তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। কিন্তু করোনার ভয় ও ব্যক্তিগত কারণে দলের সঙ্গে আসেননি প্রথম সারির ১২ জন খেলোয়াড়।
তাতে প্রশ্ন উঠেছে ক্যারিবীয় দলের সামর্থ্য নিয়ে। ওয়ানডে দলে অনভিজ্ঞদের ছড়াছড়ি থাকলেও, টেস্ট দলে আছেন কিমার রোচ, শ্যানন গেব্রিয়েল, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েইটদের মত অভিজ্ঞরা।
রোচের জন্য এমন পরিস্থিতি অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তার অভিষেক হয় একই রকম পরিস্থিতিতে।
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বোর্ডের সঙ্গে বিতণ্ডায় এক ঝাঁক তরুণকে নিয়ে দল সাজাতে হয়েছিল উইন্ডিজকে। সেবারই টেস্ট অভিষেক হয় রোচের।
এবার বাংলাদেশে রোচের আসা নতুন বাস্তবতায়। করোনাভাইরাস প্রকোপে থাকতে হচ্ছে বায়ো বাবলে। এসেই তারা করেছেন তিন দিনের কোয়ারেন্টিন। বুধবার তারা শুরু করেছেন অনুশীলন।
বাংলাদেশের উইকেটে সাধারণত স্পিনারদেরকেই সহায়তা করে। পেসার হয়ে বাংলাদেশে ভালো করার জন্য রোচ তাই পরিকল্পনা করছেন আক্রমণের।
‘আমি মনে করি মাঠে বেশ আক্রমণাত্মক থাকতে হবে। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের উপর চড়াও হতে হবে। পিচে খুব বেশি বাউন্স থাকবেনা। মাঠে পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক করতে হবে এবং সেটার প্রয়োগও। আপনাকে এসব ক্ষেত্রে গতির সংমিশ্রণ করতে হবে। সবচেয়ে সহজ বিষয় হল ভালো জায়গায় টানা বল করে যেতে হবে যতটা সম্ভব’, বলেন এই পেইসার।
রোচের বিশ্বাস, নিজের পরিকল্পনায় সফল হলে দল লাভবান হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় পেসারদের জন্য কঠিন। তবে আমি যদি পরিকল্পনা ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারি দলের জয়ে অবদান রাখতে পারবো।’
তবে রোচ মানছেন, সিরিজে ভালো করতে হলে প্রয়োজন দলগত পরিশ্রমের।
‘বোলিং ইউনিটের সাফল্যের জন্য টিম ওয়ার্ক করতে হবে। আর সেরকমটা হলেই আমাদের বোলিং ইউনিট ভালোভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে। ভালো পরিকল্পনা করছি। বোলিং কোচের সাথে কথা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যেও আলাপ আলোচনা করছি। আমরা জানি কি করতে হবে।’, বলেন ক্যারিবীয় এই পেসার।
২০ জানুয়ারি থেকে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হলেও রোচকে মাঠে নামতে অপেক্ষা করতে হবে জানুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত। চট্টগ্রামে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের পর ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম টেস্টে মাঠে নামবেন রোচ-গেব্রিয়েলরা।
আরও পড়ুন:টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২০২১ সালের জুলাই মাসে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দিল্লিতে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন, এই সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলার মধ্য দিয়ে তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি ঘটবে। আগামী শনিবার হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলে এই সংস্করণ থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি।
ক্যারিয়ারে পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘না, আমার কোনো আক্ষেপ নেই।’
কেনিয়ার বিপক্ষে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। এই সংস্করণে তিনি খেলেছেন ১৩৯টি ম্যাচ, করেছেন ৮ ফিফটি। স্ট্রাইক রেট ১১৭.৭৪।
ক্যারিয়ারজুড়ে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহকে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে ২০১৮ সালের মার্চে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসটি দিয়ে, যেটিতে বাংলাদেশ পেয়েছিল শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়। আর ফিনিশিং ভূমিকায় নিজেকে সবচেয়ে সফলভাবে তিনি চিনিয়েছিলেন ২০১৬ এশিয়া কাপে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে আইসিসি এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিলে এই সংস্করণে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বভার চাপে মাহমুদউল্লাহর কাঁধে।
