এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের টাইগারদের হয়ে খেলছেন অসংখ্য স্মরনীয় ও ম্যাচজয়ী ইনিংস। ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরু করা মুশফিক এবারে পেলেন উইজডেনের এক বিশেষ স্বীকৃতি।
ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত ‘উইজডেন’ প্রকাশ করেছে বিশেষ এক একাদশ। যেটি গড়া হয়েছে টিনেজ বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করা ক্রিকেটারদের নিয়ে, যারা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
‘টিনেজ রায়ট টেস্ট ইলেভেন’ নামের একাদশে টাইগার ব্যাটসম্যান জায়গা করে নিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার, গ্যারি সোবার্স, নিল হার্ভে ও ওয়াসিম আকরামদের মতো কিংবদন্তিদের পাশে।
পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের নেতৃত্বে থাকা একাদশে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে উইজডেন বেছে নিয়েছে মুশফিকের নাম।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে সাময়িকীটি লিখেছে, ‘৩৩ বছর বয়সেও সেরা ছন্দে থাকা মুশফিকুর রহিম তার দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ছোটখাট, নির্ভয় এই উইকেটকিপারের তিনটি টেস্ট ডাবল হানড্রেড আছে যা বাংলাদেশিদের করা ২০০ রানের ইনিংসের ৬০ শতাংশ।’
মুশফিকুর রহিম ছাড়া বর্তমানে ক্রিকেট খেলছেন এমন শুধু একজন তারকা আছেন উইজডেনের টিনেজ রায়ট টেস্ট একাদশে। অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সকে বেছে নিয়েছে ইংল্যান্ড ভিত্তিক পত্রিকাটি।
উইজডেনের টিনেজ রায়ট টেস্ট একাদশ:
১. নিল হার্ভে (অস্ট্রেলিয়া)
২. শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
৩. ডেনিস কম্পটন (ইংল্যান্ড)
৪. মার্টিন ক্রো (নিউজিল্যান্ড)
৫. গ্রায়েম পোলক (সাউথ আফ্রিকা)
৬. স্যার গারফিল্ড সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৭. মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার, বাংলাদেশ)
৮. ইমরান খান (অধিনায়ক, পাকিস্তান)
৯. আনিল কুম্বলে (ভারত)
১০. ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)
১১. প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অগ্রণী উচ্চবিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে হঠাৎ সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে আফরোজা আক্তার (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী আহত হয়েছে। রবিবার (২৪ আগস্ট) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় দেবনাথ জানান, সকাল পৌনে ১১টার দিকে অষ্টম শ্রেণির গণিত ক্লাস চলাকালে বিকট শব্দে একটি ফ্যান নিচে পড়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। ফ্যানের ব্লেডে আঘাত পেয়ে আফরোজার নাক কেটে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলী বলেন, ভবনটি আগে একতলা ছিলো। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) মাধ্যমে ২০২৩ সালে এটি তিনতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। সে সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্যান বসায়। সম্ভবত নাট-বোল্ট ঢিলা বা ক্ষয়ে যাওয়ায় ফ্যানটি পড়ে যায়। শিক্ষার্থীর মাথায় পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। ইতোমধ্যে ভবনের সব ফ্যান পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ডাকাতির অভিযোগে দুজনকে আটক করে স্থানীয়দের গণপিটুনিতে একজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।রবিবার (২৪ আগস্ট) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার কাশিপুর বাজার এলাকায়।
গণপিটুনিতে আহত এক ডাকাত নিজের নাম রাজীব ওরফে রাজু বলে জানিয়েছেন। তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।নিহতের নাম উজ্জ্বল, তিনি বাউফল উপজেলার বাসিন্দা।এ ছাড়া, লুটকৃত টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ডাকাতদলের আরেক সদস্য বাচ্চুর কাছে আছে বলে দাবি করেছে আহত রাজীব। বাচ্চু বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের খলিল হাওলাদার ও আজহার জমাদ্দারের বাড়িতে গভীর রাতে হানা দেয় একদল ডাকাত। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদের মারধর করে এবং দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ প্রায় ১০ লাখ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়। ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীদের চিৎকারে স্থানীয়রা ধাওয়া করে দুজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। তবে দলের অন্য সদস্যরা লুটকৃত মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকতারুজ্জামান সরকার বলেন , স্থানীয়রা ডাকাতির অভিযোগে দুজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়ার পর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে একজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্যজনকে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারে উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য পরীক্ষার জন্য একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এতে দ্রুত মাদক সংক্রান্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত ও নিষ্পত্তি সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোমেন মন্ডল।
