হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বিনামূল্যের ঘর ফিরিয়ে আবার গৃহহীন হওয়ার ঘটনার পর প্রকল্পের ঘর পরিদর্শন করে মানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে নলকূপ স্থাপনে বিলম্ব হয়েছে। যদিও এখন সে কাজ শুরু হয়েছে।
ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সেখানে ঘর নির্মাণ হয়েছে মোট ৭৪টি। কিন্তু ১৮টি পরিবার সেখানে থাকবে না বলে জানিয়েছে। আর বাকিগুলোও সেখানে আছে এমন নয়।
আটটি ঘর ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানোর পর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে জানা গেছে, আটজন নন, ঘর ফিরিয়ে দিতে চান মোট ১৮ জন।
এই মানুষগুলোর নিজেদের কোনো ঘর ছিল না। থাকতেন পরের ঘরে, তাও ভাঙাচোরা, কোথাও কোথাও ঝুপড়িঘর।
দুই ধাপে দেশে এক লাখের বেশি ঘর বরাদ্দ দেয়া নিযে উচ্ছ্বাস ছিল মানুষের মধ্যে। তবে গত কয়েক দিনে বেশ কিছু ঘরে ফাটল, কোথাও কোথাও প্রায় ধসে পড়ার দশা, কোথাও পানি পড়া, কোথাও দরজা-জানলার দুর্বল অবস্থার খবর এসেছে। আর অনিয়মের অভিযোগ খুঁজে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঁচটি দল গঠন করে জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে হবিগঞ্জের এই খবরটি স্বাভাবিকভাবেই তোলপাড় তৈরি করে। তবে সেখানে ঘরে সমস্যা না থাকলেও তাহলে কেন তারা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকতে চাইছেন না- এই প্রশ্নটিও এখন বড় হয়েছে।
যারা ঘর ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাদের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাদের কারও নাম-ঠিকানা বা ফোন নম্বর দেয়া হয়নি।
তবে যারা সেখানে আছেন, তারা বলছেন দূরত্বের কথা। প্রকল্পটি এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে মূল সড়কে যেতে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর এই পথটি হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, যে কাঁচা সড়ক আছে, সেটি দুই হাতের মতো। একটি রিকশা কোনোভাবে হয়তো আসতে পারবে, কিন্তু রাস্তায় তখন আর কাউকে থাকলে চলবে না। তাকে নেমে যেতে হবে।
সবচেয়ে কাছের বাজারটি তিন কিলোমিটার দূরের। আর দেড় কিলোমিটার দূরে একটি হাট আছে, যেটি বসে প্রতি সপ্তাহে একবার।
প্রশাসন বলছে, একটি নিয়মে আবদ্ধ জীবন থেকে অন্য একটি জীবনে গেলে কিছুটা সমস্যা হবেই। আশপাশে লোকালয় যে নেই এমন নয়। তাদেরও একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এই আশ্রয় প্রকল্পকে ঘিরেও সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। সেখানেই দোকান হবে। কেউ কেউ ব্যবসা করবেন। কেউ কেউ অন্য কাজ করবেন।
কিন্তু একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর ঘর পাওয়া অনেকেই সেই সময়টা অপেক্ষা করতে চাইছেন না।
ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয় প্রথম ধাপে গত ২৩ জানুয়ারি। বৃহস্পতিবার প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ৭৪টি পরিবারের মধ্যে সেখানে ৪৯টি ঘরে লোকজন রয়েছেন। বাকি ঘরগুলোতে তালা ঝুলছে।
‘কয়দিন ধইরা আমি পান খাইতা পারতাছি না’
সুবিধাভোগীদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাইলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কেউই রাজি হননি। একপর্যায়ে কথা বলতে এগিয়ে আসেন কয়েকজন।
এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব নারী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালাইন। ইখান (এখানে) আওয়ার (আসার) রাস্তা বালা না। তাই অনেক সমস্যা হয়। এ ছাড়া ইখান কোনো কামকাজ নাই। অনেক কষ্ট কইরা আমরার চলন লাগে।’
তিনি বলেন, ‘যারার অন্য জায়গাত থাকার জায়গা আছে তারা ইখান থাইক্কা গেছে গা। আমরার যাওয়নের জায়গা নাই। এর লাগি যাই না। কিতা আর করমু, কষ্ট কইরা থাকি।’
নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘ইখান থাইকা বাজার অনেক দূর। তিন কিলোমিটার দূরে গিয়া বাজার করা লাগে। রাস্তাও বালা না। কয়দিন ধইরা আমি পান খাইতা পারতাছি না। মুখটা কেমন কেমন লাগে। অখন পান আনতে অমরোড বাজার যাওয়ন লাগে। ২০ টেকার পান আনতে ৪০-৫০ টেকা গাড়ি বাড়া লাগব।’
জনপ্রতিনিধিরা যা বলছেন
বৃহস্পতিবার আহম্মদাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত চৌধুরী সনজু বলেন, ‘তিন কিলোমিটারের আশপাশে কোনো বাজার নেই। কাজ না থাকলে এখানে ঘর পেয়ে কী লাভ? এ কারণে তারা থাকতে চান না।’
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জায়গা সিলেকশনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। উপজেলা প্রশাসন একক সিদ্ধান্ত নিয়ে এই জায়গাটি সিলেকশন করেছে। জায়গা সিলেকশনে ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে।
তবে ঘরে কোনো সমস্যা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর। তিনি বলেন, ‘চুনারুঘাট উপজেলায় যে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে তা আর কোথাও হয়নি। কোথাও একটি ঘর নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে দেখাতে পারবেন না। এখন লোকজন না থাকলে আমাদের কী করার আছে?’
