মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই বেশ কিছু স্থানে নামাজ আদায় করে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন মুসল্লিরা। তবে ইমাম নিয়োগ না হওয়া, অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজসহ নানা কারণে বৃহস্পতিবার বেশ কিছু স্থানে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেননি।
দৃষ্টিনন্দন অনেক মসজিদ সাধারণ মানুষের মধ্যে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
এ ধরনের উদ্যোগের জন্য নিউজবাংলার মাধ্যমে সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেক মুসল্লি। তারা বলছেন, এসব মসজিদের মাধ্যমে সঠিকভাবে ইসলাম শিক্ষা যেমন পাবে, তেমনি ইসলাম প্রসার লাভ করবে।
আনন্দিত মুসল্লিরা
ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও গফরগাঁওয়ে দুটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন সাধারণ মুসল্লিরা। সরকারপ্রধানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তারাকান্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ চত্বরে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকসহ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
তারাকান্দা উপজেলার ৩ নম্বর কাকনী ইউনিয়নে নির্মিত মডেল মসজিদটিতে শুক্রবার জুমা থেকে নামাজ পড়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তবে গফরগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার জোহর থেকেই নামাজ পড়া শুরু করেছেন মুসল্লিরা।
গফরগাঁও উপজেলার ৪ নম্বর সালটিয়া ইউনিয়নের ভাগুয়া মৌজায় নির্মাণ করা মডেল মসজিদটিতে উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সাংসদ ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারপ্রধান উদ্বোধনের পর খুশি আর আনন্দ নিয়ে মসজিদে গিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
রেজাউল করিম নামে এক যুবক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়নে এমন সুন্দর মসজিদ হবে, সেটা কল্পনাও করিনি। আমি গাজীপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করায় বছরে চার থেকে পাঁচবার ছুটিতে বাড়িতে আসি।
‘তবে কয়েক দিন আগে জানতে পেরেছি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৫০টি নির্মাণ হওয়া মডেল মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তাই প্রথম দিনে মসজিদে নামাজ পড়তে রাতেই বাসায় এসেছি।’
একই ইউনিয়নের ষাটোধ্র্ব আব্দুল মাজেদ ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘যত কষ্টই হোক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বার চেষ্টা করি। অনেক দিন ধইরাই ভাবতাছি কহন এই মসজিদ উদ্বোধন অইবো? দুরাফিত থাইক্যা মসজিদটা দেখলে অনেক ভালা লাগে। এহন থাইক্যা আরামে নামাজ পড়বার আর ইমামের কাছ থাইক্যা ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করবাম।’
শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘আমি তারাকান্দা উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। শুধু এই মডেল মসজিদটি দেখতে অন্য ইউনিয়ন থেকে এখানে এসেছি। সত্যিকার অর্থেই এই কৃতিত্বের অবদান বর্তমান সরকারের।’
৩ নম্বর কাকনী ইউনিয়নের বাসিন্দা হজরত আলী বলেন, ‘সব জায়গাতেই মসজিদ আছে। তবে এমন সুন্দর মসজিদ সরকারিভাবে কখনও নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে ইসলামিক চর্চা করতেও অনেকে মসজিদমুখী হবে।’
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ শুরু হবে এই মডেল মসজিদে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম নামাজ পড়াবেন। পরবর্তী সময়ে ইমাম নিয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এই মসজিদ পেয়ে মুসল্লিদের যে আনন্দ তা সামনাসামনি না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দূরদূরান্ত থেকে মসজিদ দেখতে লোকজন এসেছেb। করোনার সময়ের জন্য সবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেছি।’
গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তবে সব আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মডেল মসজিদ নির্মাণ হওয়ায় সবার চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। আমরা মুসলমানরা এমন মসজিদ পেয়ে সৌভাগ্যবান।’
মনে হয় বিদেশি মসজিদ
বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠিতে এবং ভোলায় দুটি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন নতুন এই মসজিদ দেখতে। অসাধারণ কারুকাজ আর ডিজাইনে তৈরি মসজিদ দেখতে দুপুরের পর থেকেই ভিড় জমে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঝালকাঠির রাজাপুর ও ভোলা সদর উপজেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজাপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় মসজিদের হলরুমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু, রাজাপুর সদর ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মুসল্লিরা।
মসজিদ দেখতে এসে বাগড়ি বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কাঞ্চন সিকদার বলেন, ‘পার্কের মতো মসজিদ বানাইছে সরকার। অনেক সুন্দর পরিবেশ।’
মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মোল্লা বলেন, ‘লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা, দেয়ালে নকশা- সব মিলিয়ে অসাধারণ। মসজিদের ভেতরে ঢুকলে মনে হয় বিদেশের কোনো মসজিদে আছি।’
কারি মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘মুসল্লিরা যেখানে প্রতি ওয়াক্তে নামাজের জন্য মসজিদে আসেন, ঠিক সেভাবে কিশোর-যুবকরা মসজিদ কম্পাউন্ডে আসবে। মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে এসেও নামাজি হবে অনেকে। শেখ হাসিনা সরকারকে মন থেকে দোয়া দিলাম এমন একটা মসজিদ বানানোর জন্য।’
ঝালকাঠি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোক্তার হোসেন বলেন, সরকার সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ভোলার ব্যাংকের হাট মডেল মসজিদ উদ্বোধনের পর এলাকার মানুষ মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এরই মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে ও দেখার জন্য মসজিদে ছুটে আসছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ভোলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু নামাজ আদায় নয়, আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই মডেল মসজিদে। এই মডেল মসজিদে নারী ও পুরুষের আলাদা অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের টয়লেটসহ নামাজের আলাদা ব্যবস্থা, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামিক গবেষণা, পবিত্র কোরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা, মরদেহ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধনসহ প্রশিক্ষণ, ইমামের প্রশিক্ষণসহ ১৩ ধরনের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
ভোলা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা বেলায়েত হোসেন বলেন, ভোলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হবে। এখান থেকে সঠিকভাবে ইসলাম শিক্ষা যেমন পাবে, তেমনি ইসলাম প্রসার লাভ করবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়বে। এমনিতেই মসজিদগুলো অবহেলিত। যখন সরকার এই সেন্টার থেকে সবকিছু পরিচালনা করবে, তখন সবাই একটি সঠিক বার্তার ওপরে থাকবে।
মসজিদ দেখতে আসা মসলেউদ্দিন ও কামাল জানান, মক্কা-মদিনায় অনেকেই অর্থের অভাবে যেতে পারেন না। তারা এই মসজিদে এসে অনেক আনন্দিত। কারণ এখানকার সৌন্দর্য দেখে স্থানীয়রা খুশি। এখন সবাই এসে দল বেঁধে নামাজ আদায় করেন। এখানে মুসিল্লারা এসে আরও বেশি ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এখানে বড় বড় আলেম এলে তাদের থেকেও এই অঞ্চলের মানুষ অনেক জ্ঞান অর্জন করে ইসলামকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেবে।
উদ্বোধন হলেও শেষ হয়নি কাজ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া ৪০ শতক জায়গার ওপর তিনতলাবিশিষ্ট মসজিদের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। পুরো কাজ শেষ করতে আরও সপ্তাহ তিনেক লাগবে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, গণপূর্ত থেকে এখনও মসজিদটি হস্তান্তর না করায় ইমাম নিয়োগসহ মসজিদের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
জেলা গণপূর্ত অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইকবাল শিকদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে তাড়াহুড়ো করে কিছু কাজ করা হয়েছে। এসব কাজে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা এখন পরীক্ষা করা হবে।
‘ত্রুটি থাকলে সারিয়ে নেয়া হবে। এসব কাজে আরও সপ্তাহ তিনেক লাগতে পারে। মাসখানেকের মধ্যে আমরা মসজিদটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে পারব বলে আশা রাখি।’
তিনি বলেন, এই মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে পুরো কাজ শেষে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা বোঝা যাবে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হক বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী মসজিদটি উদ্বোধন করলেও গণপূর্ত থেকে এটি এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে এখনও ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে আজকে বিকেল থেকেই আমরা এখানে নামাজ পড়ব। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যেই একজন ইমামতি করবেন।’
এর মধ্য দিয়ে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাস, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় সৌদি সরকার এতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে তারা সরে যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, আরব বিশ্বের মসজিদ কাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের আদলে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসংবলিত সুবিশাল এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ভবনে নারী ও পুরুষের আলাদা অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। থাকবে লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, কোরআন হিফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন।
সিলেট বিভাগে মোট ৪৩টি মসজিদ নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ভোলা প্রতিনিধি আদিল তপু, ঝালকাঠি প্রতিনিধি হাসনাইন তালুকদার দিবস
