মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের প্রায় ৭৪ বছর বয়সী রবগুল মণ্ডল। কানে শোনেন না।
বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। এত দিন টাকা তুলতেন হাতে হাতে। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে টাকা যাবে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ভাতার টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।
রবগুলের মোবাইল ফোন আছে। ভাতা আসবে বলে ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগবে কেবল স্মার্টকার্ড। আর এই কার্ড আনতে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে এসে আক্কেলগুড়ুম। তিনি নাকি মৃত!
তার সঙ্গে কার্ড নিতে আসা মুর্শিদা খাতুনেরও একই সমস্যা। তিনিও কাগজকলমে মৃত।
দুইজন জলজ্যান্ত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু মানতেই চাইছেন না নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
মুর্শিদা দুইবার ভোট দিতে পারেননি। অন্যদিকে বরগুলের দুশ্চিন্তা ভাতার টাকার কী হবে?
তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কর্মকর্তাদের সামনে, তার পরে আর কীভাবে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে, ভেবে পাচ্ছেন না দুইজন।
গাংনী উপজেলায় ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় আরও ৬ জন মানুষ পাওয়া গেছে, এদের মতো। তারা কাগজকলমে মৃত।
রবগুল মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৭১৪৭২১৩৭৭১৯১। অভাবের সংসার। ছেলেরা যার যার মতো আলাদা থাকে। এই বয়সে টুকটাক যা কিছু আয় করেন, তার সঙ্গে বয়স্ক ভাতার টাকাটা যোগ হওয়ায় দিন কেটে যায় কোনোভাবে।
স্মার্টকার্ড নিতে এসে নিজেকে মৃত দেখে হতাশবদনে তিনি বসেছিলেন নির্বাচন অফিসের পাশে আমগাছের নিচে।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা আমি মূর্খ মানুষ। বুঝতে পারছিনি। দেখো তো বাপ। আমার আইডি কাডে নাকি আমি মরে গেছি। এখন কোথায় গেলে এইডি ঠিক করা হবে? তা না হলে আমার ভাতা যে বন্ধ হয়ি যাবে।’
সঙ্গে বসে থাকা মুর্শিদা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৭১৪৭২১৩৭৬৩৩১। তিনিও রবগুল মণ্ডলের গ্রামেরই মানুষ। তার সঙ্গেই এসেছিলেন স্মার্টকার্ড নিতে।
তিনি বলেন, ‘হায়রে ডিজিটাল! তাজা মানুষ আমি, আমাকে মৃত ঘোষণা করে দিল! ‘আমি মেয়ে মানুষ। এখন কোথায় দৌড়াব, কার কাছেই বা যাব এইতা ঠিক করতে?’
কিছুদিন আগে একই সমস্যায় পড়েন বামন্দী ইউনিয়নের ৮৫ বছর বয়সী মরজ্জেম আলী এবং মটমুড়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ৭১ বছর বয়সী মুনসুর আলী। তারাও বয়স্ক ভাতা পেতেন। কিন্তু এখন আর আসবে না।
সমাধানের পথ খুঁজতে অফিস ও জনপ্রতিনিধিনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
কীভাবে এই সমস্যা?
