সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছোট ছেলে ড. এস এম নাসিফ শামস রনির বিরুদ্ধে পাবনার দরিদ্র চাষিদের ব্যক্তিগত ও নদীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, বেড়া উপজেলার ওই জমি দখলকে কেন্দ্র করে টুকুপুত্র তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ভূমিহীনদের মারপিট করেছেন। পরে আহতদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও করিয়েছেন। জমি কিনে টাকা না দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয় টুকুকে জানানো হলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি।
তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী টুকু ও তার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসিফ শামস রনি। তারা বলছেন, এর পেছনে ‘রাজনীতি’ আছে। তারা সেখানে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনসহ কিছু উন্নয়ন কাজ করছেন, যা আটকাতে চাইছে একটি চাঁদাবাজ ও মাদক কারবারি চক্র।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গত ১২ মার্চ শুক্রবার এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনির নির্দেশে ও উপস্থিতিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নদীর খাস জমি ভোগদখলকারী দরিদ্র চাষিদের মারপিট করে রোপণকৃত ফসল নষ্ট করে দেয়। প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ করেন। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ১৪ মার্চ লিখিত অভিযোগও দেন তারা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পাবনা ১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি বেড়া উপজেলার পায়না এলাকায় যমুনা নদীর তীরে কিছু জমি কেনেন। পরে আশপাশের মালিকানার জমিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের জমি কৌশলে ও জোরপূর্বক দখলে নিয়ে নেন। এরপর হুমকি-ধমকি দিয়ে আশপাশের দরিদ্র চাষিদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত ও খাস খতিয়ানভুক্ত ১০০ বিঘা জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকেন।
‘এমপিপুত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। তিনি শিক্ষক মানুষ। তার কাছে জমি দখল করে প্রতিষ্ঠান করা আমরা প্রত্যাশা করি না।’
লিখিত অভিযোগে তারা আরও বলেন, জমির দখল না ছাড়ায় নাসিফ শামস রনি ১২ মার্চ সকালে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপণ করা বোরো ধান নষ্ট করে কাঁটাতার দিয়ে জমি ঘিরে নেয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের বেদম মারপিট করে। এতে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ উল্টো এমপিপুত্রের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ধরে নিয়ে যায়।
তারা আরও অভিযোগ করেন, সেদিনের ঘটনায় আহতরা বেড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগীদের নানাভাবে হয়রানি করছে পুলিশ।
১২ মার্চের ওই ঘটনার দিনই সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টে চাঁদাবাজির জন্য হামলার অভিযোগ এনে বেড়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম। মামলায় ১৪ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন- তুহিন, মহরম, কিরণ, মিলন, বাচ্চু, মানিক, লিটন, নয়ন, ইউনুছ, লালন, আশরাফুল, লায়েব, লিলন ও তামিম। তাদের মধ্যে তুহিন, মহরম ও কিরণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেড়া থানার এসআই আরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, আসামিরা বিভিন্ন সময়ে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টে চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদা না পেয়ে ১২ মার্চ তারা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলামকে মারপিট করেন।
তিনি আরও বলেন, ১২ মার্চ সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাসপাতাল থেকেও কাউকে আটক করা হয়নি। মামলার পর ১৪ মার্চ অভিযান চালিয়ে তুহিন, মহরম ও কিরণকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।
শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি গত ১৪ মার্চ পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বেড়ায় ‘অসামাজিক কাজ বন্ধ ও উন্নয়ন কাজে বাধাদানকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বেড়া পৌরসভার মুজিব বাঁধ সংলগ্ন পায়না থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, অবৈধ মাটি ও বালি উত্তোলনসহ নানা অসামাজিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি টেকনিক্যাল কলেজ ও একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা করছেন তিনি।
নাসিফ শামস রনির অভিযোগ, এলাকার ওই সিন্ডিকেটের নেতা আব্দুল মান্নান মানু ব্যাপারী (বেড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি) ও তার ভাতিজা কিরণ ব্যাপারী বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করে এসব উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন।
এই কিরণই পাওয়ার প্ল্যান্টের কেয়ারটেকারের করা মামলার আসামি, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসককে দেয়া লিখিত অভিযোগে স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, ‘এই দখলদার টুকুর ছেলে ভয় দেখিয়ে জমি কিনে নেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে জমি লিখে নিয়েছেন। কিন্তু জমির টাকা দেননি। টাকা চাইতে গেলে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মানিক ব্যাপারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর টিনের ছাপড়া ঘর তুলে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন বানভাসী ও হতদরিদ্র মানুষ।
