সব ঠিক থাকলে হয়তো এ সময় মাঠে থাকত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় আসর। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সেই উপায় না থাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্টে খেলছেন দেশের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার। সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি অবশ্যই মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। যিনি ছিটকে গেছেন হ্যামস্ট্রিং এর চোটে।
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
তাকে দলে ভিড়িয়েছে জেমকন খুলনা। বাংলাদেশ জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও খেলছেন একই দলে।
পাঁচ দলের মধ্যে শুধু মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী নেয়নি কোন এ-গ্রেডের খেলোয়াড়। ড্রাফটে তারা প্রথম নেয় অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে। সুযোগ পেয়েও মাহমুদুল্লাহকে না নেয়ার পেছনে তাদের যুক্তি ছিল সে সময়ে করোনাক্রান্ত ছিলেন তিনি।
তাদের জন্য দুর্ভাগ্য, সাইফুদ্দিন কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য ছিটকে গেছেন টুর্নামেন্টের আগেই।
মঙ্গলবার পর্দা উঠছে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের। প্রথম দিনে হবে দুটি ম্যাচ। প্রথমটিতে লড়বে ঢাকা ও রাজশাহী, দ্বিতীয়টিতে খুলনা ও বরিশাল।
কাগজে-কলমে ফেভারিট খুলনা
একই সঙ্গে তারা পেয়েছে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। অন্য যেকোনো দলে যেখানে সর্বোচ্চ একজন এ-গ্রেডের খেলোয়াড়, মিজানুর রহমান বাবুল তার কোচিংয়ে পাচ্ছেন দুজনকে।
সাকিব-মাহমুদুল্লাহর পাশাপাশি খুলনায় আছেন ইমরুল কায়েস, আনামুল হক বিজয়, আল-আমিন হোসেন, নাজমুল ইসলাম অপুরা।
কাগজে-কলমে সেরা দল হলেও খুলনা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ মনো্যোগ রাখছেন মাঠের পারফরমেন্সেই। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফেভারিট তকমার প্রতিফলন দেখাতে হবে মাঠে।
‘কাগজে-কলমে হয়তো দলকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। তবে সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি যে মাঠের পারফরম্যান্সটাই মুখ্য। আপনি যত বড়, যত ভালো ক্রিকেটারই হন; দিনশেষে মাঠে এটা প্রমাণ করতে হবে। ঐ রেপুটেশন যারা বহন করি, তাদের সবসময়ই প্রমাণের তাগিদ থাকে। সেটা প্রমাণের লক্ষ্যেই আমরা নামব’, বলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
খুলনার হয়ে ইনিংস ওপেন করতে পারেন ইমরুল কায়েস ও এনামুল বিজয়। তিন নম্বরে সাকিবের পর আছেন জহিরুল ইসলাম, শামীম হোসেন পাটওয়ারি ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। লোয়ার অর্ডারে আরিফুল হক কিংবা শুভাগত হোমের সঙ্গে থাকছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তিন পেসার মন্ত্রে খুলনার হয়ে মাঠে দেখা যেতে পারে আল-আমিন, হাসান মাহমুদ ও শফিউল ইসলামকে।
ঢাকায় তারুণ্যের জয়গান
অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে দলে টানলেও পারলেও বেক্সিমকো ঢাকার রয়েছে অভিজ্ঞতার ঘাটতি। তানজিদ হাসান তামিম, আকবর আলি, নাইম শেখ, নাঈম হাসান, শাহাদাত হোসেন দীপু, পিনাক ঘোষদের মত তরুণদের নিয়ে দল সাজিয়েছে তারা।
অনভিজ্ঞতাকে অনেকেই সমস্যা মনে করলেও তেমনটা মনে হচ্ছে না অধিনায়ক মুশফিকের। তার মতে, বয়সে ছোট হলেও, তার দলের তরুণ খেলোয়াড়রা অত্যন্ত পরিণত।
‘অবশ্যই টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগে। একই সঙ্গে দুইটা বা তিনটা প্লেয়ার ভালো খেললে ওই দিন আপনি জিতে যেতে পারবেন। অনভিজ্ঞ বা তরুণ হতে পারে কিন্তু তারা অনেক পরিণত। শেষ ১৫-১৬ বছর খেলেছি একটা বিশ্বকাপও জিততে পারিনি। দলে তেমন তিন-চারজন প্লেয়ার আছে ওই (অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী) টিমের। বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে তো বড় চাপের কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি ওই রকম মেন্টালিটির বা ম্যাচিউরড প্লেয়ার আছে’, বলেন মুশফিক।
