দিনের শুরুই যদি দিনের বাকি পথটা গড়ে দিত, তবে ভালো বিপদেই পড়ত বাংলাদেশ। পাল্লেকেলে টেস্টের দ্বিতীয় ওভারেই যে বিদায় নেন ওপেনার সাইফ হাসান!
শেষ পর্যন্ত আর তা হয়নি। টসে জিতে অধিনায়ক মুমিনুল হক ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরির সঙ্গে তামিমের ৯০ ও অধিনায়কের ফিফটিতে প্রথম দিন নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম দিনের খেলাশেষে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩০২ রান। উইকেটে শান্তর সঙ্গে আছেন মুমিনুল।
শান্ত অপরাজিত আছেন ১২৬ রানে। মুমিনুল খেলছেন ৬৪ রানে।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্ব ফার্নান্দোর ভেতরে আসা বল সাইফ মিস করলে তার প্যাডে লাগে বল। লঙ্কানদের প্রাথমিক আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
ফলে রিভিউ নেয় শ্রীলঙ্কা। সেখানে দেখা যায়, আউট ছিলেন সাইফ। আগের দুই টেস্টেই ব্যর্থ হওয়া সাইফ তাই ফেরেন রানের খাতা না খুলেই।
সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাক করেন তামিম। অন্যপ্রান্তে নিজের নামের মতোই ধীরস্থির ছিলেন শান্ত। তামিম নিজের ব্যক্তিগত ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন মাত্র ৫৩ বলে। আক্রমণের ধারা বজায় রাখেন তারপরও।
শান্ত নিজের ফিফটি তুলতে খরচ করেন ১২০ বল।
শুরুর ধাক্কার পর দুজনের ১৪৪ রানের জুটিতে এরপর পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। তামিম পেতে পারতেন নিজের দশম শতক।
কিন্তু ফার্নান্দোর বলে স্লিপে লাহিরু থিরিমান্নের হাতে ধরা পড়লে তাকে ফিরতে হয় ৯০ রানে। সেই ৯০ রান করতে তামিম খরচ করেছেন ১০১টি বল, সেখানে চার ১৫টি।
দিনের ৩৯তম ওভারে তামিম ফিরে যাওয়ার পর বাকিটা গল্প কেবল শান্ত ও মুমিনুলের। দুজনে মিলে গড়েছেন ১৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। যা নিশ্চিত করেছে প্রথম দিনটা নিজেদের পকেটে নিয়েই হোটেলে ফিরছে বাংলাদেশ দল।
এই ম্যাচের আগে রানখরায় ভুগতে থাকা শান্ত তুলে নেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরিতে পৌঁছুতে খরচ করেছেন ২৩৫ বল। হাঁকান ১০টি চার ও ১টি ছয়।
দ্বিতীয় ওভারে ব্যাটিংয়ে নামার পর বাকি ৮৮ ওভার প্রায় নিখুঁত ব্যাটিং করেছেন শান্ত। ২৮ রানে ধনঞ্জয় ডি সিলভার বলে একটি সুযোগ দিয়েছিলেন বটে কিন্তু সেটি ধরতে পারেননি উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়েলা।
সেই সুযোগ পেয়ে আর ভুল করেননি শান্ত, দিনের খেলা শেষে খেলেছেন ২৮৮ বল, ১৪টি চার ও এক ছয়ে অপরাজিত আছেন ১২৬ রানে।
এই সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে দুই বছর পর প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দেশের বাইরে সেঞ্চুরি করলেন শান্ত। এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার।
অন্য প্রান্তে শান্তকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গিয়েছেন মুমিনুল হক। শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের পঞ্চাশ ছুঁতে বল খরচা করেন ১১৭টি। দিনশেষে তিনি অপরাজিত ৬৪ রানে। মেরেছেন ৬টি চার।
সারা দিনে শ্রীলঙ্কার হয়ে উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার বিশ্ব ফার্নান্দো। বাকিদের কারো ভাগ্যেই জোটেনি উইকেট। তেমন কোনো সুযোগও তৈরি করতে পারেননি তারা।
আরও পড়ুন:Stumps in Pallekele 🏏
— ICC (@ICC) April 21, 2021
An unbroken 150-run third-wicket stand between Najmul Hossain and Mominul Haque has taken Bangladesh to 302/2 at the end of day one.#SLvBAN | #WTC21 | https://t.co/o4z3X5YwQd pic.twitter.com/D9Z5oxSdtm
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে এখন থেকে ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুকী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রবিবার উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন দিবস হিসেবে জাতীয় দিবস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফারুকী বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে আগামী ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হবে, চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আগামী সোমবার মাসব্যাপী কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ১৪ জুলাই থেকে জুলাই কর্মসূচির মূল আয়োজন শুরু হবে। আন্দোলনে যেভাবে দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, একইভাবে সবাইকে নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।’
পাশাপাশি ফারুকী জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেডিও বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসিত করার চিন্তা করা হচ্ছে। শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সিআর আবরার এ বিষয়ে কাজ করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ শতাধিকের বেশি।
জানা গেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে।
বিশেষ করে বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। বরগুনা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদেরও চাপ বেড়ে গেছে। অনেক হাসপাতালে রোগীর বেড ও জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের প্রথম দুসপ্তাহেই প্রায় ৫০০ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই শহর এলাকার বাসিন্দা হলেও গ্রামীণ অঞ্চলেও আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকা বলেন, ‘চিকিৎসা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে প্রতিদিন যে হারে রোগী আসছে, তা সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের বেড সংকট, স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’
তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের মশার কামড়ে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় হাসপাতাল চত্বরেও মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছি। এবং হাসপাতালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের সেচ্ছাসেবকরা জনসচেতনা মূলক মাইকিং ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে না পারলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও মশক নিধনে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
তবে বরগুনা পৌরসভার অনেক নাগরিক অভিযোগ করছেন, পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। অনেক এলাকায় এখনো মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি ও পারিবারিক সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন ঘরের আশপাশের জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, ফুলের টব, ড্রাম, কনটেইনার, এসি ট্রে ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া দিনে ও রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার ও মশা নিধনের স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিক্ষার্থী লেখাপড়া করবে, খেলাধুলা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তারওপর একজন কোরআনে হাফেজ, সে তো বসে থাকার কথা নয়, কোরআন তেলোয়াত করে, মাহফিল করে মঞ্চ মাতানোর কথা যার, বিধির নির্মম পরিহাস, সে মেধাবী রুহুল আমিন এখন লোহার শিকলে বন্ধি। একেই বলে মেধাবীরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধিকতায় আস্টে-পিস্টে আটকে আছে। রূপগঞ্জের জাঙ্গীর এলাকার হতদরিদ্র ঘরের সন্তান রুহুল আমিন। হয়েছিল কোরআনে হাফেজ, মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছিল জিপি-এ গ্রেড। এমনকি আজান প্রতিযোগীতায় জেলা পর্যায়ে হয়েছিল তৃতীয় স্থান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার দুই দিন পর হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। মানুষ দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করার কারণে রুহুল আমিনকে ১৫ বছর ধরে জরাজীর্ণ একটি ঘরে শিকলে বন্দি করে রেখেছেন তার পরিবারের লোকজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর দারকাবো টেক এলাকার হতদরিদ্র ইদ্রিস আলীর চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট রুহুল আমিন। বড় ছেলে সিএনজি চালক, মেজো ছেলে রং মিস্ত্রি আর সেজো ছেলে পেশায় স্যানেটারির কাজ করেন। অসুস্থতার কারণে রুহুল আমিনের বাবা ইদ্রিস আলি কোনো কাজ করতে না পারায় সংসারে বেড়েছে অভাব অনটন। পারছে না চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করতে। এলাকাবাসী জানায়, ছোট বেলা থেকেই মেধাবী হওয়ায় রুহুল আমিনকে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি করা হয় স্থানীয় ফাজিল মাদ্রাসায়। হয়েছিলেন কোরআনে হাফেজ। ২০০৬ সালে জেলা পর্যায়ে জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় আজানে তৃতীয় স্থান অর্জন করে সে। ২০১০ সালে দাখিল পরীক্ষার শেষের দিকে অসুস্থবোধ করে সে।
এদিকে ২০১৮ সালে পরিবারের লোকজন এলাকাবাসীর সহায়তায় রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। ২০২১ সাল পর্যন্ত সেখানে চলে তার চিকিৎসা। সর্বশেষে ২ মাস সেখানে ভর্তি রাখা হয়। কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছিল তার অবস্থার। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন রুহুল আমিনকে রাজধানী যেকোনো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তর সার্বিক সহায়তা করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। রুহুল আমিনের উন্নত চিকিৎসার জন্য যা করা দরকার সব ব্যবস্থা করব। আর্থিক সহায়তা লাগলে উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে নিয়ে সবাই মিলে ব্যবস্থা করব।
মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কক্সবাজারের আশ্রয় শিবির থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এই পথের আগালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়বে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে এসব কথা ওঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গা বিদ্রোহের ঝুঁকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শরণার্থীদের মধ্যে থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য সদস্য সংগ্রহের ঝুঁকি এবং তা প্রশমনে পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির ক্রমাগত অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতায় জড়িত থাকা এই গোষ্ঠীগুলো গত নভেম্বরে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সহিংসতা কিছুটা কমলেও সদস্য সংগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে ধর্মীয় আহ্বানকে কেন্দ্র করে, যেহেতু আরাকান আর্মির পেছনে রাখাইনের বৌদ্ধ জনগণের সমর্থন রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রায় পুরোই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার প্রচেষ্টা নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে নামলে আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে বাড়তি অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। যদিও অতীতে এই গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করেছিল, এবার আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে তারা ভিন্ন অবস্থান নেয়। তবে সেনাবাহিনীর এই কৌশল শেষ পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য বয়ে আনতে পারেনি।