সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধটি নির্মাণের সময় স্থায়ীত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০০ বছর। ১৯৯৭ সালে নির্মাণের পর গত ২৩ বছরেই পাঁচবার ধস নেমেছে এ বাঁধে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বাঁধের পুরাতন জেলখানা ঘাট এলাকায় পঞ্চম ধস শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বাঁধের ১৫০ মিটারে ভাঙন দেখা দেয়। ফাটল দেখা দিয়েছে আরও ৪০০ মিটারে। ভাঙন বাঁধের টি পয়েন্টের সংযোগ রক্ষাকারী পাকা সড়কে এসে ঠেকেছে।
ভাঙনের খবরে আতংকিত হয়ে পড়েছে শহরবাসী। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভয়ের কিছু নেই। বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
যমুনার ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ শহরকে রক্ষায় বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সালে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হুন্দাই লিমিটেড এ বাঁধ নির্মাণ করে। ওই সময় বাঁধটির স্থায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০০ বছর।
বাঁধটি নির্মাণের পর ১৯৯৭ সালে দায়িত্ব বুঝে নেয় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। একশ বছরের স্থায়িত্ব রক্ষায় সে সময় নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নানা পরামর্শ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে বাঁধটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্ব নেয়ার ১২ বছর পর ২০০৯ সালের ১০ জুলাই প্রথম এই বাঁধে ধস নামে। একই বছরের ১৭ জুলাই নামে দ্বিতীয় ধস। ২০১০ সালের ১৬ জুলাই তৃতীয়, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই চতুর্থ এবং সবশেষ মঙ্গলবার পঞ্চমবারের শহর রক্ষা বাঁধটিতে ধস নামল।
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ায় শহরবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের ধানবান্ধির বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১০০ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে নির্মিত বাঁধটির কাজ শেষ হলে শহরবাসীর মধ্যে স্বস্তি নেমেছিল।
‘বাঁধটি নির্মাণের পর গত ২০ বছরে সিরাজগঞ্জ শহরজুড়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু বার বার বাঁধে ধস নামায় শহরবাসী আর আশ্বস্ত হতে পারছে না।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাচ্চু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এর আগে বেশ কয়েকজন গবেষক এসে বলে গেছেন, যমুনা নদীর তলাদেশে কারেন্ট (তরঙ্গ) রয়েছে। যে কোনো সময় এই বাঁধ ধসে যাবে।
‘তাই শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ মেরামত আর বর্ষার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত তদারকি করলে ভাঙনের সংখ্যা কম হবে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিক মতো তদারকি না করার কারণেই আজ এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই আমরা ভাঙনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। কোনোভাবেই এই বাঁধকে ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, টানা বৃষ্টি ও নদীর পানির তীব্র স্রোতে ঘূর্ণাবতের সৃষ্টি হয়ে বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে সিসি ব্লকগুলো দেবে গেছে।
তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগেও আমরা এখানে ভালো অবস্থা দেখেছি। মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে এ ধস দেখা দিয়েছে। ধস ঠেকাতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং শুরু হয়েছে।
‘শহরবাসীর কোনো ভয় নেই, এই স্বল্প ভাঙনে কিছুই হবে না।’
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফারুক আহম্মেদ নিউজবাংলাকে জানান, শত বছরের স্থায়িত্বের বাঁধটিতে কেন বার বার ভাঙন দেখা দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। মন্ত্রণালয়ে কথা বলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন বেশি জরুরি বাঁধটি রক্ষা করা। যেভাবে কাজ চলছে তাতে আর ভাঙন হবে না। তাই শহরবাসীকে বলি, আপনারা আতংকিত হবেন না।’
আরও পড়ুন:বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা দেশ ও জনগণের শত্রু, কেউ যদি ভেবে থাকেন, এসব করে নির্বাচন বিলম্বিত বা ঠেকানো যাবে বা ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনা যাবে, তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে ওরা খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে।
