সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ রয়েছে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার। ষাটের দশকে নির্মিত এসব বেড়িবাঁধ ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৯টি পয়েন্ট ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে জোয়ারের পানি। আম্পানের পরে এগুলো সংস্কার হলেও এখনও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ১৯টি পয়েন্ট।
শ্যামনগর উপজেলার সুভদ্রাকাটি গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতের একমাত্র পথ বেড়িবাঁধ। যা ভাঙতে ভাঙতে এক হাতের মধ্যে চলে এসেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আসলি আমাদের বিপদের শেষ থাকে না। না পারি কোথাও যেতে। আবার আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় উঠতি পারি না সেখানে।‘
সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী জানান, জেলার উপকূলীয় এলাকার সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠীকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে হয়। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ থাকতে পারেন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৪৫টি। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার মানুষকে ঠাঁই দেয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন এ রকম সংকট থাকলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।‘
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হওয়ার খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে ২৫ থেকে ২৭ মে দেশের উপকূলসহ ৩০টি জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তবে ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট রয়েছে। ৪০ হাজার মানুষের জন্য নূন্যতম ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে মাত্র দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ মোকাবিলায় যা একেবারে নগণ্য।’
এদিকে জেলায় সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, সাতক্ষীরায় দুপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৬.৫ সেন্টিগ্রেড। বাতাসের আর্দ্রতা রয়েছে ৫২ শতাংশ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এমন ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৫টি। আশ্রয়কেন্দ্রে সবাইকে জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, জেলায় ১৮৩ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এটি দিয়ে দুর্যোগের সময় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে। এ ছাড়া সহায়তা হিসেবে এসেছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া এলাকায় ৭৪ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া জাইকার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকার কাজও চলছে।’
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের জমা করা ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে পাস হলে বেড়িবাঁধ সংকট অনেকাংশে সমাধান হবে।’
পিরোজপুরে প্রস্তুত ৫৫৭ আশ্রয়কেন্দ্র
উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৫৭ আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ২৩৫টি এবং বাকি ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘হতাহতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় রাখতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে প্রতিটি ইউনিয়নে তাৎক্ষণিক আর্থিক সাহায্য দেয়ার জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘গোখাদ্য ও শিশুখাদ্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সতর্কবার্তা জারির কার্যক্রমও চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠনেরও প্রস্তুতি চলছে।’
এদিকে রোববার মঠবাড়িয়া উপজেলায় আধুনিক সুবিধাসহ তিনটি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, হোগলপাতি নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নে খায়েরঘটিচোরা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
ভোলায় প্রস্তুত ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় ভোলায় মাঠে কাজ করবে ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ।
রোববার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ইলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি স্পট ঠিক করা হয়েছে, যেখান থেকে ৩ লাখ ১৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হবে।’
করোনা ঠেকাতে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে ধারণক্ষমতার অর্ধেক
ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আশ্রয়কেন্দ্রের সক্ষমতার অর্ধেক মানুষকে একটি কেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘৯ উপজেলায় ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে পাঁচ লাখ লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রয়েছেন ৫ হাজার ৩২০ জন স্বেচ্ছাসেবক।
ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছার মানুষ। এর আগে আইলা, সিডর, ফণী, বুলবুল ও আম্পানে এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রামে প্রস্তুত ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ৫০০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী মজুত রয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, ‘ইয়াস নামের ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ বা ২৬ মে আঘাত হানতে পারে। এ জন্য ১ নম্বর দূরবর্তী বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় গো-খাদ্য কেনার জন্যে প্রতি উপজেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাসহ মাইকিং করা হচ্ছে।
জোয়ারের পানি বাড়ছে পায়রা নদীতে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী।
তিনি বলেন, ‘পায়রা নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার। কিন্তু রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পায়রা নদীর জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জোয়ারের চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
প্রকৌশলী হালিম সাহেলী জানান, জেলায় মোট বেড়িবাঁধ রয়েছে ১ হাজার ৩৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৬ কিলোমিটার। সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যেগুলোর সংস্কারকাজ চলছে।
ঘূর্ণিঝড় ৩৯১টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, পটুয়াখালী সদরে ১৯টি, দুমকিতে ৪৩, মির্জাগঞ্জে ২৭, বাউফলে ১৩৫, দশমিনায় ৫৭, গলাচিপায় ১০৭, কলাপাড়ায় ১৬০ এবং রাঙ্গাবালীতে ৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পটুয়াখালীতে মোট ৯৩টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় প্রয়োজনীয় খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ওষুধ মজুত রাখা আছে।
পটুয়াখালী নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন খান জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে ৬৫ ফুটের নিচে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকাগামী দোতলা লঞ্চ চলবে। সে ক্ষেত্রে পরে নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সহযোগিতার জন্য ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘ইয়াস’ আতঙ্কে সুন্দরবনের উপকূলবাসী
সিডর, আইলা, আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার জেলে ও বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক এখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার ভারতের উড়িষ্যার উপকূল ও বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের পাশের উপজেলা শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
বাগেরহাট ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খাদিজা আক্তার বলেন, ‘জেলার ৭৫টি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা ও তিনটি পৌরসভায় ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় শিশুখাদ্যের জন্য এক লাখ ও গোখাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৬টি মেডিক্যাল টিম।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-আতঙ্কে রয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন রায়েন্দা ও সাউথখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবছরই মোগো এইহানে ঝড় আয়। মোরা নদীর ধারে থাহি। ঝড় আইলে সাইক্লোন সেন্টারে যাই। এর আগে যে ঝড়-তুফান আইছে, হ্যাতে মোগো গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ব্যাবাগ কিছু ভাসাইয়া লইয়া গেছে।’
শরণখোলার রাজেসর গ্রামের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, ‘সিডরে মোগো বাড়িঘর সবকিছু গেছে। এহন মোরা এই বলেশ্বর নদীর পাড়ে ঘর বানাইয়া থাকি। নতুন কইরা নাহি আবার ঝড় আইতাছে। এই ঝড়ে যদি মোগো ঘর-দুয়ার আবার ভাসাইয়া লইয়া যায়, মোরা কই গিয়া থাকমু।’
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ‘রোববার রাতে বৃষ্টি ছাড়া এখন পর্যন্ত ঝড়ের তেমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। উপজেলার প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ঝড়ের আলামত দেখা দিলেই প্রথমে সুন্দরবন উপকূলের জেলে ও বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে।’
বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বরিশাল বিভাগের ৪ হাজার ৯১৫ আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আশ্রয় নিতে পারবেন বিভাগের ২০ লাখ মানুষ।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সোমবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশালে ১০৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫, ভোলায় ১১০৪, পিরোজপুরে ৭১২, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলো থেকে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ গবাদিপশুকেও স্থান দেয়া যাবে।
আরও পড়ুন:
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য