বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম উইকেটকিপার কে, এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গবেষণা করতে হবে না। তিনি মুশফিকুর রহিমই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেটকিপার হিসেবে ৩৮৮ ইনিংস খেলেছেন মুশফিক, তাতে তার মোট ডিসমিসাল ৪০৬টি। এর মধ্যে ৩১৬টি ক্যাচ ও ৯০টি স্ট্যাম্পিং। ওয়ানডেতে ২৩৪টি ডিসমিসাল রয়েছে তার, এতে ১৮৮টি ক্যাচ ও ৪৬ স্ট্যাম্পিং। টেস্টে ক্যাচ ও স্ট্যাম্পিং যথাক্রমে ১০৬ ও ১৫টি, টি-টোয়েন্টিতে ৬২ ও ৩৩টি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডিসমিসাল খালেদ মাসুদের, কিন্তু ২১৩টি ডিসমিসাল নিয়ে তিনি মুশফিক থেকে পিছিয়ে আছেন বিরাট ব্যবধানে।
তাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম উইকেটকিপার কে, এই প্রশ্ন নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন আসে, মুশফিক কী আদৌ বাংলাদেশ দলের সেরা উইকেটকিপার?
সেরা এবং সফলতম- এই দুটির মধ্যে পার্থক্যের প্রশ্নটা এ কারণেই যে, কেউ সফল হলেই তিনি সেরা হবেন এমনটি নয়। উইকেটকিপিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিং মিলিয়ে যে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, তাতে মুশফিক সফলতম এবং সেরাও। কিন্তু স্রেফ উইকেটকিপিংয়ের কৌশলের বিচারে মুশফিকই সেরা কি না, তা নিয়ে নানা সময়ে উঠেছে প্রশ্ন।
নানা সময়ের এই প্রশ্নগুলো সামনে আসার কারণ মুশফিক নিজেই। মুশফিক সহজ সুযোগ নিতে গিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছেন, এমন দৃশ্য নিয়মিতই আসছে বাংলাদেশ সমর্থকদের সামনে।
২০১৬ সাল পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা যায়, টেস্টে মুশফিকুর রহিম তার পাওয়া সুযোগগুলোর মধ্যে মিস করেছেন ৩২ শতাংশ! তার সমসাময়িক উইকেটকিপারদের মধ্যে পাকিস্তানের সরফরাজ আহমেদ মিস করেছেন ২১ শতাংশ, বিজে ওয়াটলিং মাত্র ১১ শতাংশ।
২০১৬-এর পরও বেশ কিছু সাধারণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য টেস্টে উইকেটকিপিং ছাড়েন ২০১৯ সালে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের পর। তার পর দায়িত্ব নেন লিটন দাস।
সেই লিটন আছেন ওয়ানডে দলেও, নিয়মিত মুখ হিসেবেই। কিন্তু লিটন সুযোগ পাচ্ছেন না উইকেটকিপার হিসেবে। কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, মুশফিকের তুলনায় লিটন ভালো ফিল্ডার হওয়ায়ই এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু কিপিংয়ে কি এগিয়ে মুশফিক?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ বলেন, মুশফিক ভালো কিপার হলেও সেরার বিচারে আসবেন না। সে জায়গা নুরুল হাসান সোহান এবং লিটনের জন্যই বরাদ্দ।
‘মুশফিক ভালো কিপার। কিন্তু সে বাংলাদেশের সেরা না। সেরা কিপার বললে বলব সোহান এবং লিটন’, বলেন তিনি।
মুশফিক ভুল করছেন নিয়মিতই। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবালের থ্রো থেকে তাদের অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনকে আউট করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল, কিন্তু আগেই হাত দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে তা নষ্ট করেন মুশফিক। সেই সুযোগ পেয়ে রস টেইলরকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়ের ভিত গড়ে দেন উইলিয়ামসন। অথচ সেই ম্যাচ জিততে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শুরু করতো টানা দুই জয় দিয়ে!
