বিশেষ কোনো উপলক্ষের দশক পূর্তির উদযাপন করাই যায় বা বিভিন্ন জয়ন্তীর - রজত, সুবর্ণ....। কিন্তু ৩১ বছর পূর্তি মোটেই স্মৃতিচারণা করার মতো উপলক্ষ নয়। তবে সেই বিশেষ উপলক্ষটা বিশেষ কারও হলে এই নিয়ম আর খাটে না। এই যেমন শচীন টেন্ডুলকার।
প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর দিনটি এলেই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম অবধারিতভাবে মনে করিয়ে দেবে, এত বছর আগে এই দিনে শচীন টেন্ডুকারের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। ‘এত’ শব্দটার জায়গায় যে শুধু সংখ্যাটা বদল হয়, তা তো বুঝতেই পারছেন। শুধু ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমই বা বলছি কেন, আজ বিশ্বের যেকোনো ক্রিকেট পোর্টালে গেলেই দেখবেন, নিয়মকে প্রমাণ করা দুয়েকটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে ১৫ নভেম্বর দিনটির এই আলাদা মহিমার কথা বলা আছে। সঙ্গে পাদটীকার মতো করে আরেকটা তথ্যও, একই দিনে টেস্ট অভিষেক আধুনিক ক্রিকেটের আরেক ‘গ্রেট’ ওয়াকার ইউনিসের।
শুধুই দিনটিকে হিসাবে নিলে অনেক গ্রেটের টেস্ট অভিষেকই মিলে যাবে। শচীন টেন্ডুলকার আর ওয়াকার ইউনিসের ব্যাপারটা সম্ভবত অনন্যতাই দাবি করে। এই দুজনের টেস্ট অভিষেক তো শুধু একই দিনে নয়, একই টেস্টে। আজ থেকে ৩১ বছর আগে করাচিতে একই সঙ্গে অমরত্বের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এক ব্যাটসম্যান আর এক ফাস্ট বোলারের।
দুজনই তখন টিন এজার। করাচি টেস্ট শুরুর দিন টেন্ডুলকারের বয়স ১৬ বছর ২০৫ দিন। ওয়াকারের ১৭ বছর ৩৬৪ দিন। ব্যাটসম্যান-বোলার বলে অভিষেকে দুজন সরাসরি প্রতিপক্ষও। সেই লড়াইয়ে জয়ীর নাম ওয়াকার ইউনিস। টেস্টে প্রথম ব্যাটিং করতে নেমে চোখেমুখে কেমন আঁধার দেখেছিলেন, তা টেন্ডুকার নিজেই অনেকবার বলেছেন। ২৪ বছর পর যাঁর ক্যারিয়ার শেষ হবে টেস্ট খেলার ডাবল সেঞ্চুরি করার অবিশ্বাস্য এক কীর্তি গড়ে, তাঁর নাকি মনে হয়েছিল, জীবনের প্রথম টেস্টটাই না শেষ টেস্ট হয়ে যায়! সেই ‘যন্ত্রণা’ থেকে টেন্ডুলকারকে মুক্তি দিয়েছিলেন ওয়াকার। খুব দ্রুতই ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠা ইনসুইঙ্গারে টেন্ডুলকারকে বোল্ড করে। ২৪ বলে ১৫ রানের ইনিংসেও অবশ্য টেন্ডুলকারীয় অন ড্রাইভে দুটি চার ছিল।
টেস্ট অভিষেক একই সঙ্গে, তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় ধরলে ওয়াকার মাসখানেকের সিনিয়র। বাবার কর্মসূত্রে যে শারজায় কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে তাঁর, সেখানেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে। এমনই গতির ঝড় তুলে যে, আম্পায়ার ডিক বার্ড তাঁকে দিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের দ্রুততম বোলারের স্বীকৃতি। দাবানলের মতো যা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট বিশ্বে। সবচেয়ে বড় কারণ, সেই টুর্নামেন্টেরই এক দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে তখন খেলছেন ম্যালকম মার্শাল, ইয়ান বিশপ, কার্টলি অ্যামব্রোস ও কোর্টনি ওয়ালশ।
টেস্ট অভিষেকের আগে ওয়াকারের ৮টি ওয়ানডে খেলা হয়ে গেছে। শারজার ওই টুর্নামেন্টের পর নেহরু কাপ খেলতে ঘুরে এসেছেন ভারতও। এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলারদের ছায়াসঙ্গী ইনজুরিও উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছে। যে কারণে টেস্ট অভিষেকের পর সেই সিরিজের পরের দুই টেস্টে দর্শক হয়ে থাকতে হয়েছে। টেন্ডুলকার সেই দুটি টেস্টেই খেলেছেন এবং দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেছেন। টেন্ডুলকারের সঙ্গে ওয়াকারের আবার দেখা শিয়ালকোটে সিরিজের শেষ টেস্টে। প্রথম তিন টেস্ট ড্র হয়েছে বলে নিজেদের পেস আক্রমণকে লেলিয়ে দিতে পাকিস্তান যেখানে তৈরি করেছে ঘাসে ঢাকা সবুজ উইকেট। শচীন টেন্ডুলকার নামের অত্যাশ্চর্য গল্পের প্রথম অধ্যায়টাও সেখানেই লেখা। যাতে আছেন ওয়াকার ইউনিসও। যাঁর বাউন্সার টেন্ডুলকারের নাকে ছোবল দিয়ে রীতিমতো রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। সেই রক্ত মুছে ব্যাটিং চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টেন্ডুলকার এবং পরের বলটিতেই মেরেছেন বাউন্ডারি!
