আর্নেস্ট আর্থার কাউড্রে ক্রিকেটপ্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এক মানুষ। নিজেও খেলতেন। একেবারে আহামরি কিছু নয়। তারপরও তালেগোলে একটা ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। জাতিতে ইংরেজ, তবে জন্ম ব্রিটিশ রাজের অধীন ভারতবর্ষে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতায়।
একমাত্র ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচটি তালেগোলে খেলে ফেলা বলছি, কারণ তা খেলতে পেরেছিলেন তখন তিনি ভারতে ছিলেন বলেই। ১৯২৬-২৭ মৌসুমে ভারতে শুভেচ্ছা সফরে এসেছে এমসিসি দল। সেই দলের বিপক্ষে মাদ্রাজে ইউরোপিয়ান একাদশের হয়ে খেলেন আর্নেস্ট কাউড্রে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রানও এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকেই।
আর্থার কাউড্রের একমাত্র ছেলের জন্মও ভারতে। তখন তাঁর বাস অধুনা চেন্নাই আর সে সময়ের মাদ্রাজের কাছের পর্যটন শহর উটিতে, নিজের টি এস্টেটে। ক্রিকেটপ্রেম থেকে ছেলের এমন একটা নাম রাখলেন, যেন সেই নামের আদ্যক্ষর মিলে এমসিসি হয়। এমসিসি মানে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব। যে ক্লাবকে বলতে পারেন ক্রিকেটের জনক। এখনো ক্রিকেটে কোনো আইন বদলাতে হলে যে ক্লাবের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলও অনেক অনেক বছর এমসিসি নামেই খেলেছে।
তো আদ্যক্ষর এমসিসি রাখতে ছেলের নাম রাখা হলো মাইকেল কলিন কাউড্রে। এটা তো না বললেও চলছে যে, পদবীর প্রথম অক্ষর ‘সি’ না হলে বাবার চাওয়া পূরণ হতো না। ছেলের যখন এমসিসির অর্থ ভালো করে বোঝার বয়সও হয়নি, তখনই তার জন্য এমসিসির সদস্য পদ চেয়ে আবেদনও করে দিলেন আর্থার কাউড্রে।
এসব গল্প আমরা জানতেও পারতাম না, যদি না সেই ছেলে একদিন ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হতেন। এমসিসি নিয়ে এত কথা বলার আসল কারণ যদিও এটা নয়। কী বিস্ময়কর দেখুন, এমসিসি আদ্যক্ষরের সেই ছেলেটিই মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব অর্থাৎ এমসিসির দ্বিশতবার্ষিকীতে সেই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট! বাবা নামটা রাখার সময় নিশ্চয়ই এতটা ভাবেননি। কেই-বা ভাবতে পারে এমন!
ছেলে ক্রিকেটার হবে, এই স্বপ্ন তো দেখেছিলেনই। তাই বলে আর্নেস্ট আর্থার কাউড্রের স্বপ্ন নিশ্চয়ই এত দূর বিস্তৃত হয়নি যে, তিনি ভাববেন ছেলে একদিন প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট খেলার সেঞ্চুরি করবে। টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটি একদিন তাঁর হবে, সবচেয়ে বেশি ক্যাচের রেকর্ডও। খেলা ছাড়ার সময় সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড, ইংল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি। নিদারুণ এক ট্র্যাজেডিই বলতে হয়, নিজের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাওয়া এমন কীর্তিমান ছেলের টেস্ট অভিষেকটাও বাবা দেখে যেতে পারেননি মাত্র মাস দুয়েকের জন্য।
