নিখোঁজ হওয়ার ১৪ বছর চার মাস পর নিজ এলাকায় ফিরেছেন মোহাম্মদ রুবেল নামের এক যুবক। এদিকে তাকে অপহরণের অভিযোগে তার মায়ের করা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ছয়জন, যে মামলার আসামি ১৯ জন।
রুবেলের বাসা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে কুড়েরপাড় এলাকায় ফিরে আসেন রুবেল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে থানায় হাজির করা হয়।
২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে ৭ বছর বয়সী রুবেলকে অপহরণের অভিযোগে তার মা রাহিমা বেগম মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে রাহিমা বেগমের দুই ছেলে হাবিবুর রহমান ও মো. রুবেল বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। সেদিন তাদের মা রাহিমা তার বোনের বাড়ি বেড়াতে যান। সেই সুযোগে এলাকার মো. কালাই ও নুরুল ইসলাম বাড়িতে এসে তাদের ঘুম থেকে ওঠায়। তারা হাবিবুর ও রুবেলকে বলে- তোমাদের জমি থেকে মাটি কাটব, তোমার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। কত নৌকা মাটি হয়েছে তার হিসাব রাখবে তোমরা। তোমাদের কাছে টাকা দেয়া হবে। এ কথা বিশ্বাস করে রুবেল তাদের সঙ্গে চলে যায়। পরে সে ফিরে না আসায় বড় ছেলে হাবিবুর জমির কাছে তাকে খুঁজতে যায়। সেখানে সে রুবেল এবং কালাই ও নুরুল কাউকে পায়নি। পরদিন রাহিমা বাড়িতে ফিরে আসলে তাকে ঘটনা জানায় হাবিবুর। পরে তারা খোঁজাখুঁজি করে রুবেলকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ আদালতে অপহরণ মামলা করেন রাহিমা বেগম। আসামি করা হয় ১৯ জনকে। তাদের মধ্যে দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন- নুরুল ইসলাম ও জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ। অন্যরা হলেন- কালাই চান, মনা, আমান, মুসলিম, মানিক, আজিজ, জিন্নাত আলী, সিরি মিয়া, ছালা উদ্দিন, শহর আলী, বাদশা মিয়া, সিরাজুল হক, শুক্কুর মেম্বার ও ইয়ানুছ, আউয়াল, রাজু ও হোসেন মিস্ত্রি।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন উপপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান। তিনি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে বাদী আদালতে পুলিশের তদন্তে নারাজি দেন। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সিআইডিও কয়েক মাস তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় আদালতে। তবে বাদী রাহিমা তাতেও নারাজি দেন। পরে দায়িত্ব পায় র্যাব। বাহিনীটি মামলার ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়। অন্য আসামিরা ছিলেন পলাতক।
পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, র্যাবও তদন্ত শেষ করতে না পারায় পরবর্তীতে তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের উপপরির্দশক আসাদুজ্জামান ফরাজী তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই দিন মামলাটি নিষ্পত্তি করে আদালত।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার ১৪ বছর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়েরপাড় গ্রামে হাজির হন ২২ বছর বয়সী রুবেল। তাকে দেখতে ভিড় জমায় আশপাশের মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান মামলার সেই আসামিরাও। পরে রাত ১০টার দিকে তাকে সদর মডেল থানায় নেয়া হয়।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রুবেল নামের এই যুবককে আমি কখনো দেখি নাই। তারে আজ প্রথম দেখলাম। কিন্তু তারে অপহরণের অভিযোগে আমারে গ্রেপ্তার করছে। পরে কারাগারে আড়াই মাস ছিলাম।
‘আমার মতো আরও পাঁচজনরে ধরছে। তারাও দুই থ্যাইকা চার মাস জেল খাটছে। এরপর আদালত থেকে জামিনে বের হইছি আমরা। পরে তো মামলাই শেষ হইল। আজ শুনলাম রুবেল গ্রামে ফিরে আসছে। পরে গ্রামবাসী ও আমরা তারে থানায় নিয়ে হাজির হইছি।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার পর থানা থ্যাইকা আমাগো ধরার চেষ্টা করছে। পরে তারা দেখে ঘটনা মিথ্যা। র্যাব মামলার তদন্ত পাওয়ার পর আজিজ মাদবর, মনা, সিরি মাদবর, রাজু, জুলহাস উদ্দিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের ১০ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নিয়েছে র্যাব। আমি সাড়ে চার বছর পালায় ছিলাম বান্দরবান।
‘মামলা শেষ হওয়ার পর ফিরে আসছি। আজ ওই ছেলে গ্রামে ফিরে আসছে। আমাগো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বিনা কারণে জেল খাটতে হইছে। আমরা এর বিচার চাই।’
ফিরে আসা মো. রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় মায় দুইটা গরু পালতে দিত। ঘরে গিয়া দেখতাম খাওন নাই। মায় মারত। তার অত্যাচারে ঘর থেইকা বাইর হইয়া গেছিলাম। তখন আমার বয়স আছিল সাত বছর।
