বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্লেয়ার্স ড্রাফটে সবার আগে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে দলে ভিড়িয়েছিল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। ব্যাট-বল মিলিয়ে দলের জয়ে অবদান রাখবেন এই অলরাউন্ডার, তাদের আশা ছিল এমনটিই।
সেই স্বপ্ন হঠাৎই পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র দুই দিন আগে চোটে পড়েছেন সাইফুদ্দিন।
রোববার সকালে মিরপুর অ্যাকাডেমি মাঠে অনুশীলনের আগে গা গরমের ফুটবল খেলতে নামে রাজশাহী দল। সেখানেই গোড়ালিতে আঘাত পান এই ডানহাতি পেসার। পরবর্তীতে সাইফুদ্দিনকে দেখা যায় ক্রাচে করে মাঠ ছাড়তে।
রাজশাহীর ম্যানেজার হান্নান সরকার জানান যে সোমবার জানা যাবে সাইফুদ্দিনের ইনজুরির অবস্থা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অনুশীলন সেশনে গোঁড়ালিতে চোট পেয়েছে সাইফউদ্দিন। সে এখন দলের ফিজিও ও বিসিবি মেডিকেল দলের তত্ত্বাবধানে আছে। বিসিবির প্রটোকল অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসা চলছে। ফিজিও আগামীকাল (সোমবার) সাইফুদ্দিনের সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানাবেন।’
টুর্নামেন্ট শুরু হতে বাকি দুই দিন। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকার মুখোমুখি হবে মিনিস্টার রাজশাহী।
রাজধানীর মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্টেডিয়ামে বসেছে শোবিজ তারকাদের অংশগ্রহণে ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের’ আসর। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে হঠাৎ করেই শুক্রবার রাতে ঘটে যায় তুলকালাম কাণ্ড। খেলার মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে সেখানে।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তব্য দেন দুই দলের অধিনায়ক।
এসময় পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘আপনার সবাই জানেন, গতকাল একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এটার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি লজ্জিত। এই ঘটনার সঙ্গে আমার টিম থেকে যারা জড়িত তাদের জন্যও আমি লজ্জিত। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেহেতু এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়, তাই আমরা এটার ইন্টারনাল সমাধান করেছি।’
শুক্রবার রাতের এই ঘটনাকে মারামারি বলতে নারাজ নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন। তারা কেউ মারামারি করেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দীপন বলেন, ‘গতকালের এই ঘটনাটাকে আপনারা মারামারি বলবেন না। এখানে সেলিব্রিটিদের মারামারি হয়নি। কিছু মানুষ এখানে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। আপনার ভিডিও ফুটেজে দেখলে বুঝবেন, এখানে আমাদের দুই দলের কেউ এই ঝামেলায় জড়ায়নি। মাত্র ৫-৬ জনের হামলা এটা। পরে তাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের সরিয়ে নিতে দুই দলই সহযোগিতা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দলের খেলোয়াড়-অভিনেতা মনোজ প্রামাণিককে মাঠে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। পরে তিনি বাইরে তার গাড়িতে গিয়ে বসেছিলেন। পরে আমার কথা বলে তাকে মাঠে আসতে বলা হয়। কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে বের হননি।’
এই পরিচালক মনে করেন, ‘এই আয়োজনে কিছু ত্রুটি ছিল, নিরাপত্তার কিছুটা অভাব ছিল। বহিরাগতদের ঢোকা নিয়ে সমস্যা ছিল। এই বিষয়গুলোকে আমার সংস্কার করার কথা বলেছি। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, এমনটি আর কখনো ঘটবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন, যাদের সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে। তাছাড়া যে দলগুলো রয়েছে তাদের অনেকেই এখন খেলতে অসম্মতি জানাচ্ছেন। যে কারণে সাময়িকভাবে খেলা স্থগিত থাকবে। পুরো টুর্নামেন্ট আবার নতুন করে শুরু হবে কি না বা যেখানে খেলা শেষ হয়েছে সেখান থেকে শুরু হবে কি না-এসব বিষয়ে বিস্তারিত খুব শিগগিরই জানানো হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬টি দল অংশ নিয়েছে। শনিবার ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন তা অনিশ্চিত।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা দুর্দান্ত জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।
