ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে বাংলাদেশ। এর আগে নেপালের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে কোভিড মহামারির দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেরে ঢাকায়। ফুটবলে সফল ভাবে শেষ হয়েছে ফেডারেশন কাপ। চলছে প্রিমিয়ার লিগ। তবে এখনই ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করার ইচ্ছে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)।
বিসিবি শুরু করতে চায় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট। তবে দেশে কোভিডের টিকা আসার আগে নয়। ঘরোয়া ক্রিকেট বিসিবির প্রাধান্যের তালিকায় আছে উল্লেখ করে সোমবার গণমাধ্যমকে বিসিবি মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনূস বলেন, ‘সভাপতি বলেছেন উনি সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন সরকারের সঙ্গে কথা বলার। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন যে খেলোয়াড়দেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে টিকার ব্যাপারে। টিকার প্রয়োগ যদি শুরু হয়ে যায় ও যদি খেলোয়াড়দের অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসতে পারি তাহলেই খেলা শুরু করব। আমরা চাই খেলা শুরু হোক।’
কোভিডের টিকা ছাড়া কঠোর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা মেনেই ফুটবলে ফেডারেশন কাপ ও লিগ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ক্রিকেটের মতো লম্বা সময়ের খেলায় আরও সতর্কতা প্রয়োজন মনে করছে বিসিবি।
‘ফুটবল তো খুব অল্প সময়ের খেলা। যখন তারা ড্রেসিং রুম ব্যবহার করে তখনও সময় কম লাগে। ক্রিকেটে চার ঘন্টা লাগে টি-টোয়েন্টির জন্য। আট ঘন্টারও বেশি লাগে ওয়ানডের জন্য। লংগার ভার্সনের খেলা ধরলে চারদিনের জন্য। অনেকগুলো ইস্যু আছে। ফুটবলের সঙ্গে তুলনা করতে পারিনা’, বলেন ইউনূস।
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্টস কাপের পর বঙ্গবন্ধু কাপ দিয়ে ক্রিকেট মাঠে ফেরায় বিসিবি। তারপর থেকেই স্থানীয় ক্রিকেটারদের দাবি মাঠে ফিরুক এনসিএল, বিসিএল এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের আসরগুলো।
রাশিয়া যদি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তবে পাল্টা হামলা চালিয়ে মস্কোকে “মানচিত্র থেকে মুছে দেবে” ন্যাটো। এমন কড়া হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাঙ্কেন।
একইসঙ্গে ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সোমবার বেলজিয়ান দৈনিক ডি মর্গেন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রাঙ্কেন বলেন, “যদি (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন ব্রাসেলসের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, আমরা মস্কোকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলব।”
ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউরোপে যেসব সংশয় দেখা দিয়েছে, তা তিনি গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেন।
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “ইউরোপে আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাত এতটাই প্রবল যে সেটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ ন্যাটো মিত্রদের পাশে থাকবে। ব্রাসেলসে ক্রুজ মিসাইল হামলা? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কেউই দ্বিধা করবে না। পুতিনও এটা জানেন।”
তবে তিনি সতর্ক করে দেন, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে ছোট করে দেখার ভুল যেন কেউ না করে।
তার ভাষায়, “রাশিয়া এখন তার সামরিক সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে। তাদের যুদ্ধ অর্থনীতি এখন ন্যাটোর সব দেশ মিলে যত গোলাবারুদ তৈরি করে, তার চারগুণ উৎপাদন করছে। অথচ ইউরোপের এখনো কোনো কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড নেই।”
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “রাশিয়া ইউক্রেনে সমস্যায় পড়েছে কারণ তারা পুরো পশ্চিমা বিশ্বের বিপক্ষে লড়ছে। ইউক্রেনীয়রা আমাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়েই যুদ্ধ চালাচ্ছে, নইলে অনেক আগেই তারা পরাজিত হতো।”
আগামীদিনের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফ্রাঙ্কেন বলেন, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের যৌথ চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “চীন চায় ইউক্রেনের যুদ্ধ যতদিন সম্ভব চলুক, কারণ এতে পশ্চিমা বিশ্ব দুর্বল হবে। চীন বিপুল পরিমাণে রাশিয়ার কাঁচামাল কিনছে, অস্ত্র সরবরাহ করছে, আর রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় সৈন্য পাঠানোকেও তারা ভালো চোখে দেখছে।”