ঢাকার হয়ে টপ অর্ডারে আছেন নাইম শেখ ও তানজিদ তামিম। মাঝে খেলছেন শাহাদাত, মুশফিক, ইয়াসির আলি চৌধুরী ও সাব্বির রহমান। লোয়ার অর্ডারে মুক্তার আলি, নাঈম হাসানের সঙ্গে থাকবার সম্ভাবনা নাসুম আহমেদ, রুবেল হোসেন ও আবু হায়দার রনি।
এক্স-ফ্যাক্টর চট্টগ্রাম
ঢাকার মতো অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকলেও প্রতিভার বিচারে নিশ্চিতভাবে টুর্নামেন্টের সেরা দলগুলোর একটি গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।
তারকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দলে আছেন লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মমিনুল হকরা। সাথে আছেন তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন, শরিফুল ইসলাম। কোচ অভিজ্ঞ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মিঠুন। বিপিএলে অধিনায়কত্ব করা মোসাদ্দেক হোসেন বা বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হক কেন দায়িত্ব পাননি, সে প্রসঙ্গ জন্ম দিয়েছে বিতর্কের।
তবে এটি নিশ্চিত, মুস্তাফিজ-সৌম্য-লিটনরা জ্বলে উঠলে চট্টগ্রাম টুর্নামেন্টে যেতে পারবে বহুদূর। প্রেসিডেন্টস কাপে ভালো করতে না পারলেও তাই এই টুর্নামেন্টে ভালো করার লক্ষ্য সৌম্যের।
'যে কোনো টুর্নামেন্টেই তো একটা লক্ষ্য থাকে। আমার নিজেরও একটা লক্ষ্য আছে। তো চেষ্টা করব যে ওই লক্ষ্য পূর্ণ করার। দলও অনেক ভালো হয়েছে', বলেন সৌম্য।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই করোনা থাবা বসিয়েছে চট্টগ্রাম ক্যাম্পে। করোনাক্রান্ত হয়ে ছিটকে গেছেন তরুণ তুর্কি মাহমুদুল হাসান জয়।
চট্টগ্রামের হয়ে ইনিংসের শুরুতে আসতে পারেন লিটন-সৌম্যের ওপর। এরপর মমিনুল, মিথুন, মোসাদ্দেক, শামসুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। বোলিংয়ে আছেন তাইজুল, মুস্তাফিজ, সঞ্জিত সাহা ও শরিফুল।
বহু বছর পর বরিশাল
প্রায় বছর পাঁচেক ধরে দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নেই বরিশাল। সেই ধারা ভাঙলো বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। ফরচুন বরিশাল নাম নিয়ে ফিরল তারা।
ড্রাফটে প্রথম ডাকেই তারা দলে নেয় জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। এরপর একে একে নিয়ে টানে আফিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, ইরফান শুক্কুরদের।
ড্রাফটে খেলোয়াড় নির্বাচনে ভুল থাকলেও তামিমের বিশ্বাস দলের সব খেলোয়াড়ই ম্যাচ জেতানোর মত।
'দলে হয়তো নামি-দামি ওরকম খেলোয়াড় নেই। সবাই যদি কাগজে কলমে শক্তিশালী হয়ে ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট জিততো তাহলে অন্য কথা ছিল। যে প্লেয়ারগুলো আছে আমার, তারা সবাই যোগ্য। তারা কোনো না কোনো জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করেছে। এটাই আশা করবো যে মঙ্গলবারের ম্যাচ ভালভাবে শুরু করব। কারণ, এক থেকে এগারো সবাই ম্যাচ জেতাতে সক্ষম', বলেন তামিম।
বরিশালের হয়ে তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন সাইফ হাসান বা পারভেজ ইমন। মিডল অর্ডারে আসছেন আফিফ হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, ইরফান শুক্কুর, মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। বোলিং আক্রমণে সুমন খান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির।
শুরুর আগে বেসামাল রাজশাহী
এ-গ্রেডের কোন খেলোয়াড়কে ছাড়াই দল সাজিয়েছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। চোটের কারণে তারা পাচ্ছে না সাইফুদ্দিনকে।
পায়ের চোটে ছিটকে যাওয়া সাইফুদ্দিন নিশ্চিতভাবে খেলছেন না রাজশাহীর প্রথম তিন ম্যাচ। চোটের মেয়াদ বাড়লে মিস করতে পারেন পুরো টুর্নামেন্ট।
সাইফুদ্দিনকে হারালেও দলের কম্বিনেশন নিয়ে খুশি অধিনায়ক শান্ত।
'তরুণ ক্রিকেটারও অনেক আছে (আমাদের দলে)। চারদিকে চিন্তা করলে কম্বিনেশন ভালো। খেলোয়াড়ের দায়িত্ব নিয়মিত পারফর্ম করা। অধিনায়কত্ব একটা আলাদা অংশ। ওটা যতটুকু পালন করার করব', বলেন রাজশাহীর অধিনায়ক।
রাজশাহীর হয়ে ওপেনিংয়ে আসছেন অধিনায়ক শান্ত সঙ্গে রনি তালুকদার। এরপর একে একে মোহাম্মদ আশরাফুল, মেহেদি হাসান, নুরুল হাসান সোহান, ফজলে মাহমুদ, জাকের আলি অনিক ও ফরহাদ রেজা।
বোলিংয়ে আছেন এবাদত হোসেন, সানজামুল ইসলাম ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ।
