই তাকে এবং সব বোলারকে বলি, তুমি যত জোরেই বল করো না কেনো, সেটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তুমি সঠিক জায়গায় বল করে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতে পারছো কি না। আমার মনে হয় সে যত আত্মবিশ্বাসী হবে, সে ১৫০ কিমি তে বল করতে পারবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে পেইসাররা ভালো করার পরও দুই টেস্টেই মাত্র একজন করে পেইসার খেলে। ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে সেটি কতখানি হতাশার?
যখন ৫-৬ জন পেইসার নিয়ে কাজ করবেন এবং মাত্র একজন একাদশে থাকবে তখন আপনি অবশ্যই হতাশ হবেন। একই সময়ে যদি কিউরেটর বলে যে কন্ডিশন পেইসারদের সাহায্য করবে না, পিচে স্পিন করবে। তখন আপনি স্পিনারদেরই খেলাবেন। এটি বাংলাদেশে হয়েই থাকে। এভাবেই বাংলাদেশ টেস্টে খেলে। ভবিষ্যতে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। ঘরের মাটিতেও এমন কন্ডিশন প্রস্তুত করতে হবে যা পেইসারদের সাহায্য করবে। যাতে আমাদের দুই বা তিন জন পেইসার খেলার সুযোগ পায়। কারণ পেইসাররা দ্রুত উন্নতি করছে। তারা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘরের মাঠে যথাযথ পিচ ও কন্ডিশন ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ভালো পেইসার গড়ে তোলাটা কতখানি কঠিন?
আগেই পেইসারদের জন্য আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে যথাযথ পিচের কথা বলেছি। আমাদের বেশ কয়েক জন তরুণ পেইসার আছে যাদের পিচ থেকে অনুপ্রেরণা দরকার। বাংলাদেশে অধিনায়করা কীভাবে পেইসারদের ম্যানেজ করে সেটিও একটি ব্যাপার।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পেইসাররা বলের শাইন নষ্ট করে। এরপর বাকি সময় স্পিনাররা বল করে। আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন পিচ তৈরি করা যা তরুণ পেইসারদের জোরে বল করতে উন্নতি করতে অনুপ্রেরণা দেবে। যা তাদেরকে সাহায্য করবে ফাস্ট বোলিংয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।
ঘরের মাঠে জানেন আপনি কী পাবেন। আমাদের হয়তো ঘরের মাটিতে মানসিকতা বদলাতে হবে কারণ আমরা যখন দেশের বাইরে যাই, তখন পেইসারদের ওপর ভালো বোলিং করে টেস্ট জেতানোর দায়িত্ব থাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা যখন সে সুযোগ পায় না, তখন বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটি করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অবশ্যই নতুন করে ভাবতে হবে। যেন আমরা আমাদের পেইসারদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি।
শেষ প্রশ্ন, বিদেশী কোচদের জন্য বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অনুসরণ করা বেশ কঠিন কাজ। আপনার কোনো পরামর্শ আছে এ ব্যাপারটিতে, কীভাবে আপনারা সব সময় খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে পারেন?
