দেশের নতুন উপজেলা হিসেবে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, মাদারীপুরের ডাসার ও সুনামগঞ্জের মধ্যনগরকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে সোমবার এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
থানা থেকে উপজেলা হওয়া এসব এলাকার বাসিন্দারা এ খবরে উচ্ছ্বসিত। উপজেলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দ মিছিলের পাশাপাশি বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টি।
ঈদগাঁও উপজেলা: কক্সবাজার সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, পোকখালি ও জালালাবাদকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ঈদগাঁও উপজেলা।
ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান বলেন, ‘ঈদগাঁওকে উপজেলা করতে বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিমের অবদান কখনও ভুলবার নয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিয়মিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগের জন্য ঈদগাঁওবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবে।’
স্থানীয় সরকার সচিব হেলাল উদ্দীন আহমদের ভূমিকাকে অবিস্মরণীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনাব হেলাল উদ্দীন না থাকলে ঈদগাঁওবাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেত। তার কৃতিত্বের কারণেই ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা।’
উপজেলা ঘোষণার পর খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন ঈদগাঁওয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। প্রকাশ করেন উচ্ছ্বাস।
ঈদগাঁও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বদিউল আলম আকাশ বলেন, ‘জন্মের পর থেকে শুনছি, ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তর হবে। শুনতে শুনতে মাঝেমধ্যে আমরাই বিরক্ত হতাম।
‘অনেকে উপহাস করত বিভিন্নভাবে। কিন্তু তা সত্যি হলো। অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এর আগে থানা পেয়েছি, এখন উপজেলা। এর পেছনে যারা কাজ করেছেন, তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’
পোকখালী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শওকত ওসমান বলেন, ‘আগে কোনো প্রয়োজনে রামু উপজেলা পেরিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলায় যেতে হতো।
‘এখন ঈদগাঁও উপজেলা হওয়ায় আগের চেয়ে সময়ও বাঁচবে, সুযোগসুবিধাও বেশি পাব।’
ইসলামাবাদ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজ বজলুর রহমান বলেন, ‘ঈদগাঁও একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখানে প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। এ মানুষগুলো অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।
‘একটি সরকারি স্কুল-কলেজ নেই। নেই ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখন উপজেলা হওয়াতে এসব সুবিধা পাব। খুবই ভালো লাগছে, অনেক পরে হলেও দীর্ঘদিনের যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন হয়েছে।’
ডাসার উপজেলা: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানাকে উপজেলা ঘোষণা করায় আনন্দ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার সিদ্ধান্ত আসার পর এলাকায় আনন্দ মিছিল করেন ডাসার থানা আওয়ামী লীগ, ডাসার উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয়রা।
কাজী বাকাই এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘এতদিন পর আমরা দ্বিমুখী প্রশাসনিক জাঁতাকল থেকে রক্ষা পেলাম। এখন থেকে আমরা থানা নয়, উপজেলার বাসিন্দা।’
বালিগ্রাম ইউনিয়নের শফিক আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা ঘোষণার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করবেন।’
ডাসার উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা সাংবাদিক বেলাল রিজভী বলেন, ‘ডাসার উপজেলা ঘোষণার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন এটি।
‘আশা করি, উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া মাদারীপুরে আরও একটি উপজেলা বৃদ্ধি পাওয়ার জেলার গ্রেডও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
ডাসার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ডাসারবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, এ থানাকে উপজেলা ঘোষণা করা। দাবি পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
এক বিবৃতিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ‘নিকার সভায় প্রধানমন্ত্রী ডাসার থানাকে উপজেলা হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। এ ছাড়া মাদারীপুর জেলাকে ‘সি’ গ্রেড থেকে ‘বি’ গ্রেডের মর্যাদা দিয়েছেন। দুটি বিষয়ই আমার স্বপ্ন ছিল। তিনি আমাদের দীর্ঘদিনের এই কর্ম ও প্রচেষ্টাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’
‘বর্ষসেরা দুটি উপহার দেয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।’
২০১৩ সালে কালকিনি উপজেলার ডাসার, কাজী বাকাই, বালিগ্রাম, নবগ্রাম ও গোপালপুর ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার থানা ঘোষণা করা হয়। এর আগে থেকেই একে উপজেলা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।
