সুনামগঞ্জের শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়নের ভেড়াডহর গ্রামে একটি ঘর পেয়েছেন অলি বৈষ্ণব। ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘরটি গত জানুয়ারিতে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ছয় মাসেই সে ঘরে ফাটল ধরেছে; খুলে পড়ছে পলেস্তারা।
নিউজবাংলাকে অলি বৈষ্ণব বলেন, ‘আমার ঘরে ফাটল দেখা দিসে, খালি আমার ঘর না, ইলান আরও ১০টা ঘর ফাটল দিসে। ফাটলগুলোরে জোড়াতালি দিয়া প্লাস্টার করিয়া দেওয়া অয়। ইতা ঘরো আমরা থাকতাম কিলা, ঝড় তুফান দিলে তো ঘর ভাঙিয়া পড়ি যাইবো।’
সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৪ হাজার ২৬৬টির মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ১১ উপজেলার মধ্যে শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুরের ঘরগুলোতে এরই মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যে আবার শাল্লার ভেড়াডহর, সেননগর, শান্তিপুর ও মুজিবনগর গ্রামের প্রায় ২৫টি ঘরে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটির রান্নাঘর ও বাথরুমের অংশ ভেঙে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
শাল্লার সেননগর গ্রামের কেনু মিয়া বলেন, ‘আমরা ঘরের দরজা-জানালা খুলিয়া যারগি। খালি আমার ঘর নায়, ইকানো খায়রুল মিয়া ও রুবেল মিয়ার ঘরও বড় ফাটল দিসে। আমার ঘরের দরজাটা ঠিক করছি, কিন্তু জানালাটা ঠিক করতে পারছি না।’
তাহিরপুরের মানিগাও গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপকারভোগী বলেন, ‘বৃষ্টি আইলে ঘরো থাকতাম পারি না, ঘরের জানালাটা পর্যন্ত এরা লাগাইছে উল্টা… দুই দিন আগে কয়েকজন আইয়া আমরার কাম দেখিয়া গেছে, আমরার সমস্যার কথা কইছি তারা উল্টা আমরারের ভয় দেখাইছে।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পিঠাপসি ও ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ইউপি চেয়ারম্যান উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর মিয়া বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে, ঘরপ্রতি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা টাকা তুলেছেন। আমি ফেসবুকেও লেখালেখি করছি। জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, কাজ এসে দেখে যান।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘যে ঘরগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ফাটল দেখা দিলে আমরা দ্রুত মেরামত করব। এ ছাড়া ঘর নির্মাণে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’
শাল্লার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্মাণকাজে কোনো গাফিলতি পাইনি। তবে যে ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।’
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অসন্তোষ জানিয়েছেন উপকারভোগীরা। আবার নির্মাণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও বেশির ভাগ ঘরে দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। সেসব ঘরে এখনও উঠতে পারেননি উপকারভোগীরা।
আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি নিজে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ঘর পরিদর্শন করেছি। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেছেন। ঘর নির্মাণে কারও অনিয়ম আছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলে বলতে পারব।’
এসব ঘর নির্মাণের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ঘর তৈরিতে ইট, বালু ও সিমেন্ট থাকলেও রড ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে ঘরগুলো দুর্বল।
তারা বলেন, অনেকগুলো ঘর নিচু জায়গায় নির্মিত। এসব ঘরে রড দেয়া আবশ্যক ছিল। কিন্তু একেকটি ঘর নির্মাণের জন্য বাজেট ছিল মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই টাকায় রড ব্যবহার করে পুরো ঘর নির্মাণ সম্ভব নয়।
সিলেটে বিদ্যুৎ-পানি নেই, বন্যা আতঙ্ক
সিলেটের গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর গ্রামের বৃদ্ধা আয়েশা খাতুন নিজের ঘর পেয়ে ভেবেছিলেন, শেষ বয়সে হলেও মাথার ওপর ছাদ পেয়েছেন। কিন্তু সে ঘরে উঠে উল্টো ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, ‘আগে থাকার কুনু জেগা আছিল না। কই থাকম তা ইটা নিয়া চিন্তা আছিল। অখন ঘর পাইলেও শান্তি নাই। ঢল নামলেউ ঘরো পানি উঠি যায়। ঘরোর আশপাশো পানি থাকে। এর লাগি অখন সব সময় ডরোর মাঝে থাকি, কুন সময় ঢল নামবো।’
তার মতো সেখানকার উপকারভোগীরা জানান, এখানকার নির্মিত সবগুলো ঘরেই ঢল নামলে পানি ওঠে। ঢালু জায়গায় বলে পানি ঘরে অনেকটা সময় আটকে থাকে।
সিলেট সদরের খাদিমনগর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন মখলিসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ঝড়-তুফান শুরু হলেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। বাতাস শুরু হলে মনে হয় টিনের চাল উড়ে যাবে; পিলারগুলো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। রডহীন পিলারগুলো জোরে বাতাস হলেই নড়ে ওঠে।’
