লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে তিস্তার পানিপ্রবাহ।
বুধবার সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫১। অর্থাৎ বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলদেশ ভরাট হয়ে তিস্তা নদীর দুই পাড়ের চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে ভাঙতে শুরু করেছে সমতল এলাকাগুলো। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান সবজির ফসল ডুবে গেছে।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার হঠাৎ তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। উজানের ঢেউ ও বৃষ্টিপাতে এমনটি হয়েছে। যে অবস্থা দেখছি তাতে পানি আরও বাড়তে পারে।’
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা আবারও যৌবন ফিরে পেয়েছে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম; হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবারের পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে। আর ভাঙতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলগুলো। এ কারণে চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষরা। পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। তারা তাদের বাড়িঘর নিয়ে যাচ্ছে দূরের কোনো এক অজানা বাঁশঝাড়ে । অনেকে ঠাঁই নিচ্ছেন অন্যের বাড়িতে। তিস্তাপাড়ের ফাতেমা আহাজারি করে বলেন, ‘হামাক বাঁচান ব্যাড়ে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙ্গিয়া গেইছে ব্যাড়ে। হামাক বাঁচান। হামরা কৈ যাম কি খামা করি করম শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে। সরকার এগুলা কি কইরবার লাগছে। হামাক বাঁচান ব্যাড়ে, হামা বাঁচান।’
তিস্তাপাড়ের বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সজল বলন, ‘হামার বাড়ি ভাঙ্গি যাবার লাগছে তাই যাতে নদীর পানি ভুঁই বাঠিত না যায় তার জন্য আইল দিবার লাগছি। নদী ত কয়েকবার ভাঙ্গচে। সব তো শেষ। এখন আইল কি আর টিকে। তাপ দেই।’
তিস্তাপাড়ের শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলেন, ‘তিস্তা নদীর কাজ কিছুতেই হচ্ছে না। সবাই আশা দেয় কিছু করতেছে না। আজ নদীর পানি বাড়তেছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে কই যাব আমরা। এই যে দেখেন নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির পাশে এসেছে। কই যাব আমরা। সবাই শুধু সান্ত্বনা দেয়। আমাদের জায়গা জমি ত সব নদীতে চলে গেছে। কি করব আমরা?’
হাসান আলী বলেন, ‘নদীর মাঝখানে আমার বাড়ি ছিল। বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে আজ যেখানে বাড়ি দেখতেছেন তার পাশ পর্যন্ত ভাঙন আসছে। আমার বাড়িটা যেকোনো সময় ভাঙতে পারে। কাচারত আসছে ভাঙন। শুধু প্রশাসন আমাদেক সান্ত্বনা দেয়। যদি শুকনো মৌসুমে বালুর বস্তা দিত তা হলে আর ভাঙত না। গতবারের মতন আজ আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। আমরা কই যাব, যাওয়ার তো জায়গা নাই।’
তিস্তাপাড়ের দুলাল মিয়া (৫৫) বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না। বালুর বান্ধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহল আর নদী ভাঙত না।’ আমরা বালুর বান্দ চান্দা কালেকশন করিয়া বান্দিছি। ডিসি মহোদয় আসিয়া কইছে আমি বস্তা দিব। কিন্তু কোনো বস্তা দেয়নি। সব ভাঙি যাবার লাগছে। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়া বালুর বাধ দিবার লাগছি। কিন্তু বাধ দেয়া শেষ কোনো মন্ত্রী এমপি আসল না। বালুর বান্দ থাকি পুরা ৪ ও ৫ নম্বর ওয়াড নদী ভাঙবার লাগছে। কিন্তু কাও খোঁজ করে না। কাও ভাল করে না। বারবার নদী ভাঙ্গে খালি দেখি যায় কিন্তু ভালো করার কোন অ্যাকশন নেয় না। থাইকপার জায়গা নাই, জমি নাই সব ভাঙি নিয়া গেইছে তিস্তা।’