এই দুই রেকর্ডের কোনোটাই যে এখন আর কলিন কাউড্রের নয়, এটা তো মনে হয় আপনি জানেনই। ১০০ টেস্ট খেলাও অনেকদিন ধরেই তেমন কোনো ব্যাপার নয়। শচীন টেন্ডুলকার ২০০ টেস্ট খেলে ফেলার পর তো আরও নয়। তবে কাউড্রে যখন শততম টেস্ট খেলতে নামেন, তা সত্যিকার অর্থেই ছিল এক বিস্ময়। কলিন কাউড্রে তা উদযাপন করেছিলেন সেঞ্চুরি করে। সেই সেঞ্চুরিতেও মজার একটা ব্যাপার আছে। হাফ সেঞ্চুরি করার পরই পায়ের পেশিতে টান পড়েছিল। ক্রিকেটে তো তখন রানার নেয়া যেত, সেঞ্চুরি করতে তাই সমস্যা হয়নি। আউট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানই শুধু রানার হতে পারতেন, সেই ইনিংসে তখন পর্যন্ত আউট হয়েছিলেন শুধু জিওফ বয়কট। নিজেকে ছাড়া কিছু বোঝেন না, সারা জীবন এই অপবাদ বয়ে বেড়ানো বয়কটকে তাই দৌড়ে যেতে হয়েছে কাউড্রের রানের জন্য। প্রসঙ্গটা উঠতই না, যদি ঘটনাচক্রে ১০০ টেস্ট খেলার দ্বিতীয় কীর্তিটা এই বয়কটই করে না ফেলতেন।
এমসিসির দ্বিশতবার্ষিকীতে ক্লাবের চেয়ারম্যানের নাম এমসিসি, প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে শততম টেস্ট খেলার সময় কাউড্রের রানারের এই কীর্তিতে দ্বিতীয় জন হয়ে যাওয়া- এ সব তো অবশ্যই কাকতালীয়। ক্রিকেটে এমন কাকতালীয় ঘটনা আরও অনেক আছে। এই লেখায় তাতে আর না যাই। আমরা কলিন কাউড্রে নিয়েই থাকি। তা হঠাৎ করে আজ তাঁকে নিয়ে লেখারও তো একটা কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়। সেই কারণ হলো, আজ কলিন কাউড্রের জন্মদিন। নিজে তা পালন করছেন কি না, তা জানার উপায় নেই। কারণ স্বর্গে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ আছে কি না, আমরা তা জানি না। এক ডিসেম্বরে পৃথিবীতে এসেছিলেন, ৬৭ বছর পর ২০০০ সালের আরেক ডিসেম্বরে কলিন কাউড্রে চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে।
কাউড্রের জন্মদিনের সঙ্গে মেলানো যায়, এমন কাকতালীয় আরেকটা ঘটনাও তাহলে বলেই ফেলি। কৈশোর থেকেই কাউড্রের ব্যাটিং যাঁকে মনে করিয়ে দিত, সেই ওয়ালি হ্যামন্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েই টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটা করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি ক্যাচের রেকর্ডটাও হ্যামন্ডের কাছ থেকেই ছিনিয়ে নেওয়া। কী আশ্চর্য, সেই হ্যামন্ডের টেস্ট অভিষেক কি না কলিন কাউড্রের জন্মদিনেই। তারিখ অনুযায়ী 'জন্মদিন' কথাটাতে কোনো ভুল নেই। তবে হ্যামন্ডের টেস্ট অভিষেক কাউড্রের জন্মের ঠিক পাঁচ বছর আগের এক ২৪ ডিসেম্বরে।
কথায় কথা আসে। হ্যামন্ডের টেস্ট অভিষেকের কথা বলতে গিয়েই যেমন আরেকটি কাকতালীয় মিলের কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। ১৯২৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর জোহানেসবার্গে হ্যামন্ডের টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণ। এগার বছর পর একই দিনে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ছয় হাজার রান করার কীর্তি। এখানেও শেষ হলে কথা ছিল। মিলটা শুধু দিনেই না, প্রতিপক্ষও সেই দক্ষিণ আফ্রিকা, ভেন্যুও সেই জোহানেসবার্গ। পরিসংখ্যানবিদরা বলতে পারবেন, প্রবাবিলিটির বিচারে ব্যাপারটা কতটা অবিশ্বাস্য!
