করোনাভাইরাসের সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে তিন শয্যার আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রসাশক আনোয়ার হোসেন আকন্দ ইউনিটটির উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল লক্ষ্মীপুর। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা যে কোনো সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।’
করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের সচেতনতাই পারে করোনা রোগ থেকে মুক্ত রাখতে। কাজেই ৩১ দফা নিদের্শনা মেনে চললে কোনো সমস্যা হবে না।’
গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর বড় বড় শহরগুলোতে হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকার বিষয়টি সামনে আসে। এই পরিস্থিতিতে সরকার বিদেশ থেকে বেশ কিছু শয্যা কিনে আনে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে পড়েছে, সেটি রোগীদেরকে দ্রুত অসুস্থ করে দিচ্ছে। তাদের অক্সিজেন লাগছে বেশি। পাশাপাশি দিতে হচ্ছে আইসিইউ সুবিধা।
এই পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন জেলাতে আইসিইউ সুবিধা স্থাপন করছে। এরই মধ্যে ভোলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় আইসিইউ শয্যা পাঠানো হয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রেও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরিশালে বিশেষজ্ঞের অভাবে ২৪ শয্যার আইসিইউ ইউনিট পরিচালনা করছেন একজন অজ্ঞানবিদ। ভোলা, পটুয়াখালীতে শয্যা সংযোজনই করা হচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুরে কী পরিস্থিতি, সেটি অবশ্য আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধনের সময় কিছু জানানো হয়নি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এ এইচ এম কামরুজ্জামান, সিভিল সার্জন আবদুল গফফার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পৃথক অভিযান চালিয়ে ৪২টি স্বর্ণের বার এবং অলঙ্কার উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। এ সময় আটক করা হয়েছে ৫ চোরাকারবারিকে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবননগর উপজেলার পাতিলা গ্রাম, হাসাদহ বাসস্ট্যান্ড ও জীবননগর পৌর এলাকার বাজারপাড়ায় ওই পৃথক অভিযান চালানো হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় ৫ কেজি, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
পুলিশ ও বিজিবি জানায়, স্বর্ণ চোরাচালান চেষ্টার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে জীবননগর উপজেলার পাতিলা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালানোর চেষ্টা করে দুই ব্যক্তি। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনের আসনে বসা ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পড়ে গেলে তাকে আটক করা হয়। পরে তার দেহ তল্লাশি করে ১৬টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। আটক সেলিম হোসেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের জাফর আলীর ছেলে।
অপরদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবননগর পৌর এলাকার বাজারপাড়ায় অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় এক চোরাকারবারি। পরে ওই মোটরসাইকেল তল্লাশি করে দেড় কেজি ওজনের ১২টি স্বর্ণের বার, একটি চেইন ও দুটি ব্রেসলেট উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া স্বর্ণ চোরাচালানের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জীবননগর উপজেলার হাসাদহ বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেটকারসহ চারজনকে আটক করা হয়। এ সময় প্রাইভেটকারটি তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় ১৪টি স্বর্ণের বার। যার ওজন প্রায় আড়াই কেজি। আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ২৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫১ টাকা।
আটককৃতরা হলেন- নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জিহাদ মোল্লার ছেলে ওবাদুল মোল্লা, তমসুল মোল্লার ছেলে মাহাবুব হাসান, ইনসান কাজীর ছেলে রিয়াজ কাজী এবং একই জেলার নড়াগাতী উপজেলার থাশিয়ান গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে শেখ সোহেল রানা।
ঝিনাইদহ মহেশপুর-৫৮ বিজিবির পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দিয়ে জীবননগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বারগুলো চুয়াডাঙ্গা ট্রেজারি অফিসে জমা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:১৮ কোটি মানুষের জন্য দেশে বিচারকের সংখ্যা কম। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার এ কথা বলেছেন।
শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ বিচার বিভাগের আয়োজনে শহীদ সোহেল আহম্মেদ জগন্নাথ পাড়ে স্মৃতি সম্মেলনকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় তিনি ওই কথা বলেন।
বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, ‘নানা ধরনের জটিলতার কারণে বিচার দ্রুত সময়ে হয়ে থাকে না। এ ক্ষেত্রে বিচারকরা মূল ভূমিকায় নয়। অনেক মামলায় সাক্ষীর কারণে সময় পার হয়। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিচারক ও আইনজীবী উভয়ের ভূমিকা রয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।’
বক্তব্যে তিনি সিরাজগঞ্জ আদালতে মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হচ্ছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মো. নাজিরের সভাপতিত্বে ‘আদালতে বিচারাধীন মামলা বিশেষত পুরাতন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাসমূহ অগ্রাধিকারভিত্তিক দ্রুত নিষ্পত্তি আইনি সহায়তা’ মতবিনিময় সভা হয়।
এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক নাসিরুল হক, ২-এর বিচারক সালমা খাতুন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আহসান হাবীব, সহকারী প্রসিকিউটর আব্দুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কায়সার আহমেদ লিটন।
এর আগে সিরাজগঞ্জ আদালত চত্বরে নির্মিত ন্যায়কুঞ্জ ভবনের উদ্বোধন করা হয়। পরে আদালত চত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন বিচারপতি নাইমা হায়দার।
