রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসবে ২০ জুন। আর সেদিনই দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে একটি বিশেষ অ্যাপ। আমের উৎপাদন আর বিপণনের মধ্যে সমন্বয় করতে কাজ করবে এই অ্যাপ। নাম ‘সদাই’।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক অনোয়ারুল হক নিউজবাংলাকে জানান, কৃষকের উৎপাদিত আম সঠিক দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে এই অ্যাপ সাহায্য করবে। এ জন্য রংপুরের লালবাগ এলাকায় আমের ‘আউটলেট’ করা হয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অ্যাপ সরাসরি মনিটরিং করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। আমাদের তত্ত্বাবধান থাকবে। কোনো আড়তদার, কমিশন এজেন্ট, উদ্যাক্তা কেউ এখান থেকে প্রতারণার শিকার হওয়ার সুযোগ নেই। এই অ্যাপ বিনা মূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত। চাইলেই একজন কৃষক, একজন শিক্ষিত যুবক, উদ্যোক্তা আমের অ্যাড দিয়ে খুব সহজেই অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে বিজনেস করতে চায় এমন ২৫ জন উদ্যাক্তাকে ১৯ জুন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যাতে তারা অ্যাপ অপারেট করতে পারেন।’
অ্যাপটি কীভবে কাজ করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমচাষি, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নিজেই আমের ছবি দিয়ে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন এই অ্যাপে। ক্রেতারা দরদাম করে কিনতে পারবেন। দাম করার এবং কোয়ালিটি সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকবে। আমের সাইজ কত বড় তা দেখার এবং জানার সুযোগ থাকবে। অর্ডার দিলেই পণ্য ঠিকঠাক পৌঁছে যাবে। এটি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নিজে তত্ত্বাবধান করবে। এ জন্য আমি মনে করি, এই অ্যাপস অনেক জনপ্রিয় হবে।’
কী আছে অ্যাপে
কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা দাবি করছেন, খুচরা ব্যবসায়ী, কৃষক, উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা ও ভোক্তাসাধারণের ব্যবহার উপযোগী এই অ্যাপ। ‘সদাই’ মোবাইল অ্যাপের দুটো অংশ থাকবে। একটি ভোক্তার ব্যবহারের জন্য এবং অন্যটি উদ্যোক্তাদের জন্য। দুটো অ্যাপই গুগল প্লে স্টোর থেকে কৃষি উদ্যোক্তা ও ভোক্তারা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
ভোক্তা ও উদ্যোক্তারা অ্যাপটি রেজিস্ট্রেশন করবেন জেলাভিত্তিক। তবে ভোক্তা যে জেলা থেকেই রেজিস্ট্রেশন করুন না কেন, তিনি চাইলেই অ্যাপের মাধ্যমে অন্য জেলায় প্রবেশ করে অনলাইনে বাজার করতে পারবেন।
ভোক্তা ও উদ্যোক্তার রেটিং সিস্টেম থাকবে। ফলে ভোক্তা ও উদ্যোক্তারা একে অপরকে রেটিং দিতে পারবেন। পণ্যের মান খারাপ হলে স্থানীয় জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ঐ উদ্যোক্তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সাধারণ আমচাষিরা
রংপুরের পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি আহসান উল্লাহ বলেন, কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিপণনের লোকজন এসে অ্যাপের কথা বলেছেন তাকে। তিনি তার ছেলেকে বলেছেন ওই ‘মেশিন’ (অ্যাপ) ডাউনলোড দিতে। তিনি মনে করেন, বাড়ি থেকেই তিনি তাদের চারটি বাগানের আম বিক্রি করতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে।
নজরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘হামারগুলার কি ওই মেশিন দিয়ে পোষাইবে? দৈনিক সাইকেলে করি লালবাগ, টার্মিনালোত বেচাই। সেটাই ভালো। অ্যাপস-ট্যাপস বুঝি না। যারা শিক্ষিত, তারা অ্যাপসে আম বেচাক।’
উদ্যোক্তাদের মত
হাঁড়িভাঙ্গা আমের মৌসুমি ব্যবসা করেন আবু সাঈদ রুপম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবছর এই আম অনলাইনে বিক্রি করি। ইতিমধ্যে ৪০ মণ আমের অর্ডার পেয়েছি। সরকারি এমন অ্যাপ হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। মার্কেট প্লেস অনেক বড় হবে।’
সামছুল আরেফিন আরেক ব্যবসায়ী মনে করেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তাদের মতো যারা নবীন উদ্যোক্তা, তারা ভালো করতে পারবেন এতে। তবে, ঠিকঠাক মনিটরিং করার দাবি আরেফিনের।
রাফসান অ্যাগ্রোর প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি অনলাইন-অফলাইনে আম বিক্রি করি। এই উদ্যোগ রংপুরের আমচাষি এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে বড় সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বিপণনের যে সমস্যা ছিল এবং আছে, সেটি অনেকাংশই লাঘব হবে। রংপুরের এই আম সারা দেশে ব্যাপকভাবে আমরা এই অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজে পাঠাতে পারব।’
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে সপ্তাহ দেড়েক আগে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আমচাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করি আমরা। সেখানে আম বাজারজাত নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেন তারা। তারা পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু দাবি করেছেন। আমরা সেটি ইতিমধ্যে দূর করার চেষ্টা করছি।’
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসী নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিনিয়তই ।
