গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পলাতক আছে আরও দুই আসামি।
ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। শ্রীপুরের মাওনা থেকে শুক্রবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম সারোয়ার বলেন, মাওনার উত্তরপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযোগকারী নারীর বান্ধবী। তিনিও একই পোশাক কারখানার শ্রমিক। বান্ধবীর বাড়িতে বৃহস্পতিবার ওই নারী বেড়াতে যান।
তিনি অভিযোগ করেন, রাতে বান্ধবীর সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ২টার দিকে তাকে তুলে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ওই বাড়ির দুই কেয়ারটেকার ও তাদের দুই সহযোগী। এর পর সেখান থেকে দেড় লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন লুট করে পালিয়ে যায় তারা।
শ্রীপুর থানায় শুক্রবার সকালে ওই নারী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করলে গ্রেপ্তার করা হয় আসামিদের দুইজনকে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান গোলাম সারোয়ার।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অভিযোগকারী নারীকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর থানার ওসিসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১০ সদস্য রয়েছেন।
সোমবার সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফল বাতিলের দাবিতে পরাজিত তিন প্রার্থীর (মেম্বার) সমর্থকেরা নির্বাচনী মালামাল (ইভিএম) আটকে দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ওসির গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরমানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষকালে সদর থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১০ সদস্যসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে তিনজন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- সদর থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ, এসআই নাজমুল আলম, এএসআই আসাদুজ্জামান, কনস্টেবল রোকন মিয়া, মুস্তাফিজুর রহমান ও পারভেজ; ২৩ আনসার ব্যাটেলিয়ানের সহকারী প্লাটুন কমান্ডার মো. হায়দার আলী, আনসার সদস্য সবুজ বালা, শাওন বিশ্বাস, লক্ষ্মী বিশ্বাস ও এসিল্যান্ডের ড্রাইভার ইব্রাহিম শরীফ।
এছাড়া পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন কালাম শেখ, ইয়াসিন শেখ ও সম্রাট মোল্লা। গ্রেপ্তার এড়াতে আহত অন্যরা শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সদর থানার ওসি জাবেদ মাসুদ রাতে জানান, এলাকার পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় খাইরুল কাজী ও কালাম শেখ নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বিকাশ এজেন্টের ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এক নামধারী সাংবাদিকসহ চার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রুহুল আমিন, সহযোগী প্রসেনজিৎ রায়, খাদেমুল ইসলাম এবং মোন্নাফ আলীসহ চার ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে খাদেমুল ইসলাম লাল দৈনিক চৌকশ নামে একটি পত্রিকার প্রতিনিধি এবং নাগেশ্বরী রিপোর্টার্স ক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক।
তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেল, ৩টি মোবাইল ও ছিনতাই করা টাকার মধ্যে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার বিকাশ এজেন্ট জনতা ট্রেডার্স কর্মী শুভ কুমার রায় ও বিদ্যুৎচন্দ্র বর্মণ ভূরুঙ্গামারী ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা তুলে মোটরসাইকেলে চড়ে কচাকাটা যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লক্ষিমোড়ে ছিনতাইকারীরা তাদের থামিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশে খবর দেয়া হলে ভূরুঙ্গামারী ও কচাকাটা থানা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) পরবর্তী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
১২৫ তম একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় রোববার সকাল ১১টার দিকে গুচ্ছে না যেতে মত দেন সদস্যরা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হাসান ভূঁইয়া এবং বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের ডীন, শিক্ষকসহ অন্তত ১৬০ জন।
