ভারতের কলকাতায় কালীপূজার অনুষ্ঠান যাওয়াকে কেন্দ্র করে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে হত্যার হুমকিদাতা সিলেটের মহসীন তালুকদারকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট। তবে তাকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
জামিন শুনানিতে আদালত বলেছে, একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার কালিপূজায় যাবে, নাকি অন্য কোথায় যাবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এজন্য তাকে হত্যার হুমকি দেবে?
আসামিকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলে, ‘তার কাছে (সাকিবকে) ক্ষমা চাইতে হবে কেন। সে কে?’
সাকিবকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামির জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয় এবং মন্তব্য করে।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মোহাম্মদ বশির উল্লাহ।
পরে ড. বশির উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, আদালত তাকে জামিন দেয়নি। তবে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছে।
ভারতের কলকাতায় একটি পূজা মণ্ডপে যাওয়ার ঘটনায় ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর রাত ১২টা ৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক লাইভে এসে চাপাতি দেখিয়ে সাকিবকে হত্যার হুমকি দেন সিলেটের মহসীন তালুকদার নামের ওই যুবক। পরে গত ১৭ নভেম্বর সাকিব আল হাসানকে হত্যার হুমকি ঘটনায় মহসীন তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হুমকিদাতা মহসীন তালুকদার সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া গ্রামের আজাদ বক্সের ছেলে।
ফেসবুক থেকে লাইভে সাকিব আল হাসানকে হত্যার ঘোষণা এবং পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে মহসীন তালুকদার নামের ওই ব্যক্তি গালিগালাজ করেন। এ সময় ওই যুবক সাকিব আল হাসানের সেলফি তোলা নিয়ে ভক্তদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার সমালোচনা করেন তিনি।
১৬ নভেম্বর সকালে ফের লাইভে এসে আগের লাইভের কথাগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মহসীন তালুকদার। ১৬ নভেম্বর মহসিন তালুকদারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জালালাবাদ থানায় এসআই মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আটক হয়ে তিনি কারাগারে আছেন।
২৭ জুলাই হতে শুরু হচ্ছে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। ২০২৬ সনে হজে গমনেচ্ছুক ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে চার লাখ টাকা জমা দিয়ে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন।
আজ সকালে সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২৬ সনের হজের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে এবছরের ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসময়ের মধ্যেই হজযাত্রীদেরকে প্রাথমিক নিবন্ধন ও পরবর্তীতে হজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি পর্বের ব্যয়ের হিসাব ও বিমানভাড়া নির্ধারণসাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০২৬ সনের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা ই হজ সিস্টেম ( www.hajj.gov.bd), লাব্বাইক মোবাইল অ্যাপ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয়, জেলা ও বায়তুল মোকাররম অফিস এবং আশকোনা হজ অফিস হতে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবে। তবে বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।
এ সভায় সৌদি সরকার ঘোষিত ২০২৬ সনের হজ কার্যক্রমের রোডম্যাপসহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা উপস্থাপন করা হয়।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আগামী হজ মৌসুমে মক্কা ও মদিনায় বাড়িভাড়ার পূর্বে হজ ফ্লাইট সিডিউল চূড়ান্ত করা এবং হজযাত্রীদের কোরবানির টাকা নুসুক মাসার প্লাটফর্মে পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। এছাড়া মেডিকেল ফিটনেস ব্যতীত হজে গমন না করার জন্যও তাদের পক্ষ হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোডম্যাপের নির্ধারিত সময়সূচির মধ্যে কোন কাজ সম্পন্ন না হলে হজপালন অনিশ্চিত হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সৌদি এ মন্ত্রণালয়।
সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এসভায় হাবের পক্ষ হতে একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এ সংগঠনের পক্ষ হতে বাড়ীভাড়া চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই হজ ফ্লাইট সিডিউল অনুমোদন, কোরবানি ও ক্যাটারিং সার্ভিস বাধ্যতামূলক না করা, হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি, হজ প্যাকেজ ৩৫-৪০ দিনে কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সংগঠনটির পক্ষে সভাপতি ও মহাসচিব প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন।
এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুঃ আঃ আউয়াল হাওলাদার, ড. মোঃ আয়াতুল ইসলাম, হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোঃ মঞ্জুরুল হক, হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার, মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদারসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও হাবের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জাতীয় মৎস্য পদক নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭টি ক্ষেত্রে মোট ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রঞ্জের পদক দেয়া হবে। এই পদক মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রদান করবেন।
উপদেষ্টা সোমবার (২১ জুলাই) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের ২২-২৮ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ একযোগে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অর্থাৎ সমগ্র দেশব্যাপী উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। এবারের মৎস্য সপ্তাহকে জুলাই গণঅভ্যুথানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে মৎস্য পদক প্রদান, বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কার্যক্রম, র্যালি, আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা, প্রদর্শনী ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি সম্প্রসারণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, হাওর, বাওড় নিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় আছে ৩৮.৬ লক্ষ হেক্টর, আর বদ্ধ জলাশয় আছে ৮.৫ লক্ষ হেক্টর এবং দক্ষিণের সুবিস্তৃত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমা আমাদের মৎস্য সম্পদের উৎস। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, টেকসই আহরণ ও উৎপাদনে সরকার কার্যকর, সময়োপযোগী, কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। তাই বাংলাদেশ আজ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তিনি বলেন, গবেষণালব্ধ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব মৎস্য আহরণ, মৎস্য চাষ এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য বিপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা ও এর টেকসই ব্যবস্থাপনার দৃঢ় প্রত্যয়ে এবারের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্যাপন করতে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মাছের প্রজাতিগত ও কৌলিকতাত্ত্বিক (জেনেটিক) বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, জলজ পরিবেশ ও ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ ও দোশ মাছের নিরাপদ প্রজনন ও আবাসস্থল নিশ্চিতকরণ, জলাশয়ে টেকসই উৎপাদন এব্যাহত বাধ্য, পুনরুদ্ধার এবং সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং এর সাথে সম্পর্কিত মৎস্যজীবীর জীবন জীবিকা রক্ষার্থে এবং উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৬৬৯টি অভয়াশ্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও অভয়াশ্রম গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “মৎস্য সপ্তাহ পালনের মধ্য দিয়ে আমরা মৎস্য খাতের অবদান তুলে ধরতে চাই। আপনারা জানেন, মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপি'র ২.৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপি'র ২২.২৬ শতাংশ। বছরে ৫০ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। বারো লাখ নারীসহ প্রায় ২ কোটি অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ শতাংশের অধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের সাথে সম্পৃক্ত। আমিষের চাহিদা মেটানোর দিক থেকেও মাথাপিছু দৈনিক ৬০ গ্রাম গ্রহণের বিপরীতে মাছের প্রাপ্যতা ৬৭.৮০ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। তবুও মাথপিছু গ্রহণ আরো বাড়াতে হবে”।
তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ রক্ষার্থে গৃহীত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতা পুন:প্রতিষ্ঠাকল্পে এ বছর ৬৫ দিনের পরিবর্তে ৫৮ দিন (১৫ এপ্রিল হতে ১১ জুন) সমুদ্রে সকল প্রকার নৌযান কর্তৃক মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৬ মার্চ ২০২৫ তারিখ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মা ইলিশ ও জাটকাসহ অন্যান্য মাছ আহরণ নিষিদ্ধকালে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক প্রকৃত মৎস্যজীবীদের তালিকার ভিত্তিতে ভিজিএফ (চাল) প্রদান করা হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৪৯টি জেলে পরিবারকে মোট ১ লক্ষ ০৪ হাজার ৬৬২.৬৭৫ মেট্রিক টন ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সহায়তা দেয়া পরিবার প্রতি চালের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ কেজি করার প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। দাদনের দুষ্টচক্র থেকে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মুক্ত করার লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
'অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ।
