একজনের জমি আরেকজনের নামে বন্দোবস্ত, জবরদখল, ভূমিহীন পরিবারের বসতভিটা অন্যের নামে বন্দোবস্ত দেয়া, একই জমি থেকে একাধিকবার মালিকের নাম খারিজ করে দেয়াসহ প্রকাশ্যে ঘুষ-বাণিজ্য। শুনানির দিন অভিযোগকারী দম্পতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।
এত সব অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) সাহাদৎ হোসেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগের পরও স্বপদে থেকে দিব্যি দুর্নীতি করে যাচ্ছেন সাহাদৎ। বরং প্রতিকার না হওয়ায় সাহাদতের সিন্ডিকেটের কাছে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন তারাই।
‘সাহাদৎ চক্রের’ সবশেষ হয়রানির শিকার উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের জাবেদ আলী-হাফিজা বেগম দম্পতি। টাকা নিয়েও কাজ না করার অভিযোগের শুনানির দিন এই দম্পতিকে অপহরণ করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সাহাদতের চক্রের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ৬ জুন সাহাদতের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের শুনানি ছিল এসি ল্যান্ড অফিসে। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে অফিসের কাছাকাছি পৌঁছলে ভূমিহীন দম্পতি জাবেদ আলী-হাফিজা বেগমকে অপহরণ করেন তহশিলদার ও তার লোকজন।
উপজেলা ভূমি অফিসের পাশেই কাঁচাবাজারের চারতলা ভবনের একটি কক্ষে প্রায় ২ ঘণ্টা আটকে রেখে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ঘটনাটি জেলা প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছালে তাদের হস্তক্ষেপে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদ তাদের উদ্ধার করেন।
জাবেদ জানান, তাদের একমাত্র বসতভিটার ১৬ শতক জমি ভুল করে খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। সেই জমিতে তারা ঘর তুলে বাবা-দাদার সময় থেকে বসবাস করছেন। ওই ভূমি বন্দোবস্ত করে দেবেন বলে তাদের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা নেন তহশিলদার সাহাদৎ হোসেন।
১৬ শতক জমির মধ্যে ৯ শতক বন্দোবস্তও করে দেন। বাকি ৭ শতক জমি না পেয়ে টাকা ফেরত চেয়ে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রৌমারী ভূমি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তারা।
তিনি আরও জানান, অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরে কয়েক দিন পর ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেন সাহাদাৎ। বাকি টাকা ফেরতসহ অন্য ৭ শতক জমির নাম দ্রুত খারিজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে টিপসই নেন তহশিলদার।
দীর্ঘদিন ঘুরেও জমি খারিজ ও বাকি টাকা না পেয়ে গত ১২ এপ্রিল তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে নোটিশের মাধ্যমে সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে ৬ জুন ডাকা হয় তাকে।
জাবেদের অভিযোগ, ওই দিন স্ত্রীসহ তিনি উপজেলার থানা মোড়ে পৌঁছালে তহশিলদার সাহাদৎ হোসেনের নেতৃত্বে মাইদুল ইসলাম, আনিছুর রহমান মুক্তা, নজরুল ইসলাম, বাবু মিয়াসহ ১০-১২ জন তাদের দুজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তারা উদ্ধার হন।
ওই দিনই তহশিলদার সাহাদৎ হোসেনসহ ১০-১২ জনকে আসামি করে রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তারা।
শুধু জাবেদ দম্পতি নয়, তহশিলদার সাহাদতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করেছেন স্থানীয় অনেকে।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলীর অভিযোগ, কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই, মাঠ জরিপ ছাড়াই যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের নামে দলিল করা ও ভোগদখলে থাকা পুকুরের ৩০ শতক জমি অবৈধভাবে স্থানীয় পাঁচ ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত দেন তহশিলদার সাহাদৎ হোসেন ও সার্ভেয়ার আব্দুল আউয়াল।
ভূমি অফিসের এই দুই কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে গত ৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের পুকুরপাড় জবরদখল করে পাঁচটি ছোট ঘর তোলেন বন্দোবস্ত নেয়া ব্যক্তিরা।
এ নিয়ে ৬ এপ্রিল সাহাদৎ, আব্দুল আউয়ালসহ সাতজনের বিরুদ্ধে রৌমারীর ইউএনও এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি এলাকার রফিকুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, মায়ের নামে থাকা ১৬ শতক জমির নাম খারিজ করে দেবেন বলে সাহাদৎ তার কাছ থেকে দুই ধাপে সাড়ে ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু নাম খারিজ করে দিচ্ছেন না। এক বছর ধরে ঘোরাচ্ছেন।
মায়ের চিকিৎসার খরচ ও অভাবের কারণে জমিটি বিক্রি করা ছাড়া তার কোনো উপায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, নাম খারিজ না থাকায় জমিটি বিক্রি করতে পারছেন না।
যাদুরচর পূর্বপাড়া এলাকার ভূমিহীন আবু বক্কর মিয়া জানান, তার ভোগদখলে থাকা পৈতৃক বসতভিটার ২৪ শতক জমি ‘অবৈধভাবে’ তিনজনের নামে বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন সাহাদৎ হোসেন।
একই এলাকার আবুল কালামের অভিযোগ, ৫৩ বছর ধরে তাদের ভোগদখল ও রেকর্ড করা ১৩ শতক জমি যাচাই-বাছাই ও মাঠ জরিপ ছাড়াই টাকার বিনিময়ে ২০১৭ সালে একই এলাকার আবুল ফজল গংদের নামে করে দেন সাহাদৎ।
বিষয়টি জানতে পেরে তিনি মিস কেস করলে আবুল ফজল গংদের নাম খারিজটি ২০২০ সালে বাতিল হয়। তবে একই বছর জমিটি আবার আবুল ফজল গংদের নামে করে দেন সাহাদৎ।
এ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি সাহাদৎসহ আটজনকে আসামি করে রৌমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আমজাদ হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘তহশিলদার সাহাদতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। হিসাব করলে পাহাড়সম অভিযোগ তার বিরুদ্ধে, কিন্তু তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন।
‘তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের লেলিয়ে দেয়া হয় অভিযোগকারীদের ক্ষতি করার জন্য। তহশিলদারের সিন্ডিকেটের কাছে সবাই অসহায়।’