গৌহাটিতে এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে ২৬৩ রানে সবকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪২ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করেন লিটন-মিরাজরা।
শুরু থেকেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই তামিম ইকবাল, চোটের কারণে প্রস্তুতি ম্যাচে নামা হয়নি সাকিব আল হাসানেরও। দুজনের অনুপস্থিতিতে টাইগারদের সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় ওপেনিংয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া। লিটন দাস ও তরুণ তানজিদ হাসান তামিমই যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন। এরপর মেহেদী মিরাজ ও মুশফিকুর রহিমরা বাকি কাজ সেরেছেন, ফলে বাংলাদেশ ৭ উইকেটের দাপুটে এক জয় পেয়েছে।
সাকিববিহীন ম্যাচে অধিনায়কত্ব পাওয়া মিরাজ আজ ব্যাটে-বলে দারুণ অবদান রেখেছেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের (৩২/১) পর ব্যাট হাতেও পেয়েছেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। তার আগে প্রতিভা দেখিয়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তানজিদ তামিম ম্যাচটিতে সেঞ্চুরির আশাও জাগিয়েছিলেন। একই সঙ্গে রানে ফিরেছেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। তিনিও দীর্ঘ সময় পর ফিফটি পেয়েছেন, যা মূল ম্যাচের আগে অনেকটা ফুরফুরে রাখবে বাংলাদেশকে।
শুরু থেকেই দারুণ বোঝাপড়া দেখিয়েছেন লিটন-তামিম। দুজনের ওপেনিং কেমন করবে, সর্বত্র যখন এই আলোচনা চলছিল তখন তারা জবাবটা দিলেন মাঠে, যা বিশ্বকাপের মতো মূল আয়োজনেও নিশ্চয়ই তারা ধরে রাখতে চাইবেন। কাসুন রাজিথা ও মাথিশা পাথিরানাদের এশিয়া কাপে খেলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল টাইগার ব্যাটারদের। তাদের সঙ্গে লাহিরু কুমারা ও দিলশান মাদুশাঙ্কা যোগ দিলেও লিটন-তামিমদের ভড়কে দিতে পারেননি।
প্রথম পাওয়ার-প্লের ১০ ওভারে এই ওপেনিং জুটি ৫৪ রান এনে দেয়। লঙ্কান পেসারদের একের পর এক সীমানাছাড়া করে সেটি টিকে থাকে দলীয় ১৩১ রান পর্যন্ত। এরপর স্পিনার দুশান হেমন্থের বলে লেগে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন লিটন। ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক সময়ে নড়বড়ে দেখানো এই ক্রিকেটার এদিন প্রায় সবদিকে বাউন্ডারি খেলেছেন, ১০ চারের মারে করেছেন ৬১ রান। অন্যদিকে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে তার মতোই ক্লাসিক্যাল সব শট খেলেছেন তাকে আইডল মানা তানজিদ তামিম। জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো নিজের আত্মবিশ্বাস অর্জনের ম্যাচে তিনি থেমেছেন ৮৪ রানে। ৮৮ বলের ইনিংসটি তিনি ১০টি চার ও দুটি ছক্কায় সাজিয়েছেন।
লিটনের বিদায়ের পর এদিন ওয়ানডাউনে নেমে যান অধিনায়ক মিরাজ। অবশ্য তার প্রতিদানও দিয়েছেন তিনি। মুশফিকের সঙ্গে ৭৬ রানের জুটিতে তিনি দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। এদিন কেবল রান পাননি তরুণ ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়। প্রথম বলেই রাউন্ড দ্য উইকেটে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে তিনি আউট হয়েছেন।
এর আগে ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ বলে ৬৪ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাঁধের ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ৩৪ রান করা পেরেরা।
কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে দলের রান ১০০ পার করেন নিশাঙ্কা। মেন্ডিসকে ২২ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার নাসুম আহমেদ।
এরপর দলীয় ১৬৪ রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কার আরও ৩ উইকেট তুলে নেন স্পিনার মেহেদি হাসান। সাদিরা সামারাবিক্রমা ২, নিশাঙ্কা ৬৮ ও চারিথ আসালঙ্কা ১৮ রান করে মেহেদির শিকার হন।
দলীয় ১৭৭ রানে অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে ৩ রানে শিকার করে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলেন পেসার শরিফুল ইসলাম। এ অবস্থায় লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