ওয়াকারও বুঝে গেছেন, প্রথম দর্শনে যাঁকে মোটেই 'বিশেষ কিছু' মনে হয়নি, মুখে বেবি ফ্যাটের চিহ্ন বয়ে বেড়ানো সেই ব্যাটসম্যান অন্য ধাতুতে গড়া। ভবিষ্যতে আরও অনেকবারই এর সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হবে। কেই-বা তখন ভেবেছিল, টেস্ট ম্যাচে দুজনের আবার দেখা হবে দশ বছর পর!
আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে আফসোসটার কথা বলার সময় হলো এখন। ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় শচীন টেন্ডুলকার বনাম দুই ডব্লিউ, ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনিস। যে লড়াইয়ের কথা ভাবলেই জিভে জল চলে আসে। ওই সিরিজের পরই আরও অনেকবারের মতো দুই দেশের সম্পর্ক ভেঙে পড়ায় যা আসলে কখনো আমাদের দেখাই হয়নি। শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটে যখন রানের ফল্গুধারা বইছে, একই সময়ে রিভার্স সুইংয়ে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন তুলছেন দুই ডব্লিউ; কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তাঁদের দেখাই হচ্ছে না। আবার যখন তা হলো, টেন্ডুলকার তখনো দেদীপ্যমান, কিন্তু ওয়াকারের ক্যারিয়ার-সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে। প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে দিনের পর দিন গতির ঝড় তোলার ধকল নিতে নিতে ক্লান্ত শরীর, যেটির ছাপ পড়ছে বোলিংয়েও। এমনই যে, ১৯৯৯ সালের সেই ভারত সফরে প্রথম দুই টেস্টে মাত্র ২ উইকেট নেওয়ার পর তৃতীয় টেস্টে দল থেকেই বাদ পড়ে গেছেন ওয়াকার।
ওয়াকারের বাউন্সারে টেন্ডুলকারের রক্তাপ্লুত নাকের সেই শিয়ালকোটের পর চেন্নাইয়ে আবার যখন দুজনের দেখা হয়েছে টেস্টে, আরও ৫৩টি টেস্ট খেলে ফেলেছেন ওয়াকার, টেন্ডুলকার খেলেছেন ৬৪টি। ৫৫ টেস্টে ২১.৫৭ গড়ে ২৭৫ উইকেট ওয়াকারকে সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারদের দলে ঢোকার ছাড়পত্র একরকম দিয়েই দিয়েছে। ৬৪ টেস্টে ৫৪.৭৭ গড়ে ৪৮২০ রান শচীন টেন্ডুলকারকেও তুলে দিয়েছে অমরত্বের হাইওয়েতে।
কিন্তু ওই যে আফসোসটা, একই সঙ্গে শুরুর পর সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলা দুই গ্রেটের টেস্ট ক্যারিয়ার পরস্পরকে ছেদ করেছে কিনা আর মাত্রই একবার! ১৯৮৯ সালে দুই টেস্টের পর ১৯৯৯ সালেও দুই টেস্ট- মাত্র এই চার টেস্টেই শেষ টেন্ডুলকার-ওয়াকারের টেস্ট লড়াইয়ের গল্প। এত সব অর্জনের পরও টেন্ডুলকারেরও তাই হয়তো আফসোস হয়, সেরা ফর্মের দুই ডব্লিউকে তাঁর জয় করা হয়নি। গত শতকের নয়ের দশকে টেন্ডুলকার-লারা দ্বৈরথে ক্রিকেট বিশ্ব যখন দ্বিধাবিভক্ত, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের যে তখন ব্রায়ান লারাকেই এগিয়ে রাখতে দেখেছি, এর কারণও হয়তো এটাই। সঙ্গে আরেকটি নাম এসেছে, সেটিও রিভার্স সুইং সামলানোর দক্ষতাকে মানদণ্ড ধরেই। নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো। যে পরীক্ষা টেন্ডুলকারকে দিতেই হয়নি, সেটিতে তাঁকে 'ফেল' বলে দেওয়াটা অন্যায়, আবার পাসই বা করাবেন কিভাবে!