অধিনায়কত্বের শুরুটা তার জয় দিয়ে, এই দিল্লিতেই ভারতের বিপক্ষে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ খেলেছে তার নেতৃত্বে। তবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না- এই যুক্তিতে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এমনকি তিনি দল থেকেও বাদ পড়েন।
প্রায় দু’বছরের লম্বা বিরতি দিয়ে মাহমুদউল্লাহ গত মার্চে শ্রীলঙ্কা সিরিজে দলে ফেরেন। খেলেছেন সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। আবারও তার পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত ৩৯ ছুঁইছুঁই মাহমুদউল্লাহ সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে গিয়ে তরুণদের দলে জায়গা করে দিতে বিদায় বলে দিলেন টি-টোয়েন্টি সংস্করণকে।
আরও পড়ুন:টি-টোয়েন্টিতে ১২৮ রানের লক্ষ্য যে একেবারেই মামুলি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি বাংলাদেশি বোলাররা কোনো প্রতিরোধ গড়তে না পারায় সহজ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
গোয়ালিয়রে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে রোববার বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকরা।
প্রথমে ব্যাট করে ইনিংসের এক বল বাকি থাকতেই ১২৭ রান করে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ১২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ ওভার ১ বল হাতে রেখেই তা টপকে যায় ভারত।
টি-টোয়েন্টিতে এটি ভারতের সর্বোচ্চসংখ্যক বল হাতে রেখে জয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের দেয়া ১০০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪১ বল হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটিই ছিল তাদের সর্বোচ্চ বল হাতে রেখে জয়ের ঘটনা।
১২৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হন ভারতীয় ব্যাটাররা। মাঝে তিনটি উইকেট পড়লেও ভারতের রানের ফোয়ারা কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারেননি তাসকিন-মোস্তাফিজরা।
দলের হয়ে ১৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন হার্দিক পান্ডিয়া। এছাড়া সূর্যকুমার যাদব ১৪ বলে ২৯ এবং ১৯ বলে ২৯ রান করেন ওপেনার সঞ্জু স্যামসন।
এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
আরও পড়ুন:নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শারজাহতে ১৬ রানে তারা হারিয়ে দিয়েছে স্কটল্যান্ডকে। টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং নেয় বাঘিনীরা। ব্যাটার ও বোলারদের সম্মিলিত অবদানে এসেছে এই জয়।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে গত চার আসরের হতাশা ঘোচানোর প্রত্যয় ঝরেছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠে। প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সেই আশার বাতি আরও একটু জ্বেলে দিল দেশের মেয়েরা। সে সঙ্গে ঘুচল টানা ১৬ ম্যাচ হারার কলঙ্কও।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে দুটি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন সোবহানা মোস্তারি। এছাড়া ওপেনার সাথী রানী ২৯ ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা করেন ১৮ রান।
স্কটিশদের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন সাস্কিয়া হর্লি। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন অধিনায়ক ক্যাথরিন ব্রাইস, অলিভিয়া বেল ও ক্যাথরিন ফ্র্যাজার।
১২০ রানে জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রান তুলতে সমর্থ হয় স্কটল্যান্ডের মেয়েরা।
স্কটল্যান্ডের হয়ে অপরাজিত থেকে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন ওপেনার সারাহ ব্রাইস। তিনি ছাড়া আর মাত্র দুজন ব্যাটার ১১ রান করে করতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট নিয়েছেন রিতু মনি। এছাড়া একটি করে উইকেট পান মারুফা আক্তার, নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান।
