সব ঠিক থাকলে হয়তো এ সময় মাঠে থাকত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় আসর। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সেই উপায় না থাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্টে খেলছেন দেশের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার। সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি অবশ্যই মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। যিনি ছিটকে গেছেন হ্যামস্ট্রিং এর চোটে।
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
তাকে দলে ভিড়িয়েছে জেমকন খুলনা। বাংলাদেশ জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও খেলছেন একই দলে।
পাঁচ দলের মধ্যে শুধু মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী নেয়নি কোন এ-গ্রেডের খেলোয়াড়। ড্রাফটে তারা প্রথম নেয় অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে। সুযোগ পেয়েও মাহমুদুল্লাহকে না নেয়ার পেছনে তাদের যুক্তি ছিল সে সময়ে করোনাক্রান্ত ছিলেন তিনি।
তাদের জন্য দুর্ভাগ্য, সাইফুদ্দিন কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য ছিটকে গেছেন টুর্নামেন্টের আগেই।
মঙ্গলবার পর্দা উঠছে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের। প্রথম দিনে হবে দুটি ম্যাচ। প্রথমটিতে লড়বে ঢাকা ও রাজশাহী, দ্বিতীয়টিতে খুলনা ও বরিশাল।
কাগজে-কলমে ফেভারিট খুলনা
একই সঙ্গে তারা পেয়েছে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। অন্য যেকোনো দলে যেখানে সর্বোচ্চ একজন এ-গ্রেডের খেলোয়াড়, মিজানুর রহমান বাবুল তার কোচিংয়ে পাচ্ছেন দুজনকে।
সাকিব-মাহমুদুল্লাহর পাশাপাশি খুলনায় আছেন ইমরুল কায়েস, আনামুল হক বিজয়, আল-আমিন হোসেন, নাজমুল ইসলাম অপুরা।
কাগজে-কলমে সেরা দল হলেও খুলনা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ মনো্যোগ রাখছেন মাঠের পারফরমেন্সেই। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফেভারিট তকমার প্রতিফলন দেখাতে হবে মাঠে।
‘কাগজে-কলমে হয়তো দলকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। তবে সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি যে মাঠের পারফরম্যান্সটাই মুখ্য। আপনি যত বড়, যত ভালো ক্রিকেটারই হন; দিনশেষে মাঠে এটা প্রমাণ করতে হবে। ঐ রেপুটেশন যারা বহন করি, তাদের সবসময়ই প্রমাণের তাগিদ থাকে। সেটা প্রমাণের লক্ষ্যেই আমরা নামব’, বলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
খুলনার হয়ে ইনিংস ওপেন করতে পারেন ইমরুল কায়েস ও এনামুল বিজয়। তিন নম্বরে সাকিবের পর আছেন জহিরুল ইসলাম, শামীম হোসেন পাটওয়ারি ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। লোয়ার অর্ডারে আরিফুল হক কিংবা শুভাগত হোমের সঙ্গে থাকছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তিন পেসার মন্ত্রে খুলনার হয়ে মাঠে দেখা যেতে পারে আল-আমিন, হাসান মাহমুদ ও শফিউল ইসলামকে।
ঢাকায় তারুণ্যের জয়গান
অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে দলে টানলেও পারলেও বেক্সিমকো ঢাকার রয়েছে অভিজ্ঞতার ঘাটতি। তানজিদ হাসান তামিম, আকবর আলি, নাইম শেখ, নাঈম হাসান, শাহাদাত হোসেন দীপু, পিনাক ঘোষদের মত তরুণদের নিয়ে দল সাজিয়েছে তারা।
অনভিজ্ঞতাকে অনেকেই সমস্যা মনে করলেও তেমনটা মনে হচ্ছে না অধিনায়ক মুশফিকের। তার মতে, বয়সে ছোট হলেও, তার দলের তরুণ খেলোয়াড়রা অত্যন্ত পরিণত।
‘অবশ্যই টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগে। একই সঙ্গে দুইটা বা তিনটা প্লেয়ার ভালো খেললে ওই দিন আপনি জিতে যেতে পারবেন। অনভিজ্ঞ বা তরুণ হতে পারে কিন্তু তারা অনেক পরিণত। শেষ ১৫-১৬ বছর খেলেছি একটা বিশ্বকাপও জিততে পারিনি। দলে তেমন তিন-চারজন প্লেয়ার আছে ওই (অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী) টিমের। বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে তো বড় চাপের কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি ওই রকম মেন্টালিটির বা ম্যাচিউরড প্লেয়ার আছে’, বলেন মুশফিক।
ঢাকার হয়ে টপ অর্ডারে আছেন নাইম শেখ ও তানজিদ তামিম। মাঝে খেলছেন শাহাদাত, মুশফিক, ইয়াসির আলি চৌধুরী ও সাব্বির রহমান। লোয়ার অর্ডারে মুক্তার আলি, নাঈম হাসানের সঙ্গে থাকবার সম্ভাবনা নাসুম আহমেদ, রুবেল হোসেন ও আবু হায়দার রনি।
এক্স-ফ্যাক্টর চট্টগ্রাম
