সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়কে বেরিয়েছিলেন চালক মহিদুল ইসলাম। সিলেট নগরে কোর্টপয়েন্ট এলাকায় অটোরিকশার গতিরোধ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায়।
মহিদুলের কাছে শাটডাউনের মধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চান ম্যাজিস্ট্রেট। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে জরিমানা করা হয় ৫০০ টাকা।
শাটডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ মানাতে সারা দেশেই এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের শাটডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখা, গণপরিবহন বন্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তবে প্রথম দিনে নির্দেশনা অমান্য করে অনেককেই বাড়ির বাইরে দেখা যায়। গণপরিবহন নিয়েও সড়কে বের হন কেউ কেউ। অনেকে দোকানপাটও খুলে বসেন।
এসব কর্মকাণ্ড রোধে দেশজুড়েই কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শাটডাউন কার্যকরে দেশের সর্বত্র তাদের তৎপরতা দেখা গেছে। এ দিন দেশের ৩৫ জেলায় ২ হাজার ৮২৯টি মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
নিউজবাংলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে সারা দেশে শাটডাউনের প্রথম দিনের চিত্র-
সিলেট: দোকান খোলা রাখা, যানবাহন সড়কে বের করা, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ শাটডাউনের বিভিন্ন নির্দেশনা অমান্য করায় সিলেট বিভাগে ৬০২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা।
জেলার সব উপজেলায় ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনভর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে তারা ১৭২টি মামলা এবং ২ লাখ ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশ ৪৮টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা এবং ১০৪টি যান আটক করে। এ ছাড়া বিধিনিষেধ অমান্য করায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৫ জনকে ১১ হাজার ২০০ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ ও মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব বলেন, ‘করোনার বিস্তার রোধে কঠোর লকডাউন যারা মানছেন না তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এই অভিযান শাটডাউন যতদিন চলবে ততদিন অব্যাহত থাকবে।’
লকডাউন কার্যকরে সিলেটের মৌলভীবাজারেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। নির্দেশনা অমান্য করায় জেলায় ১৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা।
শপিং মল, মার্কেট খোলা রাখা, গণপরিবহন ও সিএনজি চালানো, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে অবস্থান করায় এসব জরিমানা করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক।
হবিগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় ১২টি। এ সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন, অযথা মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরিসহ নানা অপরাধে ৬৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৬১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুনামগঞ্জে ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দিনভর অভিযান চালায়। এ সময় ১২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের কাছ থেকে ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বরিশাল: বিভাগের ভোলা জেলায় শাটডাউন কার্যকরে কাজ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১৭টি দল। লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে এ সময় ৯৯টি মামলা করা হয়।
এসব মামলায় ১০৪ জনকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থদণ্ড দিয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করা হয়। দুইজনকে দেয়া হয় পাঁচ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড।
জেলা প্রশাসক তৌফিক ই-লাহি চৌধুরী জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে সকাল থেকেই ভোলার সাত উপজেলায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
ঝালকাঠিতে লকডাউন অমান্যকারী ৪৩ জনকে ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, ‘জনসাধারণকে লকডাউন মানাতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি আমরা।’