বিশ্বকাপের শুরুতেই জিতে নিশ্চিতভাবেই খানিকটা আত্মবিশ্বাস বাড়বে নিগার সুলতানার দলের। আগামী শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে তারা।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অপর প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামী ১০ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ১২ অক্টোবর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামবেন নিগার সুলতানারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১১৯/৭ (নিগার ৩৬, সাথী ২৯; হর্লি ৩/১৩)।
স্কটল্যান্ড: ১০৩/৭ (সারাহ ব্রাইস ৪৯*, ক্যাথরিন ১১, আইলসা লিস্টার ১১; রিতু ২/১৫, মারুফা ১/১৭, নাহিদা ১/১৯)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রিতু মনি।
আরও পড়ুন:চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানে হেরে গেল বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত কানপুর টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। এতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ নিয়ে পঞ্চমবার ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
কানপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মঙ্গলবার মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এতে মাত্র ৯৫ রানের লক্ষ্য পায় ভারত। ১৭ ওভার ২ বল খেলে ৩ উইকেটেই লক্ষ্য টপকে যায় রোহিত শর্মার দল।
কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে এর আগে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮২ রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড ছিল। এবার ৯৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিল ভারত।
আগের রেকর্ডটিও ছিল ভারতের। ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে টেস্ট জিতেছিল স্বাগতিকরা।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নেমে ৮ রান করে আউট হন রোহিত শর্মা। তৃতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দেন ভারতীয় অধিনায়ক। ব্যাক টু ব্যাক বোলিংয়ে এসে শুভমান গিলকেও (১০ বলে ৬) এলবিডব্লিউ করেন মিরাজ।
৪৫ বলে ৫১ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে সাকিব আল হাসানের তালুবন্দি হন যশস্বী জয়সওয়াল। জয়ের জন্য তখন দরকার মাত্র ৩ রান। এরপর বিরাট কোহলি (২৯*) ও রিশান্ত পান্তের (৪*) ব্যাটে জয় নিশ্চিত করে ভারত।
মঙ্গলবার ২ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের তৃতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান মুমিনুল হক। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ স্লিপে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। প্রথম ইনিংসে ১০৭ রানে অপরাজিত থাকা মুমিনুল দ্বিতীয় ইনিংসে ফেরেন মাত্র ২ রানে।
সাদমান ইসলামের সঙ্গে ৫৫ রানের দারুণ জুটি করে আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের ২৮তম ওভারে দলীয় ৯১ রানের মাথায় রবীন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হন তিনি। ৩৭ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরত যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দলীয় ২ রান যোগ করতেই আউট হয়ে যান ফিফটি করা সাদমান। ২৯তম ওভারে আকাশ দীপের বলে যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে গালিতে তালুবন্দি হন তিনি।
ব্যাক টু ব্যাক বোলিংয়ে এসে লিটন দাসকে (৮ বলে ১) তুলে নেন জাদেজা। ডানহাতি এই ব্যাটারকে উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্তের হাতে ক্যাচ বানান ভারতীয় স্পিনার।
এরপর আবার বোলিংয়ে আসেন জাদেজা। ওভারের দ্বিতীয় বলেই সাকিব আল হাসানকে (২ বলে ০) আউট করেন তিনি। অর্থাৎ ৩ উইকেটে ৯১ রান করা বাংলাদেশের ৯৪ রানিই ৭ উইকেট হাওয়া।
মেহেদী হাসান মিরাজও ১৭ বলে ৯ রান করে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে বিহাইন্ড দ্য উইকেটে পান্তের হাতে ধরা পড়েন। এরপর তাইজুল ইসলামকে (১৩ বলে ০) এলবিডব্লিউ করেন বুমরাহ।
দশম উইকেটে ১৬ রানের জুটি করেন মুশফিকুর রহিম ও খালেদ আহমেদ। বুমরাহর বলে ৬৩ বলে ৩৭ রান করে মুশফিক বোল্ড হলে ইনিংস শেষ হয় বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জাসপ্রিত বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাদেজা।