বিষয় কলিন কাউড্রে হলেও এই লেখাটা কিছু কাকতালীয় মিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। কারণ কলিন কাউড্রের বর্ণাঢ্য এবং নাটকীয় ক্যারিয়ার আরও অনেক বিস্তৃত পরিসর দাবি করে। তারপরও লেখাটা শেষ করার আগে কিছু ব্যাপার একটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই। টেস্টে প্রথম সাত হাজার রান কলিন কাউড্রের। 'প্রথম' কিছু চিরদিনই প্রথম হয়ে থাকলেও সেই কীর্তিমানদের দলটা জনাকীর্ণ হয়ে পড়লে তা আর সেভাবে মনে থাকে না। তবে টেস্ট সংখ্যা-রান-ক্যাচের মতো অনেক রেকর্ডের মালিকানা হারিয়ে ফেললেও একটা রেকর্ড এখনো কলিন কাউড্রেরই আছে। যে রেকর্ডটি একাই লড়ে যাওয়ার বীরত্বব্যঞ্জক। কমপক্ষে তিন ইনিংস খেলা হয়েছে, এমন টেস্ট ম্যাচে কাউড্রেই একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান, এমন হয়েছে নয়বার। এই রেকর্ডে যিনি সবচেয়ে কাছাকাছি (৮ বার), তাঁর নামটা এই লেখাতে আগেও এসেছে। শততম টেস্টে কলিন কাউড্রের রানার জিওফ বয়কট।
বীরত্বসূচক কোনো একটা রেকর্ডে কাউড্রের নাম থাকাটাকে একটু প্রতীকি বলেই মনে হয়। সাহসের প্রমাণ তো আর কম দেননি। ১৯৬৩ সালে লর্ডস টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার ওয়েস হলের বাউন্সারে হাত ভেঙে গেল। পরদিন ইংল্যান্ডের যখন নবম উইকেট পড়ল, ম্যাচে সম্ভাব্য চারটি ফলই হতে পারে। ইংল্যান্ডের ৬ রান দরকার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১ উইকেট। নবম উইকেট ফেলে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা যখন জিতে গেছি বলে ভাবছে, বাঁহাতে প্লাস্টার নিয়ে মাঠে নেমে এলেন কাউড্রে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে একটি বলও খেলতে হয়নি। কিন্তু খেলতে হতে পারে ভেবেই তো নেমেছিলেন এবং না নামলে ইংল্যান্ড টেস্টটা হেরে যায়।
ক্যারিয়ারের শেষটা তো আরও দুর্জয় সাহসের প্রদর্শনী। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে ডেনিস লিলি আর জেফ টমসনের আগুনে গোলায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। চোট পেয়েছেন দলের মূল দুই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের নির্বাচকেরা উদ্ধারকর্তা হিসাবে শরণাপন্ন হলেন কলিন কাউড্রের। অথচ কাউড্রের বয়স তখন ৪২ ছুঁইছুঁই এবং প্রায় চার বছর তিনি কোনো টেস্ট খেলেননি। কাউড্রে যে 'না' বলে দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক ব্যাপারটাই ঘটল না। কাউড্রে উড়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ায় এবং ৪৭ ঘণ্টার বিমানযাত্রার শেষে পার্থে পৌাছানোর পরদিনই বিশ্বের দ্রুততম পিচে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে গেলেন। তখন বোলিং করছেন জেফ টমসন, যাঁর মুখোমুখি হলে ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত নেমে যায়। সেই স্রোতধারাকে আরও শিরশিরে করে তুলতে যিনি উইকেটে রক্ত দেখতে ভালোবাসেন বলেও ঘোষণা করে দিয়েছেন। কাউড্রে উইকেটে গিয়েই সেই টমসনকে হাসি মুখে সম্ভাষণ জানালেন, "গুড মর্নিং, মাই নেম ইজ কলিন কাউড্রে।"
টমসন তাতে পুলকিত হয়েছেন বলে জানা যায় না। শুধু ব্যাটে নয়, শরীরেও বল নিয়ে সেই টেস্টের দুই ইনিংসে ২২ ও ৪১ রান। এরপর থেকেই স্কোর নিম্নমুখী, কিন্তু শুধু রান দিয়ে কি আর সেই সিরিজের কাউড্রেকে বোঝানো যায়! সিরিজটা যে শেষ করেই ফিরেছিলেন, আসল মহিমাটা তো ওখানে। জেনেবুঝে ওই অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেওয়ার কারণ হিসাবে পরে বলেছিলেন, "কারণ একটাই- চ্যালেঞ্জ। ওটা নেওয়ার লোভটা সামলাতে পারিনি।"
এমসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার কথা তো বলা হয়েছে আগেই। চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আইসিসিরও। ক্রিকেটে টিভি আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির প্রবর্তন তাঁর সময়েই। মাঠে ও মাঠের বাইরে এমনই এক খেলোয়াড়ি চেতনার ধারক ছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পরের বছর থেকেই এমসিসির স্পিরিট অব ক্রিকেট লেকচারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম। এমসিসির সঙ্গে মিল রেখে যে ছেলের নাম রেখেছিলেন বাবা, তাঁর নামটা তাই প্রতি বছরই নিয়ম করে উচ্চারিত হয় এমসিসিতে।