আরও পড়ুন:শ্রীলঙ্কার মাটিতে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট থেকে রান আসছেই না। গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও শূন্য রানে ফিরেছেন তিনি। আসিথা ফার্নান্ডোর বাউন্সার বলটিকে ব্যাটের ভেতরের ধার লাগিয়ে স্টাম্পে পাঠান এনামুল, যা যেন তার চলমান দুর্দশারই প্রতীক।
মজার বিষয় হলো, এই আউট হওয়ার আগে দুইবার জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ফার্নান্ডোরই একটি বল স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলেও উইকেটকিপার তা হাতছাড়া করেন। পরের বলেও একই অঞ্চলে ক্যাচের সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু বলটি নিচু হওয়ায় ফিল্ডাররা ধরতে ব্যর্থ হন।
এনামুলের এই সফরটা যেন ভাগ্যের সাথে লুকোচুরির খেলা। গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানের পর এবার আবার শূন্য। ক্রিজে দাঁড়ালেই কীভাবে যেন রান না পাওয়ার অভিশাপ তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ব্যাট হাতে আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট, প্রতিটি বলই যেন তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এমন সময়ে প্রশ্ন উঠছে, দলের ওপেনিং জুটিতে এনামুলের স্থান কতটা যৌক্তিক? নাকি দ্রুত কোনো বিকল্প খুঁজে বের করার সময় এসেছে? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ইনিংসটিই হয়তো তার জন্য শেষ সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বছর তিনেক হলো জাতীয় দলের বাইরে অলরাউন্ডার রুমানা আক্তার। মাঝখানে একবার ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন ‘আর নয় ক্রিকেট’। সেই ফেসবুক পোস্টেই এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে গুরুতর অভিযোগ তুললেন রুমানা আহমেদ। রুমানার দাবি, তার সঙ্গে অন্যায়-অবিচার হয়েছে। এবং তিনি সেটার বিচার চাইলেন ক্রিকেট বোর্ডের কাছে।
গতকাল নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে রুমানা পোস্ট দিয়েছেন বিসিবির কাছে খোলা চিঠির মতো করে। তিনি লিখেছেন, ‘বিসিবির সম্মানিত অভিভাবকদের বলছি। আমি খেলি কিংবা না খেলি, এমন অনৈতিক-নৈরাজ্যমূলক ঘটনা চলতে পারে না। দয়া করে আমাকে চূড়ান্ত সমাধান দিন। কোনো কারণ ছাড়াই তিন বছর তো কোনো কৌতুকের কিছু না। আমি কখনোই বাজে ক্রিকেট খেলিনি। অনৈতিক কাজও করিনি। জ্যেষ্ঠতা কখনোই অভিশাপ হতে পারে না। যারা আমার উজ্জ্বল ক্রিকেট ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে, তার বিচার চাই।’
২০২৩ সালের আগস্টে সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎই রুমানা পোস্ট দিয়েছিলেন, ‘আর ক্রিকেট নয়।’ সেই পোস্টের আগে বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কা-ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছিল, কোনোটিতেই তিনি ছিলেন না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দল ঘোষণার পর বিসিবি জানিয়েছিল, তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।
বিসিবির এই দাবির বিপক্ষে পাল্টা দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ দলের এই লেগস্পিনিং অলরাউন্ডার। সে সময় রুমানা বলেছিলেন- বিশ্রাম নয়, তাকে বাদই দেওয়া হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্টের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এমন মন্তব্য করায় রুমানাকে তলবও করেছিল বোর্ড।
দুই বছর আগে ‘নো মোর ক্রিকেট’ পোস্ট নিয়ে বিসিবি তখন বিব্রত হয়েছিল। নারী বিভাগের তৎকালীন প্রধান শফিউল আলম নাদেল সে সময় বলেছিলেন, ‘আমরা সব সময় আমাদের ক্রিকেটারদের প্রতি সদয় বা সৎ। ওকে এটা শুধু মনে করিয়ে দিলাম, সেতো চাইলে বোর্ড- আমাদের বিভাগ থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বোর্ড সভাপতি; সবার সঙ্গেই তো কথা বলার সুযোগ আছে। এটা সে না করলেও পারত।’
৩৩ বছর বয়সী রুমানা ২০১১ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন ৫০ ও ৮৭ ম্যাচ। দুই সংস্করণেই ৮০০-এর বেশি রান করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার উইকেট ১২৫।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘তবে তার স্বাভাবিক কাজকর্মে—অর্থাৎ খেলাধুলায়—ফিরতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।’
