২০০৬ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সাকিব আল হাসান। অসংখ্য স্মরণীয় পারফর্মেন্সের উজ্জ্বল তার এই দীর্ঘ ক্রিকেট যাত্রা। ‘ফিরছেন সাকিব’ সিরিজের শুরুতে থাকছে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সেরা পাঁচ কীর্তি।
সাকিবের ‘বাংলাওয়াশ’
২০১০ সালে বাংলাদেশে নিউ জিল্যান্ড এসেছিল ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়েই। সেই স্বপ্ন ব্ল্যাকক্যাপদের জন্য পালটে যায় রীতিমতো দুঃস্বপ্নে।
সিরিজে সাকিব ব্যাটিং ও বোলিং-দুইয়েই ছিলেন সেরা। ব্যাট হাতে ৭১ গড়ে ২১৩ রান। সঙ্গে ১৫.৯ গড়ে ১১ উইকেট। সিরিজের মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হয়েছিলেন সাকিব।
প্রথম ম্যাচে ছিলেন না তামিম ইকবাল। বোলিংয়ের সময় প্রথম ওভারে ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। অধিনায়কত্বের বাড়তি চাপ চলে আসে সহ-অধিনায়ক সাকিবের কাঁধে। সেই চাপই যেন বের করে আনে সাকিবের সেরাটা। ব্যাট হাতে ফিফটির পাশাপাশি বোলিংয়ে চার উইকেট নিয়ে একাই বধ করেন সফরকারীদের।
বৃষ্টিতে ভেসে যায় দ্বিতীয় ম্যাচ। তিন নম্বর ম্যাচে দুই উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৭ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন সাকিব।
সিরিজ নির্ধারণী চতুর্থ ম্যাচে ছিল সাকিব শো। ব্যাট হাতে করেন সেঞ্চুরি। বল হাতে তিন উইকেট। তাতেই ম্লান কেন উইলিয়ামসনের শতক। সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ১৭৪-এ সাকিবের অবদান ৩৬। বল হাতে নেন দুই উইকেট। সেই ম্যাচ জিতেই নিশ্চিত হয় বাংলাওয়াশ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০তে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
আক্ষেপের এশিয়া কাপ, সাকিবের এশিয়া কাপ
২০১২ সালের এশিয়া কাপ বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক চিরকালীন আফসোস। ফাইনালের দুই রানের আক্ষেপ অনেক দিন পুড়িয়েছে বাংলাদেশকে। সাকিবের আর মুশফিকের কান্নার ছবি ছিল লাখো ভক্তের হৃদয় ভাঙার প্রতিচ্ছবি।
শেষটা হৃদয়বিদারক হলেও পুরো টুর্নামেন্টই ছিল সাকিবময়। চার ম্যাচে করেছিলেন তিন ফিফটি। ভারতের বিপক্ষে করেন ৪৯। দুইবার পেয়েছেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। সঙ্গীর অভাবে দলকে জেতাতে পারেননি। বাকি দুই ম্যাচে তেমনটি হয়নি। সাকিবের গড়ে দেওয়া ভিতে ভর করে জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো পৌঁছায় এশিয়া কাপ ফাইনালে।
ফাইনালেও ফিফটি করেন সাকিব। তা যথেষ্ট ছিল না বাংলাদেশকে শিরোপা জেতাতে। তারপরও তিন ফিফটিতে ২৩৭ রান ও ছয় উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন সাকিব।
রাজসিক প্রত্যাবর্তন
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০১৪ সালে সাকিব নিষিদ্ধ হন ছয় মাসের জন্য। পরে নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয় তিন মাসে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে ফেরেন আহত বাঘের মতো।
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস সাকিব পকেটে পুরেন ছয় উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টে যা করেন, তা সাকিবকে নিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়। এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেটে বিরল রেকর্ড গড়েন এই সব্যসাচী। টেস্টের ১৪৩ বছরের ইতিহাসে যা ঘটে তার আগে মাত্র দুই বার।
খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টে সাকিবের ১৩৭ ও তামিমের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ রান তোলে ৪৩৩। বল হাতে সাকিব তুলে নেন পাঁচ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে তা হননি সাকিব। তুলে নেন ইনিংসে পাঁচ ও ম্যাচে ১০ উইকেট। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরেন রাজার মতোই। হয়ে যান ইয়ান বোথাম ও ইমরানের খানের পর এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেয়া তৃতীয় ক্রিকেটার।
অস্ট্রেলিয়া বধ
আগের বছরই দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে যখন বাংলাদেশ সফরে আসে অস্ট্রেলিয়া, সিরিজ জয়ের বাড়তি চাপ ছিল স্বাগতিকদের ওপর।
