বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে বুধবার দুপুর ১টার দিকে তাকে আটক করা হয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজাহার আলী।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, এক সন্তানের জননী ওই গৃহবধূর স্বামী মুদি দোকানি। তার অনুপস্থিতিতে দুপুর বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই যুবক। এ সময় তার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এসে গৃহবধূকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তকে আটক করেন। পরে তাকে পুলিশে দেয়া হয়।
উপপরিদর্শক (এসআই) আজাহার আলী নিউজবাংলাকে জানান, গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, রোদের সাথে শুভ্র মেঘদলের নিত্য লুকোচুরি খেলা, সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক এক মসজিদ। সে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুক চিঁড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। এর অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়।
সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
চার তলা ভিতের ওপর দণ্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার।
মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট।
সৌন্দর্যে অপরূপ মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।
মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।
দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুমা এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে।
‘তারাবির জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামায়াতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ নেন।’
সাজেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক।
মসজিদ না থাকায় এত বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।
প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।
রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’
দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদে অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়।
‘প্রতিদিন এ মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কেবল পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন (২৩) ও একই গ্রামের বারেক হাজীর ছেলে বাশার (৩৫)।
স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঁনপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম মিয়া ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে চাঁনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সামসু মেম্বারের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বর ও তার সমর্থকরা এলাকাছাড়া ছিলেন। ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে আসেন তারা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এমনকি দুটি পক্ষই মারামারি ও গোলাগুলি করে।
একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা সালাম মিয়া ও তার সমর্থকদের এলাকাছাড়া করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সবশেষ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরতে চান। এতে বাধা দেন বিএনপি নেতা সামসু মেম্বার ও তার লোকজন।
পরে দেশীয় অস্ত্র, ট্যাঁটা, বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে একজন এবং ট্যাঁটা ও ছুরিকাঘাতের আরও একজনসহ দুইজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই সময় সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১০ জন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
আরও পড়ুন:বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকচাপায় দুজন নিহত ও অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলার শেরপুর-ধুনট সড়কের রনবীরবালা এলাকায় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর গ্রামের প্রয়াত কছিম উদ্দিনের ছেলে হারুন অর রশিদ (৫২) ও একই ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের প্রয়াত হাবিবুর রহমান প্রামাণিকের ছেলে হানিফ উদ্দিন (৩৫)।
আহত কয়েকজনের নাম জানা গেছে, যারা হলেন সুন্দরী, বসন্তী, সুর্বতি, চায়না, পবিত্র, স্বরসতী, সাগরিকা, সুনীল, মনন্তর, পয়ত্রি, মো. সাত্তার, বাসরি, বাশরি, ক্ষন্নষশি। তাদের সবাই খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাঝর এলাকার বাসিন্দা।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ট্রাকটি ধুনট থেকে শেরপুর যাওয়ার সময় রনবীরবালা বশীর পাগলা মাজারের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা হানিফ নামের একজনকে চাপা দিয়ে ২০০ গজ দূরে গিয়ে আবার আরেকটি যাত্রীবাহী ভটভটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ট্রাক ও ভটভটি উল্টে যায়। এতে পথচারী হানিফ ও ভটভটিযাত্রী হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আরও ২১ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ট্রাকে থাকা কাউকে আটক করা যায়নি। তবে ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন নামের এক কলেজছাত্রকে অপহরণ করেছিল একটি চক্র। তার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। তাদের চাওয়া মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পায়নি তার পরিবার।
এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুই অপহরণকারীকে বুধবার রাত তিনটার দিকে গ্রেপ্তার এবং মিলনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, দুজনকে গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত আরও একজনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জের মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মো. সেজান আলী (২৮), আরাজী পাইকপাড়া এলাকার মুরাদ(২৫) ও সালন্দর শাহী নগরের রত্না আক্তার ইভা (১৯)।
প্রাণ হারানো কলেজছাত্র মিলন হোসেন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁওয়ের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে।
পুলিশের ভাষ্য, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজছাত্র মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার সময় ভুক্তভোগীর পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা।
প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা চায়। পরের দিন দুপুরে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি পাঁচ লাখ দাবি করে। পরের দিন সেটি আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিন দিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সর্বশেষ ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র।
গত ৯ মার্চ রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেয় অপহৃত মিলনের বাবা পানজাব আলী। কিন্তু ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পায়নি পরিবারটি।
ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বুধবার রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ও তাদের দেখানো মতে আমরা স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে লাশ উদ্ধার করি। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা স্বীকার করেছে যে, মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেখানো মতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনগত পক্রিয়া শেষে আদালতে বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এর আগে আমরা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নিই, সেদিকে সতর্ক থাকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বিচারপ্রত্যাশী ছাত্র-জনতোকে ধৈর্য ধরে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে দোষীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহর। দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চয় নিহতের পরিবার, স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ জেলার বিভিন্ন মানুষ।
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজার নিরপরাধ মানুষদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মার্চ ফর প্যালেস্টাইন কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ছাত্র শোয়াইব হাসান কর্মসূচি সঞ্চালন করেন। এতে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বুকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে ইহুদিবাদী শক্তি। তারা আমেরিকার মদদ পেয়ে বারবার আইন লঙ্ঘন করে চুক্তি অমান্য করে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে।
‘আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে অনতিবিলম্বে এমন ন্যক্কারজনক হামলা বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বশক্তিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘জাস্টিস ফর প্যালেস্টাইন’, ‘নেতানিয়াহুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘নেতানিয়াহুর আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘অবৈধ ইসরায়েলের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনকে একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে অবৈধ ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী। তারা নির্বিচারে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের হত্যা করছে। আমরা এ-ও দেখতে পাচ্ছি, কীভাবে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিবাদীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, তোমরা যদি নিরপরাধ মানুষদের ওপর বর্বরোচিত হামলা বন্ধ না করো, তাহলে ২০০ কোটি মুসলমান তোমাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ছাত্র আলী জাকি শাহরিয়ার বলেন, ‘ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হাতে লাখো ফিলিস্তিনের রক্তের দাগ লেগে আছে। তাদের ইতিহাস বেইমানির ইতিহাস, তাদের ইতিহাস অবাধ্যতার ইতিহাস। তারা আল্লাহর সাথে বারবার বেইমানি, অবাধ্যতা করেছে।
‘জাতি হিসেবে তারা অকৃতজ্ঞ, অভিশপ্ত। অথচ তারা আজ সভ্যতার নীতিকথা শোনায়। এটা অত্যন্ত লজ্জার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মুসলমান। আমরা মরতে ভয় পাই না। আমাদের ইতিহাস সমৃদ্ধ ইতিহাস, ইহুদিবাদী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের মাটিতে আবারও আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুর রশিদ জিতু বলেন, ‘ফিলিস্তিনের নিরপরাধ জনগণ আজকে নিজ দেশে পরবাসীর মতো বসবাস করছেন। উদ্বাস্তু হয়ে বিশ্বের নানান প্রান্তে শরণার্থী শিবিরগুলোয় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা আজ নিজ ভূমি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন জায়নবাদী অপশক্তির কারণে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফসোস করে বলতে হয়, যারা সভ্যতার বুলি আওড়ায় তারা ফিলিস্তিনের বেলায় চুপ হয়ে যায়। আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যতদিন না ফিলিস্তিনের ওপর হামলা বন্ধ হবে, ততদিন প্রতিবাদ চলমান থাকবে।’
আরও পড়ুন:ঈদ আসন্ন। শেকড়ের টানে ঘরে ফেরা শুরু করছে মানুষ। বরাবরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ট্রেন। যাত্রীসেবা, অনলাইন টিকিট, নিরাপত্তা ও সময় বাঁচানোসহ নানা দিক বিবেচনায় রেলপথকে বেছে নিচ্ছে যাত্রীরা। ঈদযাত্রা উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কাটতে অনলাইনে ব্যাপক সক্রিয় হয়েছেন তারা। ৩৫ হাজার ৯১৩টি টিকিটের জন্য ১৭ মার্চ রেলওয়ে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ভিজিটর হিট করেছে প্রায় আড়াইকোটি বার। এখন পর্যন্ত কোন টিকিট অবিক্রিত নেই।
এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উৎসবমুখর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকার প্রধান দু’টি রেলওয়ে স্টেশন, গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের সকল আন্তঃনগর স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদযাত্রায় রেলওয়ে স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে। এছাড়া, যাত্রীদের জন্য কমলাপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে মেডিকেল টিম থাকবে।
টিকিট কালোবাজারি, ছাদে ও বিনা টিকিটে ভ্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানান রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। বেসরকারি ট্রেনের মালিকরা যেন অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কেউ লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে প্লাটফর্মে ঢুকে অন্য ট্রেনে যেন উঠতে না পারে সে সুযোগও বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদযাত্রার বিশেষ দিনের আগেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসছেন অনেক ঘরমুখো মানুষ। যারা চাকরি করছেন তাদের অনেকের পরিবারকে আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে দেখা গেছে। তারা স্টেশনের গেটগুলোতে সারিবদ্ধভাবে প্লাটর্ফমে প্রবেশ করছেন। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। বাহির পথেও যাত্রীরা নিরাপদে বের হচ্ছেন। টিকিটবিহীন যাত্রীদের জরিমানা করতে দেখা গেছে।
রেলওয়ে বিভাগ থেকে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় রেলসেবাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দু’টি রেলওয়ে অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সকাল ৮টায় ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য দুপুর ২টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এই দু’সময়ে রেলওয়ে ওয়েবসাইট ও অ্যাপে ব্যাপক ট্রাফিক হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে ও অনলাইনে টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সহজ.কম। তবে এবার ব্যাপক ট্রাফিকেও সার্ভার ডাউনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