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। শরণার্থী শিবিরে সহিংসতা হ্রাস করে ঐক্য প্রচেষ্টায় সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশের। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে তাদের প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনা আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে যে এলাকাগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করা হয়েছিল, সে স্থানগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। এদিকে জান্তা সরকারের বিরোধিতার জন্য সাধারণ জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে আরাকান আর্মির পিছে। রোহিঙ্গারা তাদের বিরোধিতা করলে বরং শরণার্থীদের প্রতি মিয়ানমারে আরও বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, বাংলাদেশের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, রাখাইনে বাণিজ্য ও সহায়তা জোরদার করা এবং শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব কমানো। এতে সীমান্তে স্থিতিশীলতা আসবে এবং রোহিঙ্গা নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে। আরাকান আর্মির উচিত রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রমাণ করা যে তারা সবাইকে নিয়ে শাসন চালাতে সক্ষম। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈদেশিক সহায়তা কমাচ্ছে, তাই আন্তর্জাতিক দাতাদের উচিত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে সহায়তা আরও বাড়ানো।
আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে।
আসন্ন এ নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়েসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে উপদেষ্টা এ সমর্থন কামনা করেন।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের ১টি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে নদনদী ও মেরিটাইম সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান তিনটি বৃহৎ সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় চুয়ান্নটি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে। হাজারের ওপর নদনদী দেশজুড়ে জালের মতো বিস্তৃত। দেশে ১০ হাজার কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ নৌপথ রয়েছে। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিতে এবং মেরিটাইম সেক্টরের বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘোষণা করেছে।
এ সময় উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামুদ্রিক ঐতিহ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান অবদান তুলে ধরেন।
তিনি জানান, মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশ গ্রহণ রয়েছে। এ সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়েও বাংলাদেশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ হাজারের বেশি জাহাজ, ৯৫টি সমুদ্রগামী ও ২০ হাজারের বেশি উপকূলীয় জাহাজ আসে।
তিনি টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আইএমওয়ের কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, জাহাজ পুনর্ব্যবহার খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ১২০ জনের বেশি নারীসহ ২১ হাজার প্রশিক্ষিত নাবিক দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নাবিক কল্যাণ ও জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে। উপদেষ্টা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জাহাজ শিল্পে নরওয়ে সরকারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জাহাজ নির্মাণ ও পুনর্ব্যবহার খাতে নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানি ও জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের সতর্ক অবস্থানের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, মাতারবাড়ি ও মোংলা গভীর সমুদ্রবন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে নরওয়ে কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতার পরিসর নিয়ে আজ আলোচনার শুরুতেই একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে এই কথা জানান কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় কম। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে একমত হয়ে জুলাই মাসের মধ্যে “জুলাই সনদ” চূড়ান্ত করতে হবে। কমিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এসবের মধ্যেও আলোচনা ফলপ্রসূ করতে সবার সাহায্য প্রয়োজন।’
আলী রিয়াজ জানান, যেসব বিষয়ে আজও সমঝোতা হবে না, সেগুলো নিয়ে আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় বসা হবে।
আজ চতুর্থ দিনের আলোচনায় যে বিষয়গুলো থাকছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো— প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ।
গতদিন যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আজকের আলোচনার সূচনা হবে বলে জানান কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এনসিপির হয়ে রয়েছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আর জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
মন্তব্য