মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের প্রায় ৭৪ বছর বয়সী রবগুল মণ্ডল। কানে শোনেন না।
বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। এত দিন টাকা তুলতেন হাতে হাতে। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে টাকা যাবে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ভাতার টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।
রবগুলের মোবাইল ফোন আছে। ভাতা আসবে বলে ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগবে কেবল স্মার্টকার্ড। আর এই কার্ড আনতে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে এসে আক্কেলগুড়ুম। তিনি নাকি মৃত!
তার সঙ্গে কার্ড নিতে আসা মুর্শিদা খাতুনেরও একই সমস্যা। তিনিও কাগজকলমে মৃত।
দুইজন জলজ্যান্ত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু মানতেই চাইছেন না নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
মুর্শিদা দুইবার ভোট দিতে পারেননি। অন্যদিকে বরগুলের দুশ্চিন্তা ভাতার টাকার কী হবে?
তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কর্মকর্তাদের সামনে, তার পরে আর কীভাবে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে, ভেবে পাচ্ছেন না দুইজন।
গাংনী উপজেলায় ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় আরও ৬ জন মানুষ পাওয়া গেছে, এদের মতো। তারা কাগজকলমে মৃত।
রবগুল মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৭১৪৭২১৩৭৭১৯১। অভাবের সংসার। ছেলেরা যার যার মতো আলাদা থাকে। এই বয়সে টুকটাক যা কিছু আয় করেন, তার সঙ্গে বয়স্ক ভাতার টাকাটা যোগ হওয়ায় দিন কেটে যায় কোনোভাবে।
স্মার্টকার্ড নিতে এসে নিজেকে মৃত দেখে হতাশবদনে তিনি বসেছিলেন নির্বাচন অফিসের পাশে আমগাছের নিচে।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা আমি মূর্খ মানুষ। বুঝতে পারছিনি। দেখো তো বাপ। আমার আইডি কাডে নাকি আমি মরে গেছি। এখন কোথায় গেলে এইডি ঠিক করা হবে? তা না হলে আমার ভাতা যে বন্ধ হয়ি যাবে।’
সঙ্গে বসে থাকা মুর্শিদা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৭১৪৭২১৩৭৬৩৩১। তিনিও রবগুল মণ্ডলের গ্রামেরই মানুষ। তার সঙ্গেই এসেছিলেন স্মার্টকার্ড নিতে।
তিনি বলেন, ‘হায়রে ডিজিটাল! তাজা মানুষ আমি, আমাকে মৃত ঘোষণা করে দিল! ‘আমি মেয়ে মানুষ। এখন কোথায় দৌড়াব, কার কাছেই বা যাব এইতা ঠিক করতে?’
কিছুদিন আগে একই সমস্যায় পড়েন বামন্দী ইউনিয়নের ৮৫ বছর বয়সী মরজ্জেম আলী এবং মটমুড়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ৭১ বছর বয়সী মুনসুর আলী। তারাও বয়স্ক ভাতা পেতেন। কিন্তু এখন আর আসবে না।
সমাধানের পথ খুঁজতে অফিস ও জনপ্রতিনিধিনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
কীভাবে এই সমস্যা?
গাংনী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে এমনটি হতে পারে মৃত মানুষের নামের পাশে তথ্য সংগ্রহের সময় ভুলের কারণে জীবিত মানুষের নাম বসে গেছে।’
তিনি নিজেই জানান, এমন সমস্যায় ভুগছেন গাংনী উপজেলায় ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৬ জন।
ভোটার তালিকা করার সময় তথ্য সংগ্রহের কাজে তত্ত্বাবধায়ক পদে কাজ করেছিলেন মাহাবুব হক। তিনি বলেছেন, তথ্য সংগ্রহকারীদের কাজে ফাঁকির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার অধীনে থাকা ওয়ার্ডভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত তথ্য সরবরাহকারীরা যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করত, তখন তারা একটি নির্দিষ্ট ফরমে থাকা প্রতিটি ঘর পূরণ করে তাদের সই নিয়ে নিত। একাধিকবার বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেলে তার পক্ষে অন্য কেউ ফরম পূরণ করে দিত। তবে এখন কী হয় জানি না।’
ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সংগ্রহের কাজে কর্মরত সজিবুল হক অবশ্য একে নির্বাচন কমিশন অফিসের ভুল হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সার্ভারের সমস্যার কারণে তথ্য ভুল দেখায়। সে ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে।’
ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বসবাসকারী একাধিক নাগরিকের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। আমি তাদের জীবিত হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দিতে পারি। কিন্তু বাকি কাজ তো নির্বাচন অফিসের। তবে এই ভুলগুলো তথ্য সংগ্রহকারীদের না নির্বাচন কমিশন অফিসের, এটা সঠিকভাবে বলা কঠিন।’
সমাধান জানেন না খোদ নির্বাচন কর্মকর্তা
এখন এই মানুষদের কী হবে?