আরও পড়ুন:ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি পরিলক্ষিত হয়েছে যে, কিছু কিছু গণমাধ্যমে ভূয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। উক্ত সংবাদগুলোর প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশ এবং ভাতাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের এম.আই.এস ভুক্ত যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
জুলাই শহীদ এবং জুলাই যোদ্ধার তালিকায় যে সকল ভূয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তাদের নাম যাচাই বাছাই করে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ইতোমধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
এছাড়াও গণমাধ্যমে যে সকল ভুয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করছে।
কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী এবং ধর্ম, মত বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে কাউকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। পুরো জাতি একটি পরিবার। পরিবারের ভেতরে মতভেদ থাকতে পারে, ব্যবহারের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু পরিবার একটি অটুট জিনিস—এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। আমরা যেন জাতি হিসেবে এই অটুট পরিবার হয়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
আজ রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যত ধর্মীয় পার্থক্য থাকুক, মতের পার্থক্য থাকুক, রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই বৈষম্য করার। রাষ্ট্র দায়িত্ববদ্ধ সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়ার জন্য। সে যেই ধর্মেই বিশ্বাস করুক, যে মতবাদেই বিশ্বাস করুক, ধনী হোক কিংবা গরিব—রাষ্ট্রের কাছে সে একজন নাগরিক। নাগরিকের সকল অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র আমাদের তালিকা করে দিয়েছে আমার প্রাপ্য কী। কোনো সরকারের অধিকার নেই কাউকে বঞ্চিত করার, সামান্যতম পরিমাণেও নয়। আমরা নাগরিক—আমাদের প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা যাবে না। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে।’
নাগরিক অধিকার প্রসঙ্গে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যত কথাই বলুন, তার মধ্যে বারে বারে বলুন—আমি এ দেশের নাগরিক, আমার সংবিধান প্রদত্ত সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তখন দেখবেন সবাই আপনাদের সঙ্গী হবে। সারা দেশের মানুষ একসঙ্গে থাকবে, কারণ সবার সমস্যাই একই—নিজের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
নাগরিক অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বারবার লাঞ্ছিত হই, অপমানিত হই, নানা বৈষম্যের শিকার হই। কেন? কারণ নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আমরা হতাশ হয়ে গেছি। এখন আর হতাশ হওয়া চলবে না। নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো—সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা।’
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই না নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে ধর্ম পালন করতে। আমরা চাই নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে। এ অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ভূমিকা পালন করছে, আমরা এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের ধর্মীয় উৎসব পালনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপের প্রয়োজন হবে না।’
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাও ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমাকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হবে। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। আমি বললাম, যাবই। এই আনন্দ থেকে আমি নিজেকে দূরে রাখতে চাইনি। যদিও শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকার প্রধান হিসেবে আমাকে থাকতে হবে, তাই আমি আগেভাগে এসেছি আপনাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখনও বলেছিলাম—আমরা সবাই একটি পরিবার। পারিবারিক মতভেদ থাকবেই, কিন্তু পরিবার ভাঙবে না।’
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দে প্রমূখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ঘাট সংকটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
সিরিয়ালে অল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী যানবাহন থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। ফলে ট্রাকচালক ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের সারি সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক'শ যানবাহন ফেরির জন্য লম্বা সিরিয়ালে আটকে রয়েছে। সিরিয়ালে আটকে থাকা যানবাহন গুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর।