‘এত বছর ঢাকায় আছিলাম। ঢাকার মগবাজার, হাতিরঝিলে। ওইখানে রঙের কাজ করতাম। ফাস্টফুডের দোকানে ও ইস্টার্ন প্লাজায় কাজ করছি। পরে সেখানেই একটা মেয়েরে বিয়া করছি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর আমাগো এক আত্মীয়র সাথে দেখা হইছে। তার মাধ্যমে মার সাথে কথা হয়। মারে কইলাম বাড়ি আসি? তখন মায় কইলো- বাড়িতে আসলে গ্রামের মানুষ তরে মাইরা ফেলবো। আমি তাগো নামে মামলা করছি। তাই ভয়ে আসি নাই।
‘আজ কাউরে কিছু না কইয়া গ্রামে আসছি। কিন্তু গ্রামের মানুষ আমারে চিনতে পারছে। তারা আমারে দেখার পর তাকায় ছিল। মার সাথেও দেখা হইছে। পরে সেখান থ্যাইকা আমারে থানায় নিয়ে আসছে গ্রামের মানুষ।’
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান বলেন, ‘১৪ বছর পর ফিরে আসা যুবক রুবেলকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে গত জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘সব যুদ্ধ বন্ধের’ পক্ষে থাকবেন এবং একজন ‘শান্তির দূত ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে নিজের উত্তরাধিকার রেখে যাবেন।
কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছোড়া শুরু হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। গত শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন এক সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকেও এটি সংঘাতে টেনে নিতে পারে।
ইসরায়েলের ওই হামলাকে ট্রাম্প প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তার প্রতিশ্রুতিই এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন।
ট্রাম্পের এ সমর্থন তার অনুগত রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে, যাদের অনেকে ডানপিন্থি রাজনীতিক ও ভাষ্যকার, বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা মনে করছেন, ইসরায়েলকে বিনা প্রশ্নে সমর্থন দেওয়া প্রকৃতপক্ষে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থি। অথচ ট্রাম্পের মূল নির্বাচনী স্লোগান ছিল এটি।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিষয়ক মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সহসভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট ঘাঁটির (এ নীতির সমর্থক গোষ্ঠী) অনেক অংশে এখন প্রবল ক্ষোভ ও বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি বিরাজ করছে। কারণ, তারা সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো যুদ্ধে জড়িয় পড়া বা তাতে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি দেখতে চায় না।’
ত্রিতা পারসি আরও বলেন, ‘তারা (এ গোষ্ঠী) এখন ইসরায়েল নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। তারা মনে করে, এ ধরনের যুদ্ধই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের ব্যর্থ ও তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে।’
ইরানে গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রক্ষণশীল নেতাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যেন এমন কোনো যুদ্ধে না জড়ায়, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে না।
ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (এমএজিএ) আন্দোলনের বড় মুখ ও প্রভাবশালী রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন বলেন, ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘যুদ্ধপিপাসু সরকার’কে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত নয়।
‘ইসরায়েল চাইলে যুদ্ধ করতেই পারে। ওটা স্বাধীন রাষ্ট্র। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু সেটা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে না হয়,’ গত শুক্রবার ‘টাকার কার্লসন নেটওয়ার্ক’–এর সকালের নিউজলেটারে লেখা হয়।
নিউজলেটারে আরও বলা হয়, ইরানের সঙ্গে (যুক্তরাষ্ট্রের) যুদ্ধ হলে তা ‘পরবর্তী প্রজন্মের সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিতে পারে’ কিংবা একটি বিদেশি এজেন্ডার নামে হাজার হাজার মার্কিনের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
‘এ কথা বলাই বাহুল্য যে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে না। কিন্তু অন্য একটি পথও আছে: ইসরায়েলকে বাদ দাও। ওরা নিজেরা যুদ্ধ করুক,’ লেখা হয় নিউজলেটারে।
রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পলও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছেন এবং ওয়াশিংটনের যুদ্ধ–সমর্থক রক্ষণশীলদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে র্যান্ড পল লিখেছেন, ‘মার্কিন জনগণ যে যুদ্ধের শেষ নেই, তার ঘোরবিরোধী এবং ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে তাঁরা সেটাই দেখিয়েছেন।’
‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করব যেন তিনি তার অবস্থানে অটল থাকেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেন এবং অন্য দেশের মধ্যে চলা কোনো যুদ্ধে জড়িত না হন,’ বলেন র্যান্ড পল।
ডানপন্থী কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিনও একটি বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি হামলার পক্ষে নন। এর আগেও তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হচ্ছে—এমন ইসরায়েলি অভিযোগের ভিত্তিতে যেন ইরানে হামলা চালানো না হয়।
মারজোরি টেলর এক্সে লেখেন, ‘আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। শান্তি। এটাই আমার আনুষ্ঠানিক অবস্থান।’
যদিও ইসরায়েলের সমর্থকেরা ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকির কথা উল্লেখ করে দেশটিতে হামলাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছেন; তেহরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এমনকি ট্রাম্পের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডও গত মার্চে এক সাক্ষ্যে বলেছেন, ‘আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।’
ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান কর্মী ও ভাষ্যকার চার্লি কার্কও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
নিজ পডকাস্টে কার্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ঘাঁটি কোনো যুদ্ধই চায় না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা চায় না (ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে)। তারা চায় না যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িয়ে পড়ুক।’
গত শুক্রবার ইসরায়েল যখন ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে তিনি আগ্রহী।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘বিষয়টা খুবই সহজ। জটিল কিছু না। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারে না—এই একটাই কথা। তার বাইরে আমি চাই, তারা সফল হোক। আমরা সাহায্য করব।’
গতকাল রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
তবে শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আগেই ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে জানতেন। অবশ্য তিনি হামলা চালাতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছিলেন কি না, তা বলেননি। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের হামলাকে ‘একতরফা’ বলেই উল্লেখ করেছেন।
অথচ ট্রাম্প ইরানের ওপর হামলার দায় চাপিয়ে বলেন, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তার আহ্বানে ইরানের কর্মকর্তাদের সাড়া দেওয়া উচিত ছিল।
ট্রাম্প পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, তাদের জন্য এটা হবে এমন কিছু, যা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জীবনঘাতী সামরিক সরঞ্জাম—অনেক অনেক বেশি। আর ইসরায়েলের কাছে এর অনেক কিছুই আছে, আরও আসছে।’
ত্রিতা পারসি বলেন, শুরুতে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চেয়েছিলেন, কিন্তু তার চরম শর্ত—ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে—আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি করে।
‘এটা অনুমেয় ছিল যে এ চূড়ান্ত দাবির ফলে আলোচনা ব্যর্থ হবে। ইসরায়েল সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পকে সামরিক পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে,’ বলেন ত্রিতা পারসি।
পারসি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহজুড়ে ট্রাম্প কূটনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে কথা বললেও, তিনি জানতেন ইসরায়েলের হামলা আসন্ন। এভাবে তিনি সবাইকে ভুল বার্তা দিয়েছেন যে হামলা হবে আলোচনার পরে। অথচ সেটা আগেই হয়েছে।’
ইসরায়েলের হামলার পর কংগ্রেসে কিছুটা সমালোচনা হলেও বহু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের ঘাঁটির একটি বড় অংশ, বিশেষ করে তরুণ ডানপনন্থিরা, ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক জন হফম্যান বলেন, ‘তারা (ডানপন্থিরা) রিপাবলিকান পার্টির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে।’
