করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে চলা শাটডাউনের প্রথম দিনে বেশির ভাগ বিভাগীয় শহর ও জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাসদস্যদের টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কে গণপরিবহন ও মানুষের উপস্থিতি ছিল কম।
যানবাহন না থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়েন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিধিনিষেধের কারণে কাজ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, প্রথম দিনে তারা সতর্ক করেছেন। এর পরও যারা নির্দেশনা অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
নির্দেশনা অমান্য করায় চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু স্থানে অনেকে আটকও হন। পরে মুচলেকা দিয়ে তারা ছাড়া পেয়েছেন।
রাজশাহী
করোনায় রাজশাহীতে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত এক মাসে প্রায় প্রতিদিনই অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এ অবস্থায় এই বিভাগে শাটডাউন বেশ কঠোরভাবেই চলছে।
রাজশাহীতে বুধবার সকালে বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা দেখা গেছে। সাহেববাজার, রেলগেট, নিউমার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের। বিধিনিষেধ মানাতে এসব রাস্তায় ঘুরছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমও।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম জানান, শহরে চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি মোবাইল টিম কাজ করছে। আর প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।
একই চিত্র ছিল নাটোরে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই জেলার কানাইখালি, নিচাবাজার, চকরামপুর, মাদ্রাসা মোড়ে টহল দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
শহরের প্রবেশমুখ বড়হরিশপুর বাইপাস এলাকায় বরাবরের মতোই ছিল তল্লাশি। এখানে আসা সব গাড়ি ও পথচারীকে থামিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ ও গন্তব্য জিজ্ঞাসা করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
শাটডাউন দেখতে জয়পুরহাটে সকালে অনেকেই রাস্তায় বের হন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তারা ফিরে যান। লোকসমাগম দেখা যায়নি বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে। বেশির ভাগ রাস্তা ফাঁকা দেখা গেছে। সরব উপস্থিতি ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
খুলনা
খুলনা বিভাগে গত এক সপ্তাহে করোনায় ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহীর পর এই বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
জেলার বিভিন্ন সড়কে সকালে বাঁশ দিয়ে অবরোধ করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। বেলা ১১টা থেকে টহলে নামেন সেনাসদস্যরা। সকাল থেকে টানা বৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম।
সাতক্ষীরায় শাটডাউনের নির্দেশনা মেনে সব ধরনের কার্যালয়, বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। ফাঁকা রাস্তায় চলাচল করছে কেবল জরুরি ও পণ্যবাহী যান।
যশোরে রাস্তায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল সত্ত্বেও দিনভর চলাফেরা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। কুষ্টিয়ায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল টানা বৃষ্টি। এ কারণে মানুষের চলাচল ছিল কম। রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে শেডের নিচে অবস্থান নিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বৃষ্টি ছিল মেহেরপুরেও। জেলা শহর ও উপজেলায় ছিল পুলিশের তল্লাশি। বাইরে বের হওয়া মানুষকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে সকাল থেকে সড়কে কড়া নজরদারি ছিল সেনাসদস্যদের। তৎপরতা দেখা গেছে পুলিশ ও প্রশাসনেরও।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে কোনো গণপরিবহন চলছে না। রাস্তায় বা নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে জনসমাগম নেই তেমন। তবে সকাল থেকে রিকশা চলতে দেখা গেছে।
নগরীর অক্সিজেন এলাকার রিকশাচালক নাছির উদ্দীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেইন্নেত্তুন দুই-তিনবার পুলিশর দৌড়ানি খাই। পুলিশে দৌড়াইলিও ক্যান গইজ্জুম, পেড়র জ্বালায় ত রাস্তাত থাহন পরের।’
শাটডাউনের মধ্যে বিনা কারণে বাইরে বের হওয়ায় নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে ২১ জনকে আটক করে পুলিশ। ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আটক ব্যক্তিদের দাবি, তারা লকডাউন দেখতে বের হয়েছেন। দোষ স্বীকার করায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