এদিন সভায় একমাত্র এজেন্ডা ছিল গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ইবি অংশ নিবে কি না বিষয়টি চূড়ান্তকরণ। সভায় উপস্থিত সব শিক্ষক গুচ্ছের ভোগান্তি, সমস্যাগুলো তুলে ধরে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। উপাচার্য বরাবর লিখিত দাবিও জানানো হয়েছিল। রোববারের সভায় ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সমন্বয়হীনতা ও উচ্চশিক্ষার বৈষম্য ইত্যাদি কারণে গুচ্ছে থাকার বিপক্ষে মত দেন শিক্ষকরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস শুরু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে মিটিং ডেকে এটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম শুরু করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা সবাই গুচ্ছের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। যেহেতু ভর্তি কার্যক্রম তারাই পরিচালনা করবেন তাই তাদের মত গ্রহণযোগ্যতা পাবে। সোমবার এ বিষয়ে ঢাকায় ইউজিসির সাধারণ সভা রয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’
আরও পড়ুন:খুলনা নগরের টুটপাড়া এলাকা থেকে রোববার ভোর চারটার দিকে দুই ভাই বাড়ি থেকে বের হন। খুলনার রয়েল মোড় থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসে ওঠেন। ছোট ভাই মো. ইশরাকুজ্জামান গোপালগঞ্জে নেমে যান গাড়ি থেকে। তবে গাড়িতে ছিলেন বড় ভাই মো. আশফাকুজ্জামান লিংকন। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকার পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে বাস খাদে পড়ে তিনি নিহত হন।
দুই জনের মধ্য ছোট ভাই মো. ইশরাকুজ্জামান একটি বেসরকারি ব্যাংকের রাজবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। নিহত ৪৫ বছর বয়সী আশফাকুজ্জামান লিংকন ছিলেন ঠিকাদার। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের মতন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে ছোট ভাইকে।
তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা খুলনা নগরের টুটপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় আশফাকুজ্জামান। ছোট ভাই ও বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তিনি বিয়ে করেননি।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশফাকুজ্জামানের মামারা নিশ্চিত হন সড়ক দুর্ঘটনায় আশফাকুজ্জামান নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশফাকুজ্জামানের বাবা শাজাহান মোল্লাকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টুটপাড়ার নজরুল ইসলাম সড়কে আশফাকুজ্জামানদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় খাটিয়া প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। গোসল করানোর জায়গাও প্রস্তুত। বাড়ির সামনের গলির মুখে মানুষের জটলা। তবে কেউ বাড়ির দিকে যাচ্ছেন না। এর কারণ জানা গেল তাদের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
আশফাকুজ্জামানের মেজো মামা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মরদেহ নিয়ে রোববার বিকেল ৩টার দিকে খুলনার উদ্দেশে বের হয় আশফাকুজ্জামানের ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান। এশার নামাজের পর জানাজা শেষে টুটপাড়া কবরস্থানে আশফাকুজ্জামানকে দাফন করা হয়।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে এগারোসিন্দুর গোধূলি নামের ট্রেনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
জেলার কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী এলাকায় রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও ট্রেনের গার্ড ব্রেকেও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেনসহ তিন থেকে চার যাত্রী আহত হয়েছেন।
ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেন রোববার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে এ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আজ এগারোসিন্দুর গোধূলি (৭৪৯) কাজ করছি। সরারচর-মানিকখালী সেকশনে যে মেলা হয়, সেখানে স্টপেজের কোনো কন্ট্রোল অর্ডার নেই কিংবা কোনো স্টেশনের মাস্টার ইনফর্ম করেননি। সেকশনে কেন মেলা স্থানে দাঁড়াইলাম না, সে জন্য মানিকখালী স্টেশনে বৃষ্টির মতো পাথর মেরেছে একদল বে… পোলাপান, এলএম মো. মহসিন আলী ভাইয়ের কিছু হয়নি, কিন্তু আমার হাত কেটে গেছে। নিজেদের জীবন পাথর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি, তাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
‘লোকোমোটিভের এল/এস উইন্ডো গ্লাস সম্পূর্ণরূপে, আর/এস লুকিং গ্লাস সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলা শুধু লোকোমোটিভেই করে ক্ষান্ত হয়নি, আমির হোসেন ভাইয়ের গার্ড ব্রেকে তদ্রূপ হামলা চালিয়েছে।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রেনের সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. কাওছার হোসেন বলেন, ‘রোববার রাতে মানিকখালী স্টেশনের খানিকটা আগে মণ্ডলভোগ নামে একটি এলাকায় একটি মেলায় যাওয়ার জন্য ভৈরব ও কুলিয়ারচর স্টেশন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী ওঠে। তাদের দাবি ছিল মণ্ডলভোগ এলাকায় ট্রেন থামানোর, কিন্তু স্টেশন থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় ট্রেন থামে মানিকখালী স্টেশনে।