ট্রেনের টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের সিইও সঞ্জীব দেবনাথ বাসসকে জানান, এবারের অনলাইন সেবা অনেক আরামদায়ক হয়েছে। টিকিট কাটতে কোন ধরনের সার্ভার জটিলতায় পড়তে হয়নি। এক সেকেন্ডের জন্যও সার্ভার বন্ধ হয়নি। একসাথে কতজন টিকিট কাটার চেষ্টা করছে তা গ্রাহক দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া গ্রাহকের নির্দিষ্ট স্টেশনে টিকিট শেষ হয়ে গেলে তাকে আগে ও পরের স্টেশনের সাজেসন দেওয়া হয়। যা যাত্রীদের জন্য অনেক আরামদায়ক হয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় ১৪ মার্চ থেকে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য দুপুর দুটায় ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সকাল আটটায় দশদিন পরের টিকেট বিক্রি করা হয়। এবারের ঈদে সারাদেশে চলাচলকারী ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের বাইরেও পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। এছাড়া লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনগুলো তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচল করবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগীয় কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান ৪৯০ জন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বাইরে অতিরিক্ত ২০০জন আনসার সদস্য যুক্ত হবেন। বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধ করতে আমরা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবো। ইতোমধ্যে আমরা প্রবেশ ও বাহিরের জন্য আলাদা গেইট তৈরি করেছি। এতে করে বিনা টিকিটে কেউই ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর প্রবেশ ঠেকানো গেলে বগিতে অতিরিক্ত যাত্রী ও ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করতে সক্ষম হবো।
কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবে রেলওয়ে পুলিশ। এ বিষয়ে রেলওয়ে ঢাকা পুলিশের পলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বাসকে বলেন, ‘কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীদের আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবো। স্টেশনের প্রবেশপথে আমাদের পোশাকধারী পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যরা থাকবেন।
সাথে সাদা পোশাকে আমাদের সদস্যরা থাকবেন, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে। একই সেবা ঢাকা বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনেও থাকবে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন বাসসকে বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে স্টেশনে ইতোমধ্যে যাত্রীর আনাগোনা বেড়েছে। টিকিট করে প্লাটফর্মে ঢোকানো ও বের করা হচ্ছে। এবারের ঈদ যাত্রায় প্রত্যেক রুটে ট্রেনগুলো শিডিউল মেনে চলবে। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে রেলওয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করছে। নিরাপদ ভ্রমণকে অনিরাপদ করে তোলে ছাদে ওঠা যাত্রীরা। এবার যেন ছাদে ও বিনা টিকিটে কেউ ভ্রমণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে আমরা কঠোর হবো। বিশেষ করে কমলাপুর, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর স্টেশনে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সেটি বাস্তবায়ন করবেন।’
আরও পড়ুন:আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু ‘যমুনা রেলসেতু’।
এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যমুনার বুকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। একই সঙ্গে দুই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো।
যমুনা রেলসেতুর পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও জাইকার সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল ইতো তেরুকি।
এর আগে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান।
তিনি জানান, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর আপ ও ডাউন দুটি লেন দিয়ে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ সব ট্রেন পূর্ণমাত্রায় চলাচল করবে।
প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু ১৯৯৮ সালে চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগও স্থাপিত হয়। চালু হওয়ার প্রায় ১০ বছর পর ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছিল।
বিশাল এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। এ রেলসেতুর প্রথম পিলার নির্মাণে ২০২১ সালের মার্চে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
দেশের দীর্ঘতম এ রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের প্রথম নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে দেশি উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
দেশের সর্ববৃহৎ এ রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার। জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশাল এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের ৭ হাজারেরও বেশি কর্মীর ৪ বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
সেতুটিতে ৫০টি পিলার, প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার হলেও দুই দিকে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন পারাপারের মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তম এই রেলসেতু দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ওই দিন সাধারণ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ৬ মিনিটে ট্রেন সেতু পার হলেও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে উভয় লেনে ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে।
যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। এর ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগের রেলসেতুতে লোডের সীমাবদ্ধতা ছিল। ৪৩ দশমিক ৭ কিলো নিউটন পার মিটারের কম লোডের ট্রেন চলতে পারত। সে ক্ষেত্রে শুধু মিটারগেজ ট্রেনে পণ্য সরবরাহ করা যেত।
‘আমাদের এ অঞ্চলের ব্রডগেজের চাহিদা বেশি। ইন্ডিয়া থেকে প্রচুর মালামাল আমদানি করা হয়। রেল যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়ীরা সমুদ্রপথে মালামাল আমদানি না করে রেলপথেই করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, সেতুটি দিয়ে এখন সব ধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচলও করতে পারবে নির্বিঘ্নে। তবে ডাবল ইস্ট্র্যাক যাকে বলা হয়, অর্থ্যাৎ দুই ট্রেন একই সঙ্গে চলতে পারবে না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য