সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়কে বেরিয়েছিলেন চালক মহিদুল ইসলাম। সিলেট নগরে কোর্টপয়েন্ট এলাকায় অটোরিকশার গতিরোধ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায়।
মহিদুলের কাছে শাটডাউনের মধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চান ম্যাজিস্ট্রেট। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে জরিমানা করা হয় ৫০০ টাকা।
শাটডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ মানাতে সারা দেশেই এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের শাটডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখা, গণপরিবহন বন্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তবে প্রথম দিনে নির্দেশনা অমান্য করে অনেককেই বাড়ির বাইরে দেখা যায়। গণপরিবহন নিয়েও সড়কে বের হন কেউ কেউ। অনেকে দোকানপাটও খুলে বসেন।
এসব কর্মকাণ্ড রোধে দেশজুড়েই কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শাটডাউন কার্যকরে দেশের সর্বত্র তাদের তৎপরতা দেখা গেছে। এ দিন দেশের ৩৫ জেলায় ২ হাজার ৮২৯টি মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
নিউজবাংলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে সারা দেশে শাটডাউনের প্রথম দিনের চিত্র-
সিলেট: দোকান খোলা রাখা, যানবাহন সড়কে বের করা, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ শাটডাউনের বিভিন্ন নির্দেশনা অমান্য করায় সিলেট বিভাগে ৬০২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা।
জেলার সব উপজেলায় ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনভর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে তারা ১৭২টি মামলা এবং ২ লাখ ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশ ৪৮টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা এবং ১০৪টি যান আটক করে। এ ছাড়া বিধিনিষেধ অমান্য করায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৫ জনকে ১১ হাজার ২০০ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ ও মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব বলেন, ‘করোনার বিস্তার রোধে কঠোর লকডাউন যারা মানছেন না তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এই অভিযান শাটডাউন যতদিন চলবে ততদিন অব্যাহত থাকবে।’
লকডাউন কার্যকরে সিলেটের মৌলভীবাজারেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। নির্দেশনা অমান্য করায় জেলায় ১৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা।
শপিং মল, মার্কেট খোলা রাখা, গণপরিবহন ও সিএনজি চালানো, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে অবস্থান করায় এসব জরিমানা করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক।
হবিগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় ১২টি। এ সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন, অযথা মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরিসহ নানা অপরাধে ৬৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৬১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুনামগঞ্জে ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দিনভর অভিযান চালায়। এ সময় ১২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের কাছ থেকে ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বরিশাল: বিভাগের ভোলা জেলায় শাটডাউন কার্যকরে কাজ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১৭টি দল। লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে এ সময় ৯৯টি মামলা করা হয়।
এসব মামলায় ১০৪ জনকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থদণ্ড দিয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করা হয়। দুইজনকে দেয়া হয় পাঁচ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড।
জেলা প্রশাসক তৌফিক ই-লাহি চৌধুরী জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে সকাল থেকেই ভোলার সাত উপজেলায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
ঝালকাঠিতে লকডাউন অমান্যকারী ৪৩ জনকে ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, ‘জনসাধারণকে লকডাউন মানাতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি আমরা।’
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় লকডাউন অমান্য করায় মামলা হয়েছে ১২৫টি। এসব মামলায় ৭৩ হাজার ৭৮০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বরিশাল জেলায় শাটডাউন কার্যকরে সকাল থেকে মাঠে নামে ২০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্দেশনা অমান্য করায় এ জেলায় ৫৬টি মামলায় ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘লকডাউন বাস্তবায়নে বরিশালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম কাজ করছে জেলাজুড়ে। যারা অহেতুক বাইরে বের হচ্ছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’
রংপুর: শাটডাউনের প্রথম দিন বিভাগের আট জেলাতেই কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। যারা কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা।
নির্দেশনা কার্যকরে দিনভর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করেছে।
শাটডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করার কারণে এই বিভাগের চার জেলায় মামলা হয়েছে ১০০টি। জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ টাকা।
রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান মৃধা জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় ৩৮টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২২ হাজার ৬৪৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
গাইবান্ধায় ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন অপরাধে মামলা করে ৪৬টি। জরিমানা করে ২৫ হাজার ২৫০ টাকা। জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে কুড়িগ্রামে ৪ প্লাটুন সেনা, ২ প্লাটুন বিজিবি এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে ছিলেন।