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৩টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭৪টি ঘর উপকারভোগীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। লক্ষ্য আছে ৪ হাজার ১৭৮টি ঘর তৈরির।
সিলেট সদরের কান্দিগাঁওয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার আশ্রয়ণের বেশির ভাগ ঘর ফাঁকা। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নেই বলে ছয় মাসেও ঘরে উঠেননি উপকারভোগীরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেটের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পানির লাইনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করছে। শিগগিরই এগুলো হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘সিলেটে এখনও কোনো ঘর ভেঙে যাওয়া বা নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। তবু আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’
স্বল্প বাজেটে রডহীন ঘর নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে আমার কিছু বলার নেই। ঘরগুলো তৈরির নির্মাণসামগ্রী এবং ব্যয় যারা নির্ধারণ করেছেন, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার অর্জুন পাল বলেন, ‘এসব ঘর ভালো করে নির্মাণ করতে হলে অন্তত ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন। এত কম বাজেটে ভালো ঘর নির্মাণ সম্ভব নয়। এ ছাড়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেটে রড ছাড়া ঘর নির্মাণের কথা তো ভাবাই যায় না। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
বন্যার ভয় হবিগঞ্জে
হবিগঞ্জের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ হাজার ১৪২টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ঘর ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন।
এর মধ্যে মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার দুটি প্রকল্পের ঘর নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে।
চুনারুঘাটের ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭০টি ঘরের মধ্যে মাত্র ৩২টিতে বসবাস করছেন মানুষ। অন্যগুলোতে এখনও তালা ঝুলছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে জায়গায় ঘর দেয়া হয়েছে এর ১০ কিলোমিটারের ভেতরে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। নেই বিদ্যুৎ ও পানি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে রাস্তাঘাট ভালো না, মানুষের যাতায়াত নেই। যে কারণে কাজও নেই। ৭৪টি পরিবারের জন্য মাত্র ৪টি টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই। বলতে গেলে ঘর ছাড়া এখানে মানুষের জন্য আর কিছুই নেই।’
চুনারুঘাটের ইউএনও সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, ‘সেখানকার সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে আরও কয়েকটি টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হচ্ছে।’
জেলার মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের রূপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৭টি ভূমিহীন পরিবার বছরের শুরুতে যখন ঘরে ওঠেন, তখন তারা ছিলেন আনন্দে আত্মহারা। সে খুশি ছয় মাসেই মলিন হয়েছে।
রাস্তা থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট নিচু জায়গায় মাটি ভরাট না করেই বানানো হয়েছে ঘরগুলো। আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ঘরে ঢুকে পড়ে ময়লা পানি।
অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনুভা নাশতারান স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে নিচু জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এ অভিযোগে সম্প্রতি তাসনুভাকে শোকজও করেছে মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে মাধবপুরের ইউএনও শেখ মাঈনুল ইসলাম মঈন বলেন, ‘প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে।’
হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও গৃহনির্মাণসংক্রান্ত কমিটির সদস্য তওহীদ আহমদ সজল বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা রূপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে বৃষ্টির পানি জমেছিল। আর যেন পানি জমতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
‘এ ছাড়া চুনারুঘাটের ইকরতলী প্রকল্পের অধিকাংশ পরিবারই এখন চলে আসছেন। তবে সেখানে বসবাস করা পরিবারগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করার কারণে ঘরগুলো তালাবদ্ধ করে নিজ নিজ কাজে চলে গেছেন।’
বড়লেখায় ৫ মাসেও ব্যবস্থা হয়নি পানি ও বিদ্যুতের