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় লকডাউন অমান্য করায় মামলা হয়েছে ১২৫টি। এসব মামলায় ৭৩ হাজার ৭৮০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বরিশাল জেলায় শাটডাউন কার্যকরে সকাল থেকে মাঠে নামে ২০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্দেশনা অমান্য করায় এ জেলায় ৫৬টি মামলায় ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘লকডাউন বাস্তবায়নে বরিশালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম কাজ করছে জেলাজুড়ে। যারা অহেতুক বাইরে বের হচ্ছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’
রংপুর: শাটডাউনের প্রথম দিন বিভাগের আট জেলাতেই কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। যারা কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা।
নির্দেশনা কার্যকরে দিনভর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করেছে।
শাটডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করার কারণে এই বিভাগের চার জেলায় মামলা হয়েছে ১০০টি। জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ টাকা।
রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান মৃধা জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় ৩৮টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২২ হাজার ৬৪৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
গাইবান্ধায় ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন অপরাধে মামলা করে ৪৬টি। জরিমানা করে ২৫ হাজার ২৫০ টাকা। জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে কুড়িগ্রামে ৪ প্লাটুন সেনা, ২ প্লাটুন বিজিবি এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে ছিলেন।
জেলায় তিন অটোরিকশাচালককে দুই দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মাস্ক না পরা এবং দোকান খোলা রাখায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ঠাকুরগাঁওয়ে ১২টি হোটেলকে ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই জেলাতেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন।
নীলফামারী জেলার এডিএম মিরাজ মুরাদ হাসান জানান, নির্দেশনা উপেক্ষা করায় ৪৭টি মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রাজশাহী: কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
রাজশাহী শহরে জেলা প্রশাসনের চারজন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ ছাড়া ৯টি উপজেলার প্রতিটিতে দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছিল।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিত সরকার জানান, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে মোট ৫০টি মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ১৮৬০; সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮-এর ধারায় এসব মামলা হয়।
এ সময় ৫০ জনের কাছ থেকে ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশও দিনভর অভিযান চালায়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, শহর থেকে ২৮টি যানবাহন জব্দ করা হয়। বিধি ভঙ্গ করে রাস্তায় বের হওয়ায় জব্দ করা এসব যানের মধ্যে রয়েছে একটি মোটরসাইকেল, দুটি পিকআপ ও ২৫টি অটোরিকশা।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জানান, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ১৫টি মামলা ও ৯১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বগুড়ায় জেলা শহর ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। সারা দিনে এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫টি মামলা করে। আদায় করা হয় ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা।
লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নাটোরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা। নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য এবং দোকানপাট খোলা রাখায় ২০ মামলায় ৯ হাজার ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ জেলায় ৭৯টি মামলায় ৬০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসনের ১৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৯ মামলায় ১২৬ জনকে জরিমানা করে। এ সময় ১৯ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় দুটি করে মোট ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে। সদরে এক প্লাটুন বিজিবি ভেঙে দুটি দল করা হয়। প্রতি দলে ছিলেন একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট। একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর দল ছিল তিনটি। তবে এ জেলায় কাউকে আটক বা জরিমানার খবর পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ সদর, সাপাহার, নিয়ামতপুর, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা, মাস্ক না পরা ও দোকানপাট খোলা রাখায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এ সময় ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় ৩৭টি মামলায় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত সাত মামলায় ৭০০ টাকা, মুহাম্মদ ইনামুল হাসান একটি মামলায় ৫০০ টাকা, মো. উমর ফারুক ছয় মামলায় ১ হাজার ৬০০ টাকা, মো. মাসুদ রানা চার মামলায় ৪ হাজার ৭০০ টাকা, মো. জিল্লুর রহমান চার মামলায় ১ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেন।
এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন এক মামলায় ১ হাজার টাকা, নূরজাহান আক্তার সাথী ৯ মামলায় ১ হাজার ১০০ টাকা, ফাহমিদা আফরোজ ও প্লাবন কুমার বিশ্বাস সাত মামলায় দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কুমিল্লা জেলাজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে মামলা হয়েছে ৩১১টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা।
কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে। বিধিনিষেধ না মানায় দুইজনকে তিন মাসের জন্য কারাগারে পাঠান ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।
নোয়াখালীতে মাঠে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ জেলায় প্রশাসনের ২১টি দল ১৪৭ মামলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করে।
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা না মানায় ৫৬ জনের কাছ থেকে ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে লকডাউন নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে মাঠে ছিল জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, এ জেলায় ৭০টি মামলা হয়েছে। তবে এসব মামলার বিপরীতে কত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
রাঙামাটিতে ১২টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ টাকা।
ময়মনসিংহ: শাটডাউনের প্রথম দিনে ময়মনসিংহে মামলা হয়েছে ২৭৭টি। এসব মামলায় ২ লাখ ৩৫ হাজার ১০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযানে এসব জরিমানা আদায় করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক জানান, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলায় ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনাররাও (ভূমি) অভিযান চালিয়েছেন।
এ ছাড়া ৫ প্লাটুন সেনা, ২ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও র্যাব, পুলিশ, আনসার এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সার্বক্ষণিক টহল ছিল। এ ছাড়া বিধিনিষেধ কার্যকরে মাঠে ছিল সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে বের হওয়া ব্যক্তিগত যান থামিয়ে কারণ জানতে চেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সদুত্তর দিতে পারলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে অহেতুক চলাচলকারীদের মামলা দিয়ে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। যারা নির্দেশনা অমান্য করছেন তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। ৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।’
নেত্রকোণায় প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মানায় ১৭৯ মামলায় ১৭৯ জনকে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এই অর্থদণ্ড দেয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ জানান, জেলা শহরসহ ১০ উপজেলায় ২৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।
শেরপুরেও সকাল থেকে মাঠে তৎপর ছিল ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ও বাইরে ঘোরাফেরা করার অভিযোগে জেলা সদরসহ ৫ উপজেলায় ১৭৬টি অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৮৬ জনের কাছ থেকে ৫২ হাজার ২০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এর মধ্যে শেরপুর সদরে ৩৯, শ্রীবরদী ছয়, নালিতাবাড়ীতে ১১, ঝিনাইগাতী ১১ ও নকলায় ১৯ জনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
খুলনা: বিভাগের মাগুরা জেলা সদরসহ তিনটি উপজেলায় ৫৬ জনকে মামলা ও জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পৃথক অভিযানে জরিমানা করা হয় ৩৬ হাজার টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৫ মামলায় ২১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনা করেন।
সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অভিযানে মামলা করা হয়েছে ৪০টি। এসব মামলায় ৩২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবির।
যশোরে শাটডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে ৩০ জনকে।
কুষ্টিয়ায় ৩৬ মামলায় অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে ৩৯ জনকে। তাদের কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা আদায় করা হয়।
বাগেরহাট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৬ জনকে ৪৩ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা করে। এই জেলায় মামলা করা হয়েছে ৭৩টি।
মেহেরপুরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির বাইরে মাচায় বসে আড্ডা দেয়ার সময় ছয়জনের ২০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ তথ্য জানিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল আলম।
আরও পড়ুন:আমি তখন কলেজে পড়ি। স্যারের বাসায় যত সিনসিয়ারলি যাই তত সিনসিয়ারলি পড়ালেখা করি না। পুরা শহর ঘুরে বেড়ানোয় যত মনোযোগ ততটা মনোযোগ কলেজে যাওয়ায় না। তবে নিঃসন্দেহে দারুণ সময় পার করছিলাম। একদিন আমি কোনো এক কাজে রিকশায় করে ফরেস্ট ঘাটের দিকে যাচ্ছিলাম। যথারীতি রিকশা চালকের সাথে নানবিধ গল্প করছি। রাজনীতি, শহর, দেশসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই আমাদের আলোচনায় স্থান পাচ্ছিল। রিকশা চালকের চিন্তা এবং জ্ঞান দেখে আমি বেশ মুগ্ধই হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম যে আমাদের সমাজে আসলেই অনেক সুচিন্তাশীল মানুষ আছে যারা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ঘটনা ঘটলো যেটা আমার চিন্তাশক্তিকে কিছুক্ষণের জন্যে অবশ করে দিলেও পরবর্তীতে একটা কঠিন সত্যকে জানতে সাহায্য করেছিল। ফরেস্ট ঘাটের কাছাকাছি একটা জায়গায় পৌঁছেতেই কিছু দূরে একটা জটলা মত পেলাম এবং একজন পথচারীর কাছ থেকে জানতে পারলাম তিনি আর কেউ না, শহরের সবচেয়ে কুখ্যাত টেরর (যার নাম বললে আপনারা সবাই চিনবেন)। আমি কেন যেন আর অগ্রসর হতে চাইলাম না। রিকশা চালককে ওখানেই আমাকে নামিয়ে দিতে বললাম। ঘৃণা থেকেই হোক বা অজানা শঙ্কায় হোক সে মুহূর্তে ওই মানুষটার কাছাকাছি যেতে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল না। আমি রিকশা থেকে নেমে যখন ভাড়া মিটাচ্ছিলাম তখন দেখি আমার সেই রিকশাচালক বেশ রাগান্বিত হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশা চালককে তার হাতের বিড়িটা ফেলে দিতে বলছে। প্রায় ধমকের স্বরেই বলেছিল, ‘বিড়ি ফ্যাল ব্যাটা। সামনে একজন সম্মানিত মানুষ দেখা যায় সেটার খেয়াল নেই?’ আমি বেশ ভালো রকমের ধাক্কা খেলাম। অনেকটা বিড়বিড় করে বললাম, ‘সামনে কোনো সম্মানিত লোক আছে যে এখানে দাঁড়িয়ে এই রিকশাচালক বিড়ি খেতে পারবে না?’ তখন আমার সেই রিকশাচালক আমার উপর বিরক্ত হয়েই বলেছিল, ‘ভাইরে চিনেন না?’ আমি আর কোন কথা না বলে যতটা সম্ভব দ্রুত হেঁটে বিপরীত দিকে চলে গিয়েছিলাম। মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের রিকশা থেকে সেই সম্মানিত(!) লোক এতটুকু দুরুত্বে ছিল যে আরেকজন রিকশাচালক বিড়ি খেলে সেটা দেখতে পাবে না। তার মানে সে ভয় থেকে কথাটা বলে নি। বরং তার চোখে মুখে এক ধরনের মুগ্ধতা দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ আগেও যে রিকশাচালককে আমি বুদ্ধিমান, বিবেকবান মনে করেছিলাম তার প্রতি আমার দৃষ্টি ভঙ্গিটাই মুহূর্তে পালটে গিয়েছিল।
এটুকু পড়ে হয়তো অনেকেই ভাবছেন এটাতে কি আর এমন ঘটনা আছে যে এত বছর পরে এসে আমাকে লিখতে হবে? আসলে এটা আমার একটা ভিন্ন চিন্তা শক্তিকে উন্মুক্ত করেছিল। এরপর থেকে একটা বিষয় আমি খুব ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করি। আমরা কম বেশি সবাই নীতি কথা বলি, বিবেকের কথা বলি; কিন্তু অসৎ এবং খারাপ মানুষদের কেন এক গোপন সমর্থন দিয়ে যাই? কেন অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের সবচেয়ে খারাপ মানুষদের একজনকে ভোট দিয়ে আমরা নির্বাচিত করি? কোনো এক ব্যাক্তি যদি অশ্লীল কথা বলে তারপরেও কেন আমরা তাকে পছন্দ করি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ফলো করে যাই? তারচেয়েও যেটা আমাকে বেশি ভাবতে সাহায্য করেছিল যে আমাদের চোখের সামনে পরিষ্কার অনিয়ম, অন্যায় দেখতে পেলেও কেন আমরা তার প্রতিবাদ তো করিই না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা তার নীরব সমর্থনও দিয়ে যাই? আর এই অনিয়মের অংশ কিন্তু মূর্খ, জ্ঞানহীন বা অবুঝ মানুষজনই শুধু না বরং শিক্ষিত, মার্জিত, বুদ্ধিমানেরাও। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন আমরা সম্মিলিতভাবে অন্যায়কে মেনে নেই?
