হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরজুড়ে তাণ্ডবের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন সরাইল উপজেলার সৈয়দটোলার আলামিন, কালোন মিয়া এবং খৈয়াসার এলাকার অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পুলিশ লাইনস এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে হেফাজত কর্মীরা তেড়ে গেলে সেখানে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষে কয়েকজন আহত হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।
টানা দুই দিন সরকারি স্থাপনায় হামলা, সংঘর্ষের পর হরতালেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংস হয়ে উঠেছে হেফাজত সমর্থকরা।
হামলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ঘরবাড়ি, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ে।
হেফাজত কর্মীদের একজোট আক্রমণ মোকাবিলায় পুলিশ কার্যত কিছুই করতে পারছে না।
সকালে শহরে যান চলাচল শুরু করলেও হেফাজতের সন্ত্রাসে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। গাড়িগুলোকেও নিরাপদে সরিয়ে নেন মালিকরা।
সকালে শান্ত থাকলেও বেলা ১১টার পর বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে বের হতে থাকে ছাত্ররা। হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সকাল থেকে লাঠি হাতে পুরো শহরে মিছিল করেছে তারা।
বেলা ১১টার দিকে মিছিল করে পুরো শহরের বিভিন্ন জায়গায় রিকশার টায়ার, রাস্তার পাশে রাখা ইলেকট্রনিকস সামগ্রীতে আগুন দেয় মাদ্রাসা ছাত্ররা।
শহরের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব মোতায়েন থাকলেও আগের দিনের সহিংসতার পর আধা সামরিক বাহিনী বিজিবিকে দেখা যায়নি। পুলিশ যেখানে মোতায়েন ছিল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেখানেও তারা কোনো অ্যাকশনে যায়নি।
জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি ও কার্যালয়ে, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে, ভূমি অফিসে, আয়কর আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হক ভূঁইয়ার কার্যালয়ে, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার ও শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ চত্বরে আয়োজিত উন্নয়ন মেলায় আগুন দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে রেললাইনের কাঠের পাটাতনেও আগুন দেয়া হয়েছে। দুই দিন আগেও স্টেশনে আগুন দেয়ার ঘটনায় এই স্টেশনে ট্রেন থামা বন্ধ রয়েছে।
ভাঙচুর করেছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, ব্যাংক এশিয়া, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতায়ন এবং পরিবার ও পরিকল্পনা কার্যালয়।
এরপর হেফাজত কর্মীরা হামলা চালায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালীমন্দিরেও যায় হামলাকারীরা। পূজা চলাকালে তারা মন্দিরের আসবাব ও প্রতীমা ভেঙে দেয়।
হেফাজত কর্মীরা জেলা প্রেস ক্লাবে ভাঙচুর চালানোর সময় আহত হয়েছে রিয়াজুদ্দিন জামি। তিনি প্রেস ক্লাবের সভাপতি।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রাব্বি নূর শামস নিউজবাংলাকে জানান, জামির মাথায় ছয়টা সেলাই দিতে হয়েছে।
হেফাজত কর্মীদের ইটের আঘাতে এটিএন নিউজের ফটোসাংবাদিক সুমন রায়ের দাঁত ভেঙে গেছে।
এ ছাড়া হরতাল সমর্থকরা রাস্তার ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে সেগুলোতেও আগুন দিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, শহরের বাইরে থেকে প্রচুর লোক এসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। পুরো এলাকার পরিস্থিতি এখন থমথমে।
সকাল ৯টার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এর আগে সকাল ৭টার দিকে একটি মালবাহী ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে এবং এরপর ৮টায় পারাবত এক্সপ্রেস সিলেট যায়। এরপর আর কোনো ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওপর দিয়ে যায়নি।
তাণ্ডব চলেছে শুক্র ও শনিবারও
শনিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে ছাত্রদের সড়ক অবরোধের পর সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন।
শহরের সুহিলপুর ইউনিয়নের নন্দনপুর এলাকার এই সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার সুহিলপুরের জুর আলম, মজলিশপুরের সুজন মিয়া, বুধল গ্রামের বাসিন্দা কাওসার মিয়া ও মোহাম্মদ জুবায়ের এবং সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বাদল মিয়া।
এদের মধ্যে সুজন মিয়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়েন।
বাকিদের মধ্যে জুর আলম ওয়ার্কশপের কর্মী আর কাউসার ও জোবায়ের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
শুক্রবারের হামলা ছিল আরও ব্যাপক। সেখানে মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় শহরের রেলস্টেশন। মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় ও আনসার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয় পেট্রল ঢেলে। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তখন গুলি চালায় পুলিশ। আর এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়।
