সুনামগঞ্জের শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়নের ভেড়াডহর গ্রামে একটি ঘর পেয়েছেন অলি বৈষ্ণব। ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘরটি গত জানুয়ারিতে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ছয় মাসেই সে ঘরে ফাটল ধরেছে; খুলে পড়ছে পলেস্তারা।
নিউজবাংলাকে অলি বৈষ্ণব বলেন, ‘আমার ঘরে ফাটল দেখা দিসে, খালি আমার ঘর না, ইলান আরও ১০টা ঘর ফাটল দিসে। ফাটলগুলোরে জোড়াতালি দিয়া প্লাস্টার করিয়া দেওয়া অয়। ইতা ঘরো আমরা থাকতাম কিলা, ঝড় তুফান দিলে তো ঘর ভাঙিয়া পড়ি যাইবো।’
সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৪ হাজার ২৬৬টির মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ১১ উপজেলার মধ্যে শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুরের ঘরগুলোতে এরই মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যে আবার শাল্লার ভেড়াডহর, সেননগর, শান্তিপুর ও মুজিবনগর গ্রামের প্রায় ২৫টি ঘরে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটির রান্নাঘর ও বাথরুমের অংশ ভেঙে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
শাল্লার সেননগর গ্রামের কেনু মিয়া বলেন, ‘আমরা ঘরের দরজা-জানালা খুলিয়া যারগি। খালি আমার ঘর নায়, ইকানো খায়রুল মিয়া ও রুবেল মিয়ার ঘরও বড় ফাটল দিসে। আমার ঘরের দরজাটা ঠিক করছি, কিন্তু জানালাটা ঠিক করতে পারছি না।’
তাহিরপুরের মানিগাও গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপকারভোগী বলেন, ‘বৃষ্টি আইলে ঘরো থাকতাম পারি না, ঘরের জানালাটা পর্যন্ত এরা লাগাইছে উল্টা… দুই দিন আগে কয়েকজন আইয়া আমরার কাম দেখিয়া গেছে, আমরার সমস্যার কথা কইছি তারা উল্টা আমরারের ভয় দেখাইছে।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পিঠাপসি ও ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ইউপি চেয়ারম্যান উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর মিয়া বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে, ঘরপ্রতি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা টাকা তুলেছেন। আমি ফেসবুকেও লেখালেখি করছি। জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, কাজ এসে দেখে যান।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘যে ঘরগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ফাটল দেখা দিলে আমরা দ্রুত মেরামত করব। এ ছাড়া ঘর নির্মাণে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’
শাল্লার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্মাণকাজে কোনো গাফিলতি পাইনি। তবে যে ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।’
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অসন্তোষ জানিয়েছেন উপকারভোগীরা। আবার নির্মাণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও বেশির ভাগ ঘরে দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। সেসব ঘরে এখনও উঠতে পারেননি উপকারভোগীরা।
আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি নিজে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ঘর পরিদর্শন করেছি। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেছেন। ঘর নির্মাণে কারও অনিয়ম আছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলে বলতে পারব।’
এসব ঘর নির্মাণের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ঘর তৈরিতে ইট, বালু ও সিমেন্ট থাকলেও রড ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে ঘরগুলো দুর্বল।
তারা বলেন, অনেকগুলো ঘর নিচু জায়গায় নির্মিত। এসব ঘরে রড দেয়া আবশ্যক ছিল। কিন্তু একেকটি ঘর নির্মাণের জন্য বাজেট ছিল মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই টাকায় রড ব্যবহার করে পুরো ঘর নির্মাণ সম্ভব নয়।
সিলেটে বিদ্যুৎ-পানি নেই, বন্যা আতঙ্ক
সিলেটের গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর গ্রামের বৃদ্ধা আয়েশা খাতুন নিজের ঘর পেয়ে ভেবেছিলেন, শেষ বয়সে হলেও মাথার ওপর ছাদ পেয়েছেন। কিন্তু সে ঘরে উঠে উল্টো ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, ‘আগে থাকার কুনু জেগা আছিল না। কই থাকম তা ইটা নিয়া চিন্তা আছিল। অখন ঘর পাইলেও শান্তি নাই। ঢল নামলেউ ঘরো পানি উঠি যায়। ঘরোর আশপাশো পানি থাকে। এর লাগি অখন সব সময় ডরোর মাঝে থাকি, কুন সময় ঢল নামবো।’
তার মতো সেখানকার উপকারভোগীরা জানান, এখানকার নির্মিত সবগুলো ঘরেই ঢল নামলে পানি ওঠে। ঢালু জায়গায় বলে পানি ঘরে অনেকটা সময় আটকে থাকে।
সিলেট সদরের খাদিমনগর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন মখলিসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ঝড়-তুফান শুরু হলেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। বাতাস শুরু হলে মনে হয় টিনের চাল উড়ে যাবে; পিলারগুলো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। রডহীন পিলারগুলো জোরে বাতাস হলেই নড়ে ওঠে।’
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৩টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭৪টি ঘর উপকারভোগীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। লক্ষ্য আছে ৪ হাজার ১৭৮টি ঘর তৈরির।