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০টি ঘরে উদ্বোধনের পাঁচ মাসেও যায়নি পানি ও বিদ্যুৎ। এ কারণে এখনও ৩৪টি পরিবার ঘরে ওঠেনি। আর যারা উঠেছেন, তারা পানি ও বিদ্যুতের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ‘৫০ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ইউএনওর কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের ঘরগুলোতে ওয়্যারিং কাজ করানোর কথা।
‘কিন্তু ওয়্যারিং কাজ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়নি। তবে বুধবার (৭ জুলাই) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে আমাদের কাছে পত্র এসেছে। ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ নিজ খরচে ওয়্যারিংসহ যাবতীয় কাজ করে দেবে। যেসব ঘর মেইন লাইন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে আছে, সেগুলোতে দ্রুত সংযোগ দেয়া হবে। অন্যগুলোতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন জানান, উপহারের ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এ কাজে সময় লাগছে। এক সপ্তাহের মধ্যে নলকূপ স্থাপন করে উপকারভোগীদের হস্তান্তর করা হবে।
বড়লেখার ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর প্রথম মাসিক সমন্বয় সভায় ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বলা হয়েছিল… ডিজিএম জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হবে। ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও চলছে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। তা সফলভাবে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:কৃষকের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু নানা কারণে এ খেলাটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে শুকনো মৌসুমে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়ে থাকে এ খেলা। শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়ায় মই দৌড় খেলার আনন্দে মেতে উঠে কৃষক সহ সাধারণ মানুষ।
শেরপুর জেলার কৃষকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় খেলা। শুকনো মৌসুমে মাঝে মাঝেই জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। যেখানেই আয়োজন করা হয় এ মই দৌড় খেলা, সেখানেই হাজির হয় হাজার হাজার বয়স্ক, যুবক শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে অনেকেই এখনো দেখেই নি। নতুন করে এ খেলা দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়ে থাকে। যে এলাকায়ই ষাড়ের মই দৌড় খেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারি এমনই এক খেলার আয়োজন করে উৎসবে মেতে উঠে শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়া এলাকার মানুষ।
একটি মইয়ে ৪টি ষাড় গরু থাকে। আর এরকম দুটি করে মই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অনেক সময় নির্ধারিত দাগের বাইরে চলে যায় ষাড়ের মই। এতে আউট ধরা হয় ওই মইকে। এখানে থাকে দুজন মইয়াল। আরো থাকে ৩ জন ধরাল। রেফারীরর বাশিঁ ফুকানোর সঙ্গে সঙ্গেই মইগুলোর ষাড়েরা দৌড়ানো শুরু করে। যে মই বিজয়ী হয় তখন তারা মেতে ওঠে আনন্দে। আর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুর উল্লাস ধ্বনিতে মূখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ খেলা দেখাতে পেরে ময়ালরাও অনেক খুশি।
গ্রামবাংলার ষাড়ের দৌড় খেলা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে নাগপাড়ায় প্রথমবারের মতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের আগ্রহের কারণে পরবর্তীতেও আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। এমনটাই জানালেন আয়োজকরা।
বিভিন্ন স্থান থেকে ৮টি মই দৌড় দল এ খেলায় অংশ গ্রহণ করে। এতে জামালপুর জেলা ইসলামপুরের চন্দনপুরের হাবু বেপারি চ্যাম্পিয়ন হয়।
খেলাশেষে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সাইম, শিক্ষক আসমত আলীসহ আরো অনেকে।
আয়োজক আসমত আলী বলেন, ‘এ খেলার প্রতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের আগ্রহ আছে, তাই আমরা প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করব।’
কোরবানি ঈদের পর বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। সবজির দামও আগের মতোই। তবে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগের তুলনায় বর্তমানে খুচরায় মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা প্রতি কেজিতে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা, মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী নিজাম জানান, ঈদের পর থেকে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘মিল মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ধানের দাম বৃদ্ধির ফলে চালের দাম বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে।’
অলিগলির ছোট মুদি দোকানগুলোতে চালের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে। বংশাল এলাকার মুদি দোকানদার মজিদ মিয়া বলেন, ‘এই ধরনের দোকানে বাকির পরিমাণ বেশি। আমাদের বেশি ইনভেস্ট করতে হয়, তাই কিছুটা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করি।’