গাংনী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে এমনটি হতে পারে মৃত মানুষের নামের পাশে তথ্য সংগ্রহের সময় ভুলের কারণে জীবিত মানুষের নাম বসে গেছে।’
তিনি নিজেই জানান, এমন সমস্যায় ভুগছেন গাংনী উপজেলায় ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৬ জন।
ভোটার তালিকা করার সময় তথ্য সংগ্রহের কাজে তত্ত্বাবধায়ক পদে কাজ করেছিলেন মাহাবুব হক। তিনি বলেছেন, তথ্য সংগ্রহকারীদের কাজে ফাঁকির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার অধীনে থাকা ওয়ার্ডভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত তথ্য সরবরাহকারীরা যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করত, তখন তারা একটি নির্দিষ্ট ফরমে থাকা প্রতিটি ঘর পূরণ করে তাদের সই নিয়ে নিত। একাধিকবার বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেলে তার পক্ষে অন্য কেউ ফরম পূরণ করে দিত। তবে এখন কী হয় জানি না।’
ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সংগ্রহের কাজে কর্মরত সজিবুল হক অবশ্য একে নির্বাচন কমিশন অফিসের ভুল হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সার্ভারের সমস্যার কারণে তথ্য ভুল দেখায়। সে ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে।’
ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বসবাসকারী একাধিক নাগরিকের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। আমি তাদের জীবিত হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দিতে পারি। কিন্তু বাকি কাজ তো নির্বাচন অফিসের। তবে এই ভুলগুলো তথ্য সংগ্রহকারীদের না নির্বাচন কমিশন অফিসের, এটা সঠিকভাবে বলা কঠিন।’
সমাধান জানেন না খোদ নির্বাচন কর্মকর্তা
এখন এই মানুষদের কী হবে?
গাংনী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এটি সংশোধনযোগ্য, তবে সময়সাপেক্ষ।’
তবে সময়সাপেক্ষ সেই প্রক্রিয়া কী, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিস্তারিত বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সংশোধনী বন্ধ রয়েছে। লকডাউন শেষে নির্বাচন অফিসে আবেদন করলে আবেদন করার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তা সংশোধন করা সম্ভব। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আবেদন করেছেন তাদেরগুলো সংশোধনীর কাজ চলমান রয়েছে।
তবে আবেদনের ৯ বছরেও মৃতের তালিকা থেকে নাম কাটতে না পারার উদাহরণও আছে।
সমস্যা জেলায় জেলায়
নেত্রকোণার মদন পৌরসভার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের আব্দুল আওয়াল ৯ বছর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যে মৃত ছিলেন। আউয়াল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রতিনিধি। নির্বাচন অফিসের তথ্যে তার মৃত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
৯ বছর ধরে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া এই গণমাধ্যমকর্মীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অবশ্য কয়েক দিনের মধ্যেই ভুল সংশোধন হয়ে যায়। এপ্রিলের শেষে মৃতের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
তার মতো বাবা-ছেলেসহ জীবিত আরও চারজনের ‘মৃত’ থাকার তথ্য মিলেছে। তারাও চান শিগগির ‘জীবিত’ হতে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নির্বাচন অফিসে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত।
এই চারজন হলেন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেশজানী গ্রামের রামকৃষ্ণ দেবনাথ, তার ছেলে প্রভাত চন্দ্র দেবনাথ এবং মদন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসাটিয়া গ্রামের হাবিবুল রহমান ও মদন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িভাদেরা গ্রামের মোসা. রেজিয়া আক্তার।
রামকৃষ্ণ দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছেলেডারে সাথে নিয়া নির্বাচন অফিসে গেছিলাম। তারা কইছে, আমরা বাপপুতেরে মৃত ঘোষণা করা অইছে। তালিকায় নাম নাই। অফিসের লোকেরা আমারে ও আমার ছেলেরে দেখে অবাক অইয়া যায়। আমি ও আমার ছেলে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আবেদন করছি।
‘চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ ছয় ধরনের দরকারিসহ কাগজ দিছি। বারবার যাইতাছি। কিন্তু এখনও সুরাহা পাই নাই। আমি ভোট দিতাম পারতাছি না। শিগগিরই আমরার আইডি কার্ড ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।’
হাবিবুল রহমান আবেদন করেছেন ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট আর মোসা. রেজিয়া আক্তার ২০১৯ সালের ২৩ জুন।
লালমনিরহাটে একজন স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ১৯ জন জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
তাদের একজন হলেন আদিতনারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী কান্ত রায়।