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে শুক্রবার শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজেও একের পর এক ভুল করেছেন মুশফিক। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭২ করা ডেভন কনওয়ের বিদায়ের পর সুযোগ ছিল চাপ বাড়ানোর। সুযোগ তৈরিও করেছিলেন তাসকিন আহমেদ, জিমি নিশামকে বাধ্য করেছিলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে। কিন্তু সেই ক্যাচ ফেলে দেন মুশফিক। নিশামের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম।
তৃতীয় ম্যাচে ভুলের সংখ্যা একাধিক। পাওয়ারপ্লেতেই তাসকিনের বলে হেনরি নিকোলসের ক্যাচ ছাড়লেন, যে ক্যাচ ধরার চেয়ে হয়তো ছাড়াটাই কঠিন। বল দুয়েকের মধ্যে অবশ্য তাসকিনের বলেই গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন নিকোলস। ক্যাচ নিলেন কে? লিটন!
নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শেষ বলে ড্যারেল মিচেল দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু যখন বাউন্ডারি থেকে বল চলে এসেছে মুশফিকের কাছে, মিচেল ক্রিজ থেকে অনেক দূরে। দুই হাতের বদলে এক হাত দিয়ে বল ধরতে গেলেন মুশফিক, তাতে বল ধরতে পারলেন না। মিচেলও তাতে দুই রান নিয়ে তুলে নেন নিজের সেঞ্চুরি।
মুশফিকের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতিকেই এমন ভুলের কারণ হিসেবে দেখছেন খালেদ মাসুদ। তিনি বলেন, মুশফিকের শরীর নড়ছে না ঠিকভাবে।
‘সাম্প্রতিক সময়ে হয়ত তার আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি আছে। তার এই সময়টা ভালো যাচ্ছে না। ওর কিপিংয়ে সমস্যা হচ্ছে, ওর শরীর বলের লাইনে যাচ্ছে না। সে নিজের জায়গা থেকেই ডাইভ দিচ্ছে। ফার্স্ট স্লিপের কাছে যে বলটা যাচ্ছে, সে নিজের জায়গা থেকে ডাইভ দিচ্ছে। ডাইভ দিয়ে হয়তো মাঝেমধ্যে ধরে ফেলবে, কিন্তু তার চেয়েও ভালো হয় যদি এক পা সরে এসে বলের লাইনে যাওয়া যায়। তাহলে বলটা খুব কাছে পাওয়া যায়, ক্যাচ ধরাটা সহজ হয়ে যায়। আমার যা মনে হয়, যখন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়, তখন এ রকম হতে থাকে, শরীর নড়ে না’, বলেন বাংলাদেশের দলের সাবেক উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ।
এর সমাধান হিসেবে তিনি দেখছেন লিটনকে কিপিং এবং মুশফিককে একটু স্বস্তি দেয়া।
খালেদ মাসুদ বলেন, ‘লিটনকে কিপিংয়ে দিয়ে মুশফিককে ফিল্ডিংয়ে একটু রিল্যাক্স করানো উচিত। কারণ কিপিং এমন একটা ব্যাপার, এই যে মানসিকভাবে একটু পর্যুদস্ত হয়েছেন, তা থেকে ফিরতে বেশ সময় লাগে। যতক্ষণ পর্যন্ত না ও ভালো ক্যাচ বা স্ট্যাম্পিং করবে, ওর এখান থেকে ফেরাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে। তার সময় লাগবে। এখন তার কিপিংয়ের আশায় কী বসে থাকবে দল? সেটা অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, শেষ পর্যন্ত বিষয়টি অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘এটা (কে কিপিং করবে) কোচ এবং অধিনায়কের মত। অধিনায়ককে তার দলের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলের পারফরম্যান্সের জন্য কোন খেলোয়াড়ের কাছে থেকে কী ধরনের পারফরম্যান্স আশা করছেন তিনি।’
আপাতত নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে বাংলাদেশের অপেক্ষা টি-টোয়েন্টি সিরিজের। সেখানেও কিপার হিসেবে দেখা যাওয়ার কথা মুশফিককেই। টেস্টে উইকেটকিপিং ছাড়লেও রঙিন পোশাকে এখনও গ্লাভসজোড়া তার হাতেই। ৩৩ বছর বয়সী মুশফিক আর মিস করবেন না, এমনটিই প্রত্যাশা রাখবেন সমর্থকরা!
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দাবদাহে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলমান তাপদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’
এর আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশজুড়ে বহমান তাপদাহের ওপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। কোনো কোনো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ।
ভারত সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন বাস্তবতায় দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে গেছে বিভিন্ন বয়সীদের।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য