তিনি বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘরগুলো নির্মাণ এবং হস্তান্তর করতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের শর্ত ছিল শুধু ‘ক’ শ্রেণিভুক্তদের এখানে ঘর দেয়া হবে, যে কারণে ‘ক’ শ্রেণিভুক্তদের দিতে গিয়ে এই সমস্যাটা হয়েছে।
সরকারের কাছ থেকে ঘর চেয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে যারা আবেদন করেছেন এবং যাদের ঘর-জায়াগা কিছুই নেই, তারা ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত।
কী বলছেন ইউএনও
ঘরগুলো নির্মাণে তত্ত্বাবধান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিত রায় দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কতটি পরিবার ঘর ছাড়তে আবেদন করেছে সেটা বলা যাবে না। তবে যারা এখনও ঘরে ওঠেননি বা অনিয়মিত এমন ১৮টি পরিবারের বরাদ্দ বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরে বলা হয়েছে নতুন করে ভূমিহীন ১৮টি পরিবারের তালিকা করতে। মন্ত্রণালয় এসব ঘরের বর্তমান বরাদ্দ বাতিলের অনুমতি দিলেই নতুনদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি সারা দেশে এই প্রকল্পের যতগুলো ঘর নির্মাণ হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের ঘর আমরাই নির্মাণ করেছি।‘
দূরত্ব আর আয়ের সুযোগ না থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হলে ইউএনও বলেন, ‘যেহেতু সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে, ধীরে ধীরে বাজার হাটও গড়ে উঠবে। নতুন গ্রাম হলে তো এই ধরনের সমস্যাগুলো হয়।’
তিনি বলেন, ‘জায়গাটি খুবই সুন্দর এবং জনবসতির জন্য উপযুক্ত। ধীরে ধীরে সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ এবং পানির সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। রাস্তাটিও আমরা প্রশস্ত করার চেষ্টা করছি।’
কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে বাস করা পরিবারের পুরুষরা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। নারীরা যেন বেকার বসে না থাকেন, তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি পালনের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতোয়ে কারাগার থেকে ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরছেন। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে।
একই দিন সকালে এসব বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে মিয়ানমারের নৌ-জাহাজ চিন ডুইন সিতোয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে। জাহাজটি রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে কক্সবাজারে আসছে।
বুধবার জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পৌঁছবে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের হস্তান্তর করা হবে।
দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশি ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার, ৩০ জন বান্দরবান, সাতজন রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে বাসিন্দা রয়েছেন।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের জাহাজটির বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে। সর্বোচ্চসংখ্যক যাচাই করে বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত ও সহজে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় দূতাবাস মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানরত ১৪৪ জন ‘যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের কারাভোগের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা ক্ষমা পেয়েছেন’ তাদেরকে সিতোয়ে কারাগারে আনার উদ্যোগ নেয়।
পাশাপাশি আরও ২৯ জন যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যারা এখনও কারাভোগ করছেন কিংবা বিচারাধীন, একইসঙ্গে তাদেরও মুক্তি দেয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের কাছে তুলে ধরা হয়। এর ভিত্তিতে সাজা মওকুফ করে তাদেরকেও দেশে পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ গত বছরের ৩ অক্টোবর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষ করা ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) বিপুল পরিমাণ টাকাসহ দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ আসার খবর পেয়ে আগেই পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজীব ও কনকসহ কয়েকজন। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদের পাবনা সদর থানা পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।
আটককৃতরা হলেন- দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের বাসিন্দা পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা এবং কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের বাসিন্দা ও পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পাউবোতে অনুসন্ধানে যান কয়েকজন সাংবাদিক। সেখানে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার ধাক্কা দেয়ার পর মাসুদ রানা দরজা খোলেন। কক্ষে ঠিকাদার ও স্থানীয় কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা। এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক হাজির হন।
সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কীসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে, তা জানতে চান সাংবাদিকরা, কিন্তু প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তারা। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগেই দুই ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) খবর দেয়।
তাদের সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করে দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তানভীর আহমেদ দীপ নামের পাবনা পাউবোর এক ঠিকাদার বলেন, ‘আটক দুইজন হয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারে। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস এখানে এসেছেন। এত দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে, এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধামতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়ত ফাঁসিয়েছে।’
আনিছুর রহমান মারুফ নামের আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেয়া হলে বিল আটকে দেয়া হয়।’
পাবনা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছে। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো- সেসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ফোন করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সত্যতা পেলে দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দুদককে অবহিত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করবে।’
এ বিষয়ে দুদক, পাবনা শাখার কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশে তার দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মঙ্গলবা বিকেলে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাতার আমিরের সফর দু’দেশের মধ্যে অসাধারণ সদিচ্ছা ও বোঝাপড়া তৈরি করেছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সুসংহত এবং পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
কাতারের আমির বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে ২২-২৩ এপ্রিল দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আমির-ই দেওয়ান প্রধান, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) এশিয়া ও আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান, এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং কাতারি আমিরের নেতৃত্বে কাতারি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশংসা করে এবং বর্ধিত পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, দু’দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয়, ব্যবসা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সকল স্তরে সফর বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও বাড়ানো ও এগিয়ে নেয়ার পন্থা ও উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে- সেগুলো ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি।
উভয়পক্ষ গাজা যুদ্ধ এবং মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেছে। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে একটি উন্নত জ্ঞানভিত্তিক বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ হিসাবে কাতারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও রূপান্তর এবং আমিরের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের অন্যতম হওয়ার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রশংসা করেন এবং কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবসা অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী, পেশাদার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। আমির এতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।
মতবিনিময়কালে কাতারের আমির ইইজেড ও কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তিনি কাতারের ফ্রি ইকোনমিক জোন সম্পর্কেও বৈঠকে অবহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল পাঠানোর অনুরোধ জানান।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের নেতারা বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে মোট ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
উভয় নেতা কাতারের আমিরের নামে ইসিবি সার্কেল থেকে কালশী পয়েন্ট পর্যন্ত একটি বিশেষ এভিনিউ এবং রাজধানীর মিরপুরে একটি পার্কের নামকরণ ও উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করেন।
আমির ও তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
পরে আমির বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।
মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:‘মোখলেছ ও মিজান ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শৈশব ও কৈশোরের বেড়ে ওঠা সব একসঙ্গে, একই গ্রামে। সম্প্রতি গ্রামের একটি রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব বাধে তাদের দুই পরিবারে। ওই ঘটনার পর তাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে একাধিকবার। চারটি মামলাও চলছে তাদের মধ্যে। তারপরও তাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট; নিয়মিত মেলামেশা ছিল তাদের। মারামারিতে মিজান আহত হলে গোপনে তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন মোখলেছ।
