চট্টগ্রামের হামজারবাগে গৃহকর্মী নিলুফার বেগমকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার গৃহকর্তা মোহাম্মদ সেলিম ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে সোমবার দুপুরে দুই আসামিকে তুলে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ। বিচারক হোসাইন মোহাম্মদ রেজা আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠান।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা কোহিনূর আকতার রোববার রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কল পেয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় দুর্গম এলাকা থেকে নিলুফারকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিলুফার বয়স মাত্র ১৫ বছর। তিন মাস ধরে তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ করছিল চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকায়।
রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম সোমবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, রাঙ্গুনিয়া থানার সহায়তায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় চট্টগ্রামের হাসপাতালে।
একটু সুস্থ হয়ে উঠলে মেয়েটি পুলিশকে জানায় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কাহিনি। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় গৃহকর্তা মোহাম্মদ সেলিম ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে।
নিলুফার বরাতে এএসপি আনোয়ার বলেন, ‘নিলুফার গত তিন মাস ধরে ওই বাসায় কাজ করছিল। কাজ শুরুর পরদিন থেকে তাকে নির্যাতন শুরু করে গৃহকর্তা সেলিম ও তার স্ত্রী জেসমিন। তাকে খাবার খেতে দিত না। কিছু হলেই চামচ গরম করে গায়ে ছ্যাঁকা দিত।
‘কথায় কথায় গায়ে ঢেলে দিত গরম পানি। তারা খাওয়া-দাওয়া করার সময় নিলুফাকে টয়লেটে বন্দি করে রাখত। এই তিন মাসে তাকে এক টাকাও বেতন দেয়নি।’
নিলুফাকে উদ্ধার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই এএসপি। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরে হলো-
৯৯৯ এর একটি কল এবং ‘মৃত’ গৃহকর্মী নিলুফা বেগমের বেঁচে ফেরার ইতিহাস
যাত্রী ছাউনির বেঞ্চির ওপর নিসাড় অবস্থায় পড়েছিল অল্প বয়সী মেয়েটি। পায়ের পাতা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন পড়েনি। আক্ষরিক অর্থেই পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত। এমন অজ্ঞাতপরিচয় মুমূর্ষু এক কিশোরীকে পুলিশের গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়াটাও বিশাল ঝুঁকির কাজ। বাইচান্স যদি গাড়িতে মরে যায়, তখন লোকে বলবে পুলিশই হয়তো তাকে নির্যাতন করে...। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি অনেক সময় পরিণতির ডর-ভয়কেও ভুলিয়ে দেয়। এমনিতেই তো পুলিশের এক পা রেলে, আর এক পা জেলে। যা হবার হবে।
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি সীমান্তবর্তী চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে দ্রুত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি আমরা।
২৭ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর একটি কলে মেয়েটির ব্যাপারে জানতে পেরে দ্রুত তাকে উদ্ধারে গিয়েছিলাম আমরা। অজ্ঞাত কলার মেয়েটিকে ‘অজ্ঞান’ এবং ‘ক্ষতবিক্ষত’ হিসেবে আমাদের কাছে উল্লেখ করেছিলেন বটে, কিন্তু তার অবস্থা যে এতটাই সঙ্গিন, তা ছিল আমাদের কল্পনারও বাইরে।
মেয়েটি কথাও বলতে পারে না। টেনেটুনে অস্পষ্টভাবে যা বলে, তা থেকে শুধু বোঝা গেল, তার নাম নিলুফা, বয়স ১৫, বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ। ভিকটিমের অবস্থা খারাপ দেখে প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শেষে সেখানকার দায়িত্বরত ডাক্তার তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