ঢাকার মতো অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকলেও প্রতিভার বিচারে নিশ্চিতভাবে টুর্নামেন্টের সেরা দলগুলোর একটি গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।
তারকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দলে আছেন লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মমিনুল হকরা। সাথে আছেন তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন, শরিফুল ইসলাম। কোচ অভিজ্ঞ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মিঠুন। বিপিএলে অধিনায়কত্ব করা মোসাদ্দেক হোসেন বা বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হক কেন দায়িত্ব পাননি, সে প্রসঙ্গ জন্ম দিয়েছে বিতর্কের।
তবে এটি নিশ্চিত, মুস্তাফিজ-সৌম্য-লিটনরা জ্বলে উঠলে চট্টগ্রাম টুর্নামেন্টে যেতে পারবে বহুদূর। প্রেসিডেন্টস কাপে ভালো করতে না পারলেও তাই এই টুর্নামেন্টে ভালো করার লক্ষ্য সৌম্যের।
'যে কোনো টুর্নামেন্টেই তো একটা লক্ষ্য থাকে। আমার নিজেরও একটা লক্ষ্য আছে। তো চেষ্টা করব যে ওই লক্ষ্য পূর্ণ করার। দলও অনেক ভালো হয়েছে', বলেন সৌম্য।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই করোনা থাবা বসিয়েছে চট্টগ্রাম ক্যাম্পে। করোনাক্রান্ত হয়ে ছিটকে গেছেন তরুণ তুর্কি মাহমুদুল হাসান জয়।
চট্টগ্রামের হয়ে ইনিংসের শুরুতে আসতে পারেন লিটন-সৌম্যের ওপর। এরপর মমিনুল, মিথুন, মোসাদ্দেক, শামসুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। বোলিংয়ে আছেন তাইজুল, মুস্তাফিজ, সঞ্জিত সাহা ও শরিফুল।
বহু বছর পর বরিশাল
প্রায় বছর পাঁচেক ধরে দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নেই বরিশাল। সেই ধারা ভাঙলো বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। ফরচুন বরিশাল নাম নিয়ে ফিরল তারা।
ড্রাফটে প্রথম ডাকেই তারা দলে নেয় জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। এরপর একে একে নিয়ে টানে আফিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, ইরফান শুক্কুরদের।
ড্রাফটে খেলোয়াড় নির্বাচনে ভুল থাকলেও তামিমের বিশ্বাস দলের সব খেলোয়াড়ই ম্যাচ জেতানোর মত।
'দলে হয়তো নামি-দামি ওরকম খেলোয়াড় নেই। সবাই যদি কাগজে কলমে শক্তিশালী হয়ে ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট জিততো তাহলে অন্য কথা ছিল। যে প্লেয়ারগুলো আছে আমার, তারা সবাই যোগ্য। তারা কোনো না কোনো জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করেছে। এটাই আশা করবো যে মঙ্গলবারের ম্যাচ ভালভাবে শুরু করব। কারণ, এক থেকে এগারো সবাই ম্যাচ জেতাতে সক্ষম', বলেন তামিম।
বরিশালের হয়ে তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন সাইফ হাসান বা পারভেজ ইমন। মিডল অর্ডারে আসছেন আফিফ হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, ইরফান শুক্কুর, মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। বোলিং আক্রমণে সুমন খান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির।
শুরুর আগে বেসামাল রাজশাহী
এ-গ্রেডের কোন খেলোয়াড়কে ছাড়াই দল সাজিয়েছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। চোটের কারণে তারা পাচ্ছে না সাইফুদ্দিনকে।
পায়ের চোটে ছিটকে যাওয়া সাইফুদ্দিন নিশ্চিতভাবে খেলছেন না রাজশাহীর প্রথম তিন ম্যাচ। চোটের মেয়াদ বাড়লে মিস করতে পারেন পুরো টুর্নামেন্ট।
সাইফুদ্দিনকে হারালেও দলের কম্বিনেশন নিয়ে খুশি অধিনায়ক শান্ত।
'তরুণ ক্রিকেটারও অনেক আছে (আমাদের দলে)। চারদিকে চিন্তা করলে কম্বিনেশন ভালো। খেলোয়াড়ের দায়িত্ব নিয়মিত পারফর্ম করা। অধিনায়কত্ব একটা আলাদা অংশ। ওটা যতটুকু পালন করার করব', বলেন রাজশাহীর অধিনায়ক।
রাজশাহীর হয়ে ওপেনিংয়ে আসছেন অধিনায়ক শান্ত সঙ্গে রনি তালুকদার। এরপর একে একে মোহাম্মদ আশরাফুল, মেহেদি হাসান, নুরুল হাসান সোহান, ফজলে মাহমুদ, জাকের আলি অনিক ও ফরহাদ রেজা।
বোলিংয়ে আছেন এবাদত হোসেন, সানজামুল ইসলাম ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ।
আরও পড়ুন:প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকত। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সৈকতের এ কীর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইসিসি।