সাভারের কেপিজি হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে তামিমকে দেখে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘তামিম ইকবালকে নরমাল কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য অন্তত তিন মাস সময় দিতে হবে। মানে খেলাধুলায়। এ ছাড়া তিনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও হাঁটাচলা করবেন সপ্তাহখানেক। তাকে বিশ্রামেই থাকতে হবে। যদিও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সব রোগ সবসময় ধরা পড়ে না।
‘প্রথমিক ইসিজিতে কোনো চেঞ্জ আসেনি। আজ সকালে ইকো (ইকোকার্ডিওগ্রাম) করা হয়েছে। সবকিছুই ভালো। কিন্তু তারপরও যেকোনো সময় যেকোনো জিনিস ঘটে যেতে পারে। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তার পরিবারের সাথে আলাপ করেছি। এখন তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্ত।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সম্পদ তামিম ইকবালের শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করেন গতকাল সাড়ে ১০টায়। তিনি এখানে আসার পর ডাক্তাররা তাকে কার্ডিয়াক প্রবলেম হিসেবে সন্দেহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে কিছু চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তাকে এখন মুভ (নিয়ে যাওয়া) করানো ঠিক হবে না বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
‘তিনি একজন জাতীয় সেলিব্রেটি। নিজের অবস্থান বিবেচনা করে তিনি তাড়াতাড়ি ঢাকায় শিফট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও হয়েছিল। আমাদের এখানকার দুজন ও ওখানকার দুজন মিলে চারজন চিকিৎসক মিলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয়, তার নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায়নি। তারপর ডাক্তারররা সিপিআর দিয়েছেন। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে চালু করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’
অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল এখন সুস্থ। তার সার্বিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু কখনও কখনও যে প্রাইমারি পিসিআই হয়েছে, এটা একটা ফরেন বডি, এটা রিঅ্যাকশন হতে পারে, হার্ট নানাভাবে এটার ওপর অ্যাকশন ও রিঅ্যাকশন হতে পারে।
‘রে রিংটা লাগানো হয়েছে, সেটা সামায়িকভাবে, কোনোভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি রয়েছে। যদিও সেই পরিসংখ্যান খুবই কম।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের সদস্যদের সেটা বলেছি। চিকিৎসক যারা ছিলেন, ডা. মারুফ, তাদের পরিশ্রমে, আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাকে আমরা একটি নবজীবন দিতে পেরেছি। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা যেখানে সম্ভব, সেখানে মানুষ যেতে চাইবে। কিন্তু তার যাওয়াটা কতটা নিরাপদ, সে বিষয়ে আমরা তার পরিবারের সঙ্গে আলাপ করেছি। তার এই মুহূর্তে শিফট করায় ঝুঁকি আছে।’
এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ঝুঁকিটা কম, এক শতাংশ। যদি ঘটে যায়, তখন ঝুঁকিটা শতভাগ। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তার এখানে থাকা উচিত। তার পর তিনি অন্য কোথাও যেতে পারবেন।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘তামিমের যেটা হয়েছিল, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সেটা কিন্তু হয়। আমরা দেখেছি, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাক হলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগী কখনও হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তার হার্ট অ্যারেস্ট হয়। এখানেও তাই হয়েছে। কিন্তু তার সাথে চিকিৎসকরা ছিলেন, সাথে সাথে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ শুরু হয়েছিল। হার্ট নিজে পাম্প করছে না, জোর করে কিছুটা পাম্প করিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘তার বন্ধ আর্টারি খুলে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অ্যাকিউট এপিসোডটা গেছে। ৩২ মিনিটের মতো তাকে কার্ডিয়াক প্লেসে দিতে হয়েছে। সেখান থেকে উঠে আসার সৌভাগ্য সবার হয় না। যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার কারণেই তামিমকে আমরা ফিরে পেয়েছি। কতটা ফেরত পেয়েছি, আজ সকালবেলায় ইকোকার্ডিয়াক করে হার্টের ফাংশন দেখা হচ্ছিল, দেখে মনে হয়, কোনো সমস্যা নেই, একেবারে তরতাজা। মনে রাখতে হবে, এটিই একটি ছদ্মবেশ। হার্ট আবার অ্যাবনরমাল হতে পারে। তবে শঙ্কা অবশ্যই কমে গেছে।