মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের প্রায় ৭৪ বছর বয়সী রবগুল মণ্ডল। কানে শোনেন না।
বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। এত দিন টাকা তুলতেন হাতে হাতে। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে টাকা যাবে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ভাতার টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।
রবগুলের মোবাইল ফোন আছে। ভাতা আসবে বলে ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগবে কেবল স্মার্টকার্ড। আর এই কার্ড আনতে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে এসে আক্কেলগুড়ুম। তিনি নাকি মৃত!
তার সঙ্গে কার্ড নিতে আসা মুর্শিদা খাতুনেরও একই সমস্যা। তিনিও কাগজকলমে মৃত।
দুইজন জলজ্যান্ত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু মানতেই চাইছেন না নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
মুর্শিদা দুইবার ভোট দিতে পারেননি। অন্যদিকে বরগুলের দুশ্চিন্তা ভাতার টাকার কী হবে?
তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কর্মকর্তাদের সামনে, তার পরে আর কীভাবে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে, ভেবে পাচ্ছেন না দুইজন।
গাংনী উপজেলায় ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় আরও ৬ জন মানুষ পাওয়া গেছে, এদের মতো। তারা কাগজকলমে মৃত।
রবগুল মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৭১৪৭২১৩৭৭১৯১। অভাবের সংসার। ছেলেরা যার যার মতো আলাদা থাকে। এই বয়সে টুকটাক যা কিছু আয় করেন, তার সঙ্গে বয়স্ক ভাতার টাকাটা যোগ হওয়ায় দিন কেটে যায় কোনোভাবে।
স্মার্টকার্ড নিতে এসে নিজেকে মৃত দেখে হতাশবদনে তিনি বসেছিলেন নির্বাচন অফিসের পাশে আমগাছের নিচে।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা আমি মূর্খ মানুষ। বুঝতে পারছিনি। দেখো তো বাপ। আমার আইডি কাডে নাকি আমি মরে গেছি। এখন কোথায় গেলে এইডি ঠিক করা হবে? তা না হলে আমার ভাতা যে বন্ধ হয়ি যাবে।’
সঙ্গে বসে থাকা মুর্শিদা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৭১৪৭২১৩৭৬৩৩১। তিনিও রবগুল মণ্ডলের গ্রামেরই মানুষ। তার সঙ্গেই এসেছিলেন স্মার্টকার্ড নিতে।
তিনি বলেন, ‘হায়রে ডিজিটাল! তাজা মানুষ আমি, আমাকে মৃত ঘোষণা করে দিল! ‘আমি মেয়ে মানুষ। এখন কোথায় দৌড়াব, কার কাছেই বা যাব এইতা ঠিক করতে?’
কিছুদিন আগে একই সমস্যায় পড়েন বামন্দী ইউনিয়নের ৮৫ বছর বয়সী মরজ্জেম আলী এবং মটমুড়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ৭১ বছর বয়সী মুনসুর আলী। তারাও বয়স্ক ভাতা পেতেন। কিন্তু এখন আর আসবে না।
সমাধানের পথ খুঁজতে অফিস ও জনপ্রতিনিধিনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
কীভাবে এই সমস্যা?
গাংনী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে এমনটি হতে পারে মৃত মানুষের নামের পাশে তথ্য সংগ্রহের সময় ভুলের কারণে জীবিত মানুষের নাম বসে গেছে।’
তিনি নিজেই জানান, এমন সমস্যায় ভুগছেন গাংনী উপজেলায় ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৬ জন।
ভোটার তালিকা করার সময় তথ্য সংগ্রহের কাজে তত্ত্বাবধায়ক পদে কাজ করেছিলেন মাহাবুব হক। তিনি বলেছেন, তথ্য সংগ্রহকারীদের কাজে ফাঁকির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার অধীনে থাকা ওয়ার্ডভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত তথ্য সরবরাহকারীরা যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করত, তখন তারা একটি নির্দিষ্ট ফরমে থাকা প্রতিটি ঘর পূরণ করে তাদের সই নিয়ে নিত। একাধিকবার বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেলে তার পক্ষে অন্য কেউ ফরম পূরণ করে দিত। তবে এখন কী হয় জানি না।’
ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সংগ্রহের কাজে কর্মরত সজিবুল হক অবশ্য একে নির্বাচন কমিশন অফিসের ভুল হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সার্ভারের সমস্যার কারণে তথ্য ভুল দেখায়। সে ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে।’
ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বসবাসকারী একাধিক নাগরিকের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। আমি তাদের জীবিত হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দিতে পারি। কিন্তু বাকি কাজ তো নির্বাচন অফিসের। তবে এই ভুলগুলো তথ্য সংগ্রহকারীদের না নির্বাচন কমিশন অফিসের, এটা সঠিকভাবে বলা কঠিন।’
সমাধান জানেন না খোদ নির্বাচন কর্মকর্তা
এখন এই মানুষদের কী হবে?
