‘আমি যুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধের বীভৎসতা দেখেছি। আর কোনো জাতি যেন যুদ্ধে না জড়ায়।’ বললেন ভবতোষ রায় বর্মন। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
একাত্তরে কলকাতায় থাকা কবি আল মাহমুদ লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবী সুস্থ হয় না।’
তবে একটি সশস্ত্র যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ভবতোষের উপলব্দি এই ‘আর কোনো জাতি যেন যুদ্ধে না জড়ায়। যুদ্ধের চেয়ে খারাপ কিছু হয় না।’
বুধবার রাতে নগরের তোপখানা এলাকায় ভবতোষ রায় বর্মনের বাসায় কথা হয় তার সঙ্গে। একাত্তরের সেই তরুণ এখন বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। তবু তারুণ্য টগবগ করে তার কথায়।
পঞ্চাশ বছর আগের সেই মার্চের স্মৃতিচারণ দিয়ে শুরু হয় আলাপ। মুক্তিযুদ্ধ আর বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ আলাপচারিতায় কখনও শহীদ সহযোদ্ধার কথা মনে পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন, আবার কখনও ক্ষোভে তার চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে ওঠে। দুই হাজার একুশের প্রবীণ ভবতোষ নন, একাত্তরের তরুণ ভবতোষ ফিরে আসেন তার কথায়।
একাত্তরে তরুণ ভবতোষ রায় বর্মন কাজ করতেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে। পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেও মার্চের আগে থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হন। তারও আগে বায়ান্নতে ভাষা আন্দোলনের সময়, ছাত্র থাকা অবস্থায় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন ভবতোষ।
ভবতোষ বর্মনের মা বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী চন্দ্রাবতী রায় বর্মন। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। তিনিও শিল্পী। ফলে ঘরেই পেয়েছেন একটি শিল্পিত, স্বাধীনচেতা ও অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ।
সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারে মা-ভাই-বোন নিয়ে থাকতেন ভবতোষ রায় বর্মন। বাবা চাকরির সুবাধে থাকতেন মৌলভীবাজারে।
মার্চ থেকেই যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে। ২৫ মার্চ ভবতোষ রায় বর্মন দেখতে পান হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে। তাদের সবার হাতে লাঠি। সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দিয়ে মিছিল করছে। ভবতোষও অংশ নেন এই মিছিলে। এরপর সন্ধ্যা হতেই বদলে যায় পরিস্থিতি। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসে শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নেমেছে। দিনের জনারণ্য শহর সন্ধ্যা হতেই পুরো ফাঁকা হয়ে যায়।
ভবতোষ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে যান নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায়। সেখানে সড়কে ব্যারিকেড তৈরি করেন। তবে সেনাবাহিনীর গাড়ির শব্দ শুনেই সবাই দৌড়ে চলে যান যার যার বাসায়। এরপর কিছুদিন ঘরেই বন্দি ছিলেন। কারফিউ জারি হয়েছে। শহরে থমথমে অবস্থা। থেমে থেমে গুলির শব্দ। শহরের বেশিরভাগ মানুষই ঘরবন্দি। কেউ জানালা খোলারও সাহস করেন না। ভয়ে শিশুরাও কান্না ভুলে যায়।
এতদিন একপক্ষের গুলির শব্দ শুনলেও ৬ এপ্রিল প্রথমবারের মতো পাল্টাপাল্টি গুলির শব্দ শোনেন ভবতোষ। নগরের মিরের ময়দান এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে এই প্রতিরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
৬ এপ্রিল মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। ঘরে মা, যুবতী দুই বোন আর ছোট দুই ভাই। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন ভবতোষ। ওই দিনই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরের শাহজালাল দরগাহ এলাকার শহিদুল চৌধুরী নামের এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেন। এরপর ৮ এপ্রিল নৌপথে মৌলভীবাজারের শেরপুর, হবিগঞ্জের মার্কুলি হয়ে আশ্রয় নেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। ৯ এপ্রিল সিলেট শহরে তাণ্ডবলীলা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ওই দিনই সিলেট হাসপাতালে (বর্তমানে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল) কর্মরত অবস্থায় অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিনকে হত্যা করে হানাদারেরা।
এরপর সুনামগঞ্জ থেকে ২৬ এপ্রিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালাটে মামার বাড়িতে সপরিবারে আশ্রয় নেন ভবতোষ।
সেখানে থেকেই যোগাযোগ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। বালাটের মাইলম সীমান্তে ক্যাম্প গড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ভবতোষ।
এরপর বালাট থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শিলংয়ে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। সেখান থেকে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি জারিয়ান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। টানা ৩৫ দিন সেখানে একসঙ্গে ১২ শ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
স্মৃতি আওড়ে ভবতোষ বলেন, এই ক্যাম্পে শুরুর দিকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদও ছিলেন। পরে তিনি অন্যত্র চলে যান।
প্রশিক্ষণ শিবিরের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর বর্ণনা দিয়ে ভবতোষ বলেন, ‘চেরাপুঞ্জি সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। প্রশিক্ষণকালীন ৩৫ দিনের ৩২ দিনই ছিল তুমুল বৃষ্টি। আমরা বৃষ্টিতে ভিজেই প্রশিক্ষণ নিতাম। আবার ভেজা কাপড়েই ঘুমাতে যেতাম। পাহাড়ের উপরের ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিল জোঁকের উপদ্রব। এ যেন জোঁকের রাজ্য।’
তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রশিক্ষণ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হতো। তখন পুরো জাতীয় সংগীত কেউ পারত না। তবে দুয়েক লাইন গাওয়াও সম্ভব হতো না। ‘আমার সোনার বাংলা’ বলার পরই প্রশিক্ষণার্থী সবাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠত। একেবারে শিশুর মতো কান্না।
সেই সব দিনের স্মৃতিচারণ করে ভবতোষ বলেন, ‘অনেকে বলে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। এটা ভুল কথা। আমি একাত্তরে দেশপ্রেম দেখেছি। দেশের প্রতি গভীর প্রেম না থাকলে জাতীয় সংগীত শুনে কেউ এভাবে কাঁদত না। প্রেম না থাকলে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার প্রশিক্ষণহীন, অর্ধ-প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে হারিয়ে দিতে পারত না।’
ট্রেনিং শেষে ৫ নং সেক্টরের ৪ নং সাবসেক্টরের অধীনে যুদ্ধ শুরু করেন ভবতোষ। ৫০ জনের একটি প্লাটুনের কমান্ডার নির্বাচিত করা হয় তাকে।
ভবতোষ বলেন, ছাত্র অবস্থায় স্কাউট করতাম। ফলে কিছুটা নেতৃত্ব গুণ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া কিছু কিছু ইংরেজি ও হিন্দি জানতাম। এসব কারণে আমাকে প্লান্টুন কমান্ডার মনোনীত করা হয়।
নিজের প্লাটুন নিয়ে তামাবিল সীমান্তে যুদ্ধে অংশ নেন ভবতোষ। প্রথমদিকে সীমান্ত পার হয়ে কিছু গুলি ছুড়ে আবার ভারতীয় সীমান্তে চলে যেতেন।
যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি উল্লেখ করে ভবতোষ বর্মন বলেন, ‘জুন মাসের দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার বারহাল সেতু উড়িয়ে দেই আমরা। এতে পাঁচ জন রাজাকার নিহত হয়। তবে ওই সেতুর আশপাশেই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান। সেতু উড়িয়ে দেয়ার পর তারা আমাদের ঘিরে ফেলে। তুমুল যুদ্ধ হয়। নিরঞ্জন ও নিখিলেশ নামে আমাদের দুই সহযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের শিলং নিয়ে যাওয়া হয়। ওই যুদ্ধে আমরা কোনও রকমে প্রাণ নিয়ে বেঁচে যাই।’
ভবতোষ বলেন, ‘জাফলংয়ের রাধানগর চা বাগানে ছিল পাকবাহিনীর ঘাঁটি। আমরা ১৫ বার চেষ্টা করে এই বাগান মুক্ত করতে ব্যর্থ হই। অবশেষে ১৬তম চেষ্টায় সফল হই। এই অপারেশনে ১২ শ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়। গোয়াইনঘাট এলাকার কুখ্যাত রাজাকার আজির উদ্দিন চেয়ারম্যানকেও আটক করি আমরা।’
ভবতোষ বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম দিকে এক সম্মুখযুদ্ধে আমার সহযোদ্ধা আব্দুল মান্নার শহীদ হন। আমরা যতটা ব্রিজ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছি তার প্রতিটি বোমা তৈরির কাজ করেছেন মান্নান। আমার খুব ঘনিষ্ট ছিল। তার মৃত্যু আমার জন্য ছিল খুব বেদনাদায়ক।’
যুদ্ধ করে বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত করতে করতে গোয়াইনঘাট হয়ে ১৬ ডিসেম্বর সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় এগিয়ে আসে ভবতোষ রায় বর্মনের দল। বিমানবন্দরের পাশেই (বর্তমানে সিলেট ক্যাডেট কলেজ) পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর পান ভবতোষ বর্মনরা। সবাই আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন। বিজয় উদযাপন শুরু করেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের স্টেনগানের গুলিতেই এদিন প্রাণ হারান ভবতোষের সহযোদ্ধা হাবিবুর রহমান।
সহযোদ্ধাকে হারানোর শোকে যখন সবাই মুহ্যমান, তখন ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প থেকে গুলি শুরু হয়।
ভবতোষ বলেন, ‘পুরো যুদ্ধকালে এরকম গুলি কখনও দেখিনি। বৃষ্টির মতো হাজার হাজার গুলি ছুড়তে থাকে পাকবাহিনী। তারা চেয়েছিল আমাদের নিশ্চিহ্ন করে ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করতে।
‘তবে সেদিন আমরা কোনো রকমে বেঁচে যাই। পরদিন সকালে অস্ত্রসমর্পণে সম্মত হয় পাকবাহিনী। ফলে ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করলেও সিলেট শত্রুমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। আমরা শহরে প্রবেশ করি।’
ভবতোষ বলেন, ‘সিলেটে এসে দেখি আমরা যে সরকারি বাসায় থাকতাম তা অন্য একজনকে বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে। আমি তখন সেলিম নামে আমার এক বন্ধুর বাসায় উঠি। সাত মাস ২২ দিন পর সেখানে প্রথম সাবান দিয়ে গোসল করি। বালিশে মাথা রেখে ঘুমাই। এরপর ২৮ মার্চ বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের আনতে আবার বালাটে যাই।’
তারা সবাই ভেবেছিলেন আমি হয়তো মারা গেছি, এমনটি উল্লেখ করে ভবতোষ বলেন, আমার জন্য তারা অনেক পূজাঅর্চনা করেছেন। আমাকে ফিরে পেয়ে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার স্বপ্ন কি পুরণ হয়েছে। প্রশ্ন করি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করেছি। দেশকে সঠিকভাবে পালনের দায়িত্ব ছিল পরবর্তী সরকারগুলোর। তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরই আন্তর্জাতিক শক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করে। কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এ সবই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এসব ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেয় আমাদের অনেকে। ফলে বাংলাদেশ ভুল পথে পা বাড়ায়।
আমরা যেদিন আলাপ করছিলাম, তার মাত্র ৭দিন আগে, ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এই হামলা ঘটে।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান ভেঙে ভবতোষ বর্মনরা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন। যার মূলনীতিতে ছিলো অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এমন দেশে ৫০ বছর পরও এরকম সাম্প্রদায়িক হামলা কেনো, প্রশ্ন করি ভবতোষ রায় বর্মনকে।
তার জবাব, এই বিষ আজকের নয়। ব্রিটিশরা আমাদের মধ্যে এই সাম্প্রদায়িক বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
এতে নিজেদেরও দায় দেখছেন সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এই কমান্ডার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর সাম্প্রদায়িক শক্তি দমে যায়নি। তারা গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে গিয়ে নিজেদের আদর্শ প্রচার করেছে। নিজেদের দলে লোক ভিড়িয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন মেতে উঠেছি লুটপাট, দুর্নীতি আর হীন রাজনীতিতে। একারণেই আজ দেশের এ অবস্থা।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিব) সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বার্তায় শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার নতুন করে আরও ১১ জন (জীম্বংখালী -৩ জন এবং হাতিমারাঝিরি-৮ জন) বিজিপি সদস্য আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকা বিজিপি সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
মন্তব্য