‘সবশেষ ২৯ মার্চ রাতে তারা পাগলা মসজিদে একসঙ্গে তারাবি পড়েন। এক পর্যায়ে সেই সম্পর্কই কাল হয়ে দাঁড়ালো মোখলেছের জীবনে। ওইদিন রাতেই তাকে গলা কেটে হত্যা করে বন্ধু মিজান।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মোখলেছের বড় ভাই মিজান ভূঁইয়া।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ২৮ বছর বয়সী মোখলেছ ভূঁইয়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মৃত হোসেনের ছেলে। তিনি কেওয়ারজোড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
অভিযুক্ত ২৮ বছর বয়সী মিজান শেখও একই গ্রামের বাসিন্দা।
গত ২৯ মার্চ রাতে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে তারাবির নামাজের পর নিখোঁজ হন ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ। পরিবারের সদস্যরা তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে সাড়া না পেয়ে যোগাযোগ করেন নানাজনের সঙ্গে। তারপরও খোঁজ না পেয়ে পরদিন সকালে বাড়ি থেকে স্বজনরা ছুটে আসেন শহরের হারুয়া এলাকায় তাদের ভাড়া বাসায়। সেটি তালাবদ্ধ দেখে কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন, মোখলেছের মোবাইলটি রয়েছে বালিশের নিচেই। এরপরই মনে সন্দেহ জাগে তাদের।
৩১ মার্চ রাতে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মোখলেছের বড় ভাই মিজান ভূঁইয়া। থানায় জিডি হলে হারুয়া এলাকার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ফুটেজে ২৯ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে মোখলেছকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সে সময় মোখলেছের সঙ্গে যে কয়েকজনকে দেখা যায়, তাদের মধ্যে মিজান শেখও ছিলেন।
সিসিটিভি ফুটেজের বর্ণনা দিয়ে নিখোঁজের বড় ভাই মিজান ভূঁইয়া বলেন, ‘সে যে বাসায় থাকত তার কাছাকাছি একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে, ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মোখলেছ হেঁটে বাসায় ফিরছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে মিজানও হেঁটে আসছে। অথচ মিজান হারুয়া এলাকায় থাকে না।’
তিনি জানান, আদরের ছেলের সন্ধান না পেয়ে ১৩ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন তাদের বাবা মকবুল হোসেন।
এ ঘটনায় ১৬ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মিজান ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেন মিজান ভূঁইয়া। মামলার পর ২০ এপ্রিল সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে নিখোঁজ হওয়ার দিনের সিসিটিভি ফুটেজে মিজানকে দেখা যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার পরিবারের তিনজনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন— মিজানের বাবা শেফুল শেখ এবং দুই ভাই মারজান শেখ ও রায়হান শেখ। শনিবার তাদের আটক করা হয়।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। মোখলেছকে গলা কেটে হত্যার পর তার শরীরে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য দেন মিজান শেখ। এ তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার থেকে নরসুন্দা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ওয়াচ টাওয়ারের সামনে থেকে ভাসমান অবস্থায় তার মাথাবিহীন অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘যে ছোরা দিয়ে মোখলেছকে গলা কেটে হত্যা করা করা হয়, সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে। ছোরাটি ২৩০ টাকা দিয়ে যার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল, তিনিও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।’
যাদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তাদের বিষয়েও মিজান তথ্য দিয়েছেন উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এসব পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
মরদেহ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যেকোনো মূল্যে তাকে প্রতিহত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় দলীয় প্রধানের আদেশ অমান্য করে নিজের ছেলেকে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করায় একরামুল করিম চৌধুরীর সংসদ সদস্যপদ স্থগিতের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল আনাম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলন ও সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি কবিরহাট উপজেলায়। তিনি নিজ ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর করে সুবর্ণচরে নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা খায়রুল আনম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছেন।
‘প্রতীক পাওয়ার আগে থেকে ভোটের মাঠে নেমে এমপি একরাম আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন, বিষোদ্গার করছেন। ভোট না দিলে উন্নয়ন করবেন না বলে সাধারণ মানুষকে শাসাচ্ছেন।’
