রোহিঙ্গা যুবককে ভালোবেসে ছেড়েছিলেন স্বজন, পরিবার। বাঙালি পরিচয় বদলে বেছে নেন রোহিঙ্গা জীবন। তবে যার জন্য ঘর ছাড়া সেই যুবকই এক সময় ছেড়ে যায় তরুণীকে। তত দিনে জন্ম নিয়েছে দুই সন্তান। দুই চোখে অন্ধকার দেখা তরুণী টিকে থাকার জন্য পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন মধ্যপ্রাচ্যে। তবে পাসপোর্ট করতে গিয়ে ‘মিথ্যা পরিচয়ের’ অভিযোগ ধরা পড়ে যেতে হয় কারাগারে।
সিনেমার কাহিনিকে হার মানানো এই তরুণীর নাম সিরাজ খাতুন। ২৫ দিন জেল খাটার পর মঙ্গলবার তিনি মুক্তি পেয়েছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে।
মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপে জামিনে মুক্ত হয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি শোনান বিভীষিকাময় জীবনের গল্প।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের জিম্মায় গত ১৬ জুন সিরাজ খাতুনকে জামিন দেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন। এর পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
প্রেম যেভাবে পরিণত প্রতারণায়
রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকায় প্রায় এক যুগ আগে পরিচয় গোপন করে মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন রোহিঙ্গা যুবক মো. সিদ্দিক। পাশাপাশি অন্যের ফসলি জমিতে চাষাবাদও করতেন। সিদ্দিকের সঙ্গে ওই এলাকার সিরাজ খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০১০ সালে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর সিরাজ জানতে পারেন, তার স্বামী রোহিঙ্গা। শুরু হয় পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জীবন।
সিরাজ জানান, চট্টগ্রামের নানা জায়গায় ঘুরেও কোথাও থিতু হতে পারছিলেন না তারা। ২০১৭ সালে পটিয়ায় থাকার সময় ধরা পড়েন পুলিশের কাছে। পুলিশ তাদের পাঠিয়ে দেয় উখিয়ার পালংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার ত্রাণের আশায় সিরাজকে রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন সিদ্দিক। সিরাজের নতুন নাম তখন সালমা খাতুন।
ক্যাম্পে নতুন চেহারা পায় সিদ্দিকের, নিয়মিত সিরাজকে নির্যাতন করতেন তিনি। এরই মধ্যে জন্ম নেয় দুই সন্তান। ২০১৯ সালে সিদ্দীক স্ত্রী-সন্তানদের রেখে হঠাৎ উধাও হয়ে যান। অসহায় সিরাজ দুই সন্তানকে নিয়ে ফিরে যান রাঙ্গুনিয়ায় বাবার বাড়িতে।
মিথ্যা পরিচয়ের অভিযোগে কারাবাস
সিরাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবার জানত না আমি রোহিঙ্গাকে বিয়ে করেছি। সব শুনে তারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। মানসম্মান রক্ষায় আমাকে ওমান পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।’
ওমান যাওয়ার জন্য ৩ জুন পাসপোর্ট বানাতে ডবলমুরিংয়ের মনসুরাবাদ কার্যালয়ে যান সিরাজ। তবে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা তাকে আটক করেন। সিরাজের ফিঙ্গার প্রিন্টে দেখা যায়, তিনি একজন রোহিঙ্গা, নাম সালমা খাতুন।
এরপর এক বছর বয়সী সন্তানসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সিরাজকে সহায়তায় এগিয়ে আসে চট্টগ্রামভিত্তিক বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন বিএইচআরএফ। আইনি সহায়তা দিয়ে আদালতে বিষয়টি তুলে ধরে জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক বিষয়টি আমলে নিয়ে সিরাজকে জামিন দেন।
বিএইচআরএফ চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই দফা আবেদন করেও সিরাজ খাতুনের জামিন হয়নি। তবে তৃতীয়বার আদালতের কাছে সিরাজ খাতুনের অসহায়ত্ব সম্পূর্ণ তুলে ধরলে বিচারক তা বুঝতে পারেন। অবশেষে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন।’
মুক্তির পর সিরাজ বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় বার বার বলছিলাম, আমি রোহিঙ্গা না, প্রতারণার শিকার হয়েছি। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি। পরে আমার পরিবার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে বিষয়টি তুলে ধরে।
‘আমি ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ভোটার হয়েছি। আমি বাংলাদেশি। আমি তার (স্বামী) বিচার চাই। রোহিঙ্গা তালিকা থেকে মুক্তি চাই।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১ বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে এসেছে বড় পরিবর্তন। বৈষম্যমূলক প্লট-ফ্ল্যাট কোটাব্যবস্থা বাতিল, দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত, শহীদ পরিবার ও নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্পসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য জানায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ বিধিমালা সংশোধন করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য নির্ধারিত কোটা বাতিল করা হয়েছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্লট বা ফ্ল্যাট দেওয়ার সুযোগও বন্ধ হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ মেয়াদে রাজউকের বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করছে। ধানমন্ডিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে পাওয়া ১২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে শেরেবাংলা নগরের ১৭ দশমিক ৪৭ একর জমি জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের জন্য হস্তান্তর করছে মন্ত্রণালয়। শাহবাগে একটি ও জেলাপর্যায়ে আটটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শেষ, অন্য ৫৫ জেলায় কাজ চলছে। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের জন্য মিরপুরে ২ হাজার ৩৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক আজিমপুরে নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৮৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনস্বার্থবিরোধী পাঁচটি প্রকল্প বাতিল করে ৪২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে মন্ত্রণালয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অডিটে ২০০৯ থেকে ২০২৪ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৮২টি অনিয়ম চিহ্নত করা হয়েছে। অনিয়মে জড়িত ১১ কর্মকর্তা বরখাস্ত ও রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পে অভিযুক্ত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এছাড়া বিগত ১ বছরে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত আরও কর্মক্রম সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে প্রেস রিলিজে।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় চানখাঁরপুলে ৬জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক সাক্ষী দাবি করেছেন, পুলিশের পোশাক পরা লোকদের ‘হিন্দি ভাষায়’ কথা বলতে শুনেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নাজিমুদ্দিন রোডের শহীদ আহম্মেদ এ দাবি করেন।
গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে দুটি ঘটনায় মোট ৩জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এর মধ্যে গত বছরের ৫ অগাস্ট চানখাঁরপুলে মো. ইয়াকুব (৩৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় সাক্ষ্য দেন তার মা রহিমা আক্তার ও শহীদ।
ইয়াকুব ছিলেন নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি ম্যান। তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের পাশে মিলি গলির বাসিন্দা।
এ ছাড়া ওইদিন সেখানে নিহত ইসমামুল হকের (১৭) ভাই মো. মহিবুল হক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন বি এম সুলতান মাহমুদ, মিজানুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রসিকিউটর।
ইয়াকুব নিহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার মা রহিমা বলেন, ‘আমার ছেলে ৫ অগাস্ট চানখাঁরপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি লাগার বিষয়ে শুনে আমি চিৎকার করে বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে যাই। মহল্লার লোকজন আমাকে যেতে দেয়নি। আমাকে জানায় আমার ছেলে সুস্থ আছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেসময় আমার ছেলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। প্রতিবেশীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আমার সন্দেহ হয় আমার ছেলের কিছু হয়েছে।
‘বেলা আনুমানিক ২টার দিকে দেখি আমার ছেলের লাশ খাটিয়ায় করে গলির ভিতর নিয়ে আসে। শহীদসহ (প্রতিবেশী) অনেকেই ছিল। ছেলের শরীর থেকে তখনও খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল। তারপর কাপড় সরিয়ে দেখি পেটে গুলি লেগে পছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, রক্ত পড়া থামছে না।’
তিনি বলেন, তিনি পরবর্তীতে টিভি নিউজ, ভিডিও এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেন যারা গুলি করেছে তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরিহিত ছিল। পুলিশের গুলিতে তার ছেলে পড়ে যান। প্রতিবেশী শহীদ এই দৃশ্য তার মোবাইলে ধারণ করেন।
রহিমা তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং নির্দেশদাতা সবার বিচার চান। সেসময় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম বলেন নির্দেশদাতা হিসেবে।
তার পরে সাক্ষ্য দেন তাদের প্রতিবেশী শহীদ আহম্মেদ (৪০)।
তিনি বলেন, ‘আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরও অনেকে বেলা আনুমানিক ১১টা থেকে ১১.৩০টার মধ্যে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দিই। আনুমানিক ১১.৩০টার সময় আমরা চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছলে, সেখানে হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিল।
‘তখন দেখলাম চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি।’
তিনি বলেন, পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। ওই সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আবার তারা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে।
