কখনও সাংবাদিক, কখনও গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কখনও বা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী বা কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যখন যার কাছে যে পরিচয় দিলে সুবিধা, সেটিই দেন তিনি।
এমন বহুরূপী চরিত্রের নাম আবদুস সালাম। বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আমতলী গ্রামের বান্ধাকাটা এলাকায়।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। বরগুনায় তার খোঁজে এসে ব্যবসায়ীরা জানান, অটো পার্টস বিক্রিকে পেশা দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সালাম। তবে তাকে এখন পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।
কর্মজীবনের শুরুটা হোটেল বয় হলেও এখন বিত্তশালী। বিয়ে করেছেন দুটি। বামনার আমতলী গ্রামে দুই স্ত্রীর জন্য দুইটি দ্বিতল বাড়ি করেছেন। এই বাড়ি দুটি করতে যে অঢেল খরচ হয়েছে, সেটি দেখলেই বোঝা যায়।
বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। একটিতে এক স্ত্রী ও তার দুই ছেলে থাকেন, আরেকটি খালি থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন।
বিভিন্ন সময়ে তিনি ছিনতাই, চুরি ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন অনেকবার। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আবার শুরু করেন নতুন নতুন ফন্দি।
বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান সগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সালামের বিরুদ্ধে এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে বামনা থানায় চুরির অভিযোগে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় মাসখানেক জেল খাটার পর এরপর তিনি এলাকা ছাড়েন।
‘শুনেছি ঢাকায় হোটেলে চাকরি ও পরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কাজ করতেন। তবে এসব করে দুটি বাড়ি করা অসম্ভব। সব শেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তাকে প্রচারণায় দেখেছি। ওই সময় লোকমুখে আমি যতটুকু শুনেছি, সালাম ঢাকাতে বেশ কিছু অর্থ প্রতারণায় জড়িয়ে নাকি এলাকায় ফিরেছেন।’
তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন থানায় চুরি, প্রতারণা, ছিনতাই ও জাল টাকার কারবারের কয়েকটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর বামনা থানায় চুরির মামলা ছাড়াও ঢাকার রামপুরা থানায় জাল নোটের কারবারের অভিযোগে মামলা হয় ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর। ঢাকার সূত্রাপুর থানায় চুরির অভিযোগে মামলা হয় ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর।
ছিনতাই, নারী কেলেঙ্কারিসহ সম্প্রতি বামনায় ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চন কেন্দ্র করে সহিংসতার অভিযোগেও একাধিক মামলা রয়েছে।
২০০৬ সালের দিকে বামনা উপজেলার তার নিজ বাড়ির পাশের একটি বাজারের এক ব্যবসায়ীর দোকানে চুরির অভিযোগে এলাকা ছাড়েন সালাম। এই ঘটনায় ওই ব্যবসায়ী মামলা করলে কিছুদিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি।
বাড়ি ছাড়ার পরে ঢাকার মহাখালীতে একটি আবাসিক হোটেলে বয়ের চাকরি জুটে যায় তার। এরপর একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবেও পরিচয় দিতে শুরু করেন। মুক্তখবর নামে সংবাদপত্রের পরিচয়পত্রও জোগাড় করেন।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ডিবি অফিসার সেজে প্রতারণার চেষ্টাকালে ধরা পড়েন সালাম। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা হয় এবং তিনমাস বন্দি থেকে জামিন পান।
ব্যবসায়ীদের যে অভিযোগ
ছিনতাই, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতা, ডলারের কারবারি আরও নানা পেশার পরিচয় দিয়ে বেড়ান তিনি। সচিব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবার গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকতার্দের সঙ্গে সখ্যতার গল্প বানিয়েও মানুষ ঠকানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ঢাকার নবাবপুরের মেসার্স অথি অ্যান্ড বিনতি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকানের মালিক ঝুমুর কর্মকারের কাছ থেকে তিনি ১৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন বলে ওই ব্যবসায়ী ঢাকার ওয়ারী থানা ও বরগুনা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
একই এলাকার গাড়ি যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী তানভির হোসেনের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা, ঢাকার মুগদার আসবাবপত্র ব্যবসায়ী সাজেদুল হক ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন সালামের বিরুদ্ধে।
নবাবপুরের যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী ঝুমুর কর্মকার জানান, সালাম প্রায়ই তার দোকানে যন্ত্রাংশ বিক্রি করতেন। অল্পদিনেই সখ্য তৈরি হয়। তার কাছ থেকে প্রায়ই দুই এক লাখ টাকার যন্ত্রাংশ কিনতেন।
‘এক পর্যায়ে তিনি আমাকে কমদামে বিভিন্ন প্রকার পার্টস বিক্রি করবেন বলে প্রলোভন দেখান। আমি প্রলোভনে ভুলে যাই। ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ আমি তার কাছ থেকে পার্টস কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা দেই। টাকা দেয়ার সময় তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি করি।
‘টাকা গ্রহণের পর থেকে তিনি লাপাত্তা। তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েও পাইনি। থানায় মামলা করেছি। তবুও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি বর্তমানে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি’- বলেন ওই ব্যবসায়ী।