সিলেট সদরের কান্দিগাঁওয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার আশ্রয়ণের বেশির ভাগ ঘর ফাঁকা। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নেই বলে ছয় মাসেও ঘরে উঠেননি উপকারভোগীরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেটের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পানির লাইনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করছে। শিগগিরই এগুলো হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘সিলেটে এখনও কোনো ঘর ভেঙে যাওয়া বা নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। তবু আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’
স্বল্প বাজেটে রডহীন ঘর নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে আমার কিছু বলার নেই। ঘরগুলো তৈরির নির্মাণসামগ্রী এবং ব্যয় যারা নির্ধারণ করেছেন, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার অর্জুন পাল বলেন, ‘এসব ঘর ভালো করে নির্মাণ করতে হলে অন্তত ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন। এত কম বাজেটে ভালো ঘর নির্মাণ সম্ভব নয়। এ ছাড়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেটে রড ছাড়া ঘর নির্মাণের কথা তো ভাবাই যায় না। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
বন্যার ভয় হবিগঞ্জে
হবিগঞ্জের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ হাজার ১৪২টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ঘর ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন।
এর মধ্যে মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার দুটি প্রকল্পের ঘর নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে।
চুনারুঘাটের ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭০টি ঘরের মধ্যে মাত্র ৩২টিতে বসবাস করছেন মানুষ। অন্যগুলোতে এখনও তালা ঝুলছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে জায়গায় ঘর দেয়া হয়েছে এর ১০ কিলোমিটারের ভেতরে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। নেই বিদ্যুৎ ও পানি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে রাস্তাঘাট ভালো না, মানুষের যাতায়াত নেই। যে কারণে কাজও নেই। ৭৪টি পরিবারের জন্য মাত্র ৪টি টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই। বলতে গেলে ঘর ছাড়া এখানে মানুষের জন্য আর কিছুই নেই।’
চুনারুঘাটের ইউএনও সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, ‘সেখানকার সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে আরও কয়েকটি টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হচ্ছে।’
জেলার মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের রূপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৭টি ভূমিহীন পরিবার বছরের শুরুতে যখন ঘরে ওঠেন, তখন তারা ছিলেন আনন্দে আত্মহারা। সে খুশি ছয় মাসেই মলিন হয়েছে।
রাস্তা থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট নিচু জায়গায় মাটি ভরাট না করেই বানানো হয়েছে ঘরগুলো। আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ঘরে ঢুকে পড়ে ময়লা পানি।
অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনুভা নাশতারান স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে নিচু জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এ অভিযোগে সম্প্রতি তাসনুভাকে শোকজও করেছে মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে মাধবপুরের ইউএনও শেখ মাঈনুল ইসলাম মঈন বলেন, ‘প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে।’
হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও গৃহনির্মাণসংক্রান্ত কমিটির সদস্য তওহীদ আহমদ সজল বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা রূপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে বৃষ্টির পানি জমেছিল। আর যেন পানি জমতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
‘এ ছাড়া চুনারুঘাটের ইকরতলী প্রকল্পের অধিকাংশ পরিবারই এখন চলে আসছেন। তবে সেখানে বসবাস করা পরিবারগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করার কারণে ঘরগুলো তালাবদ্ধ করে নিজ নিজ কাজে চলে গেছেন।’
বড়লেখায় ৫ মাসেও ব্যবস্থা হয়নি পানি ও বিদ্যুতের
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০টি ঘরে উদ্বোধনের পাঁচ মাসেও যায়নি পানি ও বিদ্যুৎ। এ কারণে এখনও ৩৪টি পরিবার ঘরে ওঠেনি। আর যারা উঠেছেন, তারা পানি ও বিদ্যুতের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ‘৫০ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ইউএনওর কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের ঘরগুলোতে ওয়্যারিং কাজ করানোর কথা।
‘কিন্তু ওয়্যারিং কাজ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়নি। তবে বুধবার (৭ জুলাই) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে আমাদের কাছে পত্র এসেছে। ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ নিজ খরচে ওয়্যারিংসহ যাবতীয় কাজ করে দেবে। যেসব ঘর মেইন লাইন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে আছে, সেগুলোতে দ্রুত সংযোগ দেয়া হবে। অন্যগুলোতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন জানান, উপহারের ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এ কাজে সময় লাগছে। এক সপ্তাহের মধ্যে নলকূপ স্থাপন করে উপকারভোগীদের হস্তান্তর করা হবে।