খুব ভালো প্রশ্ন। অবশ্যই আমাদের জন্য কঠিন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অনুসরণ করা। আমি যেটা করার চেষ্টা করি তা হলো যত জন পেইসারের সংস্পর্শে আসি তাদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলি। সেখানে আমি তাদের জন্য আমি কিছু কাজ দেই, তাদের কাজের ধরণ ও পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করি, যেন তারা কী করছে তা অনুসরণ করতে পারি। আমি যে কারও সাথে কাজ করতে আগ্রহী।
আমার মনে হয় যে যদি বিসিবিতে একজন ফাস্ট বোলিং কোচ থাকে যাকে ভবিষ্যতের জন্য ভাবা হচ্ছে, তাহলে তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে রাখা উচিত। যাতে করে সে দেখতে পারে আমরা কীভাবে কাজ করি। শুধু ফাস্ট বোলিং কোচ না, ব্যাটিং কোচ বা ফিল্ডিং কোচের ক্ষেত্রেও এটা হতে হবে। একজন ঘরোয়া কোচ, যে দলের সঙ্গে থেকে সব ধরণের কাজ দেখবে ও পরবর্তীতে ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই বার্তাটি পৌছে দেবে। তখন সব জায়গার খেলোয়াড়রা একই বার্তা পাবে।
ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর উন্নতির জন্য বিসিবি এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে জাতীয় দল থেকে একই বার্তা যেন সব ধরণের ক্রিকেটে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রাণি থেকে মানুষের দেহে রোগ ছড়ানো মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রাণির রোগ নিয়ন্ত্রণ করা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আমরা বিশেষ কোন রোগ জানা মাত্রই তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। সকল প্রাণিকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে সরকার ভ্যাকসিন উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করবে। আমরা প্রাণি থেকে মানুষের দেহে রোগ ছড়ানোর চান্স দিতে চাই না।
রোববার দুপুরে রংপুর আরডিআরএস বেগম রোকেয়ার মিলনায়তনে লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আয়োজনে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, নিরাপদ মাংস, দুধ, ডিম পেতে হলে প্রাণিকে নিরাপদ ও রোগমুক্ত করতে হবে। আমরা যেহেতু ভ্যাকসিন আমদানি করি, তাই দাম বেশি হওয়ায় খামারিরা প্রাণিদের ঠিকমত ভ্যাকসিন দিতে পারে না। আমরা সকল প্রাণিকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ান হেলথ কনসেপ্টের আওতায় মানুষ ও প্রাণি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, যুগ্ম সচিব মোসাম্মৎ জোহরা খাতুন, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. আব্দুল হাই সরকারসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শন নিয়ে উত্তেজনা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে কর্মশালায় শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। রোববার দুপুর রংপুর আরডিআরএস বেগম রোকেয়ার মিলনায়তনে লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আয়োজনে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিভাগীয় কর্মশালায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেন্টেশন দেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী।
প্রকল্পের তথ্য-চিত্র প্রদর্শনের সময় একটি স্লাইডে প্রশিক্ষণ কর্মশালার ছবিতে হলরুমে অতিথিদের মাথার উপর শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি দেখা যায়। চব্বিশের গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী পতিত সরকার প্রধানের ছবি প্রদর্শন নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী করেন।
এ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে না। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হয় তবে সেটি চরম অবমাননাকর। এত মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আমলে এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে যিনি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন করেছেন, তিনি বলেছেন এটি ভুলক্রমে হয়েছে। তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা মনে করছি ফ্যাসিবাদ জাস্ট চলে গেছে। ফ্যাসিবাদ অনেক রকম রূপে রয়েছে, তার প্রতিফলন নানাভাবে ঘটছে। আমরা যখন বিষয়গুলো জানতে পারছি, তাক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়নের করতোয়া নদীর ওপর স্থায়ী সেতু হয়নি। ফলে নদীর দুই তীরে থাকা অন্তত কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আজও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করছে। ভরসা কেবল একটি কাঠের সাঁকো। এতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে স্থানীয়দের।
গ্রামের শত শত মানুষ প্রতিদিন কাঠের সাঁকো পেরিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি কার্যক্রমে পড়ছে বড় ধরনের বাধা। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি জরুরি মুহূর্তে রোগী বা গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষার সময় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, একদিকে নেই গাড়ি যাতায়াতের সেতু অপরদিকে নেই রাস্তাঘাট। এ কারণে এই এলাকায় কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। তাই এই নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী, কৃষক, নারী-পুরুষ সবার জীবনযাত্রায় আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। শুধু তাই নয়, এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সেতুটি হবে মাইলফলক।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বারবার দাবি জানিয়েছি, এখানে একটা স্থায়ী সেতু খুবই দরকার। জনগণের ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘আমি উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলব। এখানে যাতে স্থায়ী সমাধান হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
