সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে আপত্তিকর কথা বলার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন এক নারী। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও এক নারীকে।
গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের লাশ সৎকার করে আলোচনায় এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ। এ ছাড়া তিনি মহানগর যুবদলেরও আহবায়ক।
থানা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী সাঈদা আক্তার রোববার রাতে ওই মামলাটি করেন। এতে খোরশেদ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে ফেরদৌসি আক্তার রেহানা নামে আরেক নারীকে।
এর আগে সাঈদার বিরুদ্ধে হয়রানি ও জোর করে বিয়ে করতে চাওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন খোরশেদ।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলরকে বিয়ে করার হুমকি অতঃপর...
এজাহারে বলা হয়েছে, ছোটবেলা থেকে খোরশেদের সঙ্গে সাঈদার পরিচয়। এর আগে সাঈদার একটি বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। সেই ঘরে সন্তানও রয়েছে। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে খোরশেদ ও সাঈদার ফেসবুকে মেসেঞ্জারে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যোগাযোগের একপর্যায়ে খোরশেদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ২০২০ সালের ২ আগস্ট সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে এসএস ফিলিং স্টেশনে খোরশেদ নিজেই কাজী নিয়ে গিয়ে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাকে বিয়ে করেন। কিছুদিন পরে বিয়ের বিষয় জানাজানি হলে খোরশেদ সাঈদার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাঈদা ব্যবসার কাজে দুবাই গেলে ২৪ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলেন খোরশেদ। পরে ওই লাইভে ফেরদৌস আক্তার রেহানা ওরফে রেহানা মুসকান নামে এক নারীও বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এসব ঘটনা সাঈদা দুবাই থেকে জানতে পারেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে মামলা করেন।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলর খোরশেদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ সেই নারীর
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ‘সাঈদা আক্তার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কাউন্সিলর খোরশেদ ও ফেরদৌস আক্তার রেহানাকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার তদন্তসহ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।’
মামলার বিষয়ে কাউন্সিলর খোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার একান্ত সহকারী আলি টিপু জানান, খোরশেদ এখন ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। নারায়ণঞ্জে ফিরে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সাঈদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যাত্রী ও ক্রুদের সবাই মারা গেছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি মেডিকেলের হোস্টেলের ভবনে থাকা পাঁচজন মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দ্য টেলিগ্রাফ ও ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে হতাহতের বিষয়ে এমনটিই বলা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটিতে ২৪২ আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৩২ যাত্রী ও ১০ ক্রু রয়েছেন।
সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়েপড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি অনেকটা নিচ দিয়ে উড়ছিল, এসময়ে উপরের দিকে উঠতে বারবার চেষ্টা করছিল। এরপর হঠাৎ করে আকাশযানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের কুণ্ডলী বেরিয়ে আসে।
এক বিবৃতিতে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আহমেদাবাদ-লন্ডন গ্যাটউইকে পরিচালিত এআই১৭১ বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বোইং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি উড্ডয়ন করার পর অল্প সময়ের মধ্যেই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে।
একটি অক্ষত বিমানের একটি অংশ ভবনের উপর ঝুলে থাকতে দেখা যায়। আর ধ্বংসাবশেষ থেকে আহত লোকদের অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেওয়ার সময় শহরের উপর ব্যাপক কালো ধোয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।
পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, বিমানটি চিকিৎসকদের একটি হোস্টেলে আঘাত করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ২১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১১ জন শিশু যাত্রীর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান ছিলেন।
ব্রিটিশ বিদেশবিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে দুর্ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা দিচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘ভারতের শহর আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে অনেক ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার দৃশ্যগুলো ভীষণ মর্মান্তিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পাচ্ছি এবং এই গভীর উদ্বেগজনক মুহূর্তে আমার চিন্তা যাত্রী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে রয়েছে।’
ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই কঠিন সময়ে ভারতের জনগণ এবং সরকারের প্রতি সহানুভূতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক বার্তায় অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের দুর্ঘটনায় ২৪২ আরোহীসহ আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য আমি ব্যথিত ও শোকাহত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। এই কঠিন সময়ে ভারতের জনগণ ও সরকারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে বাংলাদেশ।’
‘আমরা ওই ঘটনার শিকার পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাই, যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে ভুক্তভোগী ও তাদের প্রিয়জনদের জন্য আমাদের সহানুভূতি ও প্রার্থনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের জনগণ এবং সরকারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি এবং যেকোনোভাবে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত,’ বলেন অধ্যাপক ইউনুস।