হফম্যান আরও বলেন, ‘পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, ৫০ বছরের নিচের অর্ধেক রিপাবলিকানই এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই নিরন্তর যুদ্ধক্লান্তির মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতি ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থান তাঁকে আবারও এমন একটি সংকটের মুখে ফেলেছে, যেটা একসময় বুশ প্রশাসনকে ফেলেছিল।
হফম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কামনা করা প্রভাবশালীদের উপস্থিতি, যেমন লিন্ডসে গ্রাহাম—এসবই বড় ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।’
‘এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার আশঙ্কা অনেক বেশি,’ বলেন হফম্যান।
সূত্র: আল জাজিরা
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চারটি গ্রামের পাঁচ যুবকের অপহরণের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি। অপহৃতদের কেউ বেঁচে আছেন কিনা, নাকি তাঁরা চিরতরে হারিয়ে গেছেন—সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পরিবার, প্রশাসন কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও।
২০১৩ সালের ১৯ মে রাতে বড়াইগ্রামের গুরুমশৈল গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রধারী ১০-১২ জনের একটি দল মাইক্রোবাসে এসে কৃষক কামাল হোসেনকে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নেয়। একই রাতে একই কায়দায় অপহরণ করা হয় ওই গ্রামের দিনমজুর ইব্রাহিম তালুকদার এবং পার্শ্ববর্তী মহিষভাঙ্গা গ্রামের ভুটভুটি চালক তৈয়ব আলীকে।
অপহরণের সময় অস্ত্রধারীরা এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং অপহৃতদের মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। এর ঠিক দুদিন আগে একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন বিজিবি সদস্য রাসেল গাজী ও তার বন্ধু কাটাশকুল গ্রামের সেন্টু হোসেন। ছুটিতে বাড়ি এসে রাসেল তার বন্ধুর ফোন পেয়ে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হন দুজনই।
স্বজনরা জানান, অপহরণের পরপরই তারা থানায় জিডি ও মামলার পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি। গুরুমশৈল গ্রামের কামালের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এক যুগ হয়ে গেল, আমার ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদি। কে নিল, কেন নিল, কোনো উত্তর নেই।’
নিখোঁজ ইব্রাহিম তালুকদারের মা বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। কোনো দিন কেউ খোঁজও নেয়নি।’ রাসেল গাজীর বাবা বলেন, ‘বিজিবির মতো চাকরিতে থেকেও যদি অপহৃত হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?’
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘এই ঘটনার বিষয়ে আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও হাতে এসেছে। আশা করছি, দ্রুতই রহস্য উদঘাটন এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
অপহৃতদের স্বজনরা বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে তারা আকুতি জানাচ্ছেন—তাদের প্রিয়জনেরা জীবিত না থাকলেও অন্তত কী ঘটেছে, কোথায় গেল তারা—সে রহস্য তো উন্মোচিত হোক।’
গৃহস্থদের কাছ থেকে ৭০০-৮০০ টাকায় ৪৫ কেজিতে এক মণ নাক ফজলি আম কিনছেন পাইকারি দোকানিরা। তারা সেই আম ১ হাজার ২০০ টাকায় ৪০ কেজিতে এক মণ বিক্রি করছেন। প্রতি মণ আমে নিচ্ছেন ৫ কেজি ধলতা। এতে গৃহস্থরা ওজনে আর খুচরা আম ক্রেতারা দামে ঠকছেন। পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি মণে অর্ধেকেরও বেশি টাকা লাভ করছেন। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরে রেলগেট এলাকায় এভাবেই সিন্ডিকেট করে আম বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ক্রেতারা ও গৃহস্থরা আম ক্রয়-বিক্রয়ে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলায় প্রচুর নাক ফজলি আমের উৎপাদন। বদলগাছির এই নাক ফজলি আম অনান্য এলাকার চেয়ে সুস্বাদুও। প্রতি বছর আমের মৌসুমে আক্কেলপুর পৌর শহরের কিশোর মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কে আমের পাইকারি বাজার বসে। এবারও আমের পাইকারি বাজার বসছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত আম বেচাকেনা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ও পাইকারিরা এসে আম কিনেন।
গৃহস্থ ও খুচরা আম ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে নাক ফজলি আম ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। ঈদের পর নাক ফজলি আমের আমদানি বেড়েছে। এ কারণে আমের মণে ৬০০ থেকে ৪০০ টাকা দাম কমেছে। ৪০ কেজিতে মণ হলেও পাইকারিরা গৃহস্থদের কাছে ৪৫ কেজি মণে আম কিনছেন। পাইকারিরা দোকানে সেই আম ১ হাজার ২০০ টাকায় ৪০ কেজিতে মণ বিক্রি করছেন।