ভুক্তভোগীরা জানান, পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের তাহমিনা হাসপাতাল থেকে বাংলালিংক টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। অনেক বাসার নিচতলায়ও পানি প্রবেশ করছে। জলাশয় ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা এবং ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এ দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তারা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগে এই এলাকায় এমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন চারপাশের জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে, ড্রেন নেই, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে যায়।
গৃহিণী সালমা আক্তার জানান, রান্নাঘরে পানি ঢুকে গেলে চুলা জ্বালানোই যায় না। কখনো কখনো আমাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। খরচও বাড়ে, কষ্টও হয়।
স্কুল শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার জানান, পানি জমলে রাস্তায় হাঁটা যায় না। স্কুলে যেতে জামা-জুতো ভিজে যায়। অনেকে তাই স্কুলেই যায় না।
ভালুকা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন জানান, এই সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে কিছু জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আগে পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। এডিপির বরাদ্দ এলে আগামী অর্থবছরে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করা হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর ১৩১টি পূজামণ্ডপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপহার বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন।
অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে উপহার গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি। শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, “তারেক রহমান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। কুমিল্লার ১৩১টি পূজামণ্ডপে আজকের এই উপহার প্রদান তারেক রহমানের আন্তরিক ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি বিশ্বাস করে—একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে পূজামণ্ডপ প্রতিনিধিরা বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তোলে।
নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনোয়ারা উপজেলার উপকূলবর্তী এলাকা পারকির চরে আটক হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দালাল চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা পর্যটন ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় রোহিঙ্গা আটক হলেও, পালানোর এই প্রবণতা কমছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি সক্রিয় দালাল চক্র দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর থেকে পালিয়ে পারকির চর হয়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সাধারণত ছোট ট্রলার বা নৌকায় করে হাতিয়া চ্যানেল অতিক্রম করে রাতের আঁধারে পারকির চর ও তার আশপাশের এলাকায় ওঠে।
বিশেষ করে বর্তমানে পারকির চর টানেল সার্ভিস এরিয়ার আশপাশের এলাকা রোহিঙ্গা পাচারের একটি ‘মূল রুটথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর পারকির চর এলাকা থেকে ২৫ জন, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি ২০ জন, ১৬ সেপ্টেম্বর ৩১ জন এবং সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর আরও ৮ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুরাও রয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পাচার চক্রের তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। টানেল সার্ভিস এরিয়ার আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ট্রলার থেকে নামার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা দালাল চক্রের সদস্যদের অনেকবার ধরার চেষ্টা করেছি,কিন্তু তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ধরা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, দালাল চক্রের একজনকে চিহ্নিত করে তার নাম ও ফোন নম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন বিরূপ মন্তব্য ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমাদের ব্যবসা এবং পর্যটন খাতের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ কাইয়ুম বলেন, পারকির চর ও আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের আটক করেছে স্থানীয়রা। পরে আমরা তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই পাচার বন্ধ করতে শুধু প্রশাসনের নয়, স্থানীয়দেরও সতর্ক থাকতে হবে।
আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনোয়ারা উপকূল এলাকা থেকে আটক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পাচার চক্রের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং নিয়মিত টহলও চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় এলাকাবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মাদারীপুর সদরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের জৈয়ার গ্রামের আবুল কালাম ঢালীর পুত্র জীবন ঢালী (২২)। স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যাবার জন্য দালালদের মাধ্যমে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়িয়ে দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন লিবিয়ায়। সেখান থেকে ইতালিতে যাবেন, ফিরিয়ে আনবেন পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা- এমন আশা বুকে বেঁধে প্রায় ৬ মাস আগে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন মাদারীপুরের সেই যুবক। দালালের প্রলোভনে পড়ে ভূমধ্যসাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশের স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় অনেকের সাথে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বসেছিলেন তিনি। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তার সহায় হয়নি। এরইমধ্যে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতেই নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তার জীবন প্রদীপ।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর লিবিয়ায় মাফিয়াদের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারায় জীবন ঢালী। এমন একটি খবর ১৯ সেপ্টেম্বর তার নিজ বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড জৈয়ার গ্রামে পৌঁছালে শুরু হয় শোকের মাতম।
বিষয়টি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেসরে জমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে ছুটে যান গণমাধ্যমকর্মীরা।
শনিবার নিহতের পিতা আবুল কালাম ঢালী জানান, আমার ছেলেকে বিগত ছয় মাস আগে মানবপাচারকারী চক্র ভুলিয়ে-ভালিয়ে ইতালি যাবার প্রলোভনে মাথা নষ্ট করে ফেলে, আমরা তাকে প্রথমে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালি পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করি। কিন্তু সে তাতে রাজি না হয়ে আমাদের চাপাচাপি করতে থাকে। একপর্যায়ে আমরা রাজি হই, যেটা ছিলো আমাদের চরম ভুল। আজ আমরা সেই ভুলের খেসারত পুত্রের জীবনাবসানের মাধ্যেম পেলাম। আর যেন কোনো বাবা-মা তাদের ছেলেকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দেয়। আমরা এ হত্যার জন্য দায়ী মানব পাচারকারীদের কঠিন শাস্তি চাই।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, জীবন ঢালীর মৃত্যুর বিষয়টি লিবিয়ায় থাকা তার সফর সঙ্গীরা ফোন করে পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন, গত ৮ সেপ্টেম্ব সাগরপথে গেম দিতে গিয়ে ঐ দিনই সে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হয়েছেন- যা তারা ধীরে-ধীরে জানতে পেরেছেন এবং গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে জীবন ঢালির নহতের বিষয়টি দেশে খবর আসে। প্রায় ৬ মাস আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘাটমাঝি ইউনিয়নের ঝিকরহাটি গ্রামের মানবপাচারকারী দালাল জনৈক রাসেল নামের একজন ও তাদের এজেন্ট হয়ে এলাকায় কাজ করা আরো কিছু দালালের প্রলোভনে পড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাবার উদ্দেশ্য লিবিয়া যান জীবন ঢালী। দালাল রাসেল দেশে থাকেন না, তিনি বিদেশে বসে তার দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমেই সাগর পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা অন্যান্য বোটে লিবিয়া, তিউনিসিয়া রুটের ভুমধ্যসাগর পথ দিয়ে ইতালি-স্পেন সহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। লিবিয়ায় নেবার পরে সেখানে কয়েকমাস গেম ঘরে রাখা হয় ইতালি-স্পেন সহ ঐসব দেশে গমনেচ্ছু যুবক-তরুন ও বিভিন্ন বয়সের লোকদের। অনেক সময় গেম ঘরে রেখে বিভিন্ন কৌঁশলে তাদের মারধরও করা হয় কন্ট্রাক্ট করা টাকার চাইতে আরো বেশী টাকা আদায় করার জন্য। যে সব ভিডিও করেও বাংলাদেশে থাকা অভিভাবকদের দেখিয়েও অনেক সময় দূর্বল করে আরো অধিক টাকা আদায় করা হয়।
মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হওয়া জীবন ঢালী সম্পর্কে এলাকাবাসী জানায়, সে অত্যন্ত একজন সহজ-সরল ও মিশুক ধরণের ভালো ছেলে ছিল। দালালদের খপ্পরে পড়ে এভাবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিষয়টি জানার পর থেকে তার পরিবারের আপনজনের পাশাপাশি আমরাও অত্যন্ত মর্মাহত, আমরা দায়ী দালালদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এছাড়াও এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে নিহতের পরিবারকে সহায়তা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রামবাসি
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আদিল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন। মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দালালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সেতুর পাশে দীর্ঘদিনের পানি নিষ্কাশনের পথ মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ফসলহানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসী। শনিবার হরগজ বাজার চৌরাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। এর আগে বাজার প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কৃষকরা।
মানববন্ধনে কাজী শহিদুল্লাহ, কৃষক সাইদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বক্তব্য দেন। তারা অভিযোগ করেন, গত বছর ৫ আগস্ট রাতের আঁধারে বালুর চর এলাকায় সেতুর উত্তর পাশে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথটি কয়েকজন প্রভাবশালী মাটি ফেলে বন্ধ করে দেন। ফলে সড়কের দুই পাশের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে পানি আটকে গিয়ে ধান, ভুট্টা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