চালের উচ্চমূল্য ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি করলেও মুরগি, ডিম ও সবজির দাম কিছুটা কমে ক্রেতাদের স্বস্তি দিয়েছে। মুদি পণ্যগুলোর দামেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়নি। পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। ডিমের দামও কমে প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম এবং চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দাম কমেছে।
বাজারে আগত বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানির ঈদের পর অনেক ঘরেই এখনো মাংস রয়েছে। ফলে ডিম ও মুরগির চাহিদা কম। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, কিছু দিন পর চাহিদা বাড়লে মুরগির দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে।
পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার ও নয়াবাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমেছে—বর্তমানে তা প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের বাজারে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি; বড় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম তুলনামূলক বেশি।
সবজির বাজারেও দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা। পুঁইশাক, বেগুন, পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে ও মিষ্টি কুমড়ার মতো সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ছিল। বড় বাজারের তুলনায় ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে দাম আরও কিছুটা কম।
প্রযুক্তির অপব্যবহারে শ্যামনগরের যুবসমাজ আজ অনলাইন জুয়ার ভয়াল ফাঁদে বন্দি। ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই জড়িয়ে পড়ছে এই নিষিদ্ধ খেলায়। দিন দিন বেড়েই চলেছে আসক্তির মাত্রা। নষ্ট হচ্ছে সময়, টাকা আর সম্পর্ক।
জানা গেছে, অনলাইন জুয়া এখন শুধুই তাস বা ক্যাসিনো নয়। পরিবর্তনশীল গেমের ধরনে যুক্ত হয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল বেটিং, তিন পাত্তি, রামি, রঙের খেলা, এভিয়েটর গেম এমনকি জনপ্রিয় লুডুও। এসব গেমে প্রতিদিন বাজি ধরছে হাজার হাজার টাকা। জেতার আনন্দে শুরু হলেও এক সময় তা ভয়াবহ আসক্তিতে পরিণত হয়, যার শেষ পরিণতি প্রায়শই ঋণ, মানসিক বিপর্যয় ও সামাজিক ভাঙন।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ‘এসব জুয়ার আসর বসছে গ্রামের চায়ের দোকান, চালের দোকান বা সুতার দোকানে। দিনের বেলায় সাধারণ ব্যবসার আড়ালে, আর রাতে দোকান বন্ধের পর শুরু হয় মোবাইলের স্ক্রিনে টাকার লড়াই। আড্ডার ছলে একে একে হাজির হয় নির্দিষ্ট গেমাররা, চোখ থাকে মোবাইলের পর্দায়—আর বাজি চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর চলছে এই নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড।
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত একজন যুবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,
‘প্রথমে বন্ধুদের দেখে খেলতে শুরু করি। লুডু দিয়ে শুরু, পরে দিনে দিনে হাজার টাকার বাজি লাগত। এখন প্রায় ৫০ হাজার টাকার ঋণে জর্জরিত, ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে।’
সবচেয়ে বিপর্যয়ে পড়ছে পরিবারগুলো। ঘরে অশান্তি, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ, ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক ছিন্ন—এ যেন সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার চক্র।
সন্তানরা পড়ালেখার পরিবর্তে দিনভর মোবাইলেই মুখ গুঁজে থাকে। যুবকরা হারাচ্ছে কাজের আগ্রহ, মুছে যাচ্ছে ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অনলাইন জুয়ার এই ভয়াবহ বিস্তার রোধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, না হলে অচিরেই ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই এই সংখ্যা বেড়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কাছে ২৮ হাজার ৪৭৩ বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
তবে শুধু শরণার্থী নয়, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও করছেন অনেক বাংলাদেশি। ২০২৪ সালে এক লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। অধিকাংশ বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ১২৬ বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। ২০২২ সালে ২৩ হাজার ৯৩৫ জন, ২০২১ সালে ২২ হাজার ৬৭২ জন এবং ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯৪৮ জন বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী দাবি করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেন। এছাড়া ২০১৯ সালে শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশিদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৭৬৬, ২০১৮ সালে ২১ হাজার ২২ এবং ২০১৭ সালে ১৬ হাজার ৭৮০টি।