৫৫ রানের ইনিংস খেলে এ ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার হন ধনাঞ্জয়া। শেষ পর্যন্ত ৫ বল বাকি থাকতে ২৬৩ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদি হাসান ৩৬ রানে ৩টি, তানজিম হাসান সাকিব-শরিফুল-নাসুম ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন।
চোটের কারণে আনফিট দেখিয়ে তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে দল ঘোষণার পর বুধবার সাকিবের নেতৃত্বে ভারতে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে শুক্রবার তার পায়ে চোটের খবর বাড়াল উদ্বেগ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, গুয়াহাটিতে বৃহস্পতিবার অনুশীলনের আগে গা ঘামানোর জন্য ফুটবল খেলছিলেনে বাংলাদেশ তারকারা। আর তাতেই বিপত্তি। সূত্রের খবর, শাকিব বাঁ পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন। বিশ্রীভাবে ফুলে গিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের গোড়ালি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে বাংলাদেশের দুটি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে শাকিব থাকছেন না। এমনকি আগামী ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেও শাকিবকে পাওয়া যাবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বাংলাদে দলের বরাতে এতে বলা হয়, শাকিবের চোট কতটা গুরুতর সেটা বুঝতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। ফলে কবে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠবেন, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর এবার ভিডিও বার্তায় নিয়ে মিডিয়ার সামনে এলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বার্তার শুরুতেই তিনি তামিম বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকা ও সে সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বৃহস্পতিবার দেয়া ভিডিও বার্তায় মাশরাফি বলেন, ‘তামিম ইকবাল বাংলাদেশের সবচেয়ে এক্সপেরিয়েন্সড (অভিজ্ঞ) ওপেনার। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যানও তার পক্ষে। সবমিলিয়ে তামিম দলে থাকলে ভালো হতো। এটা নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই।’
ভিডিও বার্তায় মাশরাফি বলেন, ‘তামিমের উত্তেজিত হয়ে বিশ্বকাপে না রাখার মন্তব্যটি সঠিক ছিল না। বোর্ডের কেউ না কেউ তার সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলার পর তামিম কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যায় এবং সে দলে থাকতে চায়নি। আমি মনে করি যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’
তাকে নিচে ব্যাটিং করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজি হয়নি। পরে এ নিয়ে মুখ খোলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এ ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, ‘সাকিব বলেছে, দলের স্বার্থে যে কাউকে যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং করতে হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে, সাকিব যেহেতু নেতৃত্ব নিয়েছেই। সাকিবই পারতো তামিমকে একটা মেসেজ দিতে বা এক মিনিট ফোনে কথা বলতে যে আমার এই পরিকল্পনা আছে, এটা আমি তোর সঙ্গে পরে আলোচনা করবো। পুরো জিনিসটা এখানে চাপা পড়ে যেত।’
গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা দেয়ার এক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সেই প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘যেটা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়ে গেল, সেই জিনিসটা নিয়ে আর তামিমকে বিরক্ত করার প্রয়োজন ছিল না যে কোথায় খেলবে, কয় নম্বরে খেলবে। বিশ্বকাপের দল ঘোষণা ওভাবেই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’
বিশ্বকাপে না রাখার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে মাশরাফি বলেন, ‘তামিম হয়তো উত্তেজিত হয়ে তাকে না রাখতে বলেছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে তাকে না রাখাটা আসলে কেমন হলো?’