কুমিল্লা নগরীর প্রধান সড়কে সেনা ও পুলিশের টহলের পাশাপাশি ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতও। অন্য যানবাহন না চললেও রিকশার আধিক্য ছিল বিভিন্ন এলাকায়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা লকডাউন বাস্তবায়নে খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছি। বিনা কারণে যারাই বের হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
ফেনীর বেশির ভাগ রাস্তা প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা শুরুতে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করতে জেলা-উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে। এরপরও বিনা প্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। একই সতর্কবার্তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান।
সড়ক ফাঁকা লক্ষ্মীপুরেও। জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশি তৎপরতা দেখা গেছে। যারা বের হচ্ছেন, তারা পড়ছেন জেরার মুখে।
সিলেট
সিলেট বিভাগেও শাটডাউনের প্রথম দিন ছিল তুমুল বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নগরীর রাস্তাঘাট ছিল প্রায় ফাঁকা। মাঝেমধ্যে চলতে দেখা গেছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পুলিশ ও র্যাবের কয়েকটি গাড়িতে মাইক লাগিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টও বসানো হয়েছে। বিভাগের অন্য তিন জেলারও প্রায় একই চিত্র।
সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় রিকশায় থাকা দুই আরোহীকে ২০০ টাকা করে জরিমানা করেছেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায়। সেখানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। সেখানে পথচারীদের মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
বিধিনিষেধে বিপাকে পড়েছে দিনমজুররা। নগরের আম্বরখানা এলাকায় কাজ পেতে অপেক্ষায় থাকা দিনমজুর ইর্শাদ মিয়া বলেন, ‘ঘরে থাকলে তো আমরার পেট চলত নায়। তাই ঘর থাকি বার অইতে অয়। কিন্তু আইজ বার অইয়াও কোনো লাভ অইছে না। কামকাজ মিলছে না।’
সুনামগঞ্জ শহরে বাজার করতে বের হওয়া লোকজন ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় ফরিদা বেগম বলেন, ‘লকডাউন দিয়া আমরার কষ্ট ভারি গেছে। আগে বাসার সামনে উবাইলে গাড়ি পাওয়া যাইত, এখন সকাল থকি নাই।’
মৌলভীবাজারে সকালে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের একটি বিশাল বহর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মহড়া দেয়। শহরের কুসুমবাগ মোড়ে পৌর মেয়র ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশনাররা বাইরে বের হওয়া লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
রংপুর
শাটডাউনে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সড়কে যানবাহনের তেমন দেখা যায়নি। তবে অলিগলিতে কিছু রিকশা চলেছে। শহরকেন্দ্রিক দোকানপাট বন্ধ থাকলেও গ্রামের হাটবাজারগুলোতে কিছু দোকানপাট খোলা রয়েছে। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে মানুষজন খুব একটা বাইরে বের হয়নি।
রংপুর জেলার আট উপজেলায় আটটি ও সিটি করপোরেশনে একটি সেনাবাহিনীর টহল দল কাজ করছে। পুলিশ ও র্যাব জনসচেতনতায় বিভিন্ন রাস্তায় মাইকিং করেছে।
কুড়িগ্রামে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি লোকজনকে। তবে গ্রামের দিকে মানুষ হাটবাজারে বের হচ্ছেন। নীলফামারী শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দেখা গেছে পুলিশের চেকপোস্ট। পঞ্চগড়েও রাস্তা ছিল প্রায় ফাঁকা।
তবে ঠাকুরাগাঁও ও গাইবান্ধায় শাটডাউনের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়কগুলো ছিল অটোরিকশার দখলে। বেলা বাড়তে থাকলে অটোরিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেলও বাড়তে থাকে সড়কে।
বরিশাল
শাটডাউনের প্রভাব সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে।
বরিশাল জেলায় গণপরিবহন না থাকলেও রিকশা ও মোটরসাইকেলের পাশাপাশি সড়কে লোকজনের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় টহল দিলেও অলিগলিতে রীতিমতো ছোট ছোট দলে আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেককে। তাদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে সবারই এক কথা- শাটডাউন দেখতে তারা বের হয়েছেন।
ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনায় কঠোর অবস্থানে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তাদের নজর এড়িয়েই অনেকে বের হয়েছেন রাস্তায়। শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বাজারগুলোতে দেখা গেছে মানুষের ভিড়।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও লক্ষ্মীপুর থেকে ফেরি ও ট্রলারে করে শত শত যাত্রী ভোলায় ইলিশাঘাট ভিড়েছেন। ভোলা শহরে দুপুরে নিষেধ না মেনে বের হওয়ায় দুজনকে আটক করা হয়েছে এবং ২৩ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যে উৎসবে আমন্ত্রণের জন্য সেনাপ্রধান আয়োজনকারীদের ধন্যবাদ জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। শত বছর ধরে এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই দেশ সবার। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। এখানে কোনো ধর্ম, জাতি বা গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সমান অধিকার। সেইভাবেই আমরা সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে— আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখব এবং সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করব। সারা বাংলাদেশে স্বশস্ত্র বাহিনী মোতায়েত রয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকব এবং এক হয়ে আপনাদের সাথে কাজ করে যাব।’