ওয়ানডেতে অবশ্য সেরা ফর্মের দুই ডব্লুর সঙ্গে টেন্ডুলকারের মাঝে মধ্যেই দেখা হয়েছে। তাতে আফসোসটা বরং আরও বেড়েছে। ওয়ানডে কি আর ব্যাটসম্যান-বোলারের ক্ল্যাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ হতে পারে! টেস্ট ক্রিকেট, একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটই যেটি ধারণ করার মতো কলোসিয়াম। তারপরও নিছক কৌতুহল মেটানোর জন্য হলেও পরিসংখ্যানের আয়নায় ওয়ানডেতে টেন্ডুলকার-ওয়াকার লড়াইটা দেখে নেওয়া যেতেই পারে। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও দুজনের প্রথম লড়াইয়েও জিতেছিলেন ওয়াকার। টেস্ট ক্রিকেটে টেন্ডুলকারকে প্রথম আউট করেছিলেন, ওয়ানডেতেও তা-ই। ১৯৮৯ সালের সেই সিরিজেই ওয়ানডে অভিষেকে শূন্য রানে আউট হওয়ার যন্ত্রনা উপহার দিয়েছিলেন টেন্ডুলকারকে। প্রায় সাত বছর পর ওয়াকারকে দ্বিতীয়বারের মতো উইকেট দেওয়ার পর অবশ্য টেন্ডুলকার খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন বলে মনে হয় না। কারণ ১৯৯৬ সালে শারজায় পেপসি কাপের ওই ম্যাচে এর আগেই ১১৪ রান করা হয়ে গেছে তাঁর।
২৩টি ওয়ানডে ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলে টেন্ডুলকারকে পেয়েছেন ওয়াকার। আউট করেছেন চারবার। এই হিসাবটা সহজেই পাওয়া যায়, কিন্তু ওয়াকারের বলে টেন্ডুলকার কত রান নিয়েছেন, তা জানার কোনো উপায় নেই। তবে ওই ২৩ ম্যাচে দুজনের পারফরম্যান্স তো জানাই যায়। ২টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ টেন্ডুলকারের রান ৭৮০। ওই ২৩ ম্যাচের স্ট্রাইক রেট আর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট প্রায় সমান (৮৬.৩৭/৮৬.২৩), তবে অ্যাভারেজ প্রায় সাড়ে সাত কম (৩৭.১৪/৪৪.৮৩)।
প্রতিপক্ষ দলে টেন্ডুলকার, এমন ম্যাচের একটিতে ৫ উইকেট নিয়েছেন ওয়াকার, একটিতে ৪ উইকেট, মোট উইকেট ৩৬। ওই ২৩ ম্যাচের অ্যাভারেজ-স্ট্রাইক রেট-ইকনমি রেটের সঙ্গে ক্যারিয়ার রেকর্ডের আশ্চর্য সমতা (২৩.৯১/২৩.৮৪, ৩০.৫/৩০.৫ ও ৪.৭০/৪.৬৮)। নিছক তথ্য হিসাবেই সংখ্যার এই কচকচানি। প্রতিপক্ষ দলে ওয়াকার থাকলে টেন্ডুলকারের পারফরম্যান্স একটু খারাপ হয়েছে আর ওয়াকারের একই থেকেছে- এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যতই প্ররোচনা থাকুক এতে, তা হবে অতি সরলীকরণ।
এ সবের দরকারই কি! ৩১ বছর আগে আজকের এই দিনে টেস্ট ক্রিকেটে একই সঙ্গে আবির্ভূত হয়েছিলেন দুই ক্ষণজন্মা ক্রিকেটার- আমরা বরং সেটিরই উদযাপন করি।
লাইনটা লিখতে লিখতে ওই আফসোসটা আবারও হচ্ছে।
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকত। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সৈকতের এ কীর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইসিসি।
বৃহস্পতিবার আইসিসি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইসিসির বার্ষিক পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৈকতকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেল থেকে এলিট প্যানেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আইসিসি আম্পায়ারদের ‘ইমার্জিং’ প্যানেলের ওপরের দিকে ছিলেন সৈকত। সেখান থেকে যে কয়জন আম্পায়ার এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন, তাদের চেয়ে এগিয়েই ছিলেন তিনি।
কিছুদিন আগে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস অবসরে গেছেন। তার অবসরের পর জায়গাটি ফাঁকা পড়ে ছিল। সেই জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন সৈকত।
এক্ষেত্রে আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার-ক্রিকেট ওয়াসিম খান (চেয়ারম্যান), সাবেক খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, নিউজিল্যান্ডের সাবেক আম্পায়ার টনি হিল এবং কনসালট্যান্ট অফিসিয়েটিং এক্সপার্ট মাইক রাইলি বড় ভূমিকা রেখেছেন।
কারণ তাদের পরামর্শেই আইসিসি এলিট প্যানেলের দরজা খুলে গেছে সৈকতের। তারা আইসিসির একটি নির্বাচক প্যানেলে আছেন। তাদের ওপরই দায়িত্ব ছিল এলিট প্যানেলের জন্য একজন আম্পায়ারকে নির্বাচিত করার।
এলিট প্যানেলে যোগ দিতে পেরে দারুণ আনন্দিত সৈকত।
আইসিসিকে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এই প্যানেলে আসতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে তার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করব। কয়েক বছর ধরে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার মাধ্যমে সামনে দিনের চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত।’