শুভ জন্মদিন, মাইকেল কলিন কাউড্রে! স্যরি, স্যরি! শুভ জন্মদিন, এমসিসি!
🧢 114 Tests and one ODI
— ICC (@ICC) December 24, 2020
🏏 7625 runs including 22 hundreds in international cricket
England's Colin Cowdrey, who was born #OnThisDay in 1932, was the first to play 1️⃣0️⃣0️⃣ Test matches😯
Happy birthday! pic.twitter.com/eTYsDPtKzr
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে রবিবার সফলভাবে আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ টুর্নামেন্টে সিইউবির বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগী দলগুলো অংশগ্রহণ করে। ব্যতিক্রমী ক্রিকেটিং দক্ষতা ও দলগত কাজ খেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলে।
গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনে ব্ল্যাকআউটস এবং সিইউবি অলস্টারদের মধ্যে দুর্দান্ত ম্যাচ হয়।
সিইউবি ব্ল্যাকআউটস দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা অর্জন করে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিন।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. গিয়াস উ আহসান।
সিইউবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত ইভেন্টটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
সোমবার মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিপিএলের এবারের আসর শুরু হয়েছে।
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ফাহিম আশরাফের ৮৮ রানের জুটি বরিশালের জয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে।
১৯৮ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে পৌঁছতে মাঠে নেমে বরিশাল তাদের ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায়। জিসান আলমের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি।
পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই আরও দুই উইকেট হারিয়ে তিন উইকেটে ৩০ রান তুলতে সক্ষম হন তারা।
এরপর তৌহিদ হৃদয় ২৩ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে শুরুর ধাক্কা সামলে নেয়। কিন্তু কাইল মেয়ার্স (৫) ও মুশফিকুর রহিম (১৩) দ্রুত আউট হওয়ায় বরিশাল আরও বিপদে পড়ে যায়।
অর্ধেক ওভার মাঠে গড়ানোর আগেই বরিশাল অর্ধেক উইকেট হারিয়ে বসে। ১৩তম ওভারে নিজেদের ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা।
ম্যাচের এই পর্যায়ে মাহমুদউল্লাহ ও আশরাফি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জয়ের শক্তিশালী জুটি গড়েন। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ বল হাতে রেখে চার উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা।
এর আগে ইয়াসিরের ৪৭ বলে অপরাজিত ৯৪ ও এনামুলের ৫১ বলে ৬৫ রানের ওপর ভর করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ১৯৭ রানের বড় স্কোর করে দুর্বার রাজশাহী।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে আসা দুর্বার রাজশাহী ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জিসান আলমকে শূন্য রানে আউট করেন কাইল মায়ার্স। স্কোর বোর্ডে ২৫ রান উঠতেই রাজশাহী দ্বিতীয় উইকেট হারায়।
বরিশাল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪০ রানের জুটি গড়েন এনামুল ও ইয়াসির। ১৮তম ওভারে পতনের আগে এনামুল ৫১ বলে ৪টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ৬৫ রান করে দলকে এগিয়ে নেন। তবে উইকেটের অপর প্রান্তে ছিলেন ইয়াসির। সাতটি ৪ ও আটটি ছক্কায় ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
বছরের পর বছর ধরে বিপিএল থেকে ছিটকে পড়া মায়ার্স প্রত্যাবর্তন করে রাজশাহীর হয়ে দুটি উইকেট নেন।
এদিকে টিকিট নিয়ে সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তারা স্টেডিয়ামের একটি গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জও করে।