প্রথম টেস্টের আগের দিন অজি স্কিপার স্টিভেন স্মিথের গলায় ছিল অন্য সুর। অনেকটা হেয় করেই যেন বললেন, ‘বাংলাদেশ আগের ১০০ টেস্টে জিতেছে মাত্র নয়টি। এখনও অনেক দূরের পথ।’
ম্যাচের শুরুটা দেখে মনে হলো স্মিথ ভুল বলেননি। প্যাট কামিন্সের বোলিং তোপে তিন উইকেট নেই ১০ রানের মাথায়। সেখান থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন সাকিব ও তামিম। দুই জনের ১৫৫ রানের জুটিতে ব্যাটিং বিপর্যয় এড়ায় টাইগাররা। সাকিব আউট হন ৮৪ রানে। ২৬০ রানে শেষ করে বাংলাদেশ।
শের-ই-বাংলার টার্নিং ট্র্যাকে বল হাতে সাকিব হয়ে ওঠেন দানবীয়। বাংলাদেশকে ৪৩ রানের লিড দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সাকিব মুড়িয়ে দেন ২১৭ রানে, ৬৮ রানে তুলে নেন পাঁচ উইকেট।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শেষে অস্ট্রেলিয়ার সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২৬৫ রানের। তাড়া করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক স্মিথের ব্যাটে সহজ জয়ের পথেই ছিল অস্ট্রেলিয়া। আবারও সেই আশায় পানি ঢেলে দেন সাকিব।
সেঞ্চুরি তুলে নেয়া ওয়ার্নারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন স্মিথকে। একে একে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ম্যাথু ওয়েডকেও পথ দেখান প্যাভিলিয়নের। ১০ উইকেট তুলে নেন সাকিব। দল পায় অবিস্মরণীয় এক জয়।
ম্যাচসেরা কে হবেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কোনো। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয়ে সাকিব নায়ক হবেন এমনটা তো হবারই কথা!
দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপে স্বপ্নের সাকিব
সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন বুকে চেপে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে দারুণ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত সেই আশা পরিণত হয় হতাশায়। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শেষ করে নয় দলের মধ্যে অষ্টম স্থানে থেকে।
দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপে স্বপ্নময় হয়ে ছিলেন সাকিব। ছুঁয়েছেন একের পর এক রেকর্ডের চূড়া। যখনই মাঠে নেমেছেন সাকিব গড়েছেন কোনো না কোনো রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত ছিলেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে। দলের ব্যর্থতায় সেই অর্জন আর হয়নি সাকিবের।
সাকিব বিশ্বকাপ শেষ করেন ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়ে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে পাঁচ শতাধিক রান ও ১০টির বেশি উইকেট লাভ করেন সাকিব। সঙ্গে ঢুকে যান বিশ্বকাপ ইতিহাসের এক এলিট ক্লাবে, যেখানে সদস্য সাকিব একাই।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর কেউই ১ হাজার রান ও ৩০ উইকেট পাননি। সাকিবই একমাত্র।
আরও একটি রেকর্ড গড়েন সাকিব। এক আসরে সাতটি ফিফটি করেন তিনি। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার বাদে এই কীর্তি নেই আর কারও।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা চার বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচে ফিফটি করে আরেকটি রেকর্ড গড়েন সাকিব।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ দিয়ে শুরু। এরপর নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে ৬৪। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার পর টানা দুই শতক ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। উইন্ডিজের সঙ্গে তার অপরাজিত ১২৪ রানের ইনিংসে ৫১ বল আগেই ৩২২ রান তাড়া করে বাংলাদেশ।
একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই ফিফটি পাননি সাকিব। সেই আক্ষেপ মেটান আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
প্রথমে ব্যাট হাতে ৫১। ব্যাট হাতে টুর্নামেন্ট কাঁপানো সাকিব ম্যাচে আগুন ঝরান বল হাতে। ২৯ রানে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে একাই ধসিয়ে দেন আফগানদের।
ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে হারতে হলেও সে দুই ম্যাচেই হাসে সাকিবের ব্যাট, আসে আরও দুটো ফিফটি।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট থেকে রান আসছেই না। গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও শূন্য রানে ফিরেছেন তিনি। আসিথা ফার্নান্ডোর বাউন্সার বলটিকে ব্যাটের ভেতরের ধার লাগিয়ে স্টাম্পে পাঠান এনামুল, যা যেন তার চলমান দুর্দশারই প্রতীক।
মজার বিষয় হলো, এই আউট হওয়ার আগে দুইবার জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ফার্নান্ডোরই একটি বল স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলেও উইকেটকিপার তা হাতছাড়া করেন। পরের বলেও একই অঞ্চলে ক্যাচের সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু বলটি নিচু হওয়ায় ফিল্ডাররা ধরতে ব্যর্থ হন।
এনামুলের এই সফরটা যেন ভাগ্যের সাথে লুকোচুরির খেলা। গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানের পর এবার আবার শূন্য। ক্রিজে দাঁড়ালেই কীভাবে যেন রান না পাওয়ার অভিশাপ তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ব্যাট হাতে আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট, প্রতিটি বলই যেন তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এমন সময়ে প্রশ্ন উঠছে, দলের ওপেনিং জুটিতে এনামুলের স্থান কতটা যৌক্তিক? নাকি দ্রুত কোনো বিকল্প খুঁজে বের করার সময় এসেছে? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ইনিংসটিই হয়তো তার জন্য শেষ সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বছর তিনেক হলো জাতীয় দলের বাইরে অলরাউন্ডার রুমানা আক্তার। মাঝখানে একবার ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন ‘আর নয় ক্রিকেট’। সেই ফেসবুক পোস্টেই এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে গুরুতর অভিযোগ তুললেন রুমানা আহমেদ। রুমানার দাবি, তার সঙ্গে অন্যায়-অবিচার হয়েছে। এবং তিনি সেটার বিচার চাইলেন ক্রিকেট বোর্ডের কাছে।
গতকাল নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে রুমানা পোস্ট দিয়েছেন বিসিবির কাছে খোলা চিঠির মতো করে। তিনি লিখেছেন, ‘বিসিবির সম্মানিত অভিভাবকদের বলছি। আমি খেলি কিংবা না খেলি, এমন অনৈতিক-নৈরাজ্যমূলক ঘটনা চলতে পারে না। দয়া করে আমাকে চূড়ান্ত সমাধান দিন। কোনো কারণ ছাড়াই তিন বছর তো কোনো কৌতুকের কিছু না। আমি কখনোই বাজে ক্রিকেট খেলিনি। অনৈতিক কাজও করিনি। জ্যেষ্ঠতা কখনোই অভিশাপ হতে পারে না। যারা আমার উজ্জ্বল ক্রিকেট ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে, তার বিচার চাই।’
২০২৩ সালের আগস্টে সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎই রুমানা পোস্ট দিয়েছিলেন, ‘আর ক্রিকেট নয়।’ সেই পোস্টের আগে বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কা-ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছিল, কোনোটিতেই তিনি ছিলেন না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দল ঘোষণার পর বিসিবি জানিয়েছিল, তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।
বিসিবির এই দাবির বিপক্ষে পাল্টা দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ দলের এই লেগস্পিনিং অলরাউন্ডার। সে সময় রুমানা বলেছিলেন- বিশ্রাম নয়, তাকে বাদই দেওয়া হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্টের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এমন মন্তব্য করায় রুমানাকে তলবও করেছিল বোর্ড।
দুই বছর আগে ‘নো মোর ক্রিকেট’ পোস্ট নিয়ে বিসিবি তখন বিব্রত হয়েছিল। নারী বিভাগের তৎকালীন প্রধান শফিউল আলম নাদেল সে সময় বলেছিলেন, ‘আমরা সব সময় আমাদের ক্রিকেটারদের প্রতি সদয় বা সৎ। ওকে এটা শুধু মনে করিয়ে দিলাম, সেতো চাইলে বোর্ড- আমাদের বিভাগ থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বোর্ড সভাপতি; সবার সঙ্গেই তো কথা বলার সুযোগ আছে। এটা সে না করলেও পারত।’
৩৩ বছর বয়সী রুমানা ২০১১ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন ৫০ ও ৮৭ ম্যাচ। দুই সংস্করণেই ৮০০-এর বেশি রান করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার উইকেট ১২৫।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘তবে তার স্বাভাবিক কাজকর্মে—অর্থাৎ খেলাধুলায়—ফিরতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।’