‘আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরাচ্ছিলাম। তখন আমাকে একজন বলে আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি ওই ছেলেকে আরেকজনের কাছে রেখে আমার ভাতিজার কাছে যাই। আরও দুইজনসহ ভাতিজাকে অটোরিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন যে ইয়াকুব মারা গেছে।’
শহীদ বলেন, পরে জেনেছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিল। আরো অনেকেই ছিল।
এরপর সাক্ষ্য দেন মো. মহিবুল হক (২১), তার বাড়ি চট্টগ্রামে।
তিনি বলেন, ‘আমি সেদিন বাড়িতে ছিলাম। আমার ভাই ইসমামুল হক ঢাকা চানখাঁরপুলে শহীদ হয়েছে। দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে আমার ভাই শহীদ ইসমামুলের মোবাইল থেকে জনৈক ব্যক্তি আমাকে কল করে জানায় যে আমার ভাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
ইসমামুল চকবাজার গফুর সওদাগরের দোকানে কাজ করতেন জানিয়ে মুহিবুল বলেন, ‘আমি তাকে ফোন করলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ইসমামুলের খোঁজ খবর নেন। যান চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা সেদিন ঢাকায় আসতে পারিনি। পরের দিন সকাল বেলা আমি, আমার আম্মা দুই আত্মীয়কে নিয়ে ঢাকায় আসি। ঢাকায় এসে জানতে পারি, আমার ভাইকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।’
‘আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা গফুর সওদাগরকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সামান্য কথাবার্তা হয়। সে সিসিইউতে ছিল। তার অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ তারিখ সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে সে ইন্তেকাল করে।’
চিকিৎসকরা তার ভাইয়ের ময়নাতদন্ত করেননি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ইসমামুলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে যাই। ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দিয়ে রাত ২টায় চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছি।’
পরদিন জানাজা শেষে ইসমামুলের মরদেহ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে মহিবুল ট্রাইব্যুনালকে জানান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, এডিসি আক্তারুল ইসলাম, ইমরুল এবং আরশাদ এর নির্দেশে সুজন হোসেন, নাসিরুল ইসলাম, ইমাজ হাসান ইমনসহ আরও অনেকে গুলি করেছেন বলে তিনি তার সাক্ষ্যে বলেন।
ভাইয়ের হত্যাকারী এবং নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন মহিবুল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ অগাস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১১ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়। নথিপত্র পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৫ মে ফরমাল চার্জ আকারে তা দাখিল করেন।
অভিযোগ আমলে নিয়ে সেদিন ট্রাইব্যুনাল হাবিবুর রহমানসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।
তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন।
তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ মামলায় গত সোমবার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম চানখাঁরপুলের ঘটনাকে পদ্ধতিগত অপরাধ হিসেবে তুলে ধরেন। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। গত মঙ্গলবার দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া পাথর লুটের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১৩ আগস্ট) ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে পরিদর্শনে যায় সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুদকের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত রাফির নেতৃত্বাধীন টিম। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধুদের যোগসাজশে সাদাপাথর এলাকার পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। ওই পর্যটন এলাকায় দুদকের সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয় অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান শেষে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানোর আশ্বাস দেন তিনি।
প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধলাই নদের উৎসমুখে ভেসে আসা পাথরের বিশাল স্তুপের কারণে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জ পর্যটনের স্থান হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সাড়া ফেলেছিল। তবে গত এক বছরে সে জায়গাটি থেকে অবাধে পাথর লুটের ঘটনায় মনোরম সৌন্দর্যের এই স্থানটি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের ৭৫ শতাংশই গায়েব। আছে মাত্র ২৫ শতাংশ। একসময় প্রচুর পরিমাণে সাদা পাথর দেখা যেত বলে জায়গাটার নামই হয়ে যায় ‘সাদাপাথর’। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্রটি অস্তিত্ব সংকটে।
এর আগে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাদাপাথর নামক ওই স্থান থেকে পাথর লুট হওয়ার সংবাদ প্রকাশ হলে তা সারা দেশে আলোচিত হয়। দেশের বিভিন্ন মহল থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধংস করার প্রতিবাদ জানানো হয়।