আরও পড়ুন:জাকের আলির বিস্ফোরক ইনিংসের সুবাদে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে শুক্রবার ৮০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে আইসিসি পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে রান বিবেচনায় সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
আগেরটি ছিল চট্টগ্রামে গত বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানের।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে ৭ ও ২৭ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এই প্রথম তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
২০১২ সালে সর্বশেষ বিদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
সেন্ট ভিনসেন্টে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৪৪ রানের সূচনা পায় টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ৪ ওভারে ১৫ বলে ২৯ রান তোলেন ইনজুরি আক্রান্ত সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া ইমন।
পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন ওপেনার ও অধিনায়ক লিটন দাস। তিনটি চারে ১৪ রান করেন লিটন।
দারুণ শুরুর পর পাওয়ার প্লের শেষ বলে বিদায় নেন ইমন। পেসার আলজারি জোসেফের বলে স্কয়ার লেগে জাস্টিন গ্রেভসকে ক্যাচ দেন চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ২১ বলে ৩৯ রান করা ইমন।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে এবারও ব্যর্থ হন তানজিদ হাসান। ৯ রান করে স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ দেন তানজিদ। এতে দলীয় ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
উইকেট পতন ঠেকিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩১ বলে ৩৭ রান যোগ করে ১৩তম ওভারে দলের রান ১০০ পার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের।
উইকেটে সেট হয়ে ১৩তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। স্পিনার রোস্টন চেজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সীমানার কাছে গ্রেভসকে ক্যাচ দেন তিনটি বাউন্ডারিতে ২৩ বলে ২৯ রান করা মিরাজ।
মিরাজ ফেরার পর ১৫তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শামীম হোসেন ২ ও মাহেদি হাসান শূন্যতে রান আউট হন। এর মধ্যে নাটকীয়ভাবে রান আউট হন শামীম।
দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা শামীমের দিকে চলে যান জাকের। ওই সময় বল নিয়ে নন স্ট্রাইকের উইকেট ভেঙে দেন চেজ। নিজেকে রান আউট ভেবে মাঠ ছাড়েন জাকের, কিন্তু টিভি আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লেতে জানান, স্ট্রাইক প্রান্তে শামীমের আগে ক্রিজে ব্যাট স্পর্শ করেন জাকের। তাই রান আউট হন শামীম। ১৬ বলে ১৭ রানে জীবন পান জাকের।
১১৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন জাকের ও তানজিম হাসান সাকিব। সপ্তম উইকেটে দুজনের ২৭ বলে ৫০ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথ পায় টাইগাররা।
১৯তম ওভারের শেষ বলে তানজিমকে আউট করে জুটি ভাঙেন শেফার্ড। একটি করে চার-ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান করেন তানজিম।
৩৪ বলে ৪৮ রান নিয়ে শেষ ওভার শুরু করেন জাকের। আলজারির দ্বিতীয় বলে চার মেরে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৬ বল খেলা জাকের। এরপর ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে ছক্কা মারেন জাকের।
শেষ ওভার থেকে ২৫ রান আসায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের।
শেষ ১০ ওভারে ১১৩ ও শেষ ৫ ওভারে ৭৫ রান তুলে টাইগাররা। এর মধ্যে জাকেরের সংগ্রহ ছিল ৩৪ বলে ৬৭ রান।
শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৪১ বলে ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের। ২২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
এ বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪ বলে ৬৮ রান করেছিলেন জাকের।
বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেফার্ড দুটি, আলজারি-চেজ ও মোতি একটি করে উইকেট নেন।
জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে লেগ বিফোর হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। পরের ওভারে গ্রেভসকে ৬ রানে ফেরত পাঠান স্পিনার মাহেদি।