আরও পড়ুন:বৃষ্টিবিঘ্নিত কানপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে স্বাগতিক ভারত। এর আগে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে করেছিল ২৩৩ রান। প্রথম ইনিংসে ভারতের লিড ৫২ রানের।
ইনিংস ঘোষণার আগে ৩৪ ওভার ৪ বলে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রান করেছে ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেছেন জয়সাওয়াল। তাছাড়া ৬৮ রান করেছেন লোকেশ রাহুল।
বৃষ্টির কারণে টানা দুদিন মাঠে বলা গড়ায়নি। চতুর্থ দিনে লাঞ্চের কিছুক্ষণ পরই নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ব্যাটিং করেছেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও ইয়াশভি জয়সাওয়াল। প্রথম ওভারেই তিন বাউন্ডারি মারেন জয়সাওয়াল। দ্বিতীয় ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে নিজের খেলা ইনিংসের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান রোহিত।
দুই ওপেনারের এমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দুই ওভারে ২৯, আর তিন ওভার শেষে ৫১ রান তোলে ভারত। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বল খেলে দলীয় অর্ধশতকের রেকর্ড এটি।
দ্রুততম ফিফটির এর আগের রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডের। ৪ ওভার ২ বলে চলতি বছর নটিংহ্যামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫০ রান করেছিল ইংল্যান্ড।
অবশ্য এরপরই ব্রেকথ্রু পেয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভার করতে এসে উইকেটের দেখা পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বোল্ড হওয়ার আগে রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছে ১১ বলে ২৩ রান।
অধিনায়ক দ্রুত ফিরলেও আরেক ওপেনার জয়সাওয়াল পেয়েছেন ফিফটির দেখা। হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৫২ বলে ৭৭ রান করেন এই তরুণ ওপেনার। তার মারমুখী ব্যাটিংয়ে মাত্র ১০ ওভার ১ বলেই দলীয় শতরান স্পর্শ করে ভারত। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দ্রুততম শতরানের কীর্তি এটি। এর আগের রেকর্ডও অবশ্য ভারতের দখলেই ছিল। সেবারও ওপেনার ছিলেন রোহিত ও জয়সাওয়াল। ২০২৩ সালে পোর্ট অব স্পেনে ১২ ওভার ২ বলে দলীয় শতরান স্পর্শ করেছিল ভারত।
তিনে নেমে রানের দেখা পেয়েছেন শুভমান গিলও। সাকিবের বলে হাসান মাহমুদের হাতে ধরা পড়ার আগে ৩৬ বলে করেছেন ৩৯ রান। দ্রুত রান তুলতে বিরাট কোহলির আগেই ঋষভ পান্তকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল ভারত। তবে ব্যর্থ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ১১ বল খেলে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
পাঁচে নেমে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঝোড়ো ব্যাটিং করেছেন কোহলি। স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়েও সফল এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৫ বলে করেছেন ৪৭ রান।
কোহলি হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও মিডল অর্ডারে নেমে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন লোকেশ রাহুল। মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি করেন তিনি। তাদের এমন ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৪ ওভার ২ বলেই ২০০ রান পেরিয়ে যায় ভারত, যা টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো দলের দ্রুততম ২০০ রান। এরপর ২৮তম ওভারে বাংলাদেশের করা ২৩৩ রান টপকে যায় ভারত।
কোহলি ফেরার পর সাতে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রবীন্দ্র জাদেজা। ইনিংসের ৩৩তম ওভারে মিরাজের খাটো লেংথের বল টেনে খেলতে গিয়ে কভারে শান্তর হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে জাদেজার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ৮ রান।
