‘আমি যুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধের বীভৎসতা দেখেছি। আর কোনো জাতি যেন যুদ্ধে না জড়ায়।’ বললেন ভবতোষ রায় বর্মন। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
একাত্তরে কলকাতায় থাকা কবি আল মাহমুদ লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবী সুস্থ হয় না।’
তবে একটি সশস্ত্র যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ভবতোষের উপলব্দি এই ‘আর কোনো জাতি যেন যুদ্ধে না জড়ায়। যুদ্ধের চেয়ে খারাপ কিছু হয় না।’
বুধবার রাতে নগরের তোপখানা এলাকায় ভবতোষ রায় বর্মনের বাসায় কথা হয় তার সঙ্গে। একাত্তরের সেই তরুণ এখন বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। তবু তারুণ্য টগবগ করে তার কথায়।
পঞ্চাশ বছর আগের সেই মার্চের স্মৃতিচারণ দিয়ে শুরু হয় আলাপ। মুক্তিযুদ্ধ আর বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ আলাপচারিতায় কখনও শহীদ সহযোদ্ধার কথা মনে পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন, আবার কখনও ক্ষোভে তার চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে ওঠে। দুই হাজার একুশের প্রবীণ ভবতোষ নন, একাত্তরের তরুণ ভবতোষ ফিরে আসেন তার কথায়।
একাত্তরে তরুণ ভবতোষ রায় বর্মন কাজ করতেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে। পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেও মার্চের আগে থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হন। তারও আগে বায়ান্নতে ভাষা আন্দোলনের সময়, ছাত্র থাকা অবস্থায় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন ভবতোষ।
ভবতোষ বর্মনের মা বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী চন্দ্রাবতী রায় বর্মন। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। তিনিও শিল্পী। ফলে ঘরেই পেয়েছেন একটি শিল্পিত, স্বাধীনচেতা ও অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ।
সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারে মা-ভাই-বোন নিয়ে থাকতেন ভবতোষ রায় বর্মন। বাবা চাকরির সুবাধে থাকতেন মৌলভীবাজারে।
মার্চ থেকেই যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে। ২৫ মার্চ ভবতোষ রায় বর্মন দেখতে পান হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে। তাদের সবার হাতে লাঠি। সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দিয়ে মিছিল করছে। ভবতোষও অংশ নেন এই মিছিলে। এরপর সন্ধ্যা হতেই বদলে যায় পরিস্থিতি। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসে শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নেমেছে। দিনের জনারণ্য শহর সন্ধ্যা হতেই পুরো ফাঁকা হয়ে যায়।
ভবতোষ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে যান নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায়। সেখানে সড়কে ব্যারিকেড তৈরি করেন। তবে সেনাবাহিনীর গাড়ির শব্দ শুনেই সবাই দৌড়ে চলে যান যার যার বাসায়। এরপর কিছুদিন ঘরেই বন্দি ছিলেন। কারফিউ জারি হয়েছে। শহরে থমথমে অবস্থা। থেমে থেমে গুলির শব্দ। শহরের বেশিরভাগ মানুষই ঘরবন্দি। কেউ জানালা খোলারও সাহস করেন না। ভয়ে শিশুরাও কান্না ভুলে যায়।
এতদিন একপক্ষের গুলির শব্দ শুনলেও ৬ এপ্রিল প্রথমবারের মতো পাল্টাপাল্টি গুলির শব্দ শোনেন ভবতোষ। নগরের মিরের ময়দান এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে এই প্রতিরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
৬ এপ্রিল মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। ঘরে মা, যুবতী দুই বোন আর ছোট দুই ভাই। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন ভবতোষ। ওই দিনই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরের শাহজালাল দরগাহ এলাকার শহিদুল চৌধুরী নামের এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেন। এরপর ৮ এপ্রিল নৌপথে মৌলভীবাজারের শেরপুর, হবিগঞ্জের মার্কুলি হয়ে আশ্রয় নেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। ৯ এপ্রিল সিলেট শহরে তাণ্ডবলীলা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ওই দিনই সিলেট হাসপাতালে (বর্তমানে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল) কর্মরত অবস্থায় অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিনকে হত্যা করে হানাদারেরা।