অধ্যাপক ইউনুস বর্তমানে যুক্তরাজ্যে একটি সরকারি সফরে রয়েছেন।
আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইনডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় সবার নিহতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় পুলিশপ্রধান।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার পরই দুর্ঘটনায় পড়ে।
ওই উড়োজাহাজে ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন বলে ভারতের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর জানিয়েছে।
উড্ডয়নের পর একপর্যায়ে আরও উপড়ে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় উড়োজাহাজটি নিচে নেমে আসে এবং বিমানবন্দরের কাছে একটি মেডিকেল হোস্টেলের উপর বিধ্বস্ত হয়। সেখানে অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদনকারী একটি অবৈধ কারখানা সিলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে কারখানার মালিক আব্দুল আউয়াল (৪৪) কে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ডাদেশ দেন।
জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাউৎকোনা মোড় এলাকায় আব্দুল আউয়াল দীর্ঘদিন ধরে একটি অবৈধ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করে আসছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে দেখা যায়, কারখানায় প্লাস্টিকের দানা তৈরি করে তা থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছিল। স্থানটি থেকে পলিথিন, প্লাস্টিকের দানা ও উৎপাদনযন্ত্র জব্দ করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “এই কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছিল। তাই আইন অনুযায়ী কারাদণ্ড এবং কারখানা সিলগালা করা হয়েছে।”
অভিযানে কাপাসিয়া থানা পুলিশ সহায়তা করে। পরে দণ্ডিত আব্দুল আউয়ালকে পুলিশের প্রহরায় গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা আক্তার জানান, পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের এমন অভিযান চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
গত মে মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত ও ১ হাজার ১৯৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহতের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তথ্যমতে, নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৫২ টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত ও ১ হাজার ২১০ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছে। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছে।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৯৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ গাড়ি চাপা, ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০ দশমিক ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৫ দশমিক ২ শতাংশ বিবিধ কারণে। এছাড়া চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ০ দশমিক ৫০ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩২ দশমিক ৮৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ১৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৫০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০ দশমিক ৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৬৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯২ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ৩৭ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সামরিক অস্ত্র ১১ টি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল উদ্ধারের পর বিস্ফোরিত করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত তিনঘণ্টা উপজেলার পার্শ্ববর্তী নলিন এলাকায় যমুনা নদীতে মর্টার শেলগুলো বিস্ফোরিত করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।
এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম, ভূঞাপুর থানা অফিসরা ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ওসি একেএম রেজাউল করিম জানান, বুধবার রাতে উপজেলার পাটিতাপাড়া এলাকার যমুনা নদীর তীর থেকে অবিস্ফোরিত ১১ টা মর্টার শেল উদ্ধার করে সেনাক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছিল। পরে সেগুলো আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত নলিন এলাকার যমুনা নদীতে বিস্ফোরিত করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম জানান, ১১ টি মর্টার শেল বিস্ফোরিত করা হয়েছে।
গত বুধবার ১১ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়ার শাহাদত নামে এক ব্যক্তি যমুনা নদীতে পাড়ে মাছ ধরতে গিয়ে মর্টার শেলগুলো দেখতে পান। হঠাৎ এসব বস্তু দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এরপর আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানালে মর্টার শেলগুলো এক নজর দেখতে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ভিড় জমায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মর্টার শেলগুলো উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর ধারণা, ১৯৭১ সালে পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা যমুনা নদীর তীরে পাকস্তানি বাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস হয়েছিল। উদ্ধারকৃত মর্টার শেলগুলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সামরিক অস্ত্র। যমুনা নদী পাড়ে মরিচা ধরা অবস্থায় মর্টার শেলগুলো একত্রে পড়ে ছিল। কিছু শেলের গায়ে জং ধরে গেছে।
আগামী শনিবার (১৪ জুন) থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ হাইকোর্ট এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৯ ধারায় আগামী শনিবার (১৪ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ভবনের সম্মুখে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।
এতে, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়।
এর আগে, গত ২৬ মে সচিবালয় ও যমুনা-সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষিদ্ধ করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
মন্তব্য