জেলায় তিন অটোরিকশাচালককে দুই দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মাস্ক না পরা এবং দোকান খোলা রাখায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ঠাকুরগাঁওয়ে ১২টি হোটেলকে ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই জেলাতেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন।
নীলফামারী জেলার এডিএম মিরাজ মুরাদ হাসান জানান, নির্দেশনা উপেক্ষা করায় ৪৭টি মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রাজশাহী: কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
রাজশাহী শহরে জেলা প্রশাসনের চারজন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ ছাড়া ৯টি উপজেলার প্রতিটিতে দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছিল।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিত সরকার জানান, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে মোট ৫০টি মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ১৮৬০; সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮-এর ধারায় এসব মামলা হয়।
এ সময় ৫০ জনের কাছ থেকে ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশও দিনভর অভিযান চালায়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, শহর থেকে ২৮টি যানবাহন জব্দ করা হয়। বিধি ভঙ্গ করে রাস্তায় বের হওয়ায় জব্দ করা এসব যানের মধ্যে রয়েছে একটি মোটরসাইকেল, দুটি পিকআপ ও ২৫টি অটোরিকশা।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জানান, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ১৫টি মামলা ও ৯১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বগুড়ায় জেলা শহর ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। সারা দিনে এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫টি মামলা করে। আদায় করা হয় ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা।
লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নাটোরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা। নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য এবং দোকানপাট খোলা রাখায় ২০ মামলায় ৯ হাজার ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ জেলায় ৭৯টি মামলায় ৬০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসনের ১৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৯ মামলায় ১২৬ জনকে জরিমানা করে। এ সময় ১৯ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় দুটি করে মোট ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে। সদরে এক প্লাটুন বিজিবি ভেঙে দুটি দল করা হয়। প্রতি দলে ছিলেন একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট। একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর দল ছিল তিনটি। তবে এ জেলায় কাউকে আটক বা জরিমানার খবর পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ সদর, সাপাহার, নিয়ামতপুর, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা, মাস্ক না পরা ও দোকানপাট খোলা রাখায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এ সময় ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় ৩৭টি মামলায় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত সাত মামলায় ৭০০ টাকা, মুহাম্মদ ইনামুল হাসান একটি মামলায় ৫০০ টাকা, মো. উমর ফারুক ছয় মামলায় ১ হাজার ৬০০ টাকা, মো. মাসুদ রানা চার মামলায় ৪ হাজার ৭০০ টাকা, মো. জিল্লুর রহমান চার মামলায় ১ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেন।
এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন এক মামলায় ১ হাজার টাকা, নূরজাহান আক্তার সাথী ৯ মামলায় ১ হাজার ১০০ টাকা, ফাহমিদা আফরোজ ও প্লাবন কুমার বিশ্বাস সাত মামলায় দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কুমিল্লা জেলাজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে মামলা হয়েছে ৩১১টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা।
কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে। বিধিনিষেধ না মানায় দুইজনকে তিন মাসের জন্য কারাগারে পাঠান ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।
নোয়াখালীতে মাঠে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ জেলায় প্রশাসনের ২১টি দল ১৪৭ মামলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করে।
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা না মানায় ৫৬ জনের কাছ থেকে ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে লকডাউন নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে মাঠে ছিল জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, এ জেলায় ৭০টি মামলা হয়েছে। তবে এসব মামলার বিপরীতে কত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
রাঙামাটিতে ১২টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ টাকা।
ময়মনসিংহ: শাটডাউনের প্রথম দিনে ময়মনসিংহে মামলা হয়েছে ২৭৭টি। এসব মামলায় ২ লাখ ৩৫ হাজার ১০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযানে এসব জরিমানা আদায় করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক জানান, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলায় ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনাররাও (ভূমি) অভিযান চালিয়েছেন।