ফ্রাঙ্কেন আরও বলেন, “রাশিয়া নিকট ভবিষ্যতে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে বড় আক্রমণ করবে বলে মনে হয় না। কারণ, সেগুলো ন্যাটো সদস্য। খুব শিগগিরই ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন হবে। রাশিয়ানরা এগুলোকে ভয় পায়, কারণ তাদের পক্ষে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব নয়।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুনের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১১টায় বিশ্বিবদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে তারা এই বিক্ষোভ শুরু করেন।
অধ্যাপক মামুন তার ফেসবুকে রাকসু হল সংসদের নারীদের শপথ গ্রহণের ছবি দিয়ে লেখেন ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’
তার এই পোস্টের পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। পরবর্তীতে তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন। এরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের ডাক দেন। হল থেকে শিক্ষার্থীরা জোহা চত্বরে জড়ো হন। তারপর সেখান থেকে পশ্চিমপাড়ায় মেয়েদের হলগুলোর সামনে দিয়ে বিক্ষোভ নিয়ে যান তারা। এ সময় হল থেকে অন্য মেয়েরাও যুক্ত হন বিক্ষোভে।
এ সময় তারা ‘মামুনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘মামুনের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না, ‘মদখোরের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘তোমার আমার পরিচয়, হিজাব হিজাব’, ‘রাবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
চট্টগ্রামের সাগরিকা এলাকায় মালবাহী একটি ট্রেনে ধাক্কা দিয়েছে চালবোঝাই একটি ট্রাক। এতে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে ট্রাক, লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেন। দুর্ঘটনার ফলে মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে নগরীর সাগরিকা স্টেডিয়াম রেলগেইট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভোরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালবাহী ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। সাগরিকা এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক সিগন্যাল না মেনে ট্রেনের ইঞ্জিনে সজোরে আঘাত করে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন উল্টে যায়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ট্রাক ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লাইনটি শুধু মালবাহী ট্রেন ও কনটেইনার পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয়। এতে যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন চট্টগ্রামে সমস্যা হচ্ছে না। ট্রেনটি উদ্ধারের কাজ চলছে।’
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় কমিশনের সমাপনী বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সহ ৬ সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
এসময়, কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রথম ধাপে ২৪টি রাজনৈতিকদল ও জোট এতে স্বাক্ষর করেন। এর ২ দিন পরে জাতীয় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে গণফোরাম।
তবে এখনও সই করেনি এনসিপিসহ কয়েকটি বাম দল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক বসে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে- উল্লেখ করে কমিশন সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে জাপানের ব্যবসায়িক ফেডারেশন ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ (এনবিসিসি)।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় এনবিসিসির ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক ও নিয়োগ পরিকল্পনা
‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ হলো ৬৫টিরও বেশি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত একটি জাপানি ব্যবসায়িক ফেডারেশন। সম্প্রতি সংস্থাটি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoI) স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য জাপানে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন ও কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।
এই চুক্তির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (TITP) এবং স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার্স (SSW) কর্মসূচির অধীনে এক লাখের বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, সমঝোতা স্মারকের আওতায় প্রথম ধাপে আগামী বছর দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তী ধাপে ২০২৭ সালে ছয় হাজার এবং ২০২৮ সালে ১৮ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