বদলগাছির ভাণ্ডারপুর গ্রামের গৃহস্থ মনোয়ার হোসেন বলেন, আক্কেলপুর বাজারে ৮০০ টাকা দরে তিন মণ আম বিক্রি করেছি। তিন মণ আমে আমাকে ১৫ কেজি আম বেশি দিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের কাছে ৪৫ কেজিতে পাইকারিরা আম কিনছেন। এটি চরম অন্যায়। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
খুচরা বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, রেলগেট এলাকার দোকান থেকে এক মণ নাক ফজলি আম ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনলাম। দোকানিরা প্রতি মণে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ করছে। আবার গৃহস্থদের কাছে নেওয়া ওজন দিচ্ছেন না। মৌসুমি আম বিক্রেতা হারুন বলেন, ৪৫ কেজিতে আম বিক্রি হয়। আমরা দূরে নিয়ে গিয়ে আম বিক্রি করি। তবে রেলগেট এলাকার দোকানিরা একটু বেশি দামে বিক্রি করছেন।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মামুন জমাদ্দার (৪০) নামে এক জেলের জালে ২৩ কেজি ওজনের বিশাল একটি সামুদ্রিক কোরাল মাছ ধরা পড়েছে। পরে মাছটি ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
গতকাল রোববার সকালে কুয়াকাটা মাছ বাজারের মনি ফিস নামে মৎস্য আড়তে মাছটি বিক্রি করার জন্য আনা হয়। ডাকের মাধ্যমে ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি দরে ২৪ হাজার ১৫০ টাকায় মাছটি কিনে নেন কুয়াকাটা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তাফিজ।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর মহিপুর সদর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের জেলে মামুন জমাদ্দার ১২ জুন রাতে সমুদ্রে জাল ফেলেন এবং ১৪ জুন রাতে জাল তুললে তিনি তার জালে এই বিশাল আকৃতির সামুদ্রিক কোরাল মাছটি পান।
জেলে মামুন জমাদ্দার বলেন, এত বড় মাছ পাব সেটা ভাবতেও পারিনি। প্রায় দুই মাস মাছ ধরতে পারিনি। কারণ মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই অবরোধের পর মাছটি পেয়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছি। মাছটির ক্রেতা কুয়াকাটা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তাফিজ বলেন, আমাদের এলাকায় বড় বড় হোটেলগুলোতে সামুদ্রিক বড় কোরাল মাছের চাহিদা রয়েছে। আশা করছি মাছটি বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ করতে পারব। তবে এলাকায় বিক্রি না হলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেব।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে নেমেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই জেলেদের জালে বড় মাছ ধরা পড়বে। জেলেরা সঠিকভাবে নিষেধাজ্ঞা পালন করেছে বিধায় সামনের দিনগুলোতে তাদের জালে ভালো সংখ্যক মাছ ধরা পড়বে।
দুর্ভোগের আরেক নাম সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গাবুরা খেয়াঘাটটি। দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ ঝুকি নিয়ে খোলপেটুয়া নদীটি পার হচ্ছে। সংস্কারের অভাবে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী-গাবুরা খেয়াঘাটের বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগ দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটকে পারে, এমন টি জানিয়েছে ভুক্তভোগী মহল।
খোলপেটুয়া নদীর এই ঘাট দুটি বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা ইউনিয়নে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম।
স্থানীয়রা জানান, খেয়াঘাটের খুব খারাপ অবস্থা। প্রবীণ নারী-পুরুষ, গর্ভবতী নারী বা অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীদের পারাপারে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বর্ষাকালে তাদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
বোট মাঝি আলামিন বলেন, এই ঘাটে আমাদের বোট ধরতে (ঘাটে ভিড়াতে) বেশ সমস্যায় মধ্যে পড়তে হয়। ধরার জন্য ভালো কোন জায়গা নেই। বিশেষ করে ঝড় আর তুফানের সময় বেশ বেগ পেতে হয়। মোটরসাইকেল তোলা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, নারীদের নৌকায় উঠতে বেশ সমস্যা হয়। কারো সাহায্য ছাড়া ওঠা সম্ভব নয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, বুড়িগোয়ালিনী পাড়ের খেয়াঘাটটি সম্পুর্ন ভাবে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এঘাট দিয়ে ওঠা নামা করার সময় প্রায় সাধারন মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ওই এলাকার শতশত ভুক্তভোগী মহল বুড়িগোয়ালিনী-গাবুরা খেয়াঘাট সংস্কারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয় অস্ত্রের বিচ্ছিন্ন অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৬ জুন) ভোর রাতে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানাগেছে। দৌলতপুর থানার ডিউটি অফিসার এস আই পলাশ প্রতিবেদককে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আস আই আরও বলেন, উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই মিন্টু চৌধুরীর বাড়ির এরিয়ায় রবিবার দিবাগত ভোর ৪ টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন।
