মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই বেশ কিছু স্থানে নামাজ আদায় করে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন মুসল্লিরা। তবে ইমাম নিয়োগ না হওয়া, অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজসহ নানা কারণে বৃহস্পতিবার বেশ কিছু স্থানে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেননি।
দৃষ্টিনন্দন অনেক মসজিদ সাধারণ মানুষের মধ্যে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
এ ধরনের উদ্যোগের জন্য নিউজবাংলার মাধ্যমে সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেক মুসল্লি। তারা বলছেন, এসব মসজিদের মাধ্যমে সঠিকভাবে ইসলাম শিক্ষা যেমন পাবে, তেমনি ইসলাম প্রসার লাভ করবে।
আনন্দিত মুসল্লিরা
ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও গফরগাঁওয়ে দুটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন সাধারণ মুসল্লিরা। সরকারপ্রধানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তারাকান্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ চত্বরে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকসহ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
তারাকান্দা উপজেলার ৩ নম্বর কাকনী ইউনিয়নে নির্মিত মডেল মসজিদটিতে শুক্রবার জুমা থেকে নামাজ পড়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তবে গফরগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার জোহর থেকেই নামাজ পড়া শুরু করেছেন মুসল্লিরা।
গফরগাঁও উপজেলার ৪ নম্বর সালটিয়া ইউনিয়নের ভাগুয়া মৌজায় নির্মাণ করা মডেল মসজিদটিতে উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সাংসদ ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারপ্রধান উদ্বোধনের পর খুশি আর আনন্দ নিয়ে মসজিদে গিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
রেজাউল করিম নামে এক যুবক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়নে এমন সুন্দর মসজিদ হবে, সেটা কল্পনাও করিনি। আমি গাজীপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করায় বছরে চার থেকে পাঁচবার ছুটিতে বাড়িতে আসি।
‘তবে কয়েক দিন আগে জানতে পেরেছি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৫০টি নির্মাণ হওয়া মডেল মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তাই প্রথম দিনে মসজিদে নামাজ পড়তে রাতেই বাসায় এসেছি।’
একই ইউনিয়নের ষাটোধ্র্ব আব্দুল মাজেদ ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘যত কষ্টই হোক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বার চেষ্টা করি। অনেক দিন ধইরাই ভাবতাছি কহন এই মসজিদ উদ্বোধন অইবো? দুরাফিত থাইক্যা মসজিদটা দেখলে অনেক ভালা লাগে। এহন থাইক্যা আরামে নামাজ পড়বার আর ইমামের কাছ থাইক্যা ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করবাম।’
শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘আমি তারাকান্দা উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। শুধু এই মডেল মসজিদটি দেখতে অন্য ইউনিয়ন থেকে এখানে এসেছি। সত্যিকার অর্থেই এই কৃতিত্বের অবদান বর্তমান সরকারের।’
৩ নম্বর কাকনী ইউনিয়নের বাসিন্দা হজরত আলী বলেন, ‘সব জায়গাতেই মসজিদ আছে। তবে এমন সুন্দর মসজিদ সরকারিভাবে কখনও নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে ইসলামিক চর্চা করতেও অনেকে মসজিদমুখী হবে।’
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ শুরু হবে এই মডেল মসজিদে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম নামাজ পড়াবেন। পরবর্তী সময়ে ইমাম নিয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এই মসজিদ পেয়ে মুসল্লিদের যে আনন্দ তা সামনাসামনি না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দূরদূরান্ত থেকে মসজিদ দেখতে লোকজন এসেছেb। করোনার সময়ের জন্য সবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেছি।’
গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তবে সব আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মডেল মসজিদ নির্মাণ হওয়ায় সবার চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। আমরা মুসলমানরা এমন মসজিদ পেয়ে সৌভাগ্যবান।’
মনে হয় বিদেশি মসজিদ
বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠিতে এবং ভোলায় দুটি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন নতুন এই মসজিদ দেখতে। অসাধারণ কারুকাজ আর ডিজাইনে তৈরি মসজিদ দেখতে দুপুরের পর থেকেই ভিড় জমে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঝালকাঠির রাজাপুর ও ভোলা সদর উপজেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজাপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় মসজিদের হলরুমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু, রাজাপুর সদর ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মুসল্লিরা।
মসজিদ দেখতে এসে বাগড়ি বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কাঞ্চন সিকদার বলেন, ‘পার্কের মতো মসজিদ বানাইছে সরকার। অনেক সুন্দর পরিবেশ।’
মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মোল্লা বলেন, ‘লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা, দেয়ালে নকশা- সব মিলিয়ে অসাধারণ। মসজিদের ভেতরে ঢুকলে মনে হয় বিদেশের কোনো মসজিদে আছি।’