তিনি সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তালিকায় মৃত থাকায় গত মার্চে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছিলেন না এই শিক্ষক। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাদের আইডি আবার সচল হয়।
সংখ্যাটি কয়েক লাখ
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭১ জন মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ পরবর্তী সময়ে নিজেদের জীবিত বলে দাবি করেন।
এ রকম জীবন্মৃত কয়েক লাখ মানুষের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো সহজ সমাধান নেই।
প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করলেও সেই ভূতুড়ে বিষয় দূর হচ্ছে না। এখনও প্রতি বছর অনেক জীবিত ব্যক্তি ভোটার তালিকায় ‘মারা পড়ছেন’।
নির্বাচন কমিশন এখন দায় চাপাচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারী আর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া করা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ওপর।
প্রভাব ব্যাপক
ভোটার তালিকায় মৃত হিসেবে চিহ্নিত হলে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক হয়ে যায়। ফলে এখন এমন কারও পক্ষে মোবাইল সিম কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্টের আবেদন, বিদেশ যাত্রা, টিকার নিবন্ধন, চাকরিতে আবেদনসহ সরকারি অনেক সেবাই গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এমনকি ব্যবসা করতে ট্রেড লাইসেন্সও করা যাবে না।
বহু মানুষ বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধাও পাচ্ছেন না তালিকায় মৃত থাকায়। যাদের এই সমস্যা আছে এবং এতদিন যারা ভাতা পেতেন হাতে হাতে, তাদের ভাতাও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা যাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সরাসরি। কিন্তু তারা কেউ সিম কিনতে পারবেন না, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও চালু করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে এক হাজার কেজি হাড়িভাঙ্গা আম পাঠাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার (১৫ জুলাই) এই আমের চালানটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছাবে।
নয়াদিল্লি পৌঁছানোর পর আমগুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, কূটনীতিক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিতরণ করা হবে— মৈত্রীর অংশ হিসেবে।
এছাড়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আম পাঠাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ সেখানকার বিশিষ্টজনদের জন্য ৩০০ কেজি হাড়িভাঙ্গা আম উপহার পাঠানো হয়। আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ৬০টি কার্টনে এসব আম পাঠানো হয়।
প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার মৌসুমি উপহার হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আমসহ বিভিন্ন ফল পাঠিয়ে থাকে। এর জবাবে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারও উপহার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য পাঠায় বিখ্যাত রসালো ‘কুইন’ জাতের আনারস।
চলতি বছরের আম উপহার পাঠানোর কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এটি রপ্তানিকারকের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন, আগরতলার কর্মকর্তাদের কাছে উপহারের চালানটি হস্তান্তর করা হয়।
এই উদ্যোগকে ‘আম কূটনীতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, যা আগের প্রশাসনের সময়েও চলমান ছিল। এখনো এটি সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শুভেচ্ছার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বিষয়ে ঐক্য গড়ে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ তৈরির লক্ষ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় দফার দ্বাদশ দিনের মত আনুষ্ঠানিকভাবে এ আলোচনা শুরু হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচনার সূচিতে প্রাধান্য পাচ্ছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগবিধি ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা।
এর আগে, উল্লেখ্য তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পূর্বের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আজ অধিকতর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বরাবরের মতো আজকেও আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সংলাপ শুরু হওয়ার আগে সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু আপনারা রাজনৈতিক দল করেন, সেহেতু সব বিষয়ে আপনাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনাদের প্রতি অনুরোধ, একটি মাঝামাঝি স্থানে এসে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