তিনি বলেন, ‘তাদের উচ্ছেদের খবর পেয়ে শুক্রবার (১২ মার্চ) সেখানে যাই। এমপিপুত্রের লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপা ধান মাটিচাপা দিতে শুরু করলে আমি দলীয় পরিচয় দেই। নাসিফ শামস রনিকে ফসল নষ্ট না করার অনুরোধ করি। এতে উত্তেজিত হয়ে তিনি আমাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।’
বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টুকুকে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
টুকুপুত্রের করা অভিযোগ অস্বীকার করে বেড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মানু বলেন, ‘আমার জানা মতে এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনি সেখানে কিছু জমি কিনে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আশপাশের সব জমি দখলের চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষসহ আমাদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছেন এমপিপুত্র। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মহোদয়কে জানানো হলে তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি।’
এ সব অভিযোগের বিষয়ে এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা এই আসনের তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গ্রামবাসী জমি দখলের যে অভিযোগ করেছে সেটি অসত্য। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা আমার উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখানে আমার পৈত্রিক জমির ওপরে আমার মা ও বাবার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
‘স্থানীয় কিছুর মাদক ব্যবসায়ী-সন্ত্রাসী এ কাজে বাধা দিচ্ছে। তবে কাউকে উচ্ছেদ বা মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিতর্কে ফেলার চেষ্টা চলছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাসিফ শামস রনির বাবা শামসুল হক টুকু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। তবে জেলা প্রশাসন বিষয়টা তদন্ত করছে। অপরাধী যেই হোক- সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীদের ছাড় নয়। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছে।’
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেড়া অঞ্চলের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি ঝামেলা হয়েছে শুক্রবার। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে বেড়া থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
‘ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে- এমন কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘নদী তীরবর্তী যে জমি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে সেটি তার ব্যক্তিগত, না খাস তা যাচাই করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সবুর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। প্রকল্পের মূল স্থাপনার জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পৌনে ৩ একর জমি রয়েছে। তাদের নিজেস্ব জমি রয়েছে ১৬ একরের মতো। এর মধ্যে পৌনে ১৩ একর জমির খাজনা খারিজ করা আছে। আর খাস জমি রয়েছে ১.৯৮ একর। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএনপির ৬৪ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সহ-সভাপতি সাদেক আলী, উত্তর চট্টগ্রামের চিকনন্দী ইউনিয়নের সহকারী আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা জহুরুল আলম ও কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা এম হান্নান মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে নকল মোড়ক বানিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ভেজাল মানহীন আইসক্রিম, রোবো, আইস ললি ও জুস বানানো কারখানায় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় এসব নকল খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিক্রি করার অপরাধে আইকন আইসক্রিম ফুড ও বেভারেজ কোম্পানির ম্যানেজার লিখন আহমেদকে ৫০ হাজার টাকা এবং জব্দকৃত মালামাল ধ্বংস করার পাশাপাশি কারখানিটি বন্ধ সাময়িক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা মোল্লাপাড়ার আব্দুস সালামের বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়।
কোম্পানির মালিক আব্দুস সালাম পেশায় একজন সেনা সদস্য।
অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা সজল আহমেদ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মোল্লা পাড়ার সেনা সদস্য আব্দুস সালামের বাড়িতে বিভিন্ন কোম্পানির নকল মোড়ক বানিয়ে কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, নকল আইস ললি, রোবো, জুস ও আইসক্রিমসহ শিশুখাদ্য যা দণ্ডনীয় অপরাধ।
‘আমরা এ ভেজাল কারখানায় অভিযান চালিয় নকল এসব পণ্য ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল জব্দের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার লিখন আহমেদ আটক করে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ জব্দকৃত মালামাল নষ্ট করার পাশাপাশি কারখানাটি বন্ধের নির্দেশ দেই।’
আইকন ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ম্যানেজার লিখন আহমেদ বলেন, ‘আমার মহাজন সালাম মিলিটারি মাস ছয়েক হবে কারখানাটি চালু করেছেন। উনি ফোনের মাধ্যমে ব্যবসার দেখভাল করেন। আমরা এই কারখানায় আইস ললি, রোবো, জুস ও আইসক্রিম তৈরি করে কয়েকটি জেলায় বিক্রি করতাম। আজ অভিযানের পর বুঝতে পারলাম এ পণ্যগুলো বিক্রি ও বানানো অপরাধ।’
আব্দুস সালামের বাবা ওহাব আলী বলেন, ‘আমার ছেলে ছুটিতে এসে এই কারখানাটি দিয়েছিল। এখনও সরকারিভাবে অনুমোদন পাইনি। তবে অল্পদিনেই লাইসেন্স হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে।’
