টার্গেটে ছিল বয়স্ক অটোরিকশা চালক। হিসাব মিললেই রিজার্ভ নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা। তবে পথমধ্যে চালককে আপ্যায়ন করতে ভুলত না চক্রটি। জুসের সঙ্গে দেয়া হতো নেশাজাতীয় দ্রব্য। এরপর চালক জ্ঞান হারালেই তাকে ফেলে দিয়ে গাড়ী নিয়ে কেটে পড়ত চক্রটি।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের নন্দী গ্রামের ৫২ বছরের অটোরিকশা চালক শাহিনুর ইসলাম বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর গেল ১২ এপ্রিল নিখোঁজ হন। হদিস মিলছিল না তার অটোরিকশার। অবশেষে তার মরদেহ মর্গে পেয়েছিল পরিবার। তাকে হত্যা করেছে ধারণা করে মামলা করে পরিবার। এরপর মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় দুই নারীসহ চারজন।
যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন কুড়িগ্রামের পাথরডুবি গ্রামের খোরশেদ আলম, নেত্রকোণার হাটশিরা শিবনগর গ্রামের বকুল মিয়া ও একই এলাকার ইয়াসমিন আক্তার। এ ছাড়া ময়মনসিংহের কাদিরপুর গ্রামের শেফালী বেগম।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে শুক্রবার বিকেলে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুরের মনিপুর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ১২ এপ্রিল সকালে প্রতিদিনের মতো অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন শাহিনুর। রাতে বাসায় না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে পরিবার। পরে এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেন শাহিনুরের স্ত্রী না পারভীন আক্তার ।
এর দুইদিন পর ১৬ এপ্রিল ফেসবুক একজনের পোস্ট দেখে, পরিবার জানতে পারে একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। পরে মর্গে শাহিনুরের মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।
১৯ এপ্রিল ওই সাধারণ ডায়েরি হত্যা মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ হয়। মামলার তদন্তের ভার আসে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। দীর্ঘ তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার গাজীপুর হোতাপাড়া থানার মনিপুর বাজার অভিযান চালিয়ে দুইজন পুরুষসহ দুইজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইদিন তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোণার দুর্গাপুরে অভিযান চালিয়ে দুইটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে৷
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জুডিশিয়াল ক্যু করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরানোর ষড়যন্ত্র থেকে ছাত্র-জনতা রক্ষা করেছে। ফ্যাসিবাদের বিদেশি বন্ধুরা প্রতি-বিপ্লবের ইন্ধন দিচ্ছে।’
সোমবার মুন্সীগঞ্জ শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন সম্মেলন এবং গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নানা দাবি তোলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ১৫ বছর আপনারা কোথায় ছিলেন? দেশের মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও তাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে। হিন্দু ভাইদের আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকেরা।’
নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে জামায়াত যৌক্তিক সময় দিতে রাজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কার করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে তা না খুব শর্ট না খুব লং। ফ্যাসিবাদের পেতাত্মারা অনেক ক্ষেত্রে এখনও রয়েছে। তাই একটা নির্বাচন দিতে ন্যূনতম যতটুকু সংস্কার দরকার তা করতে হবে। রাতের ভোট দিনে আর হতে দেবে না বাংলাদেশের মানুষ।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘তাদের কথা ইতিহাসে লেখা থাকবে। স্বৈরশাসক থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ ঈদের আনন্দ করেছে। কিন্তু শহীদদের পরিবারগুলো ঘরের কোণায় কান্নায় জর্জরিত ছিলো।
