শিক্ষিকাকে মারধরের মামলায় দপ্তরি হয়েছেন চাকরিচ্যুত, খেটেছেন জেল। এরপরই এলাকার লোকজন দপ্তরির পক্ষ নিয়ে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন। গ্রামের হাজারও লোক মানববন্ধন করে জানিয়েছেন তীব্র প্রতিবাদ।
এরপর সেই দপ্তরি জামিন পেয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হয়নি ঘটনার নেপথ্যের কারণ। এ নিয়ে চলছে পুলিশের তদন্ত। তবে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে দপ্তরির পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর কাশেম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে যা ঘটেছে, তা পারিবারিক বিরোধের জের।
নিউজবাংলার সঙ্গে রোববার বিকেলে কথা হয় শিক্ষিকা নিলুফা খানমের। তিনি বলেন, ‘মামলার সাক্ষী ছোটন খান ও মঞ্জুর মণ্ডল দুজনই আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে। আদালতে তারা সাক্ষ্য দেবে না বলে জানিয়েছে। ভয়ে স্থানীয় লোকজনও দপ্তরির পক্ষে।’
তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের সঙ্গে দপ্তরির পরিবারের জমিসংক্রান্ত বিরোধ কখনোই ছিল না। এর আগে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয়নি। আমাদের একটি গাছের ডাল ভেঙে তাদের একটি ঘরের চালায় পড়া নিয়ে একটু মনোমালিন্য ছিল। সেটির সুষ্ঠু সমাধানও হয়েছিল। ওই দিন আমাকে মারধরের ঘটনাটি স্কুলসংক্রান্ত। দপ্তরির চাকরি চলে যাওয়ায় স্থানীয়রা আবেগ দেখিয়ে আমার বিপক্ষে চলে গেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষিকা নিলুফা খানম ও দপ্তরি রাকিবের বাবারা পাঁচ ভাই। তাদের দাদা মারা যাওয়ার পর জমি বণ্টন নিয়ে নিলুফার পরিবারের সঙ্গে রাকিবের পরিবারের বিরোধ শুরু। রাকিবরা বরাবরই বলে আসছেন, তাদের ঠকানো হয়েছে।
ঈদের কিছুদিন আগে নিলুফাদের গাছের একটি ডাল ভেঙে পড়ে দপ্তরি রাকিবদের একটি খামারের ঘরে। এতে করে ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ নিয়ে বিরোধ আরও চরমে পৌঁছে। এভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ঝগড়া আর মনোমালিন্য।
সবশেষ ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে রাকিবদের পরিবারকে শান্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। তবে রাকিবরা জানিয়েছেন, তারা ক্ষতিপূরণ পাননি। ওই শিক্ষিকার বাবার দোকান থেকে বাকিতে চার হাজার টাকার পণ্য নিয়েছিলেন। সেই টাকা আর ফেরত দেয়া হয়নি।
রাকিবের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই দিনের ঘটনাটি স্কুলসংক্রান্ত না। পারিবারিক বিরোধের জেরে দপ্তরিকে চাকরিচ্যুত করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেদিন তাদের বাড়িতে জমিসংক্রান্ত বিরোধে দুই পরিবারের কথা-কাটাকাটি হয়েছে। পারিবারিক বিরোধটি স্কুলের ঘটনা বলে শিক্ষিকা অপপ্রচার চালিয়েছেন। ফলে দপ্তরির চাকরি চলে গেছে।
মানবাধিকার জোট ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, সেদিনের ঘটনায় শিক্ষিকা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন, এটা ঠিক আছে। তবে যদি পারিবারিক বিরোধে ঘটনাটি হয়ে থাকে, তাহলে পারিবারিকভাবেই মীমাংসা হওয়া উচিত ছিল। কারণ পারিবারিক বিরোধ স্কুলে আনা ঠিক না। পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বহু মানুষ কষ্টে আছে। এর মধ্যে চাকরি চলে গেলে একটি পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। ফলে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন।
এই আইনজীবী বলেন, শিক্ষিকার করা ফৌজদারি মামলাটি তদন্ত করে যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে যে শাস্তি বিবাদীর হওয়ার কথা ছিল, ২১১ ধারায় বাদীকে সেই শাস্তি পেতে হবে। এ জন্য বিবাদীকে মামলা করতে হবে অথবা আদালত তাদের মামলা করতে নির্দেশ দিতে পারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর কাশেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত করে দেখেছি অনেক আগে থেকেই তাদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। জমিসংক্রান্ত জের ছাড়াও ওই দপ্তরির পরিবারের একটি ঘরের চালে নিলুফাদের গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যাওয়া নিয়েও তাদের বিরোধ ছিল।