মধ্যনগর উপজেলা: হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের ১২তম উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ধর্মপাশার অধীনে থাকা মধ্যনগর থানাকে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৪ সালে মধ্যনগর, চামরদানী, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ও বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন নিয়ে মধ্যনগর থানা গঠিত হয়। থানা হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম ও চিকিৎসার জন্য ধর্মপাশা উপজেলায় যেতে হতো স্থানীয়দের।
২২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যনগর থানার লোকসংখ্যা দুই লাখের বেশি। এ থানার উত্তর সীমানার সঙ্গে ধর্মপাশা উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এতে সাধারণ মানুষ নানা অসুবিধায় পড়তেন।
১৯৮২ সালে মধ্যনগর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করাতে সাইট সিলেকশন কমিটি করা হলেও বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি।
মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘মধ্যনগর থানাকে উপজেলা করার দাবি আমাদের অনেক দিনের। আজকে আমাদের খুশির দিন। মধ্যনগর থানা থাকাকালীন অবস্থায় আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।
‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কাজ শুরু করা।’
থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনুজ কান্তি দে বলেন, ‘আমরার মধ্যনগরবাসী অনেক খুশি হইছি। আমরার আনন্দ মিছিল করছি। মিষ্টি বাটছি, এই খুশির খবরে।
‘অনেক দিনের স্বপ্ন আছিল আমরার মধ্যনগর উপজেলা করার। আজকে এই স্বপ্ন বাস্তব হইছে। এখন উপজেলার কার্যক্রম ও কাঠামো বানানির লাগি যেন দ্রুততার সাথে কাজ করা হয়, ওইটাই চাইমু।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘মধ্যনগর উপজেলা উপহার দেয়ায় আমার মধ্যনগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। দাবিটি অনেক দিনের ছিল।
‘আমি নিজেও মধ্যনগরকে উপজেলা করার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। আমাদের আনন্দের দিন এটি।’
শান্তিগঞ্জ নামে খুশি দক্ষিণ সুনামগঞ্জবাসী: নিকার সভায় তিন থানাকে উপজেলা করার পাশাপাশি সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ করার সিদ্ধান্তে খুশি এলাকাবাসী।
তারা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। তবে বিভিন্ন সময় দালিলিক ও প্রশাসনিক কাগজে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় বিভ্রান্তি ও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ করার দাবি জানানো হয়।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নাম পরিবর্তন হইয়া শান্তিগঞ্জ করায় খুশি হইছি অনেক। আমরার কাগজে অনেক সমস্যা অইত। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জাগাত দক্ষিণ সুরমা আইত্ত। তাই আমরা সবাই শান্তিগঞ্জ নাম চাচ্ছিলাম।’
তিনি জানান, শান্তিগঞ্জ নামটি একটি বাজারকে ঘিরে গড়ে ওঠে। যুদ্ধের অনেক পরে এখানে কয়েকটি ঘরবাড়ি নিয়ে একটি বাজার গড়ে ওঠে। সেই বাজারের নাম ছিল শান্তিগঞ্জ বাজার, পরে এটি শান্তিগঞ্জ গ্রাম হয়ে যায়।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ বলেন, ‘শান্তিগঞ্জ নামকরণ হওয়ায় ভালো হয়েছে সবার। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নামটি আমাদের জন্য সমস্যা হতো। বিভিন্ন কাজে নামটি বিভ্রান্তিতে ফেলে দিত। কাগজপত্রে ভুল হওয়ায় টাকা ও সময় দুটাই যাইত।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নাম শান্তিগঞ্জ হওয়ায় অনেক ভালো হয়েছে উপজেলাবাসীদের জন্য৷ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুতই এর বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিউজবাংলার কক্সবাজার প্রতিনিধি সাকিবুর রহমান ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মোসাইদ আহমেদ রাহাত।
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জ সদরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর থানার ওসিসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১০ সদস্য রয়েছেন।
সোমবার সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফল বাতিলের দাবিতে পরাজিত তিন প্রার্থীর (মেম্বার) সমর্থকেরা নির্বাচনী মালামাল (ইভিএম) আটকে দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ওসির গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরমানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষকালে সদর থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১০ সদস্যসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে তিনজন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- সদর থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ, এসআই নাজমুল আলম, এএসআই আসাদুজ্জামান, কনস্টেবল রোকন মিয়া, মুস্তাফিজুর রহমান ও পারভেজ; ২৩ আনসার ব্যাটেলিয়ানের সহকারী প্লাটুন কমান্ডার মো. হায়দার আলী, আনসার সদস্য সবুজ বালা, শাওন বিশ্বাস, লক্ষ্মী বিশ্বাস ও এসিল্যান্ডের ড্রাইভার ইব্রাহিম শরীফ।
এছাড়া পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন কালাম শেখ, ইয়াসিন শেখ ও সম্রাট মোল্লা। গ্রেপ্তার এড়াতে আহত অন্যরা শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সদর থানার ওসি জাবেদ মাসুদ রাতে জানান, এলাকার পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় খাইরুল কাজী ও কালাম শেখ নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বিকাশ এজেন্টের ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এক নামধারী সাংবাদিকসহ চার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রুহুল আমিন, সহযোগী প্রসেনজিৎ রায়, খাদেমুল ইসলাম এবং মোন্নাফ আলীসহ চার ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে খাদেমুল ইসলাম লাল দৈনিক চৌকশ নামে একটি পত্রিকার প্রতিনিধি এবং নাগেশ্বরী রিপোর্টার্স ক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক।
তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেল, ৩টি মোবাইল ও ছিনতাই করা টাকার মধ্যে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার বিকাশ এজেন্ট জনতা ট্রেডার্স কর্মী শুভ কুমার রায় ও বিদ্যুৎচন্দ্র বর্মণ ভূরুঙ্গামারী ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা তুলে মোটরসাইকেলে চড়ে কচাকাটা যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লক্ষিমোড়ে ছিনতাইকারীরা তাদের থামিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশে খবর দেয়া হলে ভূরুঙ্গামারী ও কচাকাটা থানা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) পরবর্তী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
১২৫ তম একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় রোববার সকাল ১১টার দিকে গুচ্ছে না যেতে মত দেন সদস্যরা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হাসান ভূঁইয়া এবং বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের ডীন, শিক্ষকসহ অন্তত ১৬০ জন।
এদিন সভায় একমাত্র এজেন্ডা ছিল গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ইবি অংশ নিবে কি না বিষয়টি চূড়ান্তকরণ। সভায় উপস্থিত সব শিক্ষক গুচ্ছের ভোগান্তি, সমস্যাগুলো তুলে ধরে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। উপাচার্য বরাবর লিখিত দাবিও জানানো হয়েছিল। রোববারের সভায় ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সমন্বয়হীনতা ও উচ্চশিক্ষার বৈষম্য ইত্যাদি কারণে গুচ্ছে থাকার বিপক্ষে মত দেন শিক্ষকরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস শুরু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে মিটিং ডেকে এটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম শুরু করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা সবাই গুচ্ছের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। যেহেতু ভর্তি কার্যক্রম তারাই পরিচালনা করবেন তাই তাদের মত গ্রহণযোগ্যতা পাবে। সোমবার এ বিষয়ে ঢাকায় ইউজিসির সাধারণ সভা রয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’
আরও পড়ুন:খুলনা নগরের টুটপাড়া এলাকা থেকে রোববার ভোর চারটার দিকে দুই ভাই বাড়ি থেকে বের হন। খুলনার রয়েল মোড় থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসে ওঠেন। ছোট ভাই মো. ইশরাকুজ্জামান গোপালগঞ্জে নেমে যান গাড়ি থেকে। তবে গাড়িতে ছিলেন বড় ভাই মো. আশফাকুজ্জামান লিংকন। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকার পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে বাস খাদে পড়ে তিনি নিহত হন।
দুই জনের মধ্য ছোট ভাই মো. ইশরাকুজ্জামান একটি বেসরকারি ব্যাংকের রাজবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। নিহত ৪৫ বছর বয়সী আশফাকুজ্জামান লিংকন ছিলেন ঠিকাদার। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের মতন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে ছোট ভাইকে।
তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা খুলনা নগরের টুটপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় আশফাকুজ্জামান। ছোট ভাই ও বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তিনি বিয়ে করেননি।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশফাকুজ্জামানের মামারা নিশ্চিত হন সড়ক দুর্ঘটনায় আশফাকুজ্জামান নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশফাকুজ্জামানের বাবা শাজাহান মোল্লাকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টুটপাড়ার নজরুল ইসলাম সড়কে আশফাকুজ্জামানদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় খাটিয়া প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। গোসল করানোর জায়গাও প্রস্তুত। বাড়ির সামনের গলির মুখে মানুষের জটলা। তবে কেউ বাড়ির দিকে যাচ্ছেন না। এর কারণ জানা গেল তাদের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
আশফাকুজ্জামানের মেজো মামা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মরদেহ নিয়ে রোববার বিকেল ৩টার দিকে খুলনার উদ্দেশে বের হয় আশফাকুজ্জামানের ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান। এশার নামাজের পর জানাজা শেষে টুটপাড়া কবরস্থানে আশফাকুজ্জামানকে দাফন করা হয়।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে এগারোসিন্দুর গোধূলি নামের ট্রেনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
জেলার কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী এলাকায় রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও ট্রেনের গার্ড ব্রেকেও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেনসহ তিন থেকে চার যাত্রী আহত হয়েছেন।
ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেন রোববার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে এ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আজ এগারোসিন্দুর গোধূলি (৭৪৯) কাজ করছি। সরারচর-মানিকখালী সেকশনে যে মেলা হয়, সেখানে স্টপেজের কোনো কন্ট্রোল অর্ডার নেই কিংবা কোনো স্টেশনের মাস্টার ইনফর্ম করেননি। সেকশনে কেন মেলা স্থানে দাঁড়াইলাম না, সে জন্য মানিকখালী স্টেশনে বৃষ্টির মতো পাথর মেরেছে একদল বে… পোলাপান, এলএম মো. মহসিন আলী ভাইয়ের কিছু হয়নি, কিন্তু আমার হাত কেটে গেছে। নিজেদের জীবন পাথর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি, তাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