গাংনী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এটি সংশোধনযোগ্য, তবে সময়সাপেক্ষ।’
তবে সময়সাপেক্ষ সেই প্রক্রিয়া কী, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিস্তারিত বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সংশোধনী বন্ধ রয়েছে। লকডাউন শেষে নির্বাচন অফিসে আবেদন করলে আবেদন করার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তা সংশোধন করা সম্ভব। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আবেদন করেছেন তাদেরগুলো সংশোধনীর কাজ চলমান রয়েছে।
তবে আবেদনের ৯ বছরেও মৃতের তালিকা থেকে নাম কাটতে না পারার উদাহরণও আছে।
সমস্যা জেলায় জেলায়
নেত্রকোণার মদন পৌরসভার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের আব্দুল আওয়াল ৯ বছর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যে মৃত ছিলেন। আউয়াল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রতিনিধি। নির্বাচন অফিসের তথ্যে তার মৃত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
৯ বছর ধরে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া এই গণমাধ্যমকর্মীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অবশ্য কয়েক দিনের মধ্যেই ভুল সংশোধন হয়ে যায়। এপ্রিলের শেষে মৃতের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
তার মতো বাবা-ছেলেসহ জীবিত আরও চারজনের ‘মৃত’ থাকার তথ্য মিলেছে। তারাও চান শিগগির ‘জীবিত’ হতে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নির্বাচন অফিসে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত।
এই চারজন হলেন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেশজানী গ্রামের রামকৃষ্ণ দেবনাথ, তার ছেলে প্রভাত চন্দ্র দেবনাথ এবং মদন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসাটিয়া গ্রামের হাবিবুল রহমান ও মদন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িভাদেরা গ্রামের মোসা. রেজিয়া আক্তার।
রামকৃষ্ণ দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছেলেডারে সাথে নিয়া নির্বাচন অফিসে গেছিলাম। তারা কইছে, আমরা বাপপুতেরে মৃত ঘোষণা করা অইছে। তালিকায় নাম নাই। অফিসের লোকেরা আমারে ও আমার ছেলেরে দেখে অবাক অইয়া যায়। আমি ও আমার ছেলে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আবেদন করছি।
‘চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ ছয় ধরনের দরকারিসহ কাগজ দিছি। বারবার যাইতাছি। কিন্তু এখনও সুরাহা পাই নাই। আমি ভোট দিতাম পারতাছি না। শিগগিরই আমরার আইডি কার্ড ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।’
হাবিবুল রহমান আবেদন করেছেন ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট আর মোসা. রেজিয়া আক্তার ২০১৯ সালের ২৩ জুন।
লালমনিরহাটে একজন স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ১৯ জন জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
তাদের একজন হলেন আদিতনারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী কান্ত রায়।
তিনি সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তালিকায় মৃত থাকায় গত মার্চে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছিলেন না এই শিক্ষক। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাদের আইডি আবার সচল হয়।
সংখ্যাটি কয়েক লাখ
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭১ জন মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ পরবর্তী সময়ে নিজেদের জীবিত বলে দাবি করেন।
এ রকম জীবন্মৃত কয়েক লাখ মানুষের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো সহজ সমাধান নেই।
প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করলেও সেই ভূতুড়ে বিষয় দূর হচ্ছে না। এখনও প্রতি বছর অনেক জীবিত ব্যক্তি ভোটার তালিকায় ‘মারা পড়ছেন’।
নির্বাচন কমিশন এখন দায় চাপাচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারী আর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া করা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ওপর।
প্রভাব ব্যাপক
ভোটার তালিকায় মৃত হিসেবে চিহ্নিত হলে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক হয়ে যায়। ফলে এখন এমন কারও পক্ষে মোবাইল সিম কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্টের আবেদন, বিদেশ যাত্রা, টিকার নিবন্ধন, চাকরিতে আবেদনসহ সরকারি অনেক সেবাই গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এমনকি ব্যবসা করতে ট্রেড লাইসেন্সও করা যাবে না।
বহু মানুষ বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধাও পাচ্ছেন না তালিকায় মৃত থাকায়। যাদের এই সমস্যা আছে এবং এতদিন যারা ভাতা পেতেন হাতে হাতে, তাদের ভাতাও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা যাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সরাসরি। কিন্তু তারা কেউ সিম কিনতে পারবেন না, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও চালু করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, আমদানি করা যত পণ্য ছিল সব আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত সেটা আমরা খাতভিত্তিক নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছি।