২০২৪ সালে এক লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এছাড়া ২০২৩ সালে ৭৫ হাজার ৮৬৭ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। ২০২২ সালে ৬১ হাজার ২৯৮ জন, ২০২১ সালে ৬৫ হাজার ৪৯৫ এবং ২০২০ সালে ৬৪ হাজার ৬৩৬ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৮৬০ এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ৮৬০।
তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে দেখা যায়, আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই সুযোগসন্ধানী বা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছেন।
অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, অনেকে অবৈধ পথে লাখ লাখ টাকা দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে অবৈধ হয়ে থাকেন বছরের পর বছর। এরপর এরা শরণার্থী হিসেবে স্থায়ী হওয়ার আবেদন করেন।
তিনি বলেন, কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত, যেমন মিয়ানমার, সিরিয়া, আফগানিস্তান- এসব দেশ থেকে কেউ গেলেই অটোমেটিক তারা শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না। আমাদের অনেকে অবৈধ হিসেবে গিয়ে শরণার্থী পরিচয় দেন, কিন্তু ইউরোপ জানে এরা অবৈধ অভিবাসী।
আসিফ মুনীর আরও বলেন, তবুও ইউরোপের দেশ ইতালি, ফ্রান্স আমাদের এই অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করছে। কিন্ত বাস্তবিক অর্থে যারা অবৈধ পথে এসব দেশে যাচ্ছেন এরা শরণার্থী নন। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বহু মানুষ ইউরোপে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে বহু বাংলাদেশি আছেন যারা শরণার্থী হিসেবে গিয়েছেন।
মোরা (আমরা) গরিব মানু (মানুষ)। মোগো(আমাদের ) কপালে ইলিশ নেই। ওগুলো খাইবে টাহা (টাকা) ওয়ালা বড় লোক মানুষ (মানুষ)। আক্ষেপ করে এ কথা বলেছেন আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের অটো চালক মনিরুল ইসলাম। ইলিশের মৌসুম হলেও বাজারে ইলিশের দাম চড়া গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ইলিশ মাছ কেনার সক্ষমতা নেই।
জানা গেছে, এক সময় রুপালী ইলিশে ভরপুর ছিল বঙ্গোপসাগর ও সাগর মোহনার পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদী। কিন্তু কালের বিবর্তনে বঙ্গোপসাগর ও সাগর মোহনা পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে তেমন ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পরছে না। ইলিশে শিকারের মৌসুম জুন মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ভরা মৌসুম জুলাই মাসের শেষ থেকে শুরু হয়ে পুরো নভেম্বর মাস। এ সময়ে ইলিশ বঙ্গোপসাগর ও মোহনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। আমতলী-তালতলী উপজেলায় ১৫ হাজার ৭৯৯ জন জেলে রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলেই ইলিশ শিকার করে। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ১১ জুন জেলেরা সাগর ও নদীতে পুরোদমে ইলিশ শিকার শুরু করেছে। সাগর ও নদীতে জেলেদের জালে মোটামুটি ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু ইলিশ শিকার যাই হোক কিন্তু দামে আকাশ ছোয়া। গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালেই বাইরে ইলিশের দাম।
তালতলী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সূত্রে জানা গেছে, চার ক্যাটাগরিতে ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। ২০০-৩০০ গ্রাম, ৪০০-৬০০ গ্রাম, ৭০০-৯০০ গ্রাম ও ১০০০ গ্রামের উপরে। এ চার ক্যাটাগরির ইলিশের দাম প্রথম ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ৩৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ৬০ হাজার টাকা, তৃতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ৮০ হাজার টাকা ও চতুর্থ ক্যাটাগরির ইলিশের মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তাতে ছোট ইলিশ তথা প্রথম ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ৮৫০ টাকা, দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা, তৃতীয় ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ২ হাজার টাকা এবং চতুর্থ ক্যাটাগরির ইলিশের কেজি ৩ হাজার টাকা। এত দামে ইলিশ ক্রয় করা গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষমতার বাইরে। দুই উপজেলা আমতলী-তালতলীতে অধিকাংশ গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবার গত দুই বছরে ইলিশ মুখে তুলতে পারেনি এমন দাবি দেলোয়ার হাওলাদারের। এর মধ্যে সাগর ও পায়রা নদীর জেলেদের জালে শিকার হওয়া ইলিশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না বলে দাবী করেন ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ফরাজী। ওই মাছ ঢাকা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষিরা, পাবনা, গাজীপুর, মাদারীপুর, কালকিনি, শরীয়তপুর, নরিয়া ও পাটচর এলাকায় রপ্তানি হয়। এর মধ্যে বড় সাইজের ইলিশ মাদারীপুর জেলায় বেশি রপ্তানি হয়। ওই জেলায় বড় সাইজের ইলিশের চাহিদা বেশি বলে জানান ব্যবসায়ী টুকু সিকদার। ওই জেলার প্রবাসীরা এ ইলিশ ক্রয় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, গত দুই বছরে কোনো ধরনের ইলিশ কিনে খেতে পারিনি। ইলিশের যে দাম তাতে আমাদের মতো আয়ের মানুষের ইলিশ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। এই দামে ইলিশ কিনে খায় তা নেহায়েত বিলাসিতা।