‘লোকোমোটিভের এল/এস উইন্ডো গ্লাস সম্পূর্ণরূপে, আর/এস লুকিং গ্লাস সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলা শুধু লোকোমোটিভেই করে ক্ষান্ত হয়নি, আমির হোসেন ভাইয়ের গার্ড ব্রেকে তদ্রূপ হামলা চালিয়েছে।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেন বলেন, ‘রোববার রাতে মানিকখালী স্টেশনের খানিকটা আগে মণ্ডলভোগ নামে একটি এলাকায় একটি মেলায় যাওয়ার জন্য ভৈরব ও কুলিয়ারচর স্টেশন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী ওঠে। তাদের দাবি ছিল মণ্ডলভোগ এলাকায় ট্রেন থামানোর, কিন্তু স্টেশন থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় ট্রেন থামে মানিকখালী স্টেশনে।
‘ট্রেন থামার পরেই কিছু লোক নেমে যায় আর বাকিরা ট্রেনের চালকের রুমে এসে ভাঙচুর চালায়। আর ট্রেনের নিচে থাকা লোকজন বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকেন। কোনো রকমে আমরা রক্ষা পাই। ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছেন, তবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।’
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.কে.এম আমিনুল হক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ইউসুফ জানান, চিকিৎসার কাজে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ট্রেনে হামলার বিষয়টি শুনেছেন।
এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো উৎসুক জনতা হামলা করেছে। আমরা তো ওইভাবে কাউকে চিনিও না, জানিও না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:আশা ছিল বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। বাড়িতে বড় দালান বানিয়ে পরিবারকে সুখে রাখবেন। কিন্তু সেই আশা অধরাই থেকে গেল মাসুদ খানের।
পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার রোববার সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনায় নিহত হন মাসুদ।
গোপালগঞ্জের আদমপুর গ্রামের আমজেদ আলী খানের মাস্টার্স পাস করা ছেলে ২৭ বছর বয়সী মাসুদ খান। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন বিভাগের মাস্টার্স পাস করেন।
নিহত মাসুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দিন আগে ঢাকা থেকে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসেন মাসুদ। রোববার খুব ভোরে ইমাদ পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকা আর যাওয়া হলো না। বাস খাদে পড়ে সমাধি হলো একজন স্বপ্নবাজ তরুণের।
মরদেহ নিতে এসে মাসুদের বড় ভাই শফিক খান বারবার ভাইয়ের জন্য মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কোনোভাবেই ভাইয়ের এমন করুণ মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন শফিক খান।
মাসুদ খানের ভাই শফিক খান বলেন, ‘কথা ছিল বড় চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিবে মাসুদ। মাস্টার্স পাস করে ঢাকাতেই ছোটখাটো কম্পিউটারের কাজ করত। যা ইনকাম করতো তা দিয়ে নিজে চলে বাড়িতেও টাকা-পয়সা পাঠাত। আর মাঝে মাঝে বড় চাকরিতে যোগ দিতে পরীক্ষা দিত। অল্প দিনের মধ্যেই চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই চাকরি আর করা হলো না। কীভাবে এই শোক মেনে নিব। আমার প্রাণের ছোট ভাইকে আর পাব না, এটা মানতে পারছি না।’
মাসুদের বন্ধু শাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা একই গ্রামে ছোট থেকে বড় হয়েছি। মাসুদ আমার চেয়েও অনেক মেধাবী ছিল। সে মুকসেদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে দর্শন বিভাগের অর্নাস ও মাস্টার্স শেষ করে। আমাকে মাঝে মাঝেই বলতো, বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেই চাকুরি আর তার করা হলো না। তার জন্য বুকটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, রোববার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তের জন্যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে রোববার সকালে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী খাদে পড়ে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশ।
হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস রোববার রাত ২টার দিকে মামলাটি করেন, যাতে আসামি করা হয় বাসমালিককে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাইম মোফাজ্জেল জানান, ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হোসেনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বেপরোয়া গতি ও এর ফিটনেসের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করা হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় চালক ও হেলপার নিহত হওয়ায় তাদের নামে মামলা করা হয়নি। সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস মামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা থেকে যাত্রী বোঝাই করে ইমাদ পরিবহনের বাসটি রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এটি পদ্মা সেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় এলে সামনের চাকা ফেটে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি নিচে পড়ে যায়।
ওই সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য