তিস্তাপাড়ের মহিষখোচা বালাপাড়ার রজব পাড়ার আব্দুল হাসিব (৬০) বলেন, ‘আজ পানি বাড়তেছে। আমাদের বাড়িঘর থাকে না। খালি ভাঙি যায়। আমাদের জমি নাই জায়গা নাই। আমরা যাব কোথায়। আমাদের যাবার স্থান নাই। নদীতে যদি কিছু বস্তা দেয়া যায়, তাহলে নদীটা টিকসই হবে আর ভাঙনটাও কমবে।’
শোভা বলেন, ‘আমাদের ভুট্টাবাড়ী ৪ দোন মাটি আবাদ কচ্চি। খুব কষ্ট করি। বাড়ি পাকা করছি তায়ও শোগ ভাঙ্গি যাবার নাগছে। তোমরা বোল্ডার ফেলে দেও। তা হলে ভাল হবে। ৫০০ টাকার জন্য কি ভোট দেই তোমাক। হামার শরম লজ্জা থুইয়া হামরা ভোট দেই। বয়স্ক দেন, বিদুয়া দেন, আরও বাউরা হবে। আর খ্যায় লোব বাড়ি যাইবে। ওগলা বেবাক বন্দ করি দেন। ওই টাকা দেয়া বন্দ করি দেন। ওই টাকা দিয়া তোমরা বস্তা দেও বোল্ডার ফেলান। মানুষের জাহান বন্ধ হয়া যাবার লাগছে কাবিল হয়া। কিসের না চিড়া গুর ধরি আইসেনি। চিনি গুর খ্যায়া মাইনসে হাবরে আরও বেশি হয়া যায়। আরও বাউরা হয়্যা যায়। আমি যদি শেখ হাসিনা হনু হয় তাইলে এই দুনিয়া ঠাণ্ডা করি দিলাম হয়।’
ফরিদা বলেন, ‘হামরা রাস্তার মুরিত বাড়ি করি আছি। এখন সেটে পানি ভরা হবার নাগছে। হামরা কোটে যেয়া থাকম কোটে যেয়া খামো তার কোন ভইয়াকার নাই। ৪ মাসে ৬ মাসে কি এক না দেয় ওমাকে না আটে।’
মর্জিনা বলেন, ‘কি করম কোনো বুদ্ধি নাই। আমার যে কোনো বাস্তবে টাকা পয়সা তা নাই। হাতে করি পেটে খাই। এই বাস্তটা একনা তাও ভাঙ্গি যাবার লাগছে। এই যে বাইরে পাক কইরবার লাগছি। সরকার একটা ঘর দিছে তাও ভাঙি যাবার লাগছে। বাল বাচ্চা নিয়া কি করম। দুইটা ঘর তারও একটা রাস্তাত থুয়া আছি। আমি করি খাইতে পাই না দেখি সরকার আমাক ঘর দিছে। মানুষের ঋণও এখন শোধ কইরবার পাই নাই ফির ভাঙিবার লাগছে। সামনে বস্তা ফেলা চলো ভাঙে নাই। এখন বস্তাগুলো পানিত গেছে তাই ভাঙিবার লাগছে। এই মুহূর্তে যদি বস্তা ফেলায় তাহলে একনা নিন পাইরবার পামো। না হলে শোগ রাইতোতে ধুয়া নিয়া যাবে নদী।’
বালাপাড়ার মোহাম্মদ আলী (৬০) বলেন, ‘তেরো বার বাড়ি ভাঙছে। বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে ওপার থাকি মহিষখোচা পর্যন্ত আসিয়া গেছি। মহিষখোচা আসিয়াও আমরা পানি টানি বাঙ্গরি টাংরি হায় হুলাচতুল। এই গরু বাচুর মানুষ আমরা অসহায় যাব কোথায়। কোথায় খাব। ৫০ বছর থাকি শুনবার লাগছি নদী খনন হবে। খননও নাই কোন নদীর ব্যবস্থাও নাই। কি আমার সরকার কি কইরবার লাগছে। আমরা যাব কোথায়? বাড়িঘর সব ভাসি যাবার লাগছে। এ যে ভূট্টা ৪ দোন ৫ দোন সব ভাসি যাবার লাগছে। কোথায় যাবার মতো জায়গা নাই।’
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটের আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যান্ত বাজেট পাইনি। কিছু বস্তা ফেলা হয়েছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। নদীর পানি বাড়ছে এবং বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙনও বাড়ছে। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে করে ভাঙন রোধ করা যায়।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘আজ পানি বাড়ছে কি না তা বলতে পারছি না। তবে একটা মিটিং আছে, শেষ হলেই আমি সেখানে যাব। আর তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা করা লাগলেও করা হবে। যদি বস্তা হলে ভাঙন রোধ হয়, তা হলে আমরা সেই ব্যবস্থাও করব। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত সেসব বিতরণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য