বড়লেখার ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর প্রথম মাসিক সমন্বয় সভায় ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বলা হয়েছিল… ডিজিএম জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হবে। ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও চলছে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। তা সফলভাবে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
সরকারি শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অসম্মানজনক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশেষজ্ঞরা হলেন- দাসত্বের সমসাময়িক রূপ, কারণ ও পরিণতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টোমোয়া ওবোকাতা, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি সিওভান মুল্লালি, প্রবাসীদের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত গেহাদ মাদি ও রবার্ট ম্যাককরকোডেল (চেয়ার-র্যাপোর্টিয়ার), ফার্নান্দা হপেনহাইম (ভাইস-চেয়ার), পিচামন ইয়োফানটং, দামিলোলা ওলাউই, এলজবিয়েতা কারস্কা এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দল।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘প্রবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
তারা উল্লেখ করেন, অনেক প্রবাসী মালয়েশিয়ায় এসে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি নেই এবং অনেক সময় তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থাকতে বাধ্য করা হয়।
এর ফলে এসব প্রবাসী গ্রেপ্তার, আটক, দুর্ব্যবহার ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রবাসী কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সক্রিয় অপরাধী চক্র। এতে প্রবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, ঘন ঘন ভুয়া কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে কারণে তাদের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা এটি প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এর অবসান হওয়া দরকার।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই শোষণমূলক নিয়োগের অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই বেসরকারি ব্যবসা এবং প্রতারণামূলক নিয়োগ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের ভূমিকাই অপর্যাপ্ত।’
তারা আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক অসহায় প্রবাসীদের অপরাধীতে পরিণত করা হয়েছে এবং শোষণের শিকার হওয়ার কথা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ তীব্র প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছেন।’
বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে এসব ঘটনার তদন্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নীতিমালা মেনে চলতে মালয়েশিয়াকে আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মালয়েশিয়াকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।’
মালয়েশিয়ার ব্যবসাক্ষেত্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে এবং এই ব্যবসাগুলোতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা ও সহায়তা, মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা প্রয়োগ এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে মালয়েশিয়াকে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা এর আগে এসব বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
বিএনপির নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ-পিআইবির মহাপরিচালক একুশে পদকে ভূষিত সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ গ্রন্থিত ‘ভুবনজোড়া শেখ হাসিনার আসনখানি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি আবার বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, যে কোনো কিছুতেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়া বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা। বাংলাদেশে ক্ষমতার উৎস জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশিদের কাছে গেলে বিদেশিরা তো বিএনপিকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। জনগণই ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। ফলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিচলিত হননি, বরং আরো দৃপ্ত পদভারে জনগণের সংগ্রামের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়েছেন, দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে আসীন করেছেন।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। তিনি শুধু দেশেরই নন, তিনি আজ বিশ্বনেতা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, শেখ হাসিনা শুধু তারই নন, তার সন্তানদেরও প্রেরণা। ভারতের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের প্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আরব বিশ্বে একজন শেখ হাসিনা থাকলে হয়তো গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা যেতো।
হাছান বলেন, শুধু তাই নয়, যে কোনো বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যোগ দিলে তিনিই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ জন সদস্যকে মিয়ানমারের জাহাজে নৌপথে ফেরত যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২২ এপ্রিল জাহাজে তাদের ফেরত নিতে সম্মত মিয়ানমার। এ ছাড়া মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৫০ জন বাংলাদেশিও একই জাহাজে ফেরত আসবে। তবে জাহাজের যাত্রা সমুদ্র ও মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পিআইবির কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মন্তব্য