পরিচালিত এ অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক নলয়ালা বন্দুকের ১টি বাট ও ১টি পাইপ, ৪০টি গুলির ঠোশ, ৬টি ফালা (বল্লভ), ৬টি রামদা, ১টি চাকু ও ১টি বন্দুকের পাইপ পরিষ্কার করার ব্রাশ উদ্ধার করা হয়। পরিচালিত অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃত অবৈধ দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয় অস্ত্রের বিচ্ছিন্ন অংশ দৌলতপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় দৌলতপুর থানার ডিউটি অফিসার এস আই পলাশ বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারকৃত অবৈধ দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয় অস্ত্রের বিচ্ছিন্ন অংশ দৌলতপুর থানায় জব্দ আছে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলে আরও এক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান, এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-ইরানের চলমান উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৬ জুন) ভোরে এই হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি সেবার কর্মকর্তা মাগেন দাভিদ আদোম এই হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া, এই হামলায় তেল আবিবের মার্কিন দূতাবাসের অবকাঠামোগত সামান্য ক্ষতি হলেও সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে সামাজিকমাধ্যম এক্সে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন দূত মাইক হাকাবি।
এদিকে, ইসরায়েলে প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার দাবি করেছে তেহরান। ইসরায়েলের চালানো হামলায় ইরানে এ পর্যন্ত ২২৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর জবাবেই ইসরায়েলে হামলার কথা জানিয়েছে তেহরান।
এদিকে, সোমবারের হতাহতের পর ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এই হামলার জবাবে ইরানের কুদস বাহিনীর ১০টি কমান্ড সেন্টার জীবাণুমুক্ত করার জন্য আক্রমণ চালানোর দাবি করেছে তেল আবিব।
কুদস বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট, যা বিদেশি অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।
এদিকে, ইরানের হামলায় তেল আবিবের নিকটবর্তী পেতাহ তিকভা শহরে স্থানীয়রা জানান, সেখানে একটি আবাসিক ভবনে সরাসরি আঘাতে কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ও জানালা ভেঙে গেছে।
মাগেন দাভিদ জানান, নিহতদের মধ্যে দুইজন পুরুষ এবং দুইজন বুদ্ধ নারী, সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি। এছাড়া আরও ৮৭ জন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একজন নারী গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন।
এর আগে, ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে কোনো যুদ্ধবিরতির কথা বিবেচনা করবে না বলে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে স্পষ্ট জানিয়েছে ইরান। তবে অভিযান আরও কঠিন হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ইসরায়েল। এর জবাবে ইরানও কঠোর প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তেহরান বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা ‘নরকের দরজা খুলে দেবে’।
এদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে দেশটিতে ইসরায়েলের হামলায় দুই শতাধিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ২০০ মানুষ।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে রানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে রাইজিং লায়ন। এর পর পরই পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে ইসরায়েল। ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপ পর্যন্ত না পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে তেল আবিব।
তবে এ অভিযানকে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক বলে আখ্যা দিয়েছে ইরান। এ ছাড়া, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না বলে দাবি করেছে তারা।
মন্তব্য