গাংনী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এটি সংশোধনযোগ্য, তবে সময়সাপেক্ষ।’
তবে সময়সাপেক্ষ সেই প্রক্রিয়া কী, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিস্তারিত বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সংশোধনী বন্ধ রয়েছে। লকডাউন শেষে নির্বাচন অফিসে আবেদন করলে আবেদন করার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তা সংশোধন করা সম্ভব। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আবেদন করেছেন তাদেরগুলো সংশোধনীর কাজ চলমান রয়েছে।
তবে আবেদনের ৯ বছরেও মৃতের তালিকা থেকে নাম কাটতে না পারার উদাহরণও আছে।
সমস্যা জেলায় জেলায়
নেত্রকোণার মদন পৌরসভার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের আব্দুল আওয়াল ৯ বছর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যে মৃত ছিলেন। আউয়াল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রতিনিধি। নির্বাচন অফিসের তথ্যে তার মৃত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
৯ বছর ধরে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া এই গণমাধ্যমকর্মীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অবশ্য কয়েক দিনের মধ্যেই ভুল সংশোধন হয়ে যায়। এপ্রিলের শেষে মৃতের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
তার মতো বাবা-ছেলেসহ জীবিত আরও চারজনের ‘মৃত’ থাকার তথ্য মিলেছে। তারাও চান শিগগির ‘জীবিত’ হতে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নির্বাচন অফিসে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত।
এই চারজন হলেন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেশজানী গ্রামের রামকৃষ্ণ দেবনাথ, তার ছেলে প্রভাত চন্দ্র দেবনাথ এবং মদন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসাটিয়া গ্রামের হাবিবুল রহমান ও মদন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িভাদেরা গ্রামের মোসা. রেজিয়া আক্তার।
রামকৃষ্ণ দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছেলেডারে সাথে নিয়া নির্বাচন অফিসে গেছিলাম। তারা কইছে, আমরা বাপপুতেরে মৃত ঘোষণা করা অইছে। তালিকায় নাম নাই। অফিসের লোকেরা আমারে ও আমার ছেলেরে দেখে অবাক অইয়া যায়। আমি ও আমার ছেলে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আবেদন করছি।
‘চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ ছয় ধরনের দরকারিসহ কাগজ দিছি। বারবার যাইতাছি। কিন্তু এখনও সুরাহা পাই নাই। আমি ভোট দিতাম পারতাছি না। শিগগিরই আমরার আইডি কার্ড ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।’
হাবিবুল রহমান আবেদন করেছেন ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট আর মোসা. রেজিয়া আক্তার ২০১৯ সালের ২৩ জুন।
লালমনিরহাটে একজন স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ১৯ জন জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
তাদের একজন হলেন আদিতনারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী কান্ত রায়।
তিনি সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তালিকায় মৃত থাকায় গত মার্চে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছিলেন না এই শিক্ষক। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাদের আইডি আবার সচল হয়।
সংখ্যাটি কয়েক লাখ
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭১ জন মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ পরবর্তী সময়ে নিজেদের জীবিত বলে দাবি করেন।
এ রকম জীবন্মৃত কয়েক লাখ মানুষের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো সহজ সমাধান নেই।
প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করলেও সেই ভূতুড়ে বিষয় দূর হচ্ছে না। এখনও প্রতি বছর অনেক জীবিত ব্যক্তি ভোটার তালিকায় ‘মারা পড়ছেন’।
নির্বাচন কমিশন এখন দায় চাপাচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারী আর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া করা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ওপর।
প্রভাব ব্যাপক
ভোটার তালিকায় মৃত হিসেবে চিহ্নিত হলে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক হয়ে যায়। ফলে এখন এমন কারও পক্ষে মোবাইল সিম কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্টের আবেদন, বিদেশ যাত্রা, টিকার নিবন্ধন, চাকরিতে আবেদনসহ সরকারি অনেক সেবাই গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এমনকি ব্যবসা করতে ট্রেড লাইসেন্সও করা যাবে না।
বহু মানুষ বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধাও পাচ্ছেন না তালিকায় মৃত থাকায়। যাদের এই সমস্যা আছে এবং এতদিন যারা ভাতা পেতেন হাতে হাতে, তাদের ভাতাও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা যাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সরাসরি। কিন্তু তারা কেউ সিম কিনতে পারবেন না, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও চালু করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুক্রবার এ কথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউজে উভয় নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বহু বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষদের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এদিন গভর্নমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অফ অনার প্রদানকালে থাই প্রধানমন্ত্রী সাথে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। তিনি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতাকে অসময়ে হত্যা করা হলেও ‘তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং সে কারণেই আমি তার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সাথে কথা বলবেন।
মন্তব্য