এসব পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কের আটকে থাকতে হচ্ছে। ফলে তাদের গোসল, খাওয়া-দাওয়া, টয়লেটসহ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,, দৌলতদয়িায় ১, ২, ৫ ও ৬ নং ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে অকেঁজো হয়ে পড়ে আছে। ৩, ৪ ও ৭ নং ফেরি ঘাট জরাজীর্ণ অবস্থায় চলমান ছিল। এরমধ্যেই পদ্মায় তীব্র স্রেতের কারনে গতমাসের ২৩ আগস্ট থেকে ৭ নম্বর ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট সচল থাকলেও ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের প্লেট ভেঙ্গে যাওয়ায় রবিবার রাত ১২টা থেকে ঘাটটি মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। শুধুমাত্র ৩ নম্বর ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইনের বাস চালক আঃ জলিল বলেন, দুই ঘন্টা দৌলতদিয়া ঘাটে সিরিয়ালে আটকে আছি। শুনতেছি একটি মাত্র ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।
যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক হাবিবুর রহমান বলেন, সকাল ৮ টার দিকে এসে সিরিয়ালে আটকে আছি। গাড়িতে তার রয়েছে। এছাড়া সময়মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে পরিবহন খরচের পাশাপাশি তাদের খরচও বাড়ছে।
ভোগান্তি লাঘবে যাত্রীবাহী যানবাহন ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, দুটি ঘাটের মধ্যে একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে। একটি ঘাটের মেরামত কাজ চলছে, আশা করি খুব দ্রুতই ঘাটটি সচল হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, ঘাট কম থাকার ফেরি কম চালাতে হচ্ছে। বর্তমান এই নৌ-রুটে ছোট বড় মিলিয়ে ১০ টি ফেরি চলাচল করছে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটিতে চাষ করা হচ্ছে হলুদ,অন্যটিতে শুকানো হচ্ছে পাট,রাতে মাদক সেবীর আড্ডা
বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন ষোলটাকা, কাজিপুর ও ধানখোলা চালু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
গত সাত মাস যাবৎ কোনো ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আর কেরামতি বেড়েছে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরে চাষ করা হয়েছে হলুদ। আর এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন কাজিপুর। সেই কেন্দ্রটিতে দিনের বেলায় শুকানো হয় পাট। আর সন্ধ্যা লাগলেই পরিণত হয় মাদক সেবীদের আকড়া হিসেবে। আর ধানখোলায় ঝুলছে তালা।
কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশা।
মেডিকেল অফিসারসহ চারটি পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার।
তা ছাড়া ওষুধ ও জনবল সংকটে নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতি সেবা, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
একেকটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পিয়নের পদ থাকলেও সেখানে নামমাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে এই সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ভবন ও বাসভবন দুটিই একেবারই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ থেকে ঢালায় খসে খসে পড়ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে বসছে নিয়মিত মাদকের আড্ডা।
সেবা প্রার্থী ষাট বছর উধ্বো জমেলা খাতুন বলেন,আমার বয়স হয়েছে আর রোগেও পাল্লা দিয়েছে। গরীব মানুষ ঔষধ কিনতে টাকা থাকে না। এই হাপানি রোগ নিয়ে দির্ঘদিন ভুগছি। এই হাসপাতালে এসে ঔষধ নিয়ে খেলে কম থাকে। একটু আরাম পাই। অথচ গত ৫/৬ মাস যাবৎ কোনো ওষুধ নেই। জরুরি চিকিৎসার জন্য গাংনী, মেহেরপুর কিংবা কুষ্টিয়া যেতে হয়। কিছু দিন আগে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের এক কৃষক হঠাৎ অসুস্থ হলে গাংনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।
কাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়াদ আলী বলেন, আমরা সিমান্ত এলাকার মানুষ হওয়াই বড় পাপ করে ফেলেছি। আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক সেবার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়ে আছি। আমাদের ইউনিয়ন পারিবারিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খাতা কলমে আছে। আর সেবার ক্ষেত্রে শূন্য।
ষোলটাকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো নামেই আছে, এখানে ডাক্তার ও নার্স নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ সময় মতো পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে।বতর্মান হাসপাতালের ভিতরে হলুদ চাষ হচ্ছে। আর অন্য সময় মাদকসেবীদের দখলে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার এবং নার্সের প্রয়োজন।
ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কোয়ার্টার ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সেখানে কোনো ডাক্তার থাকতে পারেন না। তাই রাতের আঁধারে চিকিৎসার জন্য রোগীদের শহরে নিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া, নিয়মিত ওষুধ পাওয়া যায় না।এতে গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে ব্যহত হচ্ছে।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, জনবল ও ওষুধ সংকট রয়েছে। জনবল ও ওষুধ দিলে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া চারজনের কাজ একাই করতে হয়।
কাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই অবস্থিত ইউনিয়ন পরিবার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এটির অধিকাংশ ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সন্ধ্যায় পর যখন এলাকা ফাকা থাকে তখন মাদকসেবীরা আড্ডায় বসে। অনেক ভবনের জ্বানালা দরজা খুলে বিক্রি করে দিয়েছে মাদক সেবীরা। আমারা সিমান্ত এলাকার মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হলে ১৫ কিলো যাওয়া লাগে। তাই এটি দ্রুত চালু করা দরকার।
এদিকে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আবু সাঈদ বলেন, দ্রুত ওষুধ সরবরাহ করা হবে এবং শিগগিরই জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকলেও বাকি সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হয় ওই সব উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসারদের।
বগুড়ায় মা-ছেলে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর বটতলা গ্রামে এ খুনের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মা ও ছেলে জোড়া খুনের বিষয়টি এলাকাবাসী টের পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন-শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর বটতলা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী ঈদ্রীস প্রামানিকের স্ত্রী রানী খাতুন (৪০) ও ছেলে ইমরান (১৮)।
জানা যায়, সোমবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) রাতে খাওয়া দাওয়া করে রানী খাতুন ও ছেলে ইমরান নিজ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে প্রতিবেশিরা ঘরের দরজা খোলা ও ঘরের ভিতর জবাই করা মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। তবে ইমরানের সাথে একই গ্রামের মৃত খোকার ছেলে হাসান (১৭) বসবাস করতো। ঘটনার পর থেকে হাসান নিখোঁজ রয়েছে। নিহতের মেয়ে ইলা জানান, আমার মা ও ভাইকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ ও সোনাতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ধারনা করা হচ্ছে, রাতের যে কোন সময় কে বা কারা তাদেরকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। নিহতদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ময়মনসিংহের ভালুকা সরকারি কলেজে ভর্তি কার্যক্রম চলাকালে দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভালুকা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি তানভীর হাসান শান্ত। ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পারায় যেসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, তাদের সহযোগিতার ঘোষণা দেন তিনি।
জানা যায়, শান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মোবাইল নম্বর প্রকাশ করে জানান—অর্থাভাবে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না পারলে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী তাঁর সাহায্য পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, বাবা দিনমজুর হওয়ায় ভর্তি ফি দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে শান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিজে এসে ভর্তি ফি পরিশোধ করেন। আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি না হলে হয়তো পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হতো। শান্ত ভাই শুধু টাকা দেননি, সাহসও দিয়েছেন।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সিয়াম সাব্বির রিশাদ জানান, এবার তানভীর হাসান শান্তর সহযোগিতায় প্রায় বিশজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পেরেছে। কারও ভর্তি ফি পুরোপুরি বহন করা হয়েছে, আবার অনেকে আংশিক সহায়তা পেয়েছেন।
তানভীর হাসান শান্ত বলেন, আমি বিশ্বাস করি, অর্থের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থেমে যাওয়া উচিত নয়। আমি আমার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় সহযোগীতা করেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো শিক্ষার্থী ফরমপূরন সহ যেকোনো আর্থিক অসুবিধায় পড়ে আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্বও নিতে চায়।
অভিভাবকরাও এ উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। একজন অভিভাবক বলেন, ছেলের ভর্তি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। শান্তর কারণে সেই দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।
কুমিল্লার মুরানগর উপজেলার পীরকাশিমপুর গ্রামে বাড়ীর পাশ থেকে এক যুবকের মরদেহে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ওই যুবকের নাম মোঃ মিনহাজ (৩০)। সে পীর কাশিমপুর উত্তর পাড়ার আনোয়ার হোসেন মাস্টারের ছোট ছেলে।
নিহত মিনহাজের ভাই মঈদ আহমেদ জানান, সোবমার বিকেল ৩টার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। রাতে এশার নামাজের পরও মিনহাজ বাসায় না ফিরলে পরিবারের সন্দেহ হয়। এরপর খোঁজাখুজি করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারের পাশে মিনহাজের মরদেহ পাওয়া যায়। এঘটনায় পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন, তাকে কেউ হত্যা করে ফেলে রেখে গিয়ে থাকতে পারে।
এসময় স্থানীয়রা বাংগরা বাজার থানা পুলিশকে খবর দিলে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, রাতেই লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে, সুরতহালের সময় তার কপালে দুটি ছোট ক্ষত চিহ্ন দেখা গেলেও এটি দেখে তেমন কোনে আঘাতের চিহ্ন বলে মনে হয়নি। ময়না তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে ওসি জানান।
মন্তব্য