দেশের নতুন উপজেলা হিসেবে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, মাদারীপুরের ডাসার ও সুনামগঞ্জের মধ্যনগরকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে সোমবার এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
থানা থেকে উপজেলা হওয়া এসব এলাকার বাসিন্দারা এ খবরে উচ্ছ্বসিত। উপজেলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দ মিছিলের পাশাপাশি বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টি।
ঈদগাঁও উপজেলা: কক্সবাজার সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, পোকখালি ও জালালাবাদকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ঈদগাঁও উপজেলা।
ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান বলেন, ‘ঈদগাঁওকে উপজেলা করতে বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিমের অবদান কখনও ভুলবার নয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিয়মিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগের জন্য ঈদগাঁওবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবে।’
স্থানীয় সরকার সচিব হেলাল উদ্দীন আহমদের ভূমিকাকে অবিস্মরণীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনাব হেলাল উদ্দীন না থাকলে ঈদগাঁওবাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেত। তার কৃতিত্বের কারণেই ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা।’
উপজেলা ঘোষণার পর খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন ঈদগাঁওয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। প্রকাশ করেন উচ্ছ্বাস।
ঈদগাঁও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বদিউল আলম আকাশ বলেন, ‘জন্মের পর থেকে শুনছি, ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তর হবে। শুনতে শুনতে মাঝেমধ্যে আমরাই বিরক্ত হতাম।
‘অনেকে উপহাস করত বিভিন্নভাবে। কিন্তু তা সত্যি হলো। অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এর আগে থানা পেয়েছি, এখন উপজেলা। এর পেছনে যারা কাজ করেছেন, তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’
পোকখালী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শওকত ওসমান বলেন, ‘আগে কোনো প্রয়োজনে রামু উপজেলা পেরিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলায় যেতে হতো।
‘এখন ঈদগাঁও উপজেলা হওয়ায় আগের চেয়ে সময়ও বাঁচবে, সুযোগসুবিধাও বেশি পাব।’
ইসলামাবাদ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজ বজলুর রহমান বলেন, ‘ঈদগাঁও একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখানে প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। এ মানুষগুলো অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।
‘একটি সরকারি স্কুল-কলেজ নেই। নেই ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখন উপজেলা হওয়াতে এসব সুবিধা পাব। খুবই ভালো লাগছে, অনেক পরে হলেও দীর্ঘদিনের যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন হয়েছে।’
ডাসার উপজেলা: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানাকে উপজেলা ঘোষণা করায় আনন্দ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার সিদ্ধান্ত আসার পর এলাকায় আনন্দ মিছিল করেন ডাসার থানা আওয়ামী লীগ, ডাসার উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয়রা।
কাজী বাকাই এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘এতদিন পর আমরা দ্বিমুখী প্রশাসনিক জাঁতাকল থেকে রক্ষা পেলাম। এখন থেকে আমরা থানা নয়, উপজেলার বাসিন্দা।’
বালিগ্রাম ইউনিয়নের শফিক আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা ঘোষণার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করবেন।’
ডাসার উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা সাংবাদিক বেলাল রিজভী বলেন, ‘ডাসার উপজেলা ঘোষণার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন এটি।
‘আশা করি, উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া মাদারীপুরে আরও একটি উপজেলা বৃদ্ধি পাওয়ার জেলার গ্রেডও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
ডাসার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ডাসারবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, এ থানাকে উপজেলা ঘোষণা করা। দাবি পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