৩৩ প্রকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুদের দাম কমিয়েছে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল)। গতকাল বুধবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা। তিনি জানান, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য কমানো হয়েছে।
সামাদ মৃধা বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে র-ম্যাটেরিয়াল যৌক্তিক মূল্যে কেনার ব্যবস্থা করায় ব্যয় কমেছে। ফলে ৩৩টি ওষুধের দাম ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো গেছে।
দাম কমেছে অ্যান্টিবায়োটিক, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, উচ্চরক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কৃমিনাশক, ব্যথানাশক, হাঁপানি ও ভিটামিন সংক্রান্ত ওষুধের, দাম কমিয়েছে বলে জানান তিনি।
ইডিসিএল জানায়, ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, কেটোরোলাক ইনজেকশন, অনডানসেট্রন ইনজেকশন, সেফট্রিয়াক্সোন ও সেফটাজিডিম ইনজেকশনের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। মেরোপেন ওমিপ্রাজল ইনজেকশনের দামও হ্রাস পেয়েছে।
এছাড়া মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেটের দাম ১০ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা করা হয়েছে।
গ্রামীণ ক্লিনিকে তালিকাভুক্ত ৩২টি ওষুধের মধ্যে ২২টির দামও কমানো হয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের অ্যান্টাসিড, প্যারাসিটামল, সালবিউটামল, অ্যালবেনডাজল, ক্লোরামফেনিকল আই ড্রপ, মেটফর্মিনসহ বিভিন্ন ওষুধের দাম কমানো হয়েছে।
কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে সামাদ মৃধা বলেন, ‘ইডিসিএলের উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী দুই হাজারের বেশি অতিরিক্ত জনবল ছিল।
তারা সবাই অদক্ষ কর্মী, অনেকের জাল সনদ পাওয়া গেছে। তারা কোনো কাজ করত না। এই অদক্ষ জনবলের মধ্যে ৭২২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থে আরও ১ হাজারের বেশি জনবল ছাঁটাই করতে হবে। যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মীর মুগ্ধ সরোবর ঘিরে পূবালী ব্যাংকের উদ্যােগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পূবালী ব্যাংক পিএলসি কুষ্টিয়া শাখার উদ্যোগে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় নারকেল, মৌচন্দ্রা, রঙ্গন, চেরি, পবনঝাউ, রাধাচূড়া, চন্দ্রপ্রভা ইত্যাদি গাছের মোট ১৫০টি চারা রোপন করা হয়।
অফিস সূত্র, ব্যাংকিং কার্যক্রমের-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সাদ্দাম হোসেন হলে টিভি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যাত্রী ছাউনি ও পানীয় সুব্যবস্থা করবে। একই সাথে আইটি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে জানা যায়।
এসময় পূবালী ব্যাংক পিএলসি’র ফরিদপুর অঞ্চলপ্রধান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জহিরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া শাখার প্রধান মো. ইসমাইল হাওলাদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিসের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাহেদ হাসান, ইবি উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) গোলাম মাহফুজ মঞ্জু, ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরায় জুলাই পূনর্জাগরণে সবুজ উৎসবে বৃক্ষরোপন পদক-২০২৫ প্রদান করা হয়েছে। বুধবার মাগুরা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মাগুরা ও ‘পরিবর্তনে আমরাই’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক মোঃ হুসাইন শওকত প্রধান অতিথি হিসেবে সবুজ উৎসব-২০২৫ এর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম । এ সময় আরও ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মাহবুবুল হক,জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার শামীম কবির, মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার হাসিবুল হাসান, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন, মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক ও 'পরিবর্তনে আমরাই ' সংগঠনের পরিচসলক নাহিদুর রহমান দুর্জয় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সাতটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেরা প্রতিষ্ঠান সরকারি সিভিল সার্জন অফিস, সেরা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি মাগুরা প্রেস ক্লাব, সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাথমিক) কুমার কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাধ্যমিক) আড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সেরা সংগঠন প্রতিশ্রুতি উন্নয়ন সংস্থা,ব্যক্তি পর্যায়ে সেরা বৃক্ষপ্রেমী আশীষ কুমার দে মন্ডল ও সেরা কন্টেন্ট ক্রিয়েটার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন কে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এ অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বেশি বেশি গাছ লাগানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।
মন্তব্য