তালতলী ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. টুকু সিকদার বলেন, এ অবতরণ কেন্দ্রের কোন মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। সমুদয় মাছ বাসে অথবা ট্রাকে করে উত্তরাঞ্চলে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে মাদারীপুর জেলায় এখানের বেশিরভাগ ইলিশ রপ্তানি হয়। ওই জেলার মানুষের ইলিশের চাহিদা বেশি। তিনি আরো বলেন, ইলিশের যে পরিমাণ দাম, এতো টাকা দিয়ে স্থানীয় মানুষের ইলিশ কিনে খাওয়ার সক্ষমতা নেই।
তালতলী উপজেলার ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. জুয়েল বলেন, বাজারে ইলিশ মাছের দাম অনেক চরা। চার ক্যাটাগরিতে ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। এতে ছোট ইলিশের মণ ৩৫ হাজার টাকাএবং বড় ইলিশের মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, দাম নির্ধারিত হয় পাইকারদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। তারা ইলিশ মাছ ডেকে দরদাম করে ক্রয় করেন।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, ইলিশ দাম নির্ধারণে আমার কোন নির্দেশনা নেই। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে সাধারণ মানুষ ক্রয় করতে পারত।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন মিয়া বলেন, ইলিশ মাছের দাম অনেক কিন্তু মূল্য নির্ধারণে আমার দফতর কাজ করে না। তিনি আরো বলেন, ইলিশের দাম নির্ধারণে জেলায় একটি কমিটি আছে, ওই কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সম্মান শেষ বর্ষের ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে রাজধানীর ভাটারা নতুন বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
শনিবার (২১ জুন) সকাল থেকে এই অবরোধ শুরু হয়। এতে করে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডামুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিপরীতমুখী সড়কে, অর্থাৎ বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডগামী যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল হাসান ইউএনবিকে জানান, সকাল ৮টার পর ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ওসি জানান, সম্মান শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অত্যন্ত কম নম্বর পাওয়ায় ভবিষ্যতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সমুদ্রসীমার একটি পরিপূর্ণ হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে আরো পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আরো মজবুত ও সমৃদ্ধ করতে সমুদ্র তলদেশের নির্ভুল মানচিত্রায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও টেকসই সমুদ্রনীতি গড়ে তুলতে হবে।
‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশে ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ দিবসটি আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘সিবেড ম্যাপিং: এনাবলিং ওশান এ্যাকশন’- যার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের তলদেশের মানচিত্রায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে, অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে বলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাংলাদেশই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বঙ্গোপসাগরের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে একটি উৎপাদনমুখী ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সমুদ্র সম্পদকে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহারে বিশদ, হালনাগাদ ও নির্ভুল হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যের কোনো বিকল্প নেই।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রসীমার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, চার্ট প্রস্তুত, সকল দেশি ও বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন অনুযায়ী, আমাদের মহীসোপান অঞ্চল নির্ধারণ এবং সুনীল অর্থনীতি বিকাশে হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমাদের সামরিক ও নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
তিনি ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
মন্তব্য