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন এবং আপনারা আপনারা ধর্মীয় উৎসব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করব।’
সেনাপ্রধান আশাপ্রকাশ করেন, ‘জন্মাষ্টমীর এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করব।’
কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের কালোর ও জিঞ্জিরাম নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন সীমান্তবর্তি ভন্দুরচর গ্রামে পরিকল্পিত ভাবে একই পরিবারের তিনজনক হত্যা করা হয় গত ২৪জুলাই। এই ঘটনার প্রতিবাদে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬জুলাই শনিবার দুপুরে রৌমারী উপজেলার সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে এই কর্মসূচি করা হয়। রৌমারী টু ঢাকা মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপি বিক্ষোভ ও মানববন্ধন পালন করে স্বজন ও এলাকাবাসী। এসময় বক্তব্য রাখেন, ওয়াজেদ আলী,ইকতার হোসেন, আনোয়ার হোসেন,নিহত বুলু মিয়ার স্ত্রী আসকেতারা বেওয়া,কন্যা শাপলা বেগম,ফুলবাবুর স্ত্রী ফুলোরানী বেওয়া এবং নুরুল আমিনের স্ত্রী আনজু আরা বেওয়া প্রমুখ।
উল্লেখ্য,গত ১৯ জুলাই ভন্দুর চরের রাজু আহমেদের গরু প্রতিবেশি শাহজামালের বীজতলার ধানের চারা খেয়ে ফেলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহজামালের লোকজন গরু বেঁধে রাখতে বলে। এরই জেরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রায় ২০/২৫জনের একটি দল শাহজামালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মহিলাদেরকে মারধর করে ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ২০জুলাই আহত নুরজাহান বাদী হয়ে রৌমারী থানায় একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু সেই অভিযোগ আমলে না নিয়ে বাদীপক্ষকে মীমাংসা করে নিতে বলে পুলিশ। থানায় অভিযোগ দেবার জের ধরে গত ২৪জুলাই আবারও রাজু আহমেদের গ্রপের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় প্রতিপক্ষ শাহজামালদের উপর। দিনদুপুরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একই পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যা করে। নিহতরা হলেন,শাহজামালের দুই ভাই ফুলবাবু,বুলু মিয়া এবং ভাতিজা নুরুল আমিন। উভয় পক্ষের প্রায় ১০জন আহত হয়। এই ঘটনায় গত ২৬ জুলাই নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী রৌমারী থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
পরে শাহজামাল বাদী হয়ে ২৪জুলাই ৩৪জনের নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০জনকে আসামী করে রৌমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮জনকে গ্রেফতার করেছে।
এই বিষয়ে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আপনাদের মতে চিকিৎসা খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের একটা বাজার আছে। এই বাজার আপনারা নিতে পারেন না? কেন মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চায়? ভারত, ব্যাংককে এমন মানুষও চিকিৎসা নিতে যায়, যারা কখনও ঢাকায় আসেনি। তারা বিরক্ত ও নিরুপায় হয়ে যায়। তাদের যাওয়া বন্ধ করেন। এখানে সেবা দিলে মানুষ কখনোই বিদেশ যাবে না। যাওয়ার কোনও কারণই নাই। এই বাজার দখল করলে আপনাদের লাভ, দেশেরও লাভ।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভনেশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, অনেক চিকিৎসক অনর্থক টেস্ট দেন। আমার বাসার হেল্পিং হ্যান্ড, গরিব ছেলে, ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৪টি টেস্ট দিয়েছে। সে রাগ করে বাড়ি চলে গেছে। সেখান থেকে টেস্ট ছাড়া ভালো হয়ে ফেরত এসেছে। ওখানে তার পরিচিত ডাক্তার ছিল। এই অত্যাচার বন্ধ হয় নাই। গরিব রোগীদের অনর্থক ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার। আরেকটা বিষয় হলো, নির্দিষ্ট ওষুধ কিনতে হবে, কেন? পৃথিবীতে কোন জায়গায় প্রাইভেট ক্লিনিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে ডাক্তারের। আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল, এ দেশের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যসত্ত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের!