৭ রানে ২ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশ বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন জনসন চালর্স ও নিকোলাস পুরান। মারমুখী ব্যাটিংয়ে বড় জুটির আভাস দিচ্ছিলেন তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুরানকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মাহেদি। ১০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান করেন পুরান। গ্রেভস-পুরান জুটি ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন।
দলীয় ৪৫ রানে পুরান ফেরার পর ব্যাটিং ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাত নম্বরে নামা রোমারিও শেফার্ডের ২৭ বলে ৩৩ রানে কোনোমতে দলীয় ১০০ রান স্পর্শ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চার ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার রিশাদ। এ ছাড়া তাসকিন-মাহেদি দুটি করে এবং তানজিম-হাসান একটি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হন জাকের। ব্যাট হাতে ৩৭ রান ও বল হাতে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন মাহেদি।
এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে সাফল্য নিয়ে বছরটি শেষ করতে পারল লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৯/৭ (জাকের ৭২*, ইমন ৩৯, শেফার্ড ২/৩০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৪ ওভারে ১০৯/১০ (শেফার্ড ৩৩, চালর্স ২৩, রিশাদ ৩/২১)।
ফল: বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
আরও পড়ুন:আর্নোস ভেল গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হতাশাজনক হারের পর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা টাইগাররা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ধীর ও স্যাঁতসেঁতে পিচে ছন্দ ধরে রাখতে হিমশিম খায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক লিটন দাস (১০ বলে ৩) আকিল হোসেনের বলে স্টাম্পড হয়ে বিদায় নিলে ৮ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারিয়ে শুরুতেই সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের মোকাবিলায় টপ অর্ডার তানজিদ হাসান (২), সৌম্য সরকার (১১) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২৬) হোঁচট খেয়ে শুরুটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৪তম ওভারে ৬ উইকেটে ৭২ রান করে মনে হচ্ছিল হতাশাজনক স্কোরের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
শামীম হোসেনের একটি সতর্ক ইনিংস ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান ১৭ বলে দুটি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৫ রান করে বাংলাদেশকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৯ রান তুলে দেয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি উইকেট নেন গুদাকেশ মোতি।
১৩০ রানের সামান্য লক্ষ্য অর্জন করতে নেমে বাংলাদেশের সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের চাপে শুরুতেই নড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
তাসকিন আহমেদ তার প্রথম ওভারেই ব্রেন্ডন কিং (৮) ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে (০) আউট করে স্বাগতিকদের ১৯ রানের মাথায় দুটি উইকেটের পতন ঘটান। এরপর মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেন মিলে মিডল অর্ডারের নিকোলাস পুরান (৫) ও রোভম্যান পাওয়েলকে (৬) মাঠ ছাড়া করেন।
স্বাগতিকদের ভরসা ছিল রোস্টন চেজের ওপর। তিনি ৩৪ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে দারুণ লড়াই করেন। আকিল হোসেইন চূড়ান্ত পর্যায়ে ৩১ বলে ৩১ রানের লড়াকু স্কোর যোগ করলেও অপর প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকায় তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
হোসেইনকে আউট করে ১৮ ওভার ৩ বলে ১০২ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস গুটিয়ে দেন তাসকিন।