তামিম কোথায় কত নম্বরে খেলবেন, সেই সিদ্ধান্ত শুধু ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার পরই নেয়ার ছিল বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘তামিমকে যেটা বলা হয়েছে যে প্রথম ম্যাচটা খেলো না বা খেললেও নিচে ব্যাটিং করো, এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডের কারও বলার বিষয় না। এটা বলবে কোচ, অধিনায়ক এবং দলের সঙ্গে যাওয়া নির্বাচক, মূলত টিম ম্যানেজমেন্ট।
‘টিম ম্যানেজমেন্ট বললে বাংলাদেশ থেকেও বলতে পারে, দল ঘোষণার পর ভারতে গিয়েও বলতে পারে। সেটা এত আগে করার কারণ কী আমি জানি না।’
তামিমকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর এমন প্রস্তাব দিলে সেটা যদি তিনি না মানতেন বা কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেন, তাহলে বোর্ড চাইলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারত।’
তামিমকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার রাতে। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তামিম জানান, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ভালোভাবে জড়িত এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি যেন বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ম্যাচে না খেলেন। আর খেললেও ওপেনিংয়ের বদলে নিচের দিকে ব্যাট করেন। এমন প্রস্তাবে তামিম উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, তাকে যেন বিশ্বকাপে না রাখা হয়।
আরও পড়ুন:আগামী সপ্তাহে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩। বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ভারতসহ অংশ নেয়া সবগুলো দেশ ও ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে এ নিয়ে উত্তেজনা, পরিকল্পনার শেষ নেই। বিশ্বকাপ উপলক্ষে চারদিকে সাজ সাজ রব। এরই মাঝে উড়ে এলো ভারতে হামলার হুমকি।
কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা এবং কথিত খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে ওই হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ভারতে নিষিদ্ধ শিখ সম্প্রদায়ের সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)।
আগামী ৫ অক্টোবর গুজরাটের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের এবারের আসরের পর্দা উঠবে। ওই ম্যাচের দিনই স্টেডিয়ামে হামলা চালানো হবে বলে এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন এসএফজে নেতা গুরপতবন্ত পান্নুন।
পান্নুনের ওই অডিও ক্লিপটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
ওই বার্তায় তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘৫ অক্টোবর থেকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ নয়, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ কাপ শুরু হতে চলেছে।’
হরদীপ হত্যাকাণ্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি দায়ী করে তিনি বলেছেন, ‘দিল্লি খালিস্তান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার জন্য আপনি দায়ী এবং শিখ ফর জাস্টিস এই হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আহমেদাবাদে ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আইসিসি বিশ্বকাপ আমাদের লক্ষ্য।
‘তোমাদের বুলেটের বদলে আমাদের ব্যালট চলবে। হিংসার জবাব আমরা ভোটের মাধ্যমে দেব।’
ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বী ও খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী জনগণকে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান কায়েম হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ বর্জনের আহ্বানও জানিয়েছেন পান্নুন।
কানাডাভিত্তিক একজন আইনজীবী মনে করা হয় পান্নুনকে। ২০২০ সালে ভারত সরকার তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়। এমনকি সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায়ও রাখা হয়েছিল।
শিখস ফর জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। এসএফজের কানাডা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন হত্যার শিকার হওয়া নিজ্জর। পান্নুনের দল ‘এসএফজে’র মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্বে ছিল নিহত নিজ্জরের সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’। এই দুই সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ।
