চট্টগ্রামের হামজারবাগে গৃহকর্মী নিলুফার বেগমকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার গৃহকর্তা মোহাম্মদ সেলিম ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে সোমবার দুপুরে দুই আসামিকে তুলে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ। বিচারক হোসাইন মোহাম্মদ রেজা আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠান।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা কোহিনূর আকতার রোববার রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কল পেয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় দুর্গম এলাকা থেকে নিলুফারকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিলুফার বয়স মাত্র ১৫ বছর। তিন মাস ধরে তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ করছিল চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকায়।
রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম সোমবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, রাঙ্গুনিয়া থানার সহায়তায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় চট্টগ্রামের হাসপাতালে।
একটু সুস্থ হয়ে উঠলে মেয়েটি পুলিশকে জানায় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কাহিনি। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় গৃহকর্তা মোহাম্মদ সেলিম ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে।
নিলুফার বরাতে এএসপি আনোয়ার বলেন, ‘নিলুফার গত তিন মাস ধরে ওই বাসায় কাজ করছিল। কাজ শুরুর পরদিন থেকে তাকে নির্যাতন শুরু করে গৃহকর্তা সেলিম ও তার স্ত্রী জেসমিন। তাকে খাবার খেতে দিত না। কিছু হলেই চামচ গরম করে গায়ে ছ্যাঁকা দিত।
‘কথায় কথায় গায়ে ঢেলে দিত গরম পানি। তারা খাওয়া-দাওয়া করার সময় নিলুফাকে টয়লেটে বন্দি করে রাখত। এই তিন মাসে তাকে এক টাকাও বেতন দেয়নি।’
নিলুফাকে উদ্ধার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই এএসপি। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরে হলো-
৯৯৯ এর একটি কল এবং ‘মৃত’ গৃহকর্মী নিলুফা বেগমের বেঁচে ফেরার ইতিহাস
যাত্রী ছাউনির বেঞ্চির ওপর নিসাড় অবস্থায় পড়েছিল অল্প বয়সী মেয়েটি। পায়ের পাতা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন পড়েনি। আক্ষরিক অর্থেই পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত। এমন অজ্ঞাতপরিচয় মুমূর্ষু এক কিশোরীকে পুলিশের গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়াটাও বিশাল ঝুঁকির কাজ। বাইচান্স যদি গাড়িতে মরে যায়, তখন লোকে বলবে পুলিশই হয়তো তাকে নির্যাতন করে...। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি অনেক সময় পরিণতির ডর-ভয়কেও ভুলিয়ে দেয়। এমনিতেই তো পুলিশের এক পা রেলে, আর এক পা জেলে। যা হবার হবে।
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি সীমান্তবর্তী চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে দ্রুত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি আমরা।
২৭ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর একটি কলে মেয়েটির ব্যাপারে জানতে পেরে দ্রুত তাকে উদ্ধারে গিয়েছিলাম আমরা। অজ্ঞাত কলার মেয়েটিকে ‘অজ্ঞান’ এবং ‘ক্ষতবিক্ষত’ হিসেবে আমাদের কাছে উল্লেখ করেছিলেন বটে, কিন্তু তার অবস্থা যে এতটাই সঙ্গিন, তা ছিল আমাদের কল্পনারও বাইরে।
মেয়েটি কথাও বলতে পারে না। টেনেটুনে অস্পষ্টভাবে যা বলে, তা থেকে শুধু বোঝা গেল, তার নাম নিলুফা, বয়স ১৫, বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ। ভিকটিমের অবস্থা খারাপ দেখে প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শেষে সেখানকার দায়িত্বরত ডাক্তার তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
যা হোক, পরামর্শ তো পাওয়া গেল। কিন্তু কে নেবে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। দূরবর্তী এই এলাকা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও অনেক টাকা। সেই ভাড়াই বা বহন করবে কে! আমরা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখন বুঝি নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে তার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালগামী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করব! এদিকে অবনতিশীল পরিস্থিতিতে থাকা হতভাগা কিশোরীটি তখন ‘প্রায়’ অচেতন থেকে ‘পুরোপুরি’ অচেতন। হয়তো ‘স্থায়ী’ অচেতন হবার পথেই এগুচ্ছে ধীরে ধীরে। ব্যক্তিগতভাবে কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে হতাশই হতে হলো। যা করার করতে হবে দ্রুত। উপায়ান্তর না দেখে আমরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেই ফেললাম। রোগীর সাথে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল অভিমুখী যাত্রায় আমি, ওসি রাঙ্গুনিয়া, পরিদর্শক (তদন্ত)সহ আমাদের সহকর্মী আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