কারি মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘মুসল্লিরা যেখানে প্রতি ওয়াক্তে নামাজের জন্য মসজিদে আসেন, ঠিক সেভাবে কিশোর-যুবকরা মসজিদ কম্পাউন্ডে আসবে। মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে এসেও নামাজি হবে অনেকে। শেখ হাসিনা সরকারকে মন থেকে দোয়া দিলাম এমন একটা মসজিদ বানানোর জন্য।’
ঝালকাঠি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোক্তার হোসেন বলেন, সরকার সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ভোলার ব্যাংকের হাট মডেল মসজিদ উদ্বোধনের পর এলাকার মানুষ মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এরই মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে ও দেখার জন্য মসজিদে ছুটে আসছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ভোলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু নামাজ আদায় নয়, আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই মডেল মসজিদে। এই মডেল মসজিদে নারী ও পুরুষের আলাদা অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের টয়লেটসহ নামাজের আলাদা ব্যবস্থা, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামিক গবেষণা, পবিত্র কোরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা, মরদেহ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধনসহ প্রশিক্ষণ, ইমামের প্রশিক্ষণসহ ১৩ ধরনের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
ভোলা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা বেলায়েত হোসেন বলেন, ভোলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হবে। এখান থেকে সঠিকভাবে ইসলাম শিক্ষা যেমন পাবে, তেমনি ইসলাম প্রসার লাভ করবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়বে। এমনিতেই মসজিদগুলো অবহেলিত। যখন সরকার এই সেন্টার থেকে সবকিছু পরিচালনা করবে, তখন সবাই একটি সঠিক বার্তার ওপরে থাকবে।
মসজিদ দেখতে আসা মসলেউদ্দিন ও কামাল জানান, মক্কা-মদিনায় অনেকেই অর্থের অভাবে যেতে পারেন না। তারা এই মসজিদে এসে অনেক আনন্দিত। কারণ এখানকার সৌন্দর্য দেখে স্থানীয়রা খুশি। এখন সবাই এসে দল বেঁধে নামাজ আদায় করেন। এখানে মুসিল্লারা এসে আরও বেশি ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এখানে বড় বড় আলেম এলে তাদের থেকেও এই অঞ্চলের মানুষ অনেক জ্ঞান অর্জন করে ইসলামকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেবে।
উদ্বোধন হলেও শেষ হয়নি কাজ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া ৪০ শতক জায়গার ওপর তিনতলাবিশিষ্ট মসজিদের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। পুরো কাজ শেষ করতে আরও সপ্তাহ তিনেক লাগবে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, গণপূর্ত থেকে এখনও মসজিদটি হস্তান্তর না করায় ইমাম নিয়োগসহ মসজিদের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
জেলা গণপূর্ত অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইকবাল শিকদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে তাড়াহুড়ো করে কিছু কাজ করা হয়েছে। এসব কাজে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা এখন পরীক্ষা করা হবে।
‘ত্রুটি থাকলে সারিয়ে নেয়া হবে। এসব কাজে আরও সপ্তাহ তিনেক লাগতে পারে। মাসখানেকের মধ্যে আমরা মসজিদটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে পারব বলে আশা রাখি।’
তিনি বলেন, এই মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে পুরো কাজ শেষে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা বোঝা যাবে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হক বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী মসজিদটি উদ্বোধন করলেও গণপূর্ত থেকে এটি এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে এখনও ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে আজকে বিকেল থেকেই আমরা এখানে নামাজ পড়ব। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যেই একজন ইমামতি করবেন।’
এর মধ্য দিয়ে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাস, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় সৌদি সরকার এতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে তারা সরে যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, আরব বিশ্বের মসজিদ কাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের আদলে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসংবলিত সুবিশাল এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ভবনে নারী ও পুরুষের আলাদা অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। থাকবে লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, কোরআন হিফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন।
সিলেট বিভাগে মোট ৪৩টি মসজিদ নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ভোলা প্রতিনিধি আদিল তপু, ঝালকাঠি প্রতিনিধি হাসনাইন তালুকদার দিবস
আরও পড়ুন:সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বাতাসের নিম্ন মানে প্রথম সারিতে রয়েছে ঢাকা।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউ এয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ১৮০ স্কোর নিয়ে ১০০টি শহরের মধ্যে বায়ুর নিম্ন মানে দ্বিতীয় ছিল ঢাকা।