‘জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে অফিস থেকে বের হতে দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। একজন আইনপ্রণেতা হয়ে তিনি আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একরাম চৌধুরী নোয়াখালী পৌরসভার মেয়রের কক্ষে আমাকে নেতা-কর্মীদের সামনে চরমভাবে অপমান করেন। একপর্যায়ে তেড়ে আসেন এবং আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি একরাম তার ছেলে সাবাব চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। অঢেল টাকা, পেশিশক্তি, সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ অস্ত্র এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।
‘এমপি একরামের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ‘অবিচার ও নৃশংসতা’ ফাঁস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদনটি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
‘গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেয়া হয়েছে আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল মাত্র চারটি মামলা।
‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।’
সোমবার ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন (এইচআরআর) প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। একে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি ‘বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ’ রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
১৯৮টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি (এইচআরআর) তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অংশে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেক খবর পাওয়া গেছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করতে ও শাস্তি দিতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিপীড়ন, নৃশংসতা, গুম, খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বলে আসছে।
‘এখন আর লুকানোর কিছু নেই। শেখ হাসিনার সরকারের অবিচার, রক্তপাত ও নানা অপকর্মের ঘটনা ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বেরিয়ে আসছে। গোটা বিশ্ব এর নিন্দা করছে।’
আরও পড়ুন:অন্ধকার ঘরে চৌকির ওপর বসে আছে ১৫ বছর বয়সী রিয়াজ। গলায় শেকল পরিয়ে ঝুলানো বড় তালা। শেকলের অন্য প্রাপ্ত চৌকির সঙ্গে প্যাঁচানো। কোনোভাবে যেন শেকল খুলে বা চৌকি ভেঙে বাইরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করেছে পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে এভাবেই শেকলবন্দি রিয়াজ। মাঝে-মধ্যে বাবা ও মায়ের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার সুযোগ মিললেও ছাড়া মেলে না এই কিশোরের।
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে মা নার্গিস খাতুন ও বাবা লিটন হোসেনের সঙ্গে এভাবেই দিন কাটছে ছেলেটির।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সাত বছর আগে শহরের আরাপপুর এলাকায় থাকা অবস্থায় কিছু বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে চুরি করা শুরু করে রিয়াজ। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই চুরি করে সে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরসহ আশপাশের জেলাতে গিয়েও সে চুরি করেছে।
চুরি করা অনেকটা নেশার মতো রিয়াজের কাছে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ওকে বাড়িতে দিয়ে গেলেও তার চুরি বন্ধ হয়নি। নানা স্থান থেকে একের পর এক অভিযোগ পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বাবা-মা। উপায়ান্তর না পেয়ে সন্তানকে শেকলে তালাবদ্ধ করে রাখা শুরু করেন তারা। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ তিনটি বছর। তারপরও সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায় রিয়াজ। আবারও জড়িয়ে পড়ে চুরি ঘটনায়।
লিটন হোসেন বলেন, ‘রিয়াজ সুযোগ পেলেই চুরি করে। চুরি করাটা যেন ওর নেশা। উপায় না পেয়ে বাবা হয়েও তিন বছর ধরে সন্তানকে গলায় শেকল পরিয়ে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। কী করব বলেন! যেখানে যায় সেখান থেকেই চুরি করে।
‘আমরা উপায় না পেয়ে বেঁধে রেখেছি। কতবার পুলিশ এসে বাড়িতে দিয়ে গেছে। কত ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো সমাধান হচ্ছে না।’
মা নার্গিস খাতুন বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান। বড় সন্তান মেয়ে। ছেলেকে এভাবে রাখতে আমার খুব খুবই কষ্ট। আমি কিচ্ছু চাই না। শুধু চাই ও পড়াশোনা করুক। অন্য ছেলেদের মতো খেলা করুক, ঘুরে বেড়াক।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক কোনো সমস্যার কারণে রিয়াজ এমন কাজ বার বার করছে। নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘কয়েকটি কারণে শিশু রিয়াজ একই কাজ বার বার করছে। পরিবারে যদি এমন কেউ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকত তাহলে এমনটা হতে পারে।
‘ওর মানসিক বিকাশ না হওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মোটিভেশন দিলে ছেলেটির এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
মন্তব্য