আরও পড়ুন:বাসেতেরেতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মঙ্গলবার বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
জেডেন সিলসের ২২ রানের বিনিময়ে চার উইকেট এবং ব্র্যান্ডন কিংয়ের ৮২ রানের জাদুকরী ব্যাটিংয়ে ৭৯ বল বাকি থাকতেই ২২৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।
টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সিলস তাৎক্ষণিকভাবে বল ডেলিভারি করেন। ১০ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে ৫৪-৩ করে দেন এ পেসার।
তানজিদ হাসান ৩৩ বলে ৪৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে শুরুতেই প্রতিরোধ গড়ে তুললেও উইকেট পড়েছে নিয়মিত।
অষ্টম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ (৬২) ও তানজিম হাসান সাকিবের (৪৫) মধ্যে রেকর্ড ৯২ রানের পার্টনারশিপ সত্ত্বেও ৪৫.৫ ওভারে ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
জবাবে ১০৯ রানের জুটি গড়ে শক্ত ভিত গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ও এভিন লুইস। তাদের আটটি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কায় ৭৬ বলে ৮২ রান ইনিংসের গতি বাড়িয়ে দেয়।
রিশাদ হোসেনের বলে ৪৯ রান করে আউট হয়ে হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি থেকে বিদায় নেন লুইস। কেসি কার্টি নেন ৪৫ রান। আর অধিনায়ক শাই হোপ অপরাজিত ১৭ ও শেরফানে রাদারফোর্ড অপরাজিত ২৪ রান করে জয়ের কাজটি স্বাচ্ছন্দ্যে শেষ করেন।
ম্যাচ শেষে হোপ বলেন, ‘আমরা আজ ঝোড়ো ছিলাম। আমরা ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের জন্য সংগ্রাম করছি। এখন ৩-০ ব্যবধানে শেষ করার আশা করছি।’
১০ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়।
ম্যাচ শেষে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
তিনি বলেন, ‘মাঝের ওভারগুলোতে আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি। পার্টনারশিপ মিস ছিল। এ উইকেটে তিন শর বেশি রান দরকার ছিল।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ তাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির আগে পুনরায় সংগঠিত হতে চায়।
আরও পড়ুন:যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯ ওভার ১ বলে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশের যুবারা। ১৯৯ রানে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট হাতে নেমে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।
বাংলাদেশের যুবারা এদিন শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আসে সাফল্য। আইয়ুস মার্থেকে (১) বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন আল ফাহাদ। তাতে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত।
পঞ্চম ওভারে মারুফ মৃধাকে দুটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আঘাত হানতে চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ভাইভাব সুরিয়াবানশি (৯)। তবে আরও একটি মারতে গিয়ে গ্যালিতে শিহাব জেমসের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
ব্যাটিং অর্ডারে তিনে নামা আন্দ্রে সিদ্ধার্থকে সাজঘরে ফেরান রিজান হোসেন। ক্রিজে মোটামুটি সেট হয়ে যাওয়ার এই ভারতীয় ব্যাটার ৩৫ বলে ২০ রান করে বোল্ড হয়ে যান। টপ অর্ডারের তিন উইকেট তুলে এবার ভারতীয়দের চেপে ধরে বাংলাদেশ।
কেপি কার্থিকেয়াকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ভারতীয় অধিনায়ক মোহামেদ আমান। তবে ২১তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এনে দেন ইমন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কার্থিকেয়াকে উইকেটরক্ষক ফরিদের ক্যাচে পরিণত করে ভাঙেন জুটি। ২১ রান আসে কার্থিকেয়ার ব্যাট থেকে। শূন্য রানে নিখিল কুমারকেও ফেরান ইমন।
পরের ওভারে আবারও ইমনের আঘাত। এবার এই পেসারের শিকার হারভানশ পাঙ্গালিয়া। ৬ রান করা এই ব্যাটারকে উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
ভারতীয় অধিনায়ক আমান এক প্রান্ত আগলে রেখে আশা বাঁচিয়ে রাখেন। ৩২তম ওভারে বল হাতে নিয়েই তাকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল। ব্যক্তিগত ২৬ রানে বোল্ড হয়ে যান আমান।