ওই দিন মারামারির ঘটনাটি পূর্ববিরোধের একটি অংশ। সম্পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদনটি চলতি মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা দেয়া হবে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, শিক্ষিকার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে মামলাসহ রাকিবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে এটি যদি স্কুলসংক্রান্ত ঘটনা না হয় কিংবা পারিবারিক বিরোধের ঘটনা হয়, তাহলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। পরে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিলুফা খানম মামলার নথিতে উল্লেখ করেছেন, গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল ১১টার সময় দপ্তরি রাকিবকে স্কুল পরিষ্কার করার জন্য ফোন করি। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করেনি। এমতাবস্থায় লোক পাঠিয়ে ডেকে এনে স্কুল পরিষ্কার করতে বলা হয়। এতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের গালাগাল ও হুমকি দিতে থাকে। তখন তাকে কিছু না বলে আমি বাড়িতে চলে যাই।
কিন্তু দুপুর দুইটার সময় আমার বাবা হাফিজ উদ্দিন খান মসজিদ থেকে বাড়িতে আসতে থাকে। রাস্তায় পথ আটকিয়ে রাকিবের বড় ভাই নাদিমের নির্দেশে দপ্তরি রাকিব আমার বাবাকে গালাগাল করতে থাকে। আমি এসে তাকে গালাগাল করতে নিষেধ করায় আমাকে রাস্তায় টানাহেঁচড়া করে মাটিতে ফেলে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ সময় দুই ভাই মিলে আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। রাকিব আমার গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। আমার চিৎকারে স্থানীয় রফিকুল ইসলামের ছেলে ছেটন খান ও বোচু মণ্ডলের ছেলে মঞ্জুর মণ্ডল উদ্ধার করে।
পরদিন শুক্রবার (২৮ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পাগলা থানার বারইহাটি বটতলা এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। এর পরেই রাকিবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ওই দিন বিকেলে শিক্ষক নিলুফা খানম মামলা করার পর থেকে কারাগারে ছিলেন রাকিব।
তবে ১৮ দিন জেল খেটে গত ১৫ জুলাই আদালতের নির্দেশে কারাগার থেকে জানিনে মুক্তি পেয়েছেন। বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও দপ্তরির আইনজীবী নূরুল হক।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার ১৫৬ নম্বর বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিলুফা খানম। একই স্কুলের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী রাকিব খান। তারা বারইহাটি গ্রামের বাসিন্দা এবং দুই পরিবারের বাসা ও বিদ্যালয় পাশাপাশি। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাইবোন।
আরও পড়ুন:জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গড়ে উঠেছে ‘পাখি কলোনি’। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাখিদের জন্য গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে মাটির হাঁড়ি, আর শান বাঁধানো পুকুরে বসানো হয়েছে আড়ানী। উদ্দেশ্যে প্রকৃতির পরম সহচর এসব পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের নিশ্চয়তা তৈরি করা।
উপজেলা চত্বরে পাখির কলরবে দীর্ঘদিন পর যেন ফিরে পেয়েছে প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দ, প্রাণ ফিরে পেয়েছে পরিবেশের হৃদস্পন্দন। এখন মাটির হাঁড়িতে বাসা বাঁধবে শালিক, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় পাখি। পুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে ভাসছে আড়ানী, ঝিকমিক করছে রোদে মাছের খেলা।
উপজেলা পরিষদে পাখি কলোনি দেখতে এসেছেন শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, পাখির কূজনে এখানের পরিবেশটাই যেন পাল্টে গেছে। পাখি কলোনি দেখে খুব ভালো লাগছে।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী এম রাসেল আহমেদ বলেন, যেখানে মানুষ পাখি তাড়ায়, সেখানে তাদের জন্য ঘর বানানো হচ্ছে। এটি শুধু পরিবেশ প্রকল্প নয়, এটি সহানুভূতির প্রতীক। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, আর প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ টিকে থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, পাখি কৃষির নীরব সহযোগী। তারা মাঠের ক্ষতিকর পোকার শত্রু। এই উদ্যোগ কেবল পরিবেশ নয়, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আল জিনাত বলেন, পাখি প্রকৃতির প্রাণ। আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে গাছ, মানুষ ও পাখি একসঙ্গে টিকে থাকবে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই উদ্যোগ শুধু পাখিদের আশ্রয় নয়, এটি প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা। মূলত পাখি কলোনির উদ্দেশ্য একটি মানবিক, প্রাণবন্ত ও সবুজ পৃথিবীর প্রত্যাশায় পাখির কূজনের মধ্যেই আমরা প্রকৃতির হাসি শুনতে চাই।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শহীদ পরিবার অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হলেও, তাদের মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে বসিয়ে অমর্যাদা করা হয়েছে। আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে জুলাই সনদকে ‘পাওয়ার এলিট’-এর সেটেলমেন্ট বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতরা কিছু দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যবদ্ধ কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারের পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দিলেও, শুরুতে যদি বিষয়টি আমলে নেওয়া হতো তাহলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না।