পরবর্তীতে যদি জনগণের কাছ থেকে আপনারা প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, তাহলে সেটি পরিবর্তন করতে পারেন এবং সেটি জনগণের রায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।
কিন্তু কমিশন মনে করছে, একটি পর্যায়ে আসা ভালো।
তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদের বক্তব্যকে গুরুত্বহীন মনে করছি না, বরং আমরা চাচ্ছি সকলে একটি ঐক্যমতে পৌঁছাক। চাইলেই এ আলোচনা বাদ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাতে বিদ্যমান পরিস্থিতিই থেকে যাবে। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে- এই বিবেচনাটা যদি আপনারা করেন, তাহলে আমাদের পক্ষে ঐকমত্য গঠন করা সম্ভব।
তিনি সকলের প্রতি কিছুটা ছাড় দিয়ে ও কিছুটা অবস্থান পরিবর্তন করে একটি জায়গায় আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা অবস্থার পরিবর্তন করে হলেও এগিয়ে আসুন। না হলে আমরা যেখানে আছি, সেখানেই থেকে যাব। গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে এইটুকু বিবেচনা করুন যে, এটা সম্ভব কি-না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
এর আগে, দফায় দফায় বৈঠকে কমিশন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণকল্পে স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, আলোচনা শেষে ব্রিফ করবেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ত্রাস খ্যাত শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে কক্সবাজার আদালতের হাজতে মুঠোফোন সুবিধা দেয়ার ঘটনায় দুই টিএসআই সহ ৫ জনকে দায়িত্ব অবহেলার দায়ে পুলিশ লাইন্স এ সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়া কোর্ট হাজতে আসামিদের সাথে সাক্ষাৎতের বিষয়ে আরও সর্তক হওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্লোজড হওয়াদের দুই টিএসআই, তিনজন কনস্টেবল। তারা হলেন টিএসআই সুরেন দত্ত, আবদুল ওয়াহেদ, কনস্টেবল নাজম হায়দার, গোলাম।মোস্তফা ও ইয়াছিন নূর।
এর আগে এই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যোর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত বুধবার (৯ জুন) আদালতে হাজিরা দিতে কোর্ট পুলিশের হেফাজতে হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয় শাহীনকে। ঠিক তখনই তার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন নজরে আসে কক্সবাজারের গণমাধ্যমকর্মী দের চোখে। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে গঠিত হয় তদন্ত কমিুট।
জানা গেছে, গত ৫ জুন সকালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য শাকের আহমদের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় শাহীন ডাকাতকে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদকসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
কক্সবাজার আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. গোলাম জিলানী ক্লোজড'র বিষয়টি স্বীকার করেন।
‘মন মোর মেঘেরও সঙ্গী’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে নওগাঁয় উদযাপিত হলো বর্ষা উৎসব-১৪৩২।
শনবিার (১২ জুলাই) রাত ৮টায় শহরের প্যারিমোহন লাইব্রেরী গ্রন্থাগারে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই বর্ষা উৎসব। শুরুতে দলীয় গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উৎসব। পরে একে একে গান, নাচ, আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
এছাড়াও বর্ষাকথনসহ অন্যান্য আয়োজনের মাধমে রাত ১০টায় শেষ হয় এই বর্ষা বরণ উৎসবটি। বর্ষা বরণ উৎসবের আয়োজন করেন ‘নওগাঁ সাংস্কৃতিক ঐক্য’ নামে একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন সংগঠনটির সভাপতি মনোয়ার লিটন ও সাধারন সম্পাদক মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ।
অনুষ্ঠানে নাচ, গান আর কবিতা আবৃত্তি ও বর্ষাকথনে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসে গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষার আবেদনের কথা। শিল্পীদের এমন পরিবেশনায় বর্ষা বন্দনায় মেতে ওঠে স্থানীয় শিল্পী এবং সংস্কৃতি কর্মীরা।
আয়োজকরা জানান, বর্ষা উৎসব উদযাপন করার মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়। এছাড়াও প্রজন্মের সাথে প্রজন্মের মিল বন্ধন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও শহরের যান্ত্রিক জীবনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যর ধারনা দিতে এমন উৎসবের আয়োজন।