বৃহস্পতিবার আইসিসি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইসিসির বার্ষিক পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৈকতকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেল থেকে এলিট প্যানেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আইসিসি আম্পায়ারদের ‘ইমার্জিং’ প্যানেলের ওপরের দিকে ছিলেন সৈকত। সেখান থেকে যে কয়জন আম্পায়ার এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন, তাদের চেয়ে এগিয়েই ছিলেন তিনি।
কিছুদিন আগে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস অবসরে গেছেন। তার অবসরের পর জায়গাটি ফাঁকা পড়ে ছিল। সেই জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন সৈকত।
এক্ষেত্রে আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার-ক্রিকেট ওয়াসিম খান (চেয়ারম্যান), সাবেক খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, নিউজিল্যান্ডের সাবেক আম্পায়ার টনি হিল এবং কনসালট্যান্ট অফিসিয়েটিং এক্সপার্ট মাইক রাইলি বড় ভূমিকা রেখেছেন।
কারণ তাদের পরামর্শেই আইসিসি এলিট প্যানেলের দরজা খুলে গেছে সৈকতের। তারা আইসিসির একটি নির্বাচক প্যানেলে আছেন। তাদের ওপরই দায়িত্ব ছিল এলিট প্যানেলের জন্য একজন আম্পায়ারকে নির্বাচিত করার।
এলিট প্যানেলে যোগ দিতে পেরে দারুণ আনন্দিত সৈকত।
আইসিসিকে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এই প্যানেলে আসতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে তার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করব। কয়েক বছর ধরে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার মাধ্যমে সামনে দিনের চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত।’
২০১০ সালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয় সৈকতের। এরই মধ্যে পুরুষদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে ইতোমধ্যে একশর বেশি ম্যাচ পরিচালনা করে ফেলেছেন তিনি।
আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালনের মতো অভিজ্ঞতাও তার ঝুলিতে রয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের এই আম্পায়ার।
শুধু তা-ই নয়, গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
এক নজরে আইসিসির এলিট প্যানেল অফ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি
আম্পায়ার: কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা), ক্রিস্টোফার গ্যাফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটলবরো (ইংল্যান্ড), নিতিন মেনন (ভারত), আহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া), শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ (বাংলাদেশ), রডনি টাকার (অস্ট্রেলিয়া) এবং জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
ম্যাচ রেফারি: ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া), জেফ ক্রো (নিউজিল্যান্ড), রঞ্জন মাদুগালে (শ্রীলঙ্কা), অ্যান্ড্রু পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে), রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)।
আরও পড়ুন:অস্ট্রেলিয়ার কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ নারী দল।
বুধবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে ১১৮ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছিল টাইগ্রেসরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষীক ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল নিগার সুলতানার দল। এই প্রথমবার ঘরের মাঠে প্রথম কোন ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা। তবে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে তিন ম্যাচের সিরিজে এই নিয়ে তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। এর আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের কাছে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিলো টাইগ্রেসরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে সিরিজে প্রথমবার টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে খালি হাতে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সুমাইয়া আকতার। পরের ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার ৫ রান করা ফারজানা হক।
৮ রানে ২ ওপেনারকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুরশিদা খাতুন ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। কিন্তু ২৮ বলে ১৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দুজন। ২১ বলে ১টি চারে ৮ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন মুরশিদা।
