সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর এক দশকে কুমিল্লাবাসী কী পেল, সেই হিসাব মিলছে না। জলাবদ্ধতা, যানজটসহ নাগরিক নানা সমস্যার সমাধানে দৃশ্যমান উন্নতি না দেখে নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন বড় হয়েছে, ‘কী পেলাম এক দশকে।’
২০১১ সালে ১০ জুলাই বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক অধ্যাদেশে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে এক করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গ কিলোমিটারের করপোরেশনটির রয়েছে ২৭ ওয়ার্ড; পাঁচ লক্ষাধিক লোকের বসবাস এখানে।
সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়া নিয়ে সে সময় উচ্ছ্বাস ছিল নগরবাসীর মনে। তবে এক দশক পূর্তির দিন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নিয়ে নগরবাসী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করছেন নেতিবাচক মূল্যায়ন।
সিটি মেয়র নিজেই বলেছেন অনেক কিছু না পাওয়ার আক্ষেপের কথা। বলেছেন, যে জনবল আছে, সেটি দিয়ে উন্নত নাগরিক সেবা সম্ভব নয়। এ ছাড়া বাজেট স্বল্পতার বিষয়টি সামনে এসেছেন তিনি।
এই এক দশকে নগরীতে উঠেছে সুউচ্চ দালান। নগরীর শাসনগাছা থেকে পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, কান্দিরপাড়, টমসমব্রিজ- সবগুলো এলাকায় এখন বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি।
দখল হয়ে গেছে পানি নিষ্কাষণের খাল। কান্দি খালের দখলদার হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি উঠে এসেছে চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামও।
সিটি করপোরেশনের কোনো পরিকল্পনাবিদ নেই। ঠিকাদাররা ইচ্ছে মতে কাজ করেন। বিল তোলেন, সমস্যা আর শেষ হয় না।
পার্কিং নেই বলে যানজট শহরের এক নিয়মিত চিত্র। অন্য জেলা সদর থেকে কেউ আসলেই বলেন অপরিকল্পিত নগরী।
কুমিল্লার ‘সচেতন নাগরিক কমিটি’র সভাপতি বদরুল হুদা জেনু নিউজবাংলাকে বলেন, ২০১১ সালে ১০ জুলাই যখন সিটি করপোরেশন হয় আমরা নগরবাসী আনন্দিত হয়েছিলাম। তবে আমাদের আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। কারণ, সড়ক দখল করে অপরিকল্পিত নগরায়ন করা হয়েছে। নগরীর কান্দিরপাড়, ঝাউতলা ও রেসকোর্সে বেশ কিছু ভবন সড়কের উপরে গড়ে তোলা হয়েছে। যার ফলে এখন কুমিল্লা সিটি করপেরেশনকে এখন ইটের বস্তি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
‘প্রতি বছরই শুনেছি পরিকল্পিত নগরায়ন করার জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাস্তবে আমরা তার বাস্তবায়ন দেখি নাই। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে কুমিল্লা শহর।’
সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো জলাবদ্ধতা দূরীকরণ। তবে এ ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা কেউ বলতে পারবে না। বরং দিনকে দিন অবনতি হয়েছে পরিস্থিতির।
গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘কুমিল্লা শহরে জলাবদ্ধতা শুরু হয়েছে ২০০১-২০০২ সালের দিকে। তখন কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন কামাল চৌধুরী। বর্তমানে এটি চরম আকার ধারণ করেছে। চলতি বছর বর্ষায় আমার বাসায় পানি উঠেছে। আমি আমার এত বেশি জলাবদ্ধতা কখনও দেখি নাই। অবশ্যই এ জন্য মেয়রকে দায় নিতে হবে। গত এক দশকে তিনি নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমাধান করতে পারেননি।’