ভারতে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি ‘খালিস্তান’ নামে শিখদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার।
ভারতে পান্নুনের বিরুদ্ধে ১৬টি ফৌজদারি মামলা চলছে। সম্প্রতি পাঞ্জাবে তার বেশ কিছু সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে এমনিতেই দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ভারত। বিশ্ব ক্রিকেটের মহা আয়োজন শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে এমন হুমকি বার্তা পেয়ে তাই নড়েচড়ে বসেছে দেশটির সরকার।
গুজরাটের যে স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে সেটির নামকরণ করা হয়েছে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে। আবার নরেন্দ্র মোদি নিজেও গুজরাটের বাসিন্দা। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আক্রোশ থেকে এমন হামলার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিকরা।
ইতোমধ্যে গুজরাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সতর্কতা আরও জোরদার করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে, এনআইএ ওই অডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করছে।
ওই বার্তায় এ-ও বলা হয়, ভারত নাকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অপমান করেছে। এসএফজে এর বদলা নেবে। ভারতকে ফল ভোগ করতে হবে।
‘আমরা পরামর্শ দিচ্ছি অটোয়াতে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দিন, নয়ত রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিন।’
এ কথায় পান্নুনের সংগঠনের সঙ্গে কানাডা সরকারের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।
গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাঙ্কুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর। দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী ৪৬ বছরের নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করেন।
শুরু থেকেই কানাডা সরকারের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘হাত’ রয়েছে। পরে পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে প্রথম ভারতের এজেন্টদের জড়িত থাকার ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ তোলেন ট্রু়ডো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কারও করে ট্রুডো সরকার।
তবে ভারত কানাডার এ অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘কানাডা যে অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, এ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, তাদের অভিযোগ পক্ষপাতপূর্ণ।’
এমনকি কানাডা খালিস্তানপন্থী আন্দোলনকারীদের সমর্থন করে তাদের আশ্রয় দেয় বলেও অভিযোগ ভারতের। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং দুষ্কৃতি নেটওয়ার্কে জড়িত ৪৩ জনের তালিকা কানাডা সরকারকে পাঠিয়েছে ভারত। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেই কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কানাডায় বহু ভারতীয় বাস করেন। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। তার মধ্যে অন্তত ১৪ লাখ ভারতীয় রয়েছেন। উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির সূত্রে ভারত থেকে তারা কানাডায় গেছেন।
কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়র সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ। কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই শিখ ধর্মাবলম্বী। সেখানে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ রয়েছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ।
ভারতে শিখদের অনুপাত কানাডার চেয়েও কম। ভারতের মোট জনসংখ্যার বিচারে শিখদের সংখ্যা মাত্র ১.৭ শতাংশ।
কানাডার সরকার গঠনে তাই শিখদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কানাডার রাজনীতিতেও তারা যথেষ্ট সক্রিয়। কানাডার হাউস অব কমন্সে ১৮ জন শিখ সাংসদ রয়েছেন, শতাংশের বিচারে যা ভারতের চেয়েও বেশি। তাই ট্রুডো বা কানাডার সব রাজনৈতিক দলই শিখদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
বেশি দিন আগের কথা নয়। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। ধারণা করা হচ্ছিল, তার নেতৃত্বেই বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ, তবে কী থেকে যেন কী হয়ে গেল! তামিমকে ছাড়াই ঘোষণা করা হলো ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দল।
গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিশ্বকাপ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট নন তামিম, যে কারণে তাকে বাদ দিয়েই স্কোয়াড ঘোষণা করেন নির্বাচকরা।
এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও গতকাল সকালে নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা স্ট্যাটাসে তামিম জানান, একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে বিগত কয়েক দিনের ঘটনার ব্যাপারে কিছু কথা বলবেন। আর তামিম কথাগুলো বলবেন বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে খেলতে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার পর।
গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দেয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল। এর ঘণ্টাখানেক পর নিজের ফেসবুক পেজে একটি ১২ মিনিটের ভিডিওবার্তা দেন তামিম, যেখানে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা, তার না থাকা ইত্যাদি বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে হালকা চোট অনুভব করেছিলেন তামিম ইকবাল। তখন সে বিষয়টি টিম ম্যানেজমেন্টকে জানান এ ওপেনার। তিনি শুধুই চোটের কথা মাথায় রাখতে বলেছিলেন। অথচ টিম ম্যানেজমেন্ট সেটাকে ইস্যু বানিয়েছে, এমন অভিযোগ তার।
ভিডিওবার্তার শুরুতে তামিম বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। গলায় ইনফেকশন হয়েছে, সো ক্লিয়ারলি বলতে পারছি না। স্ট্যাটাস দেখেই বুঝতে পেরেছেন, শেষ কয়েক দিনে যা যা লেখা হয়েছে, আর আসলে যা ঘটেছে কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট। যা যা ঘটেছে, পুরো জিনিসটাই স্টেপ বাই স্টেপ জানাই। কারণ এটি আমার যারা ফ্যান এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট লাভার তাদের জানা উচিত।’
এরপর তামিম আরও বলেন, ‘বেসিক্যালি সবাই জানেন, আমি অবসরে যাই, অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর যে দুই মাস আমি প্রচণ্ড পরিমাণ কষ্ট করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, যারা সম্পৃক্ত ছিল, ফিজিও থেকে শুরু করে, আমি নিশ্চিত সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা এক্সারসাইজ নেই, যেটি তারা চেয়েছেন কিন্তু আমি করি নাই।
‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর মানসিকভাবে আমি খুব খুশি ছিলাম। গত চার-পাঁচ ম্যাচের যত বিষয়, সব ভুলে গিয়েছিলাম। ম্যাচ শেষে আমার ইনজুরির অবস্থা ফিজিওকে জানাই। তখন ড্রেসিংরুমে নির্বাচকরা আসেন। আমি তাদের বলেছিলাম, আমার অবস্থা সামনে এমনই থাকবে। আমাকে দলে রাখলে বিষয়টি মাথায় রাখবেন। হোটেলে যাওয়ার পর আমাকে ফিজিও পর্যবেক্ষণ করেন। ফিজিওর রিপোর্টে ছিল প্রথম ম্যাচের পরে আমার ব্যথার অবস্থা কী, দ্বিতীয় ম্যাচের পর কী হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২৬ তারিখের (নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচ) ম্যাচের দিন অবস্থা কেমন হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, খেলার জন্য আমি ফিট, কোনো সমস্যা নেই, তবে আমাকে বলা হয়েছিল আমি রেস্ট নিতেও পারি।’
কিউইদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে রেস্ট নেয়ার বিষয়ে দেশসেরা ওপেনার বলেন, ‘শেষ ম্যাচটায় রেস্ট নিলে সে ক্ষেত্রে আমার প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য রিহ্যাব হয়ে যেত এবং বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচও আমি খেলতে পারব, এমনটা ছিল রিপোর্টে। আমি কোথাও বলিনি যে, পাঁচটা ম্যাচ খেলব বা পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারব। এটা মিথ্যা। জানি না কীভাবে এটি মিডিয়াতে ছড়ানো হয়েছে। শুধু তিন নির্বাচককে জানিয়েছিলাম আমি পুরোপুরি ফিট না, দল ঘোষণার সময় যেন তারা এটি মাথায় রাখেন।
‘আমি নিশ্চিত কালকে নান্নু ভাইও কথাটা ক্লিয়ার করেছেন। আমি জানি না এ কথাটা মিডিয়াকে খাওয়ানো হলো কীভাবে বা কে করেছে এটি, কিন্তু এ জিনিস একদমই মিথ্যা। যে জিনিস আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম যে, আমার শরীর এ রকমই থাকবে। এখন যে রকম অবস্থায় আছে, আমার ব্যথা থাকবে। আপনারা যখন দলটা নির্বাচন করবেন, তখন এটা মাথায় রাখবেন।’