সাভারের কেপিজি হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে তামিমকে দেখে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘তামিম ইকবালকে নরমাল কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য অন্তত তিন মাস সময় দিতে হবে। মানে খেলাধুলায়। এ ছাড়া তিনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও হাঁটাচলা করবেন সপ্তাহখানেক। তাকে বিশ্রামেই থাকতে হবে। যদিও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সব রোগ সবসময় ধরা পড়ে না।
‘প্রথমিক ইসিজিতে কোনো চেঞ্জ আসেনি। আজ সকালে ইকো (ইকোকার্ডিওগ্রাম) করা হয়েছে। সবকিছুই ভালো। কিন্তু তারপরও যেকোনো সময় যেকোনো জিনিস ঘটে যেতে পারে। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তার পরিবারের সাথে আলাপ করেছি। এখন তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্ত।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সম্পদ তামিম ইকবালের শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করেন গতকাল সাড়ে ১০টায়। তিনি এখানে আসার পর ডাক্তাররা তাকে কার্ডিয়াক প্রবলেম হিসেবে সন্দেহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে কিছু চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তাকে এখন মুভ (নিয়ে যাওয়া) করানো ঠিক হবে না বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
‘তিনি একজন জাতীয় সেলিব্রেটি। নিজের অবস্থান বিবেচনা করে তিনি তাড়াতাড়ি ঢাকায় শিফট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও হয়েছিল। আমাদের এখানকার দুজন ও ওখানকার দুজন মিলে চারজন চিকিৎসক মিলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয়, তার নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায়নি। তারপর ডাক্তারররা সিপিআর দিয়েছেন। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে চালু করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’
অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল এখন সুস্থ। তার সার্বিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু কখনও কখনও যে প্রাইমারি পিসিআই হয়েছে, এটা একটা ফরেন বডি, এটা রিঅ্যাকশন হতে পারে, হার্ট নানাভাবে এটার ওপর অ্যাকশন ও রিঅ্যাকশন হতে পারে।
‘রে রিংটা লাগানো হয়েছে, সেটা সামায়িকভাবে, কোনোভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি রয়েছে। যদিও সেই পরিসংখ্যান খুবই কম।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের সদস্যদের সেটা বলেছি। চিকিৎসক যারা ছিলেন, ডা. মারুফ, তাদের পরিশ্রমে, আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাকে আমরা একটি নবজীবন দিতে পেরেছি। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা যেখানে সম্ভব, সেখানে মানুষ যেতে চাইবে। কিন্তু তার যাওয়াটা কতটা নিরাপদ, সে বিষয়ে আমরা তার পরিবারের সঙ্গে আলাপ করেছি। তার এই মুহূর্তে শিফট করায় ঝুঁকি আছে।’
এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ঝুঁকিটা কম, এক শতাংশ। যদি ঘটে যায়, তখন ঝুঁকিটা শতভাগ। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তার এখানে থাকা উচিত। তার পর তিনি অন্য কোথাও যেতে পারবেন।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘তামিমের যেটা হয়েছিল, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সেটা কিন্তু হয়। আমরা দেখেছি, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাক হলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগী কখনও হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তার হার্ট অ্যারেস্ট হয়। এখানেও তাই হয়েছে। কিন্তু তার সাথে চিকিৎসকরা ছিলেন, সাথে সাথে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ শুরু হয়েছিল। হার্ট নিজে পাম্প করছে না, জোর করে কিছুটা পাম্প করিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘তার বন্ধ আর্টারি খুলে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অ্যাকিউট এপিসোডটা গেছে। ৩২ মিনিটের মতো তাকে কার্ডিয়াক প্লেসে দিতে হয়েছে। সেখান থেকে উঠে আসার সৌভাগ্য সবার হয় না। যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার কারণেই তামিমকে আমরা ফিরে পেয়েছি। কতটা ফেরত পেয়েছি, আজ সকালবেলায় ইকোকার্ডিয়াক করে হার্টের ফাংশন দেখা হচ্ছিল, দেখে মনে হয়, কোনো সমস্যা নেই, একেবারে তরতাজা। মনে রাখতে হবে, এটিই একটি ছদ্মবেশ। হার্ট আবার অ্যাবনরমাল হতে পারে। তবে শঙ্কা অবশ্যই কমে গেছে।