তহশিলদার সাহাদৎ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিন বলেন, ‘আমার নামে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার সম্পর্কে যদি কিছু জানতে হয়, তবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসি ল্যান্ড সাহেবের কাছে জানতে পারবেন।’
এই বলে তিনি মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদের কাছে তহশিলদার সাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে স্বীকার করলেও প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি কেন লুকাতে চাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমি মাত্র এক মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। তহশিলদারের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে।
‘তদন্ত শেষে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আমি এ অফিসের সব অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার চেষ্টা করছি। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আর আমার নাম বাদ দিয়ে রিপোর্ট করার অনুরোধ করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ‘রৌমারী সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ পেয়েছি, সবগুলো নতুন যোগদানকারী এসি ল্যান্ডকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে বিএমইউ’র শহীদ ডা. মিলন হলের সম্মুখ করিডোরে ফটো এক্সিবিশন উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
এ এক্সিবিশনে ১৬ই জুলাই শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ও ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার বিজয়সহ জুলাই বিপ্লবের নানা ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ স্থিরচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
একই সাথে শহীদ ডা. মিলন হলে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও ফ্রি স্ক্রিনিং এবং রক্তদাতা নিবন্ধীকরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এছাড়া এদিন জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের অংশ হিসেবে সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয় এবং বাদ যোহর জুলাই শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিএমইউ’র কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এ সকল কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীবৃন্দ অংশ নেন।
গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ স্মরণে ফটো এক্সিবিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, জুলাই বিপ্লব বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক একটি অধিকারপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চিরকাল অনুপ্রেরণা যোগাবে। জুলাই বিপ্লবের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিসহ সব দিক দিয়ে দেশকে সামনে দিকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।
বিএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন দেশে পরাধীন ছিল। ক্ষমতার জন্য নিজ দেশের নিজ সন্তানকে হত্যা করা যায়, এটা ভাবা যায় না। ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’- এ কথা স্মরণে রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিবাদরা পুনরায় সুযোগ নিবে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীকে মনের চোখ দিয়ে দেখতে হবে। চিন্তা-চেতনায় জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রাত্যহিক কর্মে এর প্রতিফলন থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে দেশ ও জাতি পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধসহ আমরা যেন জুলাই শহীদের ভুলে না যাই। তাদের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে। জুলাই চেতনাকে অন্তরে ধারণ করতে হবে এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও আদর্শে বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে।
বিএমইউ’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন, ডেন্টাল অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্ত ও ডা. এমদাদুল হক ইকবাল। এ সময় বিএমইউ’র সম্মানিত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার শফিকুল হাসান রতন, সহকারী প্রক্টর ডা. রিফাত রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) নাছির উদ্দিন ভূঞাঁ, অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মোহাম্মদ বদরুল হুদা, মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের একান্ত সচিব ডা. মো. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. লুৎফর রহমান, উপ-রেজিস্ট্রার সাবিনা ইয়াসমিন, উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, উপ-রেজিস্ট্রার ইয়াহিয়া ও সেকশন অফিসার (জনসংযোগ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) শামীম আহম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণরূপে অমার্জনীয়’ উল্লেখ করে ওই হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বুধবার (১৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানায়।
বিবৃতিতে সরকার বলেছে, ‘এটা সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, আমাদের দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করা হবে।’
সরকার বলেছে, তরুণ নাগরিকরা তাদের বিপ্লবী আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উদযাপনের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। এই সমাবেশে বাধা দেওয়া তাদের মৌলিক অধিকারের ‘লজ্জাজনক লঙ্ঘন’।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), পুলিশ এবং গণমাধ্যমের সদস্যদের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং ব্যক্তিদের ওপর সহিংস আক্রমণ করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের কর্মীদের—যারা এই জঘন্য হামলা চালিয়েছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, ‘অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ বিচারের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে এই ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই।’