নওগাঁ সাংস্কৃতিক ঐক্য সংগঠনটির সভাপতি মনোয়ার লিটন বলেন, বর্ষা আবহমান বাংলার শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বর্ষার সাথে বাংলার মানুষের সম্পর্ক বহু প্রাচীন। বর্ষায় প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। প্রচন্ড খরতাপের পর বর্ষা এলে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। সাহিত্যের পরতে পরতে বর্ষা যেমন উদ্ভাসিত তেমই যাপিত জীবনেও বর্ষা এনে দেয় নিজেকে খুজে পাওয়ার মূহুর্ত। গ্রীষ্মের ধূলোমলিনতা ধুয়ে প্রকৃতি সবুজের সমারোহে সাজে। জীর্ণতা ধুয়ে মুছে, নব-যৌবন আর শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিক এবারের বর্ষা এমনি প্রত্যাশার কথা বলেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নবীনগর-কোম্পানিগঞ্জ রোড়ের পৌর এলাকার আলীয়াবাদ বাজারে সড়কের পাশে মাটির চাপে ড্রেইন ভেঙে গিয়ে মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
জানা যায়- জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে নবীনগর- কোম্পানিগঞ্জ সড়কের আলীয়াবাদ বাজারে সড়কের পাশের ড্রেইটি ভেঙে যাওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সড়কটি। ঝুঁকি নিয়েই এ সড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করে নবীগর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যানবহন। তাই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ সড়ক যাতায়াতকারী যাত্রীদের। আলীয়াবাদ বাজারে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- পৌরসভার এ ড্রেইনটি দিয়ে আলীয়াবাদ গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ফলে ওই এলাকায় তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অবিলম্বে ড্রেইনটি নির্মাণ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল ও ফাটল ধরে যাওয়া সড়কের কাজ দ্রুত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান- প্রতিদিন পৌর এলাকারসহ আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ আসে এ বাজারে। এ ড্রেইনটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। পরিবহণ শ্রমিকরা জানান- ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এ স্থানে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ড্রেনটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রতি দিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নবীনগর পৌরসভার প্রশাসক রাজীব চৌধুরী বলেন-"সড়কের মালিক সওজ, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে"।
চাঁদপুরে ‘রাসূল (সা.) বার্তা বাহক’ এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে খতিবের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি বিল্লাল হোসেনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
শনিবার (১২ জুলাই) তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি। এরপর আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, শুক্রবার (১১ জুলাই) এই ঘটনায় আহত খতিব মাওলানা আ ন ম নুরুর রহমান মাদানীর ছেলে আফনান তাকি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
এসব তথ্য ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি আব্দুল কাদের খান ও জেলা জজ আদালতের এপিপি ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।
চাঁদপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শহীদুল্লাহ ইউএনবিকে জানান, শনিবার বিকাল ৩টার দিকে আসামিকে আদালতে আনা হয়। এরপর আসামি বিচারকের কাছে জবানবন্দী দেন। জবানবন্দী শেষে বিকালে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন— চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হোসেন।
এদিকে, শনিবার দুপুর থেকে একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায়, খতিব নুরুর রহমান মাদানী মারা গেছেন।
তবে মামলার বাদী আহত খাতিবের ছেলে আফনান তাকী জানান, তারা বাবা প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ঢাকা হলি কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং শঙ্কামুক্ত আছেন।
গুরুতর আহত খতিব মাওলানা নূরুর রহমান মাদানী শহরের গুনরাজদী এলাকার বাসিন্দা। তিনি মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে প্রায় শুক্রবার খুতবা দেন।
অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মনোহর খাদি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। শহরের বকুলতলায় বসবাস করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বাদ জুমা মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে হামলার শিকার হন মাওলানা নূরুর রহমান মাদানী। আগেই জুম্মার নামাজে আলোচনা ও খুতবা নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন ওই এলাকার ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। ঘটনার দিন নামাজ শেষে তিনি মসজিদের ভেতরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র (চাপাতি) দিয়ে খতিবের ওপর হামলা চালান। এতে খতিবের কানে ও মাথায় মারাত্মক জখম হয়। পরবর্তীতে মুসল্লিরা তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ সময় হামলাকারী বিল্লাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করেন মুসল্লিরা।