এ ছাড়া ৫ প্লাটুন সেনা, ২ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও র্যাব, পুলিশ, আনসার এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সার্বক্ষণিক টহল ছিল। এ ছাড়া বিধিনিষেধ কার্যকরে মাঠে ছিল সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে বের হওয়া ব্যক্তিগত যান থামিয়ে কারণ জানতে চেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সদুত্তর দিতে পারলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে অহেতুক চলাচলকারীদের মামলা দিয়ে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। যারা নির্দেশনা অমান্য করছেন তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। ৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।’
নেত্রকোণায় প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মানায় ১৭৯ মামলায় ১৭৯ জনকে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এই অর্থদণ্ড দেয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ জানান, জেলা শহরসহ ১০ উপজেলায় ২৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।
শেরপুরেও সকাল থেকে মাঠে তৎপর ছিল ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ও বাইরে ঘোরাফেরা করার অভিযোগে জেলা সদরসহ ৫ উপজেলায় ১৭৬টি অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৮৬ জনের কাছ থেকে ৫২ হাজার ২০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এর মধ্যে শেরপুর সদরে ৩৯, শ্রীবরদী ছয়, নালিতাবাড়ীতে ১১, ঝিনাইগাতী ১১ ও নকলায় ১৯ জনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
খুলনা: বিভাগের মাগুরা জেলা সদরসহ তিনটি উপজেলায় ৫৬ জনকে মামলা ও জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পৃথক অভিযানে জরিমানা করা হয় ৩৬ হাজার টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৫ মামলায় ২১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনা করেন।
সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অভিযানে মামলা করা হয়েছে ৪০টি। এসব মামলায় ৩২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবির।
যশোরে শাটডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে ৩০ জনকে।
কুষ্টিয়ায় ৩৬ মামলায় অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে ৩৯ জনকে। তাদের কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা আদায় করা হয়।
বাগেরহাট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৬ জনকে ৪৩ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা করে। এই জেলায় মামলা করা হয়েছে ৭৩টি।
মেহেরপুরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির বাইরে মাচায় বসে আড্ডা দেয়ার সময় ছয়জনের ২০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ তথ্য জানিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল আলম।
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পবিত্র রমজানের কারণে ২০২৬ সালের অমর একুশে বইমেলা চলতি বছর ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে। মাসব্যাপী এই মেলা শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি।
আজ বিকেলে বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অমর একুশে বইমেলা সংক্রান্ত এক সভায় এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, সংস্কৃতি সচিব মো. মফিদুর রহমান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালকবৃন্দ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ।
সোনালী আঁশ পাটের আবাদে কয়েক বছর ধরে চাষিরা লোকসানে পড়লেও এ বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্য না পাওয়া, মানসম্মত আঁশ সংগ্রহের প্রতিবন্ধকতা এবং রপ্তানি বাজার সংকটের কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৭ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও আঁশের মানহানি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা থামছে না।
কৃষকেরা জানান, মুক্ত জলাশয়ের অভাবে পাট জাগ দিতে হচ্ছে ডোবা বা পুকুরের মতো বদ্ধ জলাশয়ে। এতে আঁশের মান কমে যাচ্ছে। রঙের পার্থক্য ও আঁশের তারতম্যের কারণে বাজারে সবসময় কম দাম পান তারা। ফলে ভালো ফলনের আশার মধ্যেও শংকা রয়েছে ন্যায্যমূল্য নিয়ে।
সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দীন তিন বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখনও এক বিঘার পাটও কাটতে পারিনি। শ্রমিক মজুরি জনপ্রতি ৬০০ টাকা। বাজারে এক মন শুকনো পাটের দাম ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার পাঁচশ টাকা। কৃত্রিম উপায়ে জাগ দিতে গেলে জমিতে পলিথিন বিছাতে হয়, শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলতে হয়। এত খরচ করলে বিক্রির টাকা দিয়ে খরচই ওঠে না। তাই নদীতে জাগ দেওয়ার অনুমতি চাই।’
তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জিয়াউল হকও একই সঙ্কটে আছেন। চার বিঘা জমিতে পাট করেছেন, পাশে চার কাটা জমিতে আমন ধানের চারা রয়েছে। তিনি জানান, ‘সময়মতো পাট কেটে জাগ দিতে না পারলে ধান রোপণ সম্ভব হবে না। আশপাশের পুকুরে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই আমরা নদীতে জাগ দেওয়ার অনুমতি চাই।’
কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, মানসম্মত পাট উৎপাদনে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা না পাওয়ায় তারা সমস্যার সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না। কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লোকসানের শঙ্কায়।
মেহেরপুরের পাট ব্যবসায়ী কাউছার আলী জানান, ‘গত বছরের পাট বিক্রি করতে না পেরে গোডাউনে ভর্তি করে রেখেছি। ভারত কাঁচাপাট আমদানি বন্ধ করায় রপ্তানির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বাজার তৈরি না হলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে।
আরেক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ‘কৃষকেরা এবছর তুলনামূলক ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে আমরা গত বছরের তুলনায় বেশি দামে পাট কিনতে বাধ্য হচ্ছি। যদি নতুন বাজার তৈরি না হয়, কৃষকেরা এ চাষ থেকে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।’