‘অনেকে আহত হয়েছে। কে হাত-কেউ কেউ চোখ হারিয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের ঘোষণা যেন মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ না থাকে। শহীদের কাছে আমরা ঋণী। সেই ঋণ আমাদেরকে শোধ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সাতজনের পরিবারকে জামায়াতের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আ. জ. ম রুহুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মো. সাইফুল আলম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল জব্বার ও ইসলামী ছাত্রশিবির মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:নানা ধরনের সবজির মধ্যে বিশেষ একটি জায়গা দখল করে আছে ‘কাঁকরোল’। আর ব্যাপকভাবে এই সবজির চাষ হচ্ছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম গোমড়ায়। গ্রামটিতে বসবাসকারী সবাই বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন, যার মধ্যে কাঁকরোল অন্যতম। তাই গোমড়া গ্রামটি এখন ‘কাঁকরোল গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুর। এখানে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘গোমড়া’। এই গ্রামের চারশ’ একর জমিতে প্রায় ১২শ’ কৃষক কাঁকরোল চাষকে তাদের জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরজমিনে জানা যায়, এই এলাকায় কয়েক বছর আগেও পানি ও বিদুতের অভাবে বহু জমি পতিত ছিলো। এখন এ দুটি সুবিধা পাওয়ায় আর পতিত পড়ে থাকছে না এসব জমি। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে গ্রামের প্রায় সবাই নিজের কিংবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মৌসুমী সবজি চাষ করছেন।
শরৎ ঋতুর এই সময়টাতে পুরো এলাকার সবজির ক্ষেত কাঁকরোলে ছেয়ে গেছে। যদিও এসব ক্ষেতে গরম ও শীতের আগাম সবজি বেশি আবাদ করেন স্থানীয়রা। এখানকার উৎপাদিত সবজির মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
গোমড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে এই এলাকায় পানির জন্য প্রায় সব জমিই পতিত থাকতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ আসায় পানি সমস্যার সমাধান হয়েছে। আবাদের আওতায় এসেছে অনেক জমি।
‘আমরা মৌসুমভিত্তিক সবজির আবাদ করে থাকি। আমরা এখন সবজির মধ্যে কাঁকরোল লাগিয়েছি। সবজি আবাদ করে এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।’
কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ‘এটা পাহাড়ি এলাকা। এই এলাকায় আমরা সবজির আবাদই করি। আমি ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁকরোল লাগাইছি। আমি এবার কাঁকরোল বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হয়েছি। পোলাপানের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। পাঁচ সদস্যের সংসার চলছে এই সবজি আবাদ করেই।’
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের মানুষ। আগে কী যে কষ্ট করছি! মানষের জমিতে সারাদিন কাম করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাইছি। কোনো কোনোদিন কামও পাইতাম না। এই টাকা নিয়া বাজার করবার গেলে কষ্ট হইছে। এখন বাড়ির পাশে রহমত ভাইয়ের জমিন বাগি (বর্গা) নিয়া শুরু করছি কাঁকরোলের চাষ। এখন আল্লাহর রহমতে নিজেরা ভালা আছি।’
তবে স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ রয়েছে গ্রামের রাস্তা-ঘাট কাঁচা নিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সবজির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এদিকে কাঁচা রাস্তা হওয়ায় আমরা সবজি বাজারে তুলতে পারি না। নিলেও খরচ অনেক পড়ে যাওয়ায় লাভ কম হয়। সময়মতো বাজারে না নেয়ায় সঠিক দামও পাই না। আমরা কৃষকরা অবহেলিত।’
কৃষক খাইরুল বলেন, ‘এই এলাকার গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা করলে আমাদের খুব উপকার হবে। আমরা কৃষকরা সবজি আবাদ করে দামটা বেশি পাইতাম। খারাপ রাস্তায় সব গাড়ি সহজে আসবার চায় না। আসলেও ভাড়া বেশি পইড়া যায়। এজন্য লাভটা কম হয়।’
যেভাবে চাষ
কাঁকরোলের বীজ কাঁকরোল গাছের নিচে হয়ে থাকে, যা দেখতে মিষ্টি আলুর মতো। মার্চ ও এপ্রিলে এই সবজির চাষ করা হয়। চারা গজানোর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া সম্ভব। কাঁকরোল লতানো গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয় না। তাই বাগানে দু’ধরনের গাছ না থাকলে পরাগায়ন ও ফলন কম হয়।
চাষে খরচ ও লাভ কেমন
কৃষকেরা বলছেন, কাঁকরোল চাষে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় খরচ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়ে থাকে।
কাঁকরোলের উপকারিতা
কাঁকরোল অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি৷ এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন এ, বি ও সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে৷ কাঁকরোলে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না; ত্বককে করে উজ্জ্বল। এছাড়া কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার জানান, পাহাড়ের পাদদেশে কাঁকরোলের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। সবজি চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই সবজি কৃষক সরাসরি ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছে। সবজির মান ভালো হওয়ায় কৃষক দামও পাচ্ছে ভালো।
