লকডাউনে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা ফেরাতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তুলি আক্তার এবং তার বড় বোন লিমা আক্তার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে বড় বোনকে ফোন করে জানিয়েছিল, ঈদে বাড়ি আসবে। কিন্তু তা আর হলো না। কারাখানায় আগুন থেকে বড় বোন লিমা বেঁচে গেলেও, নিখোঁজ তুলি।
তুলি ও লিমা হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে। আব্দুল মান্নানের ৬ মেয়ে ও ২ ছেলে। এদের মধ্যে তুলি পঞ্চম। উপজেলার কালাউক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। আর লিমা পড়ত লাখাই মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে।
তুলিকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে পরিবার। তারা বলছেন, এখন অন্তত মরদেহটা যেন পাওয়া যায়।
তুলির বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার মেয়েদের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। কিন্তু লকডাউনে স্কুল/কলেজ বন্ধ থাকার কারণে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে আমার দুই মেয়ে গিয়েছিল কারখানায় কাজ করতে। কিন্তু এখন আমার মেয়ে বেঁচে আছে না মারা গেছে জানি না।’
‘তুলি গত ৩০ জুন স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে ওইদিনই নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। কোরবানি ঈদের আগেই তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল।’
তুলির মামাতো ভাই রাজিব আহমেদ বলেন, ‘তুলি চারতলায় আর লিমা নিচতলায় কাজ করত। আগুন লাগার পর লিমা নিচ তলায় থাকার কারণে বের হয়ে আসলেও তুলি বের হতে পারেনি।
এই কারখানায় আগুনে মারা গেছেন জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গুলডুবা এলাকার নারী স্বপ্না রাণী। তার মৃত্যুটা ছিল একেবারেই অনাকাঙ্খিত। তিনতলা থেকে কিছু সময়ের জন্য বসের সঙ্গে দেখা করতে চারতলায় গিয়েছিলেন। আর ফিরতে পারেননি।
নিহত স্বপ্না রাণী ওই এলাকার যতী নমঃ-এর স্ত্রী। অস্বচ্ছল পরিবারে ৫ মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়া স্বামীকে সাহায্য করতে ৬ মাস আগে গ্রাম ছেড়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে।
সেখানে বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। সেজান জুস কারখানায় শ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন তিনি, তার স্ত্রী স্বপ্না ও বড় মেয়ে বিসকা।
যতী নমঃ জানান, আগুন লাগার সময় তিনি কারখানায় ছিলেন না। তার স্ত্রী ও মেয়ে নিচতলায় কাজ করত। আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে বসের সঙ্গে দেখা করতে চার তলায় গিয়েছিলেন স্বপ্না। আগুন লাগার পর মেয়ে বেরিয়ে এলেও, স্বপ্না আর সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারেননি। আগুন থেকে বাঁচতে জানালা দিয়ে লাফ দেন স্বপ্না। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দুই মেয়ে, আমার স্ত্রী আর আমি কাজ করার কারণে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছিল। স্বপ্নার স্বপ্ন ছিল ছোট তিন মেয়েকে কাজ নয়, লেখাপড়া করাবে। তাদেরকে শিক্ষিত করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পুরণ হলো না।’
শুক্রবার স্বপ্না রাণীর মরদেহ নবীগঞ্জ নিয়ে আসা হয়। মাকে হারিয়ে নির্বাক ৫ বোন।
লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। দাফনের খরচ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। এছাড়া পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী তাদের আর্থিক সহযোগিতাও করব।
আরও পড়ুন:খুলনা থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্বাস উদ্দিন। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি সারা রাত ঘুমাতে পারে নাই। কখন আসব, আর মুক্তির গান শুনব।’
আর কিছু মুহূর্ত। এরপরই বর্ণিল আয়োজনে উন্মোচিত হবে দেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর।
এই দিনটি বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তির দিন। আর এমন দিনে না আসলে আক্ষেপ থেকে যেত আজীবন। তাই এখানে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা। যে উচ্ছ্বাস তার কাছে ঈদের আনন্দের চেয়েও কম নয়।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এই বিজয় ঈদের আনন্দের চেয়ে কম নয়। সারা জীবন ঘাটে এসে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তির দিন আজ। এমন দিনে আসনে না পারলে মনে দুঃখ থেকে যেত। এখন মনে হয় পরিপূর্ণতা পেয়েছে। আর কয় দিনই বাঁচব। যে কয় দিন আসি, সেই কয় দিন শান্তিতে পার হতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঘোষণার দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে আসব। শুক্রবারই আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পরিবারের লোকজন আসতে দেয় নাই। পরে রাত ৩টার দিকে গাড়িতে করে রওনা দেই। সকাল ৭টায় শিবচর উপজেলার পাচ্চর নামিয়ে দেয়। পরে প্রায় ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সভামঞ্চের কাছে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন শান্তি পাচ্ছি। প্রশাসনের ভাইরা খুব সহযোগিতা করছে, না হলে মঞ্চের কাছে আসতে পারতাম না।