মানববন্ধনে কাজী শহিদুল্লাহ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আনোয়ার, ফরিদ ও আলতাফ মাটি ভরাটে সহযোগিতা করেছেন। এর ফলে সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার একর জমিতে পানি আটকে থেকে ধান ও সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগে এ পানি খাল হয়ে ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ত, কিন্তু এখন জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইদুর রহমান জানান, তার জমির পানি বের হতে না পারায় ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মাঠে পানি জমে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সামনে শীতকালে রবিশস্যও চাষ করা সম্ভব হবে না, যদি দ্রুত এর সমাধান না হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই বালুর চকে শত শত কৃষকের ভুট্টা, ধান ও বিভিন্ন সবজি নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে বেলাল হোসেন বলেন, সেতুর পাশে হানিফ আলী, ঝর্ণা বেগমসহ কয়েকজন জমি কিনেছেন। কিনে নেওয়া জমির চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে নিষ্কাশন পথ ভরাট করা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে ফসল নষ্ট হচ্ছে।
মানববন্ধনে কৃষকরা দ্রুত নিষ্কাশন পথ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জমির মালিক হানিফ আলী ও ঝর্ণা বেগম দাবি করেন, তারা নিজেদের কেনা জমিতেই মাটি ভরাট করেছেন। অপরদিকে মাটি ভরাটে সহায়তাকারী ফরিদ বলেন, জমির মালিক খুব গরিব, নিজেদের জমি ভরাট করেছে। কিন্তু একটি পক্ষ চাঁদা না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
স্ত্রী সন্তানের অবহেলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ফায়ার সার্ভিস কর্মীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী স্ত্রী। এ সময় তার দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন। শনিবার দুপুর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও শফিউল্লার মেয়ে রোজিনা আক্তার পশ্চিমপাড়া বায়তুল হুদা তালিমূল নূরানী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০১৩ সালে পার্শ্ববর্তী বজরা ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আব্দুল খালেক এর পুত্র আব্দুল্লাহ বিজয়ের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। তাদের মেহেদী হাসান (১১) ও রেজওয়ান হাসান (৫) নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্বামী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিসে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছে। ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করার কথা বলে তার কাছ থেকে ৪ লাক টাকা নেয়। ২০২১ সালে সে গোপনে অন্যত্রে আরেকটি বিবাহ করে। বিয়ে করার পর থেকে ওই দুই ছেলে এবং তার স্ত্রীর কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। উল্টো মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মাঝে মধ্যে এখানে এসে শারীরিক নির্যাতনও করেছে। এ নিয়ে ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কূলকিনারা পাননি। ফায়ার সার্ভিস কর্মী চাকরির পূর্বে বিয়ে করার বিষয়টি গোপন করে।
ভুক্তভোগী রোজিনা আক্তার আরও জানান, তার স্বামীর এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় মাতব্বর, সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কয়েকবার এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার স্বামীর বিচার দাবি করেন।
নেত্রকোনার ধলাই নদীর প্রাণ ফেরাতে পৌরসভার উদ্যোগে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরু করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা ধলাই নদী আজ আর আগের মতো নেই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নদীটি কচুরিপানায় ভরে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক গতি ও সৌন্দর্য। তবে এবার নদীটিকে তার হারানো প্রাণ ফিরিয়ে দিতে শুরু হয়েছে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান। শনিবার সকাল ১০টায় নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় এই মহৎ উদ্যোগের সূচনা হয়। নদীটির পুনর্জাগরণে এই সম্মিলিত প্রয়াস শুধু পরিবেশ নয়, বরং জনজীবন, কৃষিকাজ ও স্থানীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধান অতিথি হিসেবে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানের উদ্বোধন করেন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু জেলা বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিন খান চঞ্চল। কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্যে নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, ধলাই নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে এবং দূষণমুক্ত করতেই পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। পৌর নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়ন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সবুজ প্রকৃতি ও পরিষ্কার নদী রক্ষায় পৌরসভা সবসময় জনগণের পাশে আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মাঝে নতুন আশার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে জানিয়েছেন, ধলাই নদী তার প্রাকৃতিক রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে, যা কৃষিকাজ, নৌযান চলাচল এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদী রক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি, জনগণের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
মন্তব্য