রোববার সকাল সাড়ে ১১ টায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে 'রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজার এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স’ এর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য। সোমেন মন্ডল এই টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মাদকের মূল ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে কক্সবাজারকে ব্যবহার করছে চক্রগুলো। এ কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে সদ্য গঠিত টাস্কফোর্স।
সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত সাড়াশি অভিযানে গত এক মাসে জব্দ হয়েছে ২১ লাখের বেশি ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ, গাঁজা ও বিদেশি মদ। আটক হয়েছে শতাধিক কারবারি। সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে সবগুলো সংস্থা একসাথে কাজ করছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান দুই দিকেই জোর দেওয়া হয়েছে।
টাস্কফোর্স বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে মাদক নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হবে।
পটুয়াখালীর মহিপুরে একই রাতে তিন বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) মধ্যরাত আনুমানিক ৩টার দিকে মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আতিকুর রহমান মিলনের বাড়িসহ একই এলাকার আবুল হোসেন ও মহিউদ্দিনের বাড়িতে প্রায় ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল হামলা চালায়। এসময় তারা পরিবারের সদস্যদের বেঁধে মূল্যবান মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ফরজের নামাজ শেষে মিলন ভাইয়ের বাসায় এসে দেখি গেট খোলা ও দরজার লক ভাঙা, সাথে সাথে ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করি। বাড়ির মালিক চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রয়েছে।
বাবু নামের একজন জানান, রাত আড়াইটার দিকেও বাজারে নাইটগার্ড নিয়ে বাড়িটি ঘুরে দেখে আছি, তখনও সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো।
ডাকাতির শিকার আতিকুর রহমান মিলন বলেন, আমরা স্ব-পরিবারে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থানকালে শনিবার মধ্যরাতের যেকোনো একসময় এ ঘটনা ঘটে। এসময় আমার বাসা থেকে নগত ৬ লাখ টাকা ৭ ভরি স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক ২২ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
অন্য ভুক্তভোগী সোবাহান জানান, “আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাদের মারধর করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। ঘরের আলমারি ভেঙে নগদ টাকা ৬ হাজার টাকা ও ৬ আনি ওজনের কানের ঝুমকা নিয়ে যায়। ঘটনা কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে চলে যান।
অপর ভুক্তভোগীর মহিউদ্দিন বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে সাত আটজনের একটি ডাকাত দল ঘরে প্রবেশ করে নগত ২ হাজার ৫'শ টাকা ও ৮ আনি ওজন একজোড়া কানের দুল নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান,একই রাতে টানা তিনটি বাড়িতে একই কায়দায় ডাকাতি। ইতোপূর্বে লতিফপুর আকন বাড়ির ডাকাতির ঘটনায় এখনো কোন সূত্র পাওয়া যায়নি। এনিয়ে অত্র এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদ হাসান বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দোষীদের সনাক্তের কাজ চলছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
এখন পর্যন্ত মোট ২৬টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ পর্যালোচনা করে এর ওপর নিজেদের মতামত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বরাবর জমা দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বেলা ১টা পর্যন্ত ২৫তম ও ২৬তম দল হিসেবে কমিশনের কাছে মতামত জমা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও নাগরিক ঐক্য।
এর আগে, গত ১৬ আগস্ট রাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রেরিত পূর্ববর্তী খসড়ায় কিছু ত্রুটি থাকায়, তা সংশোধন করে নির্ভুল খসড়া প্রেরণ করা হয়।
সর্বশেষ গত বুধবার (২০ আগষ্ট) কমিশনের পক্ষ থেকে খসড়াটির ওপর নিজেদের যেকোনো ধরনের মতামত প্রদানের সময় ২২ আগস্ট বিকেল তিনটা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এরপর শুক্রবার (২২ আগস্ট) মতামত জমা দেয় ২৪টি দল। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি , লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, আমজনতার দল, গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি।
যে ৪টি রাজনৈতিক দল এখনো ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ এর বিষয়ে মতামত জমা দেয়নি। তারা হলো- গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট।
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য