একই সময়ে প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই ও ভারতের দিল্লি।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ দিনের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ৩ গুণ বেশি।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আজ সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৮০। এর মানে হলো ওই সময়টাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিতে হয় রাজধানীবাসীকে।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নদীতে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চর বাউশিয়া বড়কান্দি গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারানো শাহেদ (১৪) ওই গ্রামের মোশারফ মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে গোমতী নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায় শাহেদ। ওই সময় হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে মারা যায় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের হাসপাতালে শাহেদকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি, নিহতের লাশ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’
নিহতের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে মোটরসাইকেলে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক প্রবাসী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা শহর মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আনোয়ার হোসেন অনিক (২২) কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ জগদানন্দ গ্রামের মাজারুল হক মন্টু মিয়ার ছেলে।
সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, আবুধাবি প্রবাসী অনিক দুই মাস আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি থেকে জেলা শহর মাইজদীতে আসেন তিনি। ওই সময় মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে রাস্তার উল্টোপথে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনির শিকার দুজনের মধ্যে একজন নিহত হন সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামের চান মিয়ার বাড়িতে। অন্যজন একই ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে প্রাণ হারান।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত দুজনের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নামিলা গ্রামে চান মিয়ার বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি গরু চুরির উদ্দেশ্যে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে চান মিয়া ডাকাডাকি করলে স্থানীয়রা জড়ো হন। ওই সময় একজনকে ধরে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, স্থানীয়দের ধাওয়া খাওয়া অপরজন পার্শ্ববর্তী বড়িবাড়ি গ্রামে ধানক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। ওই সময় উত্তেজিত লোকজন ক্ষেতের আড়াল থেকে খুঁজে বের করে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ জানান, গরু চুরি রোধে এলাকায় গ্রামবাসী পাহারা বসিয়েছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গাড়িতে করে এক কৃষকের গরু চুরি করতে যান কয়েকজন। বিষয়টি টের পেয়ে একজোট হয়ে দুজনকে পিটুনি দেয় গ্রামবাসী। এতে নামিলা গ্রামে একজন ও বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে আরেকজন নিহত হন।
চেয়ারম্যান আরও জানান, গ্রামে গরু চুরি করতে আসা আরও চার থেকে পাঁচজন আছেন, যাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কাপাসিয়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই আরিফ হোসেন জানান, গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হন, যাদের মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বাসস
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। এটি কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সার্বিক সমস্যা।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য দেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট ৮ হাজার ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ৪৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিসরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম কক্ষ রাখা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিষেবা পান সেজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বুথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের সময় বন্যার বিষয়টি বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (তৃতীয় পর্যায়) নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বাকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলোর নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেন, যাতে করে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে না চাইলেও মাঝে মাঝে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিলম্ব হয়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল- অতিরিক্ত ২৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত); ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি সীমান্ত জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন; ৩৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি মৎস্য খামারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়); ২৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের উন্নয়ন; অতিরিক্ত ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো, উন্নত দক্ষতা ও তথ্যের প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার সামর্থ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত)।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য