চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কওমি মাদ্রাসায় শিশুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সেখানকার শিক্ষকরা পরিবারের কাছে যেসব কথা বলেছেন, তার সঙ্গে ছাত্রদের বর্ণনা মিলছে না। আরও নানা অসংগতি উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়।
মাদ্রাসা থেকে শিশু ইফতেখার মালিকুল মাশফিকের গলাকাটা দেহ উদ্ধার করা হয় গত শনিবার। তার মৃত্যু কীভাবে হলো, এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, সেই বিয়ষটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এরই মধ্যে এক শিক্ষককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সেদিনের ঘটনাপ্রবাহ জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। এ বিষয়ে তার পরিবার, মাদ্রাসাশিক্ষকসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়।
মাদ্রাসাপ্রাঙ্গণে কোন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কোথায়
মাজারের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে একটু এগোলেই হাতের বাম পাশে শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকীর রওজা (কবর)। বাম পাশে মাঝারি আকারের একটি পুকুর। সবকিছু গড়ে উঠেছে রওজাকে ঘিরেই।
রওজার সঙ্গে একই ভবনে মসজিদ, তার নাম গাউসুল আজম মাইজভান্ডারি। মসজিদের উত্তর পাশে শাহ অছিয়র রহমান হেফজখানা ও এতিমখানা। হেফজখানা ও মাসজিদের সামনে একটি ছোট্ট খোলা মাঠ।
মাঠের উল্টো দিকে মাওলানা শাহ অছিয়র রহমানের বংশধরদের বসতবাড়ি। এর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে শাহ অছিয়র রহমান স্মৃতি অ্যাকাডেমি। তবে অ্যাকাডেমিতে যেতে হয় মূল রাস্তা দিয়ে ঘুরে।
মাশফির নিখোঁজ হওয়া
সময়- ভোর ৫টা ৩৫।
মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকীর মাজারসংলগ্ন মসজিদে হয় ফজরের নামাজ। প্রার্থনা শেষে মাজার জিয়ারত ও মুনাজাতে অংশ নেয় ছাত্ররা। পরে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ছাত্রদের ছবক (তালিম) দেয়া হয়।
সেদিন ছবক দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন মাদ্রাসাশিক্ষক হাফেজ আবু জাফর।
মাশফির পরিবারের কাছে তার দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, সকাল ৭টায় মাশফি বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ছুটি নেয়। তার সঙ্গে ছিল আরও তিনজন।
সকালের নাশতার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিরতি দেয়া হয় সকাল সাড়ে ৭টায় । এরপর মাশফির নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পারেন জাফর হুজুর।
সে বাড়িতে গেছে কি না খোঁজ করতে মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীকে দেড় কিলোমিটার দূরে ফকিরাখালী এলাকায় মাশফির নিজ বাড়িতে পাঠান তিনি। এর পরপরই প্রায় ৭০০ মিটার দূরে চরণদ্বীপ পাঠান পাড়ায় মাশফির নানার বাড়িতে মাশফিকে খুঁজতে যান জাফর হুজুর নিজেই।
যদিও হুজুরের কাছে মাশফির মা ও ভাইয়ের মোবাইল নম্বর ছিল। কিন্তু তিনি কাউকে ফোন না দিয়ে নিজেই ছুটে যান।
মাশফির নানাবাড়িতে কী কথা
জাফর হুজুর মাশফির নানাবাড়িতে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন শিশুটির ছোট মামা মাসুদ খানকে। ভাগনের নিখোঁজের কথা শুনে হুজুরের সঙ্গে তিনিও মাদ্রাসায় গিয়ে খোঁজা শুরু করেন।
এর মধ্যে মোবাইল ফোনে মাশফির বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদকে জানান মাসুদ। তিনি বিষয়টি শুনে মাদ্রাসার কাছাকাছি দুই বন্ধুকে মাদ্রাসায় পাঠান এবং নিজেও রওনা দেন।
যেভাবে মাদ্রাসায় পাওয়া গেল মরদেহ
তারা মাদ্রাসায় যখন এসে পৌঁছান, তখন সময় ৮টা ১৪ মিনিট।
মাশফির মামার ফোনে ওই সময়ে একটি কল আসায় সময় জানাতে পারেন তিনি। মূল ফটক দিয়ে মাদ্রাসায় ঢোকার সময় শুনতে পান কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে ‘পা দেখেছি’, ‘পা দেখেছি’।