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে শোভাযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খাঁন, সিভিল সার্জন মোয়াজ্জেম আলী খাঁন চৌধুরী, র্যাব-৪ এর লেফটেন্যান্ট কোম্পানি কোমান্ডার মো. আরিফ হোসেন, পৌর মেয়র মো. রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব। কারণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করতে পেরেছি। বিশ্বকে আমরা আমাদের সক্ষমতার কথা জানিয়ে দিলাম। আমরা পিছিয়ে নেই, আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার বিকেল ৬টায় আব্দুল মোমেনের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।
সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যারা অংশ নেবেন তাদের সবার করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা পাঠান এসপি।
এসপি মোমেন বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানতে পারি আমার করোনা পজিটিভ। তাই হোম আইসোলেশনে আছি। তবে যেহেতু জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্বে আছি, তাই ঘরে থেকেও কাজ করছি।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারলে পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি পেতাম।’
আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা; উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শনিবারের উদ্বোধনী জনসভায় যোগ দিতে শুক্রবার রাতে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ রওনা হন তিনটি লঞ্চে করে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে এসে পৌঁছায় লঞ্চগুলো। এরপর প্রতিটি লঞ্চ থেকে ফোটানো হয় আতশবাজি। এ সময় বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা অন্যান্য লঞ্চ থেকেও আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়; আলোকিত হয়ে ওঠে কীর্তনখোলা।
টানা ২০ মিনিট আতশবাজি ফোটানো হয়। এরপর এক এক করে সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা হয় লঞ্চগুলো।
প্রথমে সুরভী-৭ লঞ্চ বরিশালের কীর্তণনখোলা নদী অতিক্রম করে। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করা হয় লঞ্চটিতে। প্রতিটি লঞ্চেই এমন আলোকসজ্জার সঙ্গে নাচ-গানে মেতে ওঠেন মানুষ।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে ৬০টি লঞ্চ পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক লঞ্চ রওনা হয়েছে নেতা-কর্মীদের নিয়ে। আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হতে উচ্ছ্বসিত হয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছি।’
বরিশাল নদীবন্দরে রাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাস কার্ড ছাড়া বরিশাল নদীবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। এই নদীবন্দর থেকে ৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে এক লাখ মানুষ যাচ্ছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে। জনসমাবেশে যোগ দিতে আনন্দিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লঞ্চে করে রওনা হয়েছেন। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে নরসিংদী। শনিবার আত্মমর্যাদা ও প্রত্যয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে শুক্রবার গভীর রাতেই জেলার মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে জ্বলে ওঠে আলো।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ জেলায় দ্বিগুণ করতে জেলা প্রশাসন আয়োজন করছে ‘প্রত্যয়ের জয়গান’ নামের একটি কনসার্ট।
মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আজ বিকেল ৩টায় দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড দল ‘মাইলস’-এর শিল্পীদের মধ্যে গান পরিবেশন করবেন শাফিন আহমেদ। কনসার্টটি দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে।
নরসিংদী বিভিন্ন উপজেলাসহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রয়েছে দিনব্যাপী কর্মসূচি। এর মধ্যে শনিবার সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রারও আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান বড় পর্দায় উপভোগ করবেন নরসিংদীবাসী।