জাদেজার পর রাহুলকেও ফিরিয়েছেন মিরাজ। স্টাম্প হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৬৮ রান করেছেন তিনি। পরিস্থিতি অনুযায়ী যা ছিল দারুণ কার্যকরী। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও আকাশ দীপ উইকেটে এসে দ্রুত শট খেলার চেষ্টা করলেও সুবিধা করতে পারেননি। এই দুজন দ্রুত ফিরলে এক উইকেট হাতে রেখেই ইনিংস ঘোষণা করেন রোহিত শর্মা।
আরও পড়ুন:খেলোয়াড় হিসেবে যতটা নিরাপত্তা দেয়া প্রয়োজন, ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ততটাই দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রোববার সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে গ্রামীণফোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং চেক গ্রহণ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আলোচনা চলছে যে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘বিসিবি এ বিষয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছে। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে বাধ্য এবং তা আমরা অবশ্যই করব।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুটি। এটি আমাদের মনে রাখতে হবে। খেলোয়াড় হিসেবে একটি পরিচয়, আরেকটি হলো রাজনৈতিক পরিচয়। তিনি আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে এমপি নির্বাচন করেছেন। মানুষের মধ্যে তো দুটি নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন খেলোয়াড় হিসেবে, একজন খেলোয়াড়কে যতটা নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব তা আমরা অবশ্যই দেব। তিনি দেশে এলে আমরা তা দেব। তার নামে যে হত্যা মামলা হয়েছে সে বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে বলেছি। আইন মন্ত্রণালয়ও বলেছে যে, সংশ্লিষ্টতা না থাকলে প্রাথমিকভাবেই বাদ দেয়া যায়।’
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘তার (সাকিব আল হাসান) রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে…। মনে করুন, আমার নিরাপত্তার জন্য পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন গানম্যান থাকেন। আমার ওপর যদি দেশের ১৬ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে তারা আমাকে কী নিরাপত্তা দেবেন?’
তিনি বলেন, ‘জনগণের যদি কোথাও ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা আমাকে রিডিউস করতে (কমাতে) হবে আমার কথা দিয়ে। আমার মনে হয়, তার নিজের জায়গা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তার যে রাজনৈতিক অবস্থান, তা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। অলরেডি মাশরাফি বিন মুর্তজা কথা বলেছেন।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটা কেউ কাউকে আসলে দিতে পারবে না। শেখ হাসিনাকেও নিরাপত্তা দেয়া যায়নি, তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ‘সেই জায়গায় রাজনৈতিক বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিরাপত্তা দেয়াই আমাদের দায়িত্ব এবং সে দায়িত্ব আমরা পালন করি।’
আরও পড়ুন:বৃষ্টির বাগড়ায় কানপুর টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে একটি বলও মাঠে গড়াতে পারেনি এদিন।
প্রথম সেশনের খেলা বাতিলের পর আশা করা হচ্ছিলো, দ্বিতীয় সেশনে অন্তত খেলা হবে। কিন্তু এই সেশনের শেষ দিকেও মাঠ উপযোগী হয়ে না ওঠায় দিনের খেলা আগেভাগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।
কানপুরে শনিবার রাতভর বৃষ্টি হয়। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি ছিল না। তারপরও কেন ম্যাচ শুরু করা গেল না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ ম্যাচ শুরু করতে ব্য্যর্থতার দুটি কারণ জানিয়েছে আলাদাভাবে। একবার বলছে, আলোর স্বল্পতা। আবার বলছে, ভেজা আউটফিল্ড।
এদিন দুই দলের খেলোয়াড়েরা হোটেলেই ছিলেন। একবারের জন্যও মাঠে আসেননি।
এর আগে শনিবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলাও বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। ওইদিনও কোনো বল মাঠে গড়াতে পারেনি। আর প্রথম দিনে দুবার বৃষ্টির বাধার মুখে খেলা হয়েছে মাত্র ৩৫ ওভার।
৩৫ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১০৭ রান। প্রথম দিনের খেলা শেষে উইকেটে ছিলেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য