এরপর সুনামগঞ্জ থেকে ২৬ এপ্রিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালাটে মামার বাড়িতে সপরিবারে আশ্রয় নেন ভবতোষ।
সেখানে থেকেই যোগাযোগ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। বালাটের মাইলম সীমান্তে ক্যাম্প গড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ভবতোষ।
এরপর বালাট থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শিলংয়ে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। সেখান থেকে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি জারিয়ান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। টানা ৩৫ দিন সেখানে একসঙ্গে ১২ শ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
স্মৃতি আওড়ে ভবতোষ বলেন, এই ক্যাম্পে শুরুর দিকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদও ছিলেন। পরে তিনি অন্যত্র চলে যান।
প্রশিক্ষণ শিবিরের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর বর্ণনা দিয়ে ভবতোষ বলেন, ‘চেরাপুঞ্জি সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। প্রশিক্ষণকালীন ৩৫ দিনের ৩২ দিনই ছিল তুমুল বৃষ্টি। আমরা বৃষ্টিতে ভিজেই প্রশিক্ষণ নিতাম। আবার ভেজা কাপড়েই ঘুমাতে যেতাম। পাহাড়ের উপরের ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিল জোঁকের উপদ্রব। এ যেন জোঁকের রাজ্য।’
তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রশিক্ষণ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হতো। তখন পুরো জাতীয় সংগীত কেউ পারত না। তবে দুয়েক লাইন গাওয়াও সম্ভব হতো না। ‘আমার সোনার বাংলা’ বলার পরই প্রশিক্ষণার্থী সবাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠত। একেবারে শিশুর মতো কান্না।
সেই সব দিনের স্মৃতিচারণ করে ভবতোষ বলেন, ‘অনেকে বলে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। এটা ভুল কথা। আমি একাত্তরে দেশপ্রেম দেখেছি। দেশের প্রতি গভীর প্রেম না থাকলে জাতীয় সংগীত শুনে কেউ এভাবে কাঁদত না। প্রেম না থাকলে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার প্রশিক্ষণহীন, অর্ধ-প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে হারিয়ে দিতে পারত না।’
ট্রেনিং শেষে ৫ নং সেক্টরের ৪ নং সাবসেক্টরের অধীনে যুদ্ধ শুরু করেন ভবতোষ। ৫০ জনের একটি প্লাটুনের কমান্ডার নির্বাচিত করা হয় তাকে।
ভবতোষ বলেন, ছাত্র অবস্থায় স্কাউট করতাম। ফলে কিছুটা নেতৃত্ব গুণ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া কিছু কিছু ইংরেজি ও হিন্দি জানতাম। এসব কারণে আমাকে প্লান্টুন কমান্ডার মনোনীত করা হয়।
নিজের প্লাটুন নিয়ে তামাবিল সীমান্তে যুদ্ধে অংশ নেন ভবতোষ। প্রথমদিকে সীমান্ত পার হয়ে কিছু গুলি ছুড়ে আবার ভারতীয় সীমান্তে চলে যেতেন।
যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি উল্লেখ করে ভবতোষ বর্মন বলেন, ‘জুন মাসের দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার বারহাল সেতু উড়িয়ে দেই আমরা। এতে পাঁচ জন রাজাকার নিহত হয়। তবে ওই সেতুর আশপাশেই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান। সেতু উড়িয়ে দেয়ার পর তারা আমাদের ঘিরে ফেলে। তুমুল যুদ্ধ হয়। নিরঞ্জন ও নিখিলেশ নামে আমাদের দুই সহযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের শিলং নিয়ে যাওয়া হয়। ওই যুদ্ধে আমরা কোনও রকমে প্রাণ নিয়ে বেঁচে যাই।’
ভবতোষ বলেন, ‘জাফলংয়ের রাধানগর চা বাগানে ছিল পাকবাহিনীর ঘাঁটি। আমরা ১৫ বার চেষ্টা করে এই বাগান মুক্ত করতে ব্যর্থ হই। অবশেষে ১৬তম চেষ্টায় সফল হই। এই অপারেশনে ১২ শ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়। গোয়াইনঘাট এলাকার কুখ্যাত রাজাকার আজির উদ্দিন চেয়ারম্যানকেও আটক করি আমরা।’
ভবতোষ বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম দিকে এক সম্মুখযুদ্ধে আমার সহযোদ্ধা আব্দুল মান্নার শহীদ হন। আমরা যতটা ব্রিজ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছি তার প্রতিটি বোমা তৈরির কাজ করেছেন মান্নান। আমার খুব ঘনিষ্ট ছিল। তার মৃত্যু আমার জন্য ছিল খুব বেদনাদায়ক।’
যুদ্ধ করে বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত করতে করতে গোয়াইনঘাট হয়ে ১৬ ডিসেম্বর সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় এগিয়ে আসে ভবতোষ রায় বর্মনের দল। বিমানবন্দরের পাশেই (বর্তমানে সিলেট ক্যাডেট কলেজ) পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর পান ভবতোষ বর্মনরা। সবাই আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন। বিজয় উদযাপন শুরু করেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের স্টেনগানের গুলিতেই এদিন প্রাণ হারান ভবতোষের সহযোদ্ধা হাবিবুর রহমান।
সহযোদ্ধাকে হারানোর শোকে যখন সবাই মুহ্যমান, তখন ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প থেকে গুলি শুরু হয়।
ভবতোষ বলেন, ‘পুরো যুদ্ধকালে এরকম গুলি কখনও দেখিনি। বৃষ্টির মতো হাজার হাজার গুলি ছুড়তে থাকে পাকবাহিনী। তারা চেয়েছিল আমাদের নিশ্চিহ্ন করে ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করতে।
‘তবে সেদিন আমরা কোনো রকমে বেঁচে যাই। পরদিন সকালে অস্ত্রসমর্পণে সম্মত হয় পাকবাহিনী। ফলে ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করলেও সিলেট শত্রুমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। আমরা শহরে প্রবেশ করি।’
ভবতোষ বলেন, ‘সিলেটে এসে দেখি আমরা যে সরকারি বাসায় থাকতাম তা অন্য একজনকে বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে। আমি তখন সেলিম নামে আমার এক বন্ধুর বাসায় উঠি। সাত মাস ২২ দিন পর সেখানে প্রথম সাবান দিয়ে গোসল করি। বালিশে মাথা রেখে ঘুমাই। এরপর ২৮ মার্চ বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের আনতে আবার বালাটে যাই।’
তারা সবাই ভেবেছিলেন আমি হয়তো মারা গেছি, এমনটি উল্লেখ করে ভবতোষ বলেন, আমার জন্য তারা অনেক পূজাঅর্চনা করেছেন। আমাকে ফিরে পেয়ে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার স্বপ্ন কি পুরণ হয়েছে। প্রশ্ন করি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করেছি। দেশকে সঠিকভাবে পালনের দায়িত্ব ছিল পরবর্তী সরকারগুলোর। তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরই আন্তর্জাতিক শক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করে। কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এ সবই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এসব ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেয় আমাদের অনেকে। ফলে বাংলাদেশ ভুল পথে পা বাড়ায়।
আমরা যেদিন আলাপ করছিলাম, তার মাত্র ৭দিন আগে, ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এই হামলা ঘটে।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান ভেঙে ভবতোষ বর্মনরা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন। যার মূলনীতিতে ছিলো অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এমন দেশে ৫০ বছর পরও এরকম সাম্প্রদায়িক হামলা কেনো, প্রশ্ন করি ভবতোষ রায় বর্মনকে।
তার জবাব, এই বিষ আজকের নয়। ব্রিটিশরা আমাদের মধ্যে এই সাম্প্রদায়িক বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
এতে নিজেদেরও দায় দেখছেন সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এই কমান্ডার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর সাম্প্রদায়িক শক্তি দমে যায়নি। তারা গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে গিয়ে নিজেদের আদর্শ প্রচার করেছে। নিজেদের দলে লোক ভিড়িয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন মেতে উঠেছি লুটপাট, দুর্নীতি আর হীন রাজনীতিতে। একারণেই আজ দেশের এ অবস্থা।
আরও পড়ুন:অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য