‘ট্রেন থামার পরেই কিছু লোক নেমে যায় আর বাকিরা ট্রেনের চালকের রুমে এসে ভাঙচুর চালায়। আর ট্রেনের নিচে থাকা লোকজন বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকেন। কোনো রকমে আমরা রক্ষা পাই। ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছেন, তবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।’
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.কে.এম আমিনুল হক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ইউসুফ জানান, চিকিৎসার কাজে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ট্রেনে হামলার বিষয়টি শুনেছেন।
এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো উৎসুক জনতা হামলা করেছে। আমরা তো ওইভাবে কাউকে চিনিও না, জানিও না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:আশা ছিল বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। বাড়িতে বড় দালান বানিয়ে পরিবারকে সুখে রাখবেন। কিন্তু সেই আশা অধরাই থেকে গেল মাসুদ খানের।
পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার রোববার সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনায় নিহত হন মাসুদ।
গোপালগঞ্জের আদমপুর গ্রামের আমজেদ আলী খানের মাস্টার্স পাস করা ছেলে ২৭ বছর বয়সী মাসুদ খান। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন বিভাগের মাস্টার্স পাস করেন।
নিহত মাসুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দিন আগে ঢাকা থেকে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসেন মাসুদ। রোববার খুব ভোরে ইমাদ পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকা আর যাওয়া হলো না। বাস খাদে পড়ে সমাধি হলো একজন স্বপ্নবাজ তরুণের।
মরদেহ নিতে এসে মাসুদের বড় ভাই শফিক খান বারবার ভাইয়ের জন্য মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কোনোভাবেই ভাইয়ের এমন করুণ মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন শফিক খান।
মাসুদ খানের ভাই শফিক খান বলেন, ‘কথা ছিল বড় চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিবে মাসুদ। মাস্টার্স পাস করে ঢাকাতেই ছোটখাটো কম্পিউটারের কাজ করত। যা ইনকাম করতো তা দিয়ে নিজে চলে বাড়িতেও টাকা-পয়সা পাঠাত। আর মাঝে মাঝে বড় চাকরিতে যোগ দিতে পরীক্ষা দিত। অল্প দিনের মধ্যেই চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই চাকরি আর করা হলো না। কীভাবে এই শোক মেনে নিব। আমার প্রাণের ছোট ভাইকে আর পাব না, এটা মানতে পারছি না।’
মাসুদের বন্ধু শাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা একই গ্রামে ছোট থেকে বড় হয়েছি। মাসুদ আমার চেয়েও অনেক মেধাবী ছিল। সে মুকসেদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে দর্শন বিভাগের অর্নাস ও মাস্টার্স শেষ করে। আমাকে মাঝে মাঝেই বলতো, বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেই চাকুরি আর তার করা হলো না। তার জন্য বুকটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, রোববার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তের জন্যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে রোববার সকালে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী খাদে পড়ে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশ।
হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস রোববার রাত ২টার দিকে মামলাটি করেন, যাতে আসামি করা হয় বাসমালিককে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাইম মোফাজ্জেল জানান, ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হোসেনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বেপরোয়া গতি ও এর ফিটনেসের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করা হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় চালক ও হেলপার নিহত হওয়ায় তাদের নামে মামলা করা হয়নি। সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস মামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা থেকে যাত্রী বোঝাই করে ইমাদ পরিবহনের বাসটি রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এটি পদ্মা সেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় এলে সামনের চাকা ফেটে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি নিচে পড়ে যায়।
ওই সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য