স্টেশনে আগুনে সংকেতব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর রেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে কোনো ট্রেন আর এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে না। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলা তিতাস কমিউটারও।
শুক্রবার রাত থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ-র্যাব মোতায়েন করা হয়। টহল শুরু করে আধা সামরিক বাহিনী বিজিবিও।
এদিন হেফাজতের বিক্ষোভের ডাক নিয়ে শহরে উদ্বেগ থাকলেও পুলিশের নিরাপত্তার আয়োজন দেখে বিকেল পর্যন্ত রাজপথে নামেনি মাদ্রাসাছাত্ররা। তবে সন্ধ্যায় আবার তুলকালাম হয়।
এর মধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রতিটি ফোঁটা রক্তের বদলা নেয়ার ঘোষণা আসে। আর রোববারের হরতাল সফল করার ডাকও জানানো হয়।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম বাবু (৩২) ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ওই ঘটনায় পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি।
নিহতের পিতা নুর ইসলাম জানান, দুপুরে আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন গরুর ঘাস কাটার জন্য সীমান্তের গালার মাঠে যায়। এ সময় অসাবধনতাবশত সীমান্তের ৭৯ নম্বর মেন পিলার পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে সেখানকার ৩২ বিএসএফ হালদারপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বাবু।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান গুলিবর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারির ওপর বিএসএফ গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিকালে শ্রীঘর বাজারের নজরুল ইসলামের দোকানের সন্মুখ থেকে ১৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। এ সময় আক্কাছ মিয়া (৩২) ও ছিদ্দিকুর রহমান (২১) নামের দুই মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়- সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ শ্রীঘর বাজারের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন কালে সন্দেহ জনক একটি সিএনজিকে থামিয়ে তল্লাশি করে। আক্কাছ মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকার মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে। ছিদ্দিকুর রহমান নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান- এ ঘটনায় নবীনগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকটি গরুসহ কোটি টাকার ভারতীয় মালপত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বুধবার (০২ জুলাই) উপজেলাদ্বয়ের ভারত সীমান্ত এলাকায় এসব মালপত্র জব্দ করা হয়। বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছিল বিজিবি। টহল দলকে দেখে চোরাকারবারিরা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে ভর্তি কার্টন ও কয়েকটি গরু রেখে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা মালপত্র ও গরুগুলো জব্দ করে। এসবের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। জব্দকৃত মালপত্র স্থানীয় কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে ।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির অভিযানিক কর্মকাণ্ড ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোরের। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালীর কেশবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত কিশোর মাহাফুজুর রহমান ওই গ্রামের মত. মতিয়ার রহমান মতির একমাত্র ছেলে।
স্বজন ও বন্ধু সোহান জানায়, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাছের একটি তালগাছ থেকে সোমবার (৩০ জুন) বিকালে মাহাফুজুর রহমান একটি সাপ ধরে টিফিন বাটিতে করে আটকে রাখে। যা পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে ওই তালগাছের কাছে গিয়ে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) তার হাতে ছোবল দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ঝিনাইদহ হাসপাতালে ভর্তিরপর অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জুয়া খেলারত অবস্থায় শিবপুর মডেল থানা পুলিশ ৭ জুয়ারিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাখপুর বাজারের পাশে বাবুল নাজিরের কলাবাগানের ভেতর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- দৌলত হোসেন (৩৮) সাং-চরআলিনগর, খোরশেদ আলম (২৪) সাং-চরসিন্দুর, ফারুক (৪৫) সাং-হরিনারায়নপুর, আলামিন (৩৮) সাং-মানিকদী, মুকসিন (৪৪) সাং-শিমুলিয়া, সেলিম (৩৫) সাং-লাখপুর ও সুরুজ (৫২) সাং-লাখপুর। পুলিশ তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও জুয়া খেলার সরঞ্জামাদী উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃত: জুয়ারীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলার সীতাকুণ্ডে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বনায়ন কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানাটিতে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান শুরু করে। এর আগে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় উচ্ছেদ করে কারখানাটির স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা এলাকায় গড়ে ওঠা আরও কিছু স্থাপনা এবং ভবনের অবশিষ্টাংশে বুধবার (০২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
