ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম আসলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ছোটবেলা থেকেই বাদ্যযন্ত্রের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। বিরল বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহের আসক্তি থেকেই আজ অবধি ছুটে চলেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিভিন্ন জায়গা থেকে নষ্ট, ভাঙ্গা, পুরাতন বাদ্যযন্ত্রসহ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করেছেন। কেউ আবার নিজ উদ্যোগে সস্তায় কিংবা বিনা মূল্যে দিয়েছেন পছন্দের বাদ্যযন্ত্রটি। এভাবে সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৬০০ বিরল বাদ্যযন্ত্র।
১৯৪৪ সালে দাদা নবাব আলী শহরের জি কে এম সি সাহা রোডের বড় বাজারে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নবাব এন্ড কোং’ নামে একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকান। দাদার মৃত্যুর পর বাবা জালাল উদ্দিন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসাটি পরিচালনা করেন। বংশপরম্পরায় স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ১৯৯২ সালে বাবাকে সহযোগিতা করতে ব্যবসায় যোগ দেন আসলাম।
দোকানে অনেক পুরাতন বেহালা, সেতার ও তানপুরা পড়ে থাকতে দেখে সেগুলোর যত্ন নিতে শুরু করেন তিনি। এক সময় ঐতিহ্যবাহী এসব বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। বর্তমানে রেজাউল করিম আসলাম এই দোকানের স্বত্বাধিকারী।
‘নবাব অ্যান্ড কোং’ নামে দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, দোকানটি এখন আর শুধু দোকান নয়, পরিপূর্ণ একটি বাদ্যযন্ত্রের ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। এগুলো সংগ্রহে রাখার জন্য ইতিমধ্যে তিনি ‘এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম’ নামে একটি জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠের বিপরীত দিকে একটি গির্জার নিচতলায় এই জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
কথা হয় আসলামের সাথে। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, বাংলাদেশে লোকসংগীতের বিকাশ ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করছেন। মূলত শখের বশেই বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করেন তিনি। বহু বাদ্যযন্ত্র নতুন প্রজন্মের চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তিনি সেগুলো তাদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন। বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি এগুলো নিয়ে গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এখন পুরাতন ভাঙ্গা বাদ্যযন্ত্র মেরামত করার কারিগররাও হারিয়ে যাচ্ছেন। ফলে নিজেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র মেরামত করছেন।
তিনি আরও জানান, জাতীয় জাদুঘরের ২৮ নম্বর গ্যালারিতে তার সংগ্রহে থাকা ৩২টি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া ‘নোভিস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সাংস্কৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। ‘নোভিন আর্টিস্টিক এডুকেশন সেন্টার’ নামের একটি শিক্ষালয়ও পরিচালনা করছেন। সেখানে উপমহাদেশীয় ও পাশ্চাত্য রীতির সমন্বয়ে সংগীত, নৃত্য, চারুকলা, গিটার, বেহালা এবং দোতারার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
আসলাম সবচেয়ে বেশি বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর কাছ থেকে। এ ছাড়া যাদের কাছে ভাঙা, পুরাতন বাদ্যযন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে তারা মেরামত করতে আসে। আবার অনেকে যৎসামান্য টাকায় বিক্রি করে দেয় অথবা বিনা মূল্যে দিয়ে দেয়। করোনা মহামারি শেষ হলেই সংগ্রহে থাকা বাদ্যযন্ত্রগুলোর স্থায়ী প্রদর্শনী করা হবে বলেও জানান তিনি।
আসলামের সংগ্রহে থাকা বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে- একতন্ত্রী বীণা, সেতার, সারেঙ্গি, এসরাজ, তম্বুরা, বেহালা, গোপীযন্ত্র, ব্যাঞ্জো, সারিন্দা, আনন্দ লহরি, সুরবাহার, ম্যান্ডেলিন, তুবড়ি, বাঁশি, শঙ্খ, সানাই, ক্ল্যারিওনেট, ট্রাম্পেট, হারমোনিয়াম, প্রেমজুড়ি, নাকাড়া, ঢোল, ডমরু, খঞ্জরি, মৃদঙ্গ, তবলা, ঝাঁঝর, ঘণ্টা, খঞ্জনি, করতাল, ঘড়ি, কৃষ্ণকাঠি, মেকুড়, নূপুর, সেকাস, পাখোয়াজ ও শারদ, চেম্পারেঙ, দভণ্ডি, চিকারা, যোগী সারঙ্গী, মুগরবন, অ্যাকোর্ডিয়ান, ঘেরা, পেনা, শিঙা ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও আসলামের সংগ্রহে জলসাঘরের তৈজসপত্রও আছে। এর মধ্যে রয়েছে - ফুলের সাজি, ফুলদানি, প্যাঁচানো ফুলদানি, সুরাপাত্র, ঘণ্টা, হুঁকো, তামাপাত্র, পানিপাত্র, মোমদানি, দেয়াল নকশি, খানদানি হুঁকো, পিকদানি, ছাইদানি, দুধপাত্র ইত্যাদি।
সংগৃহীত বাদ্যযন্ত্রগুলো নিয়ে আসলাম ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ লোকজ মেলায় প্রথম প্রদর্শনী করেন। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন উৎসবে বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শন করে আসছেন।
