প্রিয় ডটকমের সহসম্পাদক ও তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের হত্যা রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি বলছে, ট্রেনে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের হাতে খুন হয়েছেন ফাগুন।
তবে ফাগুনের বাবা সাংবাদিক কাকন রেজার দাবি, পরোক্ষভাবে কেউ এই হত্যাকাণ্ডে রসদ জুগিয়েছেন। ফাগুনকে হত্যার আগে তার একটা অনুসন্ধানী নিউজের কারণে হুমকি এসেছিল। ওই গোষ্ঠীও এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
ছিনতাইয়ের পর হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক দাবি করে ঘটনাটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তিনি।
জামালপুর রেলওয়ে থানার বহুল আলোচিত ফাগুন রেজা হত্যা মামলাটি এক বছর আট মাস পর রেলওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইয়ের কাছে আসে। এর চার মাসেই হত্যার কারণ উদঘাটনের দাবি করছে পিবিআই।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জামালপুরের পিবিআই কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দীন জানান, মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামি হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামি জানিয়েছেন, ফাগুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন পাঁচ ব্যক্তি। এরা ট্রেনে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্য।
পুলিশ সুপার জানান, খাবারের সঙ্গে ঘুমের বড়ি কিংবা চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে যাত্রীদের অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ মালপত্র হাতিয়ে নেয়াই এদের কাজ। সাংবাদিক ফাগুনের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দীন জানান, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ময়মনসিংহের তারকান্দা এলাকার মো. সোহরাব মিয়া গাজীপুরের এক মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাকে ফাগুন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করলে আদালত অনুমতি দেয়।
ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ প্রফেশনাল ২য় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি সাব এডিটর হিসেবে সংবাদ মাধ্যম প্রিয় ডটকমে কর্মরত ছিলেন।
২০১৯ সালের ২১ মে বিকেল ৪টার দিকে নিজের বাড়ি শেরপুরে আসার জন্য তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে জামালপুরের কমিউটার ট্রেনে উঠেন ফাগুন। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফাগুন তার বাবাকে মোবাইলে জানান তিনি ময়মনসিংহের কাছাকাছি চলে এসেছেন। এর কিছুক্ষণ পর থেকে ফাগুনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরদিন জামালপুরের নান্দিনা রেলস্টেশনের কাছে রানাগাছা মধ্যপাড়া গ্রামের দক্ষিণ পাশে রেললাইনের পাশে ফাগুনের মরদেহ পাওয়া যায়। জামালপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে জামালপুর রেলওয়ে থানায় মামলা করেন কাকন রেজা।
পিবিআই জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সোহরাব মিয়া জানান, তিনি প্রায় চার বছর ধরে গাজীপুরের উত্তর মাওনা নয়নপুরে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার সঙ্গে আসামি মাজহারুল ইসলাম রুমানও ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন। আসামি শফিক খান আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য ও ছিনতাইকারী।
শফিক খানের নেতৃত্বে সোহরাব মিয়া, মাজহারুল ইসলাম রুমান, নজরুল ও শফিকুল ইসলাম ট্রেনে ও বাসে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাবারে মিশিয়ে কৌশলে যাত্রীদের খাওয়ান। এর পর তাদের অজ্ঞান করে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কৌশলে ছিনতাই করেন।