‘আমি মনে করি অন্যান্য কৃষি উদ্যোক্তা জমি ফেলে না রেখে মৌসুমভিত্তিক সবজি আবাদ করলে অবশ্যই লাভবান হবে। এ বছর এই উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোলের আবাদ হয়েছে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলার দুলশী গ্রামের শতবর্ষী অচিন বৃক্ষটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। গাছটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বৃক্ষপ্রেমিরা ছুটে আসতেন। শনিবার রাতে ঝড়ে গাছটি ভেঙে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুলশী নামক স্থানে উঁচু ঢিবিতে শতবর্ষী গাছটি ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এই গাছে ফলের স্বাদ অনেকটা ক্ষিরের মতো। তাই স্থানীয়রা এই বৃক্ষের নাম দিয়েছিল ‘খিরির গাছ’।
আর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অচেনা এই গাছটির নামকরণ করা হয় ‘বৃক্ষ মানিক’।
গাছটিতে ফল ধরলেও সেই ফলের বীজ থেকে কোনো চারা জন্মানো সম্ভব হয়নি। প্রাকৃতিকভাবেও এটির কোনো বংশবিস্তার হয়নি। ফলে জন্ম নেয়ার পর থেকে একাই শত শত বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাছটি।
সবচেয়ে প্রাচীন এই বৃক্ষ ইতোমধ্যে নাটোর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। গাছটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৫০ ফুট। গাছটি বিভিন্ন গবেষকও পরিদর্শন করেছেন। বিরল প্রজাতির এই গাছের সংখ্যা দেশে হাতেগোনা তিন থেকে চারটি রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান হোসেন বলেন, “এই গাছের বয়স কত তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। তারা ছোটবেলা থেকেই এ গাছটি দেখছেন। তার বাবাও দেখেছেন। তবে গাছটির বয়স অনেক হবে।
“জ্যৈষ্ঠ মাসে আঙ্গুর ফলের মতো ফল ধরে। খেতেও খুব সুস্বাদু। ফলের ঘ্রাণ খিরের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা গাছটির নাম ‘খিরির গাছ’ রেখেছিল। এ গাছটি দেখতে বহু দূর থেকে মানুষ আসতেন। অনেকে এখানে এসে মানতও করতেন।”
হাবিবুর রহমান নামে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই গাছটি একইরকম দেখেছি। আসলে এটির সঠিক বয়স কেউ জানে না। বাবা-দাদারা গল্প করেন। তারাও ছোট বেলা থেকেই গাছটি দেখেছেন।
‘তবে গাছটি বিশাল, যা খুব কমই দেখা যায়। অনেকে পরিবার নিয়ে দেখতে আসতেন গাছটি। গাছটি ভেঙে পড়ায় পুরো গ্রামের মানুষ বেদনাহত হয়েছেন। তারা স্বজন হারানোর মতো বেদনা অনুভব করছেন।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল বাবু ও দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ চারজনকে আটক করেছে জনতা। সূত্র: ইউএনবি
রোববার রাতে সীমান্ত এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে।
পুলিশ জানায়, রাতে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার জন্য তিনজন যাত্রী নিয়ে একটি প্রাইভেটকারের চালক ধোবাউড়া সীমান্তে আসেন। স্থানীয় জনতা টের পেয়ে একাত্তর টেলিভিশনের এমডি মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান ও সেলিম নামে প্রাইভেটকারের চালককে আটক করে স্থানীয় লোকজন। আটক চারজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চান মিয়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে দেননি।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে স্ত্রী-কন্যাসহ ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত কাওয়ালি অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র আন্দোলনের তিনজন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনী ও সদর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠান।