গত ২৩ মার্চ বরগুনা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন ঝুমুর কর্মকার। ওই দিনই বামনা থানার ওসি হাবিবুর রহমানকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখে দেন পুলিশ সুপার। পুলিশ তাকে খুঁজতে বাড়িতে গেলে ২৬ মার্চ তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘টাকা নেয়ার ঘণ্টাখানেক পর ফোন বন্ধ থাকায় আমার সন্দেহ হয়। বেশ কিছুদিন তার নম্বর বন্ধ পেয়ে নিশ্চিত হই সালাম প্রতারক। পরে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অনুসন্ধান করে ১৩টি নম্বর বের করি এবং প্রতিদিনই চেষ্টা করি যোগাযোগের।
‘আগস্ট মাসের শেষের দিকে হঠাৎ একদিন তার একটি নম্বর খোলা পেয়ে ওয়ারী থানায় যোগাযোগ করি। পুলিশের সহায়তায় জানতে পারি, সালাম মুগদা হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান করছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর আমি লোকজন নিয়ে গিয়ে মুগদা মেডিক্যালের সামনে থেকে তাকে আটক করি।
‘এ সময় সে সাংবাদিক পরিচয় দেয়, পুলিশ দেখে চিৎকার করে। পরে পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর পলাশ সরকার তাকেসহ আমাদের মুগদা থানায় নিয়ে যায়। থানায় গিয়ে সে টাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং সময় নিয়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়।’
ওই মুচলেকায় সালাম ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন। তিনি ঠিকানা দেন বগুড়া সদর।
সালাম ঢাকায় ৫৬/৩ উত্তর মুগদাপাড়ার বাসায় থাকতেন। মুচলেকায় দেয়া নির্দিষ্ট তারিখে টাকা না দিয়ে তিনি আবার ফোন বন্ধ করে রাখেন। পরে মুগদা থেকে ডেমরার কাজলার পাড় এলাকায় পরিবারসহ চলে যান।
আমি সেখান তাকে খুঁজতে গেলে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বামনায় চলে আসেন সালাম।
ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী নিউ এসবি মেশিনারিজের মালিক তানভির হোসেন বলেন, ‘সালাম আমাকে জানায়, তিনি চায়নায় পার্টসের ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে আমিও তার কাছ থেকে অনেক পার্টস কিনেছি।
‘যেহেতু আমাকে দেশের বাহির থেকে অনেক পার্টস কিনতে হয়, সেজন্য ডলারের প্রয়োজন হয় খুব বেশি। কিছুটা কম খরচায় ডলার কেনার জন্য তিনি আমাকে উৎসাহ জোগান। আমিও রাজি হয়ে যাই। ডলার কিনতে প্রায় ২৬ লাখ টাকা দেই তাকে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি তিনি প্রতারণা করবেন। আমার সব টাকা নিয়ে তিনি এখন লাপাত্তা। আমি এখন নিঃস্ব।’
ঢাকার মুগদা বিশ্বরোড এলাকায় চায়না ফার্নিচারের মালিক সাজেদুল ইসলামের কাছ থেকেও একই প্রক্রিয়ায় ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাজেদুল জানান, ওয়ারড্রোব ও খাট কেনার সূত্র ধরে পরিচয় হয় সালামের সঙ্গে। তিনি চীন থেকে কেমিক্যাল বোর্ড সরবরাহ করবেন বলে টাকা দেন। কিন্তু লাপাত্তা হয়ে যান।
প্রতারণার জালে প্রবাসীও
বামনা সদর ইউনিয়নে নিজামতলী গ্রামের অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী জাকারিয়া হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও দেড় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মিলেছে।
জাকারিয়া নিউজবাংলাকে জানান, ফেসবুকে সালামের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তিনি পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোনো কাজ করতে পারবেন জানানোর পর একটি পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেড় লাখ টাকা দেন। কিন্তু টাকা নেয়ার পর সালাম উধাও, পাসপোর্টটিও ফেরত দেয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় তিনি অভিবাসন নিয়ে জটিলতায় ভুগছেন বলে জানান।
সালামের খোঁজ পাওয়া কঠিন
বামনার আমতলী গ্রামে একটি বাড়িতে গিয়ে সালামের বড় স্ত্রী ও তার সন্তানকে পাওয়া যায়।
সেই নারী নিজের নাম বলতেও রাজি হননি। সালামের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলেও কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
পরে নানাভাবে সালামের মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করে বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আবাসিক হোটেলে চাকরি করতাম, এখন মুক্তখবর নামের একটি দৈনিকে বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ করি।’
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত, তাদের ধরিয়ে দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব বলে বেড়াচ্ছে।’
বাড়ি করার টাকা কোথায় পেয়েছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পৈতৃক কিছু জমি বিক্রি, ডিপিএস ও শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা জোগাড় করে বাড়ি করেছি।’
ঢাকার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতার দাবিও করেন সালাম। বরগুনার পুলিশ সুপার ও বামনা থানার ওসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি তার।
পুলিশ যা বলছে
বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বামনা থানায় সালামের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় জেল খেটেছেন তিনি। ঝুমুর অভিযোগ করার পর আমরা তার বাড়িতে খোঁজ নিই। তিনি বর্তমানে এলাকায় নেই।’
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক বলেন, ‘সালামের বিরুদ্ধে ঢাকার এক ব্যবসায়ী প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। আমি বিষয়টি দেখতে বামনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য