কখনও সাংবাদিক, কখনও গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কখনও বা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী বা কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যখন যার কাছে যে পরিচয় দিলে সুবিধা, সেটিই দেন তিনি।
এমন বহুরূপী চরিত্রের নাম আবদুস সালাম। বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আমতলী গ্রামের বান্ধাকাটা এলাকায়।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। বরগুনায় তার খোঁজে এসে ব্যবসায়ীরা জানান, অটো পার্টস বিক্রিকে পেশা দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সালাম। তবে তাকে এখন পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।
কর্মজীবনের শুরুটা হোটেল বয় হলেও এখন বিত্তশালী। বিয়ে করেছেন দুটি। বামনার আমতলী গ্রামে দুই স্ত্রীর জন্য দুইটি দ্বিতল বাড়ি করেছেন। এই বাড়ি দুটি করতে যে অঢেল খরচ হয়েছে, সেটি দেখলেই বোঝা যায়।
বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। একটিতে এক স্ত্রী ও তার দুই ছেলে থাকেন, আরেকটি খালি থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন।
বিভিন্ন সময়ে তিনি ছিনতাই, চুরি ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন অনেকবার। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আবার শুরু করেন নতুন নতুন ফন্দি।
বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান সগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সালামের বিরুদ্ধে এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে বামনা থানায় চুরির অভিযোগে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় মাসখানেক জেল খাটার পর এরপর তিনি এলাকা ছাড়েন।
‘শুনেছি ঢাকায় হোটেলে চাকরি ও পরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কাজ করতেন। তবে এসব করে দুটি বাড়ি করা অসম্ভব। সব শেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তাকে প্রচারণায় দেখেছি। ওই সময় লোকমুখে আমি যতটুকু শুনেছি, সালাম ঢাকাতে বেশ কিছু অর্থ প্রতারণায় জড়িয়ে নাকি এলাকায় ফিরেছেন।’
তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন থানায় চুরি, প্রতারণা, ছিনতাই ও জাল টাকার কারবারের কয়েকটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর বামনা থানায় চুরির মামলা ছাড়াও ঢাকার রামপুরা থানায় জাল নোটের কারবারের অভিযোগে মামলা হয় ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর। ঢাকার সূত্রাপুর থানায় চুরির অভিযোগে মামলা হয় ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর।
ছিনতাই, নারী কেলেঙ্কারিসহ সম্প্রতি বামনায় ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চন কেন্দ্র করে সহিংসতার অভিযোগেও একাধিক মামলা রয়েছে।
২০০৬ সালের দিকে বামনা উপজেলার তার নিজ বাড়ির পাশের একটি বাজারের এক ব্যবসায়ীর দোকানে চুরির অভিযোগে এলাকা ছাড়েন সালাম। এই ঘটনায় ওই ব্যবসায়ী মামলা করলে কিছুদিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি।
বাড়ি ছাড়ার পরে ঢাকার মহাখালীতে একটি আবাসিক হোটেলে বয়ের চাকরি জুটে যায় তার। এরপর একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবেও পরিচয় দিতে শুরু করেন। মুক্তখবর নামে সংবাদপত্রের পরিচয়পত্রও জোগাড় করেন।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ডিবি অফিসার সেজে প্রতারণার চেষ্টাকালে ধরা পড়েন সালাম। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা হয় এবং তিনমাস বন্দি থেকে জামিন পান।
ব্যবসায়ীদের যে অভিযোগ
ছিনতাই, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতা, ডলারের কারবারি আরও নানা পেশার পরিচয় দিয়ে বেড়ান তিনি। সচিব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবার গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকতার্দের সঙ্গে সখ্যতার গল্প বানিয়েও মানুষ ঠকানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ঢাকার নবাবপুরের মেসার্স অথি অ্যান্ড বিনতি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকানের মালিক ঝুমুর কর্মকারের কাছ থেকে তিনি ১৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন বলে ওই ব্যবসায়ী ঢাকার ওয়ারী থানা ও বরগুনা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
একই এলাকার গাড়ি যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী তানভির হোসেনের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা, ঢাকার মুগদার আসবাবপত্র ব্যবসায়ী সাজেদুল হক ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন সালামের বিরুদ্ধে।
নবাবপুরের যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী ঝুমুর কর্মকার জানান, সালাম প্রায়ই তার দোকানে যন্ত্রাংশ বিক্রি করতেন। অল্পদিনেই সখ্য তৈরি হয়। তার কাছ থেকে প্রায়ই দুই এক লাখ টাকার যন্ত্রাংশ কিনতেন।
‘এক পর্যায়ে তিনি আমাকে কমদামে বিভিন্ন প্রকার পার্টস বিক্রি করবেন বলে প্রলোভন দেখান। আমি প্রলোভনে ভুলে যাই। ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ আমি তার কাছ থেকে পার্টস কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা দেই। টাকা দেয়ার সময় তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি করি।
‘টাকা গ্রহণের পর থেকে তিনি লাপাত্তা। তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েও পাইনি। থানায় মামলা করেছি। তবুও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি বর্তমানে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি’- বলেন ওই ব্যবসায়ী।