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তবে ওটা হয়েছিল, কারণ একটা বড় আর্টারি বন্ধ ছিল। খাবার নেই, অক্সিজেন নেই, ওই টিস্যুটা ইরিটেটেড, সে জন্যই এটা হয়েছিল। এখন সেটা খুলে গেছে। স্লাইট শঙ্কা আছে। সে জন্য আমরা তাকে বলেছি, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটি ক্রিটিক্যাল টাইম, যাতে আর কোনো প্রবলেম না হয়।
‘কথাবার্তা একটু কম বলা উচিত, বিশ্রামে থাকা উচিত। এখানে থেকে স্থিতিশীল হয়ে আরও ভালো কোনো জায়গায় যদি যেতে চান, তাহলে যেতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের হৃৎপিণ্ডে রিং পরানো হয়েছে।
বর্তমানে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।
ইউএনবিকে সোমবার এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তাকে রিং পরানো হয়েছে নিশ্চিত। প্রথমে মাঠে খেলার সময় তার বুকে ব্যথা ওঠে। আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠাই। তাকে যখন হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছিল, তখন আবার বুকে ব্যথা শুরু হয়।
‘হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা ওঠে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকসহ তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসা বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী সাংবাদমাধ্যমকে জানান, তামিমের দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। এ মুহূর্তে তিনি সেখানেই ভর্তি।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এ ক্রিকেটারকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তামিম ইকবাল।
তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ইউএনবিকে সোমবার দুপুরে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে বিকেএসপির পাশে ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিকেএসপি থেকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক সবকিছুসহ তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। আমাদের কর্মকর্তা ও ক্রিকেটের প্রশিক্ষকরা ওখানে আছেন।
‘ঢাকা থেকেও টিম আসছে। আমাদের কর্মকর্তা-চিকিৎসক সেখানে আছে। বিকেএসপির মাঠে হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে। দেখি কী করা যায়।’
টাইগারদের সাবেক এ ক্যাপ্টেনের শরীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে মুনীরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত একটা এনজিওগ্রাম হয়েছে। এরপর তিনি স্থিতিশীল আছেন।’
মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘তামিম ইকবাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আমরা সবাই তার সুস্থতা কামনা করছি।’
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। তিনি সেখানে ভর্তি রয়েছেন।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
তামিমকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে রবিবার সফলভাবে আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ টুর্নামেন্টে সিইউবির বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগী দলগুলো অংশগ্রহণ করে। ব্যতিক্রমী ক্রিকেটিং দক্ষতা ও দলগত কাজ খেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলে।
গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনে ব্ল্যাকআউটস এবং সিইউবি অলস্টারদের মধ্যে দুর্দান্ত ম্যাচ হয়।
সিইউবি ব্ল্যাকআউটস দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা অর্জন করে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিন।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. গিয়াস উ আহসান।
সিইউবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত ইভেন্টটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য