এক বিবৃতিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ‘নিকার সভায় প্রধানমন্ত্রী ডাসার থানাকে উপজেলা হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। এ ছাড়া মাদারীপুর জেলাকে ‘সি’ গ্রেড থেকে ‘বি’ গ্রেডের মর্যাদা দিয়েছেন। দুটি বিষয়ই আমার স্বপ্ন ছিল। তিনি আমাদের দীর্ঘদিনের এই কর্ম ও প্রচেষ্টাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’
‘বর্ষসেরা দুটি উপহার দেয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।’
২০১৩ সালে কালকিনি উপজেলার ডাসার, কাজী বাকাই, বালিগ্রাম, নবগ্রাম ও গোপালপুর ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার থানা ঘোষণা করা হয়। এর আগে থেকেই একে উপজেলা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।
মধ্যনগর উপজেলা: হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের ১২তম উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ধর্মপাশার অধীনে থাকা মধ্যনগর থানাকে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৪ সালে মধ্যনগর, চামরদানী, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ও বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন নিয়ে মধ্যনগর থানা গঠিত হয়। থানা হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম ও চিকিৎসার জন্য ধর্মপাশা উপজেলায় যেতে হতো স্থানীয়দের।
২২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যনগর থানার লোকসংখ্যা দুই লাখের বেশি। এ থানার উত্তর সীমানার সঙ্গে ধর্মপাশা উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এতে সাধারণ মানুষ নানা অসুবিধায় পড়তেন।
১৯৮২ সালে মধ্যনগর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করাতে সাইট সিলেকশন কমিটি করা হলেও বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি।
মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘মধ্যনগর থানাকে উপজেলা করার দাবি আমাদের অনেক দিনের। আজকে আমাদের খুশির দিন। মধ্যনগর থানা থাকাকালীন অবস্থায় আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।
‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কাজ শুরু করা।’
থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনুজ কান্তি দে বলেন, ‘আমরার মধ্যনগরবাসী অনেক খুশি হইছি। আমরার আনন্দ মিছিল করছি। মিষ্টি বাটছি, এই খুশির খবরে।
‘অনেক দিনের স্বপ্ন আছিল আমরার মধ্যনগর উপজেলা করার। আজকে এই স্বপ্ন বাস্তব হইছে। এখন উপজেলার কার্যক্রম ও কাঠামো বানানির লাগি যেন দ্রুততার সাথে কাজ করা হয়, ওইটাই চাইমু।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘মধ্যনগর উপজেলা উপহার দেয়ায় আমার মধ্যনগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। দাবিটি অনেক দিনের ছিল।
‘আমি নিজেও মধ্যনগরকে উপজেলা করার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। আমাদের আনন্দের দিন এটি।’
শান্তিগঞ্জ নামে খুশি দক্ষিণ সুনামগঞ্জবাসী: নিকার সভায় তিন থানাকে উপজেলা করার পাশাপাশি সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ করার সিদ্ধান্তে খুশি এলাকাবাসী।
তারা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। তবে বিভিন্ন সময় দালিলিক ও প্রশাসনিক কাগজে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় বিভ্রান্তি ও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ করার দাবি জানানো হয়।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নাম পরিবর্তন হইয়া শান্তিগঞ্জ করায় খুশি হইছি অনেক। আমরার কাগজে অনেক সমস্যা অইত। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জাগাত দক্ষিণ সুরমা আইত্ত। তাই আমরা সবাই শান্তিগঞ্জ নাম চাচ্ছিলাম।’
তিনি জানান, শান্তিগঞ্জ নামটি একটি বাজারকে ঘিরে গড়ে ওঠে। যুদ্ধের অনেক পরে এখানে কয়েকটি ঘরবাড়ি নিয়ে একটি বাজার গড়ে ওঠে। সেই বাজারের নাম ছিল শান্তিগঞ্জ বাজার, পরে এটি শান্তিগঞ্জ গ্রাম হয়ে যায়।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ বলেন, ‘শান্তিগঞ্জ নামকরণ হওয়ায় ভালো হয়েছে সবার। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নামটি আমাদের জন্য সমস্যা হতো। বিভিন্ন কাজে নামটি বিভ্রান্তিতে ফেলে দিত। কাগজপত্রে ভুল হওয়ায় টাকা ও সময় দুটাই যাইত।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নাম শান্তিগঞ্জ হওয়ায় অনেক ভালো হয়েছে উপজেলাবাসীদের জন্য৷ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুতই এর বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিউজবাংলার কক্সবাজার প্রতিনিধি সাকিবুর রহমান ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মোসাইদ আহমেদ রাহাত।
আরও পড়ুন:শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য