বিসিবির পক্ষ থেকে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাবও দেয়া হয় জানিয়ে তামিম বলেন, “বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করে আমাকে বললেন, ‘তুমি বিশ্বকাপে যাবা, কিন্তু তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। একটা কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলিও না।’ আমি বলেছি, ‘এখনও ১২/১৩ দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে তো আমি ভালো অবস্থায় থাকব। তো কী কারণে খেলব না?’ তখন বলল, ‘আচ্ছা তুমি যদি খেলো তাহলে আমরা পরিকল্পনা করছি, তুমি নিচের দিকে খেলবা।’”
তিনি বলেন, “তাদের প্রস্তাব শুনে আমি তো অবাক। জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন ধরনের কথা। এরপর বলা হলো মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করানোর কথা। অথচ আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে খেলে আসছি। আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে, ইচ্ছে করে। তখন আমি বললাম, ‘দেখেন, আপনারা একটা কাজ করেন, যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না।’ তারপরও ফোনে উনার সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। সেগুলো এই প্ল্যাটফর্মে না বলাই ভালো।
“এটা আমার আর উনার মধ্যেই থাক। তারপরও বলেছি, যদি এগুলো হয় আমাকে রাখিয়েন না। আমি এই নোংরামোর মধ্যে থাকতে পারব না। সো ওভারঅল আমি ব্যক্তিগতভাবে যে জিনিসটা ফিল করেছি, মিডিয়াকে আই ডোন্ট নো আমি ঠিক বলছি কি বলছি না। কারণ আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে বড় একটা জিনিসকে ঢাকার জন্য আরেকটা জিনিস ঠিক করা। সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে তাকে ক্যামনে সিলেক্ট করব। অ্যাজ আই সেইড ইট ওয়াজ ফলস। এমন কোনো কথাই হয়নি। আমি নিশ্চিত সেদিন টিম সিলেক্টর ছিল, ফিজিও ছিল, ট্রেনার ছিল- সবাই ছিল। কী বলেছি সেটা আপনাদের সঙ্গেও ক্লিয়ার করেছি। বাট ওভারঅল আমার কাছে মনে হয়, ইফ ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট মি টু মেক মি মেন্টালি ফ্রি অ্যান্ড হ্যাপি। বিকজ আই অ্যাম কামিং আউট অব অ্যা ভেরি ব্যাড থ্রি-ফোর মান্থস। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিন-চার মাস।”
সবশেষে তামিম বলেন, ‘আমি উইশ করব যে ১৫ জন বিশ্বকাপে গিয়েছে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাকসেস নিয়ে আসবে। আরও অনেক কিছুই ঘটেছে এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, দুটো কাহিনি ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু একজনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনি হয়, তাহলে সেটা ইচ্ছাকৃত হয়। আর একটা কথা, আমাকে সবাই মনে রাখিয়েন। ভুলে যাইয়েন না।’
আরও পড়ুন:ওপেনার তামিম ইকবাল বিশ্বকাপে পাঁচটির বেশি ম্যাচ খেলবেন না, এমন তথ্য যারা ছড়িয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার খালেদ মাসুদ পাইলট।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া তামিম ইকবালের বুধবার বিকেলের ভিডিওবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ফেসবুক লাইভে আসনে জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটার।
ওই ভিডিওবার্তায় তামিম বলেন, ‘আমি কোনো সময় কোনো মুহূর্তে বলি নাই যে, আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। এ কথা কোনো সময় হয় নাই। এটা মিথ্যা ও ভুল কথা। কে করছে এটা আমি জানি না। এটা মিথ্যা কথা।’
তামিম বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে দেখেন, আমার বডিটা এ রকমই থাকবে। এটা মাথায় রেখে সিলেক্ট করবেন।’
এমন বাস্তবতায় পাইলট বলেন, ‘তামিমের যেটা আমি দেখলাম একটা, সে বেসিক্যালি একটা ভিডিওবার্তা দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তো আমার মনে হয় যে, সে কিন্তু ক্লিয়ার করে দিয়েছে। সে কিন্তু বলে নাই যে, আমি পাঁচটা ম্যাচ খেলব না। তার মানে বাংলাদেশ টিম থেকে বোর্ড যদি চায়, ইচ্ছা করলে তদন্ত করে বের করে ফেলতে পারবে কারা এই নিউজটা বের করেছে। বিকজ ক্রিকেট বোর্ডের কিছু মানুষ আছে যারা সোশ্যাল মিডিয়াকে পোষে। তারা এই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে ইনফরমেশন দিয়েছে যে, বেসিক্যালি তামিমকে খারাপ করার জন্য…কিছু লোক আছে যারা…আমি সমস্ত ক্রিকেট বোর্ডের লোককে ঢালাওভাবে বলব না, একজন-দুইজন মানুষ আছেন যারা ক্রিকেট বোর্ডের ভাইরাস আমার কাছে মনে হয়; ক্রিকেট বোর্ডের ভাইরাস। তারাই এই জিনিসটা তৈরি করছে।