১১তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নামা রিতু মনি ১ ও ফাহিমা খাতুন খালি হাতে বিদায় নেন। এতে ৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন নিগার ও স্বর্ণা আকতার। সাবধানে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তারা।
কিন্তু দলীয় ৫৩ রানে বিচ্ছিন্ন নিগার ও স্বর্ণা। ২টি চারে ৩৯ বলে ১৬ রান করেন নিগার। জুটিতে ৩৯ বলে ২১ রান যোগ করেন নিগার ও স্বর্ণা।
এরপর ১০ রানের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যাবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৬৩ রানে নবম উইকেট পতন হয় তাদের। কিন্তু দশম উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের উপর চড়াও হন শেষ দুই ব্যাটার সুলতানা খাতুন ও মারুফা আকতার। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১শর রানের এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সুলতানা আউট হলে ৮৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শেষ উইকেটে ২২ বল খেলে ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রানের জুটি গড়েন সুলতানা-মারুফা। ২টি চারে ১০ রানে সুলতানা আউট হলেও ১টি বাউন্ডারিতে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন মারুফা। অস্ট্রেলিয়ার কিম গ্যারেথ ১১ রানে ও অ্যাশলে গার্ডনার ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
৯০ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া নারী দল। নবম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট শিকার করেন অফ-স্পিনার সুলতানা। ফোবি লিচফিল্ডকে ১২ রানে আউট করেন সুলতানা। ১৩তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিকে ৩৩ রানে আউট করেন লেগ-স্পিনার রাবেয়া খান। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন এলিসা পেরি ও বেথ মুনি। পেরি ২৭ ও মুনি ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের সুলতানা ও রাবেয়া ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন গ্যারেথ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেন গার্ডনার।
সিরিজটি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিলো। এখন অবধি ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া। সমানসংখ্যাক ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে আছে বাংলাদেশ। আগামী ৩১ মার্চ থেকে মিরপুরের ভেন্যুতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দলের সঙ্গে থাকছেন না হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ব্যক্তিগত কারণে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন তিনি।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দিয়ে বিসিবি জানায়, দ্বিতীয় টেস্টে হাথুরুসিংহের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কোচ নিক পোথাস।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। এরপর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা।
আগামী ৩০শে মার্চ চট্টগ্রামে মাঠে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। এই টেস্টের জন্য দলে ডাক পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও হাসান মাহমুদ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই টেস্টে দলে ফিরছেন সাকিব আল হাসান, ফেরানো হয়েছে পেসার হাসান মাহমুদকেও।
সাকিব ফেরায় কপাল পুড়েছে তৌহিদ হৃদয়ের। ফলে লাল বলের ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষাটা তার আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আগামী ৩০ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। প্রথম ম্যাচে শোচনীয় হারের পর সাকিব দলে ফেরায় তাই দলের আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও বাড়বে।
গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। এরপর বিশ্রাম ও চোটের কারণে প্রায় এক বছর সাদা পোশাকে মাঠে নামা হয়নি তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজেও বিশ্রামে ছিলেন এ অলরাউন্ডার।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে সাকিবের পরিসংখ্যানটা দারুণ। এই ফরম্যাটে ৯ টেস্ট ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৮.১৮ গড়ে ৬১১ রান করেছেন সাকিব। এছাড়া বল হাতে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট।