উচ্ছেদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজার জায়গাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার গাছ লাগানো হবে ওই স্থানটিতে। প্রথম দফায় সেখানে দুই হাজার বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাহাজভাঙা কারখানাটি উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। এ জন্য চারা এনেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট অংশটিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।’ এই উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঝাউ, করঞ্জা ও হিজল- এই তিন প্রজাতির দুই হাজার গাছের চারা এনেছি। এখানে লাগানো হচ্ছে। এর আগে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ধ্বংস করেন জাহাজভাঙা কারখানার লোকজন।’
জেলা প্রশাসনই বনের জায়গাটিতে জাহাজভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানা স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে-কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এ ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে; কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তার স্ত্রী কোহিনূর আকতার নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কৌশলে’ বন ইজারার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামের ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে মিনি কক্সবাজার খ্যাত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত এলাকায় লুসাই পার্ক পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এই ভাঙন রোধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটন শিল্পে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে সৈকতে তীব্র ঢেউয়ের প্রভাবে বীচের আশেপাশের বেড়িবাঁধ, পুকুরপাড়, পার্ক, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় পুরো বীচটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা, এদিকে পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক।
ঘুরে দেখা যায়, বীচের দক্ষিণ পাশের প্রায় ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটি বাকি আছে সেগুলোও বেঁকে গেছে। বীচের এইপাশের ডোবায় ডুকছে সাগরের পানি। ভেঙে গেছে লুসাই পার্কের সীমানা বেড়িবাঁধ, বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয়দের তৈরি করা বেড়িবাঁধ। সাগর গর্ভে চলে যাচ্ছে বীচের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। বীচের সামনে কোনো প্রতিবন্ধক না থাকায় সাগরে ঢেউয়ের তীব্রতা পৌঁছে যাচ্ছে বীচে গড়ে উঠা দোকানপাট-স্থাপনায়।
স্থানীয় প্রবীণ কয়েকজন ব্যক্তি জানায়, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তানের আমলে ২টিপাথরের বাঁধ ছিলো, বন্দরের নব্যতা বাড়ানোর জন্য ফ্রি ড্রেজিং এর ফলে আনোয়ারা সাইডে দেয়ালটি ভেঙে যায় যার কারণে সাগরে ঢেউ সরাসরি বীচে আঘাত করছে।
পারকি সমুদ্র সৈকতে আসা রিফাত হোসেন নামের এক পর্যটল জানান, দিনদিন পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে, এখন ঢেউয়ের কারণে বাঁধ, গাছ, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এসব রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সৈকতের লুসাই পার্কের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পারকি সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করছি,আমার লুসাই পার্কের বাঁধ ভেঙে গেছে, এখানে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে, রয়েছে সরকার-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তাই এসব রক্ষার্থে বীচ এরিয়ায় বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।
পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম বলেন, শত শত ব্যবসায়ীরা পারকি বীচকে ঘিরে নিজেদের রুজিরোজগারের ব্যবস্থা করছেন, পানির স্রোত এবং ঝাউগাছ ভেঙে পড়ে আমাদের দোকানপাটের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই বীচটা আমাদের সম্পদ এটি আমাদের রক্ষা করতে হবে।
বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন,পারকি বীচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তবে এখনো তা কাগজেকলমে পাশ হয়নি। এটার জন্য স্থানীয়দের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য