এর মধ্যে নির্মাণ, সেবা, এভিয়েশন, গার্মেন্টস ও কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মীর প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে গাড়িচালক, অটোমোবাইল ও রিসাইক্লিং খাতেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়বে বলে প্রতিনিধি দল জানায়।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে খুলনা ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সম্ভাব্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এনবিসিসির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ইতোমধ্যেই কেন্দ্র দুটি পরিদর্শন করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে কর্মীদের প্রশিক্ষণে কোনো ঘাটতি আছে কি না জানতে চান। জবাবে এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, “আমি গত মার্চ মাসে ট্রেনিং সেন্টার দুটি পরিদর্শন করেছিলাম। এবার এসে অবাক হয়েছি—সাত মাসের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা আশাবাদী, আগামী বছরই দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারব।”
তবে তিনি প্রশিক্ষকদের ভাষাগত দক্ষতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
ভাষা প্রশিক্ষণ ও নারীদের অংশগ্রহণ
ভাষাগত দক্ষতা অর্জনকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এর জন্য ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। জাপান থেকে শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। পাশাপাশি, জাপান থেকে প্রশিক্ষকদের এনে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।”
তিনি বাংলাদেশের নারীদের পরিশ্রম ও পারদর্শিতার প্রশংসা করে বলেন, “কেয়ারগিভিং সেক্টরে বাংলাদেশের নারীরা অনন্য। ভাষাগত দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেলে তারা জাপানের কেয়ারগিভিং সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “প্রথমে কিছুটা কঠিন মনে হলেও একবার প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশের মেয়েরা নিজেরাই অন্যদের শেখাতে পারবে। একবার যাওয়া শুরু হলে অন্যরাও উৎসাহ পাবে।”
এনবিসিসি প্রতিনিধিরা জানান, আগামী কয়েক বছরে জাপানে ৪ লাখের বেশি দক্ষ নার্সের প্রয়োজন হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নার্স নিয়োগের বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন।
সরকারের উদ্যোগ
বৈঠকে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সরকার জাপানে কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করছে। এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। তিনি জানান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জাপানে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে গত পাঁচ দশকে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গত দু-তিন বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে। দেশের উন্নয়নের সামগ্রিক চিত্র ইতিবাচক হলেও কিছু উপজেলা এখনো আর্থসামাজিক সংকটে আছে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য গভীর; নদীভাঙন; চরাঞ্চলের অনিশ্চয়তা; কৃষি নির্ভরতার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষকে অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দেয়।
সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, এনজিওগুলোর উদ্যোগসহ নানা প্রচেষ্টা চলমান থাকলেও তা এখনো যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হয়। দারিদ্র্যের হার বেশি থাকায় ওই সব উপজেলায় লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসংস্থান, যোগাযোগে উন্নয়ন, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই প্রতিবেদনে দেখানো হলো দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ১০টি উপজেলা কোনগুলো। শীর্ষ ১০টি উপজেলার ৫টিই মাদারীপুরের উপজেলা। অবশ্য জেলা পর্যায়ে মাদারীপুরের দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি।
গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ দারিদ্র্য মানচিত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
১. ডাসার: এই উপজেলা মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এই হার সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ। ডাসার উপজেলায় প্রতি তিনজনে দুজন গরিব। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনুসারে, বালিগ্রাম, কাজীবাকাই, গোপালপুর, ডাসার ও নবগ্রাম—এই পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার উপজেলা গঠিত।
২: হালুয়াঘাট: ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হারের উপজেলা। এখানে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় আর্থসামাজিক পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক। এই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই গোবরাকূড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল।
৩. কালকিনি: এই উপজেলা মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এই হার সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত কৃষিনির্ভর। শিল্পকারখানা নেই বললেই চলে।
৪. রাজৈর: এই উপজেলাও মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫৫৬ শতাংশ। টেকেরহাট এই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার। পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ উপজেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ উপজেলায় অনেক খাল, বিল, পুকুর ছাড়াও ছোট ছোট নদী-নালা রয়েছে। এই উপজেলাও কৃষিপ্রধান।
