সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ রয়েছে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার। ষাটের দশকে নির্মিত এসব বেড়িবাঁধ ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৯টি পয়েন্ট ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে জোয়ারের পানি। আম্পানের পরে এগুলো সংস্কার হলেও এখনও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ১৯টি পয়েন্ট।
শ্যামনগর উপজেলার সুভদ্রাকাটি গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতের একমাত্র পথ বেড়িবাঁধ। যা ভাঙতে ভাঙতে এক হাতের মধ্যে চলে এসেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আসলি আমাদের বিপদের শেষ থাকে না। না পারি কোথাও যেতে। আবার আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় উঠতি পারি না সেখানে।‘
সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী জানান, জেলার উপকূলীয় এলাকার সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠীকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে হয়। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ থাকতে পারেন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৪৫টি। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার মানুষকে ঠাঁই দেয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন এ রকম সংকট থাকলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।‘
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হওয়ার খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে ২৫ থেকে ২৭ মে দেশের উপকূলসহ ৩০টি জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তবে ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট রয়েছে। ৪০ হাজার মানুষের জন্য নূন্যতম ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে মাত্র দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ মোকাবিলায় যা একেবারে নগণ্য।’
এদিকে জেলায় সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, সাতক্ষীরায় দুপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৬.৫ সেন্টিগ্রেড। বাতাসের আর্দ্রতা রয়েছে ৫২ শতাংশ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এমন ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৫টি। আশ্রয়কেন্দ্রে সবাইকে জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, জেলায় ১৮৩ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এটি দিয়ে দুর্যোগের সময় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে। এ ছাড়া সহায়তা হিসেবে এসেছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া এলাকায় ৭৪ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া জাইকার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকার কাজও চলছে।’
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের জমা করা ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে পাস হলে বেড়িবাঁধ সংকট অনেকাংশে সমাধান হবে।’
পিরোজপুরে প্রস্তুত ৫৫৭ আশ্রয়কেন্দ্র
উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৫৭ আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ২৩৫টি এবং বাকি ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘হতাহতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় রাখতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে প্রতিটি ইউনিয়নে তাৎক্ষণিক আর্থিক সাহায্য দেয়ার জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘গোখাদ্য ও শিশুখাদ্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সতর্কবার্তা জারির কার্যক্রমও চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠনেরও প্রস্তুতি চলছে।’
এদিকে রোববার মঠবাড়িয়া উপজেলায় আধুনিক সুবিধাসহ তিনটি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, হোগলপাতি নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নে খায়েরঘটিচোরা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
ভোলায় প্রস্তুত ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় ভোলায় মাঠে কাজ করবে ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ।
রোববার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ইলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি স্পট ঠিক করা হয়েছে, যেখান থেকে ৩ লাখ ১৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হবে।’
করোনা ঠেকাতে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে ধারণক্ষমতার অর্ধেক
ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আশ্রয়কেন্দ্রের সক্ষমতার অর্ধেক মানুষকে একটি কেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘৯ উপজেলায় ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে পাঁচ লাখ লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রয়েছেন ৫ হাজার ৩২০ জন স্বেচ্ছাসেবক।
ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছার মানুষ। এর আগে আইলা, সিডর, ফণী, বুলবুল ও আম্পানে এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রামে প্রস্তুত ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ৫০০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী মজুত রয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, ‘ইয়াস নামের ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ বা ২৬ মে আঘাত হানতে পারে। এ জন্য ১ নম্বর দূরবর্তী বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় গো-খাদ্য কেনার জন্যে প্রতি উপজেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাসহ মাইকিং করা হচ্ছে।
জোয়ারের পানি বাড়ছে পায়রা নদীতে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী।
তিনি বলেন, ‘পায়রা নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার। কিন্তু রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পায়রা নদীর জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জোয়ারের চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
প্রকৌশলী হালিম সাহেলী জানান, জেলায় মোট বেড়িবাঁধ রয়েছে ১ হাজার ৩৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৬ কিলোমিটার। সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যেগুলোর সংস্কারকাজ চলছে।
ঘূর্ণিঝড় ৩৯১টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, পটুয়াখালী সদরে ১৯টি, দুমকিতে ৪৩, মির্জাগঞ্জে ২৭, বাউফলে ১৩৫, দশমিনায় ৫৭, গলাচিপায় ১০৭, কলাপাড়ায় ১৬০ এবং রাঙ্গাবালীতে ৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পটুয়াখালীতে মোট ৯৩টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় প্রয়োজনীয় খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ওষুধ মজুত রাখা আছে।
পটুয়াখালী নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন খান জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে ৬৫ ফুটের নিচে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকাগামী দোতলা লঞ্চ চলবে। সে ক্ষেত্রে পরে নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সহযোগিতার জন্য ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘ইয়াস’ আতঙ্কে সুন্দরবনের উপকূলবাসী
সিডর, আইলা, আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার জেলে ও বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক এখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার ভারতের উড়িষ্যার উপকূল ও বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের পাশের উপজেলা শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
বাগেরহাট ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খাদিজা আক্তার বলেন, ‘জেলার ৭৫টি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা ও তিনটি পৌরসভায় ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় শিশুখাদ্যের জন্য এক লাখ ও গোখাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৬টি মেডিক্যাল টিম।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-আতঙ্কে রয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন রায়েন্দা ও সাউথখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবছরই মোগো এইহানে ঝড় আয়। মোরা নদীর ধারে থাহি। ঝড় আইলে সাইক্লোন সেন্টারে যাই। এর আগে যে ঝড়-তুফান আইছে, হ্যাতে মোগো গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ব্যাবাগ কিছু ভাসাইয়া লইয়া গেছে।’
শরণখোলার রাজেসর গ্রামের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, ‘সিডরে মোগো বাড়িঘর সবকিছু গেছে। এহন মোরা এই বলেশ্বর নদীর পাড়ে ঘর বানাইয়া থাকি। নতুন কইরা নাহি আবার ঝড় আইতাছে। এই ঝড়ে যদি মোগো ঘর-দুয়ার আবার ভাসাইয়া লইয়া যায়, মোরা কই গিয়া থাকমু।’
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ‘রোববার রাতে বৃষ্টি ছাড়া এখন পর্যন্ত ঝড়ের তেমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। উপজেলার প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ঝড়ের আলামত দেখা দিলেই প্রথমে সুন্দরবন উপকূলের জেলে ও বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে।’
বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বরিশাল বিভাগের ৪ হাজার ৯১৫ আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আশ্রয় নিতে পারবেন বিভাগের ২০ লাখ মানুষ।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সোমবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশালে ১০৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫, ভোলায় ১১০৪, পিরোজপুরে ৭১২, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলো থেকে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ গবাদিপশুকেও স্থান দেয়া যাবে।
আরও পড়ুন:
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য