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তবে ওটা হয়েছিল, কারণ একটা বড় আর্টারি বন্ধ ছিল। খাবার নেই, অক্সিজেন নেই, ওই টিস্যুটা ইরিটেটেড, সে জন্যই এটা হয়েছিল। এখন সেটা খুলে গেছে। স্লাইট শঙ্কা আছে। সে জন্য আমরা তাকে বলেছি, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটি ক্রিটিক্যাল টাইম, যাতে আর কোনো প্রবলেম না হয়।
‘কথাবার্তা একটু কম বলা উচিত, বিশ্রামে থাকা উচিত। এখানে থেকে স্থিতিশীল হয়ে আরও ভালো কোনো জায়গায় যদি যেতে চান, তাহলে যেতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের হৃৎপিণ্ডে রিং পরানো হয়েছে।
বর্তমানে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।
ইউএনবিকে সোমবার এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তাকে রিং পরানো হয়েছে নিশ্চিত। প্রথমে মাঠে খেলার সময় তার বুকে ব্যথা ওঠে। আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠাই। তাকে যখন হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছিল, তখন আবার বুকে ব্যথা শুরু হয়।
‘হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা ওঠে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকসহ তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসা বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী সাংবাদমাধ্যমকে জানান, তামিমের দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। এ মুহূর্তে তিনি সেখানেই ভর্তি।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এ ক্রিকেটারকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তামিম ইকবাল।
তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ইউএনবিকে সোমবার দুপুরে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে বিকেএসপির পাশে ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিকেএসপি থেকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক সবকিছুসহ তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। আমাদের কর্মকর্তা ও ক্রিকেটের প্রশিক্ষকরা ওখানে আছেন।
‘ঢাকা থেকেও টিম আসছে। আমাদের কর্মকর্তা-চিকিৎসক সেখানে আছে। বিকেএসপির মাঠে হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে। দেখি কী করা যায়।’
টাইগারদের সাবেক এ ক্যাপ্টেনের শরীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে মুনীরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত একটা এনজিওগ্রাম হয়েছে। এরপর তিনি স্থিতিশীল আছেন।’
মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘তামিম ইকবাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আমরা সবাই তার সুস্থতা কামনা করছি।’
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। তিনি সেখানে ভর্তি রয়েছেন।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
তামিমকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে রবিবার সফলভাবে আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ টুর্নামেন্টে সিইউবির বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগী দলগুলো অংশগ্রহণ করে। ব্যতিক্রমী ক্রিকেটিং দক্ষতা ও দলগত কাজ খেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলে।
গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনে ব্ল্যাকআউটস এবং সিইউবি অলস্টারদের মধ্যে দুর্দান্ত ম্যাচ হয়।
সিইউবি ব্ল্যাকআউটস দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা অর্জন করে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিন।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. গিয়াস উ আহসান।
সিইউবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত ইভেন্টটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য