রোববার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রত্যেকটা অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এখানে কারো কোনও ব্যত্যয় আছে কিনা সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উপদেষ্ট আরো বলেন, আমাদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগুনের পূর্ববর্তী এবং বর্তমান অবস্থান পুরো ঘটনা অনুসন্ধান করবে। তারপর অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব তদন্ত সংস্থার সবাইকে একত্র করে এ রহস্য উদঘাটন করব।
তিনি বলেন, এখন যেসব পণ্য আসছে, কার্গো থেকে এসব পণ্য সরবরাহে যাতে কোনও জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আগামী সাতদিন ২৪ ঘণ্টা করে কাজ করবো। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ইন্সুরেন্স কভারেজ কী আছে এবং আমাদের বিমানবন্দরের ইন্সুরেন্স কাভারেজ কী আছে সবকিছু আমলে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হব।
তিনি বলেন, গতকালকে ২১টির মত ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে। এসব ফ্লাইটের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগামী তিন দিন অতিরিক্ত ফ্লাইটের সব ধরনের চার্জ মওকুফ করেছে সরকার।
বিদেশ যেতে না পেরে ক্ষোভে মাইক ভাড়া করে পুরো এলাকাবাসীকে গালাগাল করেছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার এক যুবক। পরে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামে। ওই যুবকের নাম সারোয়ার হোসেন রাব্বি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তিনি বিদেশ যেতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাব্বি বিভিন্ন এনজিও ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কেউ সহযোগিতা না করায় তার মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে তিনি ক্ষোভের বশে ৫০০ টাকা খরচ করে একটি মাইক ভাড়া নেন এবং পুরো গ্রামজুড়ে মাইকযোগে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে গালাগাল করেন।
পরে তিনি গালাগালের ভিডিও নিজ ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন। ভিডিওতে রাব্বি অভিযোগ করেন, তিন-চার মাস ধরে সৌদি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও মাত্র এক লাখ টাকা জোগাড় করতে না পারায় তার ভিসা ও মেডিকেল মেয়াদ (৩০ অক্টোবর) শেষ হতে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সমিতির কাছে ঋণ চাইলেও কেউ সহযোগিতা করেনি। এমনকি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকেও লোন নিতে গেলে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
রাব্বি বলেন, “মানুষের কারণে আগেও দু’বার আমার ভিসা নষ্ট হয়েছে। এবারও কেউ সাহায্য করল না। তাই রাগের মাথায় ভুল করেছি।”
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেনন “প্রথমে ক্ষমা চাইছি। আমি অনেক খারাপ ভাষায় গালাগাল করেছি। আমি কেন এমন করেছি, শুনুন।”
রাব্বি জানান, তিনি বিবাহিত এবং এক ছোট সন্তানের পিতা। জীবিকার তাগিদে তিনি অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি বিকাশের কাজ করেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীরা প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও পরে ভিডিওটি ভাইরাল হলে অনেকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন। কেউ কেউ আবার রাব্বির মানসিক কষ্ট ও পারিবারিক চাপের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তবে এখন চায়ের দোকান থেকে ঘরোয়া আড্ডা সব জায়গায় রাব্বির ঘটনাই আলোচনার বিষয়।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম স্বৈরাচারের মতো, তাদের রিমোট কন্ট্রোল অন্যের হাতে।
রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে শাপলা অর্জন করা হবে। মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাদের মতো আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। গণবিশ্বাসী ও জনবান্ধব আচরণ হওয়া উচিত ছিল।
এনসিপির এ নেতা বলেন, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার মতো বর্তমান কমিশনের কোনো যোগ্যতা নেই। নুরুল হুদার মতো পরিণতি যাতে না হয় এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপির আবেদন বারবারই নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নিরাপদ ও দখলমুক্ত সড়কের দাবিতে ফার্মগেটে বিক্ষোভ করেছে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও সরকারি সাইন্স হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে প্রথমে মানববন্ধন করে। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের স্কুল ও কলেজের সামনে অটোরিকশাগুলো জ্যাম তৈরি করে। গেটের সামনে রিকশাগুলো লাইন ধরে থাকে। এই এলাকায় স্কুল, কলেজ ও বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে পারাপার করতে হয়। অটোরিকশা একটার পর একটা থাকায় জ্যাম সৃষ্টি করে। রাস্তা পারাপারের সমস্যা হয়। রাস্তা যখন ফাঁকা থাকে, তখন তারা ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালায়। অটোরিকশার যে ব্রেক, তা দিয়ে কন্ট্রোল করা সম্ভব না। অনেক সময় তারা শিক্ষার্থীর উপরে রিকশা তুলে দেয়। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হতে হয়।