আমরা সবসময় আমাদের স্বার্থ নিয়েই ভাবি। আমাদের কম্ফোর্ট নষ্ট হয় এমন কিছুকে ইচ্ছা করেই এড়িয়ে চলি। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে আমরা সত্য খুঁজি না, আমাদের কম্ফোর্ট খুঁজি। অর্থাৎ, যে ঘটনা বা তথ্য আমাদেরকে ডিসকম্ফোর্ট দিবে সেটাকে আমরা দেখেও না দেখার ভাণ করি। মনে করেন আপনি একটা গাড়িতে বসে আছেন। সেই গাড়িটা যদি ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করে বা কাউকে বোকা বানিয়ে আপনাকে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে দেয় তখন কিন্তু আপনি মনে মনে খুশী হবেন। আবার ঠিক বিপরীতভাবে, আপনার পাশ দিয়ে আপনাকে বোকা বানিয়ে যদি আরেকটা গাড়ি নিয়ম ভঙ্গ করে কোন ব্যানিফিট নেয় তাহলে তার উদ্দেশে নৈতিক কথা বলবেন এবং সে যে অন্যায় করেছে সেটার জন্যে আপনি কথা শুনিয়ে দিবেন। তার মানে ন্যায় এবং সত্য আপনার স্বার্থের সাথে সমন্বয় করে চলে। কোনো অসৎ এবং খারাপ মানুষের কাছ থেকে আপনি যদি সুবিধা পেয়ে থাকেন তাহলে তার সেই অসততা আপনি মনে মনে মেনে নেবেন।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে কি সবাই অন্যায়ের সাথেইে আপস করে চলে? না, সবাই আপস করে না। সংখ্যায় খুব অল্প হলেও অনেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মতামত প্রদান করে। তবে এর ফলে তাকে অনেকটাই সমাজচ্যুত হতে হয়। এখন হয়তো ভাবছেন কয়টা বিষয়ে কজনা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে? এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র আন্দোলনে না। এর অনেক রূপ আছে। মজার বিষয় হচ্ছে সেসব প্রতিবাদীরা আইসোলোটেড হয়ে যায়, কারণ আমি আপনিই নিয়মের জালে তাদের একলা করে দেই। সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্টিং মিডিয়া সব জায়গায় দেখবেন চটুল লোকদের জয়জয়কার। যারা ন্যায়ের কথা বলছে, সমাজ ও দেশের কথা বলছে তাদের অস্তিত্ব থাকছে না। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে ন্যায়ের কথা বলা লোকজনেরা শুধুমাত্র কোণঠাসাই হয় না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আক্রমণের স্বীকারও হয়।
ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে সবচেয়ে ভালো ও জনপ্রিয় ছাত্রটিই সাধারনত সবচেয়ে ভালো মিথ্যাবাদী। অন্যভাবে বললে যে যত সুন্দরভাবে গুছিয়ে এবং কনভিন্সিংলি মিথ্যা বলতে পারে সে তত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এমনকি গবেষকরা বলেছেন যে বর্তমান সমাজে বুঝিয়ে মিথ্যা বলতে পারাটা দারুণ একটা স্কিল হিসাবে গন্য হতে পারে। যারা এই মতবাদে বিশ্বাসী না তাদের অনুরোধ করব একটু ভালো করে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। অনেক ক্ষেত্রেই ডিসিভাররা দারুণভাবে জনপ্রিয়। তারা সুন্দরভাবে গুছিয়ে মিথ্যা বলে আমাদেরকে মিথ্যা গিলিয়ে দিচ্ছে। তাদের মিথ্যা ধরার মতো ক্ষমতা বেশিরভাগ মানুষেরই নেই। যারা মিথ্যাকে ধরতে পারছে তারা প্রতিবাদ করছে না কারণ এতে করে তারা আক্রমণের স্বীকার হবে। এটাই আমাদের সমাজের অদ্ভুত নিষ্ঠুরতা। সত্য যখন আমাদেরকে ডিসকম্ফোর্ট দেয় কিংবা আনসেটেল্ড করে দেয় তখন আমরা সত্যবাদীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আক্রমণ করে বসি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে কেন সত্যের চেয়ে মিথ্যা বেশি প্রসারিত এবং জনপ্রিয়। এর সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে, সত্য উপলব্ধি করার জন্যে জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, সত্যকে যাচাই করে নিতে হয়। সত্য কখনো কখনো রূঢ় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য আমাদের ডিস্কম্ফোর্ট দেয়, আমাদের স্বার্থে আঘাত হানে। অন্যদিকে মিথ্যা হচ্ছে সহজ এবং চটুল। মিথ্যাকে যাচাই করতে হয় না, মিথ্যাকে ধারণ করার জন্যে কোন জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। মিথ্যার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মিথ্যা আপনাকে কম্ফোর্ট দিবে, কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে দিবে না। সত্য র্যাশিওনাল আর্গুমেন্টকে উৎসাহিত করে আর মিথ্যা আবেগকে ম্যানিপুলেট করে। যেটা আবেগকে ম্যানিপুলেট করতে পারে তার জয় তো হবেই, তাই না?