তবে নাগরিক সমস্যাগুলোর জন্য শুধু মেয়রকে দায়ী করতে নারাজ কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি নগরের পানি নিষ্কাশনের খাল দখল করেছে নগরবাসী। তাহলে পানি সরবে কীভাবে? গত ১০ বছরে নগরীর সড়ক ও ফুটপাতের অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। সিটি করপোরেশনের বাজেট ও জনবল সংকটও আমার নজরে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়রের অবশ্যই ব্যর্থতা রয়েছে। তবে আমাদেরও ব্যর্থতা আছে। এখন সুপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।’
মেয়র নিজেই জানালেন, করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। করোনার এই সময়ে তাই স্থানীয় সরকারের এই বিভাগটি থেকে কোনো সেবা মিলছে না। সব মিলিয়ে ৭/৮ জন লোক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ।
মেয়র কী বলছেন
সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হয়েছে ২০১১ সালে। নির্বাচন ও শপথ গ্রহণ করার পরে ২০১২ সালের ৩০ মার্চ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করি। তারপর যে বাজেট ও লোকবল দিয়ে উন্নয়ন কাজ শুরু করি তা যথেষ্ট ছিল না। ২০১৪ সালের শেষে মূলত সিটি করপোরেশনের কাজ শুরু বলা যায়।’
তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে এই ৯ বছরে ১৪৫ কোটি টাকা একনেকে পাস করেছে। যার মধ্যে ১০ ভাগ ট্যাক্স দিয়ে আনতে হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছরে ৮ কোটি টাকা করে দেয়া হয় চারটি কিস্তিতে। এ কম বাজেটে উন্নয়ন কাজ চলমান রাখা দুঃসাধ্য।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর ১২ শ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই বরাদ্দে আড়াইশ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। যার জন্য এ টাকা আনতে আমি নারাজ।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পানি নিষ্কাশন হয় কান্দি খাল দিয়ে। নগরীর টমছমব্রিজ থেকে নোয়াগাঁও চৌমুহনী পর্যন্ত খাল ৪০ জনের দখলে আছে। এর মাঝে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ, বন বিভাগ ও শাকতলা স্কুলও আছে।
‘পূর্বে যেখানে খাল ছিলো কুমিল্লা-নোয়াখালী ফোরলেনের কাজের কারণে অর্ধেক খাল ভরাট করা হয়েছে যা শহরে জলাবদ্ধাতার বড় কারণ। এ খাল উদ্ধারের জন্য স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সাথে আলাপ হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় আমরা কান্দিখাল দখলমুক্তের পর আরও সম্প্রসারিত করব। খালের দুই পাশে ওয়াল তৈরি করব।’
গত বছর সিটিতে জলাবদ্ধতা ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু সমস্যা দেখা দিয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধান করতে। যেহেতু পানি নিষ্কাশনের ৪ ভাগের ৩ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী বছর থেকে আর জলাবদ্ধতা হবে না।’
যানজট নিরসনে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে মেয়র সাক্কু বলেন, ‘ঈদের পরেই টাউন সার্ভিস শুরু হবে। আশা করি তখন থেকে আর যানজট সৃষ্টি হবে না।’
অপরিকল্পিত ভবনের কী সমাধান হবে- এই প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘আমরা অবৈধ ভবন মালিকদেরকে চিঠি দিয়েছি। বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ভবন ভেঙেছি। অভিযান চলবে।’
লোকবলের স্বল্পতার কথা তুলেছেন মেয়র। বলেন, তাদের ১২ শ লোকবল প্রয়োজন। কিন্তু আছে কেবল ৮৪ জন স্থায়ী এবং আট থেকে নয়শ জন মাস্টার রোলের কর্মী।
তিনি বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে জানিয়েছি। এখন তারা ৫২০ টি পদে লোক নিয়োগের জন্য অনুমোদন করেছেন।’
মেয়র সাক্কু বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বহু কাজ বাকি, লোকবল নিয়োগ ও বাজেট বাড়লে নাগরিক সমস্যা আর থাকবে না। আমরা সে লক্ষ্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য