২০১০ সালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয় সৈকতের। এরই মধ্যে পুরুষদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে ইতোমধ্যে একশর বেশি ম্যাচ পরিচালনা করে ফেলেছেন তিনি।
আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালনের মতো অভিজ্ঞতাও তার ঝুলিতে রয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের এই আম্পায়ার।
শুধু তা-ই নয়, গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
এক নজরে আইসিসির এলিট প্যানেল অফ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি
আম্পায়ার: কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা), ক্রিস্টোফার গ্যাফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটলবরো (ইংল্যান্ড), নিতিন মেনন (ভারত), আহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া), শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ (বাংলাদেশ), রডনি টাকার (অস্ট্রেলিয়া) এবং জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
ম্যাচ রেফারি: ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া), জেফ ক্রো (নিউজিল্যান্ড), রঞ্জন মাদুগালে (শ্রীলঙ্কা), অ্যান্ড্রু পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে), রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)।
আরও পড়ুন:অস্ট্রেলিয়ার কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ নারী দল।
বুধবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে ১১৮ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছিল টাইগ্রেসরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষীক ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল নিগার সুলতানার দল। এই প্রথমবার ঘরের মাঠে প্রথম কোন ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা। তবে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে তিন ম্যাচের সিরিজে এই নিয়ে তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। এর আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের কাছে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিলো টাইগ্রেসরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে সিরিজে প্রথমবার টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে খালি হাতে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সুমাইয়া আকতার। পরের ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার ৫ রান করা ফারজানা হক।
৮ রানে ২ ওপেনারকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুরশিদা খাতুন ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। কিন্তু ২৮ বলে ১৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দুজন। ২১ বলে ১টি চারে ৮ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন মুরশিদা।
১১তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নামা রিতু মনি ১ ও ফাহিমা খাতুন খালি হাতে বিদায় নেন। এতে ৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন নিগার ও স্বর্ণা আকতার। সাবধানে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তারা।
কিন্তু দলীয় ৫৩ রানে বিচ্ছিন্ন নিগার ও স্বর্ণা। ২টি চারে ৩৯ বলে ১৬ রান করেন নিগার। জুটিতে ৩৯ বলে ২১ রান যোগ করেন নিগার ও স্বর্ণা।