রোববার বিকেলে মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীতে দু’দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও আয়োজকরা জানান, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে কাওয়ালি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রোববার বেলা ২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠান শুরুও হয়। হঠাৎ জুবায়ের আহমেদ নাফিজ, মুন্না কাজীসহ বেশকিছু লোক অনুষ্ঠানস্থলে এসে আয়োজকদের ওপর হামলা করে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নেয়ামত উল্লাহ ও আশিকুল তামিম আশিক আহত হন। সেনাবাহিনী ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। বিষয়টি সমাধানের জন্যে দুপক্ষের লোকজন নিয়ে বসেও কোনো ফল আসেনি। পরে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে ইখতিয়ার আহমাদ সাবিদ নামে আরেকজন আয়োজককে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। পরে আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আয়োজকদের একজন আব্দুর রহিম বলেন, ‘যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের নিয়েই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু কয়েকজন নিজেদের ছাত্র আন্দোলনের কর্মী দাবি করে অনুষ্ঠানে আমাদের ওপর হামলা করে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছে। আমরা এদের বিচার দাবি করছি।’
তবে হামলাকারী জুবায়ের আহমেদ নাফিজ দাবি করেছেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। তাকে না জানিয়ে কাওয়ইল গানের আয়োজন করায় বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হয়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি এইচএম সালাউদ্দিন বলেন, ‘অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে আসার পর আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আহতরা অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নেয়া হবে।’
শেখ হাসিনা তার বাবার মৃত্যুর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেছেন, প্রতিশোধের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের নেতাদের রেখে তিনি ভারতে পালিয়েছেন।
রোববার ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার আয়োজনে এক গণসমাবেশে মামুনুল হক একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতারাই শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কীভাবে তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়া যায় সেই চিন্তা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলেন।’
মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা তার পরিবারের কাউকে রাজনীতিতে আনেননি। কারণ দেশের মানুষের ওপর তার কোনো আস্থা ছিলো না। তার চিন্তায়ই ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতির বারোটা বাজিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন।
‘প্রতিশোধের রাজনীতি করে দেশটাকে ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ছিলোনা। তিনি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আরেক দেশকে ট্রানজিট দিয়ে দেন। কারণ তিনি এ দেশের উন্নতি চাননি। দেশটাকে অঙ্গরাজ্যে পরিণত করাই ছিলো হাসিনার রাজনীতি।’
বাংলাদেশ খেলাফল মজলিস ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাঈদ আহমদ সাঈফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা এনামুল হক মূসা।
বক্তব্য শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা সেতুর নিচে চুবানো ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সেতু থেকে ফেলে দেয়ার হুমকির ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে রোববার মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একমাত্র আসামি করে মামলার আবেদন করা হয়।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বা সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১৮ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত।’ একইসঙ্গে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে চেষ্টার অভিযোগ তুলে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা নদীতে দুটি চুবানি দিয়ে সেতুর ওপর তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন তৎকালীন সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা এসব মন্তব্যের মাধ্যমে বিষোদগার করে বেগম খালেদা জিয়া ও দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসকে হত্যার সুপ্ত ইচ্ছা ব্যক্ত ও মানহানি করেছিলেন। তিনি খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে এবং হত্যার ষড়যন্ত্র করে, হত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন তথা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগের সন্ত্রাসীদের প্ররোচিত করেছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য