যা হোক, পরামর্শ তো পাওয়া গেল। কিন্তু কে নেবে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। দূরবর্তী এই এলাকা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও অনেক টাকা। সেই ভাড়াই বা বহন করবে কে! আমরা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখন বুঝি নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে তার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালগামী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করব! এদিকে অবনতিশীল পরিস্থিতিতে থাকা হতভাগা কিশোরীটি তখন ‘প্রায়’ অচেতন থেকে ‘পুরোপুরি’ অচেতন। হয়তো ‘স্থায়ী’ অচেতন হবার পথেই এগুচ্ছে ধীরে ধীরে। ব্যক্তিগতভাবে কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে হতাশই হতে হলো। যা করার করতে হবে দ্রুত। উপায়ান্তর না দেখে আমরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেই ফেললাম। রোগীর সাথে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল অভিমুখী যাত্রায় আমি, ওসি রাঙ্গুনিয়া, পরিদর্শক (তদন্ত)সহ আমাদের সহকর্মী আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
প্রথমেই জরুরি বিভাগে টিকিট কাটাসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে সার্জারি ইউনিটের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড। ডাক্তারেরা মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে জানতে চাইলেন, রোগীর অভিভাবক কে? এই প্রশ্নের উত্তর তো আসলে আমাদের কারও কাছেই নেই।
রাস্তার পাশ থেকে মৃতপ্রায় এক কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি মাত্র। অভিভাবকের নাম ঠিকানা তো কিছুই জানি না। মেয়েটির ওপর এমন অবর্ণনীয় নির্যাতন কে বা কারা করেছে, তাও অজানা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কাউকে না কাউকে দায়িত্ব তো নিতে হবে। এদিকে দেরি করার মতো পরিস্থিতিও নেই। অগত্যা আমি বলে দিলাম ‘আমিই এই রোগীর অভিভাবক’। এখন চিন্তা করি, পরবর্তীতে যদি রোগীটা মারা যেত বা খারাপ কিছু ঘটে যেত, তাহলে এই অজানা-অচেনা কিশোরীর লাশ নিয়ে আমি করতামটা কী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কী বলতাম, আর মিডিয়াকেই বা দিতাম কোন জবাব। যা হোক, উপরওয়ালা সহায় ছিলেন, এ যাত্রায় খারাপ কিছু ঘটেনি।
চিকিৎসার শুরুতেই দায়িত্বরত ডাক্তার জানালেন, রোগী বিপজ্জনকভাবে রক্তশূন্য। অতি জরুরি ভিত্তিতে দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে। এখন ডোনার ডেকে রক্ত নিতে গেলে তো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। হাতে সেই সময়ও নেই। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকেই দুই ব্যাগ রক্ত কিনে রোগীকে দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। কিনে আনা হলো প্রয়োজনীয় অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রও। মেয়েটিকে নিয়ে আমাদের কার কত টাকা খরচ হচ্ছে- না হচ্ছে, তখন এসব বিষয় আমাদের চিন্তাতেও নেই। সবার একটাই ভাবনা, অচেনা কিশোরীটিকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। ফেরত দিতে হবে তার বাবা-মায়ের কাছে। জানতে হবে, কোন মানুষ নামের পশু পুতুল খেলার বয়সী এই নিষ্পাপ মেয়েটির ওপর এমন জঘন্য অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে।
চিকিৎসা ও পরিচর্যার একপর্যায়ে নিলুফা ক্ষীণস্বরে আমাদের কথার জবাব দিতে শুরু করে। খুব যে স্বতঃস্ফূর্ত জবাব, তাও নয়। এই ধরুন দশবার জিজ্ঞেস করলে হয়তো একবার উত্তর মেলে, এ রকম একটা অবস্থা। এভাবে বহু কসরত করে যৎসামান্য যা জানা গেল- মাস দুয়েক ধরে সে গৃহকর্মী হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকার প্রবাসী সেলিম ও সুমী দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়াও সে জানায় মূলত গৃহকর্ত্রী সুমীই দিনের পর দিন নির্যাতন করে করে তার এই হাল করেছে। তুচ্ছ কারণে তাকে চামচ গরম করে ছ্যাঁকা দেয়া হতো, কারেন্টের তার ও কাঠের চিকন গুঁড়ি দিয়ে পেটানো হতো। থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি, দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে দেয়াও ছিল নিত্যকার রুটিন। মেয়েটি আরও জানায় যে, সেদিন সকালে বেদম মারপিটে সে অজ্ঞান হয়ে গেলে মৃত ভেবে গৃহকর্ত্রী সুমী বাসার দারোয়ানের সহায়তায় তাকে ওই যাত্রী ছাউনিতে ফেলে রেখে চলে যায়।
আমাদের অনুরোধে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহেব থানা এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নের বিট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাহায্যে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিলুফার পরিবারের সদস্যদেরকে খুঁজে বের করে ফেলেন। পরিবারের সদস্য বলতে তার মা এবং মামা।