সরকার সেনাবাহিনী ও পুলিশের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের প্রশংসা করেছে। একইসঙ্গে, এই আক্রমণের মুখেও যারা সাহসিকতার সঙ্গে সমাবেশ চালিয়ে গেছেন—সেই ছাত্র ও জনগণের দৃঢ়তা ও সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বরং সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ সময়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সংগঠনটি এমন তথ্য জানিয়েছে।
এতে তারা বলেছে, ‘আপনারা ব্লকেড উইথড্র করে নিন। রাস্তার পাশে অবস্থান কর্মসূচি জারি রাখুন। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত প্রস্তুত থাকুন, সংঘবদ্ধ থাকুন। বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক আসছে।’
এরআগে গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদেরকে হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এনসিপির এই পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। বুধবার সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এসবের মধ্যে বেলা দেড়টার দিকে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে এসে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতারা পুলিশি নিরাপত্তায় টেকেহাট হয়ে মাদারীপুর যাওয়ার পথে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে ফের হামলা হয়।
এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ পরিস্থিতিতে জেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গোপালগঞ্জে আজ রাত ৮টা থেকে পরের দিন বিকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গোপালগঞ্জে এনসিপি’র পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে হামলাকারী দুস্কৃতিকারিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। এনসিপি’র পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুস্কৃতিকারিরা আবারো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। আজ গোপালগঞ্জে এনসিপি’র পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির ওপর বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনওসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার বর্বর ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে আওয়ামী দোসররা মরণকামড় দিয়ে ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব দুস্কৃতিকারিদের কঠোর হস্তে দমন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশে যাতে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে না পারে সেজন্য দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যতয় হলে দেশ আবারও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হুমকির মুখে পড়বে।’
আহত পুলিশ সদস্যদের আশু সুস্থতা কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শহীদ আবু সাঈদ হত্যার বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তার বাবা এই বিচার দেখে যেতে পারবেন।
বুধবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টায় জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদৎবার্ষিকীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে তোরণ ও মিউজিয়াম এবং শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন এসব উদ্বোধন করেন।
পরে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, দ্রুতই আবু সাঈদ হত্যার বিচার হবে — তার বাবা এ বিচার দেখে যেতে পারবেন। এ সরকারের আমলেই জুলাই হত্যার বিচার হবে।
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষ আর বৈষম্যের শিকার থাকবে না। ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এ বছরেই হবে। এছাড়া কুড়িগ্রামে ইপিজেড হবে। রংপুর অঞ্চলে হবে চীনের অত্যাধুনিক হাসপাতাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী। এছাড়াও বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিআইজি আমিনুল ইসলামসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলীর নেতৃত্বে প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করা হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে কালো ব্যাজ ধারণ করেন তারা। এরপর ক্যাম্পাসের দক্ষিণ গেট থেকে জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে শোক র্যালি বের হয়। র্যালিটি নগরীর মডার্ন মোড় হয়ে শহীদ আবু সাঈদ গেটে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে বিকেলে জুলাই শহীদ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বিকেল সাড়ে ৫টায় দোয়া এবং মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের এই দিনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
"পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি"—এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ২০২৫ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।
গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাহিনীর মাননীয় মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, এসজিপি, বিএএম, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, সকাল ১১:০০টায় একটি বৃক্ষের চারা রোপণের মাধ্যমে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এই কর্মসূচির আওতায় জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সমন্বিতভাবে ফলজ, বনজ ও ঔষধি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে, যা চলবে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।”
তিনি আরও বলেন,
“দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিদা মাহমুদ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি; কর্নেল মোঃ ফয়সাল আহাম্মদ ভূঁইয়া, পিএসসি; ডেপুটি কমান্ড্যান্ট ও কমান্ড্যান্ট (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নুরুল আবছারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গঠনের পথ আরও সুদৃঢ় হবে।
মন্তব্য