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানকে নিয়েই অগ্রসর হবার যাত্রা চলমান থাকবে। একে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আজ সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীর দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের ষোড়শ দিনের আলোচনার শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আলোচনা শুরুতে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৫৩ বছরের সংগ্রাম এবং গত বছরের একটি অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান, রক্তপাত ও প্রাণনাশকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এগুলোকে সঙ্গে নিয়েই আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের আলোচনার শুরুতেই আমরা যাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি, তারা হচ্ছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা, যেই মুক্তিযুদ্ধ ব্যতীত আমরা কখনো এখানে আসতে পারতাম না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। আমাদের সকল সাফল্য ও ব্যর্থতার ঊর্ধ্বে মুক্তিযুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে দীর্ঘ সময়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এ রাষ্ট্র অর্জন করেছি, রাষ্ট্রের পথরেখা নির্ধারণ করেছি।
তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সেই সংগ্রাম অব্যাহত থাকার মধ্য দিয়েই আমরা একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের মধ্যে নিপতিত হয়েছিলাম। সেখান থেকে সকলে মিলে একটি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এ জায়গায় এসেছি। এই পটভূমিকাই জাতীয় সনদের বিবেচ্য, আপনারা সেটা মাথায় রাখুন।
দ্রুত রাষ্ট্রীয় সনদ তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে, দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, যদি আমরা ঐক্যমতে ৩১ তারিখের মধ্যে পৌঁছাতে চাই, যেটাকে আমি এটাকে বাধ্যবাধকতা বলে মনে করি, তবে আমাদের হাতে ১০ দিন সময় আছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে একটি/দুটি বিষয় আছে, তার জন্য হয়তো সময় বরাদ্দ করা যাবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ব্যতিরেকে অগ্রসর হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু প্রথম থেকে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ এর ব্যবস্থা রেখেছি সেহেতু কেউ চাইলে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন এবং সেটি জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে।
এর বাইরে আপনারা কমিশনের ওপর একটি দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠিত হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আপনাদের মতামত বিবেচনা করে কমিশন আগামীকাল বা পরশু দিনের মধ্যে জানাবে।
গতকালকের অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সমস্ত রকমের আলোচনা করার পরে, কমিশন এটি ধারনা করছে যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে সংশোধিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে অধিকাংশের একমত আছে এবং কিছু কিছু বিষয়ে কারো কারো দ্বিমত থাকতে পারে।
আজকের মধ্যে পরামর্শ করে বিষয়গুলো মীমাংসা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে জানানো হলে কমিশনের পক্ষ থেকে আগামীকালের বৈঠকে আবার সে বিষয়গুলো উত্থাপন করে একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় কিনা সে প্রচেষ্টা করা হবে।
সবশেষে, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত একমতে পৌঁছাতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজ বৈঠকে আরও উপস্থিত আছেন- কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. আইয়ুব মিয়া।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি মধ্য গাজা থেকে নতুন করে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল, যেখানে বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলের এসব কার্যকলাপকে ‘বর্বরতা’ ও ‘নির্বিচারে ক্ষমতার প্রয়োগ’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ।
স্থানীয় সময় রবিবার (২০ জুলাই) গাজার উত্তরের জিকিম সীমান্ত দিয়ে জাতিসংঘের ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের সময় সেগুলোর জন্য অপেক্ষারত মানুষের ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দ্য গার্ডিয়ানকে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরের কাছাকাছি একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে আরও ৯ জন গুলিতে নিহত হয়েছেন। একইভাবে খান ইউনিসে আরেকটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে আরও ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।
এদিকে, ত্রাণকেন্দ্রের কাছে চালানো হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হুমকি মনে করে উত্তর গাজায় জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি ছুড়েছে তারা। তবে নিহতের যে সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তা তাদের প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, রবিবার সকাল থেকে তারা ৪৮টি লাশ ও ১৫০ জন আহত ফিলিস্তিনিকে এই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জিকিম সীমান্ত থেকে এসব হতাহতদের আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।
গাজায় বর্বরতা বন্ধের আহ্বান পোপের
ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার খবর প্রকাশের আগেই অবিলম্বে গাজা যুদ্ধের বর্বরতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। রোমের ক্যাসেল গানদলফোতে অ্যাঞ্জেলাস প্রার্থনার শেষে তিনি এসব বলেন।
এ সময় গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলের চালানো হামলা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
পোপ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই হামলা গাজার বেসামরিক জনগণ ও তাদের প্রার্থনাস্থলের ওপর চালানো হামলার একটি নতুন সংযোজন মাত্র।’
এ সময় মানবাধিকার আইন মেনে চলার পাশাপাশি বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা, সামগ্রিকভাবে শাস্তি দেওয়া বন্ধ করা, নির্বিচারে বলপ্রয়োগ ও জোরপূর্বক জনগণকে উচ্ছেদ করার মতো কার্যকলাপ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ইসরায়েলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) প্রধান জোনাথন হুইটলের আবাসনের অনুমতিপত্র (রেসিডেন্সি পারমিট) বাতিল করেছে তেল আবিব। জোনাথন গাজার মানবিক পরিস্থিতি বারবার নিন্দা জানিয়েছিলেন।
জোনাথন কোনো প্রমাণ ছাড়াই গাজা যুদ্ধ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার।
মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দিশেহারা ফিলিস্তিনিরা
নতুন করে মধ্য গাজার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় মানুষগুলো। ওই এলাকায় বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাছাড়া সেখানকার খুব কম স্থানই রয়েছে যেখানে স্থল অভিযান চালায়নি ইসরায়েল। এ ছাড়া, ওই এলাকাগুলোতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে থাকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের তিনটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরপরই সেখান থেকে পালাতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।
এক স্থানীয় বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) লিফলেট ছুড়ে আমাদের সরে যেতে বলেছেন। কিন্তু আমরা জানি না কোথায় যাব, আমাদের জন্য কোনো আশ্রয় বা কিছুই নেই।’
এই নির্দেশ গাজা উপত্যকার মানুষগুলোর জীবন রক্ষায় যে সামান্য নাজুক কিছু অবলম্বন এখনো টিকে আছে, তার ওপর আরও একটি ভয়াবহ আঘাত বলে মন্তব্য করেছে ওসিএইচএ।
এদিকে, গাজায় খাদ্যসংকট ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরও তা গাজাবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। ইসরায়েল ১০ লাখ শিশুসহ গাজার বেসামরিক মানুষদের ‘অনাহারে মারছে’ বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
এসব অসহায় মানুষকে সহায়তা করতে অবরোধ তুলে নিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ-কে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গাজায় এই সংস্থাটির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। যদিও এই অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখায়নি।
এই সংস্থাটিই ছিল গাজায় প্রধান ত্রাণ বিতরণকারী এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ মৌলিক সেবার অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। ইসরায়েলের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে সংস্থাটি।
তবে ইউএনআরডব্লিউএ’র ওপর থেকে এখনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি ইসরায়েল। পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চালু করেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।
মে থেকে চালু হওয়া এই জিএইচএফ-এর ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে এরই মধ্যে আট শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরের দিকে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় বিমানটি বিধস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এমন তথ্য জানিয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে একটি প্রশিক্ষণ বিমান ১টা ১৮ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন সেখানে উত্তরা, টঙ্গী, পল্লবী, কুর্মিটোলা, মিরপুর, পূর্বাচল ফায়ার স্টেশনের ৮টি ইউনিট কাজ করছে।
তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের উচিত বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও কার্যকর করে তোলা। পায়রা বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চল দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।’ আজ রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পায়রা বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের মানুষ বলে, বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে যখন একটি নতুন পোর্ট গড়ার বা চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে আরেকটি পোর্ট তৈরির কথা বলা হয়, তখনই বলা হয়-দেশ চলে গেলো। আবার চট্টগ্রাম বন্দরে যদি কোনো অপারেটর নিয়োগের কথাও ওঠে, তখনও বলা হয়-দেশ চলে গেলো। বিষয়টি এমন যেন চিলে কান নিয়ে গেছে আর সবাই দৌঁড়াচ্ছে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল চালুর লক্ষ্যে কাজ চলছে। এজন্য সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রস্তুতি ও সহায়তা কামনা করেন তিনি।