২০০৪ সালে প্রদর্শনী করেন জয়নুল সংগ্রহশালায়। ২০০৬ সালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ঢাকার বৈশাখী উৎসবেও আসলাম যন্ত্রগুলো প্রদর্শন করেন। ২০০৮ সালে জয়নুল উৎসব, ২০১২ সালে মোতাহার হোসেন বাচ্চুর জন্মবার্ষিকী, ২০১২ সালে হালুয়াঘাটে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে, ২০১৬ সালে ঢাকায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব, ২০১৭ সালে সিলেটে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের লোকজ উৎসবে আসলাম তার বাদ্যযন্ত্রগুলোর প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জাতীয় জাদুঘরের ২৮নম্বর গ্যালারিতে ৩২টি পুরনো বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শন করেন।
২০১৯ সালে হালুয়াঘাটের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে তিনি তার সংগ্রহশালা থেকে বাদ্যযন্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ ও যুদ্ধাস্ত্রসহ ১৪৯টি নিদর্শন দান করেন।
ছায়ানট সাংস্কৃতিক সংস্থা ময়মনসিংহের সভাপতি আপেল চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, বাদ্যযন্ত্র সংগ্রাহক রেজাউল করিম আসলামের কাজগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। বাদ্যযন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকেই দূরদূরান্ত থেকে তিনি ভাঙ্গা, নষ্ট, পুরাতন বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের অনেকই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের নামই জানে না। তাই সংগৃহীত দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো নিয়ে একটি জাদুঘর তৈরি হলে নতুন প্রজন্ম বাদ্যযন্ত্রের ধারণা ও ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবে। এ ছাড়া বাংলার সংস্কৃতি ধরে রাখতে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার প্রয়োজন।’
ময়মনসিংহ বহুরূপী নাট্য সংস্থার সচিব শাহাদাত হোসেন খান হীলু বলেন, ‘এখনকার অনেক ছেলে-মেয়ে একতারা চিনে না। বিদেশি ও আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি। দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার কমে যাওয়াসহ এর প্রদর্শনী নেই বললেই চলে। আলী আসলামের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।’
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে কক্সবজার ইনানী নৌবাহিনী জেটি ঘাটে নেয়া হয় তাদের। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তে দিয়ে প্রথম দফায় ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নেন। পরে কয়েক দফায় ঘুমধুম, তুমর্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে মোট ২৮৮ জন মিয়ারমারের সেনা ও বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা সদস্যদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাদের সে দেশের নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএনপির ৬৪ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সহ-সভাপতি সাদেক আলী, উত্তর চট্টগ্রামের চিকনন্দী ইউনিয়নের সহকারী আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা জহুরুল আলম ও কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা এম হান্নান মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে নকল মোড়ক বানিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ভেজাল মানহীন আইসক্রিম, রোবো, আইস ললি ও জুস বানানো কারখানায় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় এসব নকল খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিক্রি করার অপরাধে আইকন আইসক্রিম ফুড ও বেভারেজ কোম্পানির ম্যানেজার লিখন আহমেদকে ৫০ হাজার টাকা এবং জব্দকৃত মালামাল ধ্বংস করার পাশাপাশি কারখানিটি বন্ধ সাময়িক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা মোল্লাপাড়ার আব্দুস সালামের বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়।
কোম্পানির মালিক আব্দুস সালাম পেশায় একজন সেনা সদস্য।
অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা সজল আহমেদ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মোল্লা পাড়ার সেনা সদস্য আব্দুস সালামের বাড়িতে বিভিন্ন কোম্পানির নকল মোড়ক বানিয়ে কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, নকল আইস ললি, রোবো, জুস ও আইসক্রিমসহ শিশুখাদ্য যা দণ্ডনীয় অপরাধ।
‘আমরা এ ভেজাল কারখানায় অভিযান চালিয় নকল এসব পণ্য ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল জব্দের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার লিখন আহমেদ আটক করে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ জব্দকৃত মালামাল নষ্ট করার পাশাপাশি কারখানাটি বন্ধের নির্দেশ দেই।’
আইকন ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ম্যানেজার লিখন আহমেদ বলেন, ‘আমার মহাজন সালাম মিলিটারি মাস ছয়েক হবে কারখানাটি চালু করেছেন। উনি ফোনের মাধ্যমে ব্যবসার দেখভাল করেন। আমরা এই কারখানায় আইস ললি, রোবো, জুস ও আইসক্রিম তৈরি করে কয়েকটি জেলায় বিক্রি করতাম। আজ অভিযানের পর বুঝতে পারলাম এ পণ্যগুলো বিক্রি ও বানানো অপরাধ।’
আব্দুস সালামের বাবা ওহাব আলী বলেন, ‘আমার ছেলে ছুটিতে এসে এই কারখানাটি দিয়েছিল। এখনও সরকারিভাবে অনুমোদন পাইনি। তবে অল্পদিনেই লাইসেন্স হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে।’
মন্তব্য