একটি সেতু শুধু যোগাযোগের পথ নয়, বদলে দিতে পারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির চিত্র। নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতুই বদলে দিতে পুরো এলাকার ভাগ্যচিত্র।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপির) আওতায় ব্রিজ নির্মাণের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র কয়েকদিনের মধ্যে পাঠাব।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) সামগ্রিক শৃঙ্খলা অবনতি, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদান পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটানো এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে শাস্তি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধঘোষিত) ১৯ জন নেতা-কর্মী।
এদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও। অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জনকে আজীবন, ১ জনকে ৫ সেমিস্টার, ৭ জনকে ৪ সেমিস্টার ও ৭ জনকে ৩ সেমিস্টার পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলাম রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় এই শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিজেন্ট বোর্ডের ৪নং আলোচ্যসূচিতে ছিল বিষয়টি ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় ৪ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
বাকি ১৫ জনকে তাদের অপরাধের ধরন ও গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন মেয়াদে শান্তি এবং বহিষ্কার আদেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র আরও জানায়, একটি বিশেষ ছাত্রসংগঠনের প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাখিলকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪৭তম (জরুরি) রিজেন্ট বোর্ড সভায় ১৯ জন শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের ২৪৮তম সভায় পুনর্গঠিত অধিকতর তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ এবং অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত এবং সুপারিশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে সাময়িক বহিষ্কার আদেশপ্রাপ্ত ১৯ জন শিক্ষার্থী দোষী প্রমাণিত হয়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি মানিক শীল (ইএসআরএম), সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির (অর্থনীতি), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাওন ঘোষ (অর্থনীতি) ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাদিক ইকবাল (পদার্থবিজ্ঞান)। সহসভাপতি রায়হান আহমেদ শান্তকে (পদার্থ বিজ্ঞানকে) ৫ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া চার সেমিস্টারে জন্য ৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- খালেকুজ্জামান নোমান (অর্থনীতি), সাখাওয়াত আহমেদ শুভ্র (গণিত), মো. আব্দুল্লাহ সরকার উৎস (গণিত বিভাগ), মো. আবিদ হাসান মারুফ (গণিত), রানা বাপ্পি (রসায়ন বিভাগ), মো. যোবায়ের দৌলা রিয়ন (রসায়ন), নাহিদ হাসান (ব্যবস্থাপনা)।
আরও ৭ জনকে তিন সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন- সুজন মিয়া (অর্থনীতি বিভাগ), জাহিদ হাসান (হিসাববিজ্ঞান), মো. নাঈম রেজা (অর্থনীতি), ইমতিয়াজ আহমেদ রাজু (সিপিএস), মো. রিফাত হোসেন (হিসাববিজ্ঞান) বিভাগ, ইমরানুল ইসলাম (সিপিএস), মো. আনোয়ার হোসেন অন্তর (পদার্থবিজ্ঞান)।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যদগুলোর অনুমোদনক্রমে ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
মাগুরা আন্তঃপ্রেসক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্টে মাগুরা প্রেসক্লাবকে ১-০ গোলে পরাজিত করে শালিখা প্রেসক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
মাগুরা প্রেসক্লাব আয়োজিত সকল উপজেলার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নিয়ে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কৃষিবিদ গ্রুপ ও ইম্পেরিয়াল রিয়েল স্টেট লিমিটেডের সহযোগিতায় ও মাগুরা প্রেসক্লাবের আয়োজনে গত শনিবার মাগুরা স্টেডিয়ামে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মাগুরা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল।
মাগুরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। দিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে চার উপজেলার সাংবাদিকদের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশে যেন এক মিলনমেলা বসে ছিল স্টেডিয়াম।
এ খেলায় অংশ নেন ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল বয়সের সাংবাদিকরা। প্রতি উপজেলা থেকে ২০ জন করে সাংবাদিক এ আয়োজনে অংশ নেন।
মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম ও টুর্নামেন্টের উদ্বোধক ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক কৃষিবিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল। এছাড়া মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মাগুরা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক শাহিন আলম তুহিন, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ড. মুসাফির নজরুল, মহম্মদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান টুটুল ও শালিখা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রব মিয়া।
প্রথম সেমিফাইনালে মাগুরা প্রেসক্লাব ৪-০ গোলে শ্রীপুর প্রেসক্লাবকে পরাজিত করে। অপরদিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শালিখা প্রেসক্লাব ১-০ গোলে মহম্মদপুর প্রেসক্লাবকে পরাজিত করে। খেলা শেষে সাংবাদিকদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন , মাগুরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের এমন আয়োজন সত্যিই খুবই প্রশংসনীয়। সাংবাদিকরা যে শুধু কলমের মাধ্যমেই দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে তাই নয় তারা খেলাধুলার মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে । আর এটা দেখে বাংলাদেশের সব জেলার সাংবাদিকদের এ ধরনের আয়োজনে অনুপ্রাণিত করবে। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের জন্য অতিথিরা মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিককে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপের পাশাপাশি চার উপজেলার প্রেসক্লাবের মাঝে শুভেচ্ছা ট্রফি তুলে দেন অতিথিরা। এছাড়া ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে সেরা প্রতিবেদনের জন্য মাগুরা প্রেসক্লাবের ৪ সাংবাদিককে সেরা সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
সেরা সাংবাদিক চারজন হলেন, এনটিভির মাগুরা স্টাফ করোসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম শফিক, নাগরিক টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মতিন রহমান, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শাহিন আলম তুহিন এবং ডেইলি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের জেলা প্রতিনিধি লিটন ঘোষ।
এছাড়া জুলাই-আগস্টের শহীদ ও প্রয়াত সাংবাদিকদের মাগফিরাত কামনায় মাগুরা প্রেসক্লাবে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল ও মধ্যাহ্ন ভোজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরের নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিন দিন উজানের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নদীর তীরবর্তী মানুষের জানমাল ও কৃষি রক্ষায় সতর্ক করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রোববার উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিকেল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার নিচে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার দিনভর ডালিয়া পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাউবোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এবং এর উজান ভারতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে রংপুর বিভাগের তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সেই সাথে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপ চর প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে বন্যার পূর্বাভাস জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য ইউনিট সতর্কতা জারি করেছে। তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শংঙ্কায় সেখানকার পরিপক্ক সবজি দ্রুত সংগ্রহ করা, জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করা এবং জলাবদ্ধতা পরিহারের জন্য জমির চারপাশে নিষ্কাশন নালা তৈরি করা, আমন ধানের জমির
নিষ্কাশন নালা পরিস্কার রাখা, আমন ধানের জমির আইল উঁচু করা, সেচ, সার ও বালাইনাশাক প্রয়োগ বন্ধ রাখা, কলা ও দন্ডায়মান সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করা, আখের ঝাড় বেঁধে দেয়া, গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি থাকার জায়গা পরিস্কার ও শুকনো রাখা, পুকুরের চারপাশে উঁচু করে দেয়া, অতিরিক্ত পানিতে মাছ রক্ষায় চারপাশে জাল বা বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘিরে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রংপুর গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমার পুরো ইউনিয়নই তিস্তা নদী বেষ্টিত। তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি আমি নদীর তীরবর্তী বসবাসকারীদের জানিয়ে দিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথেও যোগযোগ করা হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ৩ দিন তিস্তার পানি বৃদ্ধি পারে। এ তথ্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নে জনবসতি এলাকায় সড়কের পাশে চলছে বালু বিক্রির রমরমা ব্যবসা। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটা থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক পরিবার গৃহহীন হওয়ার উপক্রম। এই পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