পাঁচ দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনের সড়কে অবিলম্বে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করতে হবে। পর্যাপ্ত ল্যাম্প পোস্ট লাগাতে হবে। লেন ডিভাইডার এবং ট্রাফিক আইল্যান্ড স্থাপন করতে হবে। ফুটপাথ থেকে সব অবৈধ দোকান, অস্থায়ী স্থাপনা, পার্কিং স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে হবে।
বাড়িভাড়ার ৫ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পরপরই এ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার প্রজ্ঞাপন আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় শহিদ মিনারে ৮ম দিনের মতো অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে দুপুর ১২টায় শিক্ষাভবন অভিমুখে ভুখা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ, মেডিকেল ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
এর আগে এদিন সকালে বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এবং সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বৃদ্ধিতে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ।
উপসচিব মিতু মরিয়মের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, ৬ শর্ত পালন সাপেক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়া হবে। আদেশ আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং গেটের কার্গো ভিলেজ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ২১ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ধ্বংসস্তূপ ভবনে এখনও পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টার পরও এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, আগুন এখনও পুরোপুরি নির্বাপণে আসেনি। এজন্য ধোঁয়া উড়ছে। তবে আমাদের ২২ ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ করছে। আগুন যেন বাড়তে না পারে সেজন্য অনবরত পানি ছিটানো হচ্ছে।
এদিকে, সকাল থেকেই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসছেন ভুক্তভোগীরা। উৎসুক জনতার ভিড়ও দেখা গেছে। তবে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টে কর্মরত রেজাউল করিম রনি বলেন, শুক্র-শনিবার আমদানি বন্ধ থাকে। কিন্তু রপ্তানি সবসময় খোলা থাকে। সেই সুবাদে শনিবার দিন সকালে আমি এক্সপোর্ট করতে আসি। বৃহস্পতিবার আমরা টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্তু মালামাল নিতে পারিনি। রোববার নেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগুনের প্রভাব পড়বে দেশের তৈরি পোশাক কারখানায়। কারণ এখানে এমন পণ্য সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে শনিবার বা ছুটির দিন এমন ঘটনা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এছাড়া আগুনে হাজারও কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। একইসঙ্গে কাজ করেন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ-আনসার সদস্যরা।
সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটি মূলত পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি জায়গায় বা আট নম্বর গেটের পাশে। আর আগুন লেগেছে আমদানির কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে। এখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয়। আগুনে এখানকার প্রায় সব মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ভয়াবহ আগুনের কারণে বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ঢাকার বদলে সব বিমান চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি ফ্লাইট সিলেটে, চেন্নাই ও দিল্লি থেকে দুটি ফ্লাইট কলকাতায় অবতরণ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রাত ৯টার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়। তবে ছয় ঘণ্টায় ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।
তথ্য মতে, আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটার, সিভিল অ্যাভিয়েশন, আনসারসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আনসার সদস্যই রয়েছেন ২৫ জন। তাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিমানবন্দরের সূত্রমতে, তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমদানি করা বিপুল পরিমাণ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল আগুন লাগা ভবনে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগেছে। কবে নাগাদ ফের কার্গো ভিলেজ চালু করা যাবে তা পরে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারে মিষ্টির বক্সের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিরোধের জেরে টর্চলাইট জ্বালিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের ইমামবাড়ি বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ১০ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার সন্দলপুর গ্রামের আমির উদ্দিনের মালিকানাধীন নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারের ‘ভাই ভাই হোটেল’ থেকে কালিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সাদমান আহমেদ ইমন মিষ্টি ক্রয় করেন। মিষ্টির বক্সে অতিরিক্ত ওজন ধরা পড়লে ইমন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। এতে হোটেল মালিকপক্ষ ও ইমন মিয়ার পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় টর্চলাইট জ্বালিয়ে চলে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারজুড়ে টর্চের আলো আর চিৎকারে আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী।
মন্তব্য