এরপর ১০ রানের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যাবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৬৩ রানে নবম উইকেট পতন হয় তাদের। কিন্তু দশম উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের উপর চড়াও হন শেষ দুই ব্যাটার সুলতানা খাতুন ও মারুফা আকতার। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১শর রানের এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সুলতানা আউট হলে ৮৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শেষ উইকেটে ২২ বল খেলে ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রানের জুটি গড়েন সুলতানা-মারুফা। ২টি চারে ১০ রানে সুলতানা আউট হলেও ১টি বাউন্ডারিতে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন মারুফা। অস্ট্রেলিয়ার কিম গ্যারেথ ১১ রানে ও অ্যাশলে গার্ডনার ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
৯০ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া নারী দল। নবম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট শিকার করেন অফ-স্পিনার সুলতানা। ফোবি লিচফিল্ডকে ১২ রানে আউট করেন সুলতানা। ১৩তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিকে ৩৩ রানে আউট করেন লেগ-স্পিনার রাবেয়া খান। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন এলিসা পেরি ও বেথ মুনি। পেরি ২৭ ও মুনি ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের সুলতানা ও রাবেয়া ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন গ্যারেথ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেন গার্ডনার।
সিরিজটি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিলো। এখন অবধি ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া। সমানসংখ্যাক ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে আছে বাংলাদেশ। আগামী ৩১ মার্চ থেকে মিরপুরের ভেন্যুতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দলের সঙ্গে থাকছেন না হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ব্যক্তিগত কারণে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন তিনি।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দিয়ে বিসিবি জানায়, দ্বিতীয় টেস্টে হাথুরুসিংহের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কোচ নিক পোথাস।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। এরপর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা।
আগামী ৩০শে মার্চ চট্টগ্রামে মাঠে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। এই টেস্টের জন্য দলে ডাক পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও হাসান মাহমুদ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই টেস্টে দলে ফিরছেন সাকিব আল হাসান, ফেরানো হয়েছে পেসার হাসান মাহমুদকেও।
সাকিব ফেরায় কপাল পুড়েছে তৌহিদ হৃদয়ের। ফলে লাল বলের ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষাটা তার আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আগামী ৩০ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। প্রথম ম্যাচে শোচনীয় হারের পর সাকিব দলে ফেরায় তাই দলের আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও বাড়বে।
গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। এরপর বিশ্রাম ও চোটের কারণে প্রায় এক বছর সাদা পোশাকে মাঠে নামা হয়নি তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজেও বিশ্রামে ছিলেন এ অলরাউন্ডার।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে সাকিবের পরিসংখ্যানটা দারুণ। এই ফরম্যাটে ৯ টেস্ট ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৮.১৮ গড়ে ৬১১ রান করেছেন সাকিব। এছাড়া বল হাতে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট।
এ ছাড়াও দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে বাদ পড়েছেন পেসার মুশফিক হাসান। প্রথম ম্যাচে না খেললেও চট্টগ্রাম টেস্টের আগে চোটে পড়েছেন তিনি। গোড়ালির চোটের কারণে তিনি ছিটকে যাওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন হাসান মাহমুদ।
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, লিটন দাস, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