তিনি সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের জয়িতা মহিলা মার্কেট চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইউনিটের হালুয়াঘাট নিবাসী অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানান। যোগদানকারীরা এমরান সালেহ প্রিন্সকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী, হতেই হবে। অন্যথায় দেশ মহা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। নির্বাচনকে সফল, সার্থক ও অর্থবহ করতে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনবিরোধী শক্তির মুখোশ উন্মোচন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা কোনো কিছু ঘটা মাত্রই বলে, ‘নির্বাচনের পরিবেশ নোই’, তাদের ভিন্ন মতলব আছে। আসলেও তারা নির্বাচন চায় না। আওয়ামী লীগের মতো তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায়। নিজেদের ভরাডুবির আশঙ্কায় এবং বিএনপির অবশ্যম্ভাবী বিজয় ঠেকাতে কিছু দল অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের মালিক মোকতার সেজে রেজিস্ট্রেশন ও মার্কা বিহীন দলের নেতারা যখন জিয়া পরিবারকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয় , তখন পাগলও হাসে। জিয়া পরিবারের সাথে বিএনপি ও জাতির আবেগ জড়িত। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জিয়া পরিবারের কয়েকজন ক্ষমতায় যাবে, একথা বলে বিএনপি ও জাতির আবেগে আঘাত করা হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়া পরিবার এই দেশ ও জাতিকে যা দিয়েছে, ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ক্ষমতার জন্য জিয়া পরিবার লালায়িত নয়। নিজেরা লাভবান নয়, জিয়া পরিবার দেশ ও জনগণ লাভবান, ক্ষমতাবান করার রাজনীতি করে। স্বাধীনতার পর যা কিছু ভালো, কল্যাণকর, তার অধিকাংশই জিয়া পরিবারের হাত ধরে এসেছে। জিয়া পরিবার বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটের অধিকার, জনগণের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান তৈরি করেছে, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি দলে যোগদানকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামি ফ্যাসিবাদের নির্মম ও চরম দমন নিপিড়নের মুখে আন্দোলন যখন স্থবির হয়ে পড়ছিল, তখন তারেক রহমান ও বিএনপি গণঅভ্যুত্থানে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
সকল শ্রেণি পেশার ও রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করা বিএনপির প্রায় সাড়ে চার শতাধিক নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একক দাবিদার সেজে আওয়ামী লীগ যেমন নিজেদের মতো মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তৈরি করত, এখন গণঅভ্যুত্থানের একক দাবিদার সেজে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের একাংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অভ্যুত্থান নিয়ে নিজস্ব বয়ান দেওয়া শুরু করেছে। বিএনপিকে অভ্যুত্থানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এসব কারণে ছাত্র অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে নেতা-কর্মীরা পদত্যাগ করছেন, কিংবা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন।
উপজেলা ছাত্র দলের আহ্বায়ক ও জেলা ছাত্র দলের সিনিয়র সহসভাপতি নাঈমুর আরেফিন পাপনের সভাপতিত্বে ও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূরে আলম জনির সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, সাবেক ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান আসিফ, সদস্য সচিব তাজবীর হোসেন অন্তর, উপজেলা ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম আর আল আমিন, যোগদানকারীদের পক্ষে ময়মনসিংহ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন রতন, সোহাগ মিয়া, রাকিব খান, হালুয়াঘাট উপজেলা এনসিপির সদস্য নাসির উদ্দিন বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে জনগণ। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই দেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে একে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ এখন অনেক সচেতন, তারা এসব ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।’
গত রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল মহানগরীর কাউনিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসবে অংশগ্রহণ করে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে হাজারও ভক্তের অংশগ্রহণে দীপাবলি উৎসবটি পরিণত হয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মিলনমেলায়।
এ সময় রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি নেতা-কর্মী ও দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে পাহারার মধ্য দিয়ে উৎসবের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছে। জনগণই অপকৌশলকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো একটি কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে। যারা এসব অপকর্মে জড়িত, তারা শুধু একটি ধর্মের নয়- তারা পুরো জাতির শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু। বিএনপি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।’
রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ব, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই হবে আমাদের লক্ষ্য।’
দীপাবলি উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা, ধর্মীয়, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, মহানগর বিএনপির সদস্য জাহিদুর রহমান রিপন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তারিক সুলাইমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন টিটু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী, নগর স্বাধীনতা ফোরামের সদস্য সচিব নাজমুস সাকিব, নগর ছাত্রদলের সহসভাপতি ওবায়দুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উৎসব শেষে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণে আলো প্রজ্জ্বলন করেন এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের আহ্বান জানান।
বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলেদের অভিযোগ তাদের নাম তালিকায় থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ভুক্তভোগী শতাধিক জেলে সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ৬ হাজার ৯৬৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি করে বিশেষ ভিজিএফ চাল বরাদ্ধ দিয়েছেন সরকার। ওই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা চাল বিতরণে নিবন্ধিত জেলেদের চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলার ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলেদের মধ্যে চাওড়া ইউনিয়নে ৬৪২ জন তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছেন। গত রোববার ওই জেলের মধ্যে ৩০০ জেলেকে চাল দিয়ে অবশিষ্ট চাল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ জেলে ফরিদা বেগম. আম্বিয়া বেগম ও মামুন শরীফের। চাল না পেয়ে সোমবার দুপুরে অন্তত শতাধিক জেলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন উপজেলা কৃষি অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, উপজেলা মেরিন ফিসারিজ কর্মকর্তা অলিউর রহমান ও উপজেলা ফ্যাসিলেটেটর মাইনুল ইসলাম। জেলে মোতালেব, নুর মোহাম্মদ, জুয়েল, আনোয়ার, সুনিল চন্দ্র ও কেরামত আলী আকন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি তালিকাভুক্ত অর্ধেক জেলেদের চাল দিয়েছে। অবশিষ্ট জেলেদের চাল দেয়নি। তারা আরও বলেন, আমরা চাল আনতে গিয়ে ফেরত এসেছি। চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আমরা চাল পাব না। তারা আরও বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন ডান হাত-বাম হাত দিয়ে টিপসহি দিয়ে চাল বিতরণের তালিকা প্রস্তুত করেছেন।
চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হারুন বয়াতি বলেন, ‘মাস্টার রোল তৈরি করেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যে জেলেরা অভিযোগ করেছেন তারা তালিকাভুক্ত জেলে নয়।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাসেল বলেন, ‘কমিটির গঠনের চিঠি পাইনি। চিঠির মর্মানুসারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার বলেন, ‘জেলেরা চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আমার দপ্তরে এসেছিল। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন উপজেলা কৃষি অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলার নিবন্ধিত ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলের জন্যই চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজবাড়ী কার্যালয়। সেখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী বিআরটিএর কতিপয় অসাধু কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে একই চক্র ফের তাদের কার্যক্রম আগের মতই চালিয়ে যাচ্ছে। চাহিদামতো অর্থ ছাড়া এখানকার কোনো ফাইল নড়ে না। সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। টাকা নেওয়ার পরও কাজ না হলেও ফেরত দেওয়া হয় না কোনো অর্থ। প্রতিবাদ করলেই দালালদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় । এ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। তবে প্রশাসনের চোখে পড়ে না এসব অনিয়ম-দুর্নীতি।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর মো. আক্রামুজ্জামান কাছে টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার মো. সুমন শেখ।
মো. সুমন শেখ অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে কাগজের জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা জমা দেই আকরাম হোসেনের নিকট। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার কাগজ নিতে বিআরটিএতে আসলে আক্রামুজ্জামান আমার কাছে ব্যাংক স্লিপ চায়। এ সময় এক বছর আগের স্লিপ, আপনার কাছে জমা দিয়েছি, এখন কোথায় পাব, বললে থাপ্পর মারে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আকরাম হোসেনসহ তার সাথে থাকা ৪-৫ জন এলোপাথারীভাবে মারধর শুরু করে। টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে এভাবে মারতে পারে না। আমি এর বিচার চাই।