এরপর মাদ্রাসার দোতলায় যান মাসুদ খান। সেখানে দুই ছাত্রের সঙ্গে রুস্তম হুজুর ও শাহাদাত হুজুরকে দেখতে পান। তখন হুজুরের হাতে ছিল লোহার রড।
সেই হুজুর জিনের সমস্যার কথা বলে সবাইকে আজান দিতে বললে দুই ছাত্র ও মাসুদ খান আজান দেয়া শুরু করেন।
পরে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ দিকে লেপ মোড়ানো অবস্থায় পা দেখতে পান দুই ছাত্র। লেপ উল্টে মাশফিকে দেখে চিৎকার দেয় তারা।
এর মধ্যে মাশফির ভাই ও আশপাশের আরও বেশ কয়েকজন যান মাদ্রাসায়।
এরপর মাসুদ মাশফিকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে গলা কাটা দেখতে পান। দ্বিতীয় তলায় অন্ধকার হওয়ায় শুরুতে মাশফির গলা কাটা খেয়াল করেননি তিনি।
এলো পুলিশ, মেলে না হুজুরের বর্ণনা
এর বেশ কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। জাফর হুজুর ও রুস্তম হুজুর পুলিশকে জানান, ঘটনার পর থেকে দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ আছে, তারাই ঘটনাটি ঘটাতে পারে।
কিন্তু পরে জানা যায়, ওই দুজন শিক্ষার্থীকে দেড় কিলোমিটার দূরের মাশফির বাড়িতে তাকে খোঁজার জন্যই পাঠিয়েছিলেন জাফর হুজুর। কিন্তু হুজুরের বর্ণনার সঙ্গে শিক্ষার্থীর বর্ণনায় কিছু অমিল খুঁজে পায় পুলিশ।
ওই মাদ্রাসার অপেক্ষাকৃত সিনিয়র চার শিক্ষার্থীর একজন ইদু আলম সাকিব। যে দুই শিক্ষার্থীকে মাশফির বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল, তাদের একজন এই সাকিব। তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
সাকিব জানায়, নামাজের পর জিয়ারত শেষে ছবক দেয়ার ৩ থেকে ৪ মিনিট পর মাশফি বাথরুমে যাওয়ার জন্য ছুটি নেয়। তখন ঘড়িতে সময় ভোর ৬টা ৩৫ মিনিট।
মাশফিকে রুম থেকে বের হয়ে মাদ্রাসার বারান্দা পর্যন্ত যেতে দেখেছে সে। তবে এ সময় মাশফি একাই ছিল, সঙ্গে আর কেউ ছিল না।
পরে খাবারের ছুটি দেয়া হলে কয়েকজন সহপাঠী সাকিবকে জানায়, মাশফি নেই। তখন বিষয়টি জাফর হুজুরকে জানায় সাকিব।
হুজুর তখন মাদ্রাসায় দুই তলায় ওঠার সিঁড়ির মুখে চেয়ারে বসে ধূমপান করছিলেন। এর মধ্যে আরও একাধিক ছাত্র বাথরুমে গিয়েছিল। সেখান থেকে এসে মাশফিকে না দেখার কথাও হুজুরকে বলেছিল তারা।
তখন হুজুর বিষয়টা নিয়ে কিছু বলেননি। খাবারের ছুটিতে মাশফিকে না পাওয়ার বিষয়টি জেনে সাকিব ও আবু তাহের নামের এক ছাত্রকে তার বাড়িতে খুঁজতে পাঠান হুজুর।
সাকিব মাশফির বাড়ি ও বাড়ির কাছাকাছি একটি স্কুলে খুঁজে ফের মাদ্রাসায় এসে জানতে পারে, শিশুটির লাশ পাওয়া গেছে। ততক্ষণে পুলিশও চলে এসেছে। এ সময় সে ভেতরে যেতে চাইলেও পুলিশ তাকে ভেতরে যেতে দেয়নি।
বাচ্চাকে জিনে ধরেছে বলে আজান
মাদ্রাসার পরিচালক সানাউল্লাহ ফারুকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরু থেকে শিক্ষকরা বলছিলেন কোনো বাচ্চাকে জিনে পেয়েছে- এ রকম । তারপর আজানও দেয়া হয়। পরে আমরা গিয়ে দেখি মাশফির লাশ পড়ে আছে।
‘আমাদের শিক্ষক আছেন তিনজন, এর মধ্যে দুজন হেফজ বিভাগের ও একজন অ্যাকাডেমির। অ্যাকাডেমির যে শিক্ষক, তিনি কেবল হেফজখানায় অবস্থান করেন।’
মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় একটি বিছানা রয়েছে বলে জানান মাশফির ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার পরিচালক সানাউল্লাহ ফারুকী বলেন, ‘আমরা এটা বলতে পারছি না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা তদন্ত করছে। আশা করি ভালো একটা প্রতিবেদন দেবে।’
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে হয়তো হেফজখানায় কোনো বাচ্চাকে শাস্তি দিয়েছে। এ রকম অভিযোগ মাঝে মাঝে আসত। শিক্ষকদের যেভাবে শাসন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়, তারা সেভাবেই করতেন। কখনও বড় সমস্যা হয়নি। বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যৌন হেনস্থার কোনো অভিযোগ আমরা কখনও পাইনি।