এ ছাড়াও দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে বাদ পড়েছেন পেসার মুশফিক হাসান। প্রথম ম্যাচে না খেললেও চট্টগ্রাম টেস্টের আগে চোটে পড়েছেন তিনি। গোড়ালির চোটের কারণে তিনি ছিটকে যাওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন হাসান মাহমুদ।
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, লিটন দাস, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
আরও পড়ুন:সিলেটে শুক্রবার শুরু হওয়া টেস্টের এক দিন বাকি থাকতেই শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ৫১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিন সোমবার পার না হতেই ৩২৮ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা।
সফরকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ শিবিরে ধস নামান কাসুন রাজিথা, যিনি ১৪ ওভার বল করে ৫৬ রান খরচায় তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। এ ছাড়া বিশ্ব ফার্নান্দো তিনটি ও লাহিরু কুমারা পান দুটি করে উইকেট।
টস হেরে প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা করেছিল ২৮০ রান। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ধনঞ্জয় ডি সিলভার ১০২ রানের পর দ্বিতীয়টিতে তার ব্যাট থেকে আসে ১০৮ রান। দলের টেস্ট অধিনায়কের জোড়া এ শতকের সুবাদে দুই ইনিংসেই রানের ভিত মজবুত করার সুযোগ পায় সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ করে পাঁচ শর বেশি রানের লিড নিয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে শ্রীলঙ্কা।
দলটির দেয়া বিশাল এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ইনিংসের চেয়ে কম ১৮২ রান করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
প্রথম টেস্টে পরপর দুই সেঞ্চুরি করে দলের জয়ে মূল ভূমিকা রাখা ধনঞ্জয় ডি সিলভা হয়েছেন প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ।
আরও পড়ুন:সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বিশাল সংগ্রহ করতে না পারলেও এরই মধ্যে আড়াই শর বেশি রানের লিড নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
ম্যাচের তৃতীয় দিন রোববার এ প্রতিবেদন লেখার সময় ৫১ ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান করে সফরকারী দলটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৮০ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের চাকা। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
দুই শর আগেই স্বাগতিকদের সব উইকেট তুলে নেয়া শ্রীলঙ্কা লিড পায় ৯২ রানের, তবে প্রায় ১০০ রানে এগিয়ে থাকা দলটি দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিংয়ে দাপট দেখাতে পারেনি।
দলীয় ১৯ রানে নিশান মাদুশকা আউট হওয়ার পর ৩২ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুশল মেন্ডিস। এ ছাড়া ৬০ রানের মাথায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও ৬৪ রানের সময় প্যাভিলিয়নে ফেরেন দিনেশ চান্ডিমাল।
এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন দিমুথ করুণারত্নে। তার ৫২ রানের সুবাদে ধীরে ধীরে রান বাড়তে থাকে শ্রীলঙ্কার। এর সঙ্গে অপরাজিত দুই ব্যাটার ধনঞ্জয় ডি সিলভার ৫৪ ও কামিন্দু মেন্ডিসের ২৫ রান লিড বাড়াচ্ছে সফরকারীদের।
এর আগে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা।
আরও পড়ুন:সিলেট টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার করা ২৮০ রানের জবাবে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান করেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের প্রথম দিন শুক্রবার ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে শনিবার দ্বিতীয় দিন শুরু করে স্বাগতিকরা। মাঠে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটাররা।
চতুর্থ উইকেটে দলীয় ৫৩ রানে মাহমুদুল হাসান জয়ের পতনের পর লিড নেয়ার মতো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলামের ৪৭ ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি কেউই। এর ফলে ৯২ রানে পিছিয়ে থেকেই প্রথম ইনিংসে থামতে হয় টাইগারদের।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বিশ্ব ফার্নান্দো চারটি এবং কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমারা তিনটি করে উইকেট পান।
মন্তব্য