মো. বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভারী থেকে হালকা করার জন্য আকরাম হোসেন ৮ হাজার টাকা দাবি করে। তাকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার পরও আজ ২ বছর ধরে আজ-কাল করে ঘোরাচ্ছে।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে গত ৭ মে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযানে দালাল চক্রের মূলহোতা রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার কাজীবাঁধা বেথুলিয়া গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আক্রামুজ্জামান, দালাল চরলক্ষীপুর
গ্রামের আব্বাস আলী খানের ছেলে আশিক খান, গোপিনাথদিয়া গ্রামের রহমত আলীর ছেলে লিয়াকত আলী, কাজীকান্দা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মুনছুর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে। এ অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো, মোস্তাফিজ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, রাজবাড়ী বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর আকরামুজ্জামানের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৮০ টাকা, দালাল আশিক খানের কাছ থেকে ৩৩ হাজার ১শত টাকা, দালাল লিয়াকত আলীর কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শত ৪০ টাকাসহ মোট ৭২ হাজার ৪শত ২০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের কতিপয়
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ড্রাইভিং লাইসেন্সসেবা
নিতে আসা গ্রহিতাদেরকে নানাভাবে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। টাকা ছাড়া কেউ লাইসেন্স করতে পারে না। আর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের নেতৃত্বে লিয়াকত আলী জেলার প্রতিটি এলাকায় দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসলেও তাদেরকে ফেল করানো হয়। ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।
একজন লাইসেন্স সেবাগ্রহিতা বলেন, ৩বার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেই। তিনবারই ফেল করানো হয়। পরে একজন দালাল আমার নিকট থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন প্রায় দেড় বছর যাবৎ ঘুরছি। আমার কাজও করে না, আবার টাকাও ফেরত দেয় না। টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়।
এদিকে, সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকায় গড়ে তুলেছেন দ্বিতীয় তলা জমিসহ আলিশান বাড়ি। জাপানি টয়োটা প্রাইভেটকার, সজ্জনকান্দায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় কেনা দ্বিতল ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযুক্ত রাজবাড়ী বিআরটিএর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নয়, তিনি একজন বহিরাগত।
সেবাগ্রহিতাকে মারধরের বিষয়টি এডিএম স্যার আমাকে অবগত করেছেন। আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলবো।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবকের হাতে গণধর্ষণের অভিযোগে বিচারের দাবিতে ও স্থানীয় প্রথাগত বিচারের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
সোমবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, ৩৫ কাঠুরিয়া স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন, পিসিএনপি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবক— অনুচিং মারমা (৫০), কালা মারমা (৫৫) ও মং উ মারমা (৩৫)—মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের ফলে ওই নারী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় প্রথাগত রীতিতে অনুষ্ঠিত সামাজিক বিচারে অভিযুক্তদের ভিকটিমের জন্য ৩ লাখ টাকা ও সমাজের নামে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, একই বিচারে ভিকটিমকেও ‘সমাজের নিয়ম ভঙ্গের’ দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা সম্পূর্ণ অবিচার।
পিসিসিপি সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন,
‘এই বাচ্চার দায় কে নেবে? এই বাচ্চার অভিভাবক কে হবে? প্রভাবশালী একটি আঞ্চলিক দলের নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকা থাকায় ভিকটিম পরিবার ভয় ও আতঙ্কে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন,