বাবা হাবিবুর রহমান ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন আজ থেকে ১৫ বছর আগেই। নিলুফার অবস্থান তখনও মায়ের পেটেই। বিস্তারিত জেনে শোকার্ত মা-মামা, সাথে মায়ের দ্বিতীয় স্বামী হাসপাতালে নিলুফার কাছে ছুটে এসেছেন, এ পর্যন্তই। তাদের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। তিন বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটে না, সেখানে নিলুফার চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া তো তাদের কল্পনারও অতীত। মেয়ের উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে পারবেন না ধরে নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন মা কোহিনূর বেগম।
এই লেখার কয়েক স্থানে নিলুফাকে আমি ‘হতভাগা কিশোরী’ বলে উল্লেখ করলেও এ পর্যায়ে তাকে আমি ভাগ্যবতীই বলব। এবার তার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, পিপিএম স্যার। তিনি নিলুফার মাকে চিন্তা করতে বারণ করে জানালেন, নিলুফার চিকিৎসাসহ খাওয়া-দাওয়া এবং অন্যান্য সব খরচ তিনিই বহন করবেন। শুধু জানিয়েই ক্ষান্তি দেয়া নয়, তাৎক্ষণিক বাহক মারফত নগদ ৫ হাজার টাকা পৌঁছে দিলেন নিলুফার মায়ের হাতে।
কী, ভাবছেন ঘুষের টাকা। ইচ্ছেমতো ছেটাতেই পারে? আপনার পরিচিত কোনো পুলিশ অফিসার থাকলে তার কাছ থেকে জেনে নিবেন, এসএম রশিদুল হক সেসব পুলিশ কর্মকর্তাদেরই দলভুক্ত, যারা পুরো চাকরি জীবন এক পয়সাও ঘুষ বা অবৈধ উপার্জন ছাড়াই পার করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অন্যদিন আলোচনা করা যাবে। বলতে দ্বিধা নেই, এই উদ্ধারপ্রক্রিয়ার শুরু থেকে চিকিৎসা এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ পর্যন্ত প্রতি পর্যায়ে, প্রতিমুহূর্তে স্যার আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, করণীয় স্থির করে দিয়েছেন। এক কথায় নিলুফা নামের এক ছোট প্রাণকে পুনর্জীবন উপহার দেয়ার পেছনে মূল অনুঘটকের ভূমিকাও স্যারেরই।
প্রায় অচেতন এক কিশোরীকে বিশাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ডক্টরস রুম, সার্জারি ইউনিটের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডগুলোতে টানাহেঁচড়াসহ রক্ত সংগ্রহ, ওষুধপত্রাদি ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কাজে আমার সাথে দিনভর ছোটাছুটি করেছেন এসআই রবিউল, নারী কনস্টেবল পূজা এবং নাইমুনসহ সিএমপির নাম না জানা অনেক পুলিশ সদস্য। ভূমিকা রেখেছেন রাঙ্গুনিয়ার ওসি মাহবুব মিল্কি, পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল। এসেছিলেন পাঁচলাইশ থানার ওসি জাহিদুল কবিরও। তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
৫ দিন পূর্বে যে মেয়েটিকে আশঙ্কাজনক ও প্রায় অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম, সবার দোয়ায় আজ সে উঠে বসার মতো, ধরাধরি করে দাঁড়ানোর মতো, কথা বলার মতো সুস্থ। শুধু তাই নয়, এই ৫ দিনে চিকিৎসা প্রক্রিয়া দেখভাল করতে গিয়ে নিলুর (তার এই ‘নিলু’ নামটা আমিই তাকে মনে মনে দিয়েছি; প্রকৃত নাম যে নিলুফা, তা তো জানেনই) সাথে আমাদের একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। আর সেই সূত্রেই আমরা তার কাছ থেকে নির্যাতনকারীদের বিস্তারিত নাম, ঠিকানা, অবস্থান, ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সবকিছু বের করে নিতে পারি। আপনারা জেনে খুশি হবেন- এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকেলে রাঙ্গুনিয়া থানা এবং পাঁচলাইশ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিলুর শনাক্তমতে নির্যাতনকারী দম্পতি চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম, তার স্ত্রী জেসমিন ওরফে সুমী এবং বাড়ির দারোয়ান আকবর আলীকে হেফাজতে গ্রহণ করে। নিলু পুলিশের সঙ্গে সশরীরে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনকারীদেরকে দেখিয়ে দেয় এবং নির্যাতনের রোমহষর্ক বর্ণনা দেয়। পরবর্তীতে রাতে নিলুর মা কোহিনূর বেগম বাদী হয়ে উল্লিখিত ব্যক্তিদেরকে আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন।
ছোট্ট নিলুর ওপর আঁতকে ওঠার মতো ভয়ংকর পদ্ধতিতে দিনের পর দিন যেসব নির্যাতন চলেছে, তার উপযুক্ত বিচার ইনশাআল্লাহ এবার সে পাবে। এ কথা এখন তো বলাই যায়, কী বলেন সবাই! অতি অল্প বেতনে ঘরের সকল কাজের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেয়া আমাদের এই অতি আপনজনদের ওপর সকল ধরনের নিষ্ঠুরতা- নির্মমতা চিরতরে বন্ধ হোক।
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য