তিনি বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে আহত যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।
এনসিপি সদস্য সচিব আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করেই এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা না দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। জুলাই সনদের কোনো আইনভিত্তি না দেওয়া, বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ না করা এবং পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে না আনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছি।
তিনি বলেন, এনসিপি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ৭২ সালের বন্দোবস্ত বিলোপ করে নতুন সাংবিধানিক অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিচার সংস্কারের অংশ হিসেবে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনগণ এই দাবিতে এনসিপিকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারে জোরালো ভূমিকা রেখেছি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। সনদের আইনিভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর উল্লেখ নেই। আমরা বলেছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনিভিত্তি থাকতে হবে। কিন্তু সনদে জনগণের সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতার প্রকৃত মৌলিক সত্যের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত বেসিক স্ট্রাকচারের আওতাভুক্ত। ফলে ৭২ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এতে জুলাই সনদ জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণায় পরিণত হবে।
এ কারণে এনসিপি সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে গণভোটের পূর্বে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির আহ্বান জানিয়েছে—যাতে এর আইনভিত্তি, বৈধতা ও জুলাই অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
শেষে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিয়ে আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় আমরা জনগণের পাশে থাকব। কোনো অবস্থাতেই জুলাই সনদকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনিভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্টে’ পরিণত করা যাবে না। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্য আমাদের অগ্রাধিকার হলো যুক্তিসংগত আর্থিক সুবিধার নিশ্চয়তাসহ চাকরির নিরাপত্তা, শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়।
বিএনপি মহাসচিব জানান, জনগণের ভোটে বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে।
মির্জা ফখরুল সতর্ক করে বলেন, শিক্ষকদের যুক্তিসংগত আন্দোলনকে পুঁজি করে পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীরা যদি পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালায় কিংবা আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়, তবে বিএনপি কোনো ধরনের নমনীয়তা প্রদর্শন করবে না।
পবিত্র নগরী মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব এক নতুন মেগা উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে গ্র্যান্ড মসজিদের কাছাকাছি আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো মক্কা নগরীতে আগত বিশ্বের মুসলিমদের জন্য থাকার ব্যবস্থা, আতিথেয়তা এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা নিশ্চিত করা।
নতুন এই উন্নয়ন প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘কিং সালমান গেট’। এটি আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ১২ মিলিয়ন স্কয়ার মিটার এলাকাজুড়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।