‘এটি পাহাড়ে সামাজিক বিচারের নামে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ উদাহরণ। অপরাধীদের অর্থদণ্ড দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া কোনো বিচার নয়, এটি অবিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় পাহাড়ের প্রভাবশালী সংগঠনগুলো—জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফ—কেউই কোনো নিন্দা জানায়নি। অথচ, কোনো বাঙালির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এসব সংগঠন সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন ও প্রচারে নামে। এই দ্বিমুখী নীরবতা প্রমাণ করে, পাহাড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নটি অনেক সময় রাজনীতির ছায়াতলে চাপা পড়ে যায়।’
বিক্ষোভ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও প্রতিবন্ধী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।
মুমূর্ষু হৃদরোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানে সুযোগ না থাকা কার্ডিওলজি বিভাগের কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণ এখন দৃশ্যমান। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) দুরবস্থার অবসান ঘটিয়ে ওয়ার্ডটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর আধুনিক সিসিইউ বিভাগ উদ্বোধন করেন।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল দোতলা বিশিষ্ট আইসিও নতুন ভবন উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয় করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বিভাগ। ৩৩ বছর আগে শুরু হওয়া ইউনিটটি দীর্ঘ সময় ধরে দুরবস্থা ছিল। সেই সময় থেকে শের-ই বাংলা মেডিকেলের সিসিইউ বিভাগে সরকারি খাতা কলমে মোট ৮টি শয্যা থাকলেও পরে তা ১২টিতে উন্নীত করা হয়। শয্যা সংকটের কারণে রোগীরা মেঝেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন। হাসপাতালের মূল ভবন থেকে আলাদা ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরের পর ৮টি শীতাতপ মেশিন স্থাপন করা হয়। বছর দুয়েক পর সবগুলো বিকল থাকায় অসহ্য গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে শুরু করে রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সদের অসহযোগিতা ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্ধতা চরমে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন পর শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে চালু হলো। এটি বরিশালের মানুষের বহুদিনের দাবি পূরণ করেছে। বর্তমান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মশিউল মুনীরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল। সোমবার হাসপাতালের আই ব্লকে আইসিইউ ভবনের ২য় তলার পশ্চিম পাশে আধুনিক সিসিইউ বিভাগ উদ্বোধন শেষে হাসপাতালের ৪র্থ তলার সার্জারি সেমিনার হলে সভা অনুষ্ঠিত হয়। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীরের সভাপতিত্বে সভায় সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. অসিম বিশ্বাস জানান, হাসপাতাল পরিচালক স্যারের একান্ত প্রজেক্ট অনুযায়ী আধুনিক মানে নতুন করে হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিট সাজানো হয়েছে। এখানে নতুন করে আধুনিক মানের ২৪টি বেড রাখা হয়েছে। প্রতিটি বেডের সাথে কার্ডিয়াক মনিটর, অক্সিজেন, সেন্ট্রাল এসি, ৪টি নতুন টয়লেট নির্মাণ, দেয়ালের পলেস্তারা ঠিক করাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। সভায় সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. মুনজিবা শিরিন বলেন, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আধুনিকায়ণের রূপকার আমাদের পরিচালক স্যার। রোগীদের প্রযাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে তিনি একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও হেমাটোলজি ল্যাবরেটরি বিভাগ এবং অটো মেশিন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আজ উদ্বোধন করা হলো আধুনিক সিসিইউ বিভাগ। আমরা পরিচালক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সভায় পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, আজ আমাদের একটি আনন্দের দিন। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক সিসিইউ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই বিভাগের রোগীদের আর গরমে কষ্ট করতে হবে না।
সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এখানে সকল সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। সিসিইউ বিভাগটি আধুনিকায়ন করার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। সিসিইউ বিভাগ আধুনিকায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. একেএম নজমূল আহসান, সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. অসিম বিশ্বাস, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মাদ মাহামুদ হাসান, কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. এ বি এম ইমাম হোসেন (জুয়েল), ডা. মো. মাহামুদুল হাসান, ডা. মো. আফজাল হোসেন, বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম খসরু, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, মো. নাসিমুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, এবং ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত দুই লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিদিনই শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বাড়ছে ভোগান্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা-আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদে স্থায়ী সেতুর অভাব সবচেয়ে বেশি প্রকট। বান্দরবান পাহাড়ি জেলা হওয়ায় ঝিরি ও ছোট ছোট খালের সংখ্যা অধিক। শুকনো মৌসুমে চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল বা হরকা বাণের কারনে এসময় ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে চলাচল। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে বাঁশের সাঁকো থাকলেও অধিকাংশে তা-ও নেই। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে গিয়ে খাল পারাপারের সময় ঢলের পানিতে তলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।
এসব এলাকার অসুস্থ রোগী ও প্রসুতি মায়েদের সময়মতো চিকিৎসা সেবা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
এছাড়াও অন্তত অর্ধলক্ষ হেক্টর জমির উৎপাদিত ফসল বাজারে পৌঁছাতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। এতে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বারবার সেতু নির্মাণের আবেদন জানানো হলেও এখনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে ভোগান্তি দূর করার জোর দাবি তুলেছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান-লামা সড়ক দিয়ে তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের সহজ যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এটি। অতি বৃষ্টিতে সড়কটির বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হলেও ২২০০ মিটার চেইনেজ এলাকায় বেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মঞ্জয় পাড়া-নাচালং সড়কের ১৪৩৭০ চেইনেজ এলাকা, আলীকদমের ওবাইদুলহাকিম পাড়া সড়কের বাসস্টেন্ড হিন্দু পাড়া এলাকা, কলারঝিড়ি সড়ক, লামার গাইন্ধ্যা-চিন্তাবা পাড়া সড়কের বমু খাল এলাকা, ফাইতং চিউবতলী পোলাও পাড়া খাল এলাকা, নাইক্ষ্যংছড়ি সাপের গাড়া এলাকার কাগজি খোলা খাল এলাকা, কম্বনিয়া পাড়া, মিরঝিরিপাড়া এলাকা, রোয়াংছড়ির ব্যাংছড়ি খাল, থানচি বলিপাড়ার সোনাইছড়ি খান, তিন্দু খাল, রুমার হানারাম পাড়া, রুমার গ্যালেংগা খালসহ বেশ কিছু এলাকায় কোথাও সেতু নেই আবার কোথাও ৩০-৫০ বছরের ছোট আকারের ভাঙা পুরোনো সেতু। যা চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে গেছেন। ভাঙা সেতু দিয়ে কোন রকমে কিছু এলাকার মানুষ পারাপার হতে পারলেও সাপেরগাড়া, চিন্তাবা পাড়া, ব্যংছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঝিরি বা খাল পার হয় পায়ে হেঁটে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পন্য পরিবহনসহ শিক্ষা গ্রহনও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সাপের গাড়া এলাকার বাসিন্দা জেবুল হক, জসীম উদ্দীন বলেন, সাপের গাড়া- কাগজিখোলা এলাকায় অন্তত ২৫- ৩০ হাজার লোকের বসবাস।গত ২০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস গড়ে উঠলেও একটি সেতুর অভাবে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়ত স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পণ্য পরিবহনসহ ব্যহত হয় স্থানীয় ব্যাবসা বানিজ্য। এছাড়া বর্ষাকালে স্কুলে যেতে গিয়ে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে কয়েক জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এই এলাকায় অতি দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
গজালিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমা বলেন, চিন্তাবর, বাইশফারি, ঢেকিছড়া, তুলাতলি, বটতলি, হামায় চর পাড়া এলাকায় ৮-৯ হাজার মানুষের বসবাস। বমু খালের উপর একটি সেতুর অভাবে কয়েক দশক ধরে যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে তাদের। এই এলাকায় স্কুল, কলেজ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারেনা খালের পানিতে প্রবল স্রোতের কারনে। এছাড়া অন্যান্য অসুবিধাতো আছেই।ফলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সেতুটি অতিদ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, জেলার ৭টি উপজেলায় জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা স্বাপেক্ষে অতি প্রয়োজনীয় আন্ডার হানড্রেড মিটারের ৪১টি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে সেতুগুলো নির্মাণকাজ চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য