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আ ক ম হারুন কৃষকদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘নদী ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। কৃষকদের মানসম্মত পাট উৎপাদনে আমরা সহযোগিতা করছি এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’
শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড়ের রসাল মিষ্টান্ন টোপা। খেতে যতটা সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ হওয়ায় বেড়েই চলেছে এর চাহিদা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টোপা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। রংপুর বিভাগের উত্তরের জেলা হিমালয় কণ্যা পঞ্চগড়। সদর উপজেলার ৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিরগড় বাজার এই জেলার ঐতিহ্যবাহী টোপা তৈরি করে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোজন রসিকরা ভীড় জমান। বিশেষ করে শুক্রবার ও সন্ধার পরে জেলার অন্যান্য জায়গা থেকে খাওয়ার জন্য আসেন অনেকেই। ঐতিহ্যবাহী টোপা প্রতি পিচ মূল্য ১০ টাকা করে। সেখানে চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের টোপা পাওয়া যায়। টোপা ব্যবসায়ী এনামুল সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছি দীর্ঘদিন থেকে। অন্য কোথাও টোপা তৈরি হয় না শুধু আমাদের এই মীরগড় বাজারের তৈরি হয়, তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এই টোপা খেতে আসেন ভোজন রসিকরা।’
পর্যটক সুকন্যা দে পুজা তিনি জানান, ‘আমি ঠাকুরগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি এরপর জানতে পারলাম মীরগড় বাজারে এই জেলার ঐতিহ্যবাহী টোপা খেতে সুস্বাদু তাই টোপা খেতে এসেছি আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা।’ ক্রেতা মো. ওমর ফারুক বাপ্পির সাথে কথা বললে তিনি জানান, পৌর শহর থেকে টোপা খেতে এসেছি, সময় পেলেই টোপা খেতে এই বাজারে আসি।’
ময়মনসিংহে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োজিত চিকিৎসক, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক মালিকদের নিয়ে ‘স্বাস্থ্য ইউনিটি’ নামের সংগঠন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে নগরীর চরপাড়া এলাকায় সংগঠনটির প্রথম মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি শামীম আহম্মেদের সভাপতিত্বে জমকালো এই আয়োজনের শুরুতেই অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মনসুর আলম চন্দন। এছাড়া ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক এম.এ মোতালেবসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতারা বলেন, ‘স্বাস্থ্য ইউনিটি’ শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং এটি হবে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংগঠনটি ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরও বলা হয়, সংগঠনটির লক্ষ্য একত্রে কাজ করা এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করা। এ জন্য সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ সবাইকে সাথে নিয়ে সংগঠনের নেতারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ সময় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ও স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে এবং এই আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান আসবে।
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রেস সচিব ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমেই সবকিছুর সমাধান হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম জানান, চলতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেবেন। তিনি স্পষ্ট করেন, এই সফর বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো মধ্যস্থতা বা আলোচনার জন্য নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, ‘তারা সরকারের অংশীদার হিসেবে এ ধরনের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে অংশ নিচ্ছেন।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের যৌথ মহড়া ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫–৩থ-এর অংশ হিসেবে ইনক্যাপ সিরিমনি। বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের ওই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক-এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহ। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিবছর দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এ বছর বিদেশে বেশ কয়েকটি মহড়া সম্পন্ন হয়েছে, আর এটাই ছিল চলতি বছরের শেষ মহড়া। এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি অর্জন করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমেরিকান বিমান বাহিনীর দেওয়া অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, অপারেশন লাইট, এয়ার কন্ডিশন, জেনারেটর, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র এবং অপারেশন থিয়েটারের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর মিশন কমান্ডার মেজর জুদাহ বলেন, ‘আমরা এ কার্যক্রমে বিশেষভাবে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েছি। এ অঞ্চলের মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুসেবা আরও উন্নত করতে এসব সরঞ্জাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ ধরনের মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আনোয়ারার মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে স্থানীয় মানুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র টিমের সিনিয়র সদস্য কার্নেল অ্যান্ড্রু ব্রি, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি মেজর গ্রিন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যসহ দুদেশের বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য