কগনিটিভ ডিসোন্যান্স নামে সাইকলোজিতে একটা পরিস্থিতি আছে। এটা হচ্ছে নিজের ভেতরে নিজের আরেকটা ভিন্নমত। আমার মনে হয় কম বেশি আমরা সবাই এই সমস্যাতে ভুগি। এটার মাত্রা বেড়ে গেলে তখন হয়তো রোগাক্রান্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। অনেক সত্যই আমরা জানি কিন্তু সেই সত্যকে আরেকটা যুক্তি দিয়ে আমরা নিজের কাছে নিজেই আশ্বস্ত হতে চাই। একটা উদাহরণ দেই যেটা আমাদের আগে আলোচনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একজন অসৎ এবং খারাপ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নেতা হিসাবে মেনে নেই। একজন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজকে দেখবেন পিএইচডি করা এক ব্যাক্তি ভোট দিচ্ছে। এসবই হচ্ছে কম্ফোর্ট দেয়া মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। একজন খারাপ মানুষকে যখন আমরা সমর্থন করি তখন নিজের কাছে নিজেই যুক্তি দেই যে, অমুক তো এর চেয়েও বেশি খারাপ কাজ করেছে। তমুক তো, এই ভালো কাজটা করেনি। অতএব, আমি যে খারাপ মানুষটাকে সমর্থন করছি সেটা করাই যায়। আমাদের সমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের এক চূড়ান্ত জায়গায় এসে উপনীত হয়েছে। আমরা নিজ স্বার্থে মিথ্যাকে আকড়ে ধরে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে বসবাস অনুপযোগী এক সমাজ ব্যবস্থা রেখে যাচ্ছি। আমরা সম্মিলিতভাবে মিথ্যাকে মেনে নিয়েছি। আমরা সবাই কগনিটিভ ডিসোন্যান্সে সংক্রমিত।
লেখক: কথাশিল্পী ও নাট্যকার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ডা. হামদু মিয়া স্মৃতি শিক্ষা বৃত্তি–২০২৪-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার ইব্রাহিমপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. কামরুজ্জামান। তিনি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বও করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নবীনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম হোসেন খান টিটু, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মোছা, সাবেক চেয়ারম্যান মো. নোমান চৌধুরী, ইব্রাহিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন, প্রধান শিক্ষক শাহানাজ আক্তার, আল আমিন খন্দকার, মো. আলী মাহমূদুর রহমান রাছেল ও মাজেদুল হকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন ৯৬ ব্যাচ।
শেষে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
একটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা। সোনাইমুড়ীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে থানায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে থানা এলাকার ভবন অত্যন্ত পুরাতন, জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী। এখানকার সব ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা যায়, সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ পরিত্যক্ত ভবনে কোনোরকমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এছাড়াও নেই দৈনন্দিন ব্যবহার ও খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও। ১৭০.৪২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সোনাইমুড়ী থানায় ২০২২ সালের জনশুমারী অনুযায়ী রয়েছে মোট জনসংখ্যা ৩,৬৮,৮৪২। এই জনসংখ্যার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন ১জন ওসি, ১ জন ওসি তদন্ত, এসআই ৮ জন, এএসআই ১০ জন ও ২৮ জন কনস্টেবল সহ প্রায় ৫০ জন। গত ৫'ই আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত থানায় ৪ টি গাড়ি থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২টি গাড়ি। গাড়িতে ব্যবহারের জন্য ২৫ থেকে ৩০ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকলেও সরকারিভাবে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৫ লিটারের। ২০০৬ সালে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে থানায় রূপান্তরিত হলেও বর্তমানে এখানে নেই প্রয়োজনীয় জনবল। তাই এই এলাকায় গঠিত অপরাধ দমনে প্রতিনিয়ন হিমসিম খেতে হচ্ছে থানা কর্তৃপক্ষের। থানা ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিন সেট ঘর নির্মাণ করে ফোর্সের আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ৫ জনের স্থানে গাদাগাদি করে রাত্রি যাপন করে ৮/১০ জন। থানা পুলিশের ব্যারাকে ১৫ জনের মধ্যে থাকে ২০-২৫ জন। আর অফিসারদের জন্য কোন থাকার ব্যবস্থা নেই। ১৫ আগস্টে পুড়িয়ে দেওয়া থানা ভবন ও অন্যান্য ভবন কোনরকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকছে পুলিশ সদস্যরা। আগত সেবা-প্রার্থীদের বসার কোন স্থান নেই।
থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন জানান, এই থানায় জনবল অনুযায়ী নেই বসবাসের সুব্যবস্থা। একটি পরিত্যক্ত ভবনে কোনো রকম গাদাগাদি করে থাকতে হয়। বিশুদ্ধ পানিরও রয়েছে চরম সংকট। বরাদ্দকৃত গাড়ির জন্য ২৫ থেকে ৩০ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকলেও সরকারিভাবে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৫ লিটার তেল। এ অবস্থায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খেতে হচ্ছে থানা পুলিশের।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, নানা সংকটে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ। এটা সত্য। ডিউটি করতে পুলিশের গাড়ি সংকট রয়েছে। এখানকার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা সব সংকট মোকাবিলা করে থানার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। চুরি ছিনতাইসহ সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতোপূর্বে কয়েকটি ডাকাতি ও চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা উদঘাটন হয়েছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার করটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে কাঁকড়ার ঝোড়ার ওপর ২ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ টাকা ব্যয়ে
নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ব্রিজের নির্মাণকাজ। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা দীর্ঘ সময়েও শেষ হয়নি ব্রিজের কাজ।
উপজেলার কালিদাস-বহুরিয়া সড়কের করটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে কাঁকড়ার ঝোড়া নামক স্থানে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ থেমে থেমে চলছে। একটানা যতদিন কাজ চলে তার কয়েক গুণ বেশি সময় বন্ধ থাকে নির্মাণ কাজ।
যানবাহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্রিজের দুই পাড়ের হাজারো মানুষ। দৈনন্দিন প্রয়োজনে উপজেলা শহর বা অন্য কোথাও যেতে চাইলে ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে অর্থ ও সময় দুই-ই বেশি ব্যয় হচ্ছে তাদের।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার ব্রিজটির কাজ পায় মাইন উদ্দিনবাসী নামক ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজটি এখনো চলমান। এলজিইডির কাগজপত্রে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
ওই সড়ক ব্যবহার করে স্থানীয় বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবা গ্রহীতা ও উপকারভোগীদের একটি বৃহৎ অংশ যাতায়াত করে। বিকল্প সড়ক ঘুরে আসতে অনেক সময় লেগে যায়। এতে বয়োবৃদ্ধ,নারী -শিশুসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কাঁকড়ার ঝোড়া ব্রিজটি সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে কালিদাস, ঠকাইনাপাড়া, ফুলঝুড়িপাড়া, করটিয়া পাড়া, বেলতলী, হারিঙ্গাচালা, হতেয়া-রাজাবাড়ি, কালমেঘা, ছলংগা ও বহুরিয়া চতলবাইদসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার। ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান কিছুদিন কিছু কাজ করে বেশ কয়েকবার লাপাত্তা হয়ে গেছে। গত কয়েক মাস ধরেও বন্ধ রয়েছে ব্রিজের কাজ।
তারা আরো বলেন, ব্রিজটি সম্পন্ন না হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আমাদের সন্তানেরা স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় সময় মতো যেতে পারছে না। অসুস্থ রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে। দ্রুত শহরের হাসপাতালে নেওয়ার উদ্দেশে কাঁধে করে তাদের পার করতে হয়। আমাদের প্রয়োজনে কোনো কাজের মালামাল আনতে পারি না। ফল-ফসল ও শাকসবজি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও এই ব্রিজের কারণে আমরা খুবই সমস্যায় আছি। ছোট খাটো মালামাল হলে আমরা কাঁধে ও মাথায় করে পার করি। আমরা সকলে মিলে টাকা তুলে সাময়িক পারাপারের জন্য ব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করেছি। অথচ সাময়িক পারাপারের ব্যবস্থাও সরকারিভাবে ঠিকাদারের করার কথা বলে আমরা জানি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি খুব তাড়াতাড়ি যেন এই ব্রিজের কাজটি সম্পন্ন হয়।
ব্রিজের দুই পাড়ের দুটি বাজার কালিদাস ও করটিয়া পাড়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, মালামাল পরিবহন করা কষ্টকর, সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। প্রায় পাঁচ বছর যাবত আমরা কষ্ট, অতিরিক্ত সময় ও ব্যয়ভার বহন করছি। আমরা এর থেকে নিস্তার চাই।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
সখীপুর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান জানান, পিএসসি গার্ডার ব্রিজটির ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে কাজটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই কাজটি শুরু হবে এবং আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে আমরা কাজটি শেষ করতে পারব।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে এক অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখলো নরসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালীর মানুষ। বিশ্ব যখন আধুনিকতার জয় গানে মুখরিত। ঠিক তখনি এক মধ্যযুগীয় বর্বরতার চোরাবালিতে আটকে ছিল আলোকবালী ইউনিয়নের মানুষের ভাগ্য।
সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালীতে আধিপত্য বিস্তার, মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন, রাজনৈতিক কোন্দল এবং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘটে আসছিল খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি আর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ইতোপূর্বে এ এলাকার মানুষ টেঁটা ব্যবহার করে মারামারি করত। বর্তমানে তারা বন্ধুক, পিস্তল এবং অবৈধ ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে এলাকার পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছিল। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইদন মিয়া (৬০) নামে এক বিএনপির কর্মী, ১৯ সেপ্টেম্বর ফেরদৌসি বেগম (৩৬) নামে এক গৃহবধূ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর সাদেক হোসেন (৪২) নামে এক যুবদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ সকল ঘটনায় আরো অন্তত ২৫-৩০ জন আহত হয়।