প্রথমেই জরুরি বিভাগে টিকিট কাটাসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে সার্জারি ইউনিটের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড। ডাক্তারেরা মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে জানতে চাইলেন, রোগীর অভিভাবক কে? এই প্রশ্নের উত্তর তো আসলে আমাদের কারও কাছেই নেই।
রাস্তার পাশ থেকে মৃতপ্রায় এক কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি মাত্র। অভিভাবকের নাম ঠিকানা তো কিছুই জানি না। মেয়েটির ওপর এমন অবর্ণনীয় নির্যাতন কে বা কারা করেছে, তাও অজানা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কাউকে না কাউকে দায়িত্ব তো নিতে হবে। এদিকে দেরি করার মতো পরিস্থিতিও নেই। অগত্যা আমি বলে দিলাম ‘আমিই এই রোগীর অভিভাবক’। এখন চিন্তা করি, পরবর্তীতে যদি রোগীটা মারা যেত বা খারাপ কিছু ঘটে যেত, তাহলে এই অজানা-অচেনা কিশোরীর লাশ নিয়ে আমি করতামটা কী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কী বলতাম, আর মিডিয়াকেই বা দিতাম কোন জবাব। যা হোক, উপরওয়ালা সহায় ছিলেন, এ যাত্রায় খারাপ কিছু ঘটেনি।
চিকিৎসার শুরুতেই দায়িত্বরত ডাক্তার জানালেন, রোগী বিপজ্জনকভাবে রক্তশূন্য। অতি জরুরি ভিত্তিতে দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে। এখন ডোনার ডেকে রক্ত নিতে গেলে তো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। হাতে সেই সময়ও নেই। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকেই দুই ব্যাগ রক্ত কিনে রোগীকে দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। কিনে আনা হলো প্রয়োজনীয় অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রও। মেয়েটিকে নিয়ে আমাদের কার কত টাকা খরচ হচ্ছে- না হচ্ছে, তখন এসব বিষয় আমাদের চিন্তাতেও নেই। সবার একটাই ভাবনা, অচেনা কিশোরীটিকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। ফেরত দিতে হবে তার বাবা-মায়ের কাছে। জানতে হবে, কোন মানুষ নামের পশু পুতুল খেলার বয়সী এই নিষ্পাপ মেয়েটির ওপর এমন জঘন্য অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে।
চিকিৎসা ও পরিচর্যার একপর্যায়ে নিলুফা ক্ষীণস্বরে আমাদের কথার জবাব দিতে শুরু করে। খুব যে স্বতঃস্ফূর্ত জবাব, তাও নয়। এই ধরুন দশবার জিজ্ঞেস করলে হয়তো একবার উত্তর মেলে, এ রকম একটা অবস্থা। এভাবে বহু কসরত করে যৎসামান্য যা জানা গেল- মাস দুয়েক ধরে সে গৃহকর্মী হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকার প্রবাসী সেলিম ও সুমী দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়াও সে জানায় মূলত গৃহকর্ত্রী সুমীই দিনের পর দিন নির্যাতন করে করে তার এই হাল করেছে। তুচ্ছ কারণে তাকে চামচ গরম করে ছ্যাঁকা দেয়া হতো, কারেন্টের তার ও কাঠের চিকন গুঁড়ি দিয়ে পেটানো হতো। থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি, দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে দেয়াও ছিল নিত্যকার রুটিন। মেয়েটি আরও জানায় যে, সেদিন সকালে বেদম মারপিটে সে অজ্ঞান হয়ে গেলে মৃত ভেবে গৃহকর্ত্রী সুমী বাসার দারোয়ানের সহায়তায় তাকে ওই যাত্রী ছাউনিতে ফেলে রেখে চলে যায়।
আমাদের অনুরোধে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহেব থানা এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নের বিট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাহায্যে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিলুফার পরিবারের সদস্যদেরকে খুঁজে বের করে ফেলেন। পরিবারের সদস্য বলতে তার মা এবং মামা।
বাবা হাবিবুর রহমান ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন আজ থেকে ১৫ বছর আগেই। নিলুফার অবস্থান তখনও মায়ের পেটেই। বিস্তারিত জেনে শোকার্ত মা-মামা, সাথে মায়ের দ্বিতীয় স্বামী হাসপাতালে নিলুফার কাছে ছুটে এসেছেন, এ পর্যন্তই। তাদের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। তিন বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটে না, সেখানে নিলুফার চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া তো তাদের কল্পনারও অতীত। মেয়ের উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে পারবেন না ধরে নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন মা কোহিনূর বেগম।
এই লেখার কয়েক স্থানে নিলুফাকে আমি ‘হতভাগা কিশোরী’ বলে উল্লেখ করলেও এ পর্যায়ে তাকে আমি ভাগ্যবতীই বলব। এবার তার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, পিপিএম স্যার। তিনি নিলুফার মাকে চিন্তা করতে বারণ করে জানালেন, নিলুফার চিকিৎসাসহ খাওয়া-দাওয়া এবং অন্যান্য সব খরচ তিনিই বহন করবেন। শুধু জানিয়েই ক্ষান্তি দেয়া নয়, তাৎক্ষণিক বাহক মারফত নগদ ৫ হাজার টাকা পৌঁছে দিলেন নিলুফার মায়ের হাতে।