‘অনেক আগে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ পাওয়ায় আমরা তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করেছি। বর্তমান তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ কখনই ছিল না।’
শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ম অনুযায়ী মারধর করার সুযোগ নেই, যদিও হেফজখানা ও মাদ্রাসাগুলোতে আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের মারধর করার প্রথা চলে আসছে। কিন্তু আমরা হুজুরদের কাউন্সেলিং করতাম। শিক্ষার্থীদের বলে-বুঝিয়ে পড়াতে হবে, মারধর করা যাবে না- এসব আমরা সব সময় শিক্ষকদের বোঝাতাম।’
মাশফির ভাইয়ের অভিযোগ মাদ্রাসায় শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হতো।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেখানে থাকে, সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজন হলে তারা ঝাড়ু দেয়া বা এই ধরনের কাজগুলো সাধারণত করত।’
তবে এসব কাজের জন্য মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
কথায় অনেক গরমিল: মাশফির ভাই
মাশফির বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই কখনও মাদ্রাসায় মারধরের কথা আমাদের বলেনি। তবে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে দুষ্টুমি করায় তাকে একটু মেরেছে বলে জানায় সহপাঠীরা। এ রকম একটা ঘটনা হবে কল্পনাও করিনি।’
সন্দেহের তালিকায় কারা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক তিনজন আর মাদ্রাসার বড় ছেলেরা। সবচেয়ে বেশি জাফর হুজুর। কারণ, উনিই দুই তলায় সিগারেট খেতে যেতেন। ওই জায়গাটাতে তিনি সিগারেট খেতেন। এখনও সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে সিঁড়ির নিচে।’
মাশফির মামা মাসুদ খান বলেন, ‘জাফর হুজুর বলছেন, সাতটার দিকে আমার ভাগনেকে টয়লেটে যেতে অনুমতি দিয়েছেন। আর সাড়ে সাতটায় মাদ্রাসা ছুটি দিয়েছেন। কিন্তু উনি সাড়ে সাতটায় ছিলেন আমাদের বাড়িতে। সময়ের একটা গরমিল হচ্ছে।
‘সব দিকে খুঁজেটুজে যখন আমি মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম, তখন ৭টা ৫৪ বাজে। পরে বাইর থেকে যখন আবার মাদ্রাসায় আসি, তখন ৮টা ১৪ মিনিট। ওই সময় আমি একজনকে কল দিয়েছিলাম।
‘আমরা কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছি না, কিন্তু তাদের একটা ঘাটতি আছে। ওরা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছে, কিন্তু সচল না৷
‘তারপর বাচ্চারা যে পড়াশোনা করতেছে, তাদের জন্য বাথরুম ভেতরে থাকা দরকার। এখন বাথরুম মাদ্রাসা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ গজ দূরে। হুজুর বলছে যে চারজন ছাড়া একটা ছাত্রকে বের হতে দেয় না, কিন্তু এখন বলছে মাশফি একা গেছে। মাশফি একা কেমনে যাবে? চারজন ছাড়া যে বের হতে দেয় না, এটা জাফর হুজুর বলেছেন, কমিটিও বলছে।’
গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে যারা
মাদ্রাসাছাত্র ইফতেখার মালিকুল মাশফিকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নামে মামলা করেছেন মামা মাসুদ খান। এ ঘটনায় তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে দুদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সব কোশ্চেনের জবাব জানান চেষ্টা করছি: তদন্ত কর্মকর্তা
মামলাটি তদন্ত করছেন বোয়ালখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে জাফর রিমান্ডে আছেন। আমরা তার কাছ থেকে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি না দেখছি।‘
জিজ্ঞাসাবাদে কী জানা গেল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটা তদন্তাধীন, তাই আমি এখন খোলাখুলি সেভাবে কিছু বলতে পারছি না। এতটুকু বলি যে আপনাদের যা যা কোয়েশ্চেন, সেসব কোয়েশ্চেনের উত্তর আমরাও বের করার চেষ্টা করছি। দ্রুতই সবকিছু বের হবে আশা করি।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
মন্তব্য