বর্ণিল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খানসহ স্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিরা ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন:আর ঘণ্টাদুয়েক পর পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট। পদ্মা সেতুর আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে জনসভা মঞ্চ। সেখানে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশ সফল করতে শনিবার ভোর থেকেই জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল নিয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ডসহ সভায় যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
ভোর ৫টার দিকে প্রায় হাজারখানেক মানুষের জটলা দেখা যায় সেখানে। সবার মুখে মুখে স্লোগান, পুরো এলাকাজুড়ে উৎসব উৎসব রব। সকাল ৬টার পর খুলে দেয়া হয় জনসভার জমায়েতের স্থান। দীর্ঘ লাইনে সবাইকে চেক করে ঢুকতে দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের।
পদ্মা সেতুর কাঁঠালবাড়ী সংযোগ সড়ক থেকে হেঁটে আসতে হচ্ছে তাদের। কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে লঞ্চযোগে সাধারণ মানুষ আসছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সকল ৭টার মধ্যেই জনসভাস্থলের প্রায় অর্ধেক এলাকা পূর্ণ হয়ে যায়।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বাংলাবাজার ঘাট নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, র্যাবসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুরো ৮ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই আনা হয়েছে সিসিটিভির আওতায়। এ ছাড়া বসানো হয়েছে ২৬টি বড় পর্দার মনিটর।
বরিশাল থেকে আসা রমিজউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১টায় লঞ্চে উঠছি। সারা রাত নাচ-গান করে সকালে ঘাটে নামছি। এটা ঈদের আনন্দের চেয়ে কোনো অংশেই কম না, বরং আমাদের মুক্তির দিন আজ। অনেক কষ্ট আর ভোগান্তি থেকে বাঁচার দিন। যে কারণে আমাদের ফুর্তি কোনো অংশেই কম নয়। বরিশাল থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ সভায় আসব।’
মাদারীপুর পৌর শহর থেকে এসেছেন নান্নু মুন্সি। তিনি বলেন, ‘সকালে আলো ফোটার আগেই চলে আসছি। প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার হেঁটে আসতে হয়েছে। এখন মাঠে আসছি, এতেই খুশি আমরা।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল মঞ্চের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ অন্তত ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। পুলিশের অন্তত ১৫ হাজার কর্মী সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়ার র্যাবের ২ হাজারসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ হাজার প্রশাসনের কর্মী মাঠে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর আদলে এবার পুকুরের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত সেতুটির দেখা মেলে পটুয়াখালী শহরের সার্কিট হাউসের সামনের পুকুরে।
শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনমানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সেতুটি নির্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেতুটি দেখতে ভিড় করতে দেখা যায় স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। সেতুতে উঠে অনেকে তুলছেন সেলফি, আবার গোটা সেতুকেও ক্যামেরাবন্দি করছেন অনেকে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার সকালে পুকুরের এই সেতুতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ এই আয়োজনে অনেক মানুষ অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন সেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গোবিন্দ ঘোষাল জানান, ২৪ জন মানুষের ছয় দিন সময় লেগেছে সেতুটি নির্মাণ করতে। শুক্রবার কাজ শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সেখানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ১৯টি স্প্যানের ওপরে নির্মাণ করা সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ ফুট। পানি থেকে ছয় ফুট উপরে সেতুতে নির্মাণ করা হয়েছে নমুনা রেললাইন। উপরে দুই পাসে ২০টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। সেতুটি আলোকিত ও দৃষ্টিনন্দন করতে বিভিন্ন রঙের লাইটিং করা হয়েছে।
এটি নির্মাণে ৪৮৫টি বাঁশ, ৫০০ ঘনফুট কাঠ এবং ১৫০টি প্লাইউড ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান সেতুর নির্মাতা গোবিন্দ।
সেতু দেখতে আসা শহরের মিঠাপুকুর পাড় এলাকার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সময় ও সক্ষমতার অভাবে সরাসরি পদ্মার পাড়ে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে পারিনি। কিন্তু কাঠের এ সেতু, এর নিচের পিলার ও রেললাইনের অংশ দেখে মনে হয়, এ যেন হুবুহু পদ্মা সেতু।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে জেলাবাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রম এই আয়োজন করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য