পেয়ারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বালু বিক্রি করছে। এর ফলে স্থানীয় আঞ্চলিক সড়কগুলো বালুর স্তূপে অধিকাংশ সময় অবরুদ্ধ থাকে, যা পথচারী ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়, সড়কে বালুকাঁদা জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে হালকা যানবাহন, মটরসাইকেল, ইজিবাইক, মিনিট্রাক সহ ইঞ্জিনচালিত অন্যান্য যানবাহনেও ঘটে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বর্ষাকালে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এহেন সমস্যার ব্যাপারে উক্ত এলাকার
ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক জমাদ্দার জানান, বালু স্তুপকৃত ঐ জমি নিয়ে আমাদের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, বালু ব্যবসায়ীরা এলাকার প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বাড়ির সামনে বালুর স্তূপ করে রেখেছে। এ কারণে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বালুর স্তূপ করে চলাচলের রাস্তা টুকু বন্ধ করে দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বালুর সাথে পানি মিশে কাঁদামাটি হয়ে যায় এবং পানি সরাসরি আমাদের ঘরে ঢুকে যায়। পানির কারণে আমাদের বাড়ি-ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ওই এলাকার আরেক ভূক্তভোগী আ. আজিজ জমাদ্দার বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা ঐ সমস্যার কারণে স্কুলে যেতে বিড়ম্বনার শিকার হয়, কেননা রাস্তা পুরোটাই পানি ও বালুতে ভরা থাকে। আমরা আমাদের সমস্যার কথা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, এরপর তারা উক্ত ব্যবসা সাময়িক বন্ধ রাখে, কিছুদিন পর তারা আবার তা পুণরায় চলমান করে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের কাছে আইনি প্রতিকার চেয়েছি।’
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীরা জনদূর্ভোগ সৃষ্টকারী অবৈধ ওই বালু বিক্রির রমরমা ব্যবসা বন্ধের জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এলাকার মানুষের দাবি বালুর ব্যাবসা বন্ধ করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেয়া হোক। এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
স্থানীয়রা এখন তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে, যেখানে তাদের রয়েছে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আস্থা, যা পেলে ভুক্তভোগীরা দুঃসহ উক্ত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের হেনা বুলবুলির ঘর থেকে অবৈধভাবে মজুদ রাখা ৬৪ বস্তা সার জব্দ করেছে পুলিশ। রোববার বিকেলে এ সার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় আমতলী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলি গত ৩ বছর ধরে অবৈধভাবে সার মজুদ করে আসছেন। ওই সার তার স্বামী মজনু চৌকিদার ও ছেলে হাসান চৌকিদার এলাকার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত বুধবার তিনি (নারী ইউপি সদস্য) আমতলী থেকে দের’শ বস্তা ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার অবৈধভাবে ক্রয় করে উত্তর তক্তাবুনয়া গ্রামের বাড়ীতে মজুদ করেছেন। ওই সার থেকে তিনি গত তিন দিনে ৮৬ বস্তা সার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। রোববার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমতলী থানা পুলিশ ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান অভিযান চালিয়ে নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলির ঘর থেকে ৬৪ বস্তা সার জব্দ করেছে। এর মধ্যে ৪১ বস্তা ইউরিয়া, ২৩ বস্তা টিএসপি ও এমওপি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলির স্বামী মজনু চৌকিদার ও তার ছেলে হাসান চৌকিদারের নামে সার বিক্রির লাইসেন্স নেই। তারা উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র ডিলার নয়।
অবৈধ সার মজুদকারী ও বিক্রেতা হাসান চৌকিদার তার বাড়ীতে সার মজুদ রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্স আছে। তাই কীটনাশক বিক্রির পাশাপাশি সার বিক্রি করছি।
নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলি বলেন, আমার ছেলে কীটনাশকের ব্যবসা করে। ওই সঙ্গে সারও বিক্রি করে। আমার ছেলের নামে সার বিক্রির ক্ষুদ্র লাইসেন্স আছে।
আমতলী উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ৬৪ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্যের ঘর থেকে মজুদ রাখা ৬৪ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত সার থানার আনা হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. রাসেল বলেন, ৬৪ বস্তা মজুদ সার নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলির ঘর থেকে জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে সার মজুদ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নারী ইউপি সদস্যের স্বামী ও তার ছেলের নামে সার মজুদ ও বিক্রির কোন ক্ষুদ্র লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তারা অবৈধভাবে সার মজুদ ও বিক্রি করে থাকেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অবৈধভাবে সার বিক্রির সুযোগ নেই।
মন্তব্য