গত ২৩ মার্চ বরগুনা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন ঝুমুর কর্মকার। ওই দিনই বামনা থানার ওসি হাবিবুর রহমানকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখে দেন পুলিশ সুপার। পুলিশ তাকে খুঁজতে বাড়িতে গেলে ২৬ মার্চ তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘টাকা নেয়ার ঘণ্টাখানেক পর ফোন বন্ধ থাকায় আমার সন্দেহ হয়। বেশ কিছুদিন তার নম্বর বন্ধ পেয়ে নিশ্চিত হই সালাম প্রতারক। পরে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অনুসন্ধান করে ১৩টি নম্বর বের করি এবং প্রতিদিনই চেষ্টা করি যোগাযোগের।
‘আগস্ট মাসের শেষের দিকে হঠাৎ একদিন তার একটি নম্বর খোলা পেয়ে ওয়ারী থানায় যোগাযোগ করি। পুলিশের সহায়তায় জানতে পারি, সালাম মুগদা হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান করছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর আমি লোকজন নিয়ে গিয়ে মুগদা মেডিক্যালের সামনে থেকে তাকে আটক করি।
‘এ সময় সে সাংবাদিক পরিচয় দেয়, পুলিশ দেখে চিৎকার করে। পরে পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর পলাশ সরকার তাকেসহ আমাদের মুগদা থানায় নিয়ে যায়। থানায় গিয়ে সে টাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং সময় নিয়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়।’
ওই মুচলেকায় সালাম ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন। তিনি ঠিকানা দেন বগুড়া সদর।
সালাম ঢাকায় ৫৬/৩ উত্তর মুগদাপাড়ার বাসায় থাকতেন। মুচলেকায় দেয়া নির্দিষ্ট তারিখে টাকা না দিয়ে তিনি আবার ফোন বন্ধ করে রাখেন। পরে মুগদা থেকে ডেমরার কাজলার পাড় এলাকায় পরিবারসহ চলে যান।
আমি সেখান তাকে খুঁজতে গেলে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বামনায় চলে আসেন সালাম।
ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী নিউ এসবি মেশিনারিজের মালিক তানভির হোসেন বলেন, ‘সালাম আমাকে জানায়, তিনি চায়নায় পার্টসের ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে আমিও তার কাছ থেকে অনেক পার্টস কিনেছি।
‘যেহেতু আমাকে দেশের বাহির থেকে অনেক পার্টস কিনতে হয়, সেজন্য ডলারের প্রয়োজন হয় খুব বেশি। কিছুটা কম খরচায় ডলার কেনার জন্য তিনি আমাকে উৎসাহ জোগান। আমিও রাজি হয়ে যাই। ডলার কিনতে প্রায় ২৬ লাখ টাকা দেই তাকে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি তিনি প্রতারণা করবেন। আমার সব টাকা নিয়ে তিনি এখন লাপাত্তা। আমি এখন নিঃস্ব।’
ঢাকার মুগদা বিশ্বরোড এলাকায় চায়না ফার্নিচারের মালিক সাজেদুল ইসলামের কাছ থেকেও একই প্রক্রিয়ায় ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাজেদুল জানান, ওয়ারড্রোব ও খাট কেনার সূত্র ধরে পরিচয় হয় সালামের সঙ্গে। তিনি চীন থেকে কেমিক্যাল বোর্ড সরবরাহ করবেন বলে টাকা দেন। কিন্তু লাপাত্তা হয়ে যান।
প্রতারণার জালে প্রবাসীও
বামনা সদর ইউনিয়নে নিজামতলী গ্রামের অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী জাকারিয়া হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও দেড় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মিলেছে।
জাকারিয়া নিউজবাংলাকে জানান, ফেসবুকে সালামের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তিনি পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোনো কাজ করতে পারবেন জানানোর পর একটি পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেড় লাখ টাকা দেন। কিন্তু টাকা নেয়ার পর সালাম উধাও, পাসপোর্টটিও ফেরত দেয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় তিনি অভিবাসন নিয়ে জটিলতায় ভুগছেন বলে জানান।
সালামের খোঁজ পাওয়া কঠিন
বামনার আমতলী গ্রামে একটি বাড়িতে গিয়ে সালামের বড় স্ত্রী ও তার সন্তানকে পাওয়া যায়।
সেই নারী নিজের নাম বলতেও রাজি হননি। সালামের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলেও কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
পরে নানাভাবে সালামের মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করে বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আবাসিক হোটেলে চাকরি করতাম, এখন মুক্তখবর নামের একটি দৈনিকে বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ করি।’
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত, তাদের ধরিয়ে দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব বলে বেড়াচ্ছে।’
বাড়ি করার টাকা কোথায় পেয়েছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পৈতৃক কিছু জমি বিক্রি, ডিপিএস ও শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা জোগাড় করে বাড়ি করেছি।’
ঢাকার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতার দাবিও করেন সালাম। বরগুনার পুলিশ সুপার ও বামনা থানার ওসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি তার।
পুলিশ যা বলছে
বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বামনা থানায় সালামের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় জেল খেটেছেন তিনি। ঝুমুর অভিযোগ করার পর আমরা তার বাড়িতে খোঁজ নিই। তিনি বর্তমানে এলাকায় নেই।’
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক বলেন, ‘সালামের বিরুদ্ধে ঢাকার এক ব্যবসায়ী প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। আমি বিষয়টি দেখতে বামনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য