‘আমার মনে হয় অনেক ডিরেক্টর আছেন, তারা সবাই অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন। তারা হয়তো ইনভলভডই (জড়িত) না এর সাথে, কিন্তু দুই-একজন মানুষ আছেন যারা পুরা এই নাটকটা বানাচ্ছেন। পুরা ইন্ডিয়ান সিরিয়ালগুলা যেমন নাটক হয়, এ রকম একটা নাটক বানাচ্ছেন। তো এই নাটকটা আসলে ক্রিকেটর জন্য ভালো না। এটা খুবই দুঃখজনক এবং আমি মনে করি যে, আমাদের কাছে এ রকম কালচার সাধারণ মানুষ আশা করে না।’
তামিম ও সাকিবের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে বলে মনে করেন তাদের অগ্রজ পাইলট।
তার ভাষ্য, ‘বিশেষ করে আপনি যেভাবে তামিমকে এক ধরনের পচানো হচ্ছে পাঁচটা ম্যাচ খেলার জন্য সে হয়তো বলেছে যে, পাঁচটা ম্যাচ পরে আর খেলবে না। আবার এদিক দিয়ে সাকিবকে এক ধরনের ভাবে পচানো হচ্ছে যে, সাকিব এই সমস্ত দায়িত্বে ছিলেন।
‘আসলে কি তাই হইছে? তো সাধারণ মানুষ কিন্তু আসলে বোকা সাজছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার ওজনে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সারাক্ষণ আপনার ফেসবুকের মধ্যে থাকছেই। সোশ্যাল মিডিয়াতে পজিটিভকে নেগেটিভ, নেগেটিভকে পজিটিভ বানিয়ে প্লেয়াররা এর মধ্যে কিন্তু দেখা গেল যে, প্লেয়ারদেরকে ভিলেন বানানো হচ্ছে।’
ভিডিওবার্তায় ব্যাটিংয়ের অর্ডার পরিবর্তন নিয়ে তামিমের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাইলট বলেন, ‘আপনারা যদি দেখেন, তামিম কিন্তু একটা কথা বলেছে। কোনো একজন তাকে বোর্ডের অফিশিয়াল নাকি টিমের ম্যানেজমেন্ট ফোন দিয়েছেন, যে কিনা বলেছেন যে, তুমি প্রথম ম্যাচ, আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচটা খেলবা না ওপেনিং করবা না, তুমি মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করবা। কোন কারণে তাকে বলতে পারে, বলেন তো আপনি যে, ওপেনিং ব্যাটিং করবা না তামিম? বিকজ একটা প্লেয়ার সারা জীবন ওপেন করে আসছে এবং তাকে জানেন যে, সে ওপেনার বাংলাদেশ টিমের। তাকে কী করে এ রকম একটা তাকে বলতে পারে? আমি জানি না কী প্ল্যান।
‘তার মানে বোঝাই যাচ্ছে যে, তামিমকে আপনি আউট করতে চাচ্ছেন। তামিমকে বাদ দিয়ে তুমি নিচে খেলো, ওপরে একটা ওপেনারকে আমি ট্রাই করব। ওখানে ও পারফর্ম করলে তুমি সাইজ। তো এ রকমই কথা। আমার কাছে মনে হয় খুবই দুঃখজনক।’
তামিম পাঁচটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন না, এ রকম তথ্য যারা ছড়িয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চেয়েছেন জাতীয় দলের আলোচিত উইকেটরক্ষক পাইলট।
তিনি বলেন, ‘টিম বাংলাদেশ অনেক ভালো করুক, আমরা সেই দোয়া করি। দিনশেষে কিন্তু আমাদেরই একটা ইমেজ, কিন্তু আমি বলব যে, এটার তদন্ত অবশ্যই করা উচিত। আমি জানি ক্রিকেট বোর্ড তদন্ত করবে না। বিকজ ক্রিকেট বোর্ডের বড় পাওয়ারফুল মানুষরা এর মধ্যে জড়িত, কিন্তু কারা কারা সোশ্যাল মিডিয়াতে এ ধরনের নেগেটিভ কথা বলেছে, সোশ্যাল মিডিয়াকেও ধরা উচিত, তদন্ত করা উচিত, কার কাছ থেকে এই ইনফরমেশনটা পেয়ে তারা এই নেগেটিভ নিউজগুলা দিয়েছে। এটা কোনো ঘটনাই না…মিথ্যাকে সত্যি বানিয়েছে। আমার মনে হয় ট্র্যাক করলেই ধরলেই কারা কারা ইনভলভ, কে কে নিউজটা পাস করেছে বেরিয়ে আসবে যদি ক্রিকেট বোর্ড ধরতে চায়। তাহলে বেরিয়ে আসবে আসলে এই ভিতরের গুটিচালকটা কে বা কারা।
‘আমি হয়তো জানি অনেক কিছুই। আমি বলব না। বিকজ হচ্ছে খুবই দুঃখজনক আমার কাছে মনে হয় যে, লজ্জাজনক ব্যাপার। আমরা ক্রিকেট খেলেছি। ক্রিকেটের সার্কেলেরই কিছু মানুষজনের মধ্যে অনেক জড়িত আছে, কিন্তু এই মানুষগুলোকে আমার কাছে খুবই ভাইরাস মনে হয় যে, এরা ভয়ানক। আপনি কখন কোন টিম বানাবে, কাউকে বুঝতে দিবে না কী বানাবে না বানাবে, এর মধ্যে অনেক কিছু ইন্টারেস্ট আছে। তো সেই ইন্টারেস্টটা যেন বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট করে যেন তার ইন্ডিভিজ্যুয়াল ইন্টারেস্টটা যেন না থাকে। সেটা আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করব ক্রিকেট বোর্ডকে এবং সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের আশপাশে যারা আছেন অবশ্যই এটা তদন্ত করা উচিত কারা এই জিনিসটা লিক আউট করেছে যে, তামিম পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবে না অথবা সাকিব বলেছে, তামিমকে নিব না, এই করব না, এই করব না। এই যে কথাগুলো বলেছে, কারা বের করেছে বাইর করা উচিত এবং জেনুইন তদন্ত করা উচিত।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য