প্রকল্পে থাকবে আবাসিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও হোটেল সুবিধা। এছাড়াও, ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৯ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ভিডিওতে দেখা গেছে, মক্কা নগরীর পাশ দিয়ে বিশাল উঁচু ভবনগুলো দাঁড়ানো এবং তার ওপরে শান্তির পায়রা উড়ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে রুয়া আলহারাম আলমাক্কি প্রতিষ্ঠান। নতুন এই উদ্যোগে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সৌদি আরবের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মক্কায় ৩ কোটি হজ যাত্রীকে স্বাগত জানানো হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মক্কা-মদিনা অঞ্চলে মুসলিম সম্প্রদায়ের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবিতে টানা সাত দিন ধরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শনিবার দুপুরে তারা কালো পতাকা মিছিল করবেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শহীদ মিনার ছাড়বেন না। প্রয়োজনে আমরণ অনশনে যাবেন তারা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচি এখন অনশনে রূপ নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের চার লাখ সদস্য আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর ভিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অসংখ্য মানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, ন্যায্য দাবি আদায় না করে শহিদ মিনার ত্যাগ করব না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ এবং প্রজ্ঞাপন বিলম্বে ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার থেকে তারা অনশন শুরু করেছেন। আজ দুপুরে কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ‘অবহেলার প্রতিবাদ’ জানানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের এক বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ি ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হলেও শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা ও কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পর্তুগালের বেশির ভাগ উন্মুক্ত স্থানে ‘লিঙ্গ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য’ পূরণে নিকাব ব্যবহার নিষিদ্ধের একটি বিল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। দেশটির কট্টর ডানপন্থি চেগা প্রস্তাবিত বিলটিতে মূলত মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
শুক্রবার পাস হওয়া বিলটিতে জনসমক্ষে মুখ ঢাকা পোশাক পরার জন্য ২০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কাউকে নিকাব পরতে বাধ্য করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে উড়োজাহাজ ভ্রমণ, কূটনৈতিক প্রাঙ্গণ এবং উপাসনালয়ে মুখ ঢাকা পোশাক পরা যাবে। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিলটি নিয়ে এখন সাংবিধানিক বিষয়, অধিকার, স্বাধীনতা ও নিশ্চয়তা সম্পর্কিত আইন পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে।
এর আগে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশ নিকাব আংশিক বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে পর্তুগালও সেই তালিকায় নাম লেখাবে।
প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজা এখনও বিলটিতে ভেটো দিতে পারেন কিংবা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন।
শুক্রবারের পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালে বামপন্থী দলগুলোর বেশ কয়েকজন নারী আইনপ্রণেতা বিলটির বিরোধিতা করেন। তবে মধ্য-ডানপন্থি জোটের সমর্থনে বিলটি পাস হয়।
কট্টর ডানপন্থি দল চেগার নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা বলেন, ‘আমরা আজ পার্লামেন্টের নারী সদস্য, আপনার মেয়ে, আমাদের মেয়েদের এই দেশে একদিন বোরকা পরার হাত থেকে রক্ষা করছি।’
এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের গণতন্ত্র এবং আমাদের মূল্যবোধ, পরিচয় ও নারীর অধিকার রক্ষার এক ঐতিহাসিক দিন।’
ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতা আন্দ্রেয়া নেতো ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘এটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা নিয়ে বিতর্ক। কোনো নারীকে তার মুখ ঢাকতে বাধ্য করা উচিত নয়।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পার্লামেন্টে ১০টি দলের মধ্যে দুটি দল ভোটদানে বিরত ছিল। পিপল-অ্যানিম্যালস-নেচার পার্টি এবং টুগেদার ফর দ্য পিপল পার্টি বলেছে, এই প্রস্তাব বৈষম্যকে উসকে দিচ্ছে।
ইউরোপে খুবই অল্পসংখ্যক মুসলিম নারী তাদের মুখ ঢেকে রাখেন এবং পর্তুগালে এটা খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু নিকাব ও বোরকা ইউরোপজুড়ে একটি মেরূকরণের বিষয় হয়ে উঠেছে। কারো কারো যুক্তি, এগুলো লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতীক, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই এগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত।
মন্তব্য