এ এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গতকাল শনিবার সকালে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে আইনশৃংখলা ও উন্নয়ন কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, নরসিংদী পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম পিপিএম, নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা জাহান সরকার, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিনথিয়া হোসেন, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক দীপক কুমার বর্মন প্রিন্স ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
বক্তারা উপস্থিত সর্বস্তরের জনগণকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আজ (গতকাল শনিবার) থেকে আলোকবালীতে কোনো অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ এবং বালু লুটেরার স্থান হবেনা। তাদেরকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। তারা যেকোন দলেরই হউক না কেনো তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবেনা। জেলা প্রশাসনের এ মহৎ উদ্যোগটি অভিজ্ঞ মহল এবং এলাকাবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে এসেছে।
আসন্ন ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) আসনে ধানের শীষের পক্ষে গণজাগরণ তৈরিতে মাঠে নেমেছেন ম্যাগপাই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান। গত শুক্রবার সকাল থেকে রাত অবধি ফেনী-১ আসনের ফুলগাজী পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন ‘আমি এমপি-মন্ত্রী হতে আসিনি, এসেছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফেনী-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী করতে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমার এই গণমুখী কার্যক্রমে ঈর্ষান্বিত একটি মহল আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা আমাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
গণসংযোগ কর্মসূচির শুরুতে সকাল ১০টায় তিনি ফুলগাজী বাশুড়া আজিজুল উলুম কাসিমিয়া নূরানী ও হেফজ মাদ্রাসায় নগদ অনুদান প্রদান করেন এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের পক্ষে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন।
দুপুরে তিনি দক্ষিণ দৌলতপুর নূরানী মাদ্রাসা ও উত্তর দৌলতপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিদর্শনকালে দুটি প্রতিষ্ঠানকেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। উত্তর দৌলতপুরে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
বিকালে তিনি মুন্সিরহাট ইউনিয়নের করইয়া গ্রাম ও আমজাদহাট ইউনিয়নে পৃথক গণসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং করইয়া ঈদগাহ মাঠের উন্নয়নে অনুদান প্রদান করেন। বিকেলে তিনি পরশুরামের বিলোনিয়া স্থল বন্দর এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে বেগম খালা দিয়েন পক্ষে গণসংযোগ করেন।
দিনব্যাপী এই গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল মজুমদার গোলাপ, কৃষকদলের সাবেক সভাপতি আবু ইউসুফ মিয়া, উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, যুবদল নেতা মাস্টার আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নূতন বিদ্যুৎ (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও এক্টিস এক্ট সিআইও এর আর্থিক সহায়তায় দরিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত ৪০টি পরিবারের মধ্যে নিরাপদ পানির অভাব দূর করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টিউবওয়েল সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বোরহানউদ্দিনের কুতুবা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুতুবায় অবস্থিত নূতন বিদ্যুৎ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রকল্প এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত ৮টি পরিবারের মাঝে টিউবওয়েল হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রোজেক্ট এর নিকটবর্তী এলাকার সাধারণ জনগণের সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে আরো ৩২টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
নূতন বিদ্যুৎ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রতিনিধি জানান, তারা প্রজেক্ট আরম্ভলগ্ন হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রজেক্টসংলগ্ন জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রেখে আসছে এবং তারা ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখবে।
টিউবওয়েল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রনজিৎ চন্দ্র দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ সিইও (ব্রিজিন পাওয়ার), গ্রুপ সিওও (ব্রিজিন পাওয়ার), গ্রুপ টেকনিক্যাল হেড(ব্রিজিন পাওয়ার), প্রকল্প প্রধান (এনবিবিএল), ইএইচএস প্রধান(এনবিবিএল) ও এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন প্রধান (এনবিবিএল)।
মন্তব্য