নয় নম্বরে নামা হার্দিক রাজ ২১ বলে করেন ২৪ রান। তাকেও ফেরান আজিজুল। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে হার্দিক রাজ। এরপর চেতন শর্মার আউটের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয় টাইগার যুবাদের জয়।
লেগস্পিনার দেবাশিস দেবা ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে সব বোলারই উইকেট পেয়েছেন। তবে উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেন দেবা। ২৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ইমন। আজিজুলও নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া দুটি শিকার আল ফাহাদের।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৭ রানে কালাম সিদ্দিকিকে হারায় বাংলাদেশ। একাদশ ওভারে ফেরেন থিতু হওয়া আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরার (২০)। অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ খেললেও এদিন ২৮ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফিরলে চাপে পড়ে দল।
এরপর শিহাব-রিজান মিলে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৬২ রান। দুজনেই ফেরেন অসময়ে। আয়ুশ হাটরের বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন শিহাব। হার্দিক রাজের বলে বোল্ড হয়ে যান রিজান। দেবাশীষ দেবা, সাইমুন বাসির ব্যর্থ হলে দলকে এরপর টানেন ফরিদ। নবম উইকেটে মারুফ মৃধাকে নিয়ে যোগ করেন ৩১ রান।
দলের হয়ে ৬৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন রিজান। ৬৭ বলে ৩টি চারে ৪০ আসে শিহাবের ব্যাট থেকে। ১৬৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে দুশ’র কাছে নিতে ৪৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ফরিদ। তিনিও চার মারেন ৩টি।
আরও পড়ুন:ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই পেসার ম্যাথু ফোর্ড ও শামার জোসেফ।
তাদের জায়গায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে দলে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন মার্কিনো মিন্ডলি ও জেডিয়া ব্লেডস।
গত মাসে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ঊরুর ইনজুরিতে পড়েন ফোর্ড।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে ফোর্ড সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তাই পূর্বঘোষিত ওয়ানডে দলে রাখা হয়েছিল তাকে, কিন্তু ফিট হতে না পারায় পুনবার্সন চালিয়ে যাবেন ফোর্ড।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আট উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ফোর্ড।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে পায়ের ইনজুরিতে পড়া শামার থাকবেন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে। তাই ওয়ানডে সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন ।
দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মিন্ডলির। ২০২২ সালে এডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার। এরপর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন মিন্ডলি।
সম্প্রতি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সুপার ফিফটি কাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন মিন্ডলি। সাত ম্যাচে ১৯২ রান খরচায় ২০ উইকেট শিকার করেন তিনি। বল হাতে দারুণ ছন্দে থাকায় ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
সুপার ফিফটি কাপে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন ব্লেডস। ৫ ম্যাচে ১৭৭ রানে ১৪ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেলেন ২২ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল: শাই হোপ (অধিনায়ক), ব্র্যান্ডন কিং (সহ-অধিনায়ক), কেসি কার্টি, রোস্টন চেজ, জাস্টিন গ্রেভস, শিমরন হেটমায়ার, আমির জাঙ্গো, আলজারি জোসেফ, মার্কিনো মিন্ডলি, জেডিয়া ব্লেডস, এভিন লুইস, গুডাকেশ মোটি, শেরফানে রাদারফোর্ড, জেইডেন সিলেস ও রোমারিও শেফার্ড।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য