আরও পড়ুন:বরিশাল নগরীর বান্দরোডস্থ বঙ্গবন্ধু কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪টি বসতঘর পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। সে সঙ্গে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৪টি বসতঘর। এতে ৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে শেষে শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতে প্রেরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বৈদ্যুতিক গোলযোগেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। তবে তদন্ত না করে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু কলোনির মো. কালাম হাওলাদারের বসতঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও মুহুর্তের মধ্যে তা আশপাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে বরিশাল সদর ও নৌ ফায়ারা স্টেশনের সদস্যরা এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন তারা। তার আগেই কালাম হাওলাদারের বাড়ির পাশের মলি বেগম, নয়ন ফকিরসহ ৪ জনের বসতঘর পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এছাড়া আরও ৪টি ঘর আংশিক পুড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. বেল্লাল উদ্দিন বলেন, ‘বরিশাল সদর নৌ ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে আশপাশের বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের মোট ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। তবে এর মধ্যে চারটি বসতঘর পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’
তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় ৩ জন আহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আহতদের দ্রুত শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনের গায়ে আগুনের তাপ লেগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সেলিম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বৈদ্যুতিক মিটারে শর্টসার্কিটের কারণে আগুন লাগে বলে জানালেও আগুন লাগার কারণ তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেল্লাল উদ্দিন।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এক ফল ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ধান্যঘরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত ৪৫ বছর বয়সী বাবর আলী একই গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি পেশায় ফল ব্যবসায়ী ছিলেন।
নিহতের স্ত্রী মহিমা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত তিন ব্যক্তি আমার স্বামীকে বাড়িতে খুঁজতে আসেন। তিনি বাড়িতে না থাকায় তার মোবাইল নম্বর চান তারা। আমি মোবাইল নম্বর দিতে না পারায় চলে যান তারা।
তিনি বলেন, রাতে আমি ও আমার ছেলে ঘরের ভেতর ঘুমাচ্ছিলাম। আমার স্বামী বারান্দায় ঘুমাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে ডেকে উঠানে নিয়ে যান অজ্ঞাত সেই ব্যক্তিরা। এ সময় ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে থাকেন তারা।
মহিমা খাতুন বলেন, পরে আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে পালিয়ে যান তারা। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আল ইমরান জুয়েল জানান, বাবর আলীর বাম কাঁধ ও গলায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, হত্যার প্রকৃত কারণ জানতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে।
সিলেট নগরবাসীর দুর্ভোগের অপর নাম জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় নগরের রাস্তাঘাট। বাসাবাড়ি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে পানি। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এ পর্যন্ত হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এরপরও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাননি নগরবাসী।
এবার সিটি নির্বাচনের আগেও আলোচনায় নগরের জলবদ্ধতার বিষয়টি। এ সমস্যাটি সমাধানই নির্বাচিত মেয়র কাউন্সিলরদের বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতামুক্ত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া নগরকে বন্যামুক্ত রাখতে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং সুরমা নদী খননেরও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের, তবে একাধিক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমে আসে, কিন্তু গত বছরের জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকেই বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে নগরে। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরের বেশির ভাগ এলাকা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প নিয়েছে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এখানে বিপুল ব্যয় করা হয়েছে, কিন্তু নগরবাসী তেমন সুফল পায়নি। তাই আগামী দিনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাদের জন্য জলাবদ্ধতা নিরসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’
ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘নগরের ছড়া, খালগুলো অনেক দিন ধরেই বেদখল হয়ে আছে। প্রভাবশালীরা এগুলো দখল করে রেখেছেন। বেদখল হওয়া ছড়া-খালের পুরোটা উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া যেগুলো এখনও দখল হয়নি, সেগুলোও ময়লা- আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।’
জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নগরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রকল্প গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন ফারুক মাহমুদের।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, নগরে ছোট বড় মিলিয়ে ১১টি ছড়া প্রবাহমান। ছড়ার ১৬টি শাখা ছড়াও আছে। এসব ছড়া-খাল সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়া-খালগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এর বাইরে নালা-নর্দমা আছে ৯৭০ কিলোমিটার। এতে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পাকা ড্রেন আছে। ছড়া ও ড্রেন দখল এবং ভরাটের কারণেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় নগরে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা যায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৯ সালে ছড়া-খাল খনন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১২ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আরও ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। সব মিলিয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যয় করা হয় ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় অন্যান্য কাজের সঙ্গে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়।
অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের কারণেই বিপুল অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও নগরের জলাবদ্ধতা দূর সম্ভব সহয়নি দাবি করে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান মেয়রকে সরকার প্রচুর বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাতে পারেননি। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ করে কসমেটিকস উন্নয়ন করেছেন। প্রচুর লুটপাট হয়েছে। সে কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমেনি।’
আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে শুরুতেই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করব। এ ছাড়া বন্যায় নগর যাতে বড় ক্ষতির শিকার না হয়, এ জন্য সুরমা নদী খনন ও শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেব।’
জাতীয় পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘গত চার মেয়াদে সিলেট সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়রকে জনগণ দেখেছে। তারা কেউই জলাবদ্ধতামুক্ত নগর ওপর দিতে পারেননি। ফলে জনগণ মনে করে এই দলের পক্ষে নগরের জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব না। তাই জনগণ এবার পরিবর্তন চায়। আমি নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবাতা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’
দলীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে এবারের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হননি বিএনপি নেতা ও বর্তমান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমি গত ১৩ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করি। তার সুফল নগরবাসী পাচ্ছেন। এখন আর আগের মতো জলবদ্ধতা হয় না, তবে গত বন্যার পর ছড়া, খাল ও ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় কয়েক দিন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল।’
আরিফ বলেন, ‘এ ছাড়া অতিবৃষ্টিতে নগরের আশপাশের টিলা ধসেও খালগুলো ভরাট হয়ে যায় এবং সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় নগরের পানি নদীতে নামতে পারে না। এ জন্য জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব সমস্যার সমাধান কেবল সিটি করপোরেশনের দ্বারা সম্ভব নয়। সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এ ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকা দেখতে এসেছিলেন। তখন বন্যা মোকাবিলায় তার কাছে সুরমা নদী খনন এবং শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেছি। তিনি বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় দেখবেন বলে কথাও দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, এর কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চয়ই নগরবাসী দেখতে পাবেন।’
এ প্রসঙ্গে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে নগরের ড্রেনগুলোর ব্যাপক সংস্কার হয়েছে, কিন্তু অনেক স্থানে দেখা যায় সড়ক থেকে ড্রেন উঁচু। ফলে সড়কের পানি ড্রেনে নামতে পারে না। তা ছাড়া সড়ক থেকে পানি ড্রেনে নামার পর্যাপ্ত ছিদ্রও নেই। আবার ড্রেন-ছড়াগুলোর মুখ আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে। ফলে পানি নদীতে নামতে পারছে না।
‘বড় অঙ্কের প্রকল্প বাস্তায়নের পাশপাশি সেসব দিকও খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা কোন সুফল মিলবে না।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় খাবারের দোকানি ও তার কর্মচারীর মারধরে মো. আলমগীর নামের এক ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে পতেঙ্গার চরপাড়া সৈকত এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫০ বছর বয়সী আলমগীর চরপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পতেঙ্গা থানার ওসি আফতাব হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘কথা কাটাকাটির জেরে চরপাড়া সৈকত এলাকার এক ভাতের হোটেল মালিকের সঙ্গে নিহত আলমগীর মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ওই ভাতের হোটেল মালিক ও তার কর্মচারী মিলে আলমগীরকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞা হারালে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চার্জার ফ্যান বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে ফতুল্লার কাশিপুরের খিল মার্কেট শেখ বাড়িতে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী মো. সালাম মন্ডল ও তার স্ত্রী ৪০ বছর বয়সী বুলবুলি বেগম, তাদের মেয়ে ২৭ বছর বয়সী সোনিয়া আক্তার, ছেলে ২৫ বছর বয়সী মো. টুটুল এবং ৭ বছরের শিশু মেহজাবিন।
নাটোর বাসিন্দা ওই পরিবার কাশিপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই কাজী মাসুদ রানা বলেন, ‘দগ্ধরা সবাই একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরের দিকে হঠাৎ ঘরের প্লাস্টিক ফ্যান বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ফ্যানে আগুন লেগে যায় ও সারা ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। তখন ঘরে থাকা নারী-শিশুসহ পাঁচজনই দগ্ধ হন।’
দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মো. সোহাগ বলেন, ‘সালাম মন্ডল রিকশাচালক। তার স্ত্রী বুলবুলি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। অন্যরা তাদের ছেল-মেয়ে।
‘রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ফ্যানে আগুন লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের চিৎকারে আশপাশে লোকজন ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দগ্ধদের মধ্যে সালাম মন্ডলের শরীরের ৭০ শতাংশ ও টুটুলের ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে। আর সোনিয়ার ৪২ শতাংশ, শিশু মেহজাবিনের ৩৫ শতাংশ ও বুলবুলির শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।’
তাদেরকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান এ চিকিৎসক।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য