এদিকে, এই ঘটনায় শহরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিকাল ৩টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
এ ছাড়া, বিকাল ৫টায় শহরের রেলওয়ে বায়তুল আমিন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর শহর শাখা।
গোলাকান্দাইলের হাটে এসেছেন শামীম মিয়া। তিনি বলেন, সারা বছর চাষের মাছ খেতে আর ভাল লাগে না। বর্ষাকালে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর দেশি মাছ রূপগঞ্জের হাট বাজারে পাওয়া যায়, তা কিনতেই হাটে আসা। আবুল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, নতুন পানির টাটকা মাছ খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে দাম একটু বেশি। এখন বর্ষাকাল। নতুন পানি এসেছে নদী-নালা, খাল-বিল, খেত, হাওর-বাঁওড়ে। মুক্ত জলাশয়ে এখন পাওয়া যাচ্ছে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছ। গ্রামগঞ্জ হয়ে এসব মাছ যাচ্ছে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে।
কায়েতপাড়া বাজারে শনিবার দেখা যায়, নীলাস্বরের দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী আলো মিয়া। ৬০০ টাকায় আধা কেজি ট্যাংরা, ১ হাজার টাকায় এক কেজি ওজনের একটি বোয়াল কেনেন তিনি।
বর্ষার এই মৌসুমে দেশি মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। গাউছিয়ার তাতবাজার এলকার কাঁচাবাজার থেকে বড় আকারে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু। এ ছাড়া এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি মাছ এবং ২ হাজার ৩০০ টাকা দরের ইলিশও কিনেছেন তিনি। মিঠু বলেন, দেশি মাছের দাম অনেক বেশি। বাসার লোকজন বাইল্যা মাছ খেতে চাচ্ছিল, দাম বেশি সত্ত্বেও এক কেজি কিনলেন।
বাজারে নানা প্রজাতির ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছও লক্ষণীয়। ভুলতা বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে অনেক মাছের মধ্যে একটি রুই মাছ পাওয়া গেল ১২ কেজি ওজনের। প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে এই মাছটি ১৯ হাজার ২০০ টাকা হাঁকাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর দোকানে চার কেজি ওজনের চিতলও ছিল। প্রতি কেজি এক হাজার টাকা করে চার হাজার টাকা দাম চান একটি চিতল মাছের। তাঁর কাছে ছয় কেজি ওজনের আইড় মাছও দেখা গেল। বাচ্চু মিয়া বলেন, নদীর মাছ এগুলো। সব সময় এমন মাছ পাওয়া যায় না। তাই দাম বেশি।
তাঁর পাশেই মাছ নিয়ে বসে ছিলেন মতিন। সাত কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাইছিলেন তিনি সাত হাজার টাকা। মতিনের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।
মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশ চড়া। বাজারভেদে ও আকারভেদে দেশীয় এসব দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পুঁটি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, মলা ৬০০ টাকা, পিয়ালি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, গুলশা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০, কাচকি ৮০০, শোল ১ হাজার টাকা, মাগুর ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০ থেকে ৫০০, পাবদা ৪০০, বাগাড় ১ হাজার টাকা, আইড় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় রুই ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কেজি।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদিত মোট মাছের ৫৯ শতাংশ চাষের। নদী, খাল, বিল, হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছ মোট উৎপাদনের মাত্র ১৫-১৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন কম। তা ছাড়া মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ বেশি। সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশি।
বর্ষার নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খেতে, বিলে, হাওরে, নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মেলে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, মিঠাপানির মাছ প্রায় ২৬১ প্রজাতির। এর মধ্যে বর্ষায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেখা যায়।
মুড়াপাড়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অল্প পানিতে কিছু মাছ থাকে। অনেক মাছ বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে পোনা খুব দ্রুত বড় হয়। বৃষ্টির কারণে বিল, খাল ও নদীর সংযোগ হওয়ায় মাছ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। মাছের প্রাচুর্য বাড়ে।
মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে অধিদপ্তর কাজ করছে। রূপগঞ্জে মাছের অভয়াশ্রম নেই বললেই চলে। এর আওতায় নদী বা খাল-বিলের গভীর অংশে মাছ ধরা নিষেধ থাকে সারা বছর। সেখানে মাছ তৈরি হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
মন্তব্য