আরও পড়ুন:সিলেটে শুক্রবার শুরু হওয়া টেস্টের এক দিন বাকি থাকতেই শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ৫১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিন সোমবার পার না হতেই ৩২৮ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা।
সফরকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ শিবিরে ধস নামান কাসুন রাজিথা, যিনি ১৪ ওভার বল করে ৫৬ রান খরচায় তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। এ ছাড়া বিশ্ব ফার্নান্দো তিনটি ও লাহিরু কুমারা পান দুটি করে উইকেট।
টস হেরে প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা করেছিল ২৮০ রান। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ধনঞ্জয় ডি সিলভার ১০২ রানের পর দ্বিতীয়টিতে তার ব্যাট থেকে আসে ১০৮ রান। দলের টেস্ট অধিনায়কের জোড়া এ শতকের সুবাদে দুই ইনিংসেই রানের ভিত মজবুত করার সুযোগ পায় সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ করে পাঁচ শর বেশি রানের লিড নিয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে শ্রীলঙ্কা।
দলটির দেয়া বিশাল এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ইনিংসের চেয়ে কম ১৮২ রান করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
প্রথম টেস্টে পরপর দুই সেঞ্চুরি করে দলের জয়ে মূল ভূমিকা রাখা ধনঞ্জয় ডি সিলভা হয়েছেন প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ।
আরও পড়ুন:সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বিশাল সংগ্রহ করতে না পারলেও এরই মধ্যে আড়াই শর বেশি রানের লিড নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
ম্যাচের তৃতীয় দিন রোববার এ প্রতিবেদন লেখার সময় ৫১ ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান করে সফরকারী দলটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৮০ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের চাকা। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
দুই শর আগেই স্বাগতিকদের সব উইকেট তুলে নেয়া শ্রীলঙ্কা লিড পায় ৯২ রানের, তবে প্রায় ১০০ রানে এগিয়ে থাকা দলটি দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিংয়ে দাপট দেখাতে পারেনি।
দলীয় ১৯ রানে নিশান মাদুশকা আউট হওয়ার পর ৩২ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুশল মেন্ডিস। এ ছাড়া ৬০ রানের মাথায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও ৬৪ রানের সময় প্যাভিলিয়নে ফেরেন দিনেশ চান্ডিমাল।
এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন দিমুথ করুণারত্নে। তার ৫২ রানের সুবাদে ধীরে ধীরে রান বাড়তে থাকে শ্রীলঙ্কার। এর সঙ্গে অপরাজিত দুই ব্যাটার ধনঞ্জয় ডি সিলভার ৫৪ ও কামিন্দু মেন্ডিসের ২৫ রান লিড বাড়াচ্ছে সফরকারীদের।
এর আগে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা।
আরও পড়ুন:সিলেট টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার করা ২৮০ রানের জবাবে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান করেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের প্রথম দিন শুক্রবার ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে শনিবার দ্বিতীয় দিন শুরু করে স্বাগতিকরা। মাঠে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটাররা।
চতুর্থ উইকেটে দলীয় ৫৩ রানে মাহমুদুল হাসান জয়ের পতনের পর লিড নেয়ার মতো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলামের ৪৭ ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি কেউই। এর ফলে ৯২ রানে পিছিয়ে থেকেই প্রথম ইনিংসে থামতে হয় টাইগারদের।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বিশ্ব ফার্নান্দো চারটি এবং কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমারা তিনটি করে উইকেট পান।
মন্তব্য