৫. শিবচর: সবচেয়ে দরিদ্র শীর্ষ ১০টি উপজেলায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা আছে। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ। পদ্মা নদীর তীরবর্তী এই উপজেলা অবস্থিত। চরাঞ্চলও আছে। পদ্মা সেতুর চালু আগে পর্যন্ত যোগাযোগের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে ছিল শিবচর উপজেলা। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর যোগাযোগের দিক বেশ এগিয়ে গেছে, যা জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে।
৬. নলছিটি: ঝালকাঠি জেলার অবস্থিত এই নলছিটি উপজেলা। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হার এই উপজেলায়। নদীঘেরা এই উপজেলায় কৃষিনির্ভর অর্থনীতি বিরাজমান। শীতলপাটি, পান, মৃৎশিল্প এই উপজেলার অন্যতম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
৭. গৌরীপুর: এই উপজেলা ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। ময়মনসিংহ জেলা সদরের পূর্ব দিকে এই উপজেলা অবস্থিত। মইলাকান্দা, গৌরীপুর, অচিন্ত্যপুর, মাওহা, সহনাটি, বোকাইনগর, রামগোপালপুর, ডৌহাখলা, ভাংনামারী, সিধলা—এই ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটি। কৃষি ও মৎস্য খাতই এই উপজেলার মানুষের প্রধান জীবিকা।
৮. মাদারীপুর সদর: মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলায় অর্ধেক মানুষ দরিদ্র। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫০ শতাংশ। সর্বোচ্চ দারিদ্র্য এমন ১০টি উপজেলার মধ্যে মাদারীপুর সদর ছাড়া আর কোনো জেলার সদর উপজেলা নেই। মাদারীপুর সদর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য শিল্পকারখানা নেই। এই উপজেলা মূলত কৃষিনির্ভর কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
৯. বেলাব: এটি ঢাকার পাশে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত। বেলাব উপজেলার দারিদ্র্য হার সাড়ে ৪৯ শতাংশ। এই উপজেলার অধিবাসীরা কৃষিকাজের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখানকার সবজি, কাঁঠাল, কলা, লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হয়। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়।
১০. বোদা: একসময় দারিদ্র্য বলতেই উত্তরবঙ্গের জেলা-উপজেলাকে বোঝাতো। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলার মধ্যে মাত্র একটি উপজেলা রংপুর বিভাগের তথা উত্তরবঙ্গের। এটি হলো সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। এই উপজেলা কৃষিপ্রধান। চাষ হয় ধান, পাট, গম, আলু, বাদাম, আখ, ভুট্টা ইত্যাদি।
ভৈরবে রেলপথ অবরোধ।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবকে জেলার দাবিতে রেলওয়ে জংশন স্টেশন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জনতা।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে অবরোধ থাকা উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা ট্রেনে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় কয়েকজন ট্রেনের যাত্রী আহত হয়েছে। পরে ১১টা ৪০ মিনিটে ভৈরব স্টেশন ছেড়ে যাই ট্রেন। এসময় রেলওয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। বর্তমানে ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে ভৈরবকে জেলার দাবিতে বেশ কিছু দিন যাবত উত্তাল ভৈরব। এরই অংশ হিসাবে সোমবার সকাল ১০টায় শহরের ভৈরব রেলওয়ের স্টেশনে প্লাটফর্মে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রোডের রেল যোগাযোগ বন্ধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনকে ভৈরব রেলওয়ের স্টেশনে আটকে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে রেলের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট যাবত ট্রেনটি আটকে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, সকালে ট্রেন আটকিয়ে অবরোধ চলাকালীন সময়ে শেষ মুহূর্তের হঠাৎ কতিপয় কিশোর আটকিয়ে থাকা ট্রেনে ইটপাটকেল মারতে থাকেন। এসময় আমরা সবাই আতংকিত হয়ে উঠি।
স্টেশনে থাকা ট্রেন যাত্রী সোহান মিয়া বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে জনতা স্টেশনে জেলার দাবিদে আন্দোলন করছিল। কখন যে হুট করে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ শুরু হয়ে গেলো কেউ টের পায়নি।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ বলেন, স্টেশন থেকে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার মুহুর্তে হঠাৎ আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হন।
এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ের থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) সাঈদ আহমেদ জানান, উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার ঘটনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে তাদের নিদের্শনা পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান ।
মন্তব্য