চিকিৎসককে জরিমানা করে আলোচনায় আসা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে ৪টার দিকে তাকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইউএনও নজরুলের প্রত্যাহারের আদেশ আসে। তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তার জায়গায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম।’
সাতকানিয়ায় নিজ চেম্বারে শুক্রবার সন্ধ্যায় জরুরি ভিত্তিতে রোগী দেখতে যাচ্ছিলেন চিকিৎসক ফরহাদ কবির। তাকে সদরের কলেজ রোডের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও নজরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শনিবার রাতে নিউজবাংলাকে ঘটনার বিস্তারিত জানান সাতকানিয়ার আলফা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের চিকিৎসক ফরহাদ কবির।
ফরহাদ কবির বলেন, ‘আমি সাধারণত শুক্রবারে চেম্বার করি না। তবে ওই দিন চেম্বারে এক ইমার্জেন্সি রোগী এসেছে জানতে পেরে তড়িঘড়ি করে রোগী দেখার উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হই। কলেজ রোডের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে থামালে আমি পেশাগত পরিচয় দিই। তা সত্ত্বেও তারা আমার মোটরসাইকেলের চাবিটি নিয়ে আমাকে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
‘এ সময় ইউএনওকে আমার পেশাগত পরিচয় দিলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে কয়েকটি কুরুচিপূর্ণ শব্দ বলেন এবং বেশি কথা বললে জেলে নেয়ার হুমকি দেন।’
ডা. ফরহাদ বলেন, ‘জেলে নেয়ার কথা বলায় ঝামেলা না বাড়িয়ে আমার কোনো দোষ থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করি। এতে তিনি আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান। আমার কাছে দুই হাজার টাকা নেই জানালে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
‘এ সময় তার সহযোগীদের মামলার কাগজে খুব বাজেভাবে আমার নামের আগে ডা. শব্দটি বড় করে লিখতে বলেন তিনি, যেন ডাক্তারকেও ফাইন করা হয়েছে সেটা সবাইকে দেখানো যায়।’
তিনি আরও জানান, ইউএনও বলেছেন, ‘আপনারা লকডাউন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না।’
ফরহাদ বলেন ‘চিকিৎসক অন্যায় করে জরিমানা খেয়েছে বলে তা পত্রিকায় দেয়ার জন্য আমার ছবি তুলে রাখেন এবং আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেন তিনি।’
এ বিষয়ে সাতকানিয়ার ইউএনও নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ওই সময় আমার সঙ্গে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসাথে সাত-আটটি মোটরসাইকেল আটক করে। তিনি যে চিকিৎসক আমরা সেটি নিশ্চিত হতে পারিনি। কারণ আমরা তার কাছে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র চাইলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি। এমনকি তার মাস্ক ও হেলমেট পর্যন্ত ছিল না। তিনি নিজেই অন্যায় স্বীকার করে জরিমানা করতে বলেছেন।’
ওই চিকিৎসককে জেলে নেয়ার হুমকি এবং কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেছিলেন, ‘আমরা তো ইচ্ছে করে রাস্তায় নেমে সারা দিন খাটছি না। আমরা সরকারি নির্দেশ পালন করতে রাস্তায় নামছি। এ সময় কেউ ওই চিকিৎসককে জেলে নেয়ার হুমকি দেননি। কোনো কুরুচিপূর্ণ শব্দও কেউ ব্যবহার করেনি। আর তিনি যদি মনে করেন তার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে তিনি তো ডিসি স্যারের কাছে রিভিউ করতে পারেন, আমরা তো কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না।’
মাস্ক, হেলমেট, আইডি কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে ডা. ফরহাদ কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি ইমার্জেন্সি একটা রোগী দেখতে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমি তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলাম। তাই কিছু নেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তবে মাস্কের বিষয়টা অসত্য। তারা আমার ছবি তুলেছে, ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আমার মাস্ক ছিল কি না। এমনকি ছবি তোলার সময় মাস্ক নিচে নামাতে বাধ্য করেছিলেন তারা।’
এ বিষয়ে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী পুরুষ শিশু সহ ২৩ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত ৪ মাসে পঞ্চগড় সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রায় ২শতাধিক মানুষকে পুশইন করলো ভারতীয়রা।
আজ বুধবার (১৩আগষ্ট) সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নে ঘাগড়া বিওপি সীমান্ত এলাকা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু সহ ২৩ জনকে আটক করে নীলফামী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে ভারতীয় বিএসএফ তাদের পুশইন করে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা থেকে সকালে পুশইন করা ১৩ জন নারী,৯ জন পুরুষ ও ১ জন শিশুকে আটক করে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
আটকের পর তাদের পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাদের ভারতীয় পুলিশ আটক করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। পরে বিএসএফ পঞ্চগড়ের ঘাগড়া সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে।
আটককৃতরা বাংলাদেশের সাতক্ষিরা, যশোর, নড়াইল ও নীলফামারী জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তারা দির্ঘদিন ভারতের বোম্বে শহরে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে কাজ করতো বলে জানায়।
পুলিশ বলছে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সহ পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক পরিচয়ের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করা হবে ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি—যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক—জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আজ বুধবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করে তিনি তাঁর বক্তব্যে এ কথা বলেন।
কুয়ালালামপুরে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে এক আনন্দমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন প্রফেসর ইউনূস।
সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর, বাংলাদেশের বহু তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে—যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যৎ আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি—যেখানে শাসনব্যবস্থা হবে ন্যায়সঙ্গত, অর্থনীতি হবে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য। আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী রয়েছে।’
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।’
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা এবং দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে—শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে গিয়ে সবসময় মনে রেখো, প্রকৃত সাফল্য শুধু নিজের জন্য অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কীভাবে তুমি অন্যদেরও তোমার সঙ্গে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছো, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সেরা উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি তা হলো এমন এক পৃথিবী—যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘তোমাদের সিদ্ধান্ত, কাজ এবং মূল্যবোধই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব। তাই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, বড় স্বপ্ন দেখো, সাহসীভাবে চিন্তা করো, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করো। ভয় পেও না—প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপ মাত্র।’
পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত নেতার, প্রয়োজন সমস্যা-সমাধানকারীর- এ কথা উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে অসাধারণ কিছু করার—মানুষের সেবায় ব্যবসা গড়ে তোলার, জীবন বদলে দেওয়ার মতো নতুন ধারণা সৃষ্টির, অথবা এমন নীতি প্রণয়নের যা গোটা একটি সম্প্রদায়কে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো—সম্পদ ক্রমশ কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি—যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে।’
নিজের কর্মময় জীবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমার পথচলায়—অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করা থেকে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করা থেকে সামাজিক ব্যবসার প্রচার—একটি বিশ্বাস সবসময় আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, মানুষ প্রতিভা বা স্বপ্নের অভাবে দরিদ্র নয়, তারা দরিদ্র কারণ ব্যবস্থা তাদের ন্যায্য সুযোগ দেয়নি। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা ধনীদের সেবা করার জন্য গড়ে উঠেছে, গরিবদের জন্য নয়। এই সহজ সত্যই আমাকে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি, যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষও ক্ষুদ্রঋণ পেতে পারে, ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং নিজের জীবন বদলে দিতে পারে।’
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশ সবসময়ই দৃঢ় সম্পর্ক ভাগাভাগি করেছে—যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্নতির যৌথ স্বপ্নের ওপর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া অনেক পথ একসঙ্গে হেঁটেছে। আমরা পরস্পরের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথে সহযোগিতা করেছি। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে মালয়েশিয়া আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে। বছরের পর বছর ধরে আমাদের অংশীদারিত্ব বাণিজ্য, শিক্ষা, উদ্ভাবন ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কসহ বিস্তৃত হয়েছে নানা ক্ষেত্রে। এটি প্রমাণ করে, আমরা যখন একটি যৌথ উদ্দেশ্যে একসঙ্গে কাজ করি, তখন কত কিছু অর্জন করা সম্ভব।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশ এখন এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে, আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে চাই। সম্ভাবনাময় অনেক ক্ষেত্র রয়েছে—যেমন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, হালাল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন। একসঙ্গে আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি—যা হবে সমৃদ্ধ, উদ্ভাবনী, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক।’
সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করায় মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি এটি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করছি এবং আমাদের দুই মহান জাতির মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় করার জন্য নতুন করে অঙ্গীকার করছি। আমি পারস্পরিক শিক্ষা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করি, যাতে আমরা একসঙ্গে এমন এক বিশ্ব গড়তে পারি—যেখানে প্রত্যেক মানুষ, তার পটভূমি যাই হোক না কেন, নিজের সামর্থ্য বিকশিত করার সুযোগ পাবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আব্দুল কাদির ও ইউকেএম ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সুফিয়ান জুসোহ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ২০০ লিটার চোলাই মদসহ ডজন মামলার আসামি মো.বাবুল হোসেন ওরফে গ্যাস বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এসময় বাবুলের বসতঘর থেকে প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি এসব মদ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাবুল চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের পূর্ব চরনদ্বীপ এলাকার মোজাহের মিয়ার ছেলে।
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজ বসতঘরে অবৈধভাবে চোলাই মদ মজুদ রাখায় বাবুলের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া সিডিএমএস (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বাবুলের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ১০টি মামলা রয়েছে।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণের জনপ্রিয় অুনষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’ আবারও শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। নতুন কুঁড়ি ফেরার খবর দর্শকদের মনে খুশির জোয়ার বয়ে এনেছে, কেউ কেউ হয়ে পড়ছেন স্মৃতিকাতর।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব পেইজে এই তথ্য জানিয়েছে বিটিভি।
মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় ১৯৭৬ সালে বিটিভিতে শুরু হয় রিয়েলিটি শো নতুন কুঁড়ি। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার চলে। সে সময় এই অনুষ্ঠানের তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল। গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি ও অন্যান্য শিল্পকলার প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করেছে এই অনুষ্ঠান। এমনকি অসংখ্য শিল্পী ও বিনোদনজগতের ব্যক্তিত্বের ক্যারিয়ার শুরুর মঞ্চে পরিণত হয়েছিল নতুন কুঁড়ি।
মঙ্গলবারের ঘোষণার পর নতুন কুঁড়ির ভক্ত, সাবেক প্রতিযোগী ও সংস্কৃতিমনা মানুষসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস ও স্মৃতিচারণ করেছেন।
অবশ্য এখনো অডিশন প্রক্রিয়া, সম্প্রচার সূচি বা ফরম্যাটের কোনো পরিবর্তন হবে কিনা এ সংক্রান্ত কোনো বিস্তারিত তথ্য জানায়নি বিটিভি।
প্রথমবার ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল নতুন কুঁড়ি। স্বাধীনতার পর বিটিভিতে পুনরায় চালু হয়ে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় এই অনুষ্ঠানটি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে তরুণ প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিল নতুন কুঁড়ি।
বছরের পর বছর এই অনুষ্ঠান দর্শকদের সামনে হাজির করেছে বহু প্রতিভাবান শিল্পী, যারা পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন সবার পরিচিত মুখ।
এদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাকিয়া বারী মম, তমালিকা কর্মকার, সাবরিন সাকা মীম ও আজাদ রহমান শাকিল, গায়িকা সামিনা চৌধুরী, হেমন্তী রক্ষিত দাস ও মহবুবা মাহনুর চাঁদনীসহ আরও অনেকে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সঙ্গীতজগতে এসব শিল্পীরা নিজের ছাপ রেখেছেন।
নতুন কুঁড়ি অনেকের জন্য কেবল প্রতিযোগিতা নয়, বরং আজীবনের শিল্পযাত্রার প্রথম ধাপ ছিল।
২০০৬ সালে বিটিভির আর্থিক সংকট, বেসরকারি চ্যানেলের উত্থান এবং গণমাধ্যম পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দেশব্যাপী অডিশন, সরাসরি সম্প্রচার ও বিচার প্রক্রিয়া টিকিয়ে রাখা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘ বিরতির পরও নতুন কুঁড়ি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক হয়ে আছে। এর প্রত্যাবর্তনের খবরে আজও উচ্ছ্বাসে ভাসছে দর্শকরা।
নওগাঁর সাপাহারে টিভি দেখার প্রলোভন দিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় আজিমুদ্দিন (৫৫) নামের এক আসামিকে ১০বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ৫০হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
বুধবার (১৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো: মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন। এসময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট বিকেলে উপজেলার মির্জা পুর গ্রামে আজিমুদ্দিন একই গ্রামের ছয় বছর বয়সী দুই শিশুকে টিভি দেখার প্রলোভন দিয়ে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর দুই শিশু’র পরিহিত প্যান্ট খুলে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে শিশু’র বাবা সাপাহার থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় আদালত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ এই রায় দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আর আসামী পক্ষের কৌশলি আব্দুর রাজ্জাক উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
খুলনায় স্বামীর চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ময়না বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
আজ (১৩ আগস্ট) বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার নতুন রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ময়না বেগম সাতক্ষীরা জেলার মৌতলা গ্রামের বাসিন্দা আরিফ মোল্লার স্ত্রী।
খর্ণিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফজলুল করিম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সাতক্ষীরা মৌতলার বাসিন্দা আরিফ মোল্লার পিঠের টিউমার অপারেশন করার জন্য সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে তারা বাড়ি থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার নতুন রাস্তায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে অ্যাম্বুলেন্সটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চার জনের তিনজন সুস্থ থাকলেও আরিফ মোল্লার স্ত্রী ময়না ঘটনাস্থলেই মারা যান। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ডুমুরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ময়না বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে চালক দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে।
খর্ণিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফজলুল করিম বলেন, সংবাদ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে এসে তাদের সকলকে উদ্ধার করি। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য ডুমুরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আরিফ মোল্লার স্ত্রী ময়নার মৃত্যু হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৫০১ নং কক্ষে জনসংযোগ দপ্তরের আয়োজনে এই সেমিনার হয়। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম, যিনি সংবাদ পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা, নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় অনেক সময় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় থাকে না। হলুদ সাংবাদিকতা ও ফেসবুকনির্ভর সংবাদ পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেক সংবাদকর্মী যেন গঠনমূলক সংবাদ উপস্থাপন করেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ পরিবেশ গড়ে ওঠে।”
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতা রক্ষা ও সমাজের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
প্রায় অর্ধশতাধিক সংবাদকর্মীর অংশগ্রহণে আয়োজকরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য