আইন উপদেষ্টা বলেন, আরেকটা অভিযোগ করা হয়, টেস্টের রেজাল্ট ভুল। অনেক জায়গায় অনেক ভালো রেজাল্ট হয়, আমি খারাপ জায়গার কথা বলছি। একটা জেনারেল কমপ্লেইন যেটা আমার কাছে হৃদয়বিদারক লাগে, নার্সদের ব্যবহার খারাপ। নার্সদের মন খারাপ থাকে, হাসপাতালের কর্মচারীদের মন খারাপ থাকে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকেন, ভালো সেবা দিতে চায় না। কেন চায় না– নার্সদের বেতন ১২ হাজার টাকা, আপনারা কি কম টাকা লাভ করেন? আপনারা যারা অনেকে হাসপাতালের মালিক আছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, আপনাদের কোটি টাকার বাগানবাড়ি থাকতে পারে, নার্সদের ভালো বেতন দিতে পারেন না? নার্স যদি ১২ হাজার টাকা বেতন পায়, তাহলে কি ভালো সেবা দেবে? সে তো বিরক্ত হয়ে থাকবে। আপনারা লাভ করেন কিন্তু ন্যায্যভাবে করেন।
তিনি বলেন, আজ মানুষ ভারত-থাইল্যান্ড যেতে চায় না। আপনাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আপনারা করোনাকালে প্রমাণ করেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেবা দিয়েছেন। কর্মীর যদি বেতন বাড়িয়ে দেন সামান্য লাভ থেকে কতো টাকা চলে যাবে? যদি ১০০ কোটি টাকা লাভ করেন, তাহলে ১০ শতাংশ কম লাভ হয়। ১০ শতাংশ কম লাভের বিনিময় সেই কর্মী যে সেবা দেবে সেটা দিয়ে পূরণ হয়ে যায়। আপনারা এদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার রাতে দেওয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
শুভেচ্ছা বার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পুণ্যতিথি ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি শুধু আনন্দ-উৎসবের দিন নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার এক মহামিলন ক্ষেত্র।
তিনি বলেন, জন্মাষ্টমী সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য অবারিত উৎসবের প্রাঙ্গণ সৃষ্টি করে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো ধর্মীয় সম্প্রীতি। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরা সব ধর্মের মানুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী। হিংসা, বিদ্বেষ, অশান্তি, হানাহানি, বৈষম্য ও অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব এ সময় দেশবাসীর প্রতি সম্প্রীতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার আহ্বান জানান।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিশেষ অভিযানে ৪৩ পিস ইয়াবাসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, ভালুকা মডেল থানার একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে হাতেনাতে আটক করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—জামিরদিয়ার মোঃ আবুল হোসেনের ছেলে মোঃ সজিব মিয়া (২৬), একই এলাকার মোঃ নাবিল হোসেন নবীর ছেলে মোঃ আলী হোসেন ওরফে নাজমুল (২৫), গাজীপুরের শ্রীপুরের উদয়খালী এলাকার মোঃ মফিজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম (২৭) এবং ডুমবারিরচালা এলাকার মোঃ রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ নাঈম খান (২৫)।
এসময় সময় তাদের কাছ থেকে ৪৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, মাদক নির্মূলে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চালানো হবে।
নওগাঁর আত্রাই নদীর একটি স্থানে কয়েক সেন্টিমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ঢুকছে পানি।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে মান্দা উপজেলার কসব ইউনিয়নের তালপাতিলা এলাকায় এই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে তালপাতিলা গ্রামসহ আশেপাশের চকবালু, চকরামপুরসহ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করে। পানি বন্দী হয়ে পড়েন কয়েকশ পরিবার।
স্থানীয়রা বলছে, এই একই স্থানে গেলো বছর ভেঙ্গে যায়। এরপর মাসখানেক আগে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু মেরামত করা হয়। কিন্তু নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার ভেঙে গেছে।
বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শক করেছেন মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী। এসময় তিনি উক্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ মেরামতের আশ্বাস দেন।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে দেওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী আত্রাই নদীর মান্দা উপজেলার জোত বাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও নওগাঁর ছোট যমুনা ও পুনর্ভবা নদীর পানি বিদসীমার নিচে থাকলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওযায় মান্দা উপজেলার চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ী, জোকাহাট, দ্বারিয়াপুর, নুরুল্লাবাদ, পারনুরুল্লাবাদ ও তালপাতিলা এলাকার অন্তত ১০টি বেড়িবাঁধকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাধের লক্ষ্মীরামপুর, আয়াপুর, পাঁজরভাঙ্গা, পলাশবাড়ী, মিঠাপুর, নিখিরাপাড়া ও গোয়ালমান্দাসহ অন্তত ২০টি পয়েন্টকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেট পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি দেশব্যাপী নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন রোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই মার্কেট পরিদর্শন করেন ।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেটে যান। এরপর তিনি কৃষিমার্কেটের বিভিন্ন দোকান পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দোকানিদের পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেন এবং পলিথিন ব্যবহারের ভয়াবহতা তুলে ধরেন ।
মন্তব্য