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামের দুইশ’ কৃষকের প্রায় ৪ শ’ বিঘা জমির বোরো ধান ইটভাটার আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাটার আগুনের তেজস্ক্রিয়তায় পার্শ্ববর্তী দড়িনাশেরা গ্রামের কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস জমির ফসল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ণয় করে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চারপাশের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল পুড়ে যাওয়ার মতো লালচে রঙ ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফলজ গাছপালা ও সবজির বাগান।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সাল থেকে কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের ফেটালিয়া গ্রামে এসকেএস ইটভাটা স্থাপিত হয়। হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কর্তৃপক্ষ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কখনও ফেটালিয়া ব্রিক ফিল্ড, ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করলেও বর্তমানে এসআরএফ নামে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বর্তমান মালিক।
তারা জানান, এ ইটভাটার ২০০ ফিট দূরত্বের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘনবসতি রয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছে ফুল-ফল থাকে না; সব কিছু অকালেই ঝরে যায়। প্রতি বছর যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে, তা হলো কালো ধোঁয়া ও তাপে পুড়ে যায় ফসলের মাঠ। এ বছরও বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ ভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অনুমোদন না থাকায় ঈদের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ইটের ভাটাটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। এই ভাটাটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। কয়েকদিন পরপর ইটভাটায় কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন, কিন্তু পরবর্তীতে ফের শুরু হয় ভাটার কার্যক্রম। তবে সেসব সময় অদৃশ্য কারণে নীরবতা পালন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামটি ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি ফল উৎপাদন ও কৃষির বিভিন্ন ফসল। কৃষকদের দাবি, অথচ এক ইটভাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে পুরো এলাকার মানুষের।
মো. বুরুজ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানে দুধ আসার পরপরই ভাটার আগুনের তাপে তা পুড়ে গেছে। টাকা ধার করে জমি চাষ করেছিলাম। সেই ধারের টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করব, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
কৃষক মো. রফিকুল বলেন, ‘এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেছি। তার এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারব না। ইটভাটার আগুনের তাপে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
‘গরুকে খাওয়ানোর যে কুটা (খড়) লাগবে তাও পাই কিনা সন্দেহ। আগুনের তাপে ঝলসে যাওয়া কুটা গরুও খেতে চায় না। এখন গরু কী খাবে, আর আমরাই বা কী খাব?’
আবাদি জমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান কৃষক আব্দুল হাই।
কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘ভাটার আগুনের তাপ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, যা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ওই জমির ফসল দিয়েই আমাদের সারা বছরের খাওয়ার যোগান হয়। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।’
কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে ভাটার ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল বাতেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেতে কাজ করতে গেলেই আমার বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।’
এই এলাকায় যেন কোনো ইটের ভাটা না থাকে, প্রশাসনের কাছে এমন দাবি রাখেন তিনি।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই শতাধিক কৃষকের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা ক্ষতিপূরণ পাবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, ‘আগুনের তাপে ধানের ফুল আসার সময় কয়েকজন কৃষকের ফসল নষ্ট হইছে। পরে তারা ইটভাটার গেইটে তালা মেরে রাখেন।’
কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ভাটাটি বন্ধ রয়েছে। আমি এখনও ভাটার লাইসেন্স করতে পারিনি।’
কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মঞ্জুরুল আমিন সম্প্রতি কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফলজ গাছ ও ধানের ফসল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে তিনি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্যানুসন্ধান করে জেনেছেন, স্থানীয় ইটভাটার কারণেই কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধান পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই নির্গত ক্ষতিকর ধোঁয়ায় সব ঝলসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দেয়া হবে।’
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেতুয়া বাজার ব্রিজ সংলগ্ন মাতামুহুরী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তারা হলেন- চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মনছুর আলম ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সালামের ছেলে মুবিন।
বুধবার সকালে নদীতে মাছ ধরতে নেমে নিখোঁজ হন ওই দুই জেলে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় নিখোঁজ হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর বিকেলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই জেলে নিখোঁজ হন। স্থানীয়রা নদীতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা এসে নদীর গভীরে তল্লাশি চালিয়ে ওই দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করেন।
দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য