কী, ভাবছেন ঘুষের টাকা। ইচ্ছেমতো ছেটাতেই পারে? আপনার পরিচিত কোনো পুলিশ অফিসার থাকলে তার কাছ থেকে জেনে নিবেন, এসএম রশিদুল হক সেসব পুলিশ কর্মকর্তাদেরই দলভুক্ত, যারা পুরো চাকরি জীবন এক পয়সাও ঘুষ বা অবৈধ উপার্জন ছাড়াই পার করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অন্যদিন আলোচনা করা যাবে। বলতে দ্বিধা নেই, এই উদ্ধারপ্রক্রিয়ার শুরু থেকে চিকিৎসা এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ পর্যন্ত প্রতি পর্যায়ে, প্রতিমুহূর্তে স্যার আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, করণীয় স্থির করে দিয়েছেন। এক কথায় নিলুফা নামের এক ছোট প্রাণকে পুনর্জীবন উপহার দেয়ার পেছনে মূল অনুঘটকের ভূমিকাও স্যারেরই।
প্রায় অচেতন এক কিশোরীকে বিশাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ডক্টরস রুম, সার্জারি ইউনিটের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডগুলোতে টানাহেঁচড়াসহ রক্ত সংগ্রহ, ওষুধপত্রাদি ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কাজে আমার সাথে দিনভর ছোটাছুটি করেছেন এসআই রবিউল, নারী কনস্টেবল পূজা এবং নাইমুনসহ সিএমপির নাম না জানা অনেক পুলিশ সদস্য। ভূমিকা রেখেছেন রাঙ্গুনিয়ার ওসি মাহবুব মিল্কি, পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল। এসেছিলেন পাঁচলাইশ থানার ওসি জাহিদুল কবিরও। তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
৫ দিন পূর্বে যে মেয়েটিকে আশঙ্কাজনক ও প্রায় অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম, সবার দোয়ায় আজ সে উঠে বসার মতো, ধরাধরি করে দাঁড়ানোর মতো, কথা বলার মতো সুস্থ। শুধু তাই নয়, এই ৫ দিনে চিকিৎসা প্রক্রিয়া দেখভাল করতে গিয়ে নিলুর (তার এই ‘নিলু’ নামটা আমিই তাকে মনে মনে দিয়েছি; প্রকৃত নাম যে নিলুফা, তা তো জানেনই) সাথে আমাদের একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। আর সেই সূত্রেই আমরা তার কাছ থেকে নির্যাতনকারীদের বিস্তারিত নাম, ঠিকানা, অবস্থান, ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সবকিছু বের করে নিতে পারি। আপনারা জেনে খুশি হবেন- এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকেলে রাঙ্গুনিয়া থানা এবং পাঁচলাইশ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিলুর শনাক্তমতে নির্যাতনকারী দম্পতি চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম, তার স্ত্রী জেসমিন ওরফে সুমী এবং বাড়ির দারোয়ান আকবর আলীকে হেফাজতে গ্রহণ করে। নিলু পুলিশের সঙ্গে সশরীরে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনকারীদেরকে দেখিয়ে দেয় এবং নির্যাতনের রোমহষর্ক বর্ণনা দেয়। পরবর্তীতে রাতে নিলুর মা কোহিনূর বেগম বাদী হয়ে উল্লিখিত ব্যক্তিদেরকে আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন।
ছোট্ট নিলুর ওপর আঁতকে ওঠার মতো ভয়ংকর পদ্ধতিতে দিনের পর দিন যেসব নির্যাতন চলেছে, তার উপযুক্ত বিচার ইনশাআল্লাহ এবার সে পাবে। এ কথা এখন তো বলাই যায়, কী বলেন সবাই! অতি অল্প বেতনে ঘরের সকল কাজের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেয়া আমাদের এই অতি আপনজনদের ওপর সকল ধরনের নিষ্ঠুরতা- নির্মমতা চিরতরে বন্ধ হোক।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গভর্নর হাউসে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।’
এর আগে দুই নেতা গভর্নর হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে ১৫ মিনিটের জন্য একান্ত বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি—একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন ও তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছি। একইভাবে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে আমাদের সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা ও ব্যাংকক যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃঢ় কাঠামো প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সফরটি ‘প্রতিবেশী’ নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরও নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কেও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুক্রবার গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণেরও প্রস্তাবও দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি, একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্টে (এলওআই) সই করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত।
‘সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখি।’
বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান পরিসর বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) আশ্বস্ত করেছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার ও শুধু থাইল্যান্ডের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:দেশের দুটি জেলায় অতি তীব্র ও ১৬টিতে তীব্র দাবদাহ চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা এবং খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার (১০ জেলার মধ্যে বাকি আটটি) ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হয়। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য