সেমিনারে বাংলাদেশ প্রকৌল বিশ্ববিদ্যায়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ এবং রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি’র টিম লিডার মেনো মুইজ মাস্টারপ্ল্যানের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন।
বন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল কাদের।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দপ্তর, সামরিক ও বেসামরিক সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বন্দর ব্যবহারকারী অংশীজন, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান বুয়েট ও নেদারল্যান্ডসের রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি’র প্রতিনিধিবৃন্দ ।
দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ ও পর্যটন মেলা ‘১৩তম বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) ২০২৫’ আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (টোয়াব)। এবারের মেলা ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বিসিএফসিসি)।
রবিবার (২০ জুলাই) টোয়াব কার্যালয়ে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান টোয়াবের সভাপতি মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের পর্যটন ব্যবসার নানা বাধাবিপত্তি ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে এসব সমস্যার চিত্র তুলে ধরলে এই খাত অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনায় টোয়াব সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা, তবে এর পূর্ণ বাস্তবায়নে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যথাযথ অবকাঠামোর ঘাটতি, দক্ষ জনবলের অভাব, পরিকল্পিত পর্যটন নীতির প্রয়োগে দুর্বলতা, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত সমস্যা—এসবই আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অন্তরায় হয়ে আছে।
‘এসব সমস্যার টেকসই সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও গন্তব্য উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। টোয়াব ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে এসব সমস্যার ওপর আলোকপাত করে কার্যকর সমাধানের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে, যা এই খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।’
পর্যটন মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করে আসছে টোয়াব। দেশের পর্যটন খাতে তারা মূল অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। মেলাটি শুধু দেশের পর্যটন শিল্পেই নয়, বরং প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় এটিজেএফবির সভাপতি তানজিম আনোয়ার বলেন, বিটিটিএফ পর্যটন শিল্প বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটন উদ্যোক্তা ও অংশীজনদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হয়, যা পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ, নীতিগত সহায়তা এবং নতুন গন্তব্য প্রসারে ভূমিকা রাখে। এবারের আয়োজনে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ বাড়ার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত। এটিজেএফবি সবসময় এই খাতের টেকসই উন্নয়নের পক্ষে এবং আমরা এই আয়োজনের সফলতা কামনা করছি।
এটিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক বাতেন বিপ্লব বলেন, পর্যটন উন্নয়নের জন্য শুধু মেলা আয়োজনই নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা, প্রচার ও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে সক্ষম সেবা নিশ্চিত করাও জরুরি। বিটিটিএফের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশের পর্যটনকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে, তবে এর সুফল পেতে হলে আমাদের সামগ্রিক খাতকে আরও পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
এবারের আয়োজনে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং চীনসহ মোট ২২০টি স্টল থাকবে। থাকবে বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) এক্সচেঞ্জ, রাউন্ড টেবিল আলোচনা, সেমিনার, গন্তব্য উপস্থাপনা, সংবাদ সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজকদের ভাষ্যে, এসব আয়োজন যেকোনো অংশগ্রহণকারীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (এনটিও), বিদেশি ট্যুর অপারেটর ও অংশগ্রহণকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
আলোচনা সভায় এটিজেএফবির সহসভাপতি রাজীব ঘোষ, যুগ্ম সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলহাস কবীর ও আদনান রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলতাব হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মাসুদ রুমি, রাশিদুল হাসান ও গোলাম মর্তুজা অন্তু উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন টোয়াবের ডিরেক্টর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ডিরেক্টর (প্রপার্টি অ্যান্ড অ্যাসেটস) জিয়াউর রহমান জাকির, টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী প্রমুখ।
মন্তব্য