ঘটনার দিন বিকেল ৫টার সোহরাব, শফিক, নজরুল, রুম্মান ও শফিকুল সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গফরগাঁও রেলস্টেশনে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারা ট্রেনের একটি বগিতে উঠেন। ট্রেনে উঠার পর একজন ফাগুনকে টার্গেট করেন। ফাগুন তখন তার সিটে বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, আসামিরা ফাগুনের পাশে বসে ভাব জমাতে থাকেন। সোহরাব, রুমান ও শফিকুল ট্রেনের দুই সিটের ফাঁকা জায়গায় বসে তাস খেলা শুরু করেন। ট্রেন ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের কাছাকাছি আসলে তারা তাস খেলা বন্ধ করে দেন।
ময়মনসিংহ স্টেশনে ট্রেন এসে থামার পর শফিক সোহরাবকে ১০০ টাকা দিয়ে সবার জন্য কোক কিনে আনতে বলেন। সোহরাব ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্মের একটি দোকান থেকে ১৫ টাকা করে ৬টি কোকের বোতল কিনে ট্রেনে উঠেন এবং একটি বোতলের মুখ খুলে তার ভেতরে ঘুমের বড়ির গুঁড়া মেশান।
ট্রেনে ওঠার পর তারা প্রত্যেকে একটা করে বোতল নেন। শফিক ঘুমের বড়ির গুঁড়া মেশানো বোতলটি ফাগুনকে দিলে তিনি রাজি হননি। পরে সবাই মিলে অনুরোধ করলে ফাগুন কোকের অর্ধেক খেয়ে রেখে দেন। রুমান সেই বোতলটি ফেলে দেন।
ময়মনসিংহ স্টেশন হতে ট্রেন ছাড়ার পর ফাগুন তার ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন এবং পকেটে থাকা মোবাইল ফোন বের করে কথা বলেন। আসামিরা সবাই মিলে ফাগুনের সঙ্গে গল্প করতে থাকেন।
ট্রেন বিদ্যাগঞ্জ স্টেশনে থামার পর আরও কয়েকজন যাত্রী নেমে যান। ফাগুন তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে আসামিরা তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুরোপুরি অচেতন না হওয়ায় তারা ফাগুনের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতে পারেন নি। এরই মধ্যে ট্রেন পিয়ারপুর স্টেশন হয়ে নুরুন্দি স্টেশনে এসে থামে।
আসামিরা ও ফাগুন বাদে সব যাত্রী নেমে যায়। নুরুন্দি স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর আসামি সোহরাব ফাগুনের পকেট থেকে কৌশলে মোবাইল নিয়ে নেন।
রুমান ও শফিকুল ইসলাম ফাগুনের পকেটে থাকা ১২০০ টাকা নিয়ে নেন। শফিক ফাগুনের সঙ্গে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে নিতে চাইলে ফাগুন উঠে দাঁড়িয়ে ট্রেনের দরজায় গিয়ে দুই হাতে ব্যাগ ধরে রাখেন।
আসামিরা সবাই ট্রেনের দরজার কাছে এসে দাঁড়ান। নুরুন্দি হতে ট্রেন নান্দিনা স্টেশনের কাছাকাছি আসার পর শফিক এবং রুমান দুজন মিলে ফাগুনকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে লাইনের পাশে ঝোপের মধ্যে ফেলে দেন।
ট্রেন নান্দিনা স্টেশনে আসার পর আসামিরা সবাই ট্রেন থেকে নেমে মেইন রোডে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ময়মনসিংহ ব্রিজে যান।
আসামিরা ময়মনসিংহ থেকে বাসে রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের মাওনায় যান। শফিক ২০০ টাকা করে দেন এবং সোহরাবকে ফাগুনের মোবাইলটি বিক্রি করে দিতে বলেন। ল্যাপটপসহ ব্যাগটি তিনি নিজের কাছে রাখেন।
পরদিন দুপুরে সোহরাব ফাগুনের মোবাইলে তার নিজের সিমটি ভরে তিনদিন ব্যবহার করেন এবং বিক্রির চেষ্টা করেন। তিনি মোবাইলটি বিক্রি না করতে পেরে রুমানকে বিক্রি করার জন্য দেন। পরে রুমান মোবাইলটি ২৭০০ টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করেন।
পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দীন আরও বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারসহ লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার এবং হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ফাগুনের বাবা কাকন রেজা বলেন, ‘একজন লোককে চেতনানাশক খাইয়ে সহজেই মালামাল লুট করা যায়। ট্রেন ও বাসে যারা এই কাজে জড়িত থাকে তারা কেউই হত্যা করেন না বলে সাংবাদিক হিসেবে আমি জানি। এর পেছনে আরও ঘটনা আছে এবং পরোক্ষভাবে কেউ এই হত্যাকাণ্ডে রসদ জুগিয়েছেন।’
কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘ফাগুনকে হত্যার আগে তার একটা অনুসন্ধানী নিউজের কারণে হুমকি এসেছিল। ওই গোষ্ঠীও এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য