সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছোট ছেলে ড. এস এম নাসিফ শামস রনির বিরুদ্ধে পাবনার দরিদ্র চাষিদের ব্যক্তিগত ও নদীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, বেড়া উপজেলার ওই জমি দখলকে কেন্দ্র করে টুকুপুত্র তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ভূমিহীনদের মারপিট করেছেন। পরে আহতদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও করিয়েছেন। জমি কিনে টাকা না দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয় টুকুকে জানানো হলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি।
তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী টুকু ও তার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসিফ শামস রনি। তারা বলছেন, এর পেছনে ‘রাজনীতি’ আছে। তারা সেখানে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনসহ কিছু উন্নয়ন কাজ করছেন, যা আটকাতে চাইছে একটি চাঁদাবাজ ও মাদক কারবারি চক্র।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গত ১২ মার্চ শুক্রবার এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনির নির্দেশে ও উপস্থিতিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নদীর খাস জমি ভোগদখলকারী দরিদ্র চাষিদের মারপিট করে রোপণকৃত ফসল নষ্ট করে দেয়। প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ করেন। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ১৪ মার্চ লিখিত অভিযোগও দেন তারা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পাবনা ১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি বেড়া উপজেলার পায়না এলাকায় যমুনা নদীর তীরে কিছু জমি কেনেন। পরে আশপাশের মালিকানার জমিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের জমি কৌশলে ও জোরপূর্বক দখলে নিয়ে নেন। এরপর হুমকি-ধমকি দিয়ে আশপাশের দরিদ্র চাষিদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত ও খাস খতিয়ানভুক্ত ১০০ বিঘা জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকেন।
‘এমপিপুত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। তিনি শিক্ষক মানুষ। তার কাছে জমি দখল করে প্রতিষ্ঠান করা আমরা প্রত্যাশা করি না।’
লিখিত অভিযোগে তারা আরও বলেন, জমির দখল না ছাড়ায় নাসিফ শামস রনি ১২ মার্চ সকালে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপণ করা বোরো ধান নষ্ট করে কাঁটাতার দিয়ে জমি ঘিরে নেয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের বেদম মারপিট করে। এতে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ উল্টো এমপিপুত্রের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ধরে নিয়ে যায়।
তারা আরও অভিযোগ করেন, সেদিনের ঘটনায় আহতরা বেড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগীদের নানাভাবে হয়রানি করছে পুলিশ।
১২ মার্চের ওই ঘটনার দিনই সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টে চাঁদাবাজির জন্য হামলার অভিযোগ এনে বেড়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম। মামলায় ১৪ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন- তুহিন, মহরম, কিরণ, মিলন, বাচ্চু, মানিক, লিটন, নয়ন, ইউনুছ, লালন, আশরাফুল, লায়েব, লিলন ও তামিম। তাদের মধ্যে তুহিন, মহরম ও কিরণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেড়া থানার এসআই আরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, আসামিরা বিভিন্ন সময়ে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টে চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদা না পেয়ে ১২ মার্চ তারা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলামকে মারপিট করেন।
তিনি আরও বলেন, ১২ মার্চ সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাসপাতাল থেকেও কাউকে আটক করা হয়নি। মামলার পর ১৪ মার্চ অভিযান চালিয়ে তুহিন, মহরম ও কিরণকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।
শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি গত ১৪ মার্চ পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বেড়ায় ‘অসামাজিক কাজ বন্ধ ও উন্নয়ন কাজে বাধাদানকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বেড়া পৌরসভার মুজিব বাঁধ সংলগ্ন পায়না থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, অবৈধ মাটি ও বালি উত্তোলনসহ নানা অসামাজিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি টেকনিক্যাল কলেজ ও একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা করছেন তিনি।
নাসিফ শামস রনির অভিযোগ, এলাকার ওই সিন্ডিকেটের নেতা আব্দুল মান্নান মানু ব্যাপারী (বেড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি) ও তার ভাতিজা কিরণ ব্যাপারী বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করে এসব উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন।
এই কিরণই পাওয়ার প্ল্যান্টের কেয়ারটেকারের করা মামলার আসামি, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসককে দেয়া লিখিত অভিযোগে স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, ‘এই দখলদার টুকুর ছেলে ভয় দেখিয়ে জমি কিনে নেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে জমি লিখে নিয়েছেন। কিন্তু জমির টাকা দেননি। টাকা চাইতে গেলে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মানিক ব্যাপারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর টিনের ছাপড়া ঘর তুলে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন বানভাসী ও হতদরিদ্র মানুষ।
তিনি বলেন, ‘তাদের উচ্ছেদের খবর পেয়ে শুক্রবার (১২ মার্চ) সেখানে যাই। এমপিপুত্রের লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপা ধান মাটিচাপা দিতে শুরু করলে আমি দলীয় পরিচয় দেই। নাসিফ শামস রনিকে ফসল নষ্ট না করার অনুরোধ করি। এতে উত্তেজিত হয়ে তিনি আমাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।’
বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টুকুকে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
টুকুপুত্রের করা অভিযোগ অস্বীকার করে বেড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মানু বলেন, ‘আমার জানা মতে এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনি সেখানে কিছু জমি কিনে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আশপাশের সব জমি দখলের চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষসহ আমাদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছেন এমপিপুত্র। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মহোদয়কে জানানো হলে তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি।’
এ সব অভিযোগের বিষয়ে এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা এই আসনের তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গ্রামবাসী জমি দখলের যে অভিযোগ করেছে সেটি অসত্য। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা আমার উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখানে আমার পৈত্রিক জমির ওপরে আমার মা ও বাবার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
‘স্থানীয় কিছুর মাদক ব্যবসায়ী-সন্ত্রাসী এ কাজে বাধা দিচ্ছে। তবে কাউকে উচ্ছেদ বা মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিতর্কে ফেলার চেষ্টা চলছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাসিফ শামস রনির বাবা শামসুল হক টুকু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। তবে জেলা প্রশাসন বিষয়টা তদন্ত করছে। অপরাধী যেই হোক- সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীদের ছাড় নয়। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছে।’
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেড়া অঞ্চলের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি ঝামেলা হয়েছে শুক্রবার। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে বেড়া থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
‘ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে- এমন কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘নদী তীরবর্তী যে জমি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে সেটি তার ব্যক্তিগত, না খাস তা যাচাই করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সবুর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। প্রকল্পের মূল স্থাপনার জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পৌনে ৩ একর জমি রয়েছে। তাদের নিজেস্ব জমি রয়েছে ১৬ একরের মতো। এর মধ্যে পৌনে ১৩ একর জমির খাজনা খারিজ করা আছে। আর খাস জমি রয়েছে ১.৯৮ একর। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীতে চামড়ার দাম প্রতি ফুটে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে তার প্রভাব পড়েনি বাস্তবে, আগেরবারের মতো এবারও কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
প্রতি বর্গফুট গরুর চমড়ার দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও চামড়া বিক্রি হয়েছে গতবারের মতোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কুরবানিদাতাদের থেকে তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
উত্তরার চামড়া ব্যবসায়ী হেফাজ উল্লাহ বলেন, ‘কুরবানিদাতাদের থেকে ৭৫০ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করে রীতিমতো বিপদে পড়তে হয়েছে। এই এলাকায় ভালো মানের চামড়ার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। এর ওপরে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা যায়নি।’
বাড্ডার চামড়া ব্যবসায়ী সিরজা বলেন, ‘কাঁচা চামড়ার চাহিদা এবারও তলানিতে। ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। একটি ভ্যান আর দুইজন লেবার নিয়ে যে খরচ হয়েছে তার তুলনায় মুনাফা হয়নি বললেই চলে। সারাদিনের কষ্ট বৃথা।’
খিলক্ষেতের চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, ‘আগে জানলে এত দাম দিয়ে চামড়া কিনতাম না। প্রতিবারই ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম দিতে অনাগ্রহ দেখায়। এতে আমাদের মধ্যেও দাম দিয়ে চামড়া কেনার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।’
তবে এ ব্যাপারে ট্যানারি পরিচালক ও এজেন্টরা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ দেয়া প্রস্তুতকৃত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্যানারি থেকে কাঁচা চামড়া কেনায় দাম কম পড়েছে। তবে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় সব চামড়া কেনা হয়েছে; এমন তথ্য ভুল দাবি করেছেন তারা। অনেক ভালো মানের চামড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়ও কেনা হয়েছে বলে জানান ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গতবারের মতো এবারেও ছাগলের চামড়া চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে দিয়েছেন, অনেকক্ষেত্রে দাম উঠেছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
এবারের ঈদে সবমিলিয়ে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারি মালিকরা যার সিংহভাগ সংগ্রহ হয়েছে ঈদের প্রথম দিনেই।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফেরি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিটকে নদীতে পড়ে নিখোঁজের সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর দুই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
শনিবার ভোরে উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাটে অটোরিকশাটি মেঘনা নদীতে পড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল সন্ধ্যা ৬টার দিকে নদী থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করে। অটোরিকশার ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৃত দুই নারী হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রসুলাবাদ এলাকার মোসাদ্দেক হোসেনের স্ত্রী খালেদা বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে সাগর হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগম (১৯)।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফেরি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিটকে নদীতে পড়ে নিখোঁজের সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর দুই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
শনিবার ভোরে উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাটে অটোরিকশাটি মেঘনা নদীতে পড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল সন্ধ্যা ৬টার দিকে নদী থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করে। অটোরিকশার ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৃত দুই নারী হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রসুলাবাদ এলাকার মোসাদ্দেক হোসেনের স্ত্রী খালেদা বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে সাগর হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগম (১৯)।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শনিবার(৭ জুন) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেলা সদরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে আসা আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ধারালো ছুরি, চাপাতি বা দা ব্যবহারে অদক্ষ থাকায় হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে যায়। যদিও অধিকাংশ আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—ফুলবাড়িয়া এলাকার পাবেল মিয়া (২৭), ঘাটুরা গ্রামের সেলিম (৪৫), চাঁনপুরের আরস মিয়া (২৬), জহিরুল হক (৫০), মো. মিলন (২৩), আজিজুল (২১), শাকিব (২৮), জীবন (৪০), সুমন (২৬), রামরাইলের আলামিন (২৩), আক্কাস (৪৫), উবায়দুল (৩৩), ইউবিন (২২), রহমত আলী (৫৫), সুলতানপুর এলাকার আবু সুফিয়ান (১৫), সাদেক (১৮) সহ অনেকেই। কারও হাতে, কারও বা পায়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত সুফিয়ান বলেন, পায়ের নিচে রাখা মাংস কাটতে গিয়ে অসতর্কভাবে ছুরির কোপ পায়ে লাগে। পরে হাসপাতালে এসে সেলাই নিতে হয়।
আরেকজন, রিকশাচালক আরস মিয়া বলেন, মাংস কাটার সময় হাত ফসকে ছুরি লেগে যায়। হাসপাতালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র রায় বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন রোগী আমাদের এখানে এসেছেন। এদের প্রায় সবাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। গুরুতর কেউ নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করার জন্য কলাবাগান শিশু পার্ক সংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এমনকি রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১২ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন এ বছর কোরবানির বর্জ্যের কারণে নগরবাসীর ঈদ আনন্দ বাঁধাগ্রস্ত হবে না।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০০০০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপিত হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার একান্ত সচিব জনাব মো: আবুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া পাচার ও ভারতে পুশ-ইনের যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া পাচার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন বাস্তবতায় সীমান্তজুড়ে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ভারতের দিক থেকে যেকোনো পুশ-ইন ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনী।
বিজিবির পিআরও আরও জানান, ঈদের দিনেও ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা। টহল ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে বৈধ বাণিজ্য চ্যানেলের মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে বিজিবি।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ঈদ মৌসুমজুড়েই তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানানো হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেটের সাতটি প্রধান পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের টিলা, চা-বাগান, ঝরনা ও স্বচ্ছ জলের ধারায় মুগ্ধ হতে ছুটে আসছেন সারা দেশের ভ্রমণপিপাসুরা।
সিলেট মহানগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজার, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহী ঈদগাহ ও গৌর গোবিন্দের টিলা। তবে নগরীর বাইরে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলোই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে।
সাদাপাথর (ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ): সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাদাপাথরে চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া সাদা পাথরের মেলা, স্বচ্ছ নীল জল, আর পাহাড়ের কোলে ঝরনার ধারা। ধলাই নদীর জলে মিশে প্রকৃতি এখানে যেন তার রঙের খেলায় ব্যস্ত।
রাতারগুল: দেশের একমাত্র স্বীকৃত জলাবন রাতারগুল বর্ষায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ৭৩ প্রজাতির গাছগাছালিতে ঘেরা এ বনাঞ্চলে নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
জাফলং: মেঘালয়ের পাদদেশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত জাফলং পর্যটকদের কাছে বছরের পর বছর ধরে প্রিয় গন্তব্য। পাথরের স্তূপ, ঝরনা ও খাসিয়া সংস্কৃতির পাশাপাশি শ্রীপুর চা-বাগান ও ইকোপার্কের সৌন্দর্য জাফলং সফরকে স্মরণীয় করে তোলে।
রাংপানি (গোয়াইনঘাট): সাদা পাথর ও পাহাড়ি ঝরনার মিলনস্থল রাংপানির পাশে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মোকামপুঞ্জি অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৪ কিলোমিটার।
উৎমাছড়া (কোম্পানীগঞ্জ): ঝরনার স্বচ্ছ জলের ধারা, সবুজ পাহাড় এবং বিশাল পাথরের বিছানায় ঘেরা উৎমাছড়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে।
লালাখাল (কানাইঘাট): নীলজলের লালাখাল ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। আঁকাবাঁকা নদীপথ, পাশের পাহাড়ি বন ও চা-বাগান লালাখালকে করেছে ছবির মতো সুন্দর।
লোভাছড়া (কানাইঘাট): ঐতিহাসিক লোভাছড়া চা-বাগান ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝুলন্ত সেতু, ঝরনা, খাসিয়া গ্রাম এবং ব্রিটিশ আমলের স্থাপনাগুলো একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় এখানে। সুরমা ও লোভা নদীর মিলনস্থলও এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এ্যামি বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী হাসিবুল পলাতক রয়েছেন।
নিহত এ্যামি বেগম একই ইউনিয়নের ইসরাক হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরে শনিবার ঈদের দিন